বসন্তের একদিন পর্ব -০৭+৮

#বসন্তের_একদিন
#পর্বঃ০৭
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

কিছুদিন পর,

” তৃধা।”

” হ্যাঁ বলো।”

” একটু রুমে এসো তো।”

এটা বলেই তেজবীন রান্নাঘর থেকে রুমে চলে যায়।তৃধা চুলার আঁচ ছোট করে দিয়ে হাত মুচতে মুচতে রুমে আসে।

” হ্যাঁ বলো।”

” আমাকে কিছু টাকা দাও তো।” অনেকটা ইতস্তত হয়ে বলে তেজবীন।

” টাকা!তা না হয় দিলাম কিন্তু তুমি না কিছুদিন আগে বেতন তুলে ছিলে?”

” হুম কিন্তু আমার এখন কিছু টাকা প্রয়োজন।দাও তাড়াতাড়ি।”

তৃধা বুঝতে পারে তেজবীন নিশ্চয়ই কোন অকাজে তার বেতনে অনেকগুলো টাকা খরচ করে ফেলেছে।তা না হলে তেজবীন কোনদিনও অতি প্রয়োজন ছাড়া তৃধা থেকে টাকা চাইনা।তৃধা একবার কাঠকাঠ গলায় তেজবীনকে জিজ্ঞেস করে, ” তুমি সত্যি করে বলো তো তুমি কোথায় টাকা খরচ করেছো?”

” আরে টাকা খরচ করতে যাবো কেন?আসলে আমি এখনো বেতন তুলিনি তাই আরকি চাইছি।”

” আমাকে মিথ্যা কথা বলোনা তেজবীন।মাসের অর্ধেক শেষ হয়ে গেলো আর তুমি বলছো তুমি টাকা তুলোনি।আমি জানি তুমি মাসের দশ তারিখের মধ্যে নিজের বেতন তুলে ফেলো।এবার সত্যি সত্যি বলো কোথায় খরচ করেছো।”

” আসলে আপুর জন্য শাড়ি কিনতে গিয়ে বেতনের অনেকগুলো টাকা চলে গিয়েছে।”

” কি!তুমি আমাকে শাড়ি কিনে দিয়েছো?কত টাকা দিয়ে নিয়েছো?”

” ১০ হাজার।”

” কি!১০ হাজার।উফ….তেজবীন তুমিও না।তুমি জানো না আমাদের প্রতিমাসে কত হিসাব করে চলতে হয়।আমরা বড়লোক নয় তেজবীন আমরা মধ্যবিত্ত।আমাদের এতো বিলাসিতা মোটেও মানাই না।এখন যে তুমি এই ফালতু কাজে এতগুলো টাকা খরচ করলে এবার মাসের বাকি দিনগুলো চলবে কি করে ভেবে দেখেছো?” রেগে তেজবীনকে কথাগুলো বলে তৃধা।তেজবীন চুপচাপ দাঁড়িয়ে তৃধার কথাগুলো শুনে যাচ্ছে।তৃধা নিজের ব্যাগ কিছু একটা বের করে তেজবীনের হাতে দেয়।

” এই নাও এখানে কিছু একটা আছে,আপাতত এগুলো দিয়ে ম্যানেজ করো।আর শোন পরবর্তী বাজে কোন কাজে একদম একটা খরচ করবেনা।আর করলে তখন আমি আর কোন টাকা দেবোনা।”

টাকা পেয়ে তেজবীন আর দাঁড়ায় না,সে বেরিয়ে যায়।তেজবীন যাওয়ার কিছুক্ষণ পর তৃধা নন্দিনীর কাছে আসে।নন্দিনী তখন বসে বসে টিভিতে সিরিয়াল দেখছিল।

” আপু তেজবীন নাকি আপনাকে শাড়ি কিনে দিয়েছে?”

” হ্যাঁ কয়েকদিন আগেই তো দিলো।কি ভালো আমার ভাইটা,আমি…..”

” হ্যাঁ এখন তো ভালো হবেই।এতোগুলা টাকা দিয়ে যে শাড়ি কিনে দিয়েছে।আপনাকে না আমি প্রথমেই বলেছি আমাদের কাছে এইসব বাজে কাজে খরচ করার জন্য টাকা নেই তাও আপনি কেন তেজবীনকে শাড়ির কথা বলতে গেলেন।”

” তেজবীন তোমাকে কিনে না দিয়ে আমাকে শাড়ি কিনে দিয়েছে বলে হিংসা হচ্ছে বুঝি?”

” হা….হাসালেন।শুনুন আমার এতো কিছুর লোভ নেই।আমার যা আছে আমি তাতেই খুশি।আর আপনার কিছু দরকার হলে আপনি আপনার হাসবেন্ডকে বলবেন।ওনার অনেক সামর্থ্য আছে,আমাদের এতো সামর্থ্য নেই।”

কথাগুলো বলেই তৃধা আর একমুহূর্ত সেখানে দাঁড়ায় না।তবে তৃধার কথার কোন প্রভাব নন্দিনীর উপর পড়েছে বলে মনে হয়না।সে নিজের মতোই সিরিয়াল দেখছে।

রাতে খাবার শেষ হলে সব গুছিয়ে তিথির জন্য দুধ নিয়ে তার রুমের কাছে আসে তৃধা।কিন্তু যখনই সে দরজায় নক করতে যাবে তখন সে শুনতে পাই তিথি আস্তে আস্তে কারো সাথে কথা বলছে কিন্তু কি বলছে তা তৃধা স্পষ্ট শুনতে পাইনা।

” তিথি।”

তৃধার আওয়াজ শুনে তিথি তাড়াতাড়ি ফোনটা লুকিয়ে ফেলে।

” তুমি এই সময়ে এখানে?”

” তোমার দুধ।”

” টিবিলে রেখে যাও।”

তৃধা দুধটা টেবিলে রেখে চলে যেতে নিলেও থেমে যায়।

” তুমি কি কারো সাথে কথা বলছিলে?”

” আমি কথা বললে তোমার কি?নিজের কাজে যাও,যত্তসব।”

তিথি বিরক্তি নিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে।তৃধা আর না দাঁড়িয়ে রুমে থেকে বেরিয়ে আসে।কিন্তু সে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে চিন্তা করতে থাকে তিথি কার সাথে কথা বলছিলো।

মধ্যরাত,

দরজায় টোকানোর শব্দ পেয়ে তেজবীনের ঘুম ভেঙে যায় তবে তৃধার নয়।কারণ সারাদিনের ক্লান্তিতে সে গভীর ঘুমে আছে।

” তৃধা,এই তৃধা।”

তেজবীনের ধাক্কানোতে তৃধা তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে বসে।

” কি হয়েছে?কিছু লাগবে তোমার?”

” আমার কিছু লাগবেনা।দেখো কে এতো রাতে দরজায় বাড়ি দিচ্ছে।”

কথাটা বলে তেজবীন আবারো ঘুমিয়ে পড়ে।তৃধা তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নেমে দরজা খুলে দেখে ফাতেমা বেগম দাঁড়িয়ে আছে।

” মা আপনি এতো রাতে?”

” আসলে আমার পায়ে না খুব ব্যথা করছিল তাই।”
তৃধা বুঝতে পারে ফাতেমা বেগম আসলে কি বুঝাতে চেয়েছে।

” আচ্ছা মা আপনি যান আমি আসছি।”

ফাতেমা বেগম চলে গেলে তৃধা ড্রয়ার থেকে একটা মলম বের করে ফাতেমা বেগমের রুম আসে।তারপর অনেক রাত পর্যন্ত ওনার পা মালিশ করে দেয়।

পরেরদিন সকালে,

রান্নাঘরে দ্রুত হাতে রান্না শেষ করছে তৃধা কারণ তার আবার অফিসে যেতে হবে।এরই মাঝে নন্দিনী রান্নাঘরে আসে।

” কি করছো?”

” রান্না করছি।”

” কালকের মাংস আছে না?”

” হুম।”

” আচ্ছা আমার জন্য ২ টো পরোটা বানাও তো।কালকের মাংস দিয়ে খাবো।”

” আপু আমার অফিস আছে,আমি এখন বানাতে পারবোনা।আপনি বরং দোকান থেকে নিয়ে আসুন।”

” না আমি দোকানেরগুলো খাবোনা।তাড়াতাড়ি বানিয়ে দাও।”

তৃধাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নন্দিনী চলে যায়।তৃধা নন্দিনীর প্রতিদিনের এসব নাটক দেখতে দেখতে খুবই বিরক্ত।তৃধা জানে নন্দিনী ইচ্ছে করে এসব করছে যাতে তৃধার অফিস যেতে দেরি হয়।

” তেজবীন,এই তেজবীন।”

” কি হয়েছে কি?এতো সকাল সকাল ডাকছো কেন?”

” উঠো ঘুম থেকে।”

” কেন?কি হয়েছে আবার?”

” দোকেনে যাও আর দুটো পরোটা নিয়ে এসো।”

” পরোটা আবার কার জন্য?তোমার খেতে হলে অফিসে যাওয়ার সময় নিয়ে নিও।”

” আমার জন্য হলে আমার তোমাকে বলার দরকার ছিল না।আপু বলে পরোটা খাবে।আমার এখন বানানোর সময় নেই তাই দোকান থেকে নিয়ে এসো।তাড়াতাড়ি উঠো।”

তেজবীন আলসেমি ছেড়ে বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুম যায়।তারপর দোকানে গিয়ে পরোটা নিয়ে এসে তৃধাকে দেয়।তৃধা একটা প্লেটে করে খাবারগুলো নিয়ে তিথির রুমে যায়।নন্দিনী তখন ফোনে কারো সাথে কথা বলছিলো।তৃধাকে দেখে নন্দিনী ফোনটা কেটে দেয়।

” আপনার খাবার।”

” পরোটা তুমি বানিয়েছো নাকি?”

তৃধা মুচকি হেসে বলে,

” আপু আমি আপনাকে প্রথমেই বলেছি আমাকে অফিসে যেতে হবে তাই আমি পরোটা বানাতে পারবোনা।এগুলো তেজবীন দোকান থেকে নিয়ে এসেছে।”

” তোমাকে না আমি বলেছি আমি দোকানের পরোটা খাবোনা।” রেগে বলে নন্দিনী।

” না খেলে রেখে দিন।কোন সমস্যা নেই।ঘরে খাওয়ার মানুষের অভাব নেই।আমার দেওয়ার ছিল আমি দিয়ে দিয়েছি।এবার আপনি খাবেন কি খাবেন না সেটা আপনার ব্যপার।”

তৃধা আর না দাঁড়িয়ে চলে আসে কারণ তার অফিসের জন্য বের হতে হবে।তৃধা অফিসের জন্য বেরিয়ে গেলি নন্দিনী তেজবীনের কাছে আছে।

” তেজ তোর বউ কিন্তু খুব বাড় বেড়ে গিয়েছে।”

” আবার কি হয়েছে?” বিরক্ত নিয়ে বলে তেজবীন।

” দেখনা,আমি ওকে বলেছি যে আমি পরোটা খাবো যাতে আমাকে দুটো পরোটা বানিয়ে দেয় কিন্তু ও আমাকে বানিয়ে দিলোনা।”

” কিন্তু আমি দোকান থেকে তো এনে দিলাম।”

” কিন্তু আমি দোকানেরগুলো খাবোনা।আমি যে ওকে বললাম আর ও যে আমার কথার অবাধ্য হলো।বুঝতো পারছিস তোর বউয়ের বাড় বেরে গিয়েছে।”

” আপু তুই প্লিজ এখান থেকে যা তো।পরোটা খাবি বলেছিস,ওকে তোকে দিয়ে এসেছে।এখন সেটা ঘরের আর বাইরের একটা হলেই হলো।এখন যা এখন থেকে।আমাকে ঘুমাতে দে,সকাল সকাল আমার মাথা খাস না।”

তেজবীন আবারো ঘুমিয়ে পড়ে।নন্দিনী বেশ রেগে গিয়েছে।সে ভেবেছিল তেজবীনকে বুঝিয়ে শুনিয়ে তৃধাকে মার খাওয়াবে কিন্তু তার কথার তো কোন গুরুত্বই দিলোনা তেজবীন।
#বসন্তের_একদিন
#পর্বঃ০৮
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

রিকশা করে বাড়ি ফিরছে তৃধা।হঠাৎ তার চোখ পড়ে রাস্তার অপরপাশে।তৃধা তাড়াতাড়ি রিকশাওয়ালাকে বলে,

” দাঁড়ান,দাঁড়ান।”

রিকশা চালক একটু দূরে গিয়ে রিকশা দাঁড় করায়।তৃধা তাড়াতাড়ি পেছন ফিরে তাকাই।রাস্তার অপরপাশে একটা মোটরসাইকেল দাঁড়ানো।তাতে একটা ছেলে বসা আর সাইডে একটা মেয়ে দাঁড়ানো।তৃধার মনে হচ্ছে মেয়েটা তিথি।তৃধা নেমে মোটরসাইকেলটার কাছে যাবে তার আগেই মেয়েটাকে মোটরসাইকেল বসে ছেলেটার সাথে চলে যায়।

” এটা কি আমার মনের ভুল?নাকি আসলেই ওটা তিথি ছিল?আর তিথি হলে ওই ছেলেটা কে?”

” আফা,রিকশা টানবো?”

” হ্যাঁ আপনি চলুন।”

রিকশা থেকে নেমে তৃধা তাড়াতাড়ি বাড়িতে আসে।বেল বাজলে নন্দিনী দরজা খুলে দেয়।নন্দিনী কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে কিন্তু তৃধা সেদিকে মনোযোগ না দিয়ে তাড়াতাড়ি ভিতরে ঢুকে পড়ে।

তৃধা ভেবেছিলো তিথি রুমে নেই কিন্তু সে তিথির রুমে এসে অবাক।কারণ তিথি রুমেই আসে।সে বিছানায় বসে মোবাইল চালাচ্ছে।

” তিথি।”

” বলো কি বলবে।”

” তুমি এতোক্ষণ কোথায় ছিলে?”

” কোথায় ছিলাম মানে?” ভ্রু-কুচকে প্রশ্ন করে তিথি।

” মানে তুমি কি বাইরে ছিলে?”

” তুমি মনে হয় এই বাড়িতে নতুন এসেছো।তুমি জানোনা বিকেলে আমার কোচিং থাকে।”

তিথি বলার পর তৃধার মনে পড়ে আসলেই তো তিথির তো ওই সময়ে কোচিং থাকে।

” ও আচ্ছা।”

” কি হয়েছে বলো তো?হঠাৎ বাইরে থেকে এসেই এই প্রশ্ন করছো কেন?”

” না মানে আসলে…”

” আসলে কি?খোলসা করে বলোতো একটু।”

” না মানে আমি অফিস থেকে আসার সময় রাস্তার পাশে একটা মেয়েকে একটা ছেলের সাথে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি।আমি ভেবেছিলাম ওটা তুমি তাই।” ইতস্তত হয়ে বলে তৃধা।

” আমি?আমি কেন হতে যাবো?আমি তো ওই সময়ে কোচিং-এ ছিলাম।তুমি ভুল দেখেছো।যাও এখন এখান থেকে।কাকে না কাকে রাস্তা দেখে বলছে ওটা আমি।”

তৃধা তিথির রুম থেকে বের হয়ে আসে।সে মনে মনে চিন্তা করে,

” আসলেই তো তিথি তো কোচিং-এ ছিল।হয়তো আমারিই মনের ভুল।একটু বেশিই ভাবি আমি।”

বৃহস্পতিবার রাতে,

সবার খাবার পর তৃধা সব ঘুছিয়ে রাখছে।তখন সেখানে পান চিবোতে চিবোতে ফাতেমা বেগম আসে।

” বউমা,ও বউমা।”

” জ্বি মা বলুন।”

” বেচে যাওয়া খাবারগুলো গুছিয়ে রেখো তো নাকি?”

” হ্যাঁ মা।”

” ভালো।তো যেটা বলতে আসলাম ফ্রিজে মাংস আছে না?”

” হ্যাঁ মা আছে তো।কিন্তু কেন?”

” কাল তো শুক্রবার,তোমার অফিস বন্ধ।কাল সকাল সকাল উঠে মাংস রান্না শুরু করে দিও।আর বিরিয়ানিও রান্না করো।”

” তা না হয় করবো কিন্তু হঠাৎ করে বিরিয়ানি আর মাংস কেন রান্না করতে বলছেন মা?”

” সেটা তোমার জানতে হবে না।যা বলেছি তাই করো শুধু।কাল সকাল সকাল উঠে রান্না শুরু করে দেবে।”

ফাতেমা বেগম চলে যায় রান্নাঘর থেকে।এদিকে তৃধা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভেবে চলেছে হঠাৎ করে ফাতেমা বেগম এতো কিছু কেন রান্না করতে বলছেন।তৃধা বুঝতে পেরেছে নিশ্চয়ই কাল কেউ বাড়িতে আসছে কিন্তু কে আসছে সেটাই বড় প্রশ্ন।

পরেরদিন সকালে,

সকাল সকাল উঠেই রান্না শুরু করে দেয় তৃধা।এখন বাজে সকাল নয়টা।ফাতেমা বেগমকে চা দিতে হবে।তৃধা তাড়াতাড়ি একটা কাপে চা নিয়ে ফাতেমা বেগমের ঘরে নিয়ে আসে।

” মা আপনার চা।”

” দাও।” ফাতেমা বেগম চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে তৃধার দিকে তাকালো। ” কাল যা রান্না করতে বলেছি করছো তো?”

” হ্যাঁ মা।”

” হুম ভালো।যাও এবার তাড়াতাড়ি বাকি কাজগুলোও শেষ করো।বারোটার মধ্যে যেন রান্না শেষ হয়ে যায়।”

বিরিয়ানি রান্নার জন্য চাল ধুচ্ছিলো তৃধা।তখন বেলটা বেজে উঠে।তৃধা চালগুলো সাইডে রেখে হাত মুছতে মুছতে দরজা কাছে আসে।কিন্তু দরজা খুলে যাকে দেখে তাকে দেখে তৃধা মুখটা কালো হয়ে যায়।

” কেমন আছেন তৃধা সাহেবা?” হাসিমুখে প্রশ্ন করে রুদ্র।রুদ্র হচ্ছে নন্দিনীর স্বামী। ” কিগো তৃধা সাহেবা বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখবে নাকি ভেতরেও যেতে দেবে?”

” আসুন।”

রুদ্র জুতো খুলে ভিতরে প্রবেশ করে কিন্তু তৃধা এখনো দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে আছে।রুদ্র আসাতে তৃধা মোটেও খুশি হয়।এই লোকটাও খুব একটা সুবিধার নয়।তৃধা আর দাঁড়িয়ে না থেকে দরজা বন্ধ করে তাড়াতাড়ি ভেতরে চলে আসে।

মেয়ের জামাইকে দেখে তো ফাতেমা বেগমের খুশি যেন ধরেনা।

” আরে বাবা তুমি এসেছো।এসো এসো,আমি তো সকাল থেকে তোমারই অপেক্ষা করছিলাম।কবে আসবে তুমি।আজ কত দিন পর এলে আমাদের বাড়িতে।আমাদের কথা কি তোমার মনে পড়েনা?”

” কে বলেছে মা মনে পড়েনা?অবশ্যই পড়ে।আমি কি আপনাদের ভুলতে পারি।কিন্তু কি করবো বলুন ব্যবসা ফেলে কি আর আসা যায়।তবে এবার আমি সবকাজ শেষ করে এসেছি।এবার আমি এক সপ্তাহের আগে যাবোনা।”

” ওমা তা তো খুবই ভালো খবর।তুমি থাকবে এটা যেনে মনটা আমার খুশিতে ভরে গেলো।”

” আচ্ছা মা এগুলো কোথাও রাখবো বলুন তো।”

” আরে আরে এতো কিছু কেন আনতে গেলে বলো তো।”

” মা আমি আপনাদের জন্য না আনলে আর কাদের জন্য আনবো বলুন তো।”

” আমার জামাইটা আমাদের কত চিন্তা করে,কত কিছু না চাইতেও আমাদের দেয়।কিন্তু আবার কিছু মানুষ আছে যারা তো কখনো কিছু দেয় না আর চাইলেও নানা বাহানা করে।”

তৃধা এতক্ষণ এখানে দাঁড়িয়ে ছিল।ফাতেমা বেগম যে শেষের কথাগুলো তৃধাকেই উদ্দেশ্য করে বলেছে তা তৃধার বুঝতে অসুবিধা হয়নি।

” বউমা তুমি এখনো সঙের মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন?জামাইয়ের হাত থেকে ব্যাগগুলো নাও।বেচারা জামাইটা কত দূর থেকে এলো।এতো ভারি ব্যাগগুলো নিয়ে সে আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে।নাও তাড়াতাড়ি।”

তৃধা ব্যাগ নেওয়ার জন্য সামনে আসে।রুদ্র হাসিমুখে ব্যাগগুলো তৃধার দিকে এগিয়ে দেয়।তৃধা তাড়াতাড়ি ব্যাগগুলো রুদ্রের হাত থেকে নিয়ে রান্নাঘরে চলে আসে।

ব্যাগগুলো নিচে ফেলে রেখে বেসিনে ঘষে ঘষে হাত ধুচ্ছে তৃধা।তার এখন ঘেন্নায় গা গুলিয়ে উঠছে।আসলে তৃধা যখন রুদ্র থেকে ব্যাগগুলো নিচ্ছিলো তখন রুদ্র ফাতেমা বেগমের আড়ালে তৃধার হাত ধরেছিল।

” ছিঃ,দুঃশ্চিত্র লোক একটা।যখনই আসে কোন না কোনভাবে আমাকে হেরাস করে।আজ তো আমি ওর একটা ব্যস্তটা করেই ছাড়বো।”

দুপুরে হলে সবাই খেতে বসে।তবে সবাই বসলেও তৃধা বসেনা কারণ সে বসলে খাবার কে বেড়ে দেবে।তৃধা এক এক করে সবাইকে খাবার বেড়ে দেয়।খাবার দেওয়া হলে তৃধা একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ায়।

” আরে বউমা তুমি অতো দূরে দাঁড়িয়ে আছো কেন?জামাইয়ের পাশে এসে দাঁড়াও।দেখো জামাইয়ের কি কি লাগবে।”

তৃধা অনিচ্ছা সত্ত্বেও রুদ্রের পাশে এসে দাঁড়ায়।

” রান্নাটা কে করেছে মা?”

” কেন বাবা?খাবার ভালো হয়নি নাকি?” তাড়াহুড়ো করে জিজ্ঞেস করে ফাতেমা বেগম।

” আরে না মা তেমন কিছু না।উল্টো রান্নাটাতো খু্ব ভালো হয়েছে।”

” রান্না তো ন….”

” সব রান্না ভাবী করেছে।” খেতে খেতে বসে তিথি।

” তাই তো বলি এতো সুস্বাদু খাবার তৃধা সাহেবা ছাড়া আর কে রান্না করবে।”

রুদ্রের মুখে তৃধার প্রশংসা শুনে ফাতেমা বেগমের ভালো লাগেনা।তিনি বলতে চেয়েছিলেন যে রান্নাগুলো নন্দিনী করেছে কিন্তু তার আগেই তিথি সত্যিটা বলে দিলো।

” তৃধা সাহেবা আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন?আপনিও বসুন আমাদের সাথে।”

” না ঠিক আছে।আপনারা আগে খেয়ে উঠুন তারপর আমি খাবো।”

” তৃধা,মাংসের বাটিটা দাও তো।” গম্ভীর স্বরে বলে তেজবীন।তৃধা তাড়াতাড়ি বাটিটা নিয়ে তেজবীনের পাশে দাঁড়ায়।তৃধা তেজবীনের প্লেটে মাংস দিয়ে আবারো রুদ্রের পাশে যেতে নিলে তেজবীন সবার আড়ালে তৃধার হাত ধরে তাকে আটকে নেয়।

” কিছু বলবে?” নিচু স্বরে বলে তৃধা।

” কোথায় যাচ্ছো?”

” মা যে বললো জামাইবাবুর পাশে….”

” যেতে হবেনা।চুপচাপ এখানে দাঁড়িয়ে থাকো।”

তৃধা তেজবীনের কথা শুনে খুবই খুশি হয়।সে নিজেও রুদ্রের পাশে দাঁড়াতে চাইছিলোনা।শুধু মাত্র শাশুড়ীর কথা রাখতে দাঁড়িয়েছিল।

” এই মেয়ে তুমি ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?সারাদিনই তো স্বামীর কাছে এতো।এখন একটু স্বামীর কাছে থেকে সরে এসে বাকিদেরও দেখো।দেখছোনা রুদ্রের মাংস লাগবে।তুমি না দিয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেন?” রেগে কথাগুলো বলে নন্দিনী।

” আপু তুই তো আছিস জামাইবাবুর পাশে।আর হাসবেন্ডটা যেহেতু তোর তাই তুই দেখ ওনার কি লাগবে।আমার বউ নাহয় আমারটা দেখুক।” গম্ভীর ভাবে বলে তেজবীন।তেজবীনের কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।তবে তেজবীন নিজের মতো খেয়ে চলেছে।তেজবীনের কথায় তৃধা মুচকি হাসে।

চলবে……
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here