#বসন্তের_একদিন
#পর্বঃ০৯
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
এখন পর্যন্ত ৪ গ্লাস পানি শেষ করে ফেলেছে রুদ্র,তবুও তার ঝাল কমছে না।ফাতেমা বেগম এটা ওটা এনে রুদ্রকে দিচ্ছে।তবে নন্দিনীর যেন এতে কোন মাথাব্যথা নেই।সে নিজের মতে আপেল খাচ্ছে আর টিভি দেখছে।এদিকে রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে রুদ্রের কান্ড দেখে নীরবে হাসছে তৃধা।আসলে তৃধা পরে গিয়ে মাংসের মধ্যে আরো লাল মরিচের গুঁড়ো মিশিয়ে দিয়েছি।তৃধা আগে থেকেই জানতো রুদ্র একদম ঝাল খেতে পারেনা,তাই তৃধা ইচ্ছে করেই কাজটা করেছে।এভাবেই তৃধা নিজের প্রতিশোধটা খুব নিরবে নিয়ে নিলো।
” এই নিন জামাইবাবু,চিনির কৌটা।চিনি খান,ঝাল কমে যাবে।”
চিনির কৌটাটা টেবিলে রেখে খুশি মনে রুমে চলে আসে তৃধা।রুমে এসে তৃধা দেখে তেজবীন শুয়ে পড়েছে।তৃধাও দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।আপাতত তার একটু বিশ্রামের প্রয়োজন।
বিকাল থেকেই তৃধা রান্নার জন্য তোরজোর শুরু করে দিয়েছে।ফাতেমা বেগম তাকে ৪/৫ টা আইটেমের নাম বলে চলে গিয়েছে।তৃধার অসহ্য লাগছে।তৃধা জানে রুদ্র এতকিছু খাবেনা,ফাতেমা বেগম শুধু শুধু তৃধাকে এতোসব রান্না করতে বলে গিয়েছে।
” বউমা,বউমা।”
” বলুন মা।” রান্নাঘর থেকেই উওর দেয় তৃধা।
” জামাইয়ের জন্য তাড়াতাড়ি চা নিয়ে এসো।”
তৃধা তাড়াতাড়ি দুটো কাপে চা নিয়ে ড্রয়ংরুমে আসে।রুদ্র চায়ের কাপে একটা চুমুক দিয়ে তৃধার দিকে তাকাই।
” বাহ্ তৃধা সাহেবা আপনি তো খুব ভালো চা বানাতে পারেন।এতো ভালো চা কিভাবে বানান?নিচ্ছই কোন সিগরেট রেসিপি ফলো করেন তাইনা?আমাকেও একটু শিখাবেন তো কিভাবে এতো ভালো চা বানানো যায়।সবসময় তো আর আপনার হাতের বানানো চা খাওয়ার সৌভাগ্য হবেনা।”
এছাড়াও আরো নানা কথা বলে তৃধার গুণগান গাইতে থাকে রুদ্র।তৃধা সারতেও পারছেনা যদি আবার তার শাশুড়ী কিছু বলে এই ভয়ে।
” এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?যাও রান্না করতে যাও।”
ফাতেমা বেগমের কথা শুনে তৃধা তাড়াতাড়ি ওখান থেকে সরে পড়ে।
রাতে,
সবার খাওয়া শেষ।যে যার রুমেও চলে গিয়েছে ইতিমধ্যে।তৃধা দাঁড়িয়ে থালাবাসন গুলো ধুচ্ছে।হঠাৎ সে উপলব্ধি করে কেউ তার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।তৃধা ভাবে হয়তো তেজবীন।তাই সে বলে,
” তোমার কি কিছু লাগবে তেজবীন?পানি নিতে এসেছো নাকি?তুমি যাও,আমি যাওয়ার সময় নিয়ে যাবো।”
কথাগুলো বলে তৃধা আবারো নিজের কাজে মন দেয়।তবে কিছুক্ষণ পর তৃধা উপলব্ধি করে এখনো কেউ তার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।তৃধা তাড়াতাড়ি পেছন ফিরে তাকাই।তবে যাকে দেখে তাকে দেখে তৃধা কয়েককদম পিছিয়ে যায়।
” আপনি এখানে কি করছেন?কিছু লাগবে কি আপনার?”
” তোমাকে লাগবে।” রুদ্র বলে।
” কি?”
” না মানে পানি।পানি নিতে এসেছিলাম।”
” কিন্তু পানি তো রুমে আছে।”
” ও আসলে আমি খেয়াল করিনি।”
” তৃধা।”
হঠাৎ করেই তেজবীনের আওয়াজ শুনে তৃধা চমকে উঠে।
” কি করছো এখানে?”
” থালাবাসনগুলো ধুচ্ছিলাম।”
” জামাই বাবু আপনি এখানে কি করছেন?”
” আসলে পানি খেতে এসেছিলাম।আচ্ছা আমি যাই।শুভ রাত্রি।”
রুদ্র তাড়াতাড়ি রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে যায়।তেজবীন তৃধার দিকে রেগে তাকিয়ে চলে যায়।তৃধা তাড়াতাড়ি থালাবাসন গুলো ধুয়ে রান্নাঘরের লাইট বন্ধ করে বেরিয়ে আসে।কিন্তু বাইরে এসে তৃধা দেখে তেজবীন সোফায় বসে আছে।
” কি গো?তুমি এখানে বসে আছো যে?”
” কেনো?আমি বসে আছি বলে কি তোমার সমস্যা হচ্ছে?”
” না আমি তা বলিনি।এতো রাত হয়ে গেলো।ঘুমাবেনা?”
” চলো।”
তেজবীন তৃধার হাত শক্ত করে ধরে তাকে রুমে নিয়ে আসে আর দরজা বন্ধ করে দেয়।
” রান্নাঘরে কি করছিলে তুমি?”
” আরে তোমাকে বললাম না থালাবাসন ধুচ্ছিলাম।”
” তাহলে জামাইবাবু ওখানে কি করছিলো?”
” আমি কি জানি?উনাকে জিজ্ঞেস করার পর বললেন যে পানি নিতে এসেছে।”
” সে যাইহোক,ওনার থেকে যথাসম্ভব দূরত্ব বজায় রেখে চলবে।আমি যেন আমাকে ওনার কাছে ঘেসতে না দেখি।দেখলে কিন্তু ভালো হবেনা।”
” আরে আমি কোথায়…..”
” তোমার জন্য যেন আমার আপুর সংসারে কোন ঝামেলা সৃষ্টি নাহয়।তাহলে আমি তোকে জ্যান্ত ছাড়বোনা।যাও শুয়ে পড়ো।”
তেজবীন শুয়ে পড়ে।তৃধা বুঝতে পারে তেজবীন তাকে কি বলেছে আসলে।আর তেজবীনের কথার আসল মানে বুঝতে পেরে তৃধার চোখে পানি জমে যায়।তৃধা তেজবীনের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে,
” তুমি আমাকে এতোটা নিচু মনে করবো তেজবীন?এতোটা খারাপ ভাবো আমাকে?আমাদের বিয়ের একবছর হতে চললো তবে এখনো আমি তোমার মনে জায়গা করতে পারিনি,না পেরেছি তোমার বিশ্বাসী হতে।কবে তুমি আমাকে বুঝবে তেজবীন?কবে তুমি আমাকে বিশ্বাস করবে?”
” কি হলো এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেন?তাড়াতাড়ি ঘুমাতে এসো।আর না ঘুমালে দাঁড়িয়ে থাকো তাতে আমার কোন সমস্যা নেই।কিন্তু লাইটটা অফ করে যা খুশি করো।”
তেজবীন চোখের জল মুছে তাড়াতাড়ি লাইটটা অফ করে দিয়ে শুয়ে পড়ে।
____________________________________________
” তৃধা,তৃধা।তোমার কি হলো?নাকি আমরা চলে যাবো?” চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে তেজবীন।
” এইতো এসে পড়েছি।”
” তেজ ও কোথায় যাচ্ছে?” নন্দিনী প্রশ্ন করে।
” কেন আমরা যেখানে যাচ্ছি সেখানে।”
” মানে কি?ও কি আমাদের সাথে পার্টি যাবে নাকি?”
” হ্যাঁ অবশ্যই যাবে।আমরা সবাই যেহেতু যাচ্ছি তাহলে নিশ্চয়ই তৃধাও যাবে।ওকে তো আমি আর বাড়িতে একা রেখে যেতে পারিনা।”
” কেন?একা থাকলে সমস্যা কি?ও কি ছোট বাচ্চা নাকি এখানে বাঘ ভাল্লুক আছে যে ওকে খেয়ে ফেলবে?”
” উফ…তোমরা কি যাবে নাকি আমি ড্রেস চেঞ্জ করে ফেলবো?” তিথি বলে।
” ঢং যতসব।” আস্তে করে বলে নন্দিনী।
” কি গো তোমাদের হলো?মা তো কখন থেকে গাড়িতে অপেক্ষা করছে।”
নন্দিনী কোন কথা না বলে ধুপধাপ পা ফেলে বেরিয়ে পড়ে।তিথিও নন্দিনীর পেছন পেছন বেরিয়ে যায়।
” কি হলো তুমি এখানে সঙের মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন?চলো।”
” চলো।”
গাড়িতে তেজবীন আর রুদ্র সামনে বসে।এর পেছনে বাকিরা বসে।তারা এখন একটা পার্টিতে যাচ্ছে।পার্টিতে মূলত রুদ্র আর পরিবারের যাওয়ার কথা কিন্তু রুদ্র সেখানে তার শশুড় বাড়ির সবাইকে নিয়ে যাচ্ছে।
নন্দিনী,ফাতেমা বেগম কিছু মহিলাদের সাথে বসে গল্প করছে।তাদের পাশেই একটা চেয়ারে বসে তিথি ফোন চালাচ্ছে।রুদ্র বা তেজবীন দুজনের কাউকেই কোথাও দেখতে পাচ্ছেনা তৃধা।তৃধার একটু ওয়াশরুমে যাওয়া প্রয়োজন তাই একজন ওয়েটার থেকে জিজ্ঞেস করে সে ওয়াশরুমে আসে।কিন্তু সে ওয়াশরুমের দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে পড়ে।তৃধা থেকে কিছুটা দূরেই তেজবীন দাঁড়িয়ে আছে আর তার সামনে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।দুজনেই কিছু একটা নিয়ে কথা বলছে।মেয়েটা হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে কিছু একটা বলছে আর তেজবীন তার কথা শুনে হাসছে।তৃধা ধীর পায়ে তাদের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।
” তেজবীন।”
হঠাৎ করেই তৃধার আওয়াজ পেয়ে তেজবীন চমকে উঠে।
” তৃধা তুমি এখানে?”
” ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য এসেছিলাম।ইনি কে?”
” ও?ও হচ্ছে মেহেরিন।আমার আগের অফিসের কলিগ।মেহেরিন এ হচ্ছে তৃধা,আমার ওয়াইফ।”
” বাহ্ তেজবীন তোমার বউ তো দেখছি খুব সুন্দর।সামলে রেখো।দেখো আবার কেউ না তোমার খাঁচা থেকে পাখি চুরি করে নিয়ে যায়।ভালো থেকে,পরে আবার দেখা হবে।” মেহেরিন চলে যায়।তৃধা মেহেরিনের কথা বুঝতে না পারলেও মেহেরিনের কথা শুনে তেজবীনের মুখের হাসি উবে যায়।
” তুমি এখানে কি করছো?” গম্ভীর স্বরে বলে তেজবীন।
” ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য এসেছিলাম।”
” এখানে সঙের মতো দাঁড়িয়ে না থেকে যে কাজের জন্য এসেছো সে কাজের জন্য যাও।” কিছুটা ধমক দিয়ে বলে তেজবীন।
তৃধা তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে চলে যায়।ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে তৃধা দেখে তেজবীন এখনো দাঁড়িয়ে আছে।
” তুমি দাঁড়িয়ে আছো যে?”
” কেন?আমি দাঁড়িয়ে থাকলে তোমার সমস্যা হচ্ছে বুঝি?”
” না সেরকম কিছুনা।”
” চলো এখন।”
তৃধা তেজবীনের পেছন পেছন সেখানে পার্টি হচ্ছে সেখানে আসে।
” তিথির পাশে বসে থাকবে।একদম কোথাও যাবেনা।যদি আমি দেখেছি আমার কথার অবাধ্য হয়েছো তাহলে কিন্তু ভালো হবেনা।”
তৃধা ভালো মেয়ের মতো মাথা নাড়িয়ে তেজবীনের কথায় সায় দেয়।#বসন্তের_একদিন
#পর্বঃ১০
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
তিথির কথা শুনে তৃধা চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে।আসলে তৃধা তিথিকে জিজ্ঞেস করেছিলো মেহেরিন মেয়েটা কে কিন্তু তিথির কথা শুনে তৃধা কিছুটা কষ্ট পায়।
” ওই কালো ড্রেস পড়া মেয়েটার কথা বলছো?আরে ওটা তো মেহেরিন আপু।ভাইয়ার জন্য প্রথমদিকে যখন মেয়ে দেখা হচ্ছিলো তখন মেহেরিন আপুকেও আমরা দেখতে গিয়েছিলাম।বিয়ে অনেকটা ঠিকও হয়ে গিয়েছিল কিন্তু শেষ মহূর্তে এসে ভাইয়া বিয়ে করে মানা করে দেয়।কিন্তু তুমি হঠাৎ করে ওনার জন্য জিজ্ঞেস করছো কেন?তুমি চেনো নাকি?”
” না মানে তেজবীন বলেছিল যে উনি নাকি ওর আগের অফিসের কলিগ ছিল।”
” হ্যাঁ কলিগ ছিলো তো কিন্তু তোমাদের বিয়ে হওয়ার কয়েকমাস আগেই ভাইয়ার ট্রাস্ফার হয়ে যায়।”
” ও আচ্ছা।”
” তুমি বসো আমি আপুর সাথে কথা বলে আসি।”
তিথি চলে যায় মেহেরিন নামের মেয়েটার সাথে কথা বলার জন্য।তবে তিথির কথা শুনে তৃধার কিছুটা হলেও খারাপ লাগছে।তৃধা এদিক-ওদিক তাকিয়ে তেজবীনকে খুঁজছে তবে সে তাকে দেখতে পাচ্ছে না।
____________________________________________
নিজে ডেস্কে বসে কাজ করছে তৃধা তখন তাকে এসে অফিসের পিয়ন বলে,
” ম্যাডাম আপনাকে স্যার ডাকছেন?”
” কোন স্যার?”
” বড় স্যার।”
” আচ্ছা আপনি যান আমি আসছি।”
তৃধা তাড়াতাড়ি ফাইল বন্ধ করে অফিসের বসের কেবিন আসে।
” স্যার আসবো?”
” আসুন আসুন মিসেস তৃধা।”
” আমাকে ডেকেছেন স্যার?”
” হুম।তার আগে এটা বলুন কেমন আছেন আপনি?কাজ কেমন চলছে?”
” আমি ভালো আছি স্যার আর কাজেও ভালোই চলছে।”
” কাজের খুব প্রেশার তাই না?”
” সেরকম কিছু না স্যার।সব কাজেই কম বেশি প্রেসার তো থাকেই।”
” হুম কিন্তু এবার থেকে আপনার কাজের প্রেসার আর দায়িত্ব আরো বেড়ে যাবে।”
” যদি একটু বুঝিয়ে বলতেন স্যার।”
” এই নিন।” একটা খাম তৃধার সামনে রেখে বসে।
” এটা কি স্যার?”
” খুলে দেখুন।”
তৃধা ভয়ে ভয়ে খামটা খুলে দেখে কিন্তু খুলে খাম থেকে সে যা দেখতে পাই তা দেখে খুশিতে তার চোখে পানি জমে যায়।
” স্যার এটা?” কাঁপা কাঁপা গলায় বলে তৃধা।
” আপনার প্রমোশন লেটার।আপনার কাজে আমি খুব সন্তুষ্ট।এতো সুন্দর করে কাজ করার এবং নিজের দায়িত্ব ঠিক ভাবে পালন করেছেন তাই এটা আপনার পুরষ্কার।”
” অসংখ্য ধন্যবাদ স্যার।আমি এখন থেকে আরো ভালো ভাবে কাজ করবো।”
” কংগ্রেচুলেশন মিসেস তৃধা।”
” ধন্যবাদ স্যার।”
খুশি মনে বসের কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে তৃধা।আজ যেন তার খুশির সীমা নেই।
অফিস থেকে ফেরার পথে তৃধা একটা মিষ্টির দোকানে গিয়ে এক প্যাকেট মিষ্টি কিনে।মিষ্টি কিনে খুশি মনে তৃধা যখন দোকান থেকে বেরিয়ে আসে তখন তার চোখ আটকে যায় রাস্তার অপর পাশে থাকা রিকশাতে।একটা মেয়ে উঠছে রিকশাতে আর তার পেছন পেছন একটা ছেলেও উঠেছে।ছেলেটাকে তৃধা না চিনতে না পারলোও মেয়েটিকে তৃধা বেশ ভালো করেই চেনে কারণ মেয়েটি হচ্ছে তিথি।আজ তৃধা ভালো করেই খেয়াল করেছে মেয়েটা আসলেই তিথি।কিন্তু তিথিকে একটা ছেলের সাথে দেখে তৃধার মনে অজানা ভয় হতে থাকে।তৃধা আজও তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসে কিন্তু সেদিনের মতো আজ সে তিথিকে বাড়িতে দেখতে পেলোনা।তিথি তাড়াতাড়ি নন্দিনীর কাছে যায়।
” আপু তিথি কোথায়?”
” কেন?তোমার তা দিয়ে কি কাজ?”
” আপনি বলুন না তিথি কোথায়?”
” তিথু তো কোচিং এ গিয়েছে।”
” কখন বেরিয়েছে তিথি?”
” এইতো হবে ১ ঘন্টার মতো।তা তোমার হাতে ওটা কিসের প্যাকেট?”
” ও কিছুনা।আপনি টিভি দেখুন।”
মিষ্টির প্যাকেটটা উপরে তুলে রেখে তৃধা চেঞ্জ করতে রুমে চলে আসে।সন্ধ্যার ৭ টার দিকে তিথি বাড়িতে ফিরে আসে।তিথি আসার কিছুটা সময় পর তৃধা তিথির সাথে কথা বলতে আসে।
” তুমি কোথায় গিয়েছিলে তিথি?”
” কোথায় গিয়েছিলাম মানে?”
” মানে তুমি এতোটা সময় কোথায় ছিলে?”
” কোচিং এ ছিলাম।”
” কিন্তু তোমার কোচিং তো ৬ টায় শেষ।আর বাসায় আসতে তোমার বেশি হলে আধাঘন্টা সময় লাগে।”
” তুমি আমাকে জেরা করছো নাকি?আমার ইচ্ছা আমি কখন আসবো বাসাই।আর আমার তো অন্যকাজও থাকতে পারে তাইনা।”
” তো সেই অন্যকাজটা কি সেটাই জানতে চাইছি আমি।”
” আসলে ওই আমি আমার ফ্রেন্ডের সাথে শপিং-এ গিয়েছিলাম।ওর নাকি কিছু জিনিস কেনার ছিল।একা যেতে ওর ভয় লাগছিলো তাই আমাকে সাথে করে নিয়ে গিয়েছে।”
” ফ্রেন্ডটা ছেলে নাকি মেয়ে ছিল?”
” সেটা আমি তোমাকে কেন বলবো?আর তুমি আমাকে এতো প্রশ্ন কেন করছো বলো তো?”
” শোন তিথি তুমি আমার ছোটবোনের মতো।আমি চাইনা তোমার কোন ক্ষতি হোক বা তুমি কোন অসুবিধায় পড়ো।”
” উফ…এতো লেইম ডায়লগ বাদ দিয়ে বলবে আসল কাহিনিটা কি?”
” তাহলে তোমাকে সোজাসুজিও বলছি,আমি তোমাকে আজ একটা ছেলের সাথে দেখেছি।”
” কি!” চমকে জিজ্ঞেস করে তিথি। “কি বললে তুমি?আবার বলোতো।”
” আমি তোমাকে আজ একটা ছেলের সাথে রিকশা করে যেতে দেখেছি।”
” কিসব বলছো তুমি?আমি কেন কোন ছেলের সাথে রিকশায় উঠতে যাবো?”
” আজ কিন্তু আমি ঠিকভাবেই দেখেছি।তোমার আর ওই মেয়েটার ড্রেসের কালার কিন্তু সেইম ছিল।”
” আরে আজব,রাস্তায় তো কত মানুষের ড্রেস সেইম থাকে।আর তুমি কি একদম কাছ থেকে দেখেছো?”
” না আমি রাস্তার উল্টোদিকে থেকে দেখি।”
” শোন তোমার না চোখে সমস্যা হয়েছে।ডাক্তার দেখাও।না জানি রাস্তায় কাকে না কাকে দেখেছে আর বলছে ওটা নাকি আমি।যাও তো আমার মাথা খেওনা।”
তৃধা রুম থেকে বেরিয়ে আসে তবে তার মাথায় এখনো ঘুরছে আসলেই কি সে ভুল দেখে।মানুষ ভুল দেখে এটা ঠিক তাই বলে দু’বারই কি কেউ ভুল দেখে।
রাতে তেজবীন আর রুদ্র একসাথে বাড়ি ফিরে আসে।সবাই আসলে তৃধা সবার জন্য মিষ্টি নিয়ে আসে।
” কিগো বউমা হঠাৎ করে মিষ্টি আনলে যে?”
” আরে মা আগে খান তারপর বলছি।” তৃধা একটা মিষ্টি ফাতেমা বেগমের মুখে ঢুকিয়ে দেয়।তেজবীন ভ্রু-কুচকে তৃধার দিকে তাকিয়ে আছে।
” কিগো তৃধা সাহেবা হঠাৎ করে মিষ্টি খাওয়াচ্ছো?খুশির খবর শুনাবে নাকি?”
তৃধা বুঝতে পারে রুদ্র আসলে কি মিন করে কথাটা বলছে।তৃধা রুম থেকে প্রমোশন লেটারটা এনে তেজবীনকে দেয়।তেজবীন লেটারটা পড়ে কিন্তু তার মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না।
” কিগো বাবু,ও তোকে ওটা কি দিলো?আর বউমা হঠাৎ করে মিষ্টি কেন খাওয়াচ্ছো?”
” ওর প্রমোশন হয়েছে,এটা তার লেটার।” তেজবীন লেটারটা টেবিলে ফেলে চলে যায়।
” ও আচ্ছা।প্রমোশন হয়েছে।আমি তো আরো ভেবেছিলাম হয়তো এবার খুশির সংবাদটা শুনতে পাবো।হায়রে আমার পোড়াকপাল।”
এক এক করে সবাই উঠে চলে যায়।সবার প্রতিক্রিয়া দেখে তৃধার মন খারাপ হয়ে যায়।সে ভেবেছিলো সবাই হয়তো তার প্রমোশনের কথা শুনে খুশি হবে কিন্তু না কেউ খুশি হলোনা।অন্যকেউ না হোক অন্তত তেজবীন খুশি হবে মনে করেছো তৃধা কিন্তু তেজবীনও সবার মতো বিষয়টাকে গুরুত্ব দিলোনা।
” বাহ্ তৃধা সাহেবা,আপনি তো মনে হয় অফিসে খুব মনে দিয়ে কাজ করেন।”
এতোক্ষণ সবার কথা ভাবছিলো তৃধা।হঠাৎ করেই রুদ্রের কন্ঠ শুনে পিলে চমে উঠে তৃধা।
” আরে আরে এতো ভয় পাচ্ছেন কেন?তো যেটা বলছিলাম অফিসে জয়েন করেছেন তো বেশি দিন হয়নি আর এখনই প্রমোশন,বাহ্।আপনি তো দেখছি কাজে খুবই নিষ্ঠাবান।তা তৃধা সাহেবা কাজটা কি আমি জানতে পারি?যে এতো মন দিয়ে কাজ করেছেন আর কয়েকমাসেই আপনার প্রমোশনও হয়ে গেলো।” বাঁকা হেসে বলে রুদ্র।রুদ্র কথাগুলো কোন ইঙ্গিতে বলতে তা বুঝতে অসুবিধে হয়নি তৃধা আর বুঝতে পেরেছেই রাগ উঠে যায় তৃধার।
চলবে…….
চলবে…..
(