বিধুর রজনী পর্ব -০৮+৯

#বিধুর_রজনী
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৮]
___________________
১৫
দুর্গে থাকা ঘুমন্ত মানুষজন পুনরায় জেগে উঠেছে।বাইরে অন্ধকার হালকা কুয়াশায় ভিজে আছে চারিদিক।সম্রাট আব্বাস ওজু শেষে ডেকে পাঠালেন উজির হাযম’কে।

” সবার ঘুম ভেঙ্গেছে?সবাইকে নামাযে পাঠাও।”

” যথা আজ্ঞা সম্রাট।”

” ইবনুলের ঘুম ভেঙ্গেছে?তাকে জানিয়ে দিও নামায শেষে আমি তার সাক্ষাৎকার চাই।”

” তিনি এখনো ঘুমে সম্রাট।আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন তার ঘুম যেন না ভাঙ্গাই।”

” আমার নিয়মের অমান্য এক্ষুনি তাকে জাগ্রত করে নামাযে পাঠাও আমি আসছি।”

” যথা আজ্ঞা।”

সম্রাট আব্বাস জায়নামাজ মেঝেতে রাখলেন।উজির হাযম এগিয়ে গেলেন শাহজাদা ইবনুলের কক্ষের দিকে তৎক্ষণাৎ দেখা পান সেনাপ্রধান ফারুকের।

” সেনাপতি মশাই আপনি ঘামছেন কেন?”

” মেয়েটা মা/রা গেছে।সে কি বীভৎস দেহ!দয়াহীন ইবনুল মেয়েটাকে খুবলে খেয়েছে বিকৃত যৌনাচারের কারণে অধিক রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়েছে তার।”

উজির হাযম নত মস্তকে চোখ বুঝলেন।অপরাধ বোধ তাকেও বিবশ করছে তবে তিনি করবেন বা কি? তিনি শাহজাদার কথা মান্য করেছেন ব্যস এইটুকু।

” উজির মশাই শাহজাদা’র কথা মত মেয়েটির লা/শ জঙ্গলে ফেলে এসেছে দাস’রা।শাহজাদা চাইছিলেন জঙ্গলের হিংস্র জ/ন্তু জা/নো/য়া/রের ভোজন যেন এই মেয়ের মৃত দেহ হয় ভাবতে পারছেন পা/ষা/ণের এ কেমন আদেশ!”

উজির হাযম ঠোঁট বাকিয়ে কিঞ্চিৎ হাসলেন।দু’পা এগিয়ে এলেন সেনাপতি ফারুকের সামনে।কানের কাছে মুখ নিয়ে বলেন,

” শাহজাদা ইবনুল নিজেও হিং,স্র জ/ন্তু,জানো/য়ার।জঙ্গলের জা/নো/য়ারের আগে তো তিনি ভোগ করেছেন মেয়েটাকে।তবে জঙ্গলের জা/নো/য়ার আর তার মাঝে পার্থক্য কই?তিনি দেহের ক্ষুধা মেটালেন আর জঙ্গের অবলা প্রাণী পেটের ক্ষুধা মেটাবে।

১৬.
অলকপুরী’র প্রাসাদে আজ আবার হইচই বেঁধেছে।প্রত্যুষে শেহজাদী আরওয়ার জানলা বেয়ে এক আগন্তুক কক্ষে প্রবেশ করার চেষ্টা করেছে।দুর্ভাগ্যবশত বিষটি চোখে পড়েছে প্রহরী’র।শাহজাদা ইবনুল যু/দ্ধে যাওয়ার আগে বেশ কয়েকজন প্রহরী’কে নির্দেশ দিয়ে গেছেন সর্বাবস্থায় শেহজাদীর কক্ষের আনাচে-কানাচে নজর রাখতে আর প্রহরী’রা সেই নির্দেশ মোতাবেক কাজ করেছে।ইতোমধ্যে সেই আগন্তুক’কে বন্দি করা হয়েছে।বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন শেহজাদী কেননা সেই আগন্তুক তাসবীর!ঘটনাটি শ্রবণ হতে শাহজাদা ইদ্রিস বন্দিশালায় গিয়ে নিজেও চমকে যান।তাসবীরের কাতর চাহনী তার অন্তরে শূল বাঁধিয়েছে।কিন্তু দাস এবং প্রহরীর সামনে মুখ খুললেন না তিনি।বরং ছুটা যান সম্রাজ্ঞী শাহাবার কাছে এই মুহূর্তে যা করার তিনি করবেন।এত শত কাণ্ডের মাঝে প্রশ্ন একটা তো ঘুরপাক খাচ্ছেই ‘শেহজাদীর রুমে তাসবীরের প্রবেশ কেন?’

রাতের ঘুমের পোশাক গায়ে তার এলোমেলো কেশে ওড়না বিছিয়ে মুখের একাংশ ঢেকে বন্দিশালায় উপস্থিত হন শেহজাদী আরওয়া নূর।তাকে দেখে নত মস্তকে কুর্নিশ করলেন প্রহরী,পেয়াদা,দাস সহ সকলে।তাসবীর শেহজাদীর অবস্থা দেখে ঢোক গিলেন যদি কোন ক্রমে ইদ্রিস শেহজাদী আর তার সম্পর্কের কথা জানতে পারেন তবে কেলেঙ্কারি ঘটে যাবে।বন্ধুত্বের সম্পর্কে দানা বাধবে বিশ্বাস/ঘা-তকতার শ/ক্রতার।তাসবীর সবার অগোচরে শেহজাদীকে কিছু ইশারা করলেন তবে শেহজাদী আরওয়া তা বুঝলেন কি না কে জানে।

শেহজাদী এগিয়ে গেলেন তাসবীরের সম্মুখে তবে তাদের সামনে বাঁধা হয়ে রইলো দণ্ডায়মান লোহার শিক।যে সুপুরুষ’টির প্রণয়ে শেহজাদী হাবুডুবু খাচ্ছেন আজ সেই সুপুরুষ’টি আহত অবস্থায় সেঁটে আছে দেয়ালে।চাবুকের ভয়ংকর আঘাতে চামড়া ফেটে র/ক্তের ধারা বইছে।সারা দেহের চামড়া ছিলে র/ক্তে মাংসে একাকার অবস্থা এই দৃশ্য যে সয়না শেহজাদীর চোখে।খা খা করে উঠে বুকটা তবে ঘুমন্ত তার হিংস্র আত্মা’টা যেন জেগে উঠেছে আরেকবার ধ্বংস তাণ্ডব লীলাখেলার ভয়ে তাসবীর ঠোঁট ইশারায় শেহজাদীকে শান্ত থাকতে নির্দেশ দেন তবে তার ইশারা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করলেন শেহজাদী কুটিল হাসলেন মুহূর্তে।

” এই আগন্তুক যুবক’কে বন্দি করেছেন কে?”

একজন প্রহরী এগিয়ে এলেন শেহজাদীর সামনে এবং নির্দ্বিধায় বললেন,

” শেহজাদী আমি।”

” তাকে আহত কি আপনি করেছেন?”

“জ্বি আমি করেছি।”

” আহত করার কারণ?”

” আপনার কক্ষে তিনি কেন প্রবেশ কর‍তে চেয়েছেন তার উত্তর জানতে তবে তিনি এখনো মুখ খুলেন’নি।”

” আমি আদেশ করেছিলাম যুবকটির গায়ে যেন একটি আঁচড় না লাগে তাহলে কেন তাকে আঘাত করলেন?আমার আদেশ কি আপনার কাছে এতই তুচ্ছ?”

” মার্জনার দৃষ্টিতে দেখুন শেহজাদী।শাহজাদা ইবনুল আমাকে আগেই আদেশ করে গেছেন এবং তার আদেশ আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করছি।”

প্রহরীর কথায় তীব্র অপমানের সঞ্চার হলো শেহজাদীর মনে।নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার তিনি আগেও করেছেন সর্বদা স্বার্থপর হয়ে চলেছেন তিনি।নিজেকে রেখেছেন সবসময় আলোচনা সমালোচনা মুখর, তিনি চান রাজ্যের প্রত্যেক সদস্য তাকে ভয় করুক মান্য করুক কিন্তু এই প্রহরী স্পর্ধা দেখে শেহজাদী নিজেই হতভম্ব।

” যা হওয়ার হয়েছে আমি ছাড় দিলাম যুবকটিকে বন্দিদশা থেকে মুক্তি করুন।”

ইতোমধ্যে বন্দিশালায় উপস্থিত হন ইদ্রিস এবং শাহাবা।শেহজাদীর কথা শুনে ইদ্রিস সহ সম্রাজ্ঞী শাহাবা খানিকটা নিশ্চিন্ত হলেন।এই প্রহরীর তর্কে বির্তকে আবার না অঘটন ঘটান আরওয়া তার ভয় হচ্ছিল সকলের।খাসদাসী লতা এমন পরিস্থিতিতে রুদ্ধশ্বাস ছেড়ে ক্ষান্ত হলেন।কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায় থেকে অস্বাভাবিক পর্যায়ে মোড় নিল প্রহরীর উগ্রতায়।

” তা হয় না শেহজাদী যতক্ষণ না সম্রাট এবং শাহজাদা ফিরছেন আমি আগন্তুক’কে ছাড়ছি না।”

” আপনি আমার ধৈর্য্যর পরীক্ষা নিচ্ছেন।আগন্তুকের ব্যাপারে যা জানার আমি জানবো।মুক্তিদিন তাকে।”

” আমি আমার দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট…”

প্রহরীর শেষ না হওয়া কথার মাঝে গর্জে উঠলেন শেহজাদী।এত বড় স্পর্ধা আরওয়া নূরের সঙ্গে বেয়াদবি!এক দিকে আহত তাসবীরের দেহ দেখে মূর্ছা অবস্থা অপর দিকে প্রহরীর তর্কবিতর্ক কথার খেলাপ সব মিলিয়ে ক্রোধ সংযত করতে পারলেন না তিনি। দেয়ালে আটকে রাখা সাজানো শানিত তরবারি হাতে তুলে চোখের পলকে কতল করলেন প্রহরীকে।আকস্মিক কাণ্ডে রুদ্ধশ্বাস চোখে চেয়ে রইলেন সকলে।আহত প্রহরী গলা ধরে কাতরাতে কাতরাতে মেঝেতে গড়িয়ে পড়লেন।মেঝেতে যেন রক্তের ফোয়ারা বইছে।কয়েকজন দাস দ্রুত এগিয়ে এলো প্রহরীকে মাটি থেকে তুলতে কিন্তু তাদের হাত ইশারায় থামিয়ে দেন শেহজাদী চোখে মুখে ক্রোধ ফুটিয়ে বলেন,

” খবরদার কেউ ছুঁবে না তাকে।যতক্ষণ চেতনা থাকে এখানেই ছটফট করুক সে।আমিও দেখতে চাই তার তেজ কি করে থাকে।”

শাহজাদা ইদ্রীস এই ভয়টাই পাচ্ছিলেন।বোনের হাত থেকে তরবারি ছিনিয়ে নিয়ে ছুড়ে ফেললেন দূরে।

” নূর এসব কি করছো।মাথা ঠাণ্ডা করো।”

” আমার কাজে নাক গলাবে না ভাইজান।তোমাদের প্রহরীদের বলে দাও যুবক’টিকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করতে এবং তাকে যেন আমার কক্ষে হাজির করা হয় যত দ্রুত সম্ভব।”

“আমি কথা বলে দেখেছি তুই…..”

শেহজাদী হাত ইশারায় থামিয়ে দিলেন শাহজাদা ইদ্রীসকে।নিজের দাম্ভিকতা বজায় রেখে গটগটিয়ে হেটে চলে যান নিজের কক্ষে।

তীব্র বাতাসের কাঁপুনি ধরে যায় তাসবীরের গাত্রে অথচ শেহজাদী আরওয়া এক ধ্যানে তাকিয়ে আছেন বাইরে। চোখে মুখে রেষের ভাব একটুও কাটেনি।কাঁধের চাদর মাটিতে অনাদর অবস্থায় এলিয়ে পড়েছে।তাসবীর যত্ন হাতে চাদর তুলে এগিয়ে দেন শেহজাদীর কাঁধে।অলিন্দ থেকে চুপচাপ কক্ষে ফিরে আসেন শেহজাদী ঝাপসা চোখে কয়েক পলক তাকালেন তাসবীরের দিকে।

” আমি আপনাকে এসেছি ভালোবাসা শেখাতে অথচ আপনি আমাকে ভালোবেসে অন্যকে হত্যা করলেন!এমন টা কেন করলেন শেহজাদী?এমন করা কি খুব জরুরি ছিল?”

” আমি কাউকে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই।”

কিঞ্চিৎ হাসলেন তাসবীর।ব্যথায় টনটন করা শরীর নিয়ে বসলেন শেহজাদীর পালঙ্কে।

” আমার জীবনের সেরা প্রাপ্তি কি জানেন?আমি আপনার মন জয় করেছি তা জানতাম তবে আমার আঘাত প্রাপ্ত শরীর দেখে আপনার চোখে মুখে যে দিশেহারা দেখেছি তা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভুলা সম্ভব নয়।মৃত্যুর আগে শেষ আলিঙ্গনে হলেও আপনাকে চাই আরওয়া!”

শিউরে উঠলো আরওয়া।থম মেরে চেয়ে রইলো জানলার বাইরে নিজেকে সংযত করে দৃঢ় কণ্ঠে বলে,

” পিতা এবং ভাইজানকে কি জবাব দেবেন তা ভেবে নিন তাসবীর।তাদের হাত থেকে আপনাকে বাঁচানোর সাধ্য আমার নেই।আগেই বলেছিলাম আমার কক্ষে সময় অসময়ে আসবেন না।”

” কথার খেলাপ করায় মাফ চাইছি।শেষ রাতে যে দুঃস্বপ্ন দেখেছি আপনাকে নিয়ে তা দেখার পর নিজেকে আর সংযত রাখতে পারিনি।”

শেহজাদী কোন প্রতিক্রিয়া দেখালেন না।তাসবীরের উপর রাগ একটুও কমলো না বরং সময়ের তালে তালে তা বাড়তে থাকে।সাদা চাদরে রক্তের দাগ দেখে খানিকটা বিচলিত হয়ে পড়েন পরপরেই মনে পড়ে চাদরে তাসবীরের রক্তের দাগ লেগেছে।শেহজাদী নিজের রাগ সংবরণ করে এগিয়ে যান তাসবীরের কাছে।ছুঁয়ে দেন যুবকটির আহত গাল।

” কবিরাজ’কে ডেকে পাঠাচ্ছি তিনি ওষুধ দিয়ে সারিয়ে তুলবেন।আশা করি আপনি আপনার বুদ্ধির জোরে ভাইজান এবং ভাইয়ের হাত থেকে রক্ষা পাবেন।”

” আরওয়া এতকিছুর পরেও আপনি আমার কাছে ধরা দিতে প্রস্তুত নন!”

” অবেলায় কাছে এসেছেন।”

” সম্রাট সাঈদের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হওয়ায় কি এই দূরত্ব?”

” ধরে নিন তাই।আসছি আমি।”

কবিরাজ আকরাম শেহজাদীর কথামত বেশ যত্ন নিয়ে তাসবীরের চিকিৎসা চালান।সম্রাজ্ঞী শাহাবার নির্দেশে তাকে অতিথি কক্ষে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়।এতকিছুর পরেও শাহজাদা ইদ্রীসের মনে একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিলো আর তা হলো শেহজাদীর কক্ষে তাসবীরের প্রবেশ কেন?আর সেই প্রশ্নের উত্তর পেতে তাসবীরের সঙ্গে একাই সাক্ষাৎ করেন তিনি।

” আমি আগেই বলেছিলাম চলে যাও এই প্রাসাদ ছেড়ে শুনলে না আমার কথা।যদি আমার কথা রাখতে তবে এই হাল হতো না।ভাইজান আর পিতা এলে কি হবে আমি ভাবতে পারছি না।”

” বাদ দাও সেসব কথা।তুমি দেখবে আমি ঠিকি সবকিছুর সুরাহা করবো।তুমি শুধু দোয়া রেখো আমার জন্য।”

ইদ্রিস সন্দিহান চোখে তাকালেন তাসবীরের দিকে।

” শেহজাদীর কক্ষে কেন প্রবেশ করতে চাইছিলে তাসবীর?”

ভড়কে গেলেন তাসবীর।জানতেন এই প্রশ্নের সম্মুখে তিনি পড়বেন তাও খানিকটা বিচলিত হয়ে পড়লেন।উপস্থিত বুদ্ধি সাজিয়ে সোজাসাপ্টা বলেন,

” আমায় বিশ্বাস করো বন্ধু?

” আলবৎ করি।”

” তাহলে যা বলছি বিশ্বাস করো।আমি জানতাম না কক্ষে শেহজাদী আছেন।শেহজাদীর কক্ষের জানলার কার্নিশ বেয়ে কেউ একজন প্রবেশ করার চেষ্টা করে আর আমি তাকে অনুসরণ করতে গিয়ে শেহজাদীর কক্ষের সামনে দাড়াই এরপর যা হওয়ার হয়েছে।”

” এসব কি বলছো বন্ধু!”

” যা বলছি ঠিকঠাক বলছি।শেহজাদীর তরবারিতে কতল হওয়া সেই প্রহরী কী বেঁচে আছেন?”

” তিনি বাঁচা ম/রা/র সন্ধিক্ষণে!”
#চলবে_____
❌কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ❌
সবাইকে রেসপন্স করার অনুরোধ রইলো।#বিধুর_রজনী
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৯]
_______________
১৭.
যুদ্ধে জয়ের আনন্দে মত্ত আজ সারা প্রাসাদ যদিও রাজ্যে জুড়ে আজ মিষ্টান্ন খাবারের বিতরণ চলছে তাতে খুব একটা প্রজারা খুশি নন।কেননা সম্রাট আব্বাস যে রাজ্যে দখল করে সেই রাজ্যে বেড়ে যায় অনাচার।যেসব ভূমি নিষ্কর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে সেসব জমি’তেও কর দিতে বাধ্য করা হচ্ছে প্রজাদের।সম্রাট আব্বাসের খাজনা আদায়ের কৌশল বেশ কঠোর।যারা খাজনা দিতে অস্বীকৃতি জানায় তাদের চামড়া তুলে লবণ সিঞ্চন করা হয়।সন্ধ্যায় সম্রাট আব্বাস, উজির হাযম,শাহজাদা ইবনুল সহ নয়জন আমীরকে নিয়ে শরাব পানের আসর বসেছে।সম্রাট আব্বাসের মেজাজ আজ বেশ ফুরফুরে।উদয় নগরী দখল করলেও পরাজিত সম্রাট ওয়াহাব এবং মেসবাহ পালিয়ে যান।হর্ম্যে থাকা সম্রাজ্ঞী দাস-দাসী সকল’কে বন্দি করা হয়।তাদের মাঝে কাউকে নর্তকীদের আসরে নিযুক্ত করা হয়।
সম্রাট আব্বাসের হাতে স্বর্ণের পানপাত্র তিনি তা এগিয়ে দিলেন উজিরের নিকট।উজির হাযম মাথা নত করে পাত্র ভরতি করে শরাব এগিয়ে দিলেন।নয় জন আমীরের মাঝে একজন আমীর বলে উঠেন,

” জাহাঁপনা অনুমতি পেলে কিছু কথা বলতে চাই।”

” অনুমতি দেওয়া হলো।”

” রাজ্যে বিস্তার করলেই যে হবে না।আপনার রাজ্যের উন্নয়ন খুব একটা যে হয়েছে তা কিন্তু নয়।”

” আপনি কি বলতে চাইছেন স্পষ্ট ভাষায় বলুন।”

” আমি বলতে চাইছি যে আহমেদাবাদ রাজ্যের খোঁজ রেখেছেন?তারা কিন্তু সব দিক থেকেই স্বাবলম্বী এবং শক্তিশালী।আমাদের রাজ্যে নাট্যশালা নেই,ভালো চিত্রকর নেই,মান সম্মত কবি নেই,নাম করা মহল ইমারত নেই।সবচেয়ে বড় কথা আমরা মুসলিম আমাদের রাজ্যে জুড়ে মসজিদ সংখ্যা মাত্র এক।”

আমীরের কথায় স্বর্ণের পানপাত্র পাশে রেখে চিন্তিত ভঙ্গিমায় থুতনিতে হাত রাখেন সম্রাট।

” এই কথাতো আমি আগে ভেবে দেখেনি।উজির হাযম এই বিষয়ে আপনি কি বলেন?”

” আমার একই বক্তব্য জাঁহাপনা।আমাদের রাজ্যে স্থাপত্য-কীর্তি’র দিক দিয়ে পিছিয়ে।”

” বেশ তবে এই দায়িত্ব আমার পুত্র ইদ্রীসকে দেওয়া হবে তার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকবেন উজির হাযম।”

” যথা আজ্ঞা জাঁহাপনা!”

অতিরিক্ত শরাব পানে নেশা ধরে যায় শাহজাদা ইবনুলের তাই আমীর এবং সম্রাটের কথা কানেই তুললেন না তিনি।মনে মনে চলা একটি বিষয় নিয়ে চিন্তিত দেখাচ্ছে।তাই অপেক্ষা না করেই সম্রাট আব্বাসকে বলেন,

” গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে আপনাকে এখনো অবগত করা হয়নি পিতা।অনুমতি পেলে কথাটি বলতে চাই।”

” বেশ অনুমতি দেওয়া হলো।”

শাহজাদা ইবনুল শরাবের পাত্রটি দূরে সরিয়ে রাখলেন।মাথাটা কেমন ঝিরঝির করছে।সুস্থ ভাবে কথা বলার একটুও জো নেই।তবুও নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে কথা বলার চেষ্টাশীল থাকেন।

” প্রত্যুষে শেহজাদী আরওয়ার কক্ষে জানলা বেয়ে প্রবেশের সময় আমার প্রহরীদের হাতে একজন আগন্তুক আটক হয়েছেন।আপনি চাইলে তাকে এখানে হাজির করা হোক।”

” আগে সেই প্রহরীকে নিয়ে এসো আমি তার মুখে ঘটনার বৃত্তান্ত শুনতে চাই।”

সম্রাটের কথা শুনে উজির হাযম বলেন,

” কিন্তু সেই সুযোগ তো আর নেই জাঁহাপনা।কিছুক্ষণ আগেই তিনি মৃত্যু বরণ করেন।শেহজাদী ক্রুদ্ধ হয়ে তাকে কতল করেছিল।”

সম্রাট আব্বাসের মাঝে তেমন কোন প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না।সামান্য একজন প্রহরীর মৃত্যুতে তিনি কেন ব্যথিত হবেন?”
শরাবে চুমুক দিয়ে সম্রাট বলেন,

” উজির প্রহরীদের বলো আগন্তুক’কে নিয়ে আসতে।

কিয়ৎক্ষণের মাঝেই তাসবীরকে নিয়ে কক্ষে প্রবেশ করেন প্রহরীরা।তাসবীরের বেশভূষায় বেশ অবাক হন সকলে।কর্তনী দিয়ে ছাঁটাই করা চুল।দাঁড়ি ছাড়া মসৃণ গাল,ঠোঁটের উপর থাকা গোঁফ একদম ছাটাই করা বেশ অদ্ভুত দেখতে লাগছে যুবকটিকে।কক্ষে প্রবেশ করেই নত মস্তকে সম্রাট’কে কুর্নিশ করেন তিনি।তার হাসি হাসি মুখ দেখে আমীররা সকলে বেশ অবাক হয়।সম্রাট আব্বাস ভ্রু কুচকে প্রশ্নাত্মক চোখে বলে,

” দাঁড়ি,গোঁফ,চুল কোথায়?

” সম্রাট আপনার প্রহরীর বেদম প্রহারে সব থেঁতলে গেছে।কবিরাজ মশাই চিকিৎসা করতে বেশ কষ্টসাধ্য হচ্ছিল তাই নরসুন্দর’কে এনে এই হাল করেছেন।”

তাসবীরের নিশ্চিত মনের কথার তালে বেশ খানিকটা অবাক হলেন সম্রাট।যুবকটির মাঝে নেই কোন ভয় সে যেন নিরপরাধে দাঁড়িয়ে আছে সম্রাটের সম্মুখে।

” তোমার পরিচয় কি যুবক?”

” আমি তাসবীর।মা বাবা কে বা কারা আমি জানি না।তবে আমি একজন কবি,চিত্রকর।আমার বিষয়ে অনন্য রাজ্যে খোঁজ নিলে জানবেন কেমন গুণগান রয়েছে।রাজা হরিনারায়ণের নাম শুনেছেন?তিনি আমার কবিতার ভক্ত আমাকে একটি কষ্টি পাথরের মূর্তি উপহার দিয়েছিলেন এছাড়াও জায়গির দিয়েছেন।তারপর দক্ষিণ রাজ্যের রাজকন্যা আমার কবিতায় মুগ্ধ হয়ে রুবি পাথর উপহার দিয়েছেন।আপনি দেখবেন সেই রুবি পাথর!

তাসবীর চটপট হাতে রুবি পাথর বের করতে উদ্যত হয় কিন্তু বিরক্ত হয়ে সম্রাট আব্বাস তাকে থামিয়ে দেন।

” আহ তুমি অনেক বেশি কথা বল।আমি জানতে চাই আমার মেয়ের কক্ষে গোপনে কেন প্রবেশ করতে চাইছিলে?”

ইদ্রীস’কে বলা একই মিথ্যা সাজিয়ে গুছিয়ে সম্রাট আব্বাসকেও বললেন তাসবীর।সম্রাট আব্বাস বোকার মত তা বিশ্বাস করে নিলেন।একজন দূত’কে পাঠানো হলো দুইদিনের মাঝে তাসবীরের সম্পর্কে খোঁজ নিতে।তাতে বেশ নিশ্চিন্ত আছেন তাসবীর। সবাই তাকে চিত্রকর এবং কবি হিসেবেই চেনেন তাহলে কিসের ভয় তার!

” এই আসরে আপনারা কবিতা শুনবেন?”

” বেশ শুরু করো।”

তাসবীর তার মুগ্ধকর কন্ঠে সবার সামনে কবিতা পেশ করলেন।এত নিখুঁত ছন্দময় কবিতা শুনে আমীর’রা মারহাবা মারহাবা ধ্বনি তুলেন।ওপর দিকে নেশাগ্রস্ত হয়ে আসরে কি হচ্ছে শাহজাদা ইবনুল রাশীদ বুঝতেই পারছেন না।যদি তিনি আজ সুস্থ মস্তিষ্কে উপস্থিত থাকতেন তাহলে তাসবীরের হয়তো নিস্তার থাকতো না। অতিরিক্ত শরাব পানে দেয়ালে ঢলে পড়লেন শাহজাদা ইবনুল রাশীদ।তিনি ঝাপসা কণ্ঠে বলেন,মারহাবা মারহাবা মারহাবা!

১৮.
শেষ দুপুরের মিঠে রোদ জলাশয়ের পানিতে পড়ে ঝকমক আভা তুলছে।বেশ কয়েকটি রাজহাঁস জলকেলিতে ব্যস্ত।শেহজাদী আরওয়া তার দিঘল কেশ ঘাসে বিছিয়ে রৌদ্র পোহাতে ব্যস্ত।হাঁটুতে থুতনি রেখে নিঃশব্দে রাজহাঁসের প্রমোদ দেখছেন।মাঝে মাঝে জলাশয়ে ছিটিয়ে দিচ্ছেন হাঁসের খাদ্য।চারিদিকে ফুটে আছে বেশ হরেক রকমের রঙিন ফুল।রাজমহলের বাইরের এই স্থান শেহজাদী আরওয়ার বেশ প্রিয় জায়গা বলা চলে।মাঝে মাঝেই এখানে এসে একা প্রহর গুনেন।লেখনীতে পলি আনান। তাসবীর খাসদাসী লতার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন শেহজাদী আরওয়া জলাশয়ের কাছে আছেন এবং যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি থাকবেন এই জলাশয়ের আশেপাশে সবার প্রবেশ নিষিদ্ধ।ফুলের বাগানের শেষ কোনায় দু’জন দাসী দাঁড়িয়ে আছে এরা নিশ্চয়ই শেহজাদীর অপেক্ষায় আছেন।তাসবীর সুযোগ বুঝে তাদের সামনে দাঁড়ালেন।

” শেহজাদী জলাশয়ের কাছে আছেন?”

” জ্বি তবে সবার প্রবেশ নিষিদ্ধ।”

” সে কি কথা শেহজাদী নিজে আমায় আসতে বলেছেন।তিনি আমার মুখে শের শুনবেন।আমি তাহলে যাই”

” শেহজাদীর অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করা যাবেনা।”

“গতকাল প্রহরীর কথা ভুলে গেছেন?কি করে তাকে হ/ত্যা করা হয়েছে?আমাকে প্রবেশ করতে না দিলে এবার হয়তো…..”

তাসবীরের কথায় ভয় পেয়ে গেলো দাসীরা।তারা আর কথা না বাড়িয়ে তাসবীরকে প্রবেশ করার সুযোগ করে দেয়।

তাসবীর মেঠো-পথ হাটতে হাটতে কাঙ্ক্ষিত স্থানে উপস্থিত হয়।তবে শেহজাদীর অন্যরকম নজর কাড়া সৌন্দর্য দেখে থমকে যান তিনি।দিঘল কেশ বিছিয়ে কেমন রাজকীয় ভঙ্গিমায় বসে আছেন আরওয়া।সাজহীন অকৃত্রিম সৌন্দর্যে বেশ সতেজ লাগছে তাকে।তাসবীর চুপচাপ শেহজাদীর পাশে বসেন কানের কাছে মুখ নিয়ে বলেন,

” মাশাল্লাহ আর কত ভাবে অসাড় করবেন আমায়?সহ্য করার ক্ষমতা যে লোপ পেয়েছে।”

শেহজাদী চমকে তাকালেন।দ্রুত পিছিয়ে গেলেন তাসবীরের সামনে থেকে।ছড়ানো কেশ দু’হাতের সাহায্যে এগিয়ে নিয়ে মুড়িয়ে রাখলেন কোলে।কাঁধে থাকা উত্তরীয় তুলে নিয়ে ঢেকে দিলেন শির।হঠাৎ ভয় পেয়েছে এমন ভাবে নিশ্বাস নিলেন বেশ কয়েকবার।

” এখানে এসেছেন কেন তাসবীর?চলে যান ভাইজান’রা দেখলে রক্ষে থাকবে না।”

” আসবে না কেউ।দাসীরা পাহারায় আছে।”

“কিন্তু… ”

” এত কথা বলবেন না যা হবার হবে।এই কেশ কতদিনের সাধনার?খোপার আদলে কখনো আমার চোখেই পড়লো না।”

তাসবীরের কথার প্রত্যুত্তর করলেন না শেহজাদী।হঠাৎ মুখে হাত দিয়ে ফিক করে হেসে উঠলেন তিনি তার হাসিতে চমকে উঠেন তাসবীর।এতদিনে আজ সৌভাগ্য হলো এই রূপমাধুরী’র হাসি দেখার।তাসবীর বিমুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলেন শেহজাদীর দিকে তাতে বেশ লজ্জা পেলেন শেহজাদী।

” আমি হাসছি কেন জানতে চাইবেন না তাসবীর?”

” প্রয়োজন নেই।আপনি হাসতে থাকুন।”

” চুল,দাঁড়ি,গোঁফ ছাড়া আপনাকে ভীষণ হাস্যকর লাগছে।এ রূপ যে আমার ভালো লাগছেনা খুব দ্রুত আগের রূপে ফিরে আসুন।”

তাসবীর নিজেও হাসলেন।তবে মুহূর্তে মুখের হাসি মিলিয়ে গেল শেহজাদীর।তা দেখে ভ্রু কুঁচকলেন তাসবীর।

” কি হয়েছে?”

” সম্রাট সাঈদ আমার নিকট চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি অতিদ্রুত বিবাহ কার্য সম্পূর্ণ করতে চান।এবং বিবাহের আগে তিনি আমার কাছে তিক্ত সত্যি প্রকাশ করে দিয়েছেন।”

” কোন সত্য?”

” তেলিকোনা রাজ্যের সম্রাট সাঈদ আর উনার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আহমেদাবাদের সম্রাটের।আমার পিতা একবার নয় দুইবার নয় কাটায় কাটায় তিন বার আহমেদাবাদের সম্রাটের কাছে পরাজিত হন।এই নিয়ে তীব্র ক্ষোভে আছেন পিতা মনে মনে জেদ চেপেছেন যে করে হোক আহমেদাবাদের সম্রাট’কে পরাজিত করে রাজ্যে দখল করবেন।আর বিষয়টি সহজ করতে সম্রাট সাঈদের সাহায্য অতি জরুরি।আর তাই সম্রাট সাঈদকে শর্ত দিয়ে বসেন যে করে হোক আহমেদাবাদের সম্রাটকে হারাতে সাঈদকে সাহায্য করতে হবে।তাছাড়া মারাঠাদের উৎপাত বেড়েই চলেছে।তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া একা হাতে সম্ভব নয় তাই সম্রাট সাঈদ মারাঠা দমনে সাহায্য করবেন।এসব শর্ত যদি সম্রাট সাঈদ মানতে পারেন তবেই আমাকে বিয়ে কর‍তে পারবেন।”

সব কিছু শুনে শরীরে তীব্র ভাবে জ্বলে উঠলো তাসবীরের।ভেতরের সুপ্ত রাগ তিনি বাইরে প্রকাশ করলেন না ভুলেও বরং রইলেন চুপচাপ।

” তার মানে চুক্তির বিয়ে!”

” চুক্তি সম্রাট সাঈদ করেননি করেছেন আমার পিতা।”

তাসবীর নিশ্চুপ তাকিয়ে রইলেন জলাশয়ের দিকে।রাজহাঁসেরা জল কেলিতে ব্যস্ত।হিজল গাছ থেকে ফুল ঝরতে ঝরতে যেন চাদর তৈরি করছে পুকুরে।এই মনোরম সভাতেও প্রকৃতি উপভোগ কর‍তে পারছেন না তাসবীর।মনের ভেতর যে উত্তাল ঢেউয়ের খেলা চলছে তা আর দেখে কে?

” এত শত চুক্তির মাঝে আপনি কি চান শেহজাদী?”

তাসবীরের প্রশ্নের উত্তর দিতে থমকালেন না শেহজাদী বরং দ্বিধাহীন চিত্তে বলে,

” আপনাকে চাই বিশ্বাস করুন তাসবীর আমি আপনাকে চাই।”

” আমার সাথে পথ চলা যে কঠিন শেহজাদী আমি জাঁকজমক পূর্ণ জীবন পছন্দ করিনা।এই রাজ্যে থেকে আরেক রাজ্যে এভাবেই যাযাবর দিন কাটে আমার।”

” যার সাথে খানিকটা সময় ব্যয় করলেও মন স্থির থাকে তাকে আমি ছাড়তে পারবো না তাসবীর।”

” আরওয়া আপনি কি আমায় কথা দিচ্ছেন আগামী জীবনের জন্য আমার হবেন?”

” আমি কথা দিচ্ছি সব বাঁধা পেছনে ফেলে আমি আপনার সঙ্গেই যাব।”

গা দুলিয়ে হাসলেন তাসবীর।গাছ থেকে বেশ কয়েকটি ফুল ছিঁড়ে শেহজাদীর কোলে রাখলেন।

” ঘোমটা’টা কি সরানো যায়?আমি আপনার দিঘল কেশের প্রেমে মূর্ছা গেছি।”

ঠোঁট বাকিয়ে হাসলেন শেহজাদী আরওয়া।ঘোমটা সরিয়ে আগের মতো ঘাসে বিছিয়ে দিলেন চুল।তাতে অবশ্য তাসবীর সাহায্য করেছে।দিঘল কেশে একে একে ফুল সাজিয়ে দিলেন তাসবীর।আরওয়ার রাজকীয় ভাব ভঙ্গিমায় তাসবীর পুনরায় মুগ্ধ হলেন।

” আপনার এই কোমল হাতটা ধর‍তে পারি শেহজাদী?”

” আজীবন পারবেন তাসবীর।”

আরওয়ার লাজুক হাসির কথায় মিহি হাসলেন তাসবীর।বেশ খুবলে ধরলেন শেহজাদীর হাত পৃষ্ঠ দেশে নরম ওষ্ঠের মাধ্যমে খেলেন চুমু।

” ছাড়ছি না,ছাড়ছি না আমি এই হাত।”

” আপনি কেন রাজপুত্র হলেন না তাসবীর?না থাক আপনি সম্রাট হতেন ঘোড়ার পিঠে চড়ে টগবগিয়ে এসে এই অলকপুরী রাজ্যে থেকে আমায় নিয়ে যেতেন।আপনি তো জানেন এখানে আমার কদর কেউ করে না।সবাই আমাকে অভিশপ্ত ভাবে।আমি ভাবি খুব ভাবি কোন এক রাজপুত্র আসবে আর আমায় নিয়ে চলে যাবে এই দম বন্ধকর রাজ্যে থেকে।”

হতাশার শ্বাস ছেড়ে কথাটি বললেন আরওয়া।তাসবীর নিশ্চুপ কথাটি শুনলেন পুনরায় শেহজাদীর হাতে চুমু খেলেন।আশ্বাস স্বরে বলেন,

” আল্লাহ যা চান এই জগৎ সংসারে তাই হবে।কারো কথা মনে ধরে একদম কষ্ট পাবেন না আরওয়া।”
#চলবে_____

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here