বিষাক্ত প্রেম পর্ব -২৭+২৮+২৯

#বিষাক্ত প্রেম ২

Urme prema (sajiana monir)

পার্ট:২৭

সেদিন সেহেরের মৃত্যুর সংবাদ জানার পর জ্ঞান হারাই ।যখন জ্ঞান ফিরে আবার সেই হসপিটালে পাই ।কোন ভাবে সেহেরের মৃত্যুর সংবাদ মেনে নিতে পারছিলাম না ।মন বার বার বলছিলো আমার সেহের বেচেঁ আছে ।তাই জ্ঞান ফিরার পর সেখান থেকে সোজা সেহেরের বাড়িতে যাই ।সবাই অনেক আটকানোর চেষ্টা করে কিন্তু কেউ পেরে উঠতে পারেনা ।বাড়িতে গিয়ে পুরো বাড়ি তালাশ করি কিন্তু পাইনা ।মনিশার কাছে আমি ছিলাম সাফিনের খুনি ।কারন সাফিনকে আমার নাম্বার থেকে মেসেজ করে বলা হয়েছিলো ঐ জায়গায় যেতে ।আর যেই ছুরি দিয়ে সাফিনকে হত্যা করা হয়েছিলো সেটায় আমার আঙ্গুলের ছাপ পাওয়া গিয়েছে ।মনিশার ভেবে নিয়েছে আমি প্রতিশোধের আগুনে সেহেরকে আর সাফিনকে হত্যা করেছি ।আর সেহেরকেও সে ঘৃনা করতো কারন তার ধারনা ছিলো সেহেরকে বাচাঁনোর জন্য সাফিন সেখানে গিয়েছে ।সেদিন সেহেরের বাড়ি থেকে হতাশ হয়ে ফিরে ।তার বাড়ির লোক জানায় সেহের ১৫ দিন আগে সেই ঘটনার দিনই মারা গিয়েছে ।নিজের সর্বস্ব হারিয়ে আমি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম ।এক নিমিষেই আমার পুরো পৃথিবী তছনছ হয়ে যায় ।নিজের জীবন থেকে তিন জন ভালোবাসার মানুষ হারিয়ে ফেলি ।মনিশা আমাকে চরম ঘৃনা করতো ।তার কাছে আমি মৃত !
এই সব কিছুর জন্য দায়ী বিনা ফুপি ছিলো ।উনার জন্য আমি সব হারিয়েছি ।উনাকে এর শাস্তি পেতে হবে ।প্রচন্ড রকম রেগে বাড়িতে যাই ।বাড়িতে যেয়ে জানতে পারি বিনা ফুপি কে সেই ঘটনার দিন সকাল থেকে উনার কোন খোঁজ নেই ।আর সেদিন ঘটনা স্থলে শুধু আরহাম আর সেহেরকে পাওয়া গেছে ।স্যামের মরদেহ পাওয়া যায়নি ।
সেহেরকে হারিয়ে আমি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম ।সেহের ছাড়া জীবন বৃথা ।তাই বেশ কয়েকবার সুসাইড করা চেষ্টা করি কিন্তু প্রতিবারই বেচেঁ যেতাম ।কখনো মা দেখে বাধাঁ দিতো ।সকল প্রকার নেশার সাথে জরিয়ে যাই ।নিজেকে পুরোপুরি ভাবে ঘরবন্ধি করে ফেলি ।ডিপ্রেশনে চলে যাই ।
নিজের অফিস রাজনিতী সব ছেড়ে নেশার জগতে ডুবে যাই ।যখন সেহেরের কথা মনে পড়তো পাগলের মত তার ছবি আকঁতাম ।ছবি আকাঁ শেষ হলে তা বুকে জরিয়ে ফ্লোরে শুয়ে থাকতাম ।মনে হতো আমার সেহের আমার বুকের মাঝেই রয়েছে ।
মা বাবা আমার অবস্থা দেখে কান্না করতো ।কিন্তু তখন আমার এই দুনিয়ার মৌহ মায়ার কোন পরয়া ছিলো না ।আমার কল্পনা জগতে আমার সেহের কে নিয়ে আমার ভোর থেকে রাত হতো।মা পেরে না উঠতে পেরে হাল ছেড়ে দেয় ।এমন সময়ই রুশা আমাদের বাড়িতে আসা যাওয়া শুরু করে ।আমার সাথে বন্ধুত্ব করার চেষ্টা করে কিন্তু প্রথমে তাকে দূরে ঠেলে দেই আঘাত করি কিন্তু একসময় তার সাথে বন্ধুত্ব হয়ে যায় ।বন্ধুর মত পাশে থেকে আমাকে ডিপ্রেশন থেকে বের করে আনে ।আস্তে আস্তে আবার এই নগর জীবনে ব্যস্থ হয়ে পরি ।রাজনিতী আর বিজন্যাস নিয়ে ব্যস্থ থাকি ।দিনটা ব্যস্থতার মাঝে কেটে গেলেও রাতটা কাটতো না ।সেহেরের প্রত্যেকটা কথা তার হাসি তার তাকানো তার স্মৃতি খুব পোড়াতো আমাকে ।বুক ফেটে চিৎকার আসতো ।এমন করে ৪ বছর ১০ মাস কেটে যায় ।প্রতিটা মুহূর্ত সেহেরকে ভেবে ভেবে কাটতো ।জিন্দলাশ হয়ে বেচেঁ ছিলাম ।এত বছরে ১ মুহূর্তের জন্যেও সেহেরকে ভুলতে পারিনি ।প্রতিদিন নতুন করে তার ছবির মাধ্যেমে তার প্রেমে পড়তাম ।দিন দিন তার প্রতি ভালোবাসা বাড়তো ।অন্যদিকে মনিশার আড়ালে তার প্রতি সব দায়িত্ব পালন করে গেছি ।তাকে সবসময় সেফ রেখেছি !
হঠাৎই বিজন্যাসের কাজে আমাকে কানাডা যেতে হয় ।যাওয়ার সময় কেন জানি মনে একটা আশা বাধেঁ ।কেন জানো মনে হচ্ছিলো ভালো কিছু হবে !

কানাডা________________

বড় একটা প্রোজেক্ট নিয়ে ডিসকার্শন করার জন্যই কানাডায় আসা ।সাপ্তাহ খানেকের ভেতর কাজটা শেষ হয় ।প্রোজেক্টা কমপ্লিট হওয়ার খুশিতে ক্লাইন্ড কানাডা অনতারিও তে একটি পার্টি এরেন্জ করে ।যা নায়াগ্র জলপ্রপাত পাশে ছিলো ।ফ্লাইং সসার্স রেস্টুরেন্টে পার্টি শেষ করে নায়াগ্র জলপ্রপাত চলে যাই ।সেখানে পৌছাতেই কোন জানো মনে হচ্ছিলো আমার সেহের আমার আশে পাশে আছে ।আমার খুব কাছাকাছি সে আছে ।তাকে আমি অনুভব করতে পারছিলাম ।পরক্ষনেই তার মৃত্যুর তৃক্ত সত্য মনে পরে যায় ।তাই দির্ঘ্যনিশ্বাস নিয়ে জলপ্রপাতের তান্ডব দেখতে লাগি ।অনবর পানি ঝড়ে যাচ্ছে ।যার কোন নিদিষ্ট গন্তব্য নেই ।প্রতি মিনিটে লক্ষ ঘন ফুট পানি ঝড়ছে ।হাজারো মানুষ তা দেখছে উপভোগ করছে ।কিন্তু আমার মাঝে না আছে কোন অনুভূতি না আছে কোন অনুভূতির ক্ষমতা ।আমার অনুভূতি তো শুধু আমার সেহেরকে ঘিরে ।এই সুন্দর্য আমার সেহেরের সুন্দর্যের সামনে কিছুনা ।ফর্মালিটি রক্ষা করার জন্য ক্লাইন্ডদের সাথে জলপ্রপাত কাছ থেকে দেখার জন্য মেইড অফ দ্যা মিস্ট নামক নৌকাতে উঠি ।নৌকাতে উঠতেই হঠাৎ একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা লাগে ।অদ্ভুদ এক অনুভূতি ।কেন যেন মনে হচ্ছিলো আমার সেহের ।মেয়েকে দেখার জন্য পাশে ফিরি কিন্তু ততক্ষনে মেয়েটা ভিড়ে মিলিয়ে গিয়েছে ।খুঁজার ও কোন পথ নেই কারন সবার গায়ে একই কালার রেইনকোর্ড পরা যা নৌকায় উঠার সময় দিয়েছে ।
জলপ্রপাতের কাছে আসতেই ঝড়নার পানি গায়ের ছিটে আসছে ।সাদা আভা নৌকার চারদিক ঘিরে আছে ।হঠাই নৌকা মোর ঘুরাতেই কেউ একজন আমার বুকে এসে পরে ।তার চুল আমার মুখে বারি খাচ্ছে তার গায়ের মিষ্টি ঘ্রানটা আমার খুব পরিচীত আমি চোখ বন্ধ করে তাকে জরিয়ে ধরি নিজের সাথে ।আমি জানি এটা আমার হুর ।আমার হুরকে চিনতে তার চেহারা দেখার প্রয়োজন নেই ।তার গায়েঁর ঘ্রানই যথেষ্ট ।কিন্তু সেহের কি করে ? তবে আমি কি কোন স্বপ্ন দেখছি !
যদি স্বপ্ন হয় তবে আমি চাইনা এই স্বপ্ন কোন দিন না ভাঙ্গুক ।চিরকাল এই স্বপ্নের জগৎ এ থাকতে চাই ।
কিন্তু তিক্ত সত্যতো এটাই যে আমার হুর নেই !
বেশ কিছু সময় পর মেয়েটির কথায় আমার ধ্যান ফিরে ।সে আমার বুকে মাথা রেখে বিরবির করছে “হে মাবুদ এবারের মত আমাকে রক্ষা কর ।প্রমিজ করছি আর কোন দিন আমি মিথ্যা বলবো না ।কোন দিন লুকিয়ে চকলেট খাবোনা ,কাউকে বিরক্ত করবোনা !”
আমি বেশ বুঝতে পারি সে ভয় পেয়েছে ।কিছুসময় তাকে ডাকতেই সে আস্তে আস্তে মাথা তুলে আমার দিকে তাকায় ।তার চেহারা দেখতেই আমি থমকিয়ে যাই ।এটা তো আমার হুর ।সেই ডাগর ডাগর মায়া ভরা ভীতু চোখ ,সেই চেহারা নিজের সামনে সব যেন এগোমেলো হয়ে গেল ।সেহের কি করে হতে পারে ? আমি বিষ্ময়ের চোখে তার দিকে তাকিয়ে থাকি ।মেয়েটি শান্ত স্বরে বলে “সরি ভাইয়া ,আসলে আমি নিজের বেলেন্স ধরে রাখতে পারিনি ।”
আমার তার কোন কথাই কানে যাচ্ছেনা হতবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি ।আমার মুখে মাক্স পড়ে থাকার কারনে আমার চেহারার কোন ভাবভঙ্গি কিছু না বুঝতে পেরে চলে যায় ।
আমি থমকিয়ে যাই ।তবে আমার সেহের জিবীত ? তাহলে সবাই কেন আমার থেকে লুকাচ্ছিলো সেহেরকে ?
নৌকা আবার পাড়ে আসতেই সেহের নেমে যায় ।আমি তারাতারি করে নৌকা থেকে নেমে তার পিছু নেই ।৫ মিনিট পর তাদের গাড়ি থামে নায়াগ্র সিটিতে ।যা জলপ্রপাত থেকে আড়াই মাইল দূরে ।সেহের একটি বাড়িতে ডুকে যায় ।আমি সেই মুহূর্তেই সেই বাড়ির মালিকের সব ডিটেলস বের করতে লোক লাগিয়ে দেই ।পরে জানতে পারি এটা সেহেরের ছোট আন্টির বাড়ি ।তারা পুরো পরিবার সহ এখানে থাকে ।আর সেহেরও সেই ঘটনার পর ৫ বছর যাবৎ এখানে থাকে ।আমি সেহেরের সামনে আসিনা কারন তার কাছে সব কিছুর জন্য আমিই দায়ী আমি তার খুনী !
সেদিন সেহেরের উপর নজর রাখার জন্য তার বাড়ির সামনের বাড়ি ভাড়া নেই ।নিজের খুশি ধরে রাখতে পারছিলাম না ।ইচ্ছে করছিলো তাকে জরিয়ে ধরতে কিন্তু নিজের ইচ্ছের উপর কন্ট্রোল এনে দূর থেকে তাকে দেখি ।সেহের আমার সামনে আছে এর চেয়ে বেশি আমার আর কি চাই !
পুরো দুমাস তার উপর নজর রাখি ।দু মাসে জানতে পারি সেহের নিজের স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছে ।তাই আমিও ঠি ক করে নেই যে নতুন করে সব আবার শুরু করবো ।নতুন পরিচয়ে তার সামনে আসবো !
এই দুমাসে তার আড়ালে থেকে তার সামনে অতীতের বিভিন্ন স্মৃতি তুলে আনি যাতে সে বাংলাদেশে ফিরে আসে ।আর আমার প্লান মত সব হয় ।সেহের পালিয়ে বাংলাদেশে আসে আর তার সাথে একই প্লেনে আমিও দেশে ফিরে আসি ।সব কিছু তার আড়ালেই হয়েছে ।এয়ারপোর্টে আসতেই তাকে কিডন্যাপ করি যা আমার প্লানের একটা অংশ ছিলো ।দুদিন সেহের আমার কাছে থাকে আর তার পরিবার তাকে খুজেঁ না পেয়ে ভয় পেয়ে যায় ।আমি চেয়েছিলাম তাদের শাস্তি দিতে ।আমার সেহেরকে আমার থেকে লুকানোর শাস্তি ।দুদিন আমার সেহেরকে কাছ থেকে দেখেছি ।নিজের মত করে ভালোবেসেছি ।নিজের পাচঁবছরের তৃষনা মিটিয়েছি !
দুদিন পর সেহেরের বাবাকে ফোন করে জানাই সেহের আমার কাছে ।তিনি ভয় পেয়ে যায় । আমার কাছে ক্ষমা চাইতে লাগে ।উনার কাছ থেকে জানতে পারি সেহের সেদিন মরে দিন তার হার্টবিট চলছিলো ।বাড়ির সবাই আমাকে নিয়ে ব্যস্থ ছিলো সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সেহেরের বাবা মা তাকে অন্য হসপিটালে সিফ্ট করে । ।আর এদিকে সবাইকে জানায় যে সেহের মারা গেছে ।কাউকে সেহেরের লাশ দেখতে দেয় ।তারাতারি করে অন্য কোন মেয়ের লাশ কবর দেয় ।সেহেকে ১০ দিনের ভিতর মেডিকেল ভিসায় কানাডায় সিফ্ট করে তার খালা মনির কাছে ।সেখানে তার চিকিৎসা করায় ।পুরো ছয়মাস কোমায় থাকার পর তার জ্ঞান ফিরে ।যখন তার জ্ঞান ফিরে ততক্ষনে সেহের স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছে ।তারপর থেকে সে কানাডায়ই থাকে ।আর এসব তিনি সেহেরকে আমার থেকে দুরে রাখার জন্য করেছে ।যেন আমার জন্য সেহেরের কোন ক্ষতি না হয় ।
সব শুনে খুব হতবাক হয়ে যাই তারা কি করে ভেবে নিয়েছে যে আমি আমার সেহেরের কোন ক্ষতি করবো ? সেদিন উনার কান্না কাটির কারনে সেহেরকে তাদের কাছে ফিরত দেই ।শর্ত দেই যে সেহের যদি তারা আমার থেকে লুকানোর চেষ্টা করে তাহলে তাদের সব শেষ করে দিবো ।ূভার্সিটিতে প্রথম বার তার সামনে আসি।নিজেদের নতুন সম্পর্ক তৈরী করতে চেষ্টা করি সেহেরের সাথে ।নতুন করে সব শুরু করি ।তার পর থেকে সব ঠি কই চলছিলো হঠাৎ একদিন সেহের আমাকে ইগনোর করা শুরু করে আমার মনে ভয় চেপে বসে যদি আবার হারিয়ে ফেলি ? তাই তার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাই ।কিন্তু সেহের মুখের উপর না করে দেয় ।তাই প্লান করে বাড়ির সবার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে ভয় দেখিয়ে বিয়ে করি ।যা সম্পর্কে সেহের ছাড়া বাড়ির সবাই আগের থেকেই জানতো !
বিয়ের দিন সেহেরের সাথে ঝামেলা হয় তাই রেগে নিচে চলে যাই ।তখনই হঠাৎ বাহিরের নাম্বার থেকে ফোন আসে ।আর ফোনে আর কেউনা বিনা ফুপি ছিলো ।আমি বেশ রেগে যাই ।তাকে খুন করার হুমকি দেই কিন্তু উনি আমাকে উল্টো হুমকি দেয় যে যদি আমি তার কথা মত না চলি তাহলে সেহেরের সামনে তার অতীত তুলে আনবে ।তার কাছে এমন কিছু প্রুভ আছে যা সেহেরকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে দিবে ।প্রথমে বিশ্বাস করি না পরে উনি সব ছবি ফোনে সেন্ড করে যা দেখতে যে কেউ বলবে আমি সেহেরের আর সাফিনের খুনি ।
আমাকে ব্লাকমেইল করে তিনি আমার থেকে টাকা নেয় ।আমি তাকে নিজের লোক দিয়ে ডুবাই থেকে ধরে আনি।কিন্তু কোন লাভ হয়না উনি জানায় যে উনাকে মেরে ফেললেও কোন লাভ হবেনা ।সব প্রমান সেহেরের কাছে ঠি কই পৌছাবে !
তাই মাটি চাপা দিয়ে এতদিন চুপ ছিলাম ।তার সব কথা মানতে হয়েছে ।আমার হাত পা বাধাঁ ছিলো তার সামনে ।আমি চাওয়ার পরও কিছু করতে পারিনি !

বর্তমান _________________

আরহাম বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে তার অতীত থেকে ফিরে ।পাশ ফিরতেই দেখে সেহের বাচ্চাতের মত তার বুকে তার ঘুমিয়ে আছে ।ছোট ছোট চুল গুলো তার চোখের উপর পড়ছে ।চুল সরাতেই আরো গভীর ভাবে আরহামকে জরিয়ে ধরে ।আরহাম সেহেরের কপালে নিজের ছোট ছুয়িঁয়ে দিয়ে মনে মনে বলে

-“অতীত ভয়ংকর ছিলো ! কোন দিন সেই ভয়ংকর অতীত তোমার সামনে আসতে দিবোনা ।তোমাকে সব বিপদ থেকে আগলে রাখবো ।তার জন্য যা করতে হয় করবো ।নিজের জীবনে দিয়ে হলেও তোমাকে আগলে রাখবো !
আমার এই বিষাক্ত প্রেমের ডোরে সারাজীবন আবদ্ধ রাখবো ।”

চলবে ……❤️❤️❤️

প্লিজ সবাই সবার মতামত জানাবেন 😊😊😊

ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন ❤️❤️❤️#বিষাক্ত প্রেম ২

Urme prema (sajiana monir)

পার্ট:২৮

সেহের চুল মাত্রই শাওয়ার সেড়ে গুনগুন করতে করতে রুমে আসে ।ডেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুল ব্রাশ করছে ।পিছন থেকে আরহাম বেডের সাথে হ্যলান দিয়ে ঠোঁট কামড়িয়ে সেহেরের দিকে তাকিয়ে আছে ।তার মাথায় দুষ্টুমি ঘুরঘুর করছে ।
তাই আলতো পায়ে আরহাম সেহেরের দিকে এগিয়ে যায় ।কমোড়ে জোড়ে চিমটি কাটে ।সেহের ভয়ে চিৎকার দিয়ে লাফিয়ে উঠে ।তা দেখে আরহাম কিটকিট করে হেসে উঠে ।
সেহের গোল গোল চোখ করে আরহামের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে

-“এটা আপনি কি করলেন ?”

আরহাম হাসি থামিয়ে বেশ স্বাভাবীক গলায় বলে

-“কোনটা ?”

-“এই যে আমার কমোড়ে চিমটি দিলেন !”

-“কোন প্রমান আছে আমি তোমাকে চিমটি দিয়েছি ?”

সেহের ছোট ছোট চোখ করে আরহামের দিকে তাকিয়ে বলে

-“তাই প্রমান লাগবে আপনার ?
তাই তো !”

আরহাম ইনসেন্ট লুক দিয়ে

-“হুম অবশ্যই !”

সেহের আস্তে আস্তে আরহামের দিকে এগিয়ে আসে ।একদম তার কাছাকাছি এসে তার গালে জোরে কামড় বসিয়ে দেয় ।আরহাম ব্যথায় “আহহহ “করতেই সেহের তাকে ছেড়ে দেয় ।আরহাম আয়নায় তাকিয়ে দেখে গালে দাগ হয়ে গেছে ।আরহাম অসহায় চাহনিতে সেহেরের দিকে তাকায় ।সেহের দাতঁ বের হাসে ।আরহাম ঠোঁট উল্টিয়ে বলে

-“এটা তুমি কি করেছো ? এখন আমি কি করে বাহিরে যাবো ?”

সেহের হাতের উপর হাত রেখে ভাব নিয়ে বলে

-“আমি কি জানি ?
আপনি আমাকে চিমটি দিয়েছেন আমি আপনাকে কামড় দিয়েছি ।
হিসাব বরাবর !”

আরহাম গালে হাত দিয়ে ডলতে ডলতে বলে

-“উফফ খুব জ্বলছে ।”

সেহেরের এবার বেশ খারাপ লাগছে ।তার এতো জোরে কামড় দেওয়া একদম উচিত হয়নি ।সেহের আরহামের গালে হাত বুলাতে বুলাতে বলে

-“খুব লেগেছে তাইনা ?
দাড়ান আমি এখনি বরফ নিয়ে আসছি ।”

-“উহু বরফে কাজ হবে না !”

-“তাহলে ?”

-“আমার অন্য ঔষধ লাগবে !”

-“কি ঔষধ ?”

আরহাম সেহের কে কাছে টেনে এনে তার ঠোঁটে হাত রেখে বলে

-“এই যে ,এই ঔষধ !”

-“আমার সাথে এতক্ষন অভিনয় করা হচ্ছিলো ?”

আরহাম চোখ চিপ মেরে বলে

-“তো কি করবো ? বউ এত হট হলে তাকে কাছে পাবার জন্য এমন একটু আকটু মজা আর অভিনয় করতেই হয় ।”

সেহের লজ্জায় চোখ জোড়া নিচে নামিয়ে ফেলে ।আরহামের কাছ থেকে দূরে সরে যেতে নেয় এমন সময়ই আরহাম সেহেরের কমোড় জরিয়ে ধরে তাকে একদম নিজের কাছে টেনে আনে ।তার কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকিয়ে মৃদ্যু স্বরে বলে

-“সব সময় এমন পালাও কেন বলতো ?”

-“কি করবো ? আমি যে সবসময় লজ্জায় ফেলেন !”

আরহাম বাকাঁ হেসে উত্তর দেয়

-“আমার যে তোমার এই লজ্জা মাখা মুখখানা দেখতে খুব ভালো লাগে !”

সেহের চুপ বরাবরের মতই কেপেঁ যাচ্ছে ।আরহাম আবার বলতে শুরু করে

-“আজকের জন্য থ্রেংক্স !
তুমি হয়তো জানো না তুমি আমার কাছে কি ? কতটা চাই তোমাকে ।আমার অস্তিত্বের কতটা জুড়ে তুমি !
কথা দেও কোনদিন আমাকে ছেড়ে যাবে না ।যত কিছু হোক তুমি আমার থাকবে ।”

শেষের কথাগুলো বলার সময় আরহামের গলা ধরে আসছিলো চোখজোড়া ছলছল করছিলো ।সেহের আরহামের চোখে স্পষ্ট হারানোর ভয় দেখতে পাচ্ছিলো ।যা সেহেরকেও খুব পোড়াচ্ছিলো ।সেহের আরহামের গাল আলতো করে স্পর্শ করে শান্ত গলায় বলে

-“আমি কখনো আপনার থেকে দূরে যাবোনা ।পরিস্থিতী যাই হোক না কেন সবসময় আপনার পাশে থাকবো !”

আরহাম সেহের কপালে ভালোবাসার স্পর্শ দেয় ।তাকে আয়নার সামনে দাড় করিয়ে পিছন থেকে একটা পেন্ডেন সব চেইন পড়িয়ে দেয়। পেন্ডেনে ছোট একটি ডায়মন্ড বেশ চকচক করছে ।অসম্ভব সুন্দর ।সেহের বেশ অবাক চোখে আরহামের দিকে তাকায় ।আরহাম বেশ বুঝতে পারছে সেহের কি বলতে চাইছে ।সে মুচকি হেসে বলে

-“এটা অনেক আগে এনে রেখেছিলাম ।ভেবেছি বাসর রাতে দিবো কিন্তু সেই রাতে তো ঝামেলায় আর দেওয়া হয়নি ।
তাই আজ হঠাৎ এটার কথা মনে পড়লো ।এটা দেওয়ার জন্য আজ থেকে পার্ফেক্ট টাইম হতেই পারেনা !
তাই ভাবলাম দিয়ে দেই ।”

সেহের মুচকি হেসে বলে

-“ওয়াও খুব সুন্দর ।”

আরহাম সেহেরের হাতের পিঠে চুমু দিয়ে বলে

-“তোমার চেয়ে বেশি না !”

সেহের প্রতিউত্তরে মুচকি হাসে ।

সেহের নিচে আসতেই দেখতে পায় বিনা বেগম সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে ।সেহের চোখ ঘুরিয়ে কিচেনের দিকে পা বাড়ায় ।কফির বেটার তৈরী করছে ।আরহামের জন্য কফি বানাচ্ছে ।এমন সময়ই বিনা বেগম এসে সেহেরের কফির বেটারে পানি ডেলে দেয় ।প্রথমে সেহের বেশ অবাক হয় তার সাথে রাগও ।পরে নিজের রাগের উপর কন্ট্রোল করে।কোন শব্দ না করে ।আবার বানাতে লাগে ।
বিনা বেগম মুখ বাকিঁয়ে বলতে লাগে

-“উমমম ডং ,সারাদিন বরের সাথে ঘরে বন্ধ করে বসে থাকা ।যেমন বর তার একলারই আছে !
ছেলে ফাসানো তো বেশ ভালোই শিখেছো দেখছি ?
পরিবার থেকে প্রশিক্ষন থেকে পেয়েছো বুঝি ?”

সেহের এতক্ষন চুপ থাকলেও পরিবারের কথা শুনে চুপ থাকতে পারে না ।সেহের বিনা বেগমের দিকে ফিরে মুখে হাসির রেখা টেনে বলে

-“নিজের বরের সাথেই তো ঘর বন্ধি থাকি অন্যকোন পুরুষের সাথে তো না !
আর ফুপি আরহামকে আমি জাদু করিনি আরহাম আমাকে ভালোবাসে ।আর ভালোবাসা কি তা হয়তো বুঝেন ?
আর রইলো পরিবারের শিক্ষার কথা !
আমার পরিবার আমাকে ভদ্রতার শিক্ষা দিয়েছে যার জন্য এতক্ষন চুপ ছিলাম ।
আমার ভদ্রতাকে আমার দূর্বলতা ভেবে ভুল করবেন না ।”

বিনা বেগম সেহেরের কথায় বেশ ক্ষেপে যায় ।রেগে ফুসতে ফুসতে বলে

-“তোমার এত বড় সাহস ?
আমার মুখে মুখে তর্ক করছো ?
তোমাকে তো “

বলেই সেহেরের গায়েঁ হাত উঠাতে নেয় ।সেহের হাত আটকিয়ে তা মোচড় দিয়ে বলে

-“সত্যি বলতে ,কুকুরের পেটে ঘি হজম হয় না আপনিও ঠি ক তেমন ভদ্র ব্যবহার হজম করতে পারেন না ।আপনি কি ভেবেছেন আপনি আমার গায়েঁ হাত তুলবেন আর আমি চেয়ে দেখবো ?
হাত আমারও আছে ফুপ্পি !
সকালে আরহাম আর মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে চুপ ছিলাম ।কিন্তু এখন চুপ থাকবো না !”

বলেই বিনা বেগমের হাত ঝাড়ি দিয়ে ফেলে চলে যায় সেহের ।বিনা বেগম সেহেরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাত ডলতে ডলতে বলে

-“আগে বিড়াল ছিলো এখনতো দেখছি বাঘিনী হয়ে গেছে
খুব তারাতারি এর লাগাম তাগাতে হবে ।”

সেহের দরজার সামনেই ছিলো কথাটা তার কান এড়ায়নি ।সেহের পিছনে তাকিয়ে বাকাঁ হেসে উত্তর দেয়

-“চেষ্টা করতে পারেন কিন্তু খুব একটা লাভ হবে না !
আমাকে লাগাম লাগানো এত সহজ না ।
আপনার এই ব্যবহারের কথা আরহামের কান অবদি গেলে কি হতে পারে ধারনা আছে তো ফুপ্পি ?”

-“এই মেয়ে তুমি কি আমাকে ভয় দেখাচ্ছো ?”

-“না না ফুপ্পি আমার কি সেই সাহস আছে ? আমি তো জাস্ট আপনাকে সাবধান করছিলাম । যাতে নেক্সট টাইম এমন কিছু করার আগে ভাবেন !”

সেহের রহিমা খালাকে কফি নিয়ে আসতে বলে উপরে চলে যায় ।এই মুহূর্তে তার কিচেনে থাকার মন বিন্দু পরিমান ইচ্ছা নেই ।
নাইসা দূর থেকে সবটা দেখেছে ।মিটমিট করে হাসছে ।তার মা কে জব্দ করার জন্য কেউ একজন আছে তা ভাবতেই তার খুশি লাগছে !
অনেক বেশি ঘৃনা করে সে তার মাকে ।তাই তো এতটা বছর বাড়ি থেকে দূর হোস্টেলে থেকে বড় হয়েছে ।
যেই মা নিজের নাবালিকা মেয়েকে টাকার জন্য একদন বুড়ো লোকের কাছে বিয়ে দিতে পারে ।সে মা নয় জঘন্য মানুষ ।নাইসার মা নেই বাবাই তার সব ।মাকে খুব বেশি ঘৃনা করে সে !

চলবে…….❤️#বিষাক্ত প্রেম ২

Urme prema (sajiana monir)

পার্ট:২৯

গাড়ি চলছে নিজ গতিতে চারদিক অন্ধকারে ছেয়ে আছে ।ঠান্ডা বাতাস বইছে ।সেহের জানালার কাচ খুলে এই শীতল পরিবেশটা উপভোগ করছে ।আসে পাশের লাইটের আলোতে অন্ধকারে কিছুটা কেটেছে ।অদ্ভুদ এক সুন্দর পরিবেশ ।সেহেরের চোখে মুখে খুশির ঝলক ।আরহাম ড্রাইভিং এর ফাঁকে ফাঁকে সেহেরকে দেখছে ।খুবই অদ্ভুদ একটা মেয়ে ।অল্পতেই খুশি হয়ে যায় ।এই তো সন্ধ্যায়ই আরহাম তাকে বলেছে আজ তাকে নিয়ে লংড্রাইভে যাবে ।সেহের তা শুনার পর খুশিতে লাফালাফি শুরু করে দেয় ।
একদম ছোট বাচ্চাদের মত !
সেহেরের এই গুনটাই তো আরহামকে সেহেরের প্রতি আরো আকৃষ্ট করে ।সেদিন আর বেশি দূর নেই যেদিন সে সেহেরের প্রেমে পাগল হয়ে ঘুরবে ।এই তাকে পাগল বানিয়েই ছাড়বে !
সেহের বাচ্চাদের মত জানালার বাহিরে হাত বের করছে ।আরহাম তা দেখে হাত ভিতরের দিকে টান দিয়ে জানালার কাচ বন্ধ করে দেয় ।ধমকের স্বরে বলে

-“সেহের ! কি করছো ?বাচ্চাদের মত কেন বাহিরে হাত দিচ্ছো ?”

সেহের সিটে হ্যালান দিয়ে গাল ফুলিয়ে আরহামের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে বসে ।আরহাম সেহেরের এমন গাল ফুলানোতে বেশ হাসি পাচ্ছে !
সে খুব বুঝতে পারছে তার বিবিজান তার উপর রাগ করেছে ।আরহাম সেহেরের হাতের উপর নিজের একহাত রেখে মুচকি হেসে বলে

-“রাগ করেছো বিবিজান ?”

সেহের কোন কথা না বলে হাত সরিয়ে নেয় ।আরহাম ভয় পাওয়ার ভঙ্গিতে সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে

-“ও বাব্বা ! আমার বউ তো দেখছি রেগে হটটটটট হয়ে আছে ।”

সেহের নিজের তিক্ষ্ন দৃষ্টি আরহামের দিকে নিক্ষেপ করে ।আরহাম ঢোক গিলে বলে

-“দেখ বউ আমার কোন দোষ নেই ।সব দোষ তোমার । তুমি কেন বাহিরে হাত দিচ্ছো ? পিছন থেকে গাড়ি আসছে যদি হাতে লাগতো ? তখন কি হতো !
আমি তো তোমার ভালোর জন্যই তোমাকে ধমক দিয়েছি ।”

সেহের এবার মুখ খুললো ।রেগে আগুন হয়ে বলল

-“হ্যা , হ্যা আপনি তো পারেনই শুধু ধমক দিতে ।আর কি পারেন ? বিয়ের পর থেকে শুধু ধমকই শুনে আসছি ।কখনো কি একটু আদর করে কথা বলেছেন ?”

-“এ্যা । কি মিথ্যা বলছো !
এই তো দুপুরেই তো কত আদর করলাম ।”

মুহূর্তেই সেহেরের মুখ লজ্জায় লাল হয়ে যায় ।নিজের উপর কন্ট্রোল করে মুখে রাগি ভাব ফুটিয়ে বলে

-“ততত ….তো আমি কি সেই আ…আদরের কথা বলেছি ?”

আরহাম দুষ্টু হেসে বলে

-“ততত..তো কোন আ..আদরের কথা বলেছেন মেডাম !”

-“ধুর আপনার সাথে কথা বলাই বৃথা !”

-“আচ্ছা ,আচ্ছা সরি বউ !
আমাকে মাফ করে দেও “

-“হুম যান মাফ করে দিলাম !”

-“তো মেম কোন রেস্টুরেন্টে যাবেন ?”

সেহের মুখে বিশ্বজয়ের হাসি ফুটিয়ে বলে

-“উমমম আজ কোন রেস্টুরেন্টে না আজ আমরা রাস্তার পাশে ফুটফাত থেকে ফুসকা ,আইসক্রিম ,ঝালমুড়ি ,চা ,টি ক্কা ,চাউমিন খাবো !”

-“উহু । একদম না ।এখানে খেলে পেট ব্যথা করবে ।”

-“না না আমি এখানেই খাবোওওও !”

-“জান প্লিজ জ্বিদ করে না ।”

সেহের মন খারাপ করে বলে

-“হুম আপনি আজ পর্যন্ত আমার কোন কথা শুনেছেন যে আজ শুনবেন ।আপনি আমাকে একটুও ভালোবাসেন না ।সব সময় শুধু না। না আর নাই করেন ।আমার কত ইচ্ছে ছিলো আপনার সাথে এই ঠান্ডা পরিবেশে অন্য সাধারন কাপলদের মত রাস্তায় হাত ধরে ঘরবো ,ফুসকা খাবো সময়টাকে উপভোগ করবো । কিন্তু আপনার কাছে আমার ইচ্ছের দাম কথায় ।
যাবোনা আমি কোথাও ,আমি গাড়িতেই থাকবো !”

সেহেরের কথা গুলো আরহামের খুব খারাপ লাগছে সত্যি তো মেয়েটা একটু ঘুরতে চাইছে ।এভাবে তার মন ভাঙ্গাটা একদম উচিত হবেনা ।
আরহাম সেহেরকে কাছে টেনে এনে তার কপালে গভীর চুমু দিয়ে বলে

-“আচ্ছা জান মন খারাপ করতে হবেনা ।তোমার ইচ্ছেমতই হবে !”

সেহের মুহূর্তেই মুখে বড় হাসি টেনে বলে

-“সত্যিইইই ?”

-“একদম ।আজ পর্যন্ত বউয়ের কথার উপর কারো কথা চলেছে নাকি ? যে আমার চলবে !”

সেহের ফিক করে হেসে দেয় ।আরহাম একহাতে সেহেরকে নিজের সাথে জরিয়ে নেয় ।

সেহের একের পর এক ফুসকা মুখে পুড়ছে ।আরহাম সেহেরের দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে ।তার প্রত্যেকটা কাজই খুব মন দিয়ে দেখছে।সেহের ফুসকা মুখে পুড়েই চোখ বন্ধ করে পরম আনন্দে খাচ্ছে ।যেন সে অমৃত খাচ্ছে ।
সেহের খাওয়ার ফাকে আরহামের দিকে চোখ যেতেই ছোট ছোট চোখ করে আরহামের দিকে তাকায় ।ভ্রুরু নাচিয়ে জিগাসা করে কি হয়েছে ।আরহাম গোল গোল চোখে তাকিয়ে বলে

-“তুমি এমন ভাবে খাচ্ছ মনে হচ্ছে দুনিয়ার সবচেয়ে সুস্বাদু খাবার ফুসকা !”

সেহের নিজের মুখে আরেকটা ফুসকা ডুকিয়ে বলে

-“ অবভিয়াসলি ! এতে কোন সন্দেহ আছে ?”

-“না না আপনি যে ভাবে খাচ্ছেন এতে কোন সন্দেহ নেই !”

সেহের আরহামের মুখে জোর করে একটা ফুসকা ডুকিয়ে দিয়ে বলে ।

-“তো আপনি ও এই সুস্বাদু খাবার স্বাদ গ্রহন করুন ।আমি একা খেলে কেমন দেখায় না ?”

আরহাম মুচকি হেসে বলে

-“পাগলি !”

-“হ্যা ,হ্যা পাগল তো হতেই হবে এত ভালোবাসা পেয়ে কেউ কি করে স্বাভাবীক থাকে বলুন “

আরহাম উত্তরে মুচকি হাসে ।দুজন ফুসকা খাওয়া শেষ করে ।আরহাম সেহেরের হাতে গাড়ির চাবি দিয়ে বলে

-“তুমি গাড়িতে বসো আমি এক্ষুনি বিল মিটিয়ে আসছি ।”

সেহের গাড়ির কাছে চলে যায় ।গাড়ির ভিতর একদম বসে থাকতে ইচ্ছে করছেনা তার । তাই গাড়ির খুলে গাড়ির ভিতর থেকে ফোনটা নিয়ে গাড়ির সাথে হ্যালান দিয়ে ফোন চালাতে শুরু করে ।এমন সময়ই হঠাৎ তার মুখ চেপে কেউ তাকে ভিরের মাঝে নিয়ে যায় ।সেহের ছাড়া পাবার জন্য হাত পা ছুরাছুরি করছে কিন্তু কোন লাভ হচ্ছেনা । এত অন্ধকার আর ভিড় হওয়ায় কেউ শুনছেনা তাকে খেয়াল করছেনা ।সবাই যার যার মত ব্যস্থ ।

সেহেরকে টেনে এক বিল্ডিং এর কাছে নিয়ে আসে ।জায়গাটা বেশ নিরিবিরি ।কোন লোক দেখা যাচ্ছেনা ।কালো কাপড় পরা মানুষটি আস্তে আস্তে সেহেরের দিকে এগিয়ে আসছে হাতে ধারালো অস্র ।সেহের মানুষটির পেটে লাথ্থি দিয়ে দৌড় দেয় ।কিন্তু বেশি দূর যেতে পারেনা পিছন থেকে সেই লোকটি লাঠি সেহের দিকে ছুড়ে মারে যা সেহেরের পায়ে লাগে ।সেহের মাটিতে পরে যায় ।পায়ে খুব ব্যথা পেয়েছে সামনে আগানোর শক্তি নেই ।জোরে জোরে সেহের বাচাও বাচাও বলে চিৎকার করছে কিন্তু কাজ হয় না ।কেউ নেই আসে পাশে ।লোকটি আস্তে আস্তে সেহেরের দিকে এগিয়ে আসছে ।
অন্যদিকে আরহাম গাড়ির কাছে এসে দেখে সেহের নেই ।তার মাথা মুহূর্তে শূন্য হয়ে যায় ।ফোন দিতেই দেখে ফোনটা গাড়ির কাছে পড়ে আছে ।
আরহাম বেশ ভয় পেয়ে যায় ।আসে পাশে খুজাঁখুজিঁ শুরু করে দেয় ।মুহূতেই তার চোখের সামনে অতীত ভেসে উঠে ।যদি সেহের সেদিনের মত আবার হারিয়ে যায় ? এসব ভাবতে ভাবতেই তার আত্না শুকিয়ে যাচ্ছে ।মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে ।
আরহাম নিজেকে শান্ত করে সেহেরকে আসে পাশে খুজঁতে শুরু করে ।
কিছুদূর যেতেই দেখে একটা বিল্ডিং ।অন্ধকারে ঘেরা ।আরহাম তারাতারি সেদিকটায় যায় ।সেদিকে যেতেই সেহেরের চিৎকার আর কান্নার আওয়াজ আসছে ।আরহাম দ্রুত পায়ে বিল্ডিং এর পিছনে চলে যায় ।সেখানে যেতেই দেখে কেউ সেহেরের দিকে ছুড়ি তাক করে রেখেছে ।সেহেরের উপর যেই ছুড়ি দিয়ে আঘাত করতে যাবে তার আগেই আরহাম ইট তার দিকে ছুড়ে মারে ।ইটটি লোকটির পিঠে লাগে ।লোকটি মাটিতে পরে যায় ।পিছনে ফিরে আরহামকে দেখতেই সেখান থেকে পালায় ।যাওয়ার আগে কর্কশ মেয়েলি গলায় হুমকি দেয়

-“আজ বেচেঁ গেলি ।কিন্তু তোকে তো মরতেই হবে ।তোর মৃত্যু আমার হাতে ।আমি আসবো ।আবার আসবো !”

বলেই সেখান থেকে পালায় ।আরহাম তারাতারি করে সেহেরের কাছে আসে ।সেহেরের হাতের বাহু কেটে গেছে হাত থেকে রক্ত ঝোড়ছে ।পা ব্যথায় নড়াতে পারছেনা ।সব দেখে আরহাম স্থব্দ হয়ে যায় ।তার মনে আগের ভয় চেপে বসেছে ।নিজেকে কোন রকম সামলিয়ে ।তারাতারি করে সেহেরকে নিজের কোলে তুলে নিয়ে হসপিটালে চলে যায় ।হসপিটাল থেকে ড্রেসিং করে বাড়িতে নিয়ে আসে ।পুরোটা সময় সেহেরের হাত ধরে ছিলো ।আরহামের মনে ভয় চেপে ধরেছে ।হাত ছাড়লেই হয়তো সেহের হারিয়ে যাবে ।সেহের ও এই ঘটনার পর বেশ ঘাবড়িয়ে গেছে ।একদম চুপচাপ হয়ে গেছে ।

ঘড়িতে ১২ টা বাজতে চলেছে ।সেহের আরহামের বুকে মাথা হ্যালান দিয়ে আছে ।দুজনের মঝে নিরবতা বিরাজ করছে ।আরহামের মাঝে হাজার প্রশ্ন জাগছে কে সেহেরকে মারতে চাইছে ? স্যাম ? কিন্তু স্যাম কি করে ? সে নিজ হাতে স্যামকে খুন করেছে ।তাহলে কে ?
হঠাৎই আরহাম নিরবতা ভেঙ্গে সেহেরের চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বলে

-“জান !”

সেহের মৃদ্যু স্বরে উত্তর নেয়

-“হুম “

-“তোমার উপর যে লোকটি আক্রমন করেছে তুমি তার মুখ দেখেছো ? “

মুহুর্তেই সেহের ভয়ে কাপতেঁ লাগে তার সন্ধ্যার সেই দৃশ্যর কথা মনে পড়ে যায় ।সেহেরের শরীর কাপঁছে তা আরহাম উপলব্ধি করতে পারছে ।এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি জরুরী সেই জানোয়ারকে ধরা যে সেহেরের উপর আক্রমন করেছিলো ।সে চাইবে আবার আক্রমন করতে ।তার আগেই তাকে ধরে শাস্তি দিতে হবে ।তাই আরহাম সেহেরকে নিজের বুকের মাঝে আরো গভীর ভাবে জরিয়ে তার ভয় কমানোর চেষ্টা করে ।কিছুসময় পর সেহের শান্ত হলে ।আরহাম বলে

-“সেহের ভয় নেই আমি তোমার কাছে আছি কেউ তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবেনা ।
কেউ তোমার ধারের কাছেও আসতে পারবেনা !
তুমি কি লোকটাকে দেখেছো ? তার সম্পর্কে কোন ক্লু দিতে পারবে ?”

সেহের কাপাঁ কাপাঁ গলায় বলে

-“ঐটা কোন লোক ছিলোনা আরহাম ।ঐটা এ..একটা মহিলা ছিলো !”

বলেই সেহের কেদেঁ উঠে ।আরহামের কপালের রগ ফুটে উঠে ।সে জানে ঐ মহিলাটা কে !
এটা তার ফুপি ছাড়া অন্যকেউ হতেই পারেনা ।
আরহাম সেহেরকে ছেড়ে রাগে ফুসঁতে ফুসঁতে বিছানা থেকে উঠে পরে ।রাগে কটকট করতে করতে বলে

-“আজ এই মহিলার একদিন কি আমার একদিন ।জঘন্য মহিলাকে আজ খুন করে ফেলবো !”

চলবে……..❤️

Plz সবাই সবার মতামত জানাবেন 😊😊😊

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ❤️❤️❤️

Plz সবাই সবার মতামত জানাবেন 😊😊😊

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ❤️❤️❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here