বিকেলে ভোরের ফুল পর্ব ৮

#বিকেলে_ভোরের_ফুল

#পর্ব_৮

#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)

ফুল স্পর্শের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। একবার ওড়না ঠিক করতেছে তো একবার জামা টানতেছে। স্পর্শ বসে বসে ফুলের কান্ড দেখতেছে। ফুল এখনও কিছু বলছে না এর জন্য স্পর্শ বিরক্ত হয়ে গেছে। ধমকের সুরে বলল,

–“কি হয়েছে??ডেকে তুলে এখন কিছু বলছো না কেন??”

ফুল পড়েছে অস্বস্তিতে। কিভাবে বলবে বুঝতে পারছে না। একটা ছেলেকে কিভাবে মেয়েদের এরকম প্রবলেম বোঝাবে??স্পর্শ আবার ধমক দিতেই ফুল বলল,

–“এ একটা প্রবলেম হয়েছে??”

–“কি প্রবলেম??”

–“আসলে,,,,,,”

–“স্পষ্টভাবে বলতে পারো না।”

–“আপনাকে কিভাবে যে বলি।”

–“কেন??আমি কি বাঘ না ভাল্লুক যে বললে তোমাকে খেয়ে ফেলব।”

–“মেয়েদের সমস্যাটা আপনি কি বুঝবেন??”

স্পর্শ এবার বুঝতে পারলো যে ফুলের কি হয়েছে। স্পর্শ বলল,

–“পিরিয়ড”

ফুল মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলল। স্পর্শ উঠে দাঁড়িয়ে শার্ট পরে একটা কাগজ কলম ফুলের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,

–“তোমার যা যা লাগবে এখানে লিখে দাও আমি এনে দিচ্ছি।”

ফুল তাড়াতাড়ি লিখে দিলো। স্পর্শ কাগজটা নিয়ে বেরিয়ে যায়। ফুল আবাক হয়ে স্পর্শকে দেখছিলাম এতক্ষণ। লোকটাকে যতটা খারাপ ভেবেছিল ততটা খারাপ নয়। ফুল নিজের মাথায় চাটি মেরে বলল,

–“ওই লোকটাকে ভালো বলছিস কেন তুই?? একদিন ভালো কাজ করলেই ভালো হয়ে যায় না। মনে আছে এই লোকটা তোকে কিডন্যাপ করে এনেছে।”

ফুল সারা রুম জুড়ে পায়চারি করতেছে। পায়ে লাগানো শিকলটার প্রতি খুব বিরক্ত ফুল। টেনে টেনে হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে। এরজন্য ক’বার যে পা ঝাড়া দিয়েছে তার হিসেব নেই। প্রায় ঘন্টাখানেক পর স্পর্শ ফিরে এলো। হাতের ব্যাগটা ফুলের হাতে দিতেই ফুল দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।

🍁🍁🍁

স্পর্শর সকালে আনা খাবারের প্যাকেট মেঝেতে বসে খুলতেছে। তখনই স্পর্শ গোসল সেরে তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বের হয়। বিছানায় তোয়ালে রেখে শার্ট পরে নিল। ফুল নাক কুঁচকে বলল,

–“এই যে আপনি বাথরুমের দরজা খুলে রেখেছেন কেন?? দেখছেন না আমি খেতে বসেছি।”

–“তো কি হয়েছে??”

–“কি হয়েছে মানে?? এখান থেকে স্পষ্ট বাথরুমের ভেতরটা দেখা যাচ্ছে।”

স্পর্শ আর কথা না বাড়িয়ে বাথরুমের দরজাটা বন্ধ করে দেয়। তারপর বিছানায় বসে নিজে খেতে শুরু করলো। খেতে হঠাৎ করেই স্পর্শর গলায় খাবার আটকে গেল। আশেপাশে তাকিয়ে পানির বোতলটা পেল না। একটাই পানির বোতল সেটা ফুল নিয়ে বসে আছে। স্পর্শ জোরে জোরে কাশতে লাগলো। স্পর্শকে এভাবে কাশতে দেখে ফুল পানির বোতল নিয়ে দৌড়ে আসলো। স্পর্শ পানি খাচ্ছে আর ফুল স্পর্শর মাথায় ফু দিচ্ছে। অবশেষে স্পর্শর কাশি থামলো। স্পর্শ পানির বোতল রেখে ফুলের দিকে তাকালো। ফুল পানির বোতলটা নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

–“ওভাবে কি দেখছেন?? তখন আপনি আমাকে হেল্প করেছেন তাই এখন আমি আপনাকে হেল্প করলাম। তবে ভাববেন না যে আমি আপনার প্রতি গলে গেছি।”

স্পর্শ অবাক। এই মেয়ে যখন যা ইচ্ছা তাই বলে ফেলে। স্পর্শ বলল,

–“সবসময় এক লাইন বেশি না বললে তোমার ভালো লাগে না তাইনা?? বেশি বকবক করো তুমি।”

ফুল খাবার মুখে দিয়ে বললো,

–“বাড়িতে তো কথা বলতে পারি না তাই এখন বলছি।”

–“কেন?? তোমার বাড়িতে কি কথা বলা নিষেধ??”

–“মেয়েদের কথা বলা নিষেধ। দাদি বলে মেয়েদের নাকি সবসময় ছেলেদের পায়ের নিচে থাকতে হয়, মাথায় নয়।”

–“এটা কোন ধরনের নিয়ম?? এখন তো প্রতিটা পরিবারের সদস্যরা শিক্ষিত। এসব উদ্ভট চিন্তা ভাবনা তোমার দাদি কিভাবে করে??

–“শুধু তাই নয়। দাদি এও চায় যে বাড়ির বউ শুধুমাত্র ছেলে সন্তান জন্ম দেবে মেয়ে নয়। অথচ তিনি নিজেই যে একজন মেয়ে সেটা ভুলেই গেছে।”

–“অদ্ভুত সব নিয়ম। কিন্তু তুমি যে মেয়ে হয়ে জন্মেছো এতে তোমার দাদি কিছু বলেনি।”

ফুল একটা বড় নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,

–“এটাই তো আমার ভুল। না আমার নয় আমার মায়ের ভুল সেজন্য তো আমার মাকে,,,,,,”

ফুল চুপ করে গেল। কথা যেন মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না। চোখ পানিতে ভরে গেছে। শ্বাস যেন আটকে আসছে,জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো ফুল। স্পর্শ এখনও ফুলের দিকে তাকিয়ে আছে ফুলের কথা শোনার জন্য কিন্তু ফুল কিছু বলছে না নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। আর ওর চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়তেছে। স্পর্শ বলল,

–“তোমার মাকে কি??”

ফুল মাথা নিচু করেই বললো,

–“কিছু না।”

স্পর্শ কৌতুহলী হয়ে বলল,

–“কিছু তো একটা হয়েছে?বলো কি হয়েছে?”

–“সেটা আপনার না জানলেও চলবে।”

স্পর্শর এবার রাগ হচ্ছে খুব। মেয়েটা সব কথা অর্ধেক বলে। আরে বাবা কথা বলতে ইচ্ছে করে না তো বলবি না। অর্ধেক কথা বলার কি কোন মানে হলো??স্পর্শের মাথায় প্রশ্নের জটলা বেঁধে গেছে। ফুলের মা যাকে স্পর্শ আন্টি বলে ডাকতো,তার কি কিছু হয়েছে?? কিন্তু কি হয়েছে??স্পর্শের জানতে খুব ইচ্ছা করছে। কিন্তু জানবে কিভাবে??ফুলকে জিজ্ঞেস করলে তো কিছুই বলবে না। মেয়েটা সবসময় মুখটা গোমড়া করে থাকে। একটুও হাসে না। অবশ্য হাসবেই বা কেন??কিডন্যাপ হলে তো কান্না আসে। এসব ভেবে স্পর্শ দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে।

ফুল আর খেতে পারল না। খাবার গলা দিয়ে নামছেই না। খাবার একপাশে রেখে বসে রইল। স্পর্শ এক পলক ফুলের দিকে তাকিয়ে আবার খাওয়ায় মন দিলো। খাওয়া শেষে স্পর্শ ফোন ঘাটছে। আর ফুল দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসে বসে ফুলের মালা নাড়ছে। যদিও মালাটা পচে গেছে। এগুলো ওর গায়ে হলুদের মালা সেদিন খুলে রেখেছিল। পচা মালাটার সাথে নিজের মিল খুঁজে পাচ্ছে ও। আনমনে মালাটা নেড়ে যাচ্ছে। স্পর্শর চোখ গেল ফুলের দিকে। পচা মালা নাড়তে দেখে স্পর্শ বলল,

–“পচা মালা দেখে আর লাভ নেই। কারণ তোমার বিয়েটাতো এই মালার মতোই পচে গেছে।”

ফুল মালাটার দিকে তাকিয়ে বলল,

–“ফুলের জীবন বড়োই করুন। কিছু ফুল ঝড়ে পড়ে যায়। আর কিছু ফুল ঝোলে শয়তানের গলায়।”

ফুলের এই কথায় স্পর্শ থতমত খেয়ে যায়। ফুল শয়তানের গলায় ঝোলে মানে? শয়তান বলতে ফুল কাকে বোঝাতে চাইছে??

–“শয়তান মানে?? তুমি কাকে মিন করতে চাইছো??”

–“কাকে না বলুন কাদেরকে?? আমাদের পৃথিবীতে অনেক নামিদামি মানুষ আছে। একটু সুনাম অর্জন করলেই তাদের গলায় ফুলের মালা ঝোলে। কিন্তু মানুষ কি একবারও সেই লোকটার মনের কথা জেনেছে??যার গলায় মালা চড়াচ্ছে সেই মানুষটি কি আদৌ ভালো মানুষ নাকি ভালো মানুষের মুখের আড়ালে রয়েছে নিকৃষ্টতা??
তাই বলছি ফুলের জীবন খুবই নগণ্য। ভালো মানুষের গলায় তাকে চড়ানো হয় না। খারাপ মানুষের গলায় ফুলকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।”

স্পর্শ মুগ্ধ হয়ে এতক্ষণ ফুলের কথাগুলো শুনছিল। এই মেয়েটা কথা বলার এতো লজিক কোথায় পায় কে জানে?? তবে কথাগুলো সত্যি। এই সমাজে ভালো মানুষের প্রস্থান ঘটে আর খারাপ মানুষের আগমন হয়। ফুলের মালা দিয়ে তাকে বরণ করে নেওয়া হয়।

পরদিন সকালে ফোন কলের শব্দে স্পর্শর ঘুম ভাঙল। স্পর্শ ফোন রিসিভ করে,

–“হ্যালো।”

–“বস একটা সমস্যা হয়েছে।”

–“কি সমস্যা??”

–“পুলিশ পুরো মৌলভীবাজার আর তার আশেপাশের যতসব এলাকা আছে তা ঘিরে ফেলেছে।”

একথা শুনে মুহূর্তেই স্পর্শ দাঁড়িয়ে যায়।

–“কি বলছিস তুই??”

–“আমি ঠিকই বলছি। পুলিশ আপনার ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করে মৌলভীবাজার তল্লাশি করেছে। এবং পরে আশেপাশের এলাকা ঘিরে ফেলেছে। এখন কি হবে??”

–“ওয়েট ভাবতে হবে।”

–“এখন ভাবার সময় নেই। যেকোন সময়ে পুলিশ আপনার খোঁজ পেয়ে যেতে পারে। আপনি মেয়েটাকে ওখানে ফেলে চলে আসুন।”

–“ইম্পসিবল। এক কাজ কর তুই এখানে চলে আয় তাড়াতাড়ি।”

–“আচ্ছা।”

–“আর শোন…………………..”

–“ওকে আমি এখনই আসছি।”

স্পর্শ ফোন কেটে তাড়াতাড়ি ব্যাগপত্র গোছাতে লাগলো। ফুল এখনও ঘুমাচ্ছে। স্পর্শ দ্রুত গিয়ে ফুলের পা থেকে শিকলটা খুলতে লাগলো। পায়ে কারো ছোঁয়া পেয়ে ফুল লাফিয়ে উঠে। স্পর্শকে দেখে অবাক হয়ে যায়।

–“একি কি করছেন?? আপনি কি আবারও কুমতলব আটছেন?? দেখুন ভালো হবে না কিন্তু দূরে যান আমার থেকে।”

স্পর্শর ইচ্ছে করছে ঠাঁটিয়ে ফুলের গালে চড় মারতে। এমনিতেই টেনশনে মরে যাচ্ছে আর এই মেয়েটা এসেছে ঝগড়া করতে। কিন্তু আপাতত ঝগড়া করার সময় নেই। তাই স্পর্শ তাড়াতাড়ি করে শিকলটা খুলে ব্যাগে ভরে নিল। ফুল এবার ভয় পাচ্ছে। স্পর্শ করতে চাইছে কি??পা থেকে শিকলটা খুলল কেন??আর ব্যাগ গোছাচ্ছেই বা কেন??

এসব ভাবতে ভাবতেই দরজায় টোকা পড়লো। সাথে সাথে ফুল কেঁপে উঠল। এসময় কে এলো?? এখানে তো স্পর্শ আর ফুল ছাড়া কেউ থাকে না তাহলে কে এলো??
স্পর্শ এগিয়ে গেল দরজা খোলার জন্য।

চলবে,,,,,,,,,,,,

আজকে আমি খুব খুব খুব ব্যস্ত। ব্যস্ততার মাঝেও এটুকু সময় বের করে গল্প পোস্ট করলাম তাই দেরি হয়েছে। সরি টু অল❤️❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here