বিভীষিকা পর্ব -১১ ও শেষ

বিভীষিকা’-
-‘নূরজাহান আক্তার আলো’-
[১১] (অন্তিম পার্ট)

চার মাস পর,

আবেশ বর্তমানে তার বড় মামীর সম্মুখে বসে আছে। মামী ছলছল চোখে নত মস্তকে নিশ্চুপ হয়ে আছেন। উনি কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না। ছেলেটার মুখ দেখে প্রাণটাও হাহাকার করে উঠছে। উনি এতদিন ইচ্ছে করেই সত্য কথাটা
গোপন করেছিলেন। কারণ সত্য জানলে আবেশ পুরোপুরি ভেঙে পড়ত। শক্ত মনের ছেলেটা অনেক আগেই নিঃশেষ হয়ে যেতো। ননদের ছেলে হলেও উনি আবেশকে খুব স্নেহ করেন। কিন্তু স্বামীর ভয়ে আগ বাড়িয়ে কিছু করতে পারেন নি। কারণ মোড়ল উনাকে বারংবার হুমকি দিয়েছেন। যদিও উনি প্রাণের মায়া কখনোই করতেন না। উনার যত ভয় এই ছেলেটাকে নিয়ে। নিজের পেটের দু’টো তো আরো অমানুষ।
তাদের না কিছু বলা যায় আর না করানো যায়। মামী এসব ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা তুলে তাকালেন। আবেশের চোখ থেকে অঝরে অশ্রু ঝরছে। ওর অবস্থা দেখে মামী মায়াময় কন্ঠে ডাকলেন,

-‘আবেশ, বাবা আমার।’

আবেশ তখন মাথার চুল খামছে ধরে অশ্রু লুকাতে ব্যস্ত। সে আজ অজানা কিছু সত্যের মুখোমুখি হয়েছে। ওর মন এবং মস্তিস্ক তিক্ত সত্যিটা মানতে নারাজ। সে ধারণাও করেছিল,
ওর বাবার খুনি বড় মামা। অর্থাৎ গ্রামের সন্মানিত মোড়ল সাহেব। কিন্তু ধারণা মিথ্যাে প্রমাণ করে বড় মামী অন্য দুই
ব্যাক্তিদের নাম বললেন।যারা উপর উপরে ভালোবাসার বন্য বইয়ে দিয়ে অন্তরে করতেন ওর মৃত্যু কামনা। আবেশ চোখ মুছে নিঃশব্দে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াল। ওর এক লোককে
ডেকে বড় মামীকে সাবধানে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার আদেশ দিলো। তারপর সে চলল ওর উদ্দেশ্যে। পিছু ফিরেও তাকাল
না। এখনো অনেক হিসাব বাকি। এ সব হিসাব সুদে আসলে মিলাতে হবে। এখনই মোক্ষম সময়। ছাব্বিশ বছরের হিসাব এবার যে তাদের মিটাতেই হবে। অনেক তো হলো লুকোচুরি,
সেই নাহয় এই খেলার সমাপ্ত টানুক। আবেশের অবস্থা দেখে বড় মামী ডাকলেও আবেশ শুনলো না। শার্টের হাতায় চোখ মুছতে মুছতে গাড়িতে উঠে চলে গেল। মামী শাড়ির আঁচলে মুখ লুকিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলেন। আবেশের হয়তো মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে। তবুও এটাই সত্যি ;আবেশের বাবার খুনি ওর চাচা এবং ফুপি। যারা এতদিন মুখোশ পড়ে ভালো মানুষের রুপে সেজে ছিলো। লোক দেখানো কর্ম করে তাকে ভুলিয়ে সম্পত্তি হাতাতে চেয়েছিলেন। যদিও আবেশ তা হতে দেয়নি। সব সব সম্মত্তি ওর নামে থাকলেও দেখাশোনার দায়িত্ব সে দিয়েছিল চাচাকে। বিশ্বাস করেছিল আপন মানুষগুলোকে।
তবে বিশাল এমাউন্টে গড়বড় হতে দেখে সে আকার ইঙ্গিতে চাচাকে সাবধানও করেছিল।বাবার কষ্টের তৈরি কোনোকিছু
সে অনাদরে নষ্ট হতে দিতে চায়নি। আবেশের এই কার্যে ওর চাচা ওর সঙ্গে তেমন কথাও বলতেন না। তবে সৌজন্যমূলক যতটুকু না বললেই না ততটুকু বলতেন। আবেশ এই ব্যাপারে তেমন গুরুত্বও দেয় নি। সেদিনের পর চাচা আবেশকে সহ্যও করতে পারতেন না। আড়ালে থেকে কয়েকবার ক্ষতি করার চেষ্টাও করেছেন। এসব আবেশ আন্দাজ করেও চুপ ছিলো।
এই সত্যি ছাড়াও সে আজ জানতে পারল, উনারা নাকি ওর বাবার সৎ ভাই-বোন। মোড়লের সঙ্গে হাত মিলিয়েই উনারা এই কাজ করে ছিলেন। আর ফুপির বুদ্ধিতে বাইজী খানাতে ওর বাবাকে দাফন করা হয়েছিলেন।যাতে কেউ উনার খোঁজ বের করতে না পারে। কারণ খোঁজ পেলে’ই ঝামেলা বাড়বে।
আর মোড়ল তো অমানুষ! উনি এই কাজে সঙ্গও দিয়েছেন।
শুধুমাত্র রাগ আর জেদের কারণে। উনার এত জেদ বোনকে বিধবা করতেও বুক কাঁপে নি। বরং ওর বাবাকে দাফন করে আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠেছিলেন। বর্তমানে এসব ব্যাপারেও আবেশ অবগত। আর পুরনো এক ভৃত্যের থেকে সুনয়না সব জানতে পেরেছিলো। আর সেই পুরনো ভৃত্য ছিলেন রমেলার আপন দাদী। উনি সুনয়নাকে খুব গোপনে এসব ঘটনাগুলো জানিয়েছিলেন।

আবেশের লোকদের সঙ্গে বড় মামী বাড়ি ফিরে গেলেন।উনি জুরুরি কিছু কেনাকাটার কথা বলে বেরিয়েছিলেন। বিলম্ব হলে মোড়ল সন্দেহ করতে পারেন। উনার তো শকুনি বুদ্ধি।
গাড়িতে বসে মামী মনে মনে দোয়া করলেন,যাতে আবেশ সবকিছু সামলে উঠতে পারে। ছেলেটা সত্যি কপালপোড়া। নয়তো অমানুষরাই কেন ওর চারপাশে ঘুরে বেড়ায়। কেনই বা বার বার কষ্ট দেয়!

কয়েকমাস আগে আবেশ নির্বাচনে জয়ী হয়েছে। সন্মানের সাথে তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে অটল। লুবানা এখন অবধি বাসায় প্রবেশের অনুমতি পায় নি। ওর সৎ মায়ের টাকাতে বিনা অনুমতিতে হাত দেওয়ার কারণে উনি নাকি একটা থাপ্পড় মেরেছিলেন। এতে লুবানা প্রচন্ড রেগে উনাকে স্বজোরে ধাক্কা মারে। উনি দেওয়ালের সঙ্গে বারি খেয়ে অজ্ঞান হয়ে যান। লুবানা সেই অবস্থাতেই উনাকে বেশ কয়েকটা লাথি মেরে পালিয়ে যায়।
এবং আবেশের ফুপি অর্থাৎ ওর মাকে পুরো ঘটনা জানায়।
মেয়ের কাজে উনি প্রাণ খুলে হেসে বাহবা দেন এবং পাশের বাসায় ভাড়া উঠেন। এই পুরো ঘটনা উল্টো ভাবে আবেশের সামনে উপস্থাপন করেন। যাতে আবেশ লুবানাকে মাফ করে
দেয়। কিন্তু আবেশ তা না করে বেশি সমস্যা হলে ফুপিকেও চলে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়। তবে রণ এই বাড়িতেই আছে। সে আবার সুনয়নার নেওটা। ছেলেটা মা-বোনের মতোন কুটিল মনের হয় নি। সে মিশুক দিলখোলা টাইপের ছেলে। রণ তো এটাও বলেছে, ওর বাবা নাকি খুবই ভালো একজন মানুষ। শুধু ওর মায়ের উচ্চাকাঙ্খা আর হিংসার কারণেই উনাদের সংসার ভেঙেছে। কারণ ওর মা ওর বাবার আয়ের টাকায় কখনোই সন্তুষ্ট হতেন না। এই নিয়ে তিনি সবসময় কটু কথা বলতেন, স্বামীকে ছোট করতেন। যার তার সামনে অপমান করতেন। এর ওর সঙ্গে তুলনা করতেন। যেটা একজন পুরুষ মানুষের জন্য খুবই লজ্জাজনক। এসব সহ্য করতে না পেরে ওর বাবা রেগে দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন। এবং ওর মায়ের সাথে আইনত ভাবে বিবাহবিচ্ছেদ করেন। এতে ওর মা খুব একটা কষ্ট পেয়েছেন বলে মনে হয় না। তারপর থেকেই ওরা এখানেই আছে।

সুনয়না বর্তমানে নিজ সংসারে মন দিয়েছে। আবেশের চাচী ওকে খুব স্নেহ করেন। কথা এবং কলির সঙ্গেও ওর ভালোই ভাব জমেছে। সময়টাও ভালোই কাটে। আবেশের সঙ্গে ওর সম্পর্কটাও অনেকটা এগিয়েছে। মাস দু’য়েক আগে আবেশ সুনয়নাকে নিয়ে একটা পরিত্যক্ত বাড়িতে গিয়েছিল। যদিও সুনয়না যাওয়ার কারণ জানত না। সেখানে গিয়ে খুব অবাক
হয়েছিলো সে। সেখানে অভিরুপকে হাত,পা, আর মুখ বাঁধা অবস্থায় দেখতে পায়। ওকে দেখে অভিরূপ রাগে গজরাতে থাকে। আবেশ তখন ওর হাতে ধারালো একটা ছুরি এগিয়ে দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়। সুনয়না ওর ইশারা বুঝে মৃদু হেসে এগিয়ে যায়। অভিরূপের ছটফটানিও ততক্ষণে দ্বিগুন
বেড়ে যায়। সুনয়না ঘাড়’টা ঘুরিয়ে আবেশের দিকে তাকিয়ে ছুরিটা শক্ত করে ধরে অভিরূপ গলায় বসিয়ে দেয়। ধারালো ছুরির বিধায় সহজেই অভিরূপের গলা কেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটতে থাকে। সুনয়নার আকাশি রঙ্গা শাড়ি রক্তে ভিজে যায়। অভিরূপ কাটা মুরগির মতো দাপরাতে থাকে। একটা সময় সে একেবারেই স্থির হয়ে যায়। তা দেখে সুনয়না হাসে।
তৃপ্তির হাসি!যেদিন ওর আর আবেশের দাম্পত্য জীবন শুরু হয়, সেদিন সুনয়না বলেছিল,

-‘আমি কিছু চাইলে দিবেন?’
-‘অবশ্যই, কি চাও?’
-‘এক টুকরো শান্তি।’
-‘কিসে তোমার শান্তি বিদ্যামান?’
-‘অভিরূপের রক্তে।’

আবেশ তাৎক্ষণিক কিছু না জানতে চাইলেও সুনয়না নিজে কয়েকটা কথা বলেছিল। অভিরুপকে সে মাফ করত যদি না সে ওকে পরবর্তীতেও কু-প্রস্তাব না দিতো। আবেশের পতিতা বলে সর্বদা গালমন্দ না করতো। ওর বাথরুমে ক্যামেরা সেট
করে গোসলের ভিডিও না করতো। কুন্তিকে ধর্ষণ করে, পরে গুলি না করতো। ওর পুরো পরিবারকে নৃশংসভাবে শেষ না করতো। সর্বশেষ কথা, সুনয়নার সঙ্গে ওর মাকে অর্থাৎ বড় মামীকে কথা বলতে দেখেছিলো। যেটা ওর অপছন্দ। পরে বাড়িতে ওর নিজের মাকেও মেরেছিল। এমন জানোয়ারের মৃত্যু হওয়ার আবশ্যিক। এরা বেঁচে থাকা মানেই পাপ এবং কু-কর্মের জন্ম। তাই আবেশ সুনয়নার চাওয়াকে পূর্ণ করতে অভিরুপের মৃত্যুর সকল বন্দোবস্ত করেছিলো।তবে সে কেন অভিরাজকে মেরেছে, তা এখনো অস্পষ্ট।

আবেশ রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে কোথায় যেন গেছে। দিন পেরিয়ে রাত হলো তাও তার দেখা নেই। সুনয়না কয়েকবার ফোন দিয়েও পেলো না। রাত প্রায় একটার দিকে আবেশ ফোন করে জানাল, সে আগামী পাঁচদিন ফিরবে না। একটা জরুরি কাজে আটকে গেছে। সুনয়না বাক্যো ব্যয় না করে মেনে নিলো। রাজনীতিবিদ কাজ থাকতেই পারে। এদের তো গোপনীয়তা বজায় রাখতে হয়। না জানি কোন গোপন কার্যে
গেছে কে জানে! পরেরদিন থেকে আবেশের সঙ্গে কেউ আর যোগাযোগ করতেই পারল না। তার ফোন সুইচ অফ।সুনয়না নিশ্চিন্তে আছে তার কারণ সে জানে আবেশ কোনো কাজে ব্যস্ত। প্রায় দশদিনের দিন আবেশের লোক এসে সুনয়নাকে গ্রামে নিয়ে গেল। সুনয়না সেখানে গিয়ে প্রচন্ড অবাক হলো। কারণ প্রাসাদের স্থানে প্রাসাদ নেই। বর্তমানে সেখানে একটা কবরস্থান দেখা যাচ্ছে। সেখানে পাঁচটা কবর নতুন এবং তা সুন্দর করে বাঁধায় করা। কবরের উপরে নেইম প্লেটে বড় বড় করে লিখা, প্রতারক। পরপর তিনটা কবরে একইভাবে এই শব্দ লিখা। সুনয়না থম মেরে দাঁড়িয়ে থেকে আবেশকে খুঁজে বের করল। আবেশ ওর দৃষ্টি দেখে মৃদু হেসে বলল,

-‘অভিরুপ, বাবা, চাচা, মোড়ল আর মামী।’

সুনয়না বিষ্ময় নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। কারণ চাচা নাকি অফিসের কাজে বাইরের দেশে গেছে। আর মোড়লকে কে মারল? এই কয়েকদিনে এত কিছু ঘটল? আবেশ মুচকি হেসে সুনয়নার কাঁধ জড়িয়ে ধরে হাঁটতে হাঁটতে জানাল, ওর মামী নিজে মোড়লকে মেরেছেন। উনি আবেশকে সত্যি বলে দিয়েছেন মোড়ল জেনে গিয়েছিল।এজন্য মামীকে নাকি খুব
মেরেছিলেন। মামীও অতিষ্ঠ গিয়েছিলেন। এই জীবনে স্বামী -সন্তান নিয়ে উনি কখনোই সুখের মুখ দেখেন নি। বিতৃষ্ণাতে উনি নিজে মোড়লের খাবারে বিষ মিশিয়েছিলেন। এবং উনি নিজে খেয়েছেন আর মোড়লকেও খাইয়েছেন। স্বামীকে খুব ভালোবাসতে বিধায় উনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতেও দুবার ভাবেন নি। আর চাচাকে তো ওর লোকরাই গাড়ি চাপা দিয়ে মেরেছে। যদিও এ কথা বাড়ির কেউ জানে না, জানবেও না। মোড়ল আর মামীর সঙ্গে চাচার লাশও সে রাতারাতি দাফন করে ফেলেছে। আর গ্রামবাসীকে জানানো হয়েছে, মোড়ল হার্ট এ্যার্টাক করেছেন। এজন্য দুই ছেলে আর মামী উনাকে নিয়ে ইতালি গেছেন। মোড়লের অবস্থা খুব শোচনীয়।এজন্য
কাউকে জানাতে পারেন নি। তারপর মাস ছয়েক পরে ফ্লাইট দূর্ঘটনায় উনারা মারা গেছেন একথা রটিয়ে দিবে। ব্যস, সব ঝামেলা শেষ। কথা ও কলি, চাচী, রণ আর লুবানার দায়িত্ব আবেশ নিবে। সে ওদের জানতেও দিবে না ওদের বাবা আর ফুপি কতটা নিকৃষ্ট। এবং উনারা বর্তমানে কোথায়! তাদের
শেষ পরিণতি কী! এবার ফুপির পালা! যদিও কাজ অনেক আগেই শুরু হয়ে গেছে।ফুপির ওষুধ আবেশ অনেক আগেই পরিবর্তন করে দিয়েছে। এখন ধীরে ধীরে ফুপির পুরো শরীর অকেজো হওয়ার পালা।

সুনয়না পিছু ফিরে কবরস্থানটার দিকে একবার তাকাল।খুব
দরকার ছিলো এত লোভ করার? পরিশেষে ঠাঁই তো মিলল, ওই তিনহাত মাটিরই নিচে। জোর, ক্ষমতা, টাকা, লোভ, সব গেল বিফলে। আবেশ কবরস্থানের চারপাশে দেওয়াল তুলে দিয়েছে। এবং এটা শুধু ওদের পারিবারিক কবরস্থান সেটা উল্লেখ করেছে। মোড়লের সবকিছু দেখার দায়িত্ব নিয়েছেন উনার ছোট ভাই। এতদিন মোড়ল উনাকে এ সবকিছু থেকে বঞ্চিত করেছিলেন। তবুও মুখ বুজে ছিলেন। মোড়লের সব পাপকর্মের ব্যাপারে অবগত হয়েও উনি আজ নিশ্চুপ। এর কারণ উনার পাগলি মেয়েটা। থাক না, দিন এভাবেই কেটে
যাবে। আবেশ সব কাজ সেরে সুনয়নাকে নিয়ে বাড়ির পথে রওনা দিলো। গাড়ির ড্রাইভ করতে করতে হঠাৎ সে বলল,

‘শব্দকলির শঙ্খরাজ
স্বপ্নচারির ভাঙা তাজ।
বিভাবরীর সেই রঙ্গশালা
ক্ষরণ ঘটিয়ে ক্ষান্ত তারা।’

উঃ – মোড়লের পাপ মোচন।

অখণ্ডিত এক স্বপ্নমালা
সুখ রাজ্যেও পড়বে ভাটা
রাঙা তরল শরীর বেয়ে
আত্মা কাঁপুক দর্শনেতে।

উঃ-রক্ত

অচেনা এক যাত্রাপথ
চাই না যেতে কেউ।
তোমার জন্য আছে সেথায়
অতি প্রিয় কেউ।
উঃ-কবর

আজকে সব কয়টার সঠিক জবাব দিলো আবেশ। তা দেখে সুনয়না খিলখিল করে হাসল। এই প্রথম সে এভাবে হাসছে।
ওকে হাসতে দেখে আবেশও মুচকি হাসল। মেয়েটাকে বড্ড ভালোবাসে সে। তবে ক্ষণে ক্ষণে প্রণয়ে টইটম্বুর প্রেমাক্তিতে তা প্রকাশ করতে পারে না। ওর ভালোবাসা অদ্ভুত। প্রকাশে ব্যর্থ হলেও ওর বুকে রয়েছে সীমাহীন ভালোবাসা। সুনয়না হয়তো সেটা বোঝে, কিংবা না।বাড়ি পৌঁছে দু’জন স্বাভাবিক
আচরণ করল। চাচী, কথা, কলি, রণ মিলে আড্ডাও দিলো।
ফুপির নাকি শরীর খারাপ তাই দুদিন ধরে আসে নি। একথা শুনে আবেশ মৃদু হাসল। অনেকদিন পর ওর বাসাটা খুশিতে ভরে উঠল। এর মাস দু’য়েক পর হঠাৎ করে সুনয়না হারিয়ে গেল। কোথাও কোনো ভাবেই তার সন্ধান মিলল না।আবেশ
হন্ন হয়ে খুঁজেও ব্যর্থ হলো। সে যাওয়ার আগে নীল চিরকুট রেখে গেছে।

আঁকা বাঁকা সরু পথ
সবুজ রঙা ঢেউ।
হেথায় খুঁজে পাবে তুমি
‘আমি’ নামক কেউ।
আসবো ফিরে তোমার নীড়ে
যদি আমাকে পাও খুঁজে।
অপেক্ষার রঙহীন অবসানে
এসে তুমি আমাকে নিতে।

সুনয়নাও ফিরবে আর আবেশও তাকে খুঁজে পাবে। এটাও হয়তো প্রণয়ের পরীক্ষা। তবে সেটা সঠিক সময়ে। তবে সেই সময় কবে বা কখন উপস্থিত হবে তা অজানাই রয়ে গেল।
তবে সুনয়না পরিকল্পনায় ছিলো চলে যাওয়া। তাই সে গেল।
সে ছিলো বাঁধনহারা এক মুক্ত পাখি। তাই খাঁচার মায়া করা ওর জন্য অনর্থক

‘কিছু কিছু মানুষ মায়া বোঝে না, প্রণয় বোঝে না। তাদেরকে যতই স্বযত্নে বুকে আগলে রাখা হোক সময়ের ব্যবধানে তারা উড়াল দিবেই। এটাই যেন তাদের ধর্ম। এটাই সমগ্রতা।’

সমাপ্ত!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here