বিষাক্ত প্রেম পর্ব -৩৩+৩৪+৩৫ ও শেষ

#বিষাক্ত প্রেম ২

Urme prema (sajiana monir)

পার্ট:৩৩

(আর মাত্র ২-১ পার্ট আছে ।খুব তারাতারি শেষ করবো ।আবার নতুন কোন গল্পের সাথে ফিরে আসবো in sha Allah )

-“তুমি আমাকে ক্ষমা করেছো ?”

আরহাম সেহেরকে শক্ত ভাবে বুকে জরিয়ে মলিন গলায় বলে ।সেহের আরহামের বুকের মাঝেই মাথা ঠেকিঁয়ে উত্তর দেয়

-“যার চোখে সবসময় আমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি ।পবিত্রতা দেখেছি ।সে কোনদিনই আমার ক্ষতি চাইতে পারেনা !
হ্যা প্রথমে রাগের মাথায় চিন্তা করেছি আপনার থেকে দূরে চলে যাবো ।অনেক দূর !
কিন্তু পরক্ষনেই ভালোবাসার সামনে আমার রাগ জ্বেদের দেয়াল ভেঙ্গে চুড়মার হয়ে গেছে ।কারন আমি পারবোনা আপনাকে ছাড়া বাচঁতে এই কয়েকটা দিনে আপনি আমার অভ্যাস হয়ে গেছেন !
আমার প্রতিটা রক্তবিন্দুতে শুধু আপনার নাম লিখা ।
অতীতে যা হয়েছে তাতে আপনার কোন দোষ ছিলোনা ।
যা হয়েছে তা নিয়তীতে লিখা ছিলো ! আর নিয়তীর লিখন তো আর কেউ বদলাতে পারেনা ?
আমি অতীতের রেশ ধরে আপনাকে হারাতে চাইনা !”

কথাগুলো বলেই সেহের কান্না শুরু করে দেয় ।আরহাম মুখ তুলে দেখে কান্না করে চোখ মুখ ফুলিয়ে লাল করে ফেলেছে ।আরহাম সেহেরের চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বলে

-“এমন ভাবে কাদঁছো যে আমি মারা গিয়েছি !”

সেহের আরহামের কথা শুনে চেচিঁয়ে বলে

-“এসব বাজে কথা একদম বলবেন না ! আপনার কিছু হলে আমি বাচঁবো না । মরেই যাবো ।”

আরহাম সেহেরের দিকে দু কদম এগিয়ে আসে ।তার কপালে নিজের ঠোঁট ছুঁয়িয়ে বলে

-“তাই বুঝি ? এতটা ভালোবাসো আমায় ?”

-“হুম অনেক বেশি ভালোবাসি ।আপনাকে হারানোর কথা কল্পনা করলেও গাঁ শিউরে উঠে !
ওয়াদা করুন কখনো আমার হাত ছাড়বেন না । এইভাবে সারাটা জীবন নিজের সাথে আগলে রাখবেন !”

আরহাম সেহেরকে কোলে তুলে নিয়ে তার কপালে নিজের কপাল ঠেকিঁয়ে চোখবন্ধ করে বিরবির করে বলে

-“কোন দিন তোমাকে নিজের থেকে দূরে যেতে দিবনা !
সারাটা জীবন এভাবে আগলে রাখবো আমার হুর কে ।”

আরহাম সেহেরকে কলে করে রুমে নিয়ে আসে ।সেহেরের দাল লজ্জায় লাল হয়ে আছে ।আরহাম সেহেরকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসায় ।আরহামের দৃষ্টি সেহেরের দিকে ।সেহের আরহামের দিকে তাকাচ্ছে না !
আরহাম আয়নাতে সেহের লজ্জামাখা মুখ দেখতে পারছে ।আনমনে আরহামের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠে ।আরহাম এক এক করে সেহেরের গহনা খুলতে লাগে ।
আরহামের আঙ্গুলের স্পর্শে সেহের বার বার কেপে উঠছে ।চোখ বন্ধ করে প্রতিটা স্পর্শ অনুভব করছে ।
বুকটা ধকধক করছে ।আরহাম ইচ্ছে করে তাকে ছুয়েঁ দিচ্ছে ।এক পাগল করা অনুভূতি ।আচ্ছা! তাকে এতটা পাগল না করলে কি আরহামের হয় না?
গলার হার খোলার সময় চোখ আটকায় সেহেরের ঘাড়ে কালো তিলে ।মুহূর্তেই আরহাম কন্ট্রোলেস হয়ে যায় ।হুট করে সেহেরের পিঠে তিলে চুমু দিয়ে দেয় ।সেহেরর চোখ বন্ধ করে কেপেঁ উঠে ।আরহাম একের পর এক চুমু দিতে লাগে ।সেহের থরথর করে কাপঁছে।
আরহাম কন্ট্রোলেস হয়ে গেছে ।এক পর্যায় সেহেরের দিকে তাকিয়ে দেখে সেহের চোখ বন্ধ করে আছে ।ঠোঁট জোড়া তিরতির করে কাপছেঁ ।এবার আরহাম পুরোপুরি পাগল হয়ে যায় ।তার মাথা ঝিমঝিম করছে ।সেহেরের সামনে এসে তাকে কুলে তুলে বিছানার দিকে এগিয়ে যায় ।সেহেরকে বিছানায় শুয়িয়ে চারপাশের সাদা পর্দা গুলো মেলে দেয় ।দুজন হারিয়ে যায় ভালোবাসার এক নতুন দুনিয়ায় ।

পর্দার আড়াল থেকে সকালের মিষ্টি আরহামের মুখ ছুয়েঁ দিচ্ছে ।আরহাম বিরত্তি নিয়ে কপাল ভাজ করে ।হঠাৎ ই ঘুমের মাঝে পাশে হাত রাখে ।খালি পেয়ে লাফ দিয়ে উঠে ।তার চোখে মুখে স্পষ্ট ভয়েরচিহ্ন ।এই সকালে সেহের কোথায় যেতে পারে ?
আরহাম তাড়াতাড়ি করে বিছানা থেকে নেমে বাহিরে যেতে নেয় এমন সময় ওয়াশ্রুমের দরজা খুলার শব্দ তার কানে আশে ।সে দিকে তাকিয়ে দেখে সেহের চুল মুছতে মুছতে বের হচ্ছে ।আরহাম সস্থির নিঃশ্বাস নেয় ।সেহের আরহামের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে

-“কি জনাব ! এতো সকাল সকাল ঘুম ভেঙে গেলো ?”

আরহাম কপালের ঘাম মুছতে মুছতে স্বাভাবিক গলায় উত্তর দেয়

– ”না কিছুনা ।ঘুম হয়ে গেছে ।”

আরহামের চেহারার ভয়টা সেহেরের চোখ এড়ায় না ।
সেহের আরহামের পাশে বসে আরহামের গালে হাত রেখে বলতে লাগে

– “ভয় নেই । কোনদিন আপনাকে ছেড়ে যাবোনা ।সব পরিস্থীতিতে আপনার কাছে থাকবো ।”

আরহাম সেহেরের হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে গভীর ভাবে সেখানে চুমু দিয়ে আবেগী স্বরে বলে

-“এবার হারালে আমি সত্যি বাচঁবোনা ।”

– “আপনার কি মনে হয় ? আপনাকে ছাড়া আমি বাচঁবো !”

বলেই সেহের আরহামকে নিজের সাথে জরিয়ে নেয় ।আরহামও শক্ত করে জরিয়ে ধরে ।

সকাল ১০ টা বাজতে চলছে | সবাই ডাইনিং টেবিলে অপেক্ষা করছে আরহাম আর সেহেরের জন্য |কিছুসময় পর আরহাম আর সেহেরকে নামতে দেখে বিনা বেগম মুখ বাকিয়ে আরহামের মায়ের উদ্দেশ্য বলে

– “এসে গেছে নবাবজাদি | ভাবখানা এমন যে বাড়ির বউ না মেয়ে সে । এই মেয়েকে দিয়ে ঘর হবে না ।বুঝিনা তোমরা মা ছেলে এই মেয়ের মাঝে কি দেখেছ ?
এই মেয়ের মধ্যে কি এমন আছে ?
আমি তোমাদের জায়গায় হলে ঘাড়ঁ ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতাম ।”

কথাগুলো আরহাম আর সেহেরের কান এড়ায়নি ।সেহের কথাগুলো শুনে মাথানত করে ধীরে ধীরে আরহামের পিছু পিছু নামতে লাগে ।আরহাম চেয়ারে বসতে বসতে বলে

-“ঠি ক বলেছেন ফুপি বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া উচিত কিন্তু তা সেহেরকে না আপনাকে ।
দুধ কলা দিয়ে কালসাপ পোষার কি দরকার বলুন ? “

আরহামের কথা শুনে বিনা বেগম তেলে বেগুনে জ্বলে যায় ।তিনি রেগে ফুসফুস করতে করতে বলে

-“তোর সাহস দেখছি দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে ? “

-“আপনাকে ভয় পাওয়ার মত কি আছে ?”

-“তুই কি ভুলে যাচ্ছিস তোর রহস্য যে আমার কাছে গোপন আছে ? তা ফাসঁ হলে কি হতে পারো ।রহস্য ফাঁস করলে কি হতে পারে জানা আছে তো ?”

বিনা বেগম কথাগুলো সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ।সেহের ভ্রু কুচঁকিয়ে তাকিয়ে আছে ।আরহাম তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে

-“কি বলবেন ! যে আমি সেহেরের ভাই সাফিনের খুনি ।সেহেরকে মারার চেষ্টা করেছি তাই তো ? “

আরহামের কথা শুনে বিনা বেগম সহ সবাই হতভম্ব হয়ে যায় ।শুধু সেহের ছাড়া ।সবাই সেহেরের দিকে তাকায় সেহেরকে শান্ত আর ভাবলেশহীন ভাবে দেখে সবাই বেশ অবাক !
আরহামের মা আরহামের হাত চেপেঁ ফিসফিস করে বলে

-“তুই কি বলছিস এসব ।”

-“ঠি কই তো বলছি মা ! উনি কি ভেবেছে উনি আমাকে হুমকির উপর হুমকি দিবে আমি চুপ থাকবো ?
না একদম না ।
আমি সেহেরকে তার অতীত জানিয়েছি ।আর সেহেরও আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছে ।
তো এই মহিলার অত্যাচার সয্য করার কোন মানেই হয় না !”

বিনা বেগম সবটা শুনে ভয়ে ঘামতে লাগে ।সেহের বিনা বেগমের দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বাকাঁ হেসে বলে

-“ফুপিজান ভয়ের কোন কারন নেই !
আপনার জন্য সার্প্রাইজ আছে ।খুব ভালো আয়জন করেছি ।”

বিনা বেগম কর্কশ গলায় বলে

-“কি বলতে চাও তুমি ।কিসের আয়জন ?”

-“উফফ ফুপিজান আপনি বড়ই অধৈর্য্য । একটু অপেক্ষা করুন নিজেই দেখতে পাবেন ।”

সেহের আরহামের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ইশারা করে ।আরহাম চোখের ইশারায় বোঝায় সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে !
হঠাৎই কিছুসময় পর বাহির থেকে পুলিশের গাড়ির শব্দ আসে ।বিনা বেগম আতকে উঠে ।পুলিশ বাড়িতে প্রবেশ করে বিনা বেগমের হাতে হ্যান্ডকাফ পরায় ।বিনা বেগম চিল্লাতে চিল্লাতে বলে

-“আপনারা আমাকে কেন এরেস্ট করছেন ? আমি কি করেছি ?”

মহিলা পুলিশ অফিসার কঠোর গলায় বলে

-“আপনার বিরুদ্ধে মাডার কেসের অভিযোগ এসেছে ।আপনি রুশা আবিনকে খুন করেছেন !
সকল প্রমান আপনার বিরুদ্ধে ।”

একথা শুনে সবাই হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে ।রুশার মৃত্যুর সংবাদ শুনে সেহের হতভম্ব হয়ে থাকে ।সাথে সাথে চোখ ভরে আসে ।রুশার তার ক্ষতি করার চেষ্টা করছে কিন্তু শত হলেও রুশা তার বোন ছিলো ।রুশার মৃত্যুর সংবাদটা বেশ আঘাত করেছে সেহেরকে ।
সেহের জানতো পুলিশ আসবে বিনা বেগমকে এরেস্ট করতে কিন্তু তা যে রুশার মাডার কেসে হবে তা জানতো না ।সেহের অশ্রুভরা চোখে স্থব্দ হয়ে দাড়িয়ে থাকে ।আরহাম সেহেরের দিকে তাকায় ।আরহাম ঠি ক বুঝতে পারছে সেহেরের মনের অবস্থা ।সে একহাতে সেহেরকে নিজের সাথে জরিয়ে মাথায় হাত রেখে শান্তনা দেয় সেহের চোখ বন্ধ করে আরহামের বুকে ভর দিয়ে দাড়ায় ।চোখ থেকে পানি ঝরে পড়ে ।আরহামের ঠোঁটে বাকাঁ হাসি ।আরহাম মনে মনে বলে

-“তোমার ক্ষানিকের কষ্ট লাগাটা সয্য করে নিবো ।রুশাকে তো মরতেই হতো ।তোমাকে আঘাত করার দুসাহস করেছে ও । তোমাকে যে আঘাত করবে তার শাস্তি মৃত্যুই হবে ।সে যেই হোক না কেন !”

চলবে……❤️

Plz সবাই সবার মতামত জানাবেন 😊😊😊

ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন ❤️❤️❤️#বিষাক্ত প্রেম ২

Urme prema (sajiana monir)

পার্ট:৩৪

সেহের নিজের রুমের বারান্দায় দাড়িয়ে আছে | কিছুসময় পূর্বেই সন্ধ্যার আযান দিয়েছে |রুশার দাফনকাজ বিকালে শেষ হয়েছে | সেহের রুশার মৃত্যু খবর শুনে সকালেই আরহামের সাথে চলে এসেছে । রুশার মৃত্যু তে বাড়ির সবাই খুব ভেঙে পরেছে | সেহেরের ও খুব কষ্ট হচ্ছে শত হোক রুশা তার বোন ছিলো | তার এই ভাবে মারা যাওয়াটা সে মেনে নিতে পারছে না |
তার উপর বিনা বেগমের শেয কথা গুলো কানে বাজচ্ছে |
তার শেষ কথা গুলো ছিলো যে

– আমি জেলে যাচ্ছি তো কি হয়েছে ? সে ফিরবে আবার আসবে তোদের ধ্বংস করতে | তার প্রতিশোধ নিতে আসবে | আগের বার জানে মারেনি কিন্তু এবার কাওকে ছাড়বে না | আরহাম তোর মৃত্যু নিকটে |

কথাগুলো ভাবতেই সেহেরের শরীর কাটা দিয়ে উঠে |সত্যিই কি আরহামের কোনো ক্ষতি করবে ? না না সএ আরহামের কোনো ক্ষতি হতে দিবে না !
যে ভাবেই হোক সে আরহামকে সেফ রাখবে | দরকার পরে তো সারাদিন নিজের চোখের সামনে রাখবে ,তার পিছু পিছু ঘুরবে তবুও তাকে একা ছাড়বে না ।সেহেরের মনে প্রচন্ড ভয় চেপে বসেছে । কথাগুলো ভাবার সময় বার বার তার চোখ বিজে আসছিলো ।টপটপ করে চোখ থেকে পানি ।ঝোড়ছিলো ।

হঠাৎ ই কেও পিছন থেকে তার কমর জড়িয়ে ধরে | সেহের খুব ভালো করে জানে এটা কে ,তার আরহাম!
আরহাম তাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে গালের সাথে গাল মিশিয়ে আদুরে গলায় বলে

– কি হয়েছে আমার বউটার? চোখে ভয় আর জল কেন?

সেহের আরহামের দিকে ঘুরে তাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে কান্না করতে লাগে | কোন ভাবেই তার কান্না থামছে না | আরহামের বুকে মাথা রেখে কান্না করেই যাচ্ছে | আরহাম সেহেরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল

– কি হয়েছে ? কেউ কিছু বলেছে? এভাবে কেন কান্না করছো!

সেহের বুকের মাঝে মাথা রেখে কান্না করতে করতে বলে

– আমি আপনাকে হারাতে পারবো না ,আমার খুব ভয় হচ্ছে কেন জানো মনে হচ্ছে আমি আপনাকে হারিয়ে ফেলবো !
আমি আপনাকে হারাতে পারবো না | এখন থেকে চব্বিশঘণ্টা আমি আপনার আশেপাশে থাকবো | একমূহুর্তের জন্য ও চোখের আড়াল করবো না | আ আ আপনিও বাড়ি থেকে বের হবেন না ! হ্যা হ্যা এটাই ঠি ক হবে |আপনি আমার চোখের সামনে থাকলে কোনো ক্ষতি হবেনা!

সেহের কথাগুলো বলে পাগলের মত বিলাপ করছিল |

আরহাম সেহেরের দুগাল ধরে তার মুখ উচুঁ করে তার চোখের জল মুছে দিতে দিতে বলে

– সেহের ভয়ের কোন কারণ নেই ,আমার কিছু হবেনা |

সেহের কান্না জড়িত কন্ঠে বলল

– উনি কারো ফিরে আসার কথা বলছিল | যদি তারা আপনার উপর আক্রমন করে ? উনি জেলে যারার আগে বার বার বলছিল যে আপনাকে……

সেহের নিজের কথা শেষ করতে পারলো না | তার গলা ধরে আসছে | আরহাম তা বুঝতে পেরে সেহেরকে বিছানায় বসিয়ে তার সামনে হাটুঁ গেড়ে বসে | সেহেরের দু হাতে চোখ বন্ধ করে চুমু দিয়ে বলে

– জানো সেহের আমার সবচেয়ে বড় শক্তি কি? তুমি !
তুমি আমার সবচেয়ে বড় শক্তি | তুমি পাশে থাকলে আমি পুরো দুনিয়ার সাথে লড়াই করতে পারবো |
আর তুমিই ভেঙে পরলে কি করে হবে ?
ট্রাস্ট মি , আমার কিছু হবে না !

আরহামের কথা গুলো শুনে সেহের মাথা তুলে তাকায় | কাদো কাদো গলায় বলে

– সত্যি তো ? কিছু হবে না তো

আরহাম মুচকি হেসে বলে

– একদম , আচ্ছা তুমি কি জানো ? তোমার হাসি আমার কাছে কতটা ইম্পরট্যান্ট !

সেহের আরহামের কথায় তার দিকে ভ্রু কুচকিয়ে তাকিয়ে না বোধক মাথা নাড়ে |
আরহাম সেহেরের গাল টেনে বলতে লাগে

– তোমার এই হাসিতে অদ্ভুত এক শক্তি আছে যা আমার সব ক্লান্তি হতাশা কষ্ট ভুলিয়ে দেয় !
শত কুটি চেহারায় মাঝে একমাত্র তোমার এই হাসিমাখা মুখ আমাকে শান্তি দেয়। পরম শান্তি |

সেহের আরহামের কথা শুনে হেসে ফেলে আরহাম মুগ্ধতার সাথে সেহেরের দিকে তাকিয়ে থাকে ।এই হাসিটার জন্য আরহাম সব করতে পারবে ।সে নিচের থেকে উঠে সেহেরকে শক্ত করে নিজের বুকের সাথে জরিয়ে ধরে বলে

– ভালোবাসি আমার হুর!

সেহের প্রতিউত্তরে আরহামের বুকে নিজের ভালোবাসার পরশে ভরিয়ে দেয় ।

সকালে নাস্তা শেষে সেহের মনিশার রুমে যায় । মনিশা সেহেরকে দেখে ও না দেখার ভান করে আছে ।সেহের রুমের ভিতর প্রবেশ করে মনিশার পাশে দাড়ায় ।মনিশা ভ্রু কুচকিয়ে সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে

– অনিশা রুমে নেই বাহিরে গেছে !

সেহের আমতা আমতা করে বলে

– ভাবী আমি তোমার সাথে কথা বলতে এসেছি

– আমার সাথে আবার কিসের কথা

মনিশা বিছানা গুজগাজ করতে করতে বলে ।সেহের গলা ঝেড়ে বলতে শুরু করে

– ভাবী পাচঁ বছর আগে যা হয়েছে তা ভুলে কি সব নতুন করে শুরু করা যায় না ? যা হয়েছে তাতে তো উনার কোনো দোষ ছিলো না ! তাকে কেন এভাবে শাস্তি দিচ্ছ ।
একবার একটু ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখ তোমার মনে হয় উনি ভাইয়া কে খুন করতে পারে ?

মনিশা এতোটা সময় চুপ করে সেহেরের কথা শুনছিলো ।সেহেরের কথা শেষ হতেই ।মনিশা সেহেরের দিকে ফিরে তাচ্ছিল্যের হেসে বলে

– ও তুমি সব জেনে গেছো ? যাক ভালো হয়েছে! তো তোমার স্বামী তোমাকে এসব বলেছে ।
সেহের আমি ভেবেছি তুমি হইতো তোমার ভাইকে ভালোবাসো কিন্তু আমি ভুল ছিলাম । সত্যি বলতে তোমার কাছে সাফিনের কোনো মূল্য নেই । তোমরা সবাই সাফিনকে ভুলে গেছো! তাই তো সাফিনের খুনিকে সাপোর্ট করছো ।

– ভাবী আরহাম খুনি নয় ! ভাইয়া কে স্যাম খুন করেছে ।
আরহাম নির্দোষ ।এ ভাবে তুমি বার বার তাকে দোষারোপ করোনা ।সত্যিটা জানার চেষ্টা করো ।তুমি তোমার ভাই কে এভাবে কস্ট দিওনা ।

– সে আমার ভাই না আমার কাছে আমার স্বামীর খুনি সে !
আর আমিও তোমার মত অকৃতঙ্গ মানুষের সাথে কথা বলতে চাই না ।প্লিজ আমার রুম থেকে চলে যাও ।

সেহের আর কোনো কথা না বলে রুম থেকে চলে আসে ।সেহের বের হতেই মনিশা দরজা বন্ধ করে কান্না করতে লাগে ।

অন্যদিকে আরহাম বাহির থেকে ফিরে এসে সেহেরকে খুজঁতে খুজঁতে এদিকে আসে দরজার বাহির থেকে মনিশা আর সেহেরের সব কথা শুনে ফেলে । সেহের বের হওয়ার আগেই আরহাম রুমে চলে যায় ।
সেহের মন খারাপ করে রুমে ডুকে ।আরহাম তা দেখতেই মুখে হাসির রেখা টেনে বলে

– কোথায় ছিলে? কখন থেকে খুঁজচ্ছি !

সেহের আমতা আমতা করে বলে

– নিচে ছিলাম ।কেন কিছু প্রয়োজন?

– হুম তোমাকে !

– আমাকে? কিন্তু কেন?

আরহাম কোন উত্তর না দিয়ে সেহেরের হাত ধরে তাকে আয়নার সামনে দাড় করিয়ে গলায় একটা পেন্ডেন পরিয়ে দেয় ।সেহের অবাক চোখে আরহামের দিকে তাকায় !
আরহাম সেহেরকে নিজের দিকে ফিরিয়ে কপালে গভীর চুমু দিয়ে বলে

– এটা কোনো সাধারণ পেন্ডেন না । এটা তোমার সেফটির জন্য ।সময় হলে এটার কাজ তুমি জেনে যাবে !

সেহের গোল গোল চোখ করে আরহামের দিকে তাকিয়ে থাকে !

চলবে …..❤️

প্লিজ সবাই সবার মতামত জানাবেন 😊😊😊

ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন ❤️❤️❤️#বিষাক্ত প্রেম ২

Urme prema (sajiana monir)

পার্ট:৩৫ (শেষ পর্ব )

( অর্ধেক ডিলিট হয়ে গিয়েছিল । মাত্র লিখা শেষ হলো তাই পোস্ট করতে লেট হয়েছে । সরি ! )

রুশার মৃত্যুর ১ মাস হয়ে গেছে ।আস্তে আস্তে সব স্বাভাবিক হয়েছে ।আজ কাল আরহাম কে বড্ড অচেনা লাগে সেহেরের ।সব সময় ভয় চিন্তা তাকে ঘিরে থাকে সেহের বেশ কয়েকবার এর কারণ জিগাসা করেছে কিন্তু আরহাম প্রতিবারই তা ইগ্নোর করে গেছে !
আরহামের এই উদাসীনতা সেহেরকে বেশ ভাবায় |
এভাবে আরও এক সাপ্তাহ কেটে যায় !
কিন্তু আরহামের কোনো পরির্বতন নেই ।তাই সেহের সিদ্ধান্ত নেয় আরহাম বাড়ি ফিরতেই তার সাথে কথা বলে সব কিছু ঠি ক করে নিবে ।
রাত ১১:৩০ আরহাম এখনো বাড়ি ফিরেনি ।সেহের বেশ ভয় হচ্ছে ,আবার কোনো বিপদ হয়নি তো ।
কিছুসময় পরই গাড়ি শব্দ তার কানে আসে ।সেহের তাড়াতাড়ি করে নিচে যায় ।সেহের দেখতে পায় আরহাম ঢুলতে ঢুলতে আসছে ।নিশ্চিত ড্রিংকস করেছে ।সেহেরের মাথায় রাগ চেপে বসে , কিন্তু এই মুহূর্তে রাগ করলে চলবে না ।ঠান্ডা মাথায় রাখতে হবে ।সেহের মাথা ঠান্ডা আরহামের দিকে এগিয়ে যায় ।আরহামে ধরতে নেয় এমন সময়ই আরহাম তার হাত ঝাড়ি দিয়ে ফেলে দেয় ।মাতাল কন্ঠে বলে

– আমার থেকে দূরে থাক ! আজ যত সমস্যা সব তোমার জন্য ।তোমার জন্য আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংসের পথে!
সব কিছু তোমার জন্য হচ্ছে ।আমি তোমার চেহারা দেখতে চাইনা ।

সেহের আরহামের কথায় হা হয়ে আছে সে কিছুই বুজতে পারছে না আরহাম কেন এমন করছে ? এটা তো নেশার জন্য হতে পারে না।আরহাম যত নেশার ঘোরেই থাকুক না কেন সে কখনো সেহেরের সাথে এভাবে কথা বলবে না ।
সেহেরের চোখ থেকে টপটপ করে পানি ঝোড়ছে ।আরহাম অন্যদিকে তাকিয়ে বলে

– আমার তোমার সাথে এক ছাদের নিচে থাকা সম্ভব না !
আমি তোমার থেকে মুক্তি চাই ।

সেহের শীতল কন্ঠে বলে

– আমি কি করেছি আরহাম ?
আমার সাথে কেন এমন করছেন !

– সব তো তোমারই জন্য হচ্ছে না তুমি আমার জীবনে থাকতে না এসব হতো !
আমি শুধু মুক্তি চাই ব্যস !

সেহের আরহামের পা জরিয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলে

– প্লিজ আরহাম আমার সাথে এমন করবেন না! আমি আপনাকে ছাড়া বাচঁবো না !

আরহাম শক্ত গলায় বলে

– তোমার সাথে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না !
এই নেও ডিভোর্স পেপারস সাইন করে দিয়ো ।

আরহাম সেহেরের হাতে ডিভোর্স পেপারস দিয়ে চলে যায় ।সেহের মূর্তির মত পেপারস হাতে নিয়ে বসে থাকে ।দূর থেকে কারো ছায়া সরে যায় !

সেহের গেস্ট রুমে বসে আছে হাতে ডিভোর্স পেপারস চোখ থেকে অনবরত পানি ঝোড়ছে।সেহের কোনো ভাবেই আরহামের এমন ব্যবহার মেনে নিতে পারছে না কেন জানো মনে হচ্ছে সব মিথ্যা ।হ্ঠাৎ ই ফোনটা বেজে উঠে সেহের আড়চোখে তাকিয়ে দেখে ফোনে মেসেজ এসেছে ।
মেসেজটি চেক করে তাড়াতাড়ি ডিভোর্স পেপারস হাতে নেয় !
পেপারস গুলোর ভিতর একটা চিঠি পায় ,সেহের তাড়াতাড়ি করে চিঠিটা পড়তে লাগে ।
পড়া শেষ করেই সেহেরের ঠোঁটে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠে ।ছলছল চোখজোড়া উল্লাসে ভরে উঠে !
সকাল হতেই সেহের নিজের ব্যাগ নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে যায় ।যাওয়ার সময় সবার আড়ালে আরহামের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দেয় চোখজোড়া তখনো জলে টলটল করছে ।আরহামের ও একই অশ্রুজল চোখে তাকিয়ে থাকে !

আজ সাতদিন সেহের বাবার বাড়িতে এসেছে ,এই সাতটাদিন তার কি ভাবে কেটেছে একমাত্র সে জানে ।আরহামহীন জীবন খুবই বেদনাময়। এসব ভাবতে ভাবতে- ই তার ফোনের টন বেজে উঠে । সেহের নামটা দেখেই মুচকি হাসে । মেসেজের উত্তর দিয়ে ভার্সিটির জন্য রেডি হতে চলে যায় ।
নিলাদ্রি আফিয়ার সাথে ভার্সিটিতে আসে । ভার্সিটির কিছু দূরে দাড়িয়ে থাকা কালো গাড়িটির দিকে তাকিয়ে মলিন হাসি দেয় । আজ তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন দিন না জানি আজ জিবন কি মোড় নিবে । খুব ভয় হচ্ছে কিন্তু তাকে পারতে হবে । সবার জন্য তাকে এটা করতেই হবে ।

ক্লাস শেষ করে সেহের বাহিরে আসতেই আরহামকে দেখতে পায় । সেহের সামান্য ভ্রু কুচঁকিয়ে তাকায় । আরহামের ঠোঁটে বড় হাসি হাতে সাদা গোলাপের তোড়া । সেহের বাকা হেসে সামনের দিকে পা বাড়ায় । আরহামের সামনে দাড়িয়ে বলে

– কি হলো আপনি এখানে? কিছু দরকার ছিলো? ডিভোর্স পেপারস সাইন করে দিয়েছি । বিকেলে পাঠিয়ে দিবো ।

সেহের কথা শেষ করতেই আরহাম সেহেরের হাত ধরে বলতে লাগে

– সরি জানেমান সেদিনের ব্যবহারের জন্য। আসলে সেদিন ড্রাংক ছিলাম তাই কি বলতে কি বলে ফেলেছি ।তুমি তো জানো আমার নামে আবার মিথ্যা কেস হচ্ছে এরজন্য রাজনীতি ক্যারিয়ারে কতটা ক্ষতি হচ্ছে টেনশনে কি বলতে কি বলে ফেলেছি । সরি জানেমান !

সেহের এতসময় দরে চুপ ছিলো । আরহামের কথা শেষ হতেই কঠোর গলায় বলে

– একটা সরি কি সব কিছুর সমাধান ? আমি যে কষ্ট পেয়েছি তা ?

আরহাম বিরক্তি নিয়ে বলে

– উফ সেহের সরি বলেছি তো নাকি? এখন আমার সাথে চলো । আমার কাছে এতো সময় নেই !

– আপনার সাথে যাবো মানে! কথায় যাবো?
আমি আপনার সাথে কথাও যাবোনা ! না মানে একদম না ।

সেহেরের কথা শেষ হবার আগেই আরহাম তাকে টেনে নিয়ে যেতে লাগে ।টানাটানির এক পর্যায় সেহেরের ব্যাগ নিচে পরে যায় । সেহের গাড়িতে বসে ভয়ে গলার লকেটটা চেপে ধরে । গাড়ি শহরের বাহিরের দিকে যাচ্ছে । সেহের ভয়ে ভয়ে জিগাসা করে

– আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আরহাম ! কি হলো কথা বলছেন না কেন ? বলুন ।

আরহামের কোনো কথা বলছে না তার ঠোঁটে শয়তানি হাসি ।

আরহাম সেহেরকে টানতে গাড়ি থেকে নামায় । সেহের সামনে তাকিয়ে দেখে একটা পুরানো বাড়ি । আরহাম তাকে টেনে ভিতরে নিয়ে ধাক্কা দিয়ে চেয়ারের উপর ফেলে । চেয়ারের সাথে লেগে কপাল কিছুটা কেটে যায় । সেহের কপালে হাত দিয়ে সামনে তাকায় । সামনে দশ বারো জন লোক দাড়িয়ে আছে আর তাদের মাঝে আরহাম ঠোঁটে শয়তানি হাসি । বেশ শব্দ করে হাসছে । কিছু সময় পর হাসি থামিয়ে বলে

– ওয়েলকাম টু মাই ওয়ার্ল্ড ভাবীজি !
তুমি কি ভেবেছো আমি আরহাম? তোমার স্বামী !
হু হা হা আমি স্যাম ।
তোমরা কি ভেবেছো আমি মারা গিয়েছি । এত সহজ ? সেদিন বিনা বেগম আমাকে বাচিঁয়েছে।
তোমরা বেছে আছো আমি কি করে মরি ।
এখনো তো আমার প্রতিশোধ বাকী আরহামকে শেষ করবো তোমাকে শেষ করবো কত কাজ বাকী ।

সেহের রাগী গলায় বলে

– তুমিই আমার ভাই কে মারেছো । সেদিন আমার উপর আক্রমণ করেছো আমাকে ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়েছো !
কতটা নিচ তুমি নিজের স্বার্তের জন্য নিজের ভাইকে ছাড় দাওনি ছিঃ ।

– আরহাম আমার ভাই না । আমার কেউ নেই । এমকি ঐ বিনা বেগম ও আমার আপন না । সবাই আমার কাছে আমার গেমের মহরা ।হ্যা পাঁচ বছর আগে সেদিন আমি তোকে মারার চেষ্টা করেছি ,তোর ভাইকে মেরেছি ! আর এই সব করেছি আরহামের থেকে প্রতিশোধ নিতে ।
আজ ও তোকে মেরে আরহামকে ফাসাবো ।সবাই জানবে আরহাম তার বউকে খুন করেছে ।তুই জানিস তোর স্বামী আমার কথায় তোকে ডিবোর্স পেপারস দিয়েছে আমি তাকে বাদ্ধ করেছি ।আমি বলেছি যদি তোকে না ছাড়ে তাহলে মনিশাকে আর তার মেয়ে কি জানো নাম ? ও হ্যা ‌অনিশা ! ওদের দুজনকে আমি খুন করবো । আর আমার ভয়েই সব করেছে ।আরহামের বাড়ির প্রতিটা কোনায় সিসি ক্যামেরা লাগানো ।কে কি করছে সব আপডেট সেকেন্ডে সেকেন্ডে আমার কাছে আসে । ঐ বাড়িতে আমার লোক রয়েছে যে প্রতিটা আপডেট দিচ্ছে !
আজ তোর জীবনের শেষদিন সেহের ঐ বার বাচঁলেও এবার বাচঁতে পারবে না ।এবার আরহাম তোকে বাচাঁতে পারবেনা ।কারণ সে নিজেই পুরাপুরি আমার জালে বাধাঁ পড়েছে ।সে কোনদিন তোকে খুঁজে পাবেনা ।তোর মৃত্যুর পর পুলিশ আরহামকে তোর খুনের জন্য ধরবে । এক ডিলে দুই পাখি মরবে ।উফফফ ভাবতেই শান্তি লাগছে !

স্যাম জোরে শব্দ করে হাসতে লাগে ।তার কথায় সেহের ও শব্দ করে হাসতে লাগে ।স্যাম হাসি বন্ধ করে সুক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে !
সেহের চেয়ারের উপর পায়ে পা তুলে আরামে বসে হাসতে হাসতে বলে

– ও হ্যালো ! তোর মনে হচ্ছে তুই আমাকে এখানে এনেছিস ? উহু । আমি চেয়েছি বলে তুই আনতে পেরেছিস । আরহাম খাঁনের মত দেখতে হলেই আরহাম খাঁন হওয়া যায় না !

স্যাম সেহেরের কথায় থতমত খেয়ে যায় । তার পর নিজেকে সামলিয়ে বাকাঁ হেসে বলে

– কি যা তা বকছিস ,মাথা কি পুরাপুরি গেছে নাকি ?

সেহের চেয়ারে ভালো করে হেলান দিয়ে কপালের চোটে হাত বুলাতে বুলাতে বাকাঁ হেসে বলতে লাগে

– আমার মাথা একদম ঠি ক আছে কিন্তু এখন আমি যা বলবো তা শুনে তোর মাথা শিয়র খারাপ হবে ।
ওয়েট ,আমি তোকে এক্সপ্লেইন করছি !
আরহাম আরো এক মাস আগেই জানতে পেরেছে তুই বেচেঁ আছিস আর দেশে ফিরেছিস । তাই সে শতর্ক হয়ে গিয়েছিল । এই একমাসে তুই আরহামের নাম করে যেই যেই অপরাধ করেছিস তার পর পুরাপুরি শিয়র হয়ে যায় তুই আমাদের আশেপাশে আছিস। তোকে ধরা অসম্ভব ছিল তাই কিছু করতে পারছিলো না ! বাট থেংক্স টু ইউ ,তোর মূর্খতার জন্য আমরা সেই সুযোগটা পেয়েছি । তুই আরহামকে ব্লাকমেইল করে আমাকে ডিভোর্স দিতে বলেছিস । তোর কি মনে হয় আরহাম তা করেছে ? উহু ! সেই ডিভোর্স পেপারস নকল ছিলো । আর সেদিন রাতে আরহাম যা করেছে সব আরহামের সাজানো নাটক ছিলো । সত্যি বলতে প্রথমে আমিও তাই ভেবেছিলাম ।কিন্তু মনে কোথাও খচখচ করছিলো । পরে ডিভোর্স পেপারসের ভিতর আরহামের চিঠি পেয়ে সবটা ক্লিয়ার হয় ।
আরহাম জানতো তুই আমাদের উপর নজর রাখছিস তাই আমরাও তোকে বুজতে না দিয়ে নিজেদের প্লান মত কাজ করি ।
আমরা জানতাম তুই এমন কিছুই করবি ,কারণ কুকুরের লেজ কখনো সোজা হয় না।
আরহাম আগের থেকেই জেনে গেছে তুই আজ এমন কিছু করবি তাই আমরা সব আগের থেকে প্লান করে রাখি । আর তুই আমাদের প্লানে ফেসে গেছিস !

আচ্ছা ,তোকে মাফিয়া কে বানিয়েছে ? মানে কি দেখে ?
তোর মত হ্যাবলাকে কেউ কি করে মাফিয়া বানাতে পারে ?

তোর হাতে সাদা গোলাপ আর মুখে জানেমান শুনেই আমি শিয়র হয়ে গিয়েছিলাম তুই স্যাম ।আরহামের মত ড্রেসাপ করলেই আরহাম হওয়া যায় না রে পাগলা !
তোর সময় শেষ ,তোর পাপের গড়া পূর্ন হয়েছে আবার শাস্তির পালা ।
আরহাম আসছে । ঘড়ির কাটা উলটা ঘুরতে শুরু করেছে টিক- টক ,টিক- টক …

সেহের কথা শেষ করার আগেই স্যাম তার দিকে তেড়ে আসে । সেহেরের চুল চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে

– আমি হারবো না সেহের ! আমি মরার আগে তোকে মারবো । তোর মৃত্যু আরহামের সবচেয়ে বড় পরাজয় ।

বলেই সেহেরের মাথায় পিস্তল চেপে ধরে । সেহের মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করে নেয় ।শান্ত গলায় বলে

– এই মৃত্যুতে আমার আফসোস নেই ।

যেই স্যাম সেহের মাথায় গুলি করবে এমন সময়ই বাহিরে থেকে গাড়ির শব্দ আসে । স্যামের চেলা এসে হাপাঁতে হাপাঁতে বলে

– বস পুরো বাড়ি পুলিশ আর আরহামের লোকেরা ঘিরে ফেলেছে । বের হবার কোন রাস্তা নেই !

স্যাম পিস্তলটা সেহেরের মাথায় ঠেকিয়ে বাকাঁ হেসে বলে ।
– আমাদের কিছু হবে না ,পুলিশ আমাদের কিছু করতে পারবে না । কারণ আরহামের প্রাণভোমরা আমাদের কাছে !
আবার সেহের আমাদের রক্ষাকবজ হবে ।

সেহের চেচিয়ে বলে

– আমি এমন কিছু করবো না স্যাম !

– তোকে কিছু করতে হবে না । যা করবো আমরা করবো ।

বলেই সেহেরের মুখে আটকিয়ে দেয় । সেহের হাত ছুড়াছুড়ি করতে লাগে কিন্তু এতে বিশেষ লাভ হয় না ।
স্যাম সেহেরের মাথায় পিস্তল ধরে বাহিরে আসে । সেহেরের মুক্তি পণ চায় নিজের মুক্তি । আরহাম ভয়ে তাড়াতাড়ি পুলিশদের পিস্তল নামিয়ে ফেলতে বলে ।
আরহাম অনুরোধের স্বরে বলে

– আমি তোর কথামত সব করেছি ,প্লিজ তুই সেহেরকে ছেড়ে দে ।

স্যাম গাড়ির কাছে এসে সেহেরের মাথায় পিস্তল শক্ত করে ধরে বলে

– এবারো তুই হেরে গেলি আরহাম , আমি আবারো জিতে গেলাম ।
গুড বাই সেহের !

সেহের শেষ বারের মত আরহামে চোখ জুড়িয়ে দেখে চোখ বন্ধ করে নেয় । চোখ বেয়ে পানি ঝড়ে পড়ে ।
হ্ঠাৎ বিকট আওয়াজ হয় তারপর চার দিক একদম শব্দহীন হয়ে যায় । সেহের চোখ বন্ধ থাকা অবস্থায় কাপঁছে ।খুব চিনা আওয়াজ কানে আসতেই সেহের আস্তে আস্তে চোখের পাতা গুলো খুলে । সামনে আরহাম দাড়িয়ে আছে চোখে মুখে আতংক নিয়ে। পাশ থেকে স্যাম মাটিতে ঢলে পরে । গুলিটা কেও পিছন থেকে করেছে সেহের পিছনে তাকিয়ে দেখে মনিশার হাতে পিস্তল । মনিশার চোখে পানি ঠোটে তৃপ্তির হাসি ।
মনিশা কান্না করতে করতে বলে

– আমি পেরেছি সাফিন ! আমি পেরেছি । আমি তোমার খুনিকে শাস্তি দিতে পারেছি ।

গুলিটা স্যামের পায়ে লেগেছে । স্যাম এক হাতে পা ধরে অন্য হাতে পিস্তল নিয়ে যেই সেহেরকে গুলি করবে তার আগেই আরহাম স্যামকে গুলি করে তার বুক ঝাজড়া করে ফেলে ।
স্যাম মাটিতে লুটিয়ে পরে তার চোখ বন্ধ হয়ে যায় । নিজের শেষ নিশ্বাস নিচ্ছে । আরহাম স্যামের কাছে এসে তার গলায় পাড়া দিয়ে বলে

– ভুল মানুষের সাথে পাংগা নিয়েছিস । বলেছিল তোর মৃত্যু আমার হাতেই হবে । গুড বাই।

আরহাম আবার একের পর এক গুলি করতে লাগে ।
স্যাম নিজের শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে ।

আরহাম সেহেরকে জরিয়ে ধরে । সেহেরর আরহামের বুকে মাথা রেখে সস্থির নিশ্বাস নেয় । এ যেনো পরম শান্তির স্থান । সেহের নিজের পুরো গায়ের ভর আরহামের বুকের উপর ছেড়ে দেয় । কিছু সময় পর কারো আওয়াজে দুজন কিছুটা দূরে সরে যায় । আরহাম তখনো সেহেরের হাত ধরে ।
পিছনে তাকিয়ে দেখে মনিশা হাত জোড় করে কান্না করতে করতে বলে

– ভাই আমাকে ক্ষমা করে দাও । আমি যা করেছি তার জন্য সারাজীবন ক্ষমা চাইলেও কম হবে ।আমাকে ক্ষমা করে দাও ভাই । আমার থেকে অনেক বড় পাপ হয়ে গেছে ।

আরহাম মনিশার চোখের পানি মুছে তাকে আলতো হাতে জরিয়ে ধরে বলে

– এতে তোর কোন দোষ ছিল না । তোকে যা দেখানো হয়েছে তুই তা বিশ্বাস করেছিস । যা হয়েছে তা ভুলে যা নতুন করে সব শুরু কর ।তুই আমাদের কাছে এখনো আগের মনি । বাসায় চল বাবা মা অপেক্ষা করছে।

মনিশা আরহামে আবার জরিয়ে ধরে ।সেহের চোখ জুড়িয়ে দুই ভাই বোনের ভালোবাসা দেখছে ।
পুলিশ অফিসার তাদের কাছে আসতেই সেহের নিজের গলার লকেটটা অফিসারের হাতে দিয়ে বলে

– এখনে এই ক্যামেরায় স্যামের সব অপরাধের কথা রেকর্ড করা আছে !

– ভাগ্যিস আপনি লকেটটা পরেছেন । এই লকেটের জিপিএস ট্যাঁস করে আমরা আপনাকে বের করেছি । স্যাম ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল । আজ আপনার জন্য আমরা ধরতে পারেছি । মানতে হবে আপনি খুব সাহসী ।

আরহাম আলতো করে সেহেরকে জরিয়ে ধরে তার দিকে তাকিয়ে বলে

– সত্যি অফিসার! আজ সেহেরকে ছাড়া এসব সম্ভব ছিলনা । আপনারা বলতেই আমি প্রথমে সরাসরি না করে দিয়েছি কারন আমি চাইনি সেহের কোনো বিপদে পড়ুক । সেহেরই নিজের থেকে সাহস করে এগিয়ে এসেছে ।

অফিসার আবার বলল

– মেম আপনি খুব সাহসী । আপনার সাহস আর আত্ববিশ্বাসের জন্যিই আমরা আজ স্যামকে ধরতে পেরেছি ।

সেহের মুচকি হেসে আরহামের দিকে তাকিয়ে বলে

– আমার সাহস আর আত্মবিশ্বাস আমার স্বামী । আমি জানতাম ঠি ক সময় উনি পৌছিয়ে যাবে । উনি থাকতে আমার কোনো ক্ষতি হবে না । আর আমাকে যে করতেই হতো ভাইয়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার ছিল ।

মনিশা সেহেরের কাছে এসে তার হাত ধরে বলে

– নিজের রাগে জিদের বসে তোমাকে অনেক অপমান করেছি । আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দেও ।

– ভাবী তুমি কেন ক্ষমা চাইছো । এখানে তোমার কোনো দোষ নেই । পরিস্থীতিটাই এমন ছিলো ।

মনিশা মুচকি হেসে সেহেরকে জরিয়ে ধরে ।

__________________________

জানুয়ারির শেষ সময় এখনো শীত কাটেনি । সেহের বারান্দায় দাড়িয়ে আছে । রুমে কেউ প্রবেশ করেছে সে দিকে তার কোনো খেয়াল নেই । আরহাম দরজা লক করে বারান্দার দিকে পা বাড়ায় । সেহেরকে পেছন থেকে গভীর ভাবে জরিয়ে ধরে । সেহেরের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই । আরহাম তা বুঝতে পেরে সেহেরের কানের কাছে ফিসফিস আওয়াজে বলে

– কি হয়েছে আজ তো খুশি হওয়ার কথা । এখনো এতো দুরত্ব কেন ?

সেহের আরহামের কথার উত্তর না দিয়ে । আরহামের দিকে ফিরে তাকে প্রশ্ন করে

– আপনি আমাকে কতটা ভালোবেন ?

– সেহের এটা কেমন প্রশ্ন ?
এর উত্তর তুমি জানা ।

সেহের আবারো কোনো প্রতিক্রিয়া না করে প্রশ্ন করে

– আমার জন্য কি কি করতে পারবেন

এবার আরহামের সোজাসুজি উত্তর

– সব কিছু পারবো । তুমি যা বলবে সব পারবো !

– এই দেশ ছাড়তে পারবে সারাজীবনের জন্য ?

আরহাম কিছুসময় চুপ থেকে বলে
– হুম পারবো !

আবার সেহের একটি বড় নিশ্বাস নিয়ে বলে

– আরহাম আমি এখন যা বলবো প্রতিটা কথা প্লিজ বুঝার চেষ্টা করবেন । আজ আমরা দুজন আছি কাল আমাদের সন্তান আসবে আমি চাই না তার জীবনে কোনো প্রকার বিপদ আসুক ।আমি চাই আপনি এইসব খুন খারাপি ছেড়ে দেন । আমি একটা শান্তির জীবন চাই । এই অনিশ্চিত জীবন আমার চাই না । আমি প্রতিদিন আপনাকে হারানোর ভয়ে আমি বাচঁতে পারবো না । আমি ভয় ছাড়া জীবন চাই আর এসব এ দেশে থাকলে কোনো দিন সম্ভব হবে না ।

কথাগুলো শেষ করে সেহের চুপ করে থাকে । আরহাম নিরবতা ভেঙে বলে

– কোথায় যেতে চাও ?

– যেখানে আপনার সুবিধা হবে ।

– আচ্ছা আমি কালই বাবার সাথে কথা বলে সব ঠি ক করছি ।

সেহের অপরাধী গলায় বলে

– আপনি কি আমার চাপে বা রেগে সিদ্ধান্তটা নিচ্ছেন ?

আরহাম সেহেরের দিকে দু কদম এগিয়ে এসে সেহেরের কপালে ঠোঁট ছুঁয়িয়ে বলে

– একদম না ! আমিও চাই তুমি সেফ থাকো । তোমার সেফটির জন্য সব পারবো । নিজের জানও হাজির ।

সেহের মুগ্ধ চোখে আরহামের দিকে তাকিয়ে থাকে কেউ কতটা ভালোবাসলে এতটা কারো জন্য করতে পারে ? শুধু তা ভাবতে লাগে ।

আরহামের পরিবারের সবাই তাদের এই সিদ্ধন্তকে সমর্থন করে । আরহাম নির্বাচনের পর পুরো পরিবার সহ কানাডা সেটেল হয়ে যায় ।

____________________

দুই বছর পর—

সেহের মুচকি হেসে নিজের ডাইরিটা অফ করে । সামনে বসা লিচির দিকে তাকায় । লিচি এখনো হা করে আছে । সেহেরের ডাকাডাকির কিছু সময় পর তার ধ্যান ভাঙে ।
লিচি চেচিয়ে বলে

– ও মাই গড ! মানে কেউ কাউকে এতটা ভালোবাসতে পারে ? মানে কারো প্রেম কি করে এতটা ভয়ংকর হতে পারে ? যেই প্রেমের জন্য পুরো দুনিয়ার সাথে লড়ে যায় । সত্যি তোমার গল্পের আরহাম খুব প্রেমিক । যার প্রেম বিষাক্ত প্রেম !
আচ্ছা এমন প্রেমিক কি গল্প উপন্যাস ছাড়া আছে ?

সেহের ডাইরিটা ব্যাগে রাখতে রাখতে বলে

– উমম হয়তো আছে !

রিচি গদগদ করে বলে

– কথায় ? কথায়?? বলো না !

– আমার বাড়িতে !

রিচি গোলগোল চোখ করে তাকিয়ে চিৎকার করে বলে

– সত্যি????

সেহের রিচির কথায় ফিক করে হেসে দিয়ে বলে

– আ’ম জোকিং ইয়ার !

রিচি হেসে বলে

– তাই তো ! তোমার বাড়িতে কি করে থাকতে পারে তোমার বাড়িতে তো থাকে আরহাম ভাই যে গল্পের আরহাম থেকে একদম বিপরীত !
গল্পের আরহাম রাগি জিদী এরোগেন্ট ডেঞ্জারাস আর আমাদের আরহাম ভাইয়া ? সে তো সুইট কিউট একদম চকলেট বয় ।

শেষের কথাটা রিচি চোখ টিপে বলে । সেহের প্রতিউত্তরে শুধু মুচকি হাসে । রিচি ভালো করে খেয়াল করলে হয়তো দেখতো এই হাসির পিছনে কত রহস্য লুকিয়ে ।
রিচি সেহেরের কানাডার ফ্রেন্ড । সেহের কানাডা থাকা কালিন সময়ে তার সাথে পরিচয় হয় ।
সেহের রিচি কথা বলতে বলতে ভার্সিটির গেটের সামনে এসে দাড়ায় । এমন সময়ই কিছু ছেলে এসে সেহের আর রিচিকে বিরক্ত করতে শুরু করে । বার বার সেহেরের চুল গালে টাচ করছিল । সেহের বিরক্তি নিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে নেয় । এমন সময়ই পিছন থেকে কেউ সেহেরের হাত চেপে ধরে । সেহের রেগে পিছনে তাকাতেই দেখে আরহাম দাড়িয়ে আছে । আবার সেহেরের খুব ভয় হচ্ছে । আরহাম কিছু দেখে নিতো ? আরহাম রেগে আবার নিজের আগের রুপে চলে আসবে না তো ?
কিন্তু সেহেরকে ভুল প্রমাণ করে দেয় । আরহাম মুচকি হেসে বলে

– গাড়িতে উঠো !

সেহের বড় নিশ্বাস নেয় তার মানে আরহাম কিছু দেখেনি ,সেহের মুচকি হেসে বলে

– হুম চলুন যাওয়া যাক ।

সেহের গাড়ি তে উঠে ক্লান্তি নিয়ে আরহামের কাধে মাথা হ্যলিয়ে দেয় । আরহাম আদুরে গলায় বলে

– টায়ার্ড ?

সেহের চোখ বুজে হ্যা বোদক মাথা দুলায় । আরহাম সেহেরের চোখের পাতায় নিজের ঠোট ছুঁয়িয়ে দেয় । সেহের পরম আবেশে তা উপভোগ করে ।

_______________________________

রাত নয়টা বাজতে চলেছে আরহামের ফিরার খবর নেই । আরহামের বাবা মা সেহেরের ছোট খালার বাড়ীতে গেছে বেড়াতে । সেহের আরহামের জন্য সারপ্রাইজ প্লান করেছে । কিন্তু আরহামের কোনো খোজ খবরই নেই ।
সেহের অনেকটা সময় আপেক্ষা করে কিন্তু আরহামের ফিরার খবর নেই । অবশেষে টাইম পাসের জন্য টিভি অন করে । হ্ঠাৎ একটা নিউজ দেখে সেহেরের হাত পা কাপঁতে লাগে ।আজ ভার্সিটিতে যে দুইটা ছেলে সেহেরকে বিরক্ত করছিল তাদের ডেডবডি জঙ্গল থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ । কেউ খুব বাজে ভাবে হত্যা করেছে । কে করেছে কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি ।
সেহেরের আত্না ছোট হয়ে যায় । মনে প্রশ্ন জাগে ,তবে কি আরহাম করেছে ?
কিন্তু আরহামের মাঝে তো গত দুই বছরে এমন কোন কিছু দেখেনি সে । আরহাম আর আগের মত নেই । যদি আগের মত থাকতো তাহলে সাথে সাথে তখনি নিজের রি – একস্যান দেখাতো ।
না না ,এটা আরহাম করতেই পারে না । আরহামের প্রতি মিছে সন্দেহ করছে । একটু বেশিই ভাবছে !

এমন সময়ই বেল বেজে উঠে সেহের দরজা খুলে দেখে আরহাম এসেছে । মুখে মিষ্টি হাসি । সেহের দরজায় দাড়িয়েই প্রশ্ন করে

– আজ এতো দেরী যে ?

আরহাম বাচ্চাবাচ্চা ফেস করে বলে

– ইনপর্টেন্ট মিটিং ছিলো সরি !

সেহের মুচকি হেসে বলে

– ইট’স অকে !

আরহাম ভিতরে ডুকে ঠোটে দুস্ট হাসি রেখে চোখ মেরে বলে

– ব্য দ্যা ওয়ে ইউ লুকিং হট…!

সেহের লজ্জায় চোখ ফিরিয়ে নেয় । আজও আরহামের প্রতি তার আগের মত লজ্জা কাজ করে । অনুভূতি একটুও বদলায়নি ।
আরহাম পানির গ্লাসটা শেষ করে বলে

– তুমি শাড়িতে ! আজ কিছু স্পেশাল নাকি ?

সেহের লজ্জায় মাথা নাড়ায় । আরহাম ভ্রু কুচকিয়ে সেহেরের দিকে তাকায় । সে বিরবির করে বলে

– আজ না এনিভার্সারি , না জন্মদিন ! তবে কি ?

সেহের হাল্কা হেসে লজ্জার স্বরে বলল

– এরচেয়ে স্পেশাল !

আরহাম বেশ বিভ্রান্ত হলো । এরচেয়ে স্পেশাল কি হতে পারে ?
সেহের তার দৃষ্টি বুজতে পেরে তার হাত ধরে রুমে নিয়ে যায় । রুমে নিয়ে একটা ফাইল ধরিয়ে দেয় । আরহাম ফাইল খুলতেই তার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায় । সে একবার সেহেরের দিকে একবার ফাইলের দিকে তাকায় ।

– সত্যি আমি বাবা হচ্ছি ?

আরহামের কন্ঠে স্পষ্ট উল্লাসের ছাপ । সেহের লজ্জা ভরা হাসি দিয়ে ,হ্যা বোদক মাথা নাড়ায় । আরহাম সাথে সাথে সেহেরের কাছে এসে তার মুখে অজস্র চুমু দিয়ে তাকে খুশিতে কলে তুলে নেয় । সেহের লজ্জায় আরহামের বুকে মুখ লুকায় । আরহাম সেহেরকে বিছানায় শুয়িয়ে একের পর এক চুমু দিতে লাগে । আর সেহের চোখ বন্ধ করে আবেশে তা উপভোগ করছে । আরহামের চোখ থেকে জল পড়ছে । কিন্তু তা কষ্টের না ,অতি সুখের !

___________________________

রাত দুটো সেহের গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে । চাদরটা ভালো করে সেহেরের শরীরে জড়িয়ে দিয়ে । আরহাম পাশ থেকে শার্টটা গাঁয়ে দিয়ে উঠে যায় ।
আরহাম অফিসের ব্যাগ থেকে রক্তাক্ত ছুড়ি গুলো বের করে ওয়াশরুমে বেসিন থেকে বেশ ভালো করে পরিষ্কার করে নেয় ।ঠোটেঁ বাকা হাসি । আরহাম বিরবির করে বলে

– আমার সেহেরকে স্পর্প করার দুসাহস করেছে শাস্তি তো তাদের পেতেই হতো !
সেহের আমার তাকে সব ভাবে দেখার স্পর্শ করার অধিকার শুধু আমার ।

আরহাম রুমে এসে ধীর পায়ে সেহেরের দিকে এগিয়ে আসে সেহেরের পাশে বসে ।বারান্দার আবছা আলো সেহেরের মুখে পরছে । সেহেরকে আরো মায়াবী আর আকর্ষনীয় তুলেছে । আরহামের চোখে সেহেরের নেশা লেগে যাচ্ছে । এই নেশাটা গভীর থেকে গভীরতম হচ্ছে । আরহাম নিচু হয়ে ফু দিয়ে সেহেরের মুখের উপর পড়ন্ত চুলগুলো সরিয়ে দেয় । সেহের ঘুমের মাঝেই কেপে উঠে ।
আরহাম সেহেরের পেটে বেশ কিছু চুমু দিয়ে বলে

– আমি তোমাকে আর তোমার মা কে সব সময় আগলে রাখবো । কখনো কোন আচঁ আসতে দিবো না ।

আরহামের স্পর্শে সেহের ঘুমঘুম চোখে আরহামের দিকে তাকায় । আরহামকে নিজের কাছে আসতে ডাকে । আরহাম তার কাছে যেতেই সেহের আদো আদো গলায় বলে

– ভালোবাসি ! খুব খুব খুব বেশি ভালোবাসি ।

আরহাম মুচকি হাসে কারন সেহের প্রায় রাতেই ঘুমের ঘোরে এমন বিরবির করে !। আরহাম মুখে হাসলেও তার অন্তরে বেশ শান্তি দেয় সেহেরের ঘুমের ঘোরের কথা গুলো । কপালে ঠোঁট ছুয়িয়ে বলে

– আমিও,খুব বেশি ভালোবাসি আমার হুর !
আমি তোমার জন্য পাল্টে গেছি । কিন্তু আমার ভালোবাসা ? তা আগের মতই রয়ে গেছে । আমি সর্বদা একই ভাবে ভালোবাসে যাবো ।তোমার পাগল প্রেমিক হয়ে থাকবো । আমার প্রেম সর্বদাই ভয়ংকর বিষাক্ত প্রেম থাকবে ।

শেষের কথাগুলো সেহেরের কানে যায় না তার আগেই সেহের ঘুমের দেশে তলিয়ে গেছে । আরহাম আবারো আরেকটি রাত সেহেরকে দেখে নিদ্রাহীন কাটিয়ে দেয় ।
মুগ্ধ হয়ে ডুবে থাকে তার হুরের মাঝে ।

কিছু রহস্য ,রহস্য থাকাই উত্তম ।
নিজের প্রিয়জনের রক্ষক হতে হলে অনেক সময় রাক্ষস হতে হয় । আরহামও তার প্রিয়তমাকে রক্ষা করতে রাক্ষস হতে হয়েছে ।
পৃথিবীতে সব ভালোবাসা এক হয় না !
সব প্রেম মধুর হয় না ,কিছু প্রেম বিষাক্ত প্রেম হয় ।

সমাপ্ত ❤️❤️❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here