বিনিময় পর্ব ৭

#বিনিময়
পর্ব-৭:
হাসবেন্ড হয়ে রুহান নিজের স্ত্রী কে কিডন্যাপ করিয়েছিল…আরও কি প্ল্যান ছিল ভাবতেই লিসার গা শিউরে উঠে।
পুকুরের লাশটা রুহানের হলে লিসা খুশিই হত।
কিন্তু এখনই রুহান মারা গেলে তার এতদিনের পরিশ্রম… রুহানকে বিয়ে করা সবই ভেস্তে যাবে।
নিজের উপর খুব রাগ লাগছে তার। রুহানকে হাসপাতালে নামানো হয়েছে ব্যাপারটা কনফার্ম করতে হত…কিন্তু ভয়ে সে সময় তার মাথা কাজ করছিলনা।
.
ছুটে এসে ফোনটা অন করলো সে। শ্বশুড়বাসায় কল দিবে কি না চিন্তা করছে।
এমন সময় ফোন বেজে উঠলো। ভয়ে ভয়ে ফোনটা রিসিভ করলো লিসা। তার শ্বাশুরি কান্না কান্না গলায় বললেন, “লিসা, তাড়াতাড়ি হাসপাতালে এসো. রুহান হাসপাতালে ভর্তি আছে।”
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল লিসা। যাক বাবা সে এখনো জীবিত।
.
মা বাবাকে যেয়ে খবরটা দিল লিসা। হাসপাতালে যাওয়া লাগবে তার। জীবনটা হাসপাতালেই কেটে যাবে তার।
.
হাসপাতালে যেয়ে দেখে রুহানের এখনো জ্ঞান ফিরেনি। ভালই মাইর দিয়েছে জামিলেরা। হাত পা ফ্র‍্যাকচার হয়েছে। অন্ততপক্ষে কয়েকমাস শয্যাগত থাকবে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সে।
.
লিসা সেখানে পৌছাতেই প্রশ্নের বন্যা বয়ে গেল তার উপর দিয়ে। এসব কেমন করে হল..রুহান কোথায় গিয়েছিল, লিসা কিছু জানে কি না…এমন হাজারো প্রশ্ন।
.
লিসা মোটামুটি প্রিপারেশন নিয়েই ছিল যে এমন পরিস্থিতিতে পড়া লাগবে। ধৈর্য ধরে উত্তর দিতে লাগলো সে। রুহানকে মারতে চাইবে এমন মানুষের অভাব নাই। কাজেই লিসার ধরা পড়ার সম্ভাবনা কম।
.
এমন সময় আননোন নাম্বার থেকে কল আসলো লিসার ফোনে। নাম্বারটা দেখেই ভ্রু কুঁচকালো লিসা। রাগে চোখদুইটা জ্বলে উঠলো। সবার থেকে সরে এসে লিসা বলল, “ইউজুয়াল প্লেস..কাল সকাল ১০টা…ডোন্ট বি লেট.”
**
.
পরদিন বাসা থেকে ফ্রেশ হয়ে আসার নাম করে লিসা হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসে। এরপর সে একটা পার্কে চলে যায়। ছোট লেকের পাশে সুন্দর পার্ক একটা।
তবে সাধারণ মানুষের এখানে প্রবেশ নিষেধ।
.
পিছনে একজন মানুষের উপস্থিতি টের পেল লিসা। ঘুরে তাকালো সে।
“উই আর ডান, মি. সিয়াম,” লোকটার দিকে তাকিয়ে বলল লিসা, “এরপর আমার সাথে আর যোগাযোগ করবেনা।”
লিসার কথা শুনে লোকটা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। আমতা আমতা করে বলে, “দেখ, আই অ্যাম সরি। আমাদের ভুল হয়েছে। রুহানের প্ল্যান এর কথা তোমাকে আগেভাগেই জানাতে হত। এমন ভুল আর হবেনা। ”
.
লিসা বলল, “হবে তো নাইই। কারণ এরপরে তোমার সাথে আমার আর যোগাযোগ হবেনা। আল্লাহ হাফেজ”.
সিয়াম থতমত খেয়ে বলল, “দেখ, চিন্তাভাবনা না করে এত দ্রুত কোনো ডিসিশন নিতে হয়না। এতে করে মানুষ ভুল ডিসিশন নেয়।”
.
লিসা তখন ব্যঙ্গাত্মক হাসি হেসে বলল, “এ কথা আর আমাকে বলতে হবেনা। তোমার বোন যখন ব্রিজ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করতে যাচ্ছিল তখন কিছু চিন্তাভাবনা না করে তাকে বাঁচাতে গিয়েছিলাম। তার জন্যেই আজকে এই ভোগান্তি হচ্ছে। ”
.
সামনে দাড়ানো মেয়েটার দিকে ভালোভাবে একবার তাকালো সিয়াম। মানুষ চিনতে খুব একটা ভুল হয়না তার। এই মেয়েই একমাত্র ব্যতিক্রম।
.
কয়েকমাস আগে হাসপাতাল থেকে হঠাৎ ফোন পায় সিয়াম যে তার বোন সামিয়া সেখানে ভর্তি হয়েছে। হন্তদন্ত হয়ে হাসপাতালে যায় সিয়াম। সেখানে সে শুনতে পায় তার বোন ব্রিজ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিল। একটা মেয়ে তাকে বাঁচায়। পরে তার বোন অজ্ঞান হয়ে গেলে মেয়েটা তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে।
.
মেয়েটাকে ডেকে সিয়াম ধন্যবাদ জানায় প্রথমে। মেয়েটা তখন সিয়ামের হাতে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে চলে যেতে চায়।
“নাম কি তোমার? ” সিয়াম প্রশ্ন করে।
“লিসা”, হেসে উত্তর দেয় মেয়েটা।
এরপর চলে যায় সেখান থেকে।
.
বোনের জ্ঞান ফিরলে সিয়াম জানতে পারে রুহানের প্রতারণার কথা। রাগে মাথায় আগুন জ্বলে উঠেছিল তার। ইচ্ছা করছিল খুন করতে। কিন্তু চাইলেও সে ইচ্ছাকে পূরণ করতে পারেনি সে। কারণ রুহানের ফ্যামিলি যথেষ্ট পাওয়ারফুল। আর রুহানও ইতিমধ্যেই অনেকগুলো ফ্রেন্ড বানিয়ে ফেলেছে। চুপচাপ সঠিক সময়ের অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় ছিলনা কোনো।
.
সামিয়ার ব্যাপারে তার ক্লাসমেটরা সবাই মোটামুটি জেনে গিয়েছিল। তাই তাদের সাথে মিশতে পারতনা সামিয়া। এমন সময়ে তাই লিসার সাথে সামিয়ার যোগাযোগ বেড়ে যায়। দুইজনেই একে অন্যের কথা শেয়ার করতে থাকে।

লিসার ভাই এর কথা সামিয়ার মুখেই শুনে সে। ফাইনানশিয়াল কন্ডিশন এর কথাও।
হাতের কাছেই প্রয়োজনীয় সুযোগ পেয়ে যায় সে।
.
প্ল্যান তার খুব সিম্পল ছিল। লিসারা তার ভাইদের নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হবে। বিনা পয়সায় চিকিৎসার যে অফার দেয় রুহানদের হাসপাতালে সেখানে অ্যাপ্লায় করবে লিসা। রুহান আসার পর থেকে এইসব ব্যাপারে দুর্নীতি করে, মানুষের দূর্বলতার সুযোগ নেয়। লিসার সাথে এমন করলে লিসা প্রেসের কাছে যেয়ে রুহানের আসল চেহারা সবার সামনে নিয়ে আসবে।
সিয়ামের অনেক পরিচিত সাংবাদিক আছে। তারা লিসাকে সাপোর্ট দিবে।
লিসার প্রটেকশন এর দায়িত্ব সিয়ামের।
.
এই প্ল্যান বলামাত্র লিসার রিয়্যাকশন দেখে সিয়াম অবাক হয়ে যায়।
“জন্মের পর কি তুমি জেনেটিক টেস্ট করেছিলা? শান্তভাবে জিজ্ঞাসা করে লিসা।
না মানে তুমি ছেলে না হার্মাফ্রোডাইট এটা জানতে ইচ্ছা করছে আরকি.”
.
লিসার উত্তর শুনে মাথায় আগুন জ্বলে যায় সিয়ামের, “মুখ সামলে কথা বলবে।” চিৎকার দেয় সিয়াম।
লিসা বলে, “আমার উপর রাগ দেখাচ্ছেন কেন? আমি দুর্বল তাই? আপনার বোনের উপর একটা ছেলে অন্যায় করেছে। তার মনের মধ্যে প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে। অ্যান্ড ইন্সটিড অফ অ্যাকটিং লাইক এ ম্যান ইউ আর অ্যাকটিং লাইক এ কাওয়ার্ড।”
লিসা চলে আসে সিয়ামকে রেখে।
রাগে জ্বলতে থাকে সিয়াম।
.
কিন্তু কয়েকদিন পরেই ফোন দিয়ে লিসা বলে যে সে রাজি আছে সিয়ামের প্ল্যানে। কিন্তু তার শর্ত আছে।
সিয়াম জিজ্ঞাসা করে কি শর্ত?
লিসা বলে, “আই ওয়ান্ট টু নো হু আই অ্যাম ডিলিং উইথ। যে ছেলেকে টার্গেট করেছেন সে আর সারাউন্ডিং সম্পর্কে সম্পূর্ণ ইনফরমেশন চাই আমার।”
সিয়াম বলল, “সেটা কোনো ব্যাপারই না।”
রুহানের কাজকারবার সম্পর্কে এমনিতেও খোঁজখবর রেখে সে। সার্ভেইলেন্স বাড়ালেই হবে।
লিসা এবার বলে, “যেহেতু তোমার কাজ করে দিচ্ছি সেহেতু যতদিন কাজ না হচ্ছে তোমার ইমপ্লয়ি হিসেবে ততদিন টাকা চার্জ করবো আমি। আর আমার ভাই এর ট্রিটমেন্ট এর খরচ আলাদা.”
.
সিয়াম এটা আশা করেনি। সে বলে, “তুমি কিন্তু ডাকাতি করছো।”
লিসা বলল, “বোনের জন্য এতটুকুও করতে পারবেনা? আমার শর্ত এটাই।”
.
সিয়াম শেষমেশ রাজি হয়।
.
কিন্তু সে ঘুনাক্ষরেও সন্দেহ করেনি যে লিসার কোনো ইচ্ছাই ছিলনা সিয়ামের প্ল্যান এক্সিকিউট করার।
প্রথমত, সামিয়াকে সে নিজের ফ্রেন্ড কখনোই মনে করতনা। তার প্রতি সিমপ্যাথিও ছিল কম লিসার। রুহান আর সামিয়া একই ইউনিভারসিটি তে পড়তো। অবশ্যই তার রুহানের ক্যারেকটার সম্পর্কে জানার কথা। কিন্তু তবুও সে এমন ছেলের সাথে জড়ালো কেন? সিনেমা পেয়েছে যে তার ভালোবাসায় রুহান বদলে যাবে? এ লিওপার্ড ক্যাননট চেঞ্জ ইটস স্পটস।
এমন মেয়ের প্রতি লিসার সিমপ্যাথি কখনো থাকেনা।
.
এছাড়াও লিসা ভালোভাবেই জানে যে সামিয়া এখন তার সাথে বাধ্য হয়ে মিশছে, ক্লাসের অন্যান্য মেয়ের টিটকিরির চোখে তাকে দেখে তাই। এ ফ্রেন্ডশিপ জীবনেও টিকবেনা।
.
দ্বিতীয়ত, সিয়ামের প্ল্যান পুরাই ফালতু। ভাইবোন আসলেই ইডিয়ট না কি সেটা লিসা বুঝতে পারেনা।
লিসা হাসপাতালে যাবে আর রুহান তাকেই টার্গেট করবে এটার কোনো নিশ্চয়তা আছে? আর লিসা এভাবে প্রেসের কাছে যাবে আর রুহান কি চুপচাপ বসে থাকবে? সিয়ামের কনট্যাক্ট যেমন আছে তেমন এই ছেলেরও কনট্যাক্ট আছে। দুইদিন এর মধ্যে লিসার রেপুটেশন খারাপ করে উল্টা তাকেই দোষী করে ছাড়বে।
লিসাকে প্রটেকশন দিবে সিয়াম? হুহ! নিজের বোনকেই আগে প্রটেকশন দিক।
.
কোনোভাবে যদি সিয়ামের প্ল্যান সাকসেসফুলও যদি হয় তাহলেও লোকজন লিসার দিকে পরে আঙুল তুলে কথা বলবে। সমাজে মেয়েদের দোষই বেশি দেখে।
.
তৃতীয়ত, লিসা ভালোমতই বুঝতে পারছে যে এই প্ল্যানে বোনের থেকে নিজের লাভের কথা বেশি ভাবছে সিয়াম। রুহান এর বিজনেস স্ট্র‍্যাটেজি অনৈতিক হলেও সে তাদের বিজনেসকে অনেক দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সিয়ামদের জন্য থ্রেট হয়ে দাড়াচ্ছে ব্যাপারটা।
কাজেই সে রুহানের রেপুটেশন নষ্ট করে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাচ্ছে।
আর এ প্ল্যানে তাদের কোনো ক্ষতিই হচ্ছেনা।
উল্টা লিসাদেরই সাফার করা লাগবে।
.
এজন্যেই রেগে চলে আসে লিসা।
কিন্তু কয়েকদিন পরে লিসা জানতে পারে যে ফাইনানশিয়াল ক্রাইসিস এর জন্য বাবা মা বাসা বিক্রি করার আলোচনা করছে।
আগেই লিসা তার লাক্সারি, গাড়ি থেকে শুরু করে সব হারিয়েছে। এ বাসা ছেড়ে অন্য বাসায় উঠতে সে রাজি না।
.
তাই লিসা সিয়ামকে অদ্ভুত শর্ত দেয়।
তার ইচ্ছা ছিল কয়েকমাস এ প্ল্যানে পার্টিসিপেট করে টাকা নিবে সিয়ামের কাছে থেকে।
এরপরে রুহানদের হাসপাতালেও যাবে প্ল্যানমত।
তারপর ভাই এর অপারেশন এর পর চুপচাপ বাসায় ফিরে আসবে।
এতে করে সিয়াম অবশ্যই তাকে শত্রুর চোখে দেখবে আর প্রতিশোধ নিতে চাইবে।
কিন্তু সিয়ামের প্ল্যান অনুসারে চললে রুহানও তাকে শত্রু হিসেবেই দেখবে আর প্রতিশোধ নিবে।
দুইদিকেই রিস্ক তার।
দুইজনের মধ্যে সিয়ামকে শত্রু বানানো সহজ মনে হয়েছে লিসার।
আর সিয়াম বেশি বাড়াবাড়ি করলে লিসা সোজা যেয়ে রুহানকে বলে দিবে সিয়ামের প্ল্যান এর কথা। সব কথাবার্তার অডিও রেকর্ডিং আছে তার। এরপর ওরা একে অন্যকে সামলাক। সেটা তাদের ব্যাপার।
কিন্তু দুই রাজার লড়াই এ নিজেকে শহীদ করতে রাজি না লিসা।
.
.
কিন্তু লিসা যতই ইনফরমেশন পেতে থাকে রুহানের ব্যাপারে ততই তার প্রতি ঘৃণা হতে থাকে তার। সামিয়া স্বেচ্ছায় ভিকটিম হয়েছিল। কিন্তু সে আসলেই অনেক মানুষের সাথে প্রতারণা করে।
সবচেয়ে খারাপ ব্যাপার হল রুহানের উপর চোখ রাখায় সিয়ামও এসব ব্যাপারে জানে। তাও কোনো স্টেপ নেয়না। অবশ্য নিজের বোনের সাথে অন্যায় হওয়া সত্ত্বেও যে চুপ থাকে স্বার্থের জন্য তার থেকে আর কি ই বা এক্সপেক্ট করা যেতে পারে।
.
.
সিয়ামের প্ল্যানমতই রুহানের হাসপাতালে যায় লিসারা। ততদিন বাবার টাকা আর সিয়ামের কাছ থেকে পাওয়া টাকা মিলে ভাই এর অপারেশন এর টাকা জোগাড় হয়ে গিয়েছিল। ফ্রি ট্রিটমেন্ট এর জন্য অ্যাপ্লাই না করলেও হত। কিন্তু তবুও লিসা মায়ের সাথে রুহানের অফিসে যায় যাতে সিয়াম মনে করে লিসা এখনো তাদের সাথে আছে। আর লিসা এত টাকা কোথা থেকে পেয়েছে এর এক্সকিউজ কি দিতো লিসা?
.
যখন রুহান লিসাকেই কুপ্রস্তাব দেয় তখন তার মনের মধ্যে আগুন জ্বলে উঠে। সিয়াম ঠিকই প্রেডিক্ট করেছিল। এ ছেলে কাউকেই ছাড়েনা। যদিও প্রেডিক্টেড ছিল ব্যাপারটা। কিন্তু রুহানের দৃষ্টিভঙ্গি দেখে লিসার মাথাতেও জেদ চাপে।
“মি. রুহান, ইফ ইউ ওয়ান্ট টু প্লে…লেটস প্লে।”
সেক্রেটারি কে আগেই হাত করে রেখেছিল সিয়াম। কাজেই সে যখন ম্যারেজ সার্টিফিকেট দিয়ে সাইন করিয়ে আনতে বলে তখন সে তেমন আপত্তি করেনা।
লিসা সিয়ামের দেওয়া ইনফরমেশন থেকেই জানতে পারে যে রুহানের বাবা জেনুইনলিই ভাল মানুষ। তা না হলে লিসা উনার কাছে যাওয়ার সাহস পেতনা।
.
লিসা প্রথমে রাগ আর জেদ করে এ ডেঞ্জারাস ডিসিশন নিলেও সে পরে অবাক হয় যে সে এই ব্যাপারটা রীতিমত এঞ্জয় করছে। সবার সামনে এভাবে মিথ্যা বলা আর অভিনয় এত সহজে কেমন করে করতে পারছে সে? নিজের এ সাইড আছে আগে তো সে এটা কখনো আন্দাজ করেনি!!
কিন্তু কিডন্যাপিং এর ঘটনায় লিসার মনে এবার ভয় ঢুকে যায়। এ পথে আগানো উচিত হয়নি তার। কিন্তু এখন আর ফেরার উপায় নাই তার। কিন্তু এবার আর রেকলেস হবেনা লিসা। চিন্তাভাবনা করেই কাজ করবে।
***

সিয়ামের কথায় লিসার ভাবনায় ছেদ পড়ে, “দেখ দোষ খালি আমার না। তোমার রুহানকে এক্সপোজ করার কথা ছিল। আমরা সবাই প্রিপেয়ার্ড ছিলাম। কিন্তু তোমার কোনো খোঁজ নাই। আবার দেখি তুমি তাকে বিয়ে করে বসে আছো।
আমি ভাবছিলাম তুমি সাইড বদল করেছ।
তাই রাগ করে তোমাকে অ্যালার্ট করিনি।
তোমার বিয়ের খবর শুনে আমার বোনের মেন্টাল অবস্থা কি হয়েছে জানো? তার সাথে তুমিও প্রতারণা করলা?!!”
.
লিসা বলল, ” তোমার প্ল্যান থেকে আমার লাভের লাভ তেমন কিছুই ছিলনা। এত বড় রিস্ক নিবো আমি আর বিনিময়ে কি পাবো আমি? ভাই এর অপারেশন ছাড়াও আরও অনেক সমস্যা আছে আমাদের। আমি আমার আগের লাইফস্টাইল ফেরত চাই।
তবে চিন্তা করনা। ওকে বেশিদিন সহ্য করার ক্ষমতা আর নাই আমার।
হোয়েন আই অ্যাম ডান উইথ হিম ইউ ক্যান ডু হোয়াটএভার ইউ ওয়ান্ট। কিন্তু এর মাঝে আমার সাথে যোগাযোগ করবেনা।”.
সিয়াম আপত্তি করলো, “কিন্তু সামিয়া…”
.
লিসা অধৈর্য হয়ে বলল, “লেটস নট প্রিটেন্ড এনিমোর। নিজের বোনের এত চিন্তা তোমার থাকলে রুহানের উপর যে নজরদারি কর তার দশভাগের একভাগ অন্তত তার উপর নজরদারি করতা। তোমার নাকের নিচ থেকে রুহান তোমার বোনকে নাচিয়ে চলে গেল তুমি টেরও পাওনি।
তাকে হাসপাতালে দেখেও তুমি কোনো স্টেপ নাওনি। ভাই হিসেবে জামিল তোমার থেকে অনেক ভাল। কালকে সে খবর পেয়েছে রাহাতের সাথে তার বোনের রিলেশনের কথা আর কালকেই রাহাতকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়েছে.”
.
সিয়াম থতমত খেয়ে বলল, “তু…তুমি কেমন করে জানলে যে জামিলই মেরেছে তাকে?”
লিসা বলল, “গতকাল দুপুরে তাকে জেমি আর রাহাতের ছবি দিলাম আর রাতে তার লাশ ভেসে উঠলো…ব্যাপারটা কি কাকতালীয়? ”
সিয়াম অবাক হয়ে বলল, “তাদের ছবি কেন দিয়েছিলা?”
লিসা বলল, “তোমার কি মনে হয় জামিল কেন আমার ছেড়ে দিল আর আমার বদলে রুহানকেই হাসপাতালে পাঠালো? জেমি ইজ হিজ উইকনেস।”
.
রুহানের ব্যাপারে ইনভেস্টিগেশন করতে যেয়ে না আনইনটেনশনালি জেমি আর রাহাতের রিলেশন এর কথা জানতে পারে সিয়াম। কিন্তু এই ব্যাপারটা লিসা এভাবে ব্যবহার করবে তা সিয়াম ভাবতেও পারেনি।
.
“যাই হোক…বিদায়”, লিসা চলে যাওয়ার জন্যে পা বাড়ায়।
সিয়াম তাকে থামায়…রিকোয়েস্ট করে বলে, “দেখ, আরেকটা সুযোগ দাও। সত্যি করে বলছি আর এমন ভুল হবেনা।”
.
এভাবে রিকোয়েস্ট করতনা সিয়াম। কিন্তু লিসা এখন ২৪ঘন্টা রুহানদের বাসায় থাকে। তার গুরুত্ব এখন অনেক বেড়ে গেছে। শি ইজ ইররিপ্লেসেবল। আর রুহানকে যেভাবে হাসপাতালে পাঠিয়েছে লিসা তার প্রতি লিসার অনুভূতি কেমন তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।
.
লিসারও ইচ্ছা ছিলনা তাদের অ্যারেঞ্জমেন্ট ব্রেক করার। গতদিনের ঘটনা প্রমাণ যে সিয়ামকে তার প্রয়োজন। কিন্তু সেটা সে প্রকাশ করলনা।
লিসা বলল, “তাহলে আমি যা বলব তাই করতে হবে”.
“রাজি”, সিয়াম বলল।
লিসা তখন বলে, “এই কয়েকটা ফটো দিচ্ছি তোমাকে। রাহাতের বাবার কাছে পাঠাবে।”
.
ফটোগুলা দেখে ভ্রু কুঁচকায় সিয়াম। এ মেয়ের মনের মধ্যে কি চলছে?
.
চলবে…
.
#ফারিহা_আহমেদ
.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here