বিলম্বিত বাসর পর্ব ৪

#বিলম্বিত_বাসর
#পর্ব_৪
#Saji_Afroz
.
.
.
আবেশের পাশে আদুরেকে বসিয়ে তাদের দিকে ডেবডেবে চোখে তাকিয়ে আছে পরী।
আর ভাবছে, তার মাঝে কোনো খারাপ লাগা কাজ করছে কিনা।
তা দেখে আদুরে বললো-
কি দেখছো এমন করে?
.
সে কথার জবাব না দিয়ে পরী বললো-
আদুরে আপু? তুমি ভাইয়ার ডান পাশে বসো এইবার।
-কেনো?
-আরে বসোনা।
.
আবেশের ডান পাশে এসে আদুরে বসতেই পরী কিছু না ভেবে বলে উঠলো-
এবার ভাইয়ার গালটা টেনে দাও।
.
পরীর কথা শুনে আদুরে হাসলেও বিরক্ত হলো আবেশ৷ ভ্রু জোড়া কুচকে মুখ এক বিরক্তি নিয়ে পরীর উদ্দেশ্যে আবেশ বললো-
আহ! কি হচ্ছেটা কি?
.
আবেশের দুগাল টানতে টানতে আদুরে বললো-
গাল টানতে বলেছে। তোমাকে মারতে নয়।
.
নাহ! কোনো খারাপ লাগা কাজ করছেনা পরীর মাঝে। বরং তাদের একসাথে দেখে ভালো লাগছে তার। অনেক বেশিই ভালো লাগছে।
চোখের নিচ থেকে কাজল
নিয়ে দৌড়ে আদুরের পাশে এসে তাকে কাজলের ফোটা লাগিয়ে পরী বললো-
কারো নজর যেনো না লাগে তোমাদের উপর। অনেক সুখী হও তোমরা।
.
.
.
-পরী এসেছে এতোক্ষণ বললে না কেনো তুমি আমাকে মোরশেদা?
.
ফাতেমা বেগমের কথা শুনে মোরশেদা বললেন-
ওমা! এটা বলার কি আছে? আমাগো পরীর কি এই বাড়িত আসা বারণ নাকি? যহন যেমনে খুশি সে আসা যাওয়া করে।
-এমন করে বলছো যেনো এখন বিষয়টা স্বাভাবিক? বউমা কে পরী সবটা জানালে কি ভালো হবে? কষ্ট পাবেনা মেয়েটা?
-তার কষ্ট লইয়া এতো ভাবার কি আছে?
-তার কষ্ট নিয়ে না ভেবে তোমাকে নিয়ে ভাববো আমি! দেখি যাও চোখের সামনে থেকে এখন। মাথাটাই দিলে খারাপ করে।
.
মোরশেদা জানে এখানে আর থাকা যাবেনা। থাকলেই ফাতেমা বেগম তাকে দু চারটে কথা শুনিয়ে দিবে আরো। তার চেয়ে অন্য রুমে গিয়ে কাজ করাটায় ভালো।
মোরশেদা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই বিড়বিড় করে ফাতেমা বেগম বললেন-
আদুরের কাছে সবটা গোপণ থাকতে হবে। কোনো মেয়ের পক্ষেই এসব মানা সম্ভব না। আদুরেও মানতে পারবেনা।
.
.
.
ঘনকালো রেশমি চুল, গায়ের রঙ দুধের মতো সাদা, গোলাপি রঙের ঠোঁট সব মিলিয়ে আসলেই যেনো একটা পরী এই পরী নামক মেয়েটা। অনেকক্ষণ যাবৎ তার কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছে আদুরে।
একটার পর একটা কথা বলেই যাচ্ছে পরী। মধুর মতো মিষ্টি তার গলার স্বর।
আল্লাহ সব সৌন্দর্য্য যেনো এই মেয়ের উপরে ঢেলে দিয়েছেন।
ছেলে হলে পরীর পেছনে লাইন মারা যেতো। ভাবতেই হেসে দিলো আদুরে।
সেই হাসিমাখা মুখের দিকে তাকিয়ে পরী বললো-
আদুরে আপু? তোমার হাসিটা অনেক মিষ্টি।
-তোমার চেয়ে কম।
-কি যে বলোনা। আচ্ছা আপু আমি তোমাকে ভাবি না বলে আপু বলছি রাগ করছো নাতো?
-মোটেও না। আমার বোন নেই। একটা ছোট বোনের অনেক শখ ছিলো। তুমি আমাকে আপু ডাকলে আমার খুশি লাগবে বরং।
-তুমি কিসে পড়ো?
-অনার্স শেষ করেছি। তুমি?
-আমি এস.এস.সি দিবো এইবার।
-তুমিতো এক্কেবারে পিচ্চি! অবশ্য দেখেই বোঝা যায়।
-মোটেও না! আমি বাড়ির সব কাজ করতে পারি। করতে হয় আমাকে মা বাসায় না থাকলে।
-মা কোথায় যায়?
-আবেশ ভাইয়ার ফ্যাক্টরিতে কাজ করেতো।
-তোমার বাবা?
.
মুখে একরাশ অন্ধকার এনে পরী বললো-
বাবা নেই।
.
পরীর কথা শুনে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেললো আদুরে।
মানুষের জীবনে কতো দুঃখ, সে জায়গায় সে নিজে অনেকটাই ভালো আছে। তবুও এতো অভিযোগ!
-কি ভাবছো আপু?
.
পরীর প্রশ্নে আদুরে বললো-
তোমার পড়ালেখা কেমন চলছে?
-আগেতো আবেশ ভাইয়া পড়াতো। এখন পড়ায় না। অনেক কিছুই বুঝিনা। তাই খারাপ চলছে। টিউশনি করতে আবার খরচ আছে।
.
আবেশের দিকে তাকিয়ে আদুরে প্রশ্ন ছুড়লো-
এই? তুমি ওকে পড়াও না কেনো এখন?
.
ঢোক গিললো আবেশ। অন্যদিকে নজর দিয়ে সে বললো-
কাজের চাপে সময় পেতাম না।
-ওহ! আচ্ছা আজ থেকে আবার পড়াবে তোমাকে।
.
পরীর উদ্দেশ্যে আদুরের এমন কথা শুনে আবেশ বলে উঠলো-
আমার সময় নেই।
-কেনো কি করবে তুমি?
.
-ওর নতুন বিয়ে হলো। সময় কোথায় বলো?
.
দরজায় দাঁড়ানো শ্বাশুড়িকে দেখে আদুরে বললো-
মা আপনি? ভেতরে আসুন।
-না আসবোনা। কাজ আছে আমার। পরীকে নিতে এলাম। আর তোমরা কি যেনো বলছিলে? পরীকে পড়ানোর কথা?
-আবেশ না পারলে আমি পড়াবো নাহয়।
-কোনো দরকার নেই। আয়ান পড়াবে।
-জ্বী ঠিক আছে।
-আজকে তোমাদের বাসায় যাওয়ার কথা আবেশের সাথে। তৈরী হয়ে নাও।
-জ্বী।
-শুনো মা। তিনদিনের বেশি থেকোনা। ঘরের বউ ঘরেই ফিরে এসো।
-হুম।
-আবেশ চাইলে তিন দিনই তোমার সাথে থাকতে পারে।
-জ্বী।
.
পরীর উদ্দেশ্যে ফাতেমা বেগম বললেন-
পরী? আমার সাথে আয় তুই। কাজ আছে।
.
মায়ের সাথে পরী বেরিয়ে যাওয়ার পর হাফ ছেড়ে যেনো বাঁচলো আবেশ।
বিছানার উপরে শুয়ে পড়লো সে।
আদুরে তার দিকে তাকিয়ে বললো-
এতো সুন্দরী, মিষ্টি একটা মেয়ে পরী। তুমি তাকে পড়াতে। মনের মাঝে লাড্ডু ফুটতো না?
.
কিছু বলার আগেই আদুরে আবারো বললো-
মজা নিলাম। পিচ্চি একটা মেয়ে সে। তুমি আমাকে ওর কথা বলেছিলে। কিন্তু ওর বর্ণনা দাওনি।
-মানুষ একটা। কোনো অদ্ভুত প্রাণী নয় যে বর্ণনা দিবো।
-শুধু অদ্ভুত প্রাণী হলেই দেয়? সৌন্দর্য্যের দেয়া যায়না?
-ঘুম পাচ্ছে আমার।
-ঘুমাবে মানে? মা কি বলে গেলেন? তৈরী হয়ে নিতে।
-এখান থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ যেতে বেশি সময় লাগবেনা। তুমি তৈরী হয়ে নাও আস্তেধীরে। তারপর আমাকে ডেকো। আমার হতে ২মিনিট লাগবে।
.
.
.
মাথা নিচু করে বসে আছে পরী ফাতেমা বেগমের সামনে।
ফাতেমা বেগম তার উদ্দেশ্যে বললেন-
কিছু কথা মনে দিয়ে শুনে রাখ পরী।
.
(চলবে)
.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here