বিবর্ণ সিঁদুর পর্ব ১০

বিবর্ণ সিঁদুর
পর্ব-১০
#Taniya_Sheikh

সারদা দেবী রজনীর দু’হাত ধরে কাঁদছেন। অনুশোচনায় দগ্ধ হচ্ছেন বারংবার।

” মাগো, আমারই জন্য আজ তোমার এই দূর্গতি। এ পাপের বোঝা আমি কী করে বইছি আমিই জানি। ভেবেছিলাম সব ভুলে ছেলে আমার সংসারি হবে। কিন্তু সব ভাবনা আমার ভুল ছিল। সে আগেও যেমন ছিল তেমনই রইল। মাঝখানে নষ্ট হয়ে গেল তোমার জীবনটা। তুমি আমাকে ক্ষমা করো মা।”

রজনী এতোক্ষণ আধোমুখে বসেছিল স্থির দৃষ্টিতে। সারদা দেবীর শেষ কথাটা রজনী বুকে বিঁধল। বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষটার চোখের জলে লজ্জিত হলো সে। রজনী আবেগপ্রবণ বড্ড। কারো চোখের জল সে দেখতে পারে না। এ বেলাইও তাই হলো। নিরবে কাঁদছিল সে। সারদা দেবী রজনীর মাথাটা বুকে টেনে পিঠে হাত বুলিয়ে বললেন,

” তোমাকে আমার বড়ো মনে ধরেছিল মা। শুধুমাত্র পুত্রবধূ করে ঘরে আনিনি। কিন্তু মেয়ে বলে ধরেও রাখতে পারি নি কাছে। আমার ছেলের উপর আমার জোর নাই। সে আপনি মর্জির মালিক। তবুও আমি চেষ্টার ত্রুটি করব না। শেষ দিন পর্যন্ত তোমাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা আমার থাকবেই। তখন রাগ করে আমাকে ফিরিয়ে দেবে না তো মা।”

রজনী মৌন হয়ে বসেছিল। কান্নার জলে কন্ঠরোধ হয়ে আসছে আজ তার। সারদা রজনীর চিবুক ধরে তুলতেই রজনী আবার সারদার বুকে লুকিয়ে ফেলে। কান্নাজড়িত গলায় বলে,

” আপনারাই আমার সব মা। আপনাদের ফিরিয়ে দেব এমন সাহস আমার কোনোদিন হবে না। তিনি আমাকে ত্যাগ করলেও, আমি এখনো তারই আছি সারাজীবন থাকব।”

” আমার সোনা মা। শুনেছি লম্বা লোকের হাঁটুতে বুদ্ধি থাকে আর আমার ছেলের সেটাও নেই। বলদ একটা। এমন লক্ষী প্রতিমা ফেলে কতোদিন থাকতে পারে আমিও দেখব। ফিরে আসলে খুব শাস্তি দেব ওকে দেখিস৷”

বলেই মৃদু হাসার চেষ্টা করলেন সারদা দেবী৷ সামনে থেকে কোনো জবাব না পেয়ে হাসিটা ফুটে উঠল না আর। রজনী একইভাবে সারদার বুকে মাথা রেখে চোখ মুছছে। সারদা পরম স্নেহে রজনীর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

” পরীক্ষা কেমন হয়েছে তোর?”

রজনী বললো,
” ভালো।”

সারদা একটুখানি হেঁসে বললেন,
” বেশ। ওখানে থাকতে কি কোনো কষ্ট হয়?”

রজনী মাথা নেড়ে বলে,

” না। রুনা আপা খুব ভালো। আমাকে পর বলে মনেই করে না।”

একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সারদা বলেন,
” হুমম। মেয়েটা আসলেই ভালো। ভগবান ওর মঙ্গল করুন। হ্যাঁ রে মা।

রজনী অস্ফুটে জবাব দেয়,
” হুম।”

সারদা বললেন,
” আমাদের এখানে চলে আয় না। তোকে দূরে রাখতে আমার খুব চিন্তা হয়।”

রজনী উঠে বসে ঘাড় নাড়িয়ে নত মুখে বলে,

” না, তিনি আমাকে রেখে এসেছেন তিনিই আনবেন। আর যদি না আনেন কোনোদিন এ বাড়ি আর আসব না। আপনি কথা দিন আমাকে আর আসতে বলবেন না। নিজের যত্নে নেবেন। কথা দিন।” কথাগুলো বলতে বলতে গলা ধড়ে আসে রজনীর।

” কথা তো দিতে পারব না। তবে হ্যাঁ চেষ্টা করব।”

সারদা মুচকি হাসতেই রজনী চোখ মোছে। সারদা রজনীর মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,

” দীর্ঘজীবী হও মা। সুখের জীবন হোক তোমার এই আশির্বাদ করলাম।”

কথাটা বলে শব্দ করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। রজনীর কর্ণগোচর হলো সে শব্দ। ওর কেবলই মনে হলো, জগতে সুখী কেউ নেই। কোথাও নেই। সবটা যেন দুঃখের চাদরে মোড়া। বিষন্নতায় ছাওয়া।

সারদা দেবী নিজ হাতে পুত্রবধূকে খাইয়ে দিলেন। অনুরোধ করলেন দিনটা থেকে যাওয়ার। রজনী খেয়াল করল এই ক’মাসে শাশুড়ির যেন বয়সটা একেবারেই বেড়ে গেছে। মুখটা শুষ্ক আর মলিন, চোখের সেই উজ্জ্বলতাও নির্জীব এখন। স্বামীর মতো পাষান হৃদয় রজনী না। তাইত মনের হাজারটা বাধা নিষেধ,রাগ,ক্ষোভ সব চাপা দিয়ে রাজি হয় সে। বিনিময়ে সেই প্রসন্ন হাসিটুকু অমূল্য ছিল। নিচে নামার সময় সৌমিত্রের ঘরের দিকে চোখ যায় রজনীর। বন্ধ কবাটে দৃষ্টি পড়তেই বুকটা হু হু করে ওঠে৷ একবার এসব থেকে বহুদূরে পালাতে চায়, আবার তীব্র বেগে ছুটে এখানেই বাঁধা পড়তে মন কাঁদে ওর।

অনীয়ের সাথে সময় কাটাতে সেও খুশি হলো। সান্ধ্যো পূজার পরপরই সৌমিত্র কল করে মা’কে। সারদা দেবী লাউড স্পিকারে রেখে ছেলের সাথে কথা বলেন। তার মনে কী চলছিল বলা মুসকিল। রজনীও বোধহয় বুঝে উঠতে পারল না। সৌমিত্রের গাম্ভীর্য্য গলার স্বরে শিহরিত রজনী। বুক দুরুদুরু করছে ওর। মানুষটার গলার স্বর কেমন বিষন্ন মনে হলো। আরও গম্ভীর আর বিষন্নতায় ছেয়ে গেল যখন রজনীর প্রসঙ্গ তুললেন সারদা দেবী। মোবাইলের ওপাশ থেকে ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ শুনে রজনীর বুক কেঁপে ওঠে। চোখে জল আসতেই মুখ নুয়ে নেয়। একটা নিগূঢ় নীরবতায় আচ্ছন্ন হলো রুমটা সেই সময়। নীরবতা ভাঙলেন সারদা দেবী। সারদা দেবী বার বার অনুযোগ করতেই মোবাইল কেটে দেয় সৌমিত্র। রজনী সেই মুহূর্তে রুম ছেড়ে ঝরের বেগে ছুটে ছাদের কোনার দেয়াল ধরে বসে পড়ে। তার চোখের জল ঘনবর্ষার প্লাবন হয়ে বইছে। এমন করে কেন কাঁদছে জানা নেই। কী এক ভীষন কষ্টে বুক ভেঙে যাচ্ছে ওর। ক্রোধে শরীরে আগুন জ্বলে ওঠে। শাশুড়িকে দেওয়া কথা সে নিজে নিজেই ফিরিয়ে নেয়। মনে মনে একপ্রকার জেদ জাগে এই লোকের ছায়া থেকেও বহুদূরে চলে যাবে। এতোটা অমূল্য সে নয়। এমন করে তাকে অপমানিত করার শাস্তি লোকটাকে পেতেই হবে একদিন। রজনীর দ্বারে আসতে হবেই হবে। রজনী কোনোদিন ক্ষমা করবে না তাকে। কোনোদিন না৷ রজনী কাঁদতে কাঁদতে একসময় হালকা বোধ করে। ধীরে ধীরে ওর রাগ কমে আসে। তবুও জেদটা অবশিষ্ট এখনো। এখন মনে হয় দোষ সৌমিত্রেরই বা কি। সে’কি ইচ্ছা করে এসব করেছে? না! বরং পায়ের তলে না পিষে তাকে স্বাধীন করে দিয়েছে। স্বাধীন! রজনী দাঁতে দাঁত পিষে চোখ মুছে উঠে দাঁড়ায়। ফের আসন্ন বুক ভাঙা কান্নাকে শক্ত মনে ঠেলে থামিয়ে দেয়। রক্তচক্ষু মেলে বলে,

” এই আপনাকে ভুলে গেলাম আমি। আপনার মা’কে দেওয়া সব কথা ফিরিয়ে নিলাম। কোনোদিন আর ফিরব না আপনার কাছে। কোনোদিন না। স্বাধীন যখন হয়েইছি তখন পরাধীনতার শৃঙ্খলে সহজে নিজে বাঁধব না।”

এই বাড়ির হাওয়ায় রজনীর গায়ে জ্বালা ধরে গেল। সেদিন রাতেই ফিরে আসল রজনী। সারদা কিংবা অনু কেউ ই বাধা দেয়নি। সারদার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিল রজনীর থমথমে মুখখানা দেখে। সে বুঝে নিয়েছে তার ছেলের নীরবতা কী ভয়ানক ঝরই না তুলতে চলছে। চেয়েছিল দু’টি হৃদয়ের গভীরতা বুঝতে এখন উল্টোটাই হয়ে গেল। কিন্তু তারই বা কি করার আছে? কিছুই করার নেই। এই অসহায়ত্বের জ্বালা তাকে দিনদিন কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। শক্তি হারিয়ে ফেলছেন তিনি। অনু শাশুড়িকে ধরে উপরে নিয়ে গেল। সারদা স্থির দৃষ্টিতে সামনের অন্ধকারে চেয়ে নির্বাক বসেছিল বহুক্ষণ সেভাবে।

ও বাড়ি থেকে আসার পর থেকেই রজনী গম্ভীর হয়ে গেছে। রুম ছেড়ে বেরোয় না,ঠিক মতো খাওয়া দাওয়াও করে না। রুনা স্বামীর সাথে এ নিয়ে খুব রাগারাগি করল। স্বামীকে এসবের জন্য দায়ী করে। রুনার কথা, রজনী যা ইচ্ছা তাই করবে। সৌমিত্র যখন নিজের ইচ্ছা স্বাধীন কাজ করতে পেরেছে তবে ও কেন পারবে না। জামিল বন্ধুর নীরবতাকে খন্ডাতে চাইল স্ত্রীর সামনে। রুনা সেসব শুনতে নারাজ। সে ভৎসর্না করে বলে,” এসব আমাকে বুঝাতে এসো না তুমি। তোমরা সব পুরুষই এক। অবলা পেয়ে শোষন করতে চাও শুধু।”
জামিল এই কথার প্রতিবাদ করে৷ রুনা সেসব কানেও তোলে না৷ রুম ছেড়ে বেরিয়ে মেয়েকে রজনীর কোলে দিয়ে বাইরে এসে বসে। রুনার মেয়ের নাম জাহা। জাহার কান্নার শব্দ খুব বেশিক্ষণ শুনতে হলো না। ধীরে ধীরে তার হাসির শব্দে পুরো ঘরটা আবার আগের মতো স্বাভাবিক হয়। সাথে রজনীও। কিন্তু কেউ জানল না হাসির আড়ালে কতোটা কষ্ট ঢাকা হচ্ছে।

রজনীর মাধ্যমিকের রেজাল্ট খুব বেশি ভালো না হলেও মোটামুটি ছিল। রুনা স্থানীয় একটি কলেজে ভর্তি করিয়ে দেয় রজনীকে। কোচিংএর আরো দু’তিনজন মেয়ের সাথে মিতুলকেও ক্লাসমেট হিসেবে পায় রজনী। মিতুলের সাথে এখন বেশ ভালো সম্পর্ক রজনীর। বেস্ট ফ্রেন্ড ওরা। একই বেঞ্চে বসে, একই সাথে আসা যাওয়াও হয় ওদের। নুপূরকে যা বলেছিল অন্য সবাইকেও তাই ই বলে রজনী। মনে মনে কষ্টও কম হয় না তাতে। কিন্তু উপায়ও তো নেই ওর। মিথ্যের জালে এভাবে জড়িয়ে যাচ্ছে একটু একটু করে।

দেখতে দেখতে দূর্গাপূজা চলে আসে। মিতুলরা সপরিবারে বাগেরহাট যায় প্রতি পূজোয়। ওদের আদিনিবাস এবং মিতুলের নানু বাড়িও সেখানে। মহালয়ার আগে আগেই মিতুল সব গোছগাছ করছে। হঠাৎ ওর মনে পড়ল রজনীর কথা। বেচারি এখানকার মন্দির কোথায় সেটাও জানে না। পূজোর আমেজ চারিদিকে অথচ ও থাকবে মনমরা। প্রিয় বন্ধুটির মনমরা মুখচ্ছবি চোখের সামনে ভাসতেই মুখ কালো হয়ে যায় মিতুলের। রাতে কোনোভাবে কথাটা মায়ের সামনে তোলে। ওর মা সব শুনে সহজেই রাজি হয়ে যায় রজনীকে সাথে নিতে। মিতুলের আনন্দ যেন ধরে না। তক্ষুনি রজনীকে কল করে জানায়। রজনীর মনের পোড়াজমিনে আনন্দ এখন সহজে আসে না। তবুও আনন্দিত হওয়ার ভান করে। রুনা আপাকে জিজ্ঞেস করে জানাবে বললো। মিতুলের সাথে কথা শেষ হতেই সেকথা ভুলে গেল রজনী কিংবা মনের অনিচ্ছায় মুখেও আনল না আর। রজনীর জবাব না পেয়ে মিতুল রাতে আরেকদফা কল করে জিজ্ঞেস করে। এবার মিতুলের কাতর অনুরোধ অনিচ্ছা স্বত্বেও অগ্রাহ্য করতে পারল না। ভেবেছিল এতোদূর যাওয়ার অনুমতি দেবে না রুনা আপা। কিন্তু ওকে অবাক করে অনুমতি দিল। জামিলকে এতে অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গেলেও রুনা সেসবে পাত্তা দিল না। পরদিন নিজে মার্কেট করে, কিছু টাকা হাতে গুঁজে দিয়ে মিতুলের সাথে পাঠিয়ে দিল। আসার সময় জাহাকে খুব মিস করছিল রজনী। অজানা,অচেনা স্থানে যাচ্ছে বলে সংশয়, সংকোচ ঘিরে ধরলো।

রাতের গাড়িতে বাগেরহাট রওনা দেবে মিতুলদের পরিবার। ঢাকায় ওদের অনেক আত্মীয় স্বজন আছে। তারাও অনেকে যাচ্ছে। মিতুল রজনীকে বাসা থেকে নিয়ে সোজা গাড়িতে উঠে বসল। মোট পাঁচটা কার যাচ্ছে বাগেরহাটের উদ্দেশ্যে। মিতুল আর রজনী তিন নম্বর টাই উঠেছে। মিতুল হেঁসে হেঁসে বললো,

” এই গাড়িতে কেন উঠেছি জানিস?”

রজনী মৃদু মাথা নাড়ায়। মিতুল আবার হাসে, বলে,

” বড়’দা এ গাড়ির আশেপাশের দু’টোতেও বসবে না তাই। ওকে দেখলেই ভয়ে হাত পা কাঁপে আমাদের কাজিনদের। এতো পথ এমন কাঁপাকাঁপি করে যেতে ভালো লাগে বল?এজন্য আমরা প্লান করেছি নিজেরাই আলাদা একটা গাড়িতে বসব এবার। তারপর পুরোটা পথ ইয়ো ইয়ো।”

” তোর বড়’দা বুঝি খুব রাগী?” রজনী বললো।

” খুব, খুব৷ এমনই রাগী যে তুই দেখলে তোরও কাঁপাকাপি লেগে যাবে। আমাদের থেকেও বেশি।” কথাটা বলেই চোখ টিপে হাসে মিতুল। রজনী সেটার সঠিক অর্থ না বুঝে ভেংচি কেটে বলে,

” তোকে বলছে?”

” আলবত।” রজনীর গলা জড়িয়ে ধরতেই ওদের থেকে দু’তিন বছর ছোট দু’জন মেয়ে আর একজন সিনিয়র ছেলে এসে ঢোকে গাড়িতে। ছেলেটা সামনের সিটে বসতে বসতে রজনীর দিকে একপলক তাকিয়ে মিতুল কে বলে,

” এই সেই রজনীগন্ধা?”

” রজনীগন্ধা না রজনী। সবসময় আপডেট হবেন না তো। বিরক্ত লাগে।” মিতুল একটু রাগত স্বরেই জবাব দিল। ছেলেটা ওর দিকে চেয়ে কপাল কুঁচকে হেঁসে সামনে ফিরতেই ভীরু গলায় বলে,

” কাম সারছে।”

পেছনে বসা মিতুলের কাজিনরা রজনীর সাথে সবেমাত্র হাই হ্যাঁলো শুরু করেছিল, ছেলেটার কথা শুনে ওরাও চমকে সামনে তাকাল। মিতুলের পাশে বসা মেয়েটা বললো,

” এই রে, বড়’দা তো এদিকেই আসছে। মিতুল কি হবে এখন?”

” ভগবান জানে।” রজনীর হাতটা চেপে ধরে ভয়ে ভয়ে সামনে তাকিয়ে বললো। রজনী মিতুলের দৃষ্টি অনুসরন করে দেখল,আবছা আলোয় গম্ভীরমুখে এগিয়ে আসছে তন্ময়। পরনে নীল টিশার্ট আর ডেনিম প্যান্ট। চুলগুলোতে আঙুল চালিয়ে পেছনে নিয়ে পকেট থেকে মোবাইল বের করে গাড়ির পাশে এসে দাঁড়াল। রজনীর অবস্থা শোচনীয়। দুনিয়াতে এতো ছেলে থাকতে এই তন্ময়কেই মিতুলের বড়’দা হতে হলো? এটা কি ওর চোখের ভ্রম! মিতুল তো বলেছিল ওর কোনো ভাই নেই। তবে কি করে? রজনী হতবুদ্ধি হয়ে চেয়ে আছে তন্ময়ের দিকে। তন্ময় ঝুঁকে একনজর ওর দিকে তাকিয়েই সামনের দরজা খুলে ড্রাইভিং সিটে বসল। গাড়িতে বসা সবাই পরস্পরের দিকে করুন চোখে তাকিয়ে হতাশ মুখে বসে আছে। রজনীর বিস্ময় এখনো কাটে নি। ওকে হাঁ করে তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মিতুল কনুইয়ের গুতা দিল। সচকিত হয়ে মিতুলের দিকে একবার, তন্ময়ের দিকে একবার তাকিয়ে চাপা স্বরে বললো,

” এটা তন্ময় স্যার না?”

” হ্যাঁ।” মিতুল ঠোঁট উল্টে মাথা নাড়ায়। রজনী মিতুলের হাতে জোরে চিমটি মারতেই মিতুল চমকে “উহু” করে ওঠে। রজনী সে শব্দ উপেক্ষা করে বলে,

” আমি যাব না। তুই আমাকে আগে বলিস নাই কেন ইনিই তোর বড়’দা। আমাকে নামা, আমি তোদের সাথে যাব না মিতুল।”

” দেখ। আমার কথা শোন,,” মিতুলের কথা থেমে গেল তন্ময় ওদের দিকে ভ্রুকুঞ্চন করে তাকাতেই। বিরক্ত গলায় মিতুলকে বললো,

” কোনো সমস্যা? ”

” না মানে।” তন্ময়ের বিরক্ত বাড়ছে দেখে মিতুল বোকার মতো হেঁসে বললো,

” না সমস্যা নাই। আমার বান্ধবীও যাচ্ছে তো। তাই দু’জনে গল্প করছি। তোমার বিরক্ত লাগলে বলব না।”

তন্ময় রজনীর দিকে একরাশ বিরক্ত নিয়ে তাকিয়ে আবার সামনে ঘুরে বসল। মোবাইলে মগ্ন হয়ে বললো,

” গল্প করতে বাধা নেই, কিন্তু কান্নাকাটি করা যাবে না। তোর বান্ধবী তো কেঁদে কেঁদে পদ্মার জল আরো বাড়িয়ে দেবে দেখছি। কান্নাকাটি আমার পছন্দ না৷ বেশি কাঁদতে দেখলে ফেরি ঘাটে নিয়ে গিয়ে, পদ্মার জলে ছুঁড়ে ফেলে দেব দেখিস। আমি যা বলি তাই করি। তোর বান্ধবীকে সাবধান কর।”

রজনী স্তম্ভিত হয়ে বসে আছে৷ মিতুল সহ বাকিরা ঠোঁট টিপে হাসল। রজনীর চোখে পড়ল না এসব। ওর মনে পড়ল একটু আগে বলা মিতুলের টিপ্পনী মারা কথা৷ এর অর্থ যে এমন সাংঘাতিক হবে রজনী ঘূর্ণাক্ষরেও আঁচ করতে পারে নি। যা থেকে পালাতে চায় তাই কেন বার বার ওর সামনে উদয় হয়, এই ভেবেই নিজের ভাগ্যকে ধিক্কার দিল।গাড়ির বাইরে মুখ ঘুরিয়ে নিজেকে যথাসাধ্য শক্ত এবং স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা চালিয়ে গেল রজনী। এদিক ওদিক কারো দিকেই তাকানোর ইচ্ছা বিন্দুমাত্র দেখা গেল না ওর মধ্যে। সে ইচ্ছাটা দেখা দিলে বিশেষ কিছু দৃষ্টি গোচরে আসত রজনীর আজ।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here