বর্ষনের শেষে, পর্ব:৪

#বর্ষনের_শেষে
পর্বঃ৪
#সাদিয়া_চৌধুরী_তাহমিনা

আকদ এর পরের দিন নতুন জামাই বাসায় এসেছে এতে যেন সকলের ছুটাছুটি পরেছে কি খাওয়াবেন কি করবেন।সবার এই ব্যস্ততার মাঝেও অরিন চুপ।তারেকের পাশে বসে আছে সে তবে কথা বলছে না।তার মাথায় শুধু সে সকল ঘটনাই ঘুরছে।অরিনের ভাবনার মাঝেই তারেক বললো
“তারিনকে বলো দ্রুত আসতে,দেরি হয়ে যাচ্ছে তো”

অরিন কিছু বলার আগেই ড্রইং রুমে আসতে আসতে অরিনের মা বললেন
“বাবা তোমাদের অনুষ্ঠান তো দু দিন পর তাই বাসায় অনেক ঝামেলা সে সাথে কাজ ও।তাই বলছিলাম তারিনকে নিয়ে না হয় আরেকদিন ঘুরতে যেও”

“আসলে মা তারিনকে নিয়ে আমিই ঘুরতে যেতে চাইছিলাম।সে তো আমার ছোট বোনের মতো,চলে আসবো বেশি দেরি করবো না।তাকে আমার সাথে ঘুরতে দিলে খুশি হবো আর কি”

অরিনের মা অরিনের দিকে তাকালেন।অরিন ইশারায় কিছু একটা বুঝালে তিনি বলে উঠলেন

“আচ্ছা বাবা তাহলে যাও।আমি তারিনকে নিচে পাঠাচ্ছি”

তিনি তারিনকে ডাকতে চলে গেলেন।এদিকে অরিনের এমন চুপচাপ থাকাটা খেয়াল করলেও কিছু বলছে না তারেক।কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তারিন তৈরি হয়ে আসলো।তারিনকে দেখে তারেক বললো

“আমার ছোট্ট বোনটাকে তো আজ বেশ মিষ্টি লাগছে”

“পাম একটু কম দেও দুলাভাই,পরে না আবার ফুলে ফেপে ব্লাস্ট হয়ে যাই”

তারিনের কথায় হেসে উঠলো তারেক।অরিন তারেকের হাসির শব্দে তাকালো তার দিকে।হয়তো কিছু একটা বুঝতে চাওয়ার প্রয়াস।পলকহীন ভাবে অরিনকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তারেক বললো
“এভাবেই তাকিয়ে থাকবে নাকি বিদায় দিবে”

তারেকের কথায় লজ্জা পেলো অরিন।তাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট টিপে হেসে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো তারিন।তারেককে বিদায় জানিয়ে উপরে এসে রুমের এপাশ ওপাশ হাটছে আর ভাবনায় মশগুল হচ্ছে অরিন।তার মাথায় সেই উপহার আর চিঠি গুলোই বার বার ঘুরপাক খাচ্ছে।কাল রাতে এসব চিন্তা করতে করতে ঘুম হয়নি তার।বিছানায় বসে হেলান দিয়ে গা এলিয়ে দিলো।চোখ বন্ধ করতেই কেমন ক্লান্ত আর ঘুম ঘুম লাগছে।এই অবেলায় ঘুমানো ঠিক হবে না।কিন্তু চোখ খুলতে একদম ইচ্ছে হচ্ছে না।তন্দ্রা প্রায় এসে গেছে এমন সময় অরিনের ফোন বেজে উঠলো।বিরক্ত হয়ে ফোন ধরতে যাবে তার আগেই কেটে গেলো।নাম্বারটা খেয়াল করতেই দেখতে পেলো সেই অচেনা নাম্বার।মুহূর্তেই আবার ফোনের শব্দ হলো তবে এখন আর কল নয় মেসেজ এসেছে।মেসেজ অপেন করতেই ভেসে উঠলো
প্রেয়সী,
এমন গোমরা মুখের আধলে লেপ্টে থাকো কেন?তোমাকে হাসিতেই মানায়।আমি বুঝি বেশ চিন্তায় ফেলে দিচ্ছি তোমায়?উহু চিন্তা করো না খুব তাড়াতাড়ি ধরা দিবো তোমার চোখে।তখন হয়তো তুমি চমকাবে,চমকে গিয়ে থমকে যাবে।সেই বিস্ময় ভরা চাহনিতে আমার দেখবে।আর আমি দেখবো তোমাকে,আমার প্রেয়সীকে।”

শেষের কথাটা বুকে গিয়ে বিধলো অরিনের।”আমার প্রেয়সীকে”।এভাবেও কেউ এতো আবেগ মিশিয়ে বলতে পারে?কিন্তু কে হতে পারে সেই ব্যক্তি।সেই নাম্বারে ঝটফট কল দিলো কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে।এমন সময় ছোট চাচি এসে বললেন
“অরিন মা নিচে গিয়ে দেখতো একটু।কে জানি কি পাঠিয়েছে, একটা ছেলে নিয়ে এসেছে”

ছোট চাচি চলে যেতেই বিছানা থেকে দ্রুত নেমে নিচে নামছে অরিন।তার বুক কাঁপছে।সেই অচেনাই কি এসেছে।সে কে তা দেখার আশা নিয়ে ড্রইং রুমে গেলো।একটা ছেলে বসে আছে।তবে ছেলেটা কম বয়সী।অরিনকে দেখেই বললো

“আসসালামুয়ালাইকুম আপু,আপনার নামে আমাদের অনলাইন শপে কিছু জিনিস অর্ডার করা হয়েছে।সেগুলো নিয়ে এসেছি”

অরিন বিস্ময় নিয়ে বললো
“আমার নামে”

“জ্বি আপু আপনার নামে।”

অরিনের হাতে রেপিং পেপারে মুরানো বাক্সগুলো দিয়ে ছেলেটি চলে গেলো।অরিন উপরে এসে বাক্স খুলছে আর ভাবছে কি হতে পারে।রেপিং খুলতেই দেখলো নীল রঙের একটা শাড়ি,পাশে রঙ বেরঙের চুড়ি,বেলী ফুলের মালা।
তার আর এসব পুরো পুরি খুলে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে না।এমন সময় তারিন দৌড়ে রুমে ঢুকে বললো
“দেখ আপু দুলাভাই কত্তোগুলো চকলেট কিনে দিয়েছে”

পিছন পিছন তারেক ও আসলো।বোনের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে বিছানায় চোখ পরতেই তারিন বললো
“এসব কিরে আপু”

অরিন এই ভয়টাই পাচ্ছিলো।তারেক আর তারিন যে এতো জলদি এসে পরবে সে ভাবেনি।

তারেকের ও সেদিকে চোখ গেলে বললো
“অরিন আবার কি সেই অচেনা ব্যক্তি তোমাকে উপহার দিলো নাকি”

অসহায় চোখে তারেকের দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললো অরিন।এতে চোখ মুখ শক্ত করে ফেললো তারেক।অরিনকে কিছু না বলেই বের হয়ে চলে গেলো।তারেক যে রাগ করেছে তা বেশ বুঝতে পারছে অরিন।বোনের দিকে তাকিয়ে তারিন বললো
“কি যে করেছিস আর কে যে দিচ্ছে আল্লাহ জানেন।এসব নাটক আর ভালোলাগেনা”

কথাগুলো অরিনকে বলেই চলে গেলো তারিন।অরিনের রাগ লাগছে ভীষন।কে এমন খারাপি করছে তার সাথে।উপহার গুলো ফ্লোড়ে ছুড়ে ফেলে বারান্দায় গেলো সে।বারান্দার গ্রিলে হাত রেখে নিচে তাকাতেই চোখ তার কপালে।তারেক আর তারিন কিছু একটা নিয়ে হাসা হাসি করছে।মনে হচ্ছে হাসতে হাসতেই পরে যাবে।তারেক তো রাগ করে রুম থেকে বের হয়ে গেলো সাথে তারিন ও মুখ বাকিয়ে কথা শুনিয়ে গেলো।তাহলে নিচে তারা এখনও কি করে।অবাক আর সন্দেহের পাল্লা ভারি করে কপাল কুঁচকালো অরিন।কিছু একটা খটকা নিশ্চয় আছে।আর তা অরিনকে জানতেই হবে।
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here