বিষবৃক্ষ পর্ব -০৪

#বিষবৃক্ষ ❤️
#সাদিয়া


প্রাসাদের উদ্যান থেকে পাখিদের মিষ্টি কিচিরমিচির শব্দ চারদিক মুখরিত করে তুলছে। জলাশয়ের এক ধারে সম্রাট রাজ দাঁড়িয়ে আছেন। ফজরের নামাজ পড়ার পর তিনি কিছুক্ষণ অস্ত্র প্রশিক্ষণ করে। তারপর উদ্যানে হেটে বেড়ায়। পিছন থেকে হঠাৎ শুনা গেল
“শুভ সকাল ভাইজান।”

রাজ পিছন ফিরে তাকাল। নাইলা কে দেখে এগিয়ে গিয়ে কপালে চুুমু এঁকে দিল। “শুভ সকাল বোন” বলে হাসল মৃদু।

“ভাইজান সকালে আহার করবেন না? আজ অনুমতি দিলে আমি আপনার সাথে বসে খাবার খেতে চাই।”

“ঠিক আছে বোন। দাসীদের মতো আজ এখানেই খাবারের ব্যবস্থা করতে।”

“ভাইজান।”

“কিছু কি বলবে?”

“কাল আপনার বন্দিকে অনেক খাবার। খাওয়ানোর চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু সে খায়নি।”

স্লান হেসে নাইলার গালে আলতো হাত রেখে রাজ বলল “নাইলা ও একজন রাজকন্যা। কোনো এক কারণে তাকে আজ বন্দি করা হয়েছে। নিশ্চয় সে আবার তার রাজ্যে ফিরে যাবে। আশা করি তাকে তার প্রাপ্য সম্মানটুক দিবে।”

“দুঃখিত ভাইজান।”

“এবার দাসীদের আহার প্রস্তুত করতে বলো।”

“জ্বী ভাইজান” বলে নাইলা অন্দরমহলের দিকে রওনা দিল।

—-
রাজা তৈজুল কে আশেপাশের কয়েকটা এলাকার রাজা দেখতে এসেছেন। তারা সবাই তৈজুলের দুঃখে দুঃখ প্রকাশও করলেন। সম্রাট রাজ চুপ করে বসে থাকার পাত্র নয় এটা সব রাজা সম্রাটরাই জানে। সবাই যুক্তি দিয়েছে একটা বৈঠক করতে রাজ এর সাথে। এতে যদি সে কিছু করে। তৈজুলও হতাশ। তিনি কি করবেন বুঝতে পারছেন না। একটু পর পর আশেপাশে রাজ্যের রাজারা দেখতে আসছেন নয় তো কেউ পত্র পাঠিয়ে হাসি তামাশা করছেন। রাজ তো এটাই চেয়েছিল। তৈজুলের অপমান। এবার তো হলো তাহলে মেয়েকে ফিরিয়ে দিতে কোনো দ্বিমত কি পোষণ করবে সে? দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তৈজুল। একটু পর একজন দূত হাতে একটি পত্র নিয়ে এলেন। পত্র পাঠানোর বাক্সের উপর চিহ্ন দেখে তিনি বুঝেছেন সম্রাট জাহাঙ্গীর থেকে এসেছে দূত। তিনি একলা ঘরে তা খুলে ধরল।

“রাজা তৈজুল, আপনার খারাপ পরিস্থিতি আর অসুস্থতায় প্রথমেই দুঃখ প্রকাশ করলাম। আপনার মেয়ের অপহরণের কথায়। আমি বেশ আহত। চিন্তা করবেন আমি নিশ্চয় একটা সমাধান বের করব। তবে ভুলেও সম্রাট আব্রাহাম মুনেম রাজের নিটক যেয়ে মাথা ঝুকাবেন না। এর পরিণতি বিপরীত আর ভয়ংকর হবে।”

সম্রাটের চিঠি পেয়ে তিনি রেগে ফেটে পড়লেন। ক্রোধে তিনি লম্বা শ্বাস টেনে নিচ্ছেন বুকের ভেতরে। তারপর হাক ছেড়ে বললেন,
“প্রহরী সেনাপতি কে দ্রুত রওনার ব্যবস্থা করতে বলো। সম্রাট জাহাঙ্গীর ভয়ংকর খেলায় মেতে উঠেছেন। এই মেলা যে ত্বরান্বিত করতে পারবে তার দ্বার সম্মুখেই হবো আমি।”

—-
ঘুম থেকে উঠে সেই যে অশ্রুদ্বারা বহাতে শুরু করেছিল এখন পর্যন্ত তা দমেনি মেহেরের। দাসীরা খাবার দিয়ে যেতে চাইলে সে জানিয়ে দিল,
“পায়ে পড়ি খাবার টা নিয়ে যাও তোমরা। দয়া করে সম্রাট কে এবার ডেকে পাঠাও। আমি তার সাথে কথা বলতে চাই।”

রাজ এমন ধরনের কথা শুনতে পেয়ে শান্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইল। যেন কোনো হেলদুল নেই। বেশ কিছুক্ষণ পা সে নিজের কক্ষের দিকে পা বাড়াল। যথা সম্ভব নারীর সঙ্গ ত্যাগ করে চলে সে কিংবা দূরত্ব বজায় রেখে। এটা যেন তার নিজেস্ব ব্যক্তিত্বের আওয়াতায় অন্তর্ভুক্ত। তাই তো নিজের সৎ বোন নাইলা তার সব বিষয় দেখা শুনা করে। নাইলা নিজের মায়ের পেটের বোন না হলেও যেন খুব কাছে। একটা বোন কে যতটা স্নেহ করতে হয় তার চেয়ে বোধহয় বেশিই করে সে। মুখে গাম্ভীর্য ভাব টেনে এনে সে এগিয়ে এলো দরজা খুলে। প্রস্থ বুকটা টান করে দাঁড়িয়ে শান্ত গলায় প্রশ্ন করল,
“রাজকন্যা আপনি নাকও আমার সাথে কথা বলতে চান?”
রাজের ঠান্ডা কথায় মাথা তুলল মেহের। এই প্রথম বোধহয় মনের সুতায় টান অনুভব করল রাজ। ভেতরটা কেমন অদ্ভুত ভাবে মুচড় দিয়ে উঠল শান্ত কোমল সৌন্দর্য পূর্ণ মুখটা অনবরত কান্নায় ফুলে উঠা দেখে। চোখ গুলি লাল লাল হয়ে ফুলে আছে গাল দুটি ডালিমের দানার মতো টসটসে হয়ে আছে এখনি বুঝি রক্তের মতো লাল রস বের হয়ে আসবে। নাকের ঢগাটা লাল আঙ্গুরের মতো ফুলে আছে। রক্তজবা ঠোঁট গুলি কাঁপছে। রাজের বেশ মায়া হলো। কপাল কু্চকে সে রাজকন্যা মেহেরের দিকে কৌতূহল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিন্তু মেহের নিজের কান্নার কারণে কথা বলতেও পারছিল না। যখনি ঠোঁট নেড়ে কিছু বলতে যাবে এমনি চোখ বুজে মাটিতে নিথর দেহটা হেলিয়ে দিল। রাজ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে তাকিয়ে আছে। তার কি করা উচিৎ বুঝতে পারছে না। চেতনা ফিরলে দ্রুত পায়ে এগিয়ে নিজের বলিষ্ঠ হাতে কোলে তুলে নিল মেহের কে। বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি কবিরাজ কে ডেকে পাঠাতে ব্যস্ত হলো।

কবিরাজ পরখ করছে নিস্তেজ হওয়া শ্যাযায় অচেতন মেহের কে। বেশ খানিক দূরে মুখ ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাজ। বিছানার কোণায় বসে আছে নাইলা। কক্ষে আর দুইজন দাসীও উপস্থিত। কবিরাজ মেহেরের নাকেরর ঢগায় কিছু লাগিয়ে দিল। তারপর আরেকটা শিশি থেকে তরল পদার্থ আগেরবারের মতো নাকের ঢগায় ঘষে দিয়ে সম্রাটের দিকে এগিয়ে গেল। ক্ষীণ গলায় বলল,
“আমার প্রিয় সম্রাট উনার শরীর খুবই দূর্বল। নাড়ী পাওয়া যাচ্ছে না তেমন। এ কারণে চৈতন্য হারিয়েছে। আমি কিছু ঔষধ নাইলা মা কে বুঝিয়ে দিব। একটু পর জ্ঞান ফিরলে আহারের পর ওগুলি খায়িয়ে দিতে বলব। তারপর রাতে এসে আবার দেখে যাবো। অনুমতি পেলে আমি এবার আসতে পারি।”

“আপনি যান। প্রয়োজনে ডেকে পাঠাব।”

“যথাআজ্ঞা সম্রাট।”

তাজিম করে কবিরাজ বিদায় নিল। নাইলা মেহেরের মাথার পাশে বসে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। কি মায়াবি চেহারা ছোট মেয়েটার। বয়সে তার থেকে কম হবে মেয়েটা। মুখে লাবণ্যময় মায়া উপচে পড়ছে। সম্রাট রাজ একবার ঘাড় ঘুরিয়ে অজ্ঞান হওয়া মেহের কে দেখে কক্ষে থেকে বের হয়ে রাজদরবারের দিকে অগ্রসর হলো।

“আপা এই সুন্দরি কথা বলছে না কেন?”
মাহতির কথায় চমকে তাকাল নাইলা।
“এই বিচ্ছু তুই এখানে কি?”

“সুশশ। আস্তে বলো আপা আমি চুপিচাপি এসেছি।”

“জলদি বিদায় হো ভাইজান দেখলে শেষ করে ফেলবে। তোর ছোট মাথাটা মরিচের মতো ছেঁচে ফেলবে।”

“আরে এসব কিছুই হবে না।”

“বিচ্ছুর বিচ্ছু তুই যাবি না তোর সাথে আমার গর্দান টাও ফেলাবি। জলদি বের হো।”

“আচ্ছা আপা ভাইজান এই মেয়েটাকে নিজের কাছে রাখে কেন? ভাইজান কি সুন্দরি কে পছন্দ করে?”

থমকে যায় নাইলা। ঢোক গিলে বলে,
“পাকনামি কথা রেখে যাবি না বসবি? আমি না হয় ভাইজান কে..”

“এই না না আমি যাচ্ছি তো। নাক কাটা পেত্নী। হুস।”

মাহতি আলিশান করে হেটে জলদি বের হয়ে যায়। নাইলা হঠাৎ খেয়াল করল মেহের কাঁপাকাঁপা চোখের পাপড়ি গুলি মেলে তাকাল। শরীর দূর্বলতায় চোখের পাতা গুলি আবার নেতিয়ে গেল।

চলবে
(চেক করা হয়নি। ভুল ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here