বসন্তের একদিন পর্ব -১১+১২

#বসন্তের_একদিন
#পর্বঃ১১
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

” কি করছিস তেজ?” রুমের মধ্যে ঢুকতে ঢুকতে বলে নন্দিনী।

ফাইল থেকে চোখ না সরিয়েই উওর দেয় তেজবীন,”কাজ করছি।কিছু বলবে?”

” তা তেমন জরুরি কিছু না তবে শুনলাম নাকি তোর বউয়ের পদোন্নতি হয়েছে।ওইযে কি যেন বলে হ্যাঁ প্রমোশন হয়েছে।”

” নিচে তো ছিলেই তুমি।তাহলে তো জানোই।”

” হুম ছিলাম কিন্তু কেন যেন আমার কিছু ভালো ঠেকছেনা।মনে হচ্ছে নিশ্চয়ই কোন গন্ডগোল আছে।”

” মানে?”

” মানে দেখ তোর বউ চাকরি করছে বেশি হলে ১ বছর হবে।আর এতো তাড়াতাড়ি সে প্রমোশনও পেয়ে গেলো।কথাটা কিরকম যেন গোলমেলে লাগছেনা।”

” আপু তুমি কি বলতে চাইছো একটু খুলে বলো।”

” দেখতে তেজ আমি তোর বউকে খারাপ বলছি না কিন্তু আমার মনে হচ্ছে তোর বউয়ের এই পদোন্নতি তার কাজের মাধ্যমে না অন্যকোন ভাবে হয়েছে।বলাতো যায় না কখন কি হয়।দেখ গিয়ে হয়তো তোর বউ অফিসের বসের সাথে….।তুই আমাকে ভুল বুঝিস না।তবে তুই ভেবে দেখ এতো কম সময়ে কি করে তার পদোন্নতি হলো?নিশ্চয়ই কোন ঘুষ বা অন্যমাধ্যমে হয়েছে।”

নন্দিনী নিজের কথা বলে যাচ্ছে।তেজবীন চুপচাপ একদৃষ্টিতে ফাইলের দিকে তাকিয়ে আছে।

এদিকে,

” আপনি আমার বড় ননদের স্বামী,এই বাড়ির বড় জামাই বলে আমি আপনাকে সম্মান দিচ্ছি।ভাববেন না আমি চুপ থাকি বলে আমি কিছুই বুঝিনা বা আমি কিছু বলতে পারিনা।আমি চাইলেই কিন্তু অনেক কিছু বলতে পারি আর করেও দেখাতে পারি।তাই বলছি নিজের সীমার মধ্যে থাকুন।সীমার বাইরে আসার চেষ্টা করবেন না।এটা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।” রেগে বলে তৃধা।

” আরে আর তৃধা সাহেবা আপনি রাগ করেছেন নাকি?আরে আমি তো মজা করছিলাম।”

” আপনি কি বুঝাতে চেয়েছেন তা আমি ভালো করেই বুঝতে পেরেছি জামাইবাবু।আমি ছোট বাচ্ছা নয় যে আপনার কথার মানে বুঝতে পারবোনা।”

” আরে আমি তো ওসব মজা করে বলেছি।তুমি তো দেখি মজাও বোঝনা।”

” আমি সম্পর্কে আপনার বউয়ের ছোট ভাইয়ের এবং আপনার শালার বউ।আমি আপনার বেয়াইন বা শালি নয় যে আপনি আমার সাথে মজা ঠাট্টা করবেন।আমাদের সম্পর্ক কিন্তু সেটার নয়।তাই পরবর্তীতে বুঝে শুনে কথা বলবেন আমার সাথে।আর শুনুন আমি আপনাদের মতো না,আমার চরিত্র যথেষ্ট ভালো।আমাকে আপনাদের মতো ভাবতে যাবেন না।যদি ভেবে থাকেন আমি আপনাদের মতো বা দুর্বল তাহলে সেটা মাথা থেকে বের করে দিন।আমি যদি কিছু করিনা তাহলে সেদিন চোখের পানি চোখ থেকে শুধু ঝড়ে পড়বে।যান এখন এখান থেকে।”

রুদ্র চলে তো আসে তবে তৃধার কথাগুলো তার ইগোতে লাগে।

” আমার সাথে উঁচু গলায় কথা বলে ভালো করেনি তুমি তৃধা সাহেবা।দু’টাকার মেয়ে আমার সাথে উঁচু গলায় কথা বলেছে,আমাকে শাসিয়েছে।এর শাস্তি তো ওকে পেতেই হবে।আর সেটা যেভাবেই হোক আমি ওকে দিয়েই ছাড়বো।

রাতে খাওয়া-দাওয়ার পর সব গুছিয়ে রেখে তৃধা রুমে আসে।রুমে এসে তৃধা দেখে তেজবীন রুমে নেয়।বারান্দায় উঁকি দিলে তৃধা দেখতে পায় তরজবীন বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।দরজা বন্ধ করে তৃধা তেজবীনের পাশে এসে দাঁড়ায়।

” কি হলো এখানে দাঁড়িয়ে আছো যে?ঘুমাবে না?”

কিন্তু তেজবীন কোন জবাব দেয় না।তৃধা তেজবীনের কাঁধে হাত রাখলে তেজবীন ঘাড় ঘুরিয়ে তৃধার দিকে তাকাই।

” তুমি কি কোন বিষয় চিন্তিত?অফিসের কোন সমস্যা হয়েছে তোমার?”

” ঘুমিয়ে পড়ো।”

রুমে চলে আসে তেজবীন।রুমে এসেই বিছানায় শুয়ে পড়ে সে।তেজবীনের ব্যবহারে তৃধা আন্দাজ করতে পারে তেজবীন কিছু একটা নিয়ে চিন্তিত।

পরেরদিন,

অফিস শেষ করে মাত্রই গ্রাউন্ড ফ্লোরে নেমে এসেছে তৃধা।তার সাথে আছে রুবাইয়া।দুজনে কথা বলতে বলতে বের হচ্ছে।

” তৃধা।”

এই সময় তেজবীনের কন্ঠ শুনে চমকে যায় তৃধা।সে তাড়াতাড়ি পেছন ফিরে তাকাই।চেয়ার থেকে উঠে তৃধার কাছে এসে দাঁড়ায় তেজবীন।

” তেজবীন তুমি এখানে!আমার অফিসে!” অবাক হয়ে প্রশ্ন করে তৃধা।

” কেন?আসতে পারিনা নাকি?”

” না না সেরকম কিছু না কিন্তু তুমি আগে কখনো আমার অফিসে আসেনি আজ হঠাৎ করে এলে।তাই অবাক হয়েছি আরকি।”

” আচ্ছা তৃধা তুই যা ভাইয়ার সাথে।কাল দেখা হবে।” রুবাইয়া বলে।

” আচ্ছা সাবধানে যাস।”
রুবাইয়া চলে যায়।রুবাইয়া চলে যেতেই তেজবীন তৃধাকে প্রশ্ন করে,

” কে ছিলো মেয়েটা?”

” আমার অফিসের কলিগ ছিল।তুমি আজ হঠাৎ আমার অফিসে এলে যে?কিছু দরকার ছিল?

” না সেরকম কিছুনা।আসলে আজ আমি ফ্রী ছিলাম তাই ভাবলাম তেমাকে নিয়ে যায়।চলো।”

তেজবীনের পেছন পেছন তৃধা অফিস থেকে বেরিয়ে আসে।তবে তৃধা হঠাৎ তেজবীনের আসাতে অনেকটা অবাক হয়।কারণ তেজবীন যায় হয়ে যাক না কেন কোনদিন তৃধার অফিসে আসেনি।

আসলে তৃধার ভাবনাটাই সত্য।তেজবীন কোন কারণ ছাড়া তৃধার অফিসে আসেনি।তার অফিসে আসার মূল কারণ হচ্ছে তৃধার সম্পর্কে জানা।নন্দিনীকে কাল তেজবীন কিছু না বললেও নন্দিনীর কথাগুলোর প্রভাব তেজবীন উপর পড়েছে।তার মনেও তৃধাকে নিয়ে সন্দেহ জেগেছে।তাই আজ সে অফিসে এসেছে যাতে জানতে পারে অফিসে তৃধার আচরণ কেন আর তার বসটাও কিরকম।

” তেজবীন।”

তৃধার কথা শুনে হাঁটা থামিয়ে তৃধার দিকে ঘুরে তাকাই তেজবীন।

” কি হয়েছে?”

” ঝালমুড়ি খাবো।চলো না।”

” এই অসময়ে কি ঝালমুড়ি খাবে?”

” আরে ঝালমুড়ি খেতে আবার সময় লাগে নাকি?চলোনা খায়।”

” আচ্ছা যাও নিয়ে এসো আমি দাঁড়িয়েছি এখানে।”

” আরে আমি কেন আনতে যাবো?তুমি খাওয়াবে আমাকে।যাও নিয়ে এসো।”

অনিচ্ছা সত্ত্বেও তেজবীন একপ্যাকেট ঝালমুড়ি নিয়ে আসে।

” একটা আনলে যে?তুমি খাবেনা?”

” না তুমিই খাও।এখন আমার কিছু খাওয়ার ইচ্ছে নেই।”

তৃধা ঝালমুড়ি খাচ্ছে আর তেজবীনের পাশে পাশে হাঁটছে।তেজবীনের সাথে হাঁটতে তার বেশ ভালোই লাগছে।এরকম পাশাপাশি তাদের খুব একটা বেশি হাঁটা হয়নি।এই পড়ন্ত বিকেলে হাতে ঝালমুড়ি,পাশে প্রিয় একটা মানুষ বিষয়টা খারাপ লাগলোনা তৃধার কাছে।

বাসায় তৃধা আর তেজবীনকে একসাথে ফিরতে দেখে নন্দিনী ভ্রু-কুচকে তাদের দিকে তাকাই।নন্দিনীর পাশেই বসা ছিল রুদ্র।সে হুট করেই বলে উঠে,

” তা শালাবাবু দেখছি আজকাল খুব বউপ্রেমি হয়ে উঠেছে।বউকে ছাড়া তো দেখছি উনি চলতেই পারছেন না।”

” তুই কি ওকে আনতে গিয়েছিলি নাকি?” নন্দিনী জিজ্ঞেস করে।

” হ্যাঁ।”

” কেন?এতোদিন তো নিজেই আসাযাওয়া করতো তাহলে আজ আনতে গেলি কেন?”

” একদিন ওকে আনতে গিয়েছি এতে এতো কথার কি আসে বুঝলাম না।আমার বউ আমি যা ইচ্ছে করতে পারি।” কথাগুলো বলে রুমে চলে আসে তেজবীন।

সন্ধ্যাবেলা,

রুমে বসে অফিসের কাজ করছে তৃধা।তেজবীন রুমে নেয়।হয়তো বাইরে গিয়েছে নয়তো ছাদে গিয়েছে।এরমধ্যে তৃধা শুনতে পাই ফোন বাজছে কিন্তু ফোনটার তার নয় তেজবীনের।এদিক-ওদিক তাকিয়ে তৃধা বুঝতে পারে ফোনটা বালিশের নিচে আসে।তৃধা ফোনটা বের করে দেখে আননোন নম্বর থেকে ফোন এসেছে।তৃধা চিন্তা করছে ফোনটা রিসিভ করবে কি করবেনা।পরে সবচিন্তা বাদ দিয়ে ফোনটা তৃধা রিসিভ করে।

” হ্যালো,কে বলছেন?”

” এটা কি মিস্টার তেজবীনের নম্বর?” অপরপাশ থেকে একজন পুরুষ বলে।

” জ্বি হ্যাঁ এটা তেজবীনের নম্বর।আমি ওনার স্ত্রী তৃধা বলছি।”

” ও তাহলে তো কথাটা আপনাকে বলা যায়।”

” কি কথা?”

” আমি তিথির কোচিং থেকে বলছি।তিথি মিস্টার তেজবীনের বোন না?”

” তিথির কোচিং!হ্যাঁ তিথি আমার ননদ।কিন্তু কিছু কি হয়েছে?তিথি কি কোন পরীক্ষায় কম নম্বর পেয়েছে?”

” না সেরকম কিছু না।আর সে কম নম্বর তো তখনই পাবে যখর সে পরীক্ষা দেবো কিন্তু সে তো কোন পরীক্ষায় দেয়নিয় এই সপ্তাহে।আর না কোন ক্লাস করেছে।”

” মানেটা আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না।”

” আসলে এই সপ্তাহে তিথি শুধু একদিনই কোচিং-এ এসেছি।তাই আমি ভাবলাম হয়তো সে অসুস্থ।তার খবর নেওয়া জন্যই ফোন করেছিলাম মিস্টার তেজবীনকে।তিথি কি ঠিক আছে?”

” হ্যাঁ তিথি ঠিক আছে।আপনি চিন্তা করবেন না কাল থেকে তিথি আবারো রেগুলার কোচিং-এ যাবে।”

” আচ্ছা ঠিক আছে রাখছি এখন।ভালো থাকবেন।”

তৃধা ফোনটা কেটে দেয়।সে লোকটার বলা কথাগুলোই ভাবছে।

” তার মানে কি আমি যা দেখেছি তাই ঠিক?ওটা তিথিই ছিল?”
#বসন্তের_একদিন
#পর্বঃ১২
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

সন্ধ্যার দিকে বাড়িতে ফিরে তিথি।তিথি ফেরার কিছুক্ষণ পর তৃধা তিথির রুমে আসে।তিথি তখন ফোন চালাচ্ছিলো।

” তুমি কোথা থেকে এসেছো তিথি?” গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করে তৃধা।

” আবারো তুমি সেইম প্রশ্ন করছো।” বিরক্তি নিয়ে বলে তিথি।

” তোমাকে যা জিজ্ঞেস করছি সেটার উওর দাও।”

” কোচিং এ গিয়েছিলাম।”

” আর কত মিথ্যা কথা বলবে তিথি?”

” মিথ্যা কথা মানে?” কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বলে তিথি।

” দেখো তিথি আমি তোমাকে সোজাসুজি বলছি তোমার কোচিং থেকে ফোন এসেছিল তেজবীনের কাছে।কিন্তু সে সময় তেজবীন না থাকায় আমিই ফোনটা ধরে ছিলাম।আর উনি বলেছেন তুমি আজ কোচিং-এ যাওনি।”

” ওই আসলে আসলে আমি আমার ফ্রেন্ডের বাসায় গিয়েছিলাম।আসলে ও কোচিং-এ যাওয়ার সময় রাস্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো।”

” আচ্ছা।তো সে কি প্রতিদিনই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো?”

” মা.নে..?”

” উনি বলেছে তুমি এই সপ্তাহে শুধু একদিনই কোচিং-এ গিয়েছিলে।যদি তুমি একদিনই কোচিং-এ যেয়ে থাকো তাহলে বাকি ছয়দিন কোথায় গিয়েছিলে?”

” সেটা আমি তোমাকে কেন বলবো?শোন তুমি আমার বড় ভাইয়ের বউ।সো ভাইয়ের বউ হিসেবেই থাকো।আমার গার্ডিয়ান হতে এসেনা।আমার যেখানে ইচ্ছে আমি সেখানে যাবো তাতে তোমার এতো সমস্যা কেন?আমি কি তোমার টাকায় চলছি নাকি তোমার টাকায় পড়াশোনা করছি?করছি নাতো তাহলে নিজেন চরকায় তেল দাও।আমাকে জ্ঞান দিতে এসোনা।যাও এখন এখান থেকে।”

তিথি আবারো ফোন দেখতে শুরু করে।তৃধা বুঝতে পেরে যায় সে রাস্তায় যাকে দেখেছিলো ওটা আসলেই তিথি ছিলো,সে কোন ভুল দেখেনি।

” এবার যা করার আমাকেই করতে হবে।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাকে খোঁজ নিতে হবে তিথি কোচিং না গিয়ে কোথায় যায়।আর ওই ছেলেটাই বা কে।”
____________________________________________

তৃধার বাড়িতে তার এক দূর সম্পর্কে চাচী শাশুড়ী এসেছেন।ফাতেমা বেগম ওনার সাথে বসে গল্প করছেন।তৃধা ট্রে তে করে নাস্তা নিয়ে এসে টেবিলে রাখে।

” তা ফাতেমা শুনলাম তোমার বউমা নাকি চাকরি করে?” চা খেতে খেতে মহিলাটা বলে।

” হ্যাঁ ওই আরকি।”

” তো বেতন কি এনে তোমাকে দেয় নাকি সব বকবা-মাকেই দিয়ে দেয়?”

” আর বেতন।” মুখ বাঁকা করে বলেন ফাতেমা বেগম।

” শোন ফাতেমা বউকে সামলে রেখো বলাতো যায় না কখন আবার কি ঘটিয়ে বসে।বউদের এতো ছাড় দিতে নেয়।এতো ছাড় দিলে ওরা মাথায় চড়ে বসবে।আমার বউমাকে তো আমি প্রথম থেকে শাসনে রেখেছি।আমার কথার বাইরে সে একচুলও নড়তে পারেনা।এদের ছাড় দিলে এরা আমাদের উপরই রাজত্ব করতে চাই।”

” তা যা বলো।কিন্তু কি করবো বলো বউ কি আর আমার কথা শুনে?সে তো নিজের মতোই কাজ করে।আমি তো চেয়েছিলাম যেন চাকরিটা সে না করে কিন্তু কে শোনে কার কথা।সে তো আর কথা অমান্য করে চাকরি করছে।দুঃখের কথা আর কি বলবো বললো কত আশা করেছিলাম একটা ভালো সুন্দর,সুশীল বউমা পাবো।কিন্তু আমার পোড়া কপাল যে এই মেয়ে আমার বাড়ির বউ হলো।”

এতোক্ষণ রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে কথাগুলো শুনছিলো তৃধা।সে আর চুপচাপ থাকতে না পেরে বেড়িয়ে আসে।

” যদি এখন আমি বলি পোড়া কপাল আপনার না আমার যে আপনার মতো শাশুড়ী পেয়েছি তখন?আর চাচী বাড়ির বউমা কোন ফেলনা বা পুতুল নয় যে তাদের উপর সবসময় হুকুম জারি করে থাকবেন।তারাও মানুষ।আর আপনারাও তো একসময় কারো বাড়ির বউ ছিলেন,তাহলে কেন শাশুড়ী হওয়ার পর বউমাদের কষ্টটা ভুলে যান?আপনি যেমন কখনো চাইবেন না যে আপনার সংসারে অন্যকেউ রাজত্ব করুক তেমনি সেও তা চাইবেনা।বাড়ির বউদের সম্মান দিতে শিখুন,তাদের উপর জামিদারি করতে নয়।আরে বসে আছেন কেন চা-নাস্তা খান না।কথা বলুন আপনারা,আমার না কিছু কাজ আছে।”

একটা হাসি দিয়ে তৃধা চলে যায়।তৃধার কথাগুলো শুনে ফাতেমা বেগম এবং ওই মহিলা অপমানবোধ করে।

তিথির রুমে পানি দিতে এসে তৃধা দেখে তিথি রুমে নেই।তিথিকে রুমে দেখতে না পেয়ে তৃধা খুশি হয়ে যায়।

” এই সুযোগ আমাকে তাড়াতাড়িই ওই ছেলেটা সম্পর্কে জানতে হবে।”

তৃধা পানির মগটা টেবিলে রেখে তিথির মোবাইলটা খুঁজতে শুরু করে।তবে তৃধাকে বেশি কষ্ট করতে হয়নি।একটু খোজা খুঁজি করেই তৃধা তিথির ফোনটা তার বালিশের নিচে থেকে পেয়ে যায়।তৃধা তাড়াতাড়ি ফোনটা ওপেন করে কিন্তু হায় ফোনে পাসওয়ার্ড দেওয়া।তবে এটা দেখে তৃধা হতাশ হয়না।তৃধা নানান ধরনেরপার্সওয়াড ব্যবহার করে ফোনটা খোলার চেষ্টা করতে থাকে কিন্তু পারেনা আর একসময় আর কোন পাসওয়ার্ডও দেওয়া যায়না।

” ধুর ফোনটা হাতে পেয়েও কিছু করতে পারছিনা শুধু এই পাসওয়ার্ড থাকার কারণে।আমাকে যে করেই হোক তিথির থেকে ওর পাসওয়ার্ডটা জানতেই হবে।”

এরমধ্যে তৃধা বাথরুমের দরজা খোলার শব্দ শুনতে পাই।তৃধা তাড়াতাড়ি ফোনটা আবারো বালিশের নিচে রেখে দেয়।

” তুমি আমার রুমে কি করছো?” কিছুটা রেগে বলে তিথি।

” আসলে পানি দিতে এসেছিলাম।”

” দেওয়া হয়ে গিয়েছে?যাও এবার।”

তৃধা তিথির রুম থেকে বেরিয়ে আসে তবে সে মনে মনে এখনো আপসোস করছে যে ফোনটা হাতে পেয়েও সে কিছু করতে পারলোনা।
____________________________________________

” নন্দু,এই নন্দু।” রুদ্র বলে।

” কি হয়েছে কি?দেখছো না আমি টিভি দেখছি।”

” সেটা তো দেখছি।তবে আমার এখন চা খেতে ইচ্ছে করছে।আমার জন্য এককাপ চা করে নিয়ে এসোতো।”

” পারবোনা আমি।খেতে ইচ্ছে করলে নিজেই বানিয়ে নাও।তোমার চা বানানোর জন্য আমি আমার সিরিয়াল মিস করতে পারবোনা।”

” সারাদিন তো সিরিয়ালই দেখো কোন কাজ তো করোনা।”

” কি?আমি কোন কাজ করিনা।”

” কি কাজটা করো শুনি?বাড়িতে তো কাজের মেয়ে সবকাজ করে দেয় আর এখানেও তো কিছু করোনা।”

” হ্যাঁ আমি কোন কাজ করিনা।হয়েছে?যাতো এখন এখন থেকে।”

” যাচ্ছি যাচ্ছি।তোমাকে বলে যে কোন লাভ নেই তা আমি বুঝতে পেরে গিয়েছি।আমার এখন তৃধাকে বলতে হবে।”

” তো বলোনা আমার কানের কাছে এসে কেন ঘ্যান ঘ্যান করছো।” বিরক্তি নিয়ে বলে নন্দিনী।

” হ্যাঁ আমার তো এখন ওকেই বলতে হবে।ও কি আর তোমার মতো নাকি।ওকে বললে তো ও তোমার মতো আর ঝগড়া করেনা।কত ভালো একটা মেয়ে।আমি তো ওর মতনই একটা বউ চেয়েছিলাম,যে আমার কথা শুনবে।কিন্তু আমার কপাল যে তুমি…..”

” এই এই কি বললে যেন তুমি?তুমি ওর মতো বউ চেয়েছো?চেয়েছো কেন বলছো বলো ওকে তোমার বউ বানাতে চাইছো।” টোন মেরে বলে নন্দিনী।

” মানে?”

” তুমি কি মনে করো মিস্টার রুদ্র আমি বোকা,কিছু বুঝিনা আমি।শোন তোমাকে না আমি হাঁড়ে হাঁড়ে চিনি।তোমার যে ওর প্রতি নজর আছে সেটা আমি জানিনা মনে করোনা।আমি সব জানি।এই বাড়িতে আসলে সারাদিন তৃধা সাহেবা,তৃধা সাহেবা কেন করো তাও আমি ভালো করে বুঝি।কান খুলে শুনে রাখো আমার সাথে গেইম খেলতে এসোনা।তাহলে কিন্তু সেটা তোমার উপরই ভারী পড়বে।আরে তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন?তুমি না চা খাবে বলেছিলে?দাঁড়াও আমি এখুনি তোমার তৃধা সাহেবাকে বলছি তোমার জন্য চা করে দিতে।”

নন্দিনী বেরিয়ে যায়।রুদ্র ভ্রু-কুচকে নন্দিনীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।নন্দিনীর এধরণের ব্যবহারে রুদ্র অনেকটা অবাক হয়।

” তৃধা,তৃধা।” তৃধার নাম ধরে ডাকতে থাকতে তৃধার রুমের মধ্যে হুট প্রবেশ করে নন্দিনী।তেজবীন আর তৃধা তখন কিছু একটা নিয়ে কথা বলছিলো।হুট করে নন্দিনীর রুমে ঢুকে যাওয়ার ফলে দুজনেই চুপ হয়ে যায়।

” আপু তুমি রুমে ঢোকার আগে একবার নক করবেনা?” কিছুটা গম্ভীর স্বরে বলে তেজবীন।

” ও মা আমি নক করবো কেন?এটা আমার বাড়ি আমি যেখানে ইচ্ছে সেখানে যেতে পারি।যেটা বলতে এসেছিলাম তৃধা যাওতো তোমার জামাইবাবুকে এককাপ চা করে দাও।তার নাকি চা খেতে ইচ্ছে করছে।”

” তো জামাইবাবুর চা খেতে ইচ্ছে করছে তুমি ওকে বলছো কেন?তুমি বানিয়ে দাও।”

” ও আমি এখন পারবোনা,আমার কাজ আছে।এইযে তুমি তাড়াতাড়ি চা বানিয়ে ওকে দিয়ে এসো।”

নন্দিনী চলে যায়।তৃধা একবার তেজবীনের দিকে তাকিয়ে চা বানাতে চলে যায়।

চলবে…….
চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here