#বিষাক্ত প্রেম ২
Urme prema (sajiana monir)
পার্ট:২৪
সকালের নাস্তা করে আরহাম সেহের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হয়ে যায় ।প্রথমে সেহের মানা করলেও আরহামের অনেক রিকোয়েস্টের পর বাড়িতে ফিরার জন্য রাজি হয় ।
পুরো গাড়িতে সেহের মুখ ফুলিয়ে বসে ছিলো ।আরহামের সাথে টু শব্দ পর্যন্ত করেনি ।
বাড়িতে পৌছিয়ে ডোর বেল বাজাতেই আশা বেগম এসে দরজা খুলে ।তার চোখে মুখে কেমন জানো ভয়ের ছাপ ।আরহাম সেহের তা বেশ ভালো করে লক্ষ করেছে ।আরহাম সেহের তা বেশ ভালো করেই লক্ষ করেছে ।আরহাম বাড়িতে প্রবেশ করতে করতে বলে
-“মা কি হয়েছে তোমাকে এমন বিচলিত লাগছে কেন ?
সব ঠি ক আছে তো ?”
আশা বেগম বিচলিত কন্ঠে উত্তর দেয়
-“কিছু ঠি ক নেই বাবা !
তোর বিনা ফুপি এসেছে ।”
আরহাম মায়ের কথা শুনতেই তার মুখে আতংক ফুটে উঠে ।এই শীতের মাঝেও তার কপাল থেকে বিন্দু বিন্দু ঘাম ঝোড়ছে ।তা সেহেরের চোখ এড়ায়নি সেহের স্থির ভাবে আরহামের দিকে তাকিয়ে আছে ।সেহের কিছু একটা ভাবতে ভাবতে ড্রইং রুমের দিকে যায় ।ড্রইং রুমে যেতেই এক মহিলাকে দেখতে পায় ।তাদের দিকে সুক্ষ দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে ।চোখে মুখে কেমন যেন একটা দরজাল দরজাল ভাব ।সেহেরকে দেখতেই মুখ ভেংচি দিয়ে আশা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগে
-“ভাবী আবার এই অলক্ষিকে বাড়িতে নিয়ে এসেছো ?
গত বার তো আমার ছেলেটাকে খেয়েছে ।এবার কাকে খেতে এই ডায়নি এসেছে !”
প্রথম দেখায় এমন কিছু শুনে সেহের বেশ হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ।কি রিয়েক্ট করবে কিছুই বুঝচ্ছেনা ।
সেহের ঘাড় ঘুরিয়ে আরহামের দিকে তাকাতে দেখে আরহাম চোখ মুখ শক্ত করে দাড়িয়ে আছে ।সেহেরের চোখ থেকে দু ফোটা জল গড়িয়ে মাটিতে পরে ।বড্ড বেশি অপমানবোধ করছে সে ।আশা বেগম নিরুপায় হয়ে মাথা নত করে আছে ।
মহিলাটি আবার বলতে লাগে
-“বুঝিনা ভাবী তোমার ছেলে এই মেয়েটার মধ্যে কি এমন দেখেছে যে এতকিছুর পরও তার পিছু ছাড়েনা ।”
আশা বেগম মহিলাটিকে থামানোর জন্য বলে
-“ঔ সব বাদ দেও না বিনা ।যা চলে গেছে তা চলে গেছে ।অতীতের রেশ ধরে থাকলে কি সামনে আগানো যাবে !”
আশা বেগমের কন্ঠে স্পষ্ট অসহায়ত্ব ফুটে উঠে ।সেহের মাথা নত করেই আছে ।মহিলাটি আরহামের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে
-“এখনো কি পুরুষত্ব তোর মধ্যে অবশিষ্ট আছে ? নাকি এই মেয়ের পিছন পিছন ঘুরে কাপুরুষ হয়ে গেছিস !”
আরহাম এখনো চোখ মুখ বুঝে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে ।মহিলাটি সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে
-“এই মেয়ে এদিকে আয় !”
সেহের মাথা নত করে সেদিকে এগিয়ে যায় ।মহিলাটি সেহেরকে উদ্দেশ্য করে বলে
-“যা এক বোল পানি নিয়ে আয় ।”
সেহের বাদ্ধ মেয়ের মত পানি আনতে চলে যায় ।কিছু সময় পর এক বোল পানি এনে বিনা বেগমের সামনে রাখে ।বিনা বেগম সেগুলো তে পা ভিজিয়ে সেহেরের উদ্দেশ্যে বলে
-“আমার পা ধুয়ে দে ।”
সেহের কোন কথা না বলে বিনা বেগমের কথা মত তার পা ধুয়ে দেয় ।পা ধোয়ার পর যেই সেহের সরে যেতে নেয় ।ওমনিই বিনা বেগম গর্জন করে বলে
-“কোথায় যাচ্ছিস ?”
-“জ্বি বোলের পানি ফেলতে যাচ্ছি ।”
বিনা বেগম শয়তানি হাসি দিয়ে বলে
-“পানি রাখতে হবে না ।
এই পানি তুই এখন খাবি !”
সেহের কথার অর্থ না বুঝে আবার বলে
-“জ্বি ঠিক বুঝলাম না ।”
বিনা বেগম কর্কশ গলায় বলে
-“আমি বলেছি তুই আমার পা ধোয়াঁ পানি খাবি ।”
সেহের কথাটা শুনা মাত্রই যেন আসমান থেকে পরে ।হতভম্ব হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকে ।তারপর কিছু একটা ভেবে চোখের জল ফেলতে ফেলতে বোলটা কারাঁ কারাঁ হাতে নেয় ।
যেই বোলে মুখ দিবে অমনি আরহাম ছুটে এসে বোলটা নিচে ফিলে দেয় ।সেহের চুপচাপ নিচের দিকে মাথা দিয়ে দাড়িয়ে থাকে ।আরহাম সেহেরের দিকে তাকিয়ে ধমকের স্বরে বলে
-“যাও ।ঘরে যাও সেহের !
কি হলো দাড়িয়ে আছো কেন ? বলেছিলা ঘরে যেতে ।”
সেহের আরহামের ধমকে দ্রুত পায়ে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে যায় ।আরহাম বিনা বেগমের দিকে তাকিয়ে রেগে আঙ্গুল তুলে বলতে লাগে
-“দেখুন ফুপি আপনার যা শত্রুতা আছে তা আমার সাথে ।
এতে সেহেরের কোন দোষ নেই ।আপনি ৫ টা বছর যা যা করেছেন আমি মাটি কামোড় দিয়ে সবটা সয্য করে গেছি । কিন্তু যদি আমার সেহেরের দিকে কোন আঙ্গুল তুলেন বা তাকে কোন ভাবে আঘাত করার চেষ্টা করেন তাহলে আমি আপনাকে ছাড়বোনা !
কথা গুলো হালকা ভাবে নিয়েন না ।আমি হিংস্র হলে কতটা হিংস্র হতে পারি তা আপনি খুব ভালো করে জানেন ।এই মেয়ের জন্য আমি হাজার বার জান দিতেও পারবো হাজারটা জান নিতেও পারবো। তো আমার বউ থেকে ১০ হাত দূরে থাকবেন ।এতেই আপনার মঙ্গল !”
আরহাম রুমে এসে দেখে সেহের বালিশে মাথা রেখে নিজের চোখের জল ফেলছে ।আরহাম তা দেখে সেহেরের কাছে চলে যায় ।সেহের মুখ লুকিয়ে কান্না করছে ।আরহাম কয়েকবার তাকে ডাকে কিন্তু কেন সাড়া পায় না ।পরবর্তিতে তাকে এক প্রকার জোর করেই টেনে তুলে নিজের কোলে বসায় ।আরহাম সেহেরকে কোলে নিতেই সেহের আরহামের বুকে মাথা হ্যালিয়ে দেয় ।আরহাম শক্ত করে সেহেরকে নিজের সাথে জরিয়ে ধরে বলে
-“জানপাখি !
সেহের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে বলে
-“সরি নিচের ধমক দেওয়ার জন্য ।”
-“উহু এতে সরি বলতে হবেনা ।”
-“উহু বলতে হবে ।আমি আবারো তোমার সাথে রেগে কথা বলেছি ।সরি ।আমি চাইনি তোমার উপর রাগ করতে কিন্তু ফুপির ঐ সব কাজ কর্মে আমি নিজের রাগ ধরে রাখতে পারিনি ।
আর তুমিও উনার কথায় ডেংডেং করে উনার পা ধোয়াঁ পানি খেতে নিয়েছিলে ? কেন এমন করছিলে তুমি ?”
সেহের কিছুসময় চুপ থেকে ।শীতল গলায় বলে
-“আপনার আর মায়ের জন্য ।আমি চাইলে প্রতিবাদ করতে পারতাম ।কিন্তু তা আমি চাইনি ।আমি চাইনি আমার জন্য আপনি আর মা উনার সামনে ছোট হোন ।আপনাদের উনি কথা শুনাক ।তাই আমি চুপচাপ মাথানত করে সব মেনে নিয়েছি !”
আরহাম সেহেরের উত্তরে অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে ।এতকিছুর পর ও তাদের নিয়ে সেহের কতটা ভাবে ।আরহাম সেহেরের কপালে টুপ করে চুমু দিয়ে বলে
-“আজ যা করতে গিয়েছো তা দ্বিতীয়বার করবেনা ।তুমি আমার স্ত্রী এই বাড়ির পুত্রবধূ ।তোমার এই বাড়ির উপর ততটুকু অধিকার আছে যতটুকু আমার রয়েছে ।তোমাকে মাথানত করে চলতে হবেনা ।কখনো কারো সামনে তুমি অন্যায় ভাবে মাথা নত করবে না ।তুমি আমার স্ত্রী অহংকার আমার সম্মান ।আমি চাইনা আমার স্ত্রী কারো সামনে নত হোক ।তুমি ফুপির আসে পাশে যাবেনা ।আমি চাইনা উনি তোমাকে কোন ভাবে অপমান করুক ।”
-“আরহাম উনি গুরুজন ।দু একটা রাগ করে বললেই কি এমন হবে ।ছাড়ুন এসব !”
-“উহু সেহের তুমি উনাকে যতটা সহজ ভাবে নিচ্ছ উনি ততটা সহজ নন। উনার মনে আমার আর তোমার জন্য অনেক ঘৃনা ।উনি তোমাকে আঘাত করার কোন সুযোগ হাত ছাড়া করবেনা ।”
সেহের আরহামের বুক থেকে মুখ তুলে বলে
-“আচ্ছা উনি আমাদের এত ঘৃনা করে কেন ?
আমি তো এই প্রথম বার উনাকে দেখছি তো উনি এসব বলছিলো কেন যে আমি ডাইনি ,উনার ছেলে কে খেয়ে ফেলেছি ।সত্যি কি আমি কখনো এমন কিছু করেছি ? উনি কি আমার পাস্টের সাথে কোন ভাবে জরিত ?
আর আপনি বা কেন উনার অপমান গুলো চুপ করে মাথানত করে মেনে নিচ্ছিলেন ? আমি যতটুকু জানি আপনি তো এমন না ।অযোথা কেউ কিছু বললে তাকে ঠি ক উত্তর দিয়ে দেন ।তাহলে উনাকে কেন কিছু বলছিলেন না ?”
আরহাম ভাবলেশহীন ভাবে উত্তর দেয়
-“ঐ বলেছিলাম উনার প্রতি আমার কিছু দায়বদ্ধতা রয়েছে ।সেই দায়বদ্ধতার জন্যই তার সব অপমান মাথা নত করে সয্য করছি ।কিন্তু তাই বলে তোমাকে অপমান করবে তা আমি সয্য করতে পারবোনা ।
আর তুমি এসব নিয়ে একদম ভাবতে যেওনা ।অতীত কি ছিলো তা নিয়ে ভেবে নিজের শরীর অসুস্থ করতে হবেনা ।মাথায় প্রেসার দিও না এতে অসুস্থ হয়ে পরবে ।শুধু মনে রেখ অতীত যাই ছিলো ভয়ংকর ছিলো যা তোমার না জানাই ভালো ।আমি কখনো তোমার উপর আচঁ আসতে দিবোনা ।”
সেহেরের মনে হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে কিন্তু সে তার উত্তর এই মুহূর্তে খুঁজতে চায়না ।সে আরহামের বুকের মাঝে মাথা রেখে কিছুসময় জন্য অন্যদুনিয়ায় যেতে যায় ।আরহামের চেখের দিকে তাকিয়ে দেখে গভীর ভালোবাসার নেশা ।সেহেরের মন আজ কেন জানি খুব করে আরহামের হতে চাইছে ।কিছু সময় পূর্বেও যার উপর ছিলো অভিমান আর রাগ তা যেন সহজেই হাওয়ায় ভেসে গেছে ।
কেন জানি আজ সেহেরের খুব করে এই নেশায় ডুবতে ইচ্ছে করছে ।সেহের আলতো আলতো করে আরহামের বুকে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ায় ।হঠাৎ এমন হওয়ায় আরহাম কেপেঁ উঠে ।সে সেহেরের এমন ব্যবহারে বেশ অবাক হয়ে তার দিকে তাকায় ।কিন্তু সেহেরের সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই ।সে নিজের কাজ নিজের মত করে যাচ্ছে ।আরহাম বেশ বুঝতে পারছে তার বউয়ের অভিমানের পাহাড় ভেঙ্গেছে ।তাই আরহাম ও সেহেরের ডাকে সাড়া দেয় ।আস্তে আস্তে সেহেরকে নিজের বুকের গভীরে টেনে নেয় ।তার ঠোঁটের মধুর স্পর্শে সেহেরকে ভরিয়ে দিতে লাগে ।আজ সেহের ও কোন বাধাঁ দেয় না সে চায় আজ আরহামের ভালেবাসার সাগড়ে ভাসতে ।পুরোপুরি ভাবে আরহামের হতে চায় ! সে ও আরহামের তালে তাল মিলিয়ে ভালোবাসার স্পর্শ দিতে লাগে ।তারা নতুন এক ভালোবাসা জগতে পারি জমায় !
সেহের আরহামের বুকে মাথা রেখে গভীর ঘুমে মগ্ন ।চুলগুলো মুখের উপর পরে আছে গায়ে চাদর জড়ানো ।আরহামের বুকের মাঝে মুখ লুকিয়ে ছোট বাচ্চাদের মত ঘুমাচ্ছে ।আরহামের ঠোঁটে কনে তৃপ্তির হাসি এই দিন টার জন্যই কত না কত অপেক্ষা করেছে সে ।আজ এত এত অপেক্ষার পর এই মধুর মুহূর্তটা পেয়েছে ।আজ মনে হচ্ছে সত্যিকার অর্থে তার ভালোবাসা পূর্নতা পেয়েছে।
তাদের বিয়ের বয়স পাচঁ বছর ৭ মাস চলছে কিন্তু এই পাচঁ বছর সেহেরকে তার থেকে লুকিয়ে রাখা হয়েছিলো কিন্তু এর আগের ৭ মাস যখন এক সাথে ছিলো তখন কোন দিন সেহেরের সাথে কোন রকম স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে তুলার চেষ্টা করেনি ।কারন সেহের সে সময় বাচ্চা ছিলো ।না ছিলো তার সংসার জ্ঞান না ছিলো কোন ভালোবাসা অনুভূতি বোঝার ক্ষমতা ।
আরহামের জ্বিদই তো ছিলো যার জন্য এমন একটা বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করে ।প্রতিশোধ আর ভালোবাসার মৌহে পরেই তো আরহাম সেহেরের বিয়েটা হয় ।
আজ ৫ টা বছর পর অতীত যেন আরহামের চোখে ভেসে উঠছে ।চোখের সামনে যেন সবটা ভাসছে ।
অতীত…….
চলবে…….❤️
Plz সবাই সবার মতামত জানাবেন 😊😊😊
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ❤️❤️❤️#বিষাক্ত প্রেম ২
Urme prema (sajiana monir)
পার্ট:২৫
অতীত…….
আরহামের দৃষ্টিকোন থেকে_____________
ছোট থেকে বাবা মায়ের আদুরে আর ডানপিঠে ছিলাম ।আমার যা চাই তা যে কোন ভাবেই আদায় করে নিতাম তাতে কারো সম্মতি থাকুক আর না থাকুক !
আমার বন্ধু বলতে আমার দাদু ছিলো ।যা কাছে আমার প্রত্যেকটা আবদার পূরন হতো ।আমার প্রত্যেকটা কাজে তিনি সপোর্ট করতেন হোক তা ন্যায় বা অন্যায় ।মাকে সবসময় দেখতাম আমার জন্মদিনে দুটা কেক আনতো ।আমার জন্য যা কিনতো তা ২ সেট করে কিনতো ।একটা তো আমার জন্য কিন্তু অন্যটা কার তা জানার জন্য মাকে প্রশ্ন করলে প্রতিবারই মা তা এড়িয়ে যেত ।তাই এক সময় তার উত্তর খুঁজা বন্ধ করে দেই ।
আমার জন্মের ৮ বছর পর মনিশা জন্ম হয় ।যেদিন মনিশা জন্মায় সেদিন খুব খুশি হয়েছিলাম ।যেন আমার পরিবার পূর্ন হলো ।আদর করে মনি ডাকতাম ।কারন সত্যি মনিশা আমার চোখের মনি ছিলো ।
ছোট থেকেই অনেক আদরে বড় করেছি কখনো কোন আচরও লাগতে দিতাম না । আমার একমাত্র বোন বলে কথা ।একবার স্কুল থেকে কান্না করতে করতে মনি বাসায় ফিরে ।তাকে কান্নার কারন জিগাসা করলে বলে যে পড়া কমপ্লিট না হওয়ায় স্যার তাকে মেরেছে ।সেদিন বিকেলে স্যারে বাড়িতে যেয়ে তার মাথা ফাটিয়ে আসি ।তখন আমার বয়স ১২ বছর ।বাড়িতে বিচার নিয়ে আসলে দাদু সবটা সামলিয়ে নেয় ।ছোট থেকেই মনিশাকে খুব আদরে আগলে রাখতাম ।তার ধারের কাছে কেউ আশা তো দূর তার দিকে কেউ তাকানোর ও সাহস করতো না ।
দিন বেশ ভালোই কাটছিলো কিন্তু হঠাৎ দাদু স্টোক করে মারা যায় ।আমার একমাত্র বন্ধু ছিলো আমার দাদু ।দাদুর মৃত্যুতে আমার পুরো দুনিয়া যেন থমকে যায় ।সেদিন খুব বড় আঘাত পাই ।এতটাই যে পাথর হয়ে গিয়েছিলাম ।সেদিন এক ফোটা জলও চোখ থেকে বের হয়না ।খুব স্বাভাবীক ছিলাম ।আমার এই স্বাভাবীক আচরনে সবাই বেশ অবাক হয়েছিলো ।তার কাছে সবটা অস্বাভাবীক মনে হচ্ছিলো ।সেদিনের সেই আঘাতে খুব বেশি কঠোর হয়ে উঠলাম ।হাসতে ভুলে যাই এত গম্ভির ভাব আমাকে ঘিরে নেয় ।আমার জীবনের প্রেম ভালোবাসা মায়ার কোন স্থান ছিলো না ।না ছিলো কোন নেশা ।
বাবা রাজনিতীবিদ ছিলো তাই ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর রাজনিতীতে যোগ দেই ।পাশাপাশি ফেমিলি বিজনেজ ও দেখাশুনা করি ।ভার্সিটিতে থাকা কালিন একটা বন্ধু ছিলো সাফিন ।তার সাথে খুব গভীর বন্ধুত্ব ছিলো ।দাদুর পর সেই একমাত্র ব্যক্তি যে বেস্টফ্রেন্ড ছিলো ।সেই সুবাদে প্রায়ই আমার বাসায় তার আসা যাওয়া হতো ।হঠাৎই জানতে পারি আমাদের শহর থেকে গরীব বাচ্চা মেয়েদের বাহিরের দেশে পাচার করা হচ্ছে ।তার সাথে ড্রাক্স সহ আরো অনেক অবৈধ ব্যবসা চলছে ।আর তার পিছনে রয়েছে ডুবাইয়ের কোন এক মাফিয়া জরিত ।ব্যপারটা নিয়ে সঠিক ভাবে তদন্ত করে এর পিছনে যারা যারা রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেই আর পুরোপুরি ভাবে তাদের অবৈধ ব্যবসা বন্ধ করে দেই ।এবং সেই মাফিয়ার বিরুদ্ধে ও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয় ।
।সব কিছু স্বাভাবীক ছিলো কিন্তু হঠাৎই একদিন আমার নামে কেউ মাডার কেস করে ।প্রমানগুলো ও আমার বিরুদ্ধে ছিলো ।ঘটনা স্থানে সিসি ক্যামেরায় আমাকে সেই ব্যক্তির উপর ছুড়ি চালাতে দেখা গেছে ।কিন্তু আমি সেখানে ছিলামই না ।মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয় ।সে ফোটেজ দেখে আমিও বেশ অবাক হই সেই খুনি হুবাহু আমার মত দেখতে ছিলো ।সে কি আমার সত্যি আমার মত দেখতে নাকি এর পেছনে অন্যকিছু ।কিছুই মাথায় আসছিলো না ।কেসটা বেশ স্ট্রং ছিলো ।বিরুধী দলও এর লাভ উঠিয়েছিলো ।তাই বাবা বলে কিছুদিনের জন্য শহরের বাহিরে চলে যেতে ।পরিস্থিতী ঠান্ডা হবার পর ফিরে আসতে ।তাই আমিও সবদিক বিবেচনা করে বন্ধু সাফিনের গ্রামের বাড়িতে চলে যাই।
সাফিন শহরে থেকে যায় ।কারন আমার অবর্তমানে সেদিকটায় খেয়াল রাখার জন্য কারো প্রয়োজন ছিলো ।ভোর সকালে গাড়ি নিয়ে রওনা দেই গ্রামের বাড়ি পৌছাতে পৌছাতে দুপুর পার হয়ে যায় ।সেখানে পৌছিতেই সাফিনের বাবা আমাকে রিসিভ করে ।উনারা পুরো পরিবার সহ ছুটিতে এসেছে ।আংকেলের সাথে কুশল বিনিময় করেই ফ্রেশ হতে চলে যাই ।ফ্রেশ হয়ে লান্চ সেড়ে নেই ।ছোট ছাদ যুক্ত সুন্দর রুমটা আমার জন্য বেশ পরিপাটি করে রেখেছে ।রুমে ডুকেই বিছানায় গাঁ এলিয়ে দেই ।চোখে তন্দ্রা ভর করছে ।নিভু নিভু চোখে জানালায় তাকাতে দেখি ।বৈশাখ মাসের আকাশে কালো মেঘ জমেছে ।চারদিকে অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে ।প্রকৃতি ভয়ংকর কালো রুপ ধারন করেছে ।কিছুক্ষনের মধ্যে ঝুম করে প্রবল বৃষ্টি নামে ।কিছুসময়ের মধ্যেই চার দিকে শীতল হাওয়া চার দিকে ছড়িয়ে পরে ।আমার চোখ জোড়া লেগে আসে ।হঠাৎই নুপুরের ঝুমুর ঝুমুর আওয়াজ কানে ভেসে আসে ।যা আমার ঘুমের ব্যগাত ঘটাচ্ছিলো ।আমার আবার ঘুমে ব্যগাত একদম পছন্দ না । বেশ বিরক্তের সাথে চোখ খুলি । চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেই না কেউ নেই রুমে ।শব্দটা রুমের সাথে এডজাস্ট ছোট ছাদ থেকে আসছে ।আস্তে আস্তে শব্দটা বেড়েই চলছে ।আমি বেশ বিরক্তের সাথে বিছানা থেকে উঠে সেদিকে পা বাড়াই ।ছাদের দরজার সামনে আসতেই আমি পুরো থমকে দাড়াই ।মুহূর্তেই তন্দ্রা ভাবটা কেটে যায় ।সারা শরীর জুড়ে ঠান্ডা হাওয়া বইতে লাগে ।
ছাদের ঠি ক মাঝ বরাবর একটি মেয়ে দু হাত মেলে মুখ আসমানের দিকে দিয়ে দাড়িয়ে আছে ।বৃষ্টির পানি তার কমোড় পর্যন্ত ঘন কালো চুল বেয়ে টপটপ করে নিচে জড়ছে ।পড়নে কালো রঙের জামা ।ভেজা ফরসা পিঠটা স্পষ্ট ফুটে আছে ।লাল উড়নাটা গলায় ঝুলানো ।হাতে টকটকে লাল চুড়ি ।যা চুয়ে চুয়ে বিন্দু বিন্দু জল পড়ছে ।পায়ে রুপার মোটা নুপুর ।বেশ মন দিয়ে বৃষ্টি বিলাশ করছে ।কিছুসময় পর সে চোখ খুলে পিছনে ঘুরতেই আমার পুরো শরীর কেপেঁ উঠে ।অদ্ভুদ মায়া ভরা তার চেহারায় ।কাজল টানা ডাগর ডাগর চোখ ।চোখের পাপড়িতে বিন্দু বিন্দু জল লেগে আছে ।
গোলাপের পাপড়ির মত গোলাপি ঠোঁট যা চুয়ে চুয়ে বৃষ্টির পানি পড়ছে ।দুনিয়ার সব মায়া যেন এই মুখ খানায় ।আমার সামনে যেন স্বর্গীয় হুর স্বর্গ থেকে অবতরন করেছে ।খুব বেশি হিংসা হচ্ছিলো বৃষ্টির সাথে ।বার বার মনে একই কথা বাজছিলো -“হুর ,আমার হুর !” ।প্রথম কোন মেয়েকে দেখে এতটা মারাত্নক ভাবে আহত হয়েছিলাম ।মাথা ঝিমঝিম করছিলো ।কেমন জানো নেশা ছিলো তার মাঝে ।অদ্ভুদ এক নেশা ।তার প্রতি অদ্ভুদ আসক্তি কাজ করছিলো ।তার এই বৃষ্টিবিলাসী রূপ আমাকে পাগল করে দিচ্ছিলো ।হঠাৎই মেয়েটার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠে ।যা ছিলো ভুবন ভোলানো হাসি ।তার এই হাসি আমার হৃদয়ে যেয়ে বিধেঁ ।তার থেকে চোখের পলকই পড়তে চাইছিলোনা ।মনে হচ্ছিলো পলক পড়লেই হয়তো আমার হুর গায়েব হয়ে যাবে ।হারিয়ে যাবে !
ইচ্ছে করছিলো ছুটে যেয়ে তাকে বুকের সাথে জরিয়ে ধরি ।নিজের বুকের মাঝে আবদ্ধ করে রাখি ।
কখনো কোন মেয়েকে দেখে এমন অনুভব হয়নি ।তবে কি এটাকেই লাভ এট ফাস্ট সাইড বলে ?
মন বার বার বলছিলো আমার তাকে চাই ।যে কোন ভাবে ,যে কোন মূল্যই হোক না কেন ।আমার তাকে চাই ই চাই !
আল্লাহ্ যেন তাকে আমার জন্য পাঠিয়েছে
মূহুর্তেই মেয়েটা যেন আমার ভালোবাসা নেশা জ্বেদ পাগলামো হয়ে উঠেছিলো ।
বেশ কিছুক্ষন বৃষ্টি হয় আর পুরোটা সময়ই আমার সামনে থাকা হুরটা বৃষ্টি বিলাশ করছিলো ।আমি দরজার সাথে হেলান দিয়ে মুদ্ধ নয়নে তাকে দেখছিলাম ।অদ্ভুদ এক অনুভূতি আমার মন ছুয়েঁ দিচ্ছিলো ।
হঠাৎই মেয়েটার চোখ ছাদের দরজার দিকে পড়তেই ।সে থেমে যায় ।সাথে সাথে তার মুখের হাসিটা গায়েব হয়ে মুখে ভয় ফুটে উঠে ।হয়তো সে আমাকে এখানে দেখার জন্য একদম প্রস্থুত ছিলোনা ।দ্রুত পায়ে অন্যপাশের দরজা দিয়ে সে নিচে নেমে যায় ।আমি ঠাই সেখানেই দাড়িয়ে ছিলাম ।সে যেতেই চোখজোড়া বন্ধ করে নেই ।মুগ্ধ হয়ে তার পায়ের নুপুরের ঝংকার শুনতে লাগি ।কতক্ষন এভাবে সেখানে দাড়িয়ে ছিলাম জানিনা ।কিন্তু কিছুতেই যেন তার রেশটা কাটিয়ে উঠতে পারছিলাম না !
ভর সন্ধ্যা চারদিক অন্ধকার হয়ে গেছে বাহিরে এখনো টপটপ বৃষ্টি ঝোড়ছে ।এমন সময় ইলেক্টিসিটিও চলে যায় ।চারদিক গিজগিজে অন্ধকার ।হঠাৎই আলোক রশ্নি রূপে প্রবেশ করে ।কোথা থেকে আলো আসছে তা দেখতে পিছনে ফিরতেই থমকিয়ে যাই ।আমার হুর হাতে মোমবাতি নিয়ে দাড়িয়ে আছে ।মোমবাতির হলদেটে আলোতে তার চেহারার সৌন্দর্য যেন আরো শতগুন বেড়ে গেছে ।তার ডাগর ডাগর চোখখানা নিচের দিকে ঝুকানো ।সামনের চুল গুলো মুখে এসে পড়ছে ।মুখে স্পষ্ট ভয়ের ছাপ ।
বাচ্চা বাচ্চা চেহারায় অসংখ্য মায়া ভীর করছে ।
মেয়েটি মোমবাতিটা তারাতারি পাশের টেবিলের উপর রেখে চলে যাবার জন্য পা বাড়ায় ।অমনি আমি গম্ভির কন্ঠে বলি
-“দাড়াও !”
মেয়েটি আমার আওয়াজ শুনতেই থেমে যায় ।ভয়ে ভয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকায় ।আমি আলতো পায়ে তার দিকে এগিয়ে যাই ।আমাকে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে মেয়েটি তার চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে নেয় ।
আমি নিজের হাসি চেপে ধরে মুখে গম্ভির ভাব ফুটিয়ে বলি
-“বিকালে ছাদে তুমি ছিলে না ?
নাম কি তোমার ?”
মেয়েটি চোখ খুলে ভয়ে ভয়ে বলে
-“জ…জ্বি ।আ..আমার নাম স..স..সেহের আহমেদ !”
-“সাফিন তোমার কি হয় ?”
-“জ্বি বড় ভাই ।”
-“তুমি কোন ক্লাসে পড়ো ?”
-“জ্বি এবার নিউ টেনে !”
আমি গম্ভির ভাবে বলি
-“তুমি জানো তুমি কি করেছো ?”
মেয়েটা কাপাঁ কাপাঁ গলায় বলে
-“ক..কি করেছি ভাইয়া ?”
-“আমার কাচাঁ ঘুম ভেঙ্গে দিয়েছো !”
সেহের কাদোঁ কাদোঁ গলায় বলে
-“সস..সরি ভাইয়া ।আমাকে ক্ষমা করে দিন !”
আমি তার কাদোঁ কাদোঁ ফেস দেখে ঠোঁট চেপে নিজের হাসি কন্ট্রোল করি ।তার শীতল গলায় বলি
-“উহু ক্ষমা তো তোমাকে করা যাবে না ।তুমি যা করেছো শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে ।সাফিন কে ব্যপারটা জানাতে হবে !”
সেহের এবার কান্না ধরে রাখতে পারেনা ।ভ্যা করে কান্না করতে করতে বলে
-“আমি আর কখনো এমন করবোনা ।ছাদে তো কি আমি আপনার সামনেও আসবোনা ।আপনাকে দেখলে দশ হাত দূরে চলে যাবো ।নিজের চেহারা পর্যন্ত আপনাকে দেখাবোনা ।আপনি যা বলবেন তাই করবো ।
প্লিজ সাফিন ভাইয়া কে বলবেন না ।তাহলে ভাইয়া কানে ধরিয়ে দাড়ঁ করে রাখবে ।”
এই মেয়ে বলে কি আমার সামনে নাকি আসবেনা ।নিজের চেহারা দেখাবেনা ।তাহলে আমি কি করে থাকবো ? মাত্র কয়েক ঘন্টায় আমার নেশা হয়ে গেছে ।যদি চোখের আড়াল হয় তাহলে আমি কি করে থাকবো ?
আমি তারাতারি করে তার কান্না থামাতে বলি ।সেহের চুপ হয়ে যায় ।আমি ভ্রু কুচঁকিয়ে বলে
-“যা বলবো তাই করবে ?”
সেহের অনবরত মাথা ঝুকাতে লাগে যার অর্থ হ্যা ।আমি মুচকি হেসে বলি ।
-“চা বানাতে পারো ?”
সেহের নাক টেনে টেনে বলে
-“একটু আকটু পারি আরকি ।
বাবা তো বলে আমার হাতের চা নাকি ভালো হয় !”
আমি কিছুসময় ভেবে বলি
-“উমমম চলবে ।
যতদিন এখানে আছি ।আমার জন্য প্রতিদিন সকাল ৭ টায় ,বিকেল ৫ টায় আর রাতে ঘুমানোর আগে চা করে আনতে হবে ।আমি যখন ডাকবো আমার সামনে হাজির হতে হবে ।
পারবে তো ?
আর যদি না পারো তাহলে ।আমি সাফিন কে সব বলে দিবো ।”
সেহের ঠোঁট উল্টিয়ে বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে বলে
-“ঠি ক সাতটায় ই ?”
আমি স্ট্রিট ভাবে বলি
-“হুম সাতটা মানে ঠি ক সাতটায়ই ।”
সেহের মাথা ঝুকিয়ে বলে
-“আচ্ছা !”
আচ্ছা বলেই যাওয়ার জন্য সামনের দিকে পা বাড়ায় ।এমন সময়ই ধমকের স্বরে বলি
-“আমি কি তোমাকে যেতে বলেছি ? কোথায় যাচ্ছ !”
সেহের সামনের দিকে ফিরে ভয়ে ভয়ে বলে
-“তো কি করবো ?”
-“আমার সামনে বসে থাকবে ।ততক্ষন পর্যন্ত যতক্ষন না আমি যেতে বলি ।”
সেহের মাথা দুলায় ।আমি আবার ধমকের স্বরে বলি
-“কি হয়েছে দাড়িয়ে আছো কেন ?”
সেহের ধমকে কেপেঁ উঠে ।তারাতারি করে বিছানায় এসে বসে ।আমি তার থেকে বেশ দূরত্ব বজায় রেখে তার সামনাসামনি বসি ।সেহের নিচের দিকে মাথা নত করে বসে আছে ।আমি তাকে মোমবাতির আলোতে ঘোর লাগা দেখছি ।অদ্ভুদ সুন্দর ।একদম ছোট্ট পুতুল ।আমি তার নেশায় পড়ে যাচ্ছি ।কি হচ্ছে আমার সাথে বুঝতে পারছিনা ।এমন তো আমি নয় তবে এই কয়েক ঘন্টায় আমার কি হলো ? কেন আমি তার নেশায় এতটা মগ্ন ?
এমন কি আছে তার মাঝে যা আমাকে এভাবে উলোট পালোট করে দিচ্ছে পাগল করে দিচ্ছে ? নিজের থেকে ১০ বছরের ছোট একটি বাচ্চা মেয়ের জন্য এতটা পাগলামো !
লোকে শুনলে হয়তো হাসবে ।হাসলে হাসুক তাতে কি ।আমার দিন দুনিয়ার কারো পরোয়া নেই ।আমার এই মেয়েকেই লাগবে ।সারাজীবনের জন্য লাগবে ।সকালে শুরু থেকে রাতের শেষ পর্যন্ত আমার শুধু তাকে চাই ।আমার সেহেরকে চাই ! আমার হুরকে চাই !
চলবে…….❤️❤️❤️
Plz সবাই সবার মতামত জানাবেন 😊😊😊
ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন ❤️❤️❤️#বিষাক্ত প্রেম ২
Urme prema (sajiana monir)
পার্ট:২৬
(কাল সম্পূর্ন পার্ট লিখে শেষ করতে পারিনি তাই দিতে পারিনি সরি )
সেদিনের পর থেকে সেহের আমার কথা অনুযায়ী তিনবেলা ঠি ক সময় আমার চা নিয়ে রেডি থাকতো ।ডাকা মাত্রই এক প্রকার উড়ে এসে আমার সামনে হাজির হতো ।সব সময় চেহারায় ভয় থাকতো ।বাচ্চাদের মত সব সময় ঠোঁট উল্টিয়ে থাকতো ।তার এই বাচ্চামো স্বভাবের জন্য তার প্রেমে বার বার পড়তাম ।ইচ্ছে করতো সব সময় পুতুলের মত নিজের সামনে সাজিয়ে রাখতে আর চোখ জুড়িয়ে তাকে দেখতে ।তাই ইচ্ছে করে কোন না কোন কাজের উসিলায় নিজের আসে পাশেই রাখতাম ।আমি জানতাম সে আমাকে মনে মনে হাজার খানিক গালি দেয় ।তার কাছে আমি সবচেয়ে অস্যকর একজন ব্যক্তি !
কিন্তু অল্প কিছুদিনেই সে আমার কাছে আমার পুরো দুনিয়া হয়ে গিয়েছিলো ।পাগলের মত তাকে ভালোবাসতে শুরু করি !
সেহেরের প্রতি আমার এই ভালোবাসা সবার চোখের আড়াল হয়নি ।সবাই ঠি ক এটা নিয়ে কানাকানি করেছে কিন্তু আমি বরাবরই তা ইগনোর করে গিয়েছি ।
সবকিছু স্বাভাবীর ভাবেই চলছিলো ।কিন্তু অন্যদিকে শহরে আমার নামে কেস বেড়েই চলছিলো ।সকল অবৈধ কাজের সাথে আমার নাম জরিয়ে গিয়েছিলো ।তাই বাদ্ধ হয়ে শহরে ফিরে যেতে হয় ।সবটা তদন্ত করার জন্য ।অন্যদিকে সেহেররা ও ছুটি শেষে শহরে ফিরে আসে ।শহরে আসার পর থেকেই সব কিছু কেমন যানো খালি খালি লাগছিলো ।প্রতিটা মুহূর্ত আমি সেহেরকে খুব বাজে ভাবে মিস করে যাচ্ছিলাম ।কোন কাজেই মন বসছিলোনা ।সবকিছু বিরক্ত লাগতে শুরু করে ।প্রায়ই হুটহাট সাফিনের বাড়িতে যেয়ে উঠতাম ।সাফিন বেশ অবাক হতো ।কারন এত বছরের বন্ধুত্বে কোন আমি তার বাড়ির খবর জানতে চাইনি ।হঠাৎ গ্রাম থেকে ফিরে এতটা পরিবর্তন হুটহাট তার বাড়িতে আসা ।আড়চোখে কাউকে খুজাঁ আমার সব কাজে সাফিনের বেশ সন্দেহ হতে লাগে ।
অন্যদিকে আমি তাদের বাড়ি আসলে সেহের নিজেকে আমার কাছ থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখতো ।ঘন্টার পর ঘন্টা তার অপেক্ষা করতাম কিন্তু কোন ভাবেই সে আমার সামনে আসতো না ।খুব রাগ হতো তার উপর ।কোন রকম নিজের রাগ সামলিয়ে নিতাম ।
এভাবে দিন কাটতে লাগে ।
হঠাৎই একদিন মনিশাকে সকাল থেকে বাড়িতে পাওয়া যায় না ।তার ভার্সিটি বন্ধু -বান্ধব থেকে খোজঁ নিয়ে কোন খবর পাওয়া যায় না ।খুব ভয় পেয়ে যাই ।অন্যদিকে সাফিনকেও বার বার কল করতে লাগি কিন্তু সে ও ফোন ধরছেনা ।পাগল পাগল হয়ে পুরো শহর খুজিঁ কিন্তু মনিশার কোন খোজঁ নেই ।
হঠাৎ সেদিন রাত ১২ টার দিকে মনিশা আর সাফিন বাড়িতে আসে ।মনিশার গলায় মালা ঝুলানো পড়নে লাল বেনারসি বউ সাজে বাড়িতে প্রবেশ করে ।আমি রেগে মনিশাকে জিগাসা করতেই সে কান্না করতে করতে বলে তারা একে অপরকে ভালোবাসতো ৩ বছরের সম্পর্ক তাদের ।আমাকে জানাতে ভয় পাচ্ছিলো যদি আমি মেনে না নেই তাই তারা কোর্ড মেরেজ করে নিয়েছে ।মনিশার মুখে এমন কথা শুনে মাথা খারাপ হয়ে যায় ।আমি রেগে সাফিনকে মারতে শুরু করি ।আমার এত কাছের বন্ধু হয়ে কি করে আমার সাথে এমন করতে পারলো সে ? বাড়ির মান সম্মান সব ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে ।যদি সরাসরি আমাকে তাদের সম্পর্কের কথা বলতো ।বিয়ের প্রস্থাব নিয়ে আসতো তাহলে আমি কোন দিন বিয়ের জন্যনা করতাম না ।বরং আরো খুশি হতাম ।কিন্তু এই ভাবে পালিয়ে বিয়ে করে বাড়ির মান সম্মান নষ্ট করার জন্য কোনদিন তাকে ক্ষমা করবোনা ।নিজের রাগ জ্বেদ ধরে রাখতে পারছিলাম না ।আমি সাফিনকে অনবরত মারতে লাগি ।এমন সমই পিছন থেকে মনিশার আওয়াজ শুনতে পাই ।পিছনে তাকিয়ে দেখি মনিশা নিজের গলায় ছুড়ি ধরে আছে ।মনিশা কান্না করতে করতে বলে আমি যদি সাফিনকে আর একটাও আঘাত করি তাহলে সে নিজেকে শেষ করে দিবে ।আমার কাছে মনিশার জীবন আগে তাই সাফিনকে ছেড়ে দেই ।মনিশা সারাজীবনের জন্য আমাদের সবার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে চলে যায় ।সেদিন খুব আঘাত পেয়েছিলাম ।মনিশা আমার কলিজার টুকরা ছিলো।এভাবে দূরে যাওয়া আর তার চোখে ঘৃনা মেনে নিতে পারছিলাম না ।কষ্ট হচ্ছিলো খুব ।বার বার মন বলছিলো এসব সাফিনের জন্য হয়েছে ।সাফিনের জন্য মনিশা আমাদের ছেড়েছে ।আমাকে এত ঘৃনা করে ।সে আমার থেকে আমার বোন ছিনিয়ে নিয়েছে ।
তাই সাফিনকেও এই একই কষ্ট দিতে চেয়েছিলাম তাই পরের দিন সকালে সেহেরকে তার কলেজ থেকে অজ্ঞান করে তুলে নিয়ে আসি ।
বাচ্চা মেয়ে ছিলো মাত্রই কলেজে ভর্তি হয়েছে। সেদিনই সেহেরকো বিয়ে করি ।আমি যা বলি সবটা আমার কথামত ভয়ে ভয়ে করে ।না বুজতো বিয়ের না বুঝতো সংসার ।আর আমার কাছেও এই বিয়েটা ছিলো শুধু মাত্র আমার প্রতিশোধ ।আমি সাফিনকে সেই কষ্টটা দিতে চেয়েছিলাম যে কষ্টটা আমি পেয়েছি ।তার থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এসব । বিয়ে করে যখন সাফিনের সামনে যেয়ে দাড়াই সাফিনও ঠি ক আমার মত ব্যবহার করছিলো ।তার চোখে সেই কষ্ট সেই রাগ দেখেছি যা আমার চোখে ছিলো ।সাফিন আমার থেকে সেহেরকে আলাদা করতে পারেনি কারন আমরা আইনগত ভাবে স্বামী স্ত্রী ছিলাম ।সাফিন বেশ ছটফট করছিলো নিজের বোন কে হারিয়ে ।আমি শুধু তার ছটফট দেখে শান্তি পাচ্ছিলাম । পিষাচিক আনন্দ পাচ্ছিলাম ।আমি জানতাম সাফিনের দূর্বল স্থান তার বোন সেহের তাই আমিও তার দূর্বল স্থানে আঘাত করি ।সাফিন নিজের বোনের জন্য ছটফট করছিলো যা আমার আনন্দ বাড়িয়ে দিয়েছিলো ।
আমি সেহেরকে নিয়ে নিজের বাড়িতে চলে আসি ।মা বিয়ের কথা জানতে পেরে বেশ রেগে যায় ।কারন সেহেরের বয়স কম ছিলো ।কিন্তু আমি মায়ের কথা কানে নেই না কারন আমার যার জন্য সেহেরকে বিয়ে করার দরকার ছিলো সেই উদ্দেশ্য পূর্ন হয়েছে ।বিয়ের দিন থেকে সেহের মায়ের সাথে থাকে ।আমি বরাবরই নিজের রাজনিতী আর ব্যবসা নিয়ে ব্যস্থ হয়ে পরি ।সেহেরকে ইগনোর করে চলি ।হঠাৎই একদিন দুপুর মায়ের ফোন আসে ।মা জানায় সেহের নিজের ঘর বন্ধ করে রেখেছে সকাল থেকে কিছু তেই খুলছেনা ।ভিতর থেকে কোন সাড়া শব্দ ও পাওয়া যাচ্ছে না ।এসব শুনে কলিজায় চাপ দিয়ে উঠে মুহূর্তেই মনে হচ্ছিলো আমি বোধ হয় সেহেরকে সারাজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলেছি ।ছুটে বাড়িতে চলে আসি বাড়িতে এসে দরজা ভেঙ্গে দেখি সেহের অচেতন হয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে ।মুহূর্তেই আমার দুনিয়া যেন উলোট পালোট হয়ে যায় ।সে আমার দুনিয়া আমি তাকেই নিজের প্রতিশোধের আগুনে কি করে পুড়ালাম ? কথায় আছেনা ? হারায়ে গেলে তার মর্ম বুঝা যায় ।আমার সাথেও তাই হচ্ছিলো ।সেহেরকে এমন অচেতন অবস্থায় দেখে মনে হারানোর ভয় জাগে ।হারে হারে তার মর্ম বুঝতে পারছিলাম ।
সেদিন তাকে কলে করে পাগলের মত ছুটে গিয়েছিলাম হসপিটালে ।যে পর্যন্ত জ্ঞান না ফিরেছে কোন ভাবেই নিজেকে শান্ত করতে পারিনি ।সারাক্ষন তার হাত ধরে বসে ছিলাম ।এক মুহূর্তের জন্য ও তার হাত ছাড়িনি । জ্ঞান ফিরতেই সেহের আমার থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেয় ।কথা বলা বন্ধ করে দেয় ।তার এ ব্যবহারটা স্বাভাবীক ছিলো ।আমি তাকে কষ্ট দিয়েছি তো কষ্ট তো আমারও প্রাপ্য ছিলো ।আমি নিজের ব্যস্থতা প্রতিশোধের মাঝে নিজের ভালোবাসাকে তো এক প্রকার হারিয়েই ফেলেছিলাম ।নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছিলো ।আমি কি করে এমন করতে পারলাম আমার হুরের সাথে ?
নিজের ভুল শুধরানোর জন্য সব রকম চেষ্টা করেছি ।সেহেরের সব রাগ জ্বেদ শাস্তি হাসি মুখে মাথা নত করে নিয়েছি ।২৪ ঘন্টা তার সাথে ছিলাম ছায়ার মত ।কখনো নিজের চোখের আড়াল হতে দেইনি ।আমি আর সেহের এক সাথেই থাকতে শুরু করি ।সে ও আমাকে মেনে নেয় ।
কিন্তু স্বামী হিসেবে নয় নিজের বন্ধু হিসাবে । আমাদের মধ্যে কোন স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক ছিলোনা ।বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিলো ।কারন সেহেরের সেই সম্পর্কটা বুঝার মত বয়স সে সময় হয়নি ।তার কাছে থাকতে থাকতে তার প্রতি ভালোবাসা হাজার গুন বেড়ে গিয়েছিলো ।খুব ছুয়েঁ দিতে ইচ্ছে করতো তাকে ।কিন্তু তা করলে যে তার সাথে অন্যায় হতো !
এমনিতেই তাকে তুলে এনে বিয়ে করে আমি অন্যায় করে ফেলেছি ।তাই নতুন করে নিজের অন্যায় বাড়াতে চাইনি !
সেহের আমার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিলো ।এমন এক অভ্যাস যা রক্তের সাথে মিশে শিরা শিরা পর্যন্ত পৌছিয়ে গিয়েছিলো ।হয়তো আমিও তার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিলাম ।তাই তো প্রতিটা সন্ধ্যায় আমার কাধেঁ মাথা রেখে আমার থেকে গান শুনার আবদার করতো ।রাতে আমাকে জরিয়ে ধরে আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে ।এভাবে না ঘুমালে নাকি তার ঘুম হতো না !
কিন্তু সে কি বুঝতো যে তার এতটা নিকটে থেকে নিজেকে কন্ট্রোল করা আমার জন্য কতটা কষ্টের হতো ?
তার নিকটে থাকলে যে আমি নিজের মধ্যে থাকতাম না ।তার মাঝেই হারিয়ে যেতাম ।তার নেশা ধরে যেত আমার !
সে বুঝবে কি করে ? পিচ্ছি যে ছিলো ! আমার পিচ্ছি হুর ।আমার সেহের ।
আমাদের বিয়ের সাত মাস চলছিলো সবকিছু স্বাভাবীকই ছিলো ।হঠাৎ একদিন বিনা ফুপি আমাদের বাড়িতে আসে নাইসাকে নিয়ে যদিও আমি এর আগে ফুপিকে কখনো দেখিনি ।তিনি বাবার সৎ বোন ছিলো ।বিনা ফুপির মা দাদা ভাইয়ের প্রথম স্ত্রী ছিলো ।তিনি মারা যাবার পরই দাদাভাই আমার দাদীকে বিয়ে করে ।তাই ফুপি দাদা ভাই দাদী কাউকেই পছন্দ করতেন না ।তিনি নিজের নানির বাড়িতে থাকতেন ।বিয়ের পর ডুবাই স্যাটাল হয়ে যায় ।এত বছর পর উনাকে দেশে ফিরতে দেখে বেশ চমকিয়ে যাই সবাই ।উনার থেকে জানতে পারি উনার এক ছেলে আছে যে বাংলাদেশে আছে তাই উনি ফিরেছে দেশে ।ফুপি আমাদের সবাইকে খুব একটা পছন্দ করতেন না তা উনার ব্যবহারে স্পষ্ট বুঝতে পারতাম ।শুধু মাত্র রক্তের সম্পর্ক ছিলো বলে তাকে সয্য করতাম ।
মনিশার সাথে আমাদের কোন রকম যোগাযোগ ছিলোনা ।মনিশা নিজের থেকেই আমাদের সবার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলো ।আর বলেছিলো তার কোন পরিবার নেই ।ছোট থেকে খুব বেশি জ্বেদি ছিলো ।আমরা ও কেউ তা সাথে যোগাযোগ করিনা কারন তার কাজ দ্বারা আঘাত আমরাও কম পাইনি ।জানতে পারি মনিশা মা হতে চলছে বেশ খুশি হয়েছিলাম সেদিন ।দূর থেকে দোয়া করেছিলাম তার জন্য ।
হঠাৎই একদিন সেহের কলেজ থেকে গায়েব হয়ে যায় ।কোথাও তাকে খুজেঁ পাচ্ছিলাম না ।পাগল পাগল হয়ে তাকে সব জায়গায় খুঁজছিলাম ।কিন্তু কোথাও পাইনা ।এমন সময়ই আননোন নাম্বার থেকে ফোন আসে ।ফোন রিসিভ করতেই জানতে পারিনসেহেরকে তারা কিডন্যপ করেছে ।এটা শুনা মাত্রই যেন আমার পায়ের নিচের জমিন সরে যায় ।রাগে শরীরের রক্ত কামঁড়াতে লাগে ।অপর পাশ থেকে বলে যদি সেহেরকে পেতে চাই তাহলে আমাকে শহরে নির্জন জঙ্গলে পোড়াবাড়িতে আসতে হবে একা ।সাথে কাউকে আনা যাবেনা ।ঠিক সেই মুহূর্তেই আমি সেই পোড়াবাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হই ।সেখানে লোকেশনটা বাবা আর আংকেল (সেহেরের বাবা) কে সেন্ড করে দেই ।যেন আমার কোন বিপদ হলে ।উনি সেহেরকে রক্ষা করতে পারে ।সেখানে পৌছিয়েই দেখতে পাই একদম নির্জন জায়গা ।এক পা এক পা করে বাড়ির দিকে এদিয়ে যাই ।বাড়ির সামনে যেতেই হঠাৎ পায়ের কাছে কোন কিছু লাগার কারন পরে যাই ।নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি কেউ রক্তাক্ত উপুড় হয়ে পরে আছে ।তাকে সোজা করতেই দেখি সে আর কেউ না সাফিন তার পেটে ছুড়ি ডুকানো ।সাফিন নিজের শেষ নিশ্বাস নিচ্ছে ।আমি সাফিনকে এমন অবস্থায় দেখে বেশ ঘাবড়িয়ে যাই ।শত মান অভিমান হোক না কেন সে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আমার বোনের স্বামী ।আমি তাকে তারাতারি করে হসপিটালে নেওয়ার জন্য উঠাতেই ।সাফিন আমার হাত আটকিয়ে ধরে ।বড় বড় নিশ্বাস নিতে নিতে বলে
-“লাভ নেই আরহাম ।আমার সময় শেষ ।এই শেষ মুহূর্তে আমি তোকে কিছু কথা বলবো আমার কথা গুলো শুন !
আমি সাফিনের কথার তেক্কার না করে তাকে জোর করে দাড় করাতে করাতে বলি
-“তোর যত কথা আছে সব পড়ে শুনবো ।এখন তারাতারি হসপিটালে চল ।তোর এই অবস্থা কে করেছে ?”
সাফিন আমার হাত আটকিয়ে বলে
-“লাভ হবেনা আমার যাওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে ।তোকে অনেক কিছু বলার আছে আমার কথা গুলো শুন
!স্যাম আমাকে মেরেছে ।আর সেহেরও কে ও সে কিডন্যাপ করেছে ।
এই ১ বছরে তোর নামে যত অবৈধ কেস হয়েছে যত খুন হয়েছে সব কিছুর পিছনে রয়েছে ডুবাইয়ের মাফিয়া স্যাম ।সে হুবাহু তোর মত দেখতে ।সে দেশে এসেছে তোর থেকে প্রতিশোধ নিতে ।তোর সব কিছু কেড়ে নিতে ।তুই তার অবৈধ ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছিস আর সেই প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই সে এসব করেছে ।তুই জানিস এই মাফিয়া কে ? সে আর কেউ না তোরই জমজ ভাই ।তোদের জন্মের পর তোর ফুপি হসপিটাল থেকে স্যাম কে আলাদা করে ফেলে ।আর ডক্টোরকে বলতে বলে যে একটা বাচ্চা মারা গেছে ।তোর ফুপি স্যামকে নিয়ে ডুবাই চলে যায় ।আর সেখানে নিজের মত করে তাকে বড় করে ।একমাত্র তোর বাবার থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সে এসব করেছে ।সে তোর জীবন ধংস করতে চায়। তোর পরিবার ,তোর সম্মান তোর আপনজন সব কেড়ে নিতে চায় স্যাম ।”
আমি সব শুনে হতভম্ব হয়ে থাকি ।আমার রক্তই আমার সব কেড়ে নিতে চায় ?আমি যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছি ।কি করবো কিছুই মাথায় আসছিলোনা ।স্থব্দ হয়ে গিয়ে ছিলাম ।সাফিন আবার বলতে শুরু করে
-“দোস্ত তোকে অনেক ভুল বুঝেছি রে ।এই সাত মাসে আমি তোর আর সেহেরের উপর নজর রেখেছি আমি দেখেছি । তোর থেকে বেশি ভালোবাসতে কেউ পারবেনা সেহেরকে ।সেহের আমার কলিজার টুকরা ! আমার কলিজার টুকরাটার সব সময় খেয়াল রাখবি আর অনেক ভালোবাসবি ।আ..আর মনিশা আমার জান ।মনিশাকে অনেক ভালোবাসি ।আমার মনিশা মা হতে চলছে ।আর দেখ কি ভাগ্য আমার এখনই এই দুনিয়া ছাড়তে হচ্ছে ।কত ইচ্ছে ছিলো এক সাথে দুজন থাকবো ।আমাদের একটা ছোট্ট সংসার হবে ।ছোট্ট একটা রাজকন্যা আসবে ।তাকে একসাথে বড় করবো ।বিয়ে দিবো ।দুজন এক সাথে বুড়ো হবো কিন্তু দেখ আমার কি ভাগ্য সব ছেড়ে আমাকে চলে যেতে হচ্ছে ওপারে । শেষ মুহূর্তে আমার মনিশাকে দেখা হলো না ।মনিশাকে বলিশ আমি তাকে খুব খুব ভালোবাসি ।ঐ পারে তার জন্য অপেক্ষা করবো ।
আমি যেখানেই থাকিনা কেন আমি সবসময় তাকে দেখবো !”
সাফিন বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে তার কথা বেজে আসছে ।আদো আদো গলায় আবার বলে
-“আমাকে কথা দে তুই মনিশা আর সেহেরের অনেক খেয়াল রাখবি ।তাদের সবসময় সব বিপদ থেকে রক্ষা করবি ! ছাড়া হয়ে তাদের পাশে থাকবি !”
সাফিন শেষ শ্বাস নিতে নিতে বলে
-“আমাদের সেহেরকে বাচাঁ ।ঐ স্যাম খুব ডেন্জারাস !”
বলেই বড় একটা নিশ্বাস নেয় ।চোখ জোড়া স্থির হয়ে থাকে ।তার নিথর দেহটা আমার কলে পড়ে থাকে ।আমি কান্না করতে করতে সাফিনের দেহ ঝাকাঁতে ঝাকাঁতে বলি
-এই সাফিন উঠ ।উঠ না ভাই ।দেখ আমি তোকে ছাড়া কি করে সব কিছু সামলাবো ? কে বলবে আমি আছি তো দোস্ত সব সামলিয়ে নিবো । কার সাথে রাত জেগে আড্ডা দিবো ? কারে নিয়ে ঘুরবো ?
কি করে সেহের আর মনিশাকে সামলাবো ? কি জবাব দিবো ওদের !
এই সাফিন উঠ না ভাই ।এই দেখ আমি সব মেনে নিয়েছি ।আর রাগ করবোনা না তোর সাথে ।চল না ভাইইই !”
বলেই জোরে চিৎকার করে কান্না করি ।আমি নিজের ভাইয়ের তুল্য বন্ধুকে হারিয়েছি ।নিজের সবচেয়ে কাজের মানুষগুলোর মধ্যে একজনকে হারিয়েছি । সাফিনের শেষ কথা গুলো কানে বার বার বারি খাচ্ছিলো ।
আমি কান্না করতে করতে সাফিনের হাত ধরে বলি
-“আমি কথা দিলাম !
আমি সবসময় সেহের আর মনিশাকে রক্ষা করবো ।ছাড়া হয়ে ওদের পাশে থাকবো ।কোন আচঁ ও লাগতে দিবোনা ।”
হঠাই সেহেরের কথা মনে পড়তে সাফিনকে সেখানে শুয়িয়ে দিয়ে তারাতারি করে সাফিনের পাশ থেকে ছুড়িটা হাতে নিয়ে পোড়া বাড়ির দিকে অগ্রসর হই ।বাড়ির কাছাকাছি পৌছাতেই হঠাৎ উপর থেকে সেহেরের কান্নার শব্দ পাই । উপরে তাকিয়ে দেখি স্যাম সেহেরের দিকে এগিয়ে আসছে ।তার হাতে ধারালো ছুড়ি মুখে পৌশাচীক হাসি ।সেহের কান্না করতে করতে বলছে
-“প্লিজ আরহাম আমাকে ছেড়ে দিন ।আপনি কেন এমন করছেন ? আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি ।আপনি ভাইয়াকে মেরেছেন আমাকে মারতে চাইছেন ।কেন এমন করছেন । প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন আরহাম !”
সেহের স্যামকে আরহাম ভেবে বার বার তার কাছে প্রান ভিক্ষা চাইছে ।কিন্তু স্যাম আগের মতই শয়তানি হাসি দিয়ে সেহেরের দিকে এগিয়ে আসছে ।কি করবো কিছুই মাথায় আসছেনা ।মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে ।আমি নিচ থেকে সেহেরকে চিৎকার করে ডাকছি কিন্তু সেহের একবারে জন্যও নিচে তাকাচ্ছেনা ।অনবরত নিজের প্রান ভিক্ষার আকুতি মিনুতি করে যাচ্ছে ।
হঠাৎ স্যাম সেহেরের কাছে এসে তার পেটে ছুড়ি ডুকিয়ে দেয় ।সাথে সাথে আমার দুনিয়া যেন স্থব্দ হয়ে গেল ।আমি বাড়ির দিকে পা বাড়াতেই স্যাম আমাকে দেখে শয়তানি হাসি দিয়ে সেহেরকে ছাদ থেকে ঢাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় ।আমার চোখের সামনে সেহের মাটিতে পরে ।আমার চোখের সামনে আমার পুরো দুনিয়া ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল ।আমার সামনে আমার সেহের পড়ে আছে ।মাথা থেকে পেট থেকে রক্ত ঝড়ছে ।আমার শরীরের রক্ত চলাচল যেন বন্ধ হয়ে গেল ।হাটুঁ ভেঙ্গে সেহেরের সামনে বসে পরি ।তার গালে হাত রেখে শান্ত হয়ে বলি
-“এই সেহের । সেহের ।বউ আমার ।উঠো। এভাবে চোখ বন্ধ করে আছো কেন ? রাগ করেছো তাইনা ? এই দেখ তোমার বর এসে গেছে ।এখন এক সাথে আইসক্রিম খাবো ।একসাথে ঘুরবো ।তোমাকে গান শুনাবো ।বুকে জরিয়ে ঘুম পাড়াবো ।
উঠো সেহের ।উঠোনা ।আমার হুর উঠো ।
সব সময় কত কথা বলো এখন কেন চুপ করে আছো ।আমি পারছিনা তো তোমার নিরবতা সয্য করতে ।
উঠো সেহেররররররররর
সেহেরকে চিৎকার করে ডাকতে লাগি ।কিন্তু কোন রেসপন্স পাইনা ।এবার আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনা আমার বুকের সাথে গভীর ভাবে জরিয়ে ধরে ।হাউমাউ করে কান্না করতে লাগি ।আমার পুরো পৃথিবী মুহূর্তে শেষ হয়ে গেল ।
এমন সময়ই পিছন থেকে কেউ আমার পিছনে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করে ।আমি ঘাড়ঁ ঘুরিয়ে দেখি স্যাম আর তার লোকজন দাড়িয়ে কিটকিটিয়ে হাসছে ।তাদের যেন খুব আনন্দ লাগছে ।স্যাম হাসতে হাসতে বলে
কেমন লাগলো ব্রো ? কেমন দিলাম ! তুই আমার বিজন্যাস বন্ধ করেছিস আমি তোর থেকে তোর দুনিয়া ছিনিয়ে নিয়েছি ।তোর কাছের মানুষ ছিনিয়ে নিয়েছি ।তুই সম্পর্কে তো আমার ভাই ।আমারই আয়না ।কিন্তু আমরা দুজন দু মেরুর প্রান্ত ।আমাদের কোন দিন মিল হবে না ।তোর কাছে তোর সম্পর্ক ,সম্মান ,পরিবার মূল্যবান এরাই সব আর আমার কাছে শুধু টাকাই সব ।তোর থেকে তোর সব ছিনিয়ে নিয়েছি ।তোর এই বন্ধু সাফিনকে আমি তোর ফোন থেকে মেসেজ করে এখানে এনেছি ।তোর বোনের কাছে তুই তার স্বামীর খুনি হবি ।তোর বউয়ের চোখে মৃত্যুর আগ মুহূর্তে তোর জন্য ঘৃনা ছিলো ।আহহহ কি শান্তি যে লাগছে ।এবার আমার প্রতিশোধ পূর্ন হলো ।তুই সারাজীবন ধুকে ধুকে মরবি ।
তুই আমার ভাই কিন্তু আমি তা মানিনা ।তুই তোর পরিবার মরবি নাকি বাচঁবি আমার কিছু আসে যায় না ।আমার শুধু টাকা দরকার !”
বলেই স্যাম হাসতে লাগে ।আরহামের কাছে এগিয়ে আসতে আসতে আবার বলতে শুরু করে
-“উফফফ তোর বউ যা চিজ ছিলো ।ইচ্ছে তো করছিলো একবার….
স্যাম আর কিছু বলতে পারেনা তার আগেই আমি তার বুকে ছুড়ি ডুকিয়ে দেয় ।অনবরত ছুড়ি দিয়ে পাড় দিতে লাগে ।স্যামের চোখ বড় বড় হয়ে যায় ।আমি রেগে বলতে লাগে
-“তুই আমার সব কিছু কেড়ে নিয়েছিস তোকে কি করে ছেড়ে দেই ?
তোকে তো মরতেই হবে ।তোর টাকার প্রয়োজন না ? এই নে মৃত্যু ।“
বলেই আমি পাগলের মত ছুড়ি দিয়ে একের পর এক তার বুকে আঘাত করি ।পিছন থেকে স্যামের লোকেরা আমার পিঠে গুলি করে আমি মাটিতে ঢোলে পরে যাই ।চোখ বুঝে আসছে ।মাটির সাথে ঘেষে ঘেষে সেহেরের কাছে যাই তার উপর ঝুকেঁ নাকের সামনে হাত নিয়ে দেখি নিশ্বাস চলছে ।আমি তাকে কোলে উঠাতে নেই কিন্তু পারিনা ।পরে যাই চোখ গুলো ও বুঝে আসছে ।সেহেরের কাছে যেয়ে তার কপালে চুমু দিয়ে তার পাশে শুয়ে পড়ি তার হাত বুকে নিয়ে তার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলি
-“ভালোবাসি হুর ।অনেক বেশি ভালোবাসি ।”
শরীরের সাথে আর পেড়ে উঠিনা চোখ বন্ধ হয়ে যায় ।চোখ বন্ধ হওয়ার আগ মুহূর্তে পর্যন্ত সেহেরকে দেখে যাই। হতে পারে এটাই হয়তো শেষ দেখা ।হয়তো আর দেখা হবেনা ।
চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে আসে ।
যখন জ্ঞান ফিরে তখন নিজেকে হসপিটাল বেডে আবিষ্কার করি ।ততক্ষনে সবাই সবটা জেনে গেছে ।বাবা মা পাশে বসে কান্না করছে ।আমার জ্ঞান ফিরতই প্রথমেই সেহেরের খেয়াল আসে ।মাকে জিগাসা করতেই মা কান্নায় ভেঙ্গে পরে ।বাবা মাথা নত করে চোখের জল ফেলে ।
আমি তারাতারি করে ক্যানোলা টান দিয়ে খুলে বাবা মা কে উপেক্ষা করে পুরো হসপিটালে খুরিয়ে খুরিয়ে সেহেরকে খুঁজতে লাগি ।যেহেতু আমি এখানে আছি সেহেরও আসে পাশে কোথাও আছে ।পাগল পাগল হয়ে পুরো হসপিটালে তাকে খুজঁতে লাগি কিন্তু কোথাও পাইনা ।আমি খুজেঁ না পেয়ে চিৎকার আর ভাঙ্চুর শুরু করলাম ।আমাকে কেউ আটকাতে পারছিলোনা ।হঠাৎ মা দৌড়িয়ে এসে আমাকে জরিয়ে ধরে থামানো চেষ্টা করে ।কিন্তু কিছুতেই আমি শান্ত হচ্ছিলাম না ।আমি ভাঙ্গচুর আর চিৎকার করে কান্না করতে করতে বলি
-“আমার সেহের কই ? আমার সেহের কে লাগবে ।
তোমরা বলো তাকে কই লুকিয়ে রেখেছো ।
আমাকে আমার সেহের এনে দেও ।আমি আমার সেহেরকে চাই ।”
মা কান্না করতে করতে বলে
-“আরহাম সেহের নেই “
-“নেই মানে কি ? কোথায় গেছে ও ? আমি এত কিছু বুঝিনা ! আমার সেহেরকে লাগবে মানে এখনই লাগবে ।”
-“তা সম্ভব না বাবা ।সেহের আর ফিরবেনা ।
ও এই দুনিয়াতে নেই ।মারা গেছে !”
মা বলেই হুহু করে কান্না করতে লাগে ।কথাটা শুনতেই আমার চারপাশ স্থব্দ হয়ে গেল ।সেহের নেই ? আমার হুর নেই ? আমাকে একা রেখে চলে গেছে !
এসব ভাবতে ভাবতেই চোখের সামনে অন্ধকার ঘনিয়ে আসে ।মাটিতে লুটিয়ে পরি ।
চলবে…..❤️❤️❤️
Plz সবাই সবার মতামত জানাবেন 😊😊😊
ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন❤️❤️❤️