বিষাক্ত প্রেম পর্ব -৩০+৩১+৩২

#বিষাক্ত প্রেম ২

Urme prema (sajiana monir)

পার্ট:৩০

আরহাম বিনা ফুপিকে টানতে টানতে রুম থেকে বের করে ড্রইং রুমে নিয়ে আসে ।এর মধ্যে পুলিশকেও খবর দেওয়া হয়েছে ।আজ আরহাম ভয়ংকর ভাবে রেগে আছে ।তার ইচ্ছে করছে বিনা বেগমকে খুন করে ফেলতে কিন্তু বয়সের দিক বিবেচনা করে কোন মতে নিজের রাগের উপর কন্ট্রোল করছে । চিৎকার চেচাঁমেচি শুনে আরহামের বাবা মা নিচে নেমে এসেছে ।তারা এসে দেখে আরহাম রেগে আছে সেহের তাকে থামানোর চেষ্টা করছে পাশেই বিনা বেগম চেচাঁমেচি করছে ।নাইসা কিছুটা দূরে দাড়িয়ে থেকে সবটা দেখছে ।
আরহামের মা আরহামের এমন ভয়ংকর রাগ দেখে দ্রুত পায়ে তার কাছে আসে ।
উত্তেজীত হয়ে জিগাসা করে

-“কি হয়েছে বাবা ? এমন রেগে আছ কেন ?”

আরহাম বিনা বেগমকে দেখিয়ে চেচিঁয়ে বলতে লাগে

-“মা তুমি ধারনা ও করতে পারবেনা এই মহিলা কি করেছে !
এই মহিলা আবারো সেহের উপর হামলা করেছে ।আজ যা যা সেহেরের সাথে হয়েছে সব কিছুর পিছনে এই মহিলা জরিত ।
আমি এবার এই মহিলারে ছাড়ছি না একে তো জেলে যেতেই হবে ।ঐটাই ওর আসল স্থান !”

বিনা বেগম পাশ থেকে চেচিঁয়ে বলে

-“যেখানে আমি কিছু করিনি ।তো আমি কেন জেলে যাবো ?
যাতা আমাকে ফাসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে ।বুঝি বুঝি সবই বুঝি ।এসব করে তোরা পার পাবি না ।তুই নিজে লোক লাগিয়ে তোর বউয়ের উপর আক্রমন করিয়ে আমাকে ফাসানোর ধান্দা করছিস !”

আরহাম বিনা বেগমের দিকে তেরে যেতে নেয় ।তার আগেই সেহের আটকিয়ে ফেলে ।আরহাম তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে

-“মা এই মহিলাকে চুপ হতে বলো না হয় নির্ঘাত আমার হাতে খুন হবে ।অনেক কষ্টে রাগের উপর কন্ট্রোল করছি কিন্তু যদি উনি চুপ না করে তাহলে আমি এখনই উনাকে খুন করে দিবো !”

-“হ্যা ,হ্যা এটাই তো পারিস। মানুষ কে খুন করতে !”

আরহাম চেচিঁয়ে বলে

-“মানুষ না অমানুষ জানোয়ারদের কে !”

মা বেশ চিন্তিত হয়ে নিচু গলায় বলে

-“সত্যি এটাই যে বিনা আপার এটা করেনি ।আজ বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত উনি বাড়িতে ছিলেন ।এমন কি আমার চোখের সামনেই ।
আমি তোমার কথা মত ২৪ ঘন্টা উনার উপর নজর রেখেছি !”

আরহাম বেশ চমকিয়ে যায় ।যদি বিনা বেগম না হয় তাহলে কে সেহেরের উপর আক্রমন করেছে ? কে ঐ মহিলা ?আর সেহেরের সাথে তার কি শত্রুতা !
এমন সময় আরহামের ধ্যান ভাঙ্গে বিনা বেগমের চেচানো আর ন্যাকা কান্না তে !
বিনা বেগম ন্যাকা কান্না করতে করতে বলে

-“ও মাগোওও তুমি তোমার সাথে আমাকে নিয়ে গেলেনা কেন ।আমাকে এরা ফাসিয়ে জেলে পাঠাতে চায় ।মেরে ফেলতে চায় ।আমি থাকবোনা এই বাড়িতে ।কাল সকালেই চলে যাবো ।
এই বাড়ির সব আমার শত্রু !”

আরহাম বেশ বিরক্ত নিয়ে চেচিঁয়ে বলে

-“তো আপনাকে কে ধরে রাখছে ? এখনি চলে যান না কেন !
যত্তসব ফালতু লোক ।”

আরহাম নিজের কথা শেষ করে হনহন করে রুমে চলে যায় ।সেহেরও তার পিছন যায় ।নাইসা এতক্ষন চুপ করে মায়ের সব ‌অভিনয় দেখছিলো ।মায়ের এসব ন্যাকা কান্না তার বিষের মত লাগে ।নাইসা বিরক্তের ভঙ্গিতে বলে

-“মিস বিনা বেগম আপনার এসব নাটকে কেউ গলবেনা ।যে নিজের পেটের মেয়েকে টাকার জন্য বেচে দেয় সে ‌অন্য মেয়ের সাথে ও সব করতে পারেন ।সন্দেহ হতেই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই ।আরহাম ভাই যা করেছে বেশ করেছে !”

নাইসা কথা শেষ করেই নিজের রুমে চলে যায়।বিনা বেগম মেয়ের যাওয়ার দিকে কটকট রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে !

আরহাম রুমে এসে রেগে গায়েঁর শার্ট খুলে নিচে ছুড়ে ফেলে ।রাগে সে ফুসঁছে ।সব কিছু তার হাতের বাহিরে চলে যাচ্ছে ।ঘরের কেউ তো আছে যে এসব করছে ।যে করছে খুব বেশি চালাক ।তার শত্রুতা শুধু সেহেরকে ঘিরে ।
কিন্তু কে সে ?
এসব ভেবে ভেবে আরহামের মাথা ফেটে যাচ্ছে ।এমন সময়ই সেহের খুরাতে খুরাতে রুমে প্রবেশ করে ।পায়ে প্রচন্ড ব্যথা !
সেহের আরহামের রাগী রূপ দেখে খুব বেশি ভয় পাচ্ছে ।অনেক সাহস জুটিয়ে আরহামের কাছে যায় ।আরহামের কাধেঁ হাত রাখতেই আরহাম রেগে পিছনে তাকায় ।সেহের আরহামের রক্ত লাল চোখ দেখে আতকিয়ে উঠে ।
আরহাম চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে বলে

-“কিছু বলবে ?”

-“আরহাম প্লিজ আপনি আমার জন্য হুটহাট এমন পাগলামি করবেন না ।বাড়ির সবাই কি ভাববে ।আজকে এসবের পর পরিস্থিতী আরো খারাপ হবে ।আপনার ফুপির সাথে এসব করা উচিত হয়নি ।আমি জানি উনার আমাকো পছন্দ না ।উনাকে উনার মত থাকতে দিন ।প্লিজ আর এমন কিছু করবেন না !”

সেহোর প্রত্যেকটা কথা খুব শান্ত ভাবে বলছিলো ।কথা গুলো বলার সময় সেহের মাথা নিচু করে ছিলো ।সে ভয় পাচ্ছিলো আরহাম কেমন ভাবে রিয়েক্ট করবে তা ভেবে ।
আরহাম সেহেরের কাছে এসে তার দু গালে হাত রেখে শান্ত মৃদ্যু স্বরে বলে

-“সেহের আমার দুনিয়ার কাউকে নিয়ে এত মাথা ব্যথা নেই ।যার যা ইচ্ছা করুক যা মনে করার মনে করুক কিন্তু তোমার কিছু হলে আমি সয্য করতে পারবোনা !
কারন তুমি জানো না তুমি আমার কাছে কি ।
অনেক হারিয়েছি অনেক যন্ত্রনা সয্য করেছি তোমাকে হারানোর মত ক্ষমতা নেই আমার ।যদি তোমাকে হারিয়ে ফেলি তবে এবার মরেই যাবো !
ঐ মহিলা এখানে থাকুক না থাকুক আমার কিছু আসে যায় না ।আমার কাছে তোমার সেফটি আগে ।তোমার কোন আচর লাগলেও আমি সয্য করতে পারবোনা !”

সেহের আরহামের বুকে ঝাপিয়ে পরে ।আরহাম নিজের সাথে জরিয়ে বলে

-“বিশ্বাস করতো আমায় ?”

-“নিজের থেকে বেশি !”

-“এই বিশ্বাসটাই ধরে রেখ !”

সকালে সেহের আরহাম ব্রেকফাস্ট করতে নিচে গেলেই বিনা বেগম রুমে প্রবেশ করে ।সেহেরের ফোনের নিচে একটা চিরকুট রাখে যেখানে লিখা -“নিজের অতীত জানতে হলে এই এড্রেসে ২ টায় আসো ।”
চিরকুটটা রেখেই বিনা বেগমের ঠোঁটের কোন শয়তানি হাসি ফুটে উঠে ।

আরহাম কিছুসময় পূর্বে অফিসে চলে গেছে ।সেহের ব্রেকফাস্ট করে রুমে আসতেই তার চোখ যায় মোবাইলের নিচে রাখা চিরকুটের উপর ।সেহের চিরকুট খুলে বিষ্মিত হয়ে যায় ।
ঘড়িতে ঠি ক দুটো বাজতেই সেহের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় ।সেহের বের হতেই বিনা বেগম কাউকে ফোন দিয়ে খবরটা জানায় ।

অন্ধকার একটা গুডাউন ।চারদিকে অন্যকারে ঘেরা ।কোন আলো নেই ।কালো কাপড় পরা মহিলাটি গুডাউনের প্রবেশ করে ।কিছুদূর যেতেই দেখে অন্ধকারে মধ্যে একজন মানুষের ছায়া দেখতে পায় ।অবশ্যই এটা সেহের !
নিজের মৃত্যু ফাদেঁ নিজেই পা দিয়েছে এই বোকা মেয়ে ।
আজ খুব সহজেই তাকে খুন করে গুম করা যাবে । কাকঁ পক্ষী ও টের পাবেনা ।
এসব ভাবতে ভাবতে তার মুখে শয়তানি হাসি ফুটে উঠে ।
নিজের ব্যাগ থেকে ধারালো ছুড়ি বের করে সেদিকে এগিয়ে যায় ।যাওয়ার পরই অনবরত তার বুকে ছুড়ি আঘাত করতে করতে বলে

-“বলেছিলাম না তোর মৃত্যু আমার হাতে ? এই দেখ নিজের মৃত্যুর ফাঁদে নিজেই পা দিয়েছিস । আজ তোকে কে বাচাঁবে সেহের ?
আজ তোকে খুন করে তোর রক্ত দিয়ে গোসল করবো আমি ।
জানতে চাইবি না আমি কে ?
যাহ্ মরার আগে তোর এই ইচ্ছাটাও আমি পূরন করে দেই
আমি তোর রুশা দি সেহের !
হ্যা আমি তোর রুশা দি ।
তোকে কি করে ক্ষমা করতাম ? তুই আমার সব কেড়ে নিয়েছিস সেহের ! তুই আমার ছোট কিন্তু ছোট থেকে সব সময় শুনতে হতো সেহের থেকে কিছু শিখ ।সেহের সুন্দর ,রূপবতী ,গুনবতী ।সেহের এমন সেহের তেমন !
উফফ সেহের সেহের সেহের সবার মুখে শুধু সেহেরের নাম ।তোকে কোন দিন আমি ভালোবাসি নি সেহের ।তুই আমার চোখের বিষ ছিলি ।আরহামকে যখন গ্রামে প্রথম বার দেখেছি তখনি ভালোবেসে ফেলেছিলাম ।কিন্তু সেখানেও তুই আমাদের মাঝে এসেছিস !
এই পর্যন্ত যতবার তোর উপর এটাক হয়েছে সব আমি করেছি সেদিন রাতে তোর রুমে আমি গিয়েছি তোকে খুন করতে ।ভার্সিটিতে তোকে ধর্ষন করার জন্য ঐ ছেলেদের আমি পাঠিয়েছিলাম ।রাতে তোর রুমে আরহামের মত কালো পোশাক পরে আসতাম যাতে কেউ দেখলে ভাবে আরহাম ছিলো ।আর একটা সত্যি বলবো ? পাচঁ বছর আগে মনিশার মনে আরহামের জন্য আমি বিষ ঢেলেছি ।এসবে আমাকে কে সাহায্য করেছে জানিস ? বিনা ফুপি ! উনার দেওয়া ফটোগ্রাফ গুলো আর প্রুভ গুলো মনিশা কে দেখিয়েছি আর বলেছি আমার কথা কাউকে না বলতে ।কারন আমি চাইনি আমার আরহামের কাছে অন্যকেউ ঘেষুক আরহাম অন্যকাউকে ভালোবাসুক ।হোক সে তার বোন ।আরহাম আমার মানে শুধুই আমার ।ভেবেছিলাম তুই মরে গেছিস কিন্তু মামা মামি এমন গেম খেলবে ভাবিনি ।সেই তুই ফিরে এসে আমার থেকে আমার আরহামকে ছিনিয়ে নিয়েছিস !
আমি কোন মানসিক ভারসাম্য হারাইনি সবই ছিলো আমার নাটকের অংশ !
আজ তোর মৃত্যুর সাথেই সব ঝামেলা শেষ হয়ে যাবে ।আরহাম তোর বিরহে পাগল হবে আর আমি আগের মত তাকে সামলিয়ে নিবো ।
গুড বাই সেহের !”

বলেই শেষ আঘাত করলো রুশা ।এমন সময় সব লাইট জ্বলে উঠে ।রুশা সামনে তাকিয়ে দেখে আরহাম তার সামনে দাড়ানো ! মুহূর্তেই রুশা ভয়ে কাপঁতে লাগে ।
আরহাম বাকাঁ হেসে বলে

-“সার্প্রাইজ শালিসাহেবা !”

রুশা তোতলাতে তোতলাতে বলে

-“ততত…তুমি ? স….সেহের কই ?”

আরহাম শায়তানি হাসি দিয়ে বলে

-“যেখানে তার থাকার কথা ।আমাদের গেস্ট হাউজে ।
চমকিয়ে গিয়েছিস তাইনা ?
আমি কাল রাতেই বুঝে গিয়েছিলাম বাড়ির কেউ সেহেরকে মারতে চায় বিনা ফুপির সাথে যে জরিত ।আমি বিনা ফুপির কল লিস্ট চেক দেখতে পাই তোর সাথে তার যেগাযোগ ।আমার পূর্বে সন্দেহ ছিলো তোর উপর কিন্তু কাল রাতে সিউর হলাম ।তুই ওদের সাথে ড্রাক্স ব্যবসা নারী প্রাচার সহ সব কিছুতে জরিত ছিলি !
আমি হাতে না হাতে তোকে ধরতে চেয়েছিলাম ।আর ভাগ্যও আমার সঙ্গে ছিলো তাইতো সকালে ব্রেকফাস্ট করে রুমে ঘড়ি আনতে যেয়ে দেখতে পাই বিনা ফুপি চিরকুট রাখছে ।উনি চলে যেতেই দেখি চিরকুটে এখানের এড্রেস লিখা ।আমি চিরকুট সরিয়ে ফেলি ! সেখানে আমার দেওয়া চিরকুট রাখি ।যেখানে আমি সেহেরকে ফ্রাম হাউজে ২ টায় যেতে বলি ।যাতে তোদের সন্দেহ না হয় ।সেহের ঠি ক দুটায় চলে যায় ।আর বিনা ফুপি তোকে ফোন দিয়ে তা জানায় ।
আগুন নিয়ে খেলতে নেমেছিলি তুই !
ভুলে গেছিস ? আমি যে এই খেলার পুরনো খিলারি ?
গেম ওভার !
তুই আমার সেহেরকে মারতে চেয়েছিস তাইনা ? কিন্তু তোর মৃত্যু তো আমার হাতে !”

রুশা পালাতে নিবে তার আগেই চারদিকে আরহামের লোক ঘিরাও করে নেয় ।আরহাম বাকাঁ হেসে বলে

-“আরহাম খাঁন কাচাঁ কাজ করেনা শালিসাহেবা । আমি বলেছি আজ তোর মৃত্যু আমার হাতে ।মানে আমার হাতেই হবে !
চেয়েছিলাম তোকে জেলে দিবো ।কিন্তু তুই ভার্সিটিতে ঐ ছেলেদের দিয়ে আমার সেহেরকে ধর্ষন করাতে চেয়েছিলি যার জন্য তোকে মৃত্যু আমিই দিবো ।তোর মত মেয়ের বেচেঁ থাকার কোন অধিকার নেই ।”

বলেই আরহাম পিস্তলটা রুশার মাথায় রেখে শ্যুট করে ।সাথে সাথে ওর দেহ মাটিতে লুটিয়ে পরে ।আরহাম তার লোকেদের দিকে তাকিয়ে বলে

-“পুলিশকে লাশ নিয়ে যেতে বল !”

আরহাম গুডাউন থেকে বেরিয়ে আসে ।

চলবে……❤️

প্লিজ সবাই সবার মতামত জানাবেন 😊😊😊

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ❤️❤️❤️#বিষাক্ত প্রেম ২

Urme prema (sajiana monir)

পার্ট:৩১

(কিছুদিন পর এক্সাম যদিও অনলাইন এ হবে কিন্তু ভার্সিটিতে দৌড়াতে হচ্ছে ।তার উপর বাড়িতে কাজিন এসেছে লিখার মত পরিস্থিতে নেই ।তাই দেরী হচ্ছে আশা করি সবাই বুঝবেন ❤️)

আরহাম গুডাউন থেকে বের হতেই ফোনটা বেজে উঠে ।আরহাম ফোন রিসিভ করে কিছুসময় চুপ থেকে উত্তর দেয়

-“আচ্ছা আমি আসছি”
গাড়িতে এসে রুশার রক্তভেজা শার্ট আর শরীরে লাগনো সেফটি জেকেট টা খুলে চেন্জ করে নেয় ।ফোনটা হাতে নিয়ে মোবাইলে ভেসে উঠা সেহেরের ছবিতে হাত ছুঁয়িয়ে মুচকি হেসে ফিসফিসিয়ে বলে

-“আমি আসছি !এইতো আর কিছুসময়ের ব্যবধান ।আমাদের নতুন জীবনের সূচনা হবে !”

অন্যদিকে সেহের ফার্মহাউজে পৌছায় ।আরহাম সেহেরকে কেন এখানে আসতে বলেছে সে জানেনা ।অন্যদিকে আরহামের ফোনে ফোনও ডুকছে না ।বাড়ি থেকে সেই কখন বেরিয়েছে আসতে আসতে বিকাল হয়ে এসেছে ।সেহের এসব ভাবতে ভাবতে বাড়ির সামনে এগিয়ে আসতেই দেখে এক গাল হাসি নিয়ে দাড়িয়ে আছে কেয়ারটেকার চাচা ।সেহেরকে দেখতেই তিনি বলে উঠে

-“আসো মা ! তোমারই অপেক্ষায় ছিলাম ।”

সেহের মুচকি হেসে বলে

-“কেমন আছেন চাচা ?”

-“ভালো মা ।তুমি কেমন আছো ?

-“জ্বি চাচা ভালো ।চাচা উনি কই ?”

চাচা সেহেরের কথার অর্থ বুঝে ।চাচা বেশ উল্লাসে সেহেরের সামনে চাবিটা এগিয়ে দিয়ে বলে

-“মা বাবা সকালে আইসিলো।ভিতরে কি কি যেন করলো তার পর আমার হাতে চাবিটা দিয়া কইলো কেউ যাতে ভিতরে না যায় । কইলো তার আইতে একটু দেরী হইবো ।তুমি আসলে তোমার হাতে চাবিডা দিয়া যাতে আমি চইলা যাই ।”

সেহের চাবিটা হাতে নিয়ে ভ্রু কুচঁকিয়ে আছে ।এমন কি চায় আরহাম ।হঠাৎ সকালে চিরকুট দিয়ে বললো এখানে আসতে ।তার মাথায় কি চলছে ?
চাচার কথায় সেহেরের ধ্যান ফিরে আসে ।চাচা হাসি মুখে বলে উঠে

-“তাইলে মা আমি যাইগা ।ভালো থাইকো !”

-“আচ্ছা চাচা !”

সেহের তালা খুলে ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখে পুরো বাড়ি অন্ধকার আচ্ছন্ন।এক আগের বার যখন আরহামের সাথে এসেছিলো ।তখন দেখেছি লাইটের সুইচ টা ডান দিকে ।সেহের সেই আন্দাজ করে সেদিকে যেয়ে লাইটের সুইচ অন করে ।সেহের ঘাড় ঘুরিয়ে সামনে তাকিয়ে হা করে থাকে ।এ সে কি দেখছে ? সে যা দেখছে তা কি সত্যি না কি স্বপ্ন !
লাইট জ্বালাতেই পুরো হল রুমে বিভিন্ন রকম আলো জ্বলে উঠে ।সামনে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে রাস্তা বানানো ।
যেখান থেকে রাস্তা শুরু ঠি ক সামনে একটা সুন্দর কাচের ডল রাখা আর তার হাতে একটি সুন্দর হার্ট শেপের বক্স যার মধ্যে একটা চিরকুট দেখা যাচ্ছে ।সেহের মুচকি হেসে সেই পুতুলটা হাতে তুলে নেয় ।পুতুলটা পাশের টেবিলে রেখে চিরকুটটা পড়া শুরু করে

“মাই বিউটিফুট ওয়াইফ ,
আমি জানি তুমি খুব বেশি আশ্চর্য হচ্ছো আসে পাশে তাকিয়ে আমাকে খুঁজার চেষ্টা করছো কিন্তু এতে কোন লাভ নেই আমি ঠি ক সময় তোমার কাছে ধরা দিবো ।এই গোলাপের রাস্তা টি অনুসরন কর আমার পরবর্তি চিরকুট সেখানেই পাবে ।”

সেহের চিরকুট টি পড়ে মুচকি হাসে ।গোলাপের পাপড়ির রাস্তা ‌অনুসরণ করে উপরে চলে যায় ।উপরে বড় একটি রুমের সামনে রাস্তাটি শেষ হয় ।সেহের আসে পাশে তাকিয়ে চিরকুট খুঁজতে লাগে ।না সেখানে কোন চিরকুট খুঁজে পায় না ।সেহের আসে পাশে ভালো করে চোখ ভুলিয়ে দেখে দরজার সামনে একটা তীর চিন্হ ।যা রুমের দিকে ইঙ্গিত করছে ।সেহের রুমের ভিতর প্রবেশ করে । রুমে যেতেই দেখে বিছানার উপর ইয়া বড় একটা গিফ্ট বক্স রাখা ।সেহের সেই বক্সের উপর রাখা চিরকুটটা হাতে নিয়ে পড়া শুরু করে ।

“হে জানপাখি ,
জানি খুব বেশি অবাক হচ্ছো ! তোমার মনে অনেক প্রশ্ন জাগছে ।কিন্তু এই তো আর কিছুক্ষন তারপরই তোমার সব প্রশ্নের উত্তর পাবা !
এখানে যা যা আছে সব পড়ে রেডি হয়ে নেও ।
তোমার
আরহাম……..”

সেহের চিরকুটটা পড়ে হেসে তা পাশে রেখে বেশ কৌতহল নিয়ে বক্সটা খুলে লাগে ।বক্সের ভিতর কি কি আছে তা দেখার জন্য ।বক্স খুলতেই তার চোখ ছানাভরা হয়ে উঠে ভিতরে ডার্ক রেড ‌অসম্ভব সুন্দর লেহেঙ্গা সাথে মেচিং জুইলারী ।অসম্ভব সুন্দর জরির কাজ করা উড়না ।গাজরা ফুলের মালা ।মেকআপ কিট ।সম্পূর্ন বউ সাজার জন্য যাযা লাগে সব কিছুই এখানে আছে ।সেহের এখন পর্যন্ত বুঝে উঠতে পারছে না কি হতে চলছে !
সেহের আরহামের কথা মত সুন্দর ভাবে রেডি হয়ে নেয় ।
পুরোপুরি ভাবে রেডি হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে আসে ।সেহের রেডি হয়ে ডেসিং টেবিলের সামনে বসে থাকে ।এমন সময়ই হঠাৎ কারো পায়ের শব্দ সেহেরের কানে ভেসে আসে ।সেহের ভয়ে পিছনে ফিরতেই তার চোখ গোলগোল হয়ে যায় ।সামনে আরহাম দাড়িয়ে আছে ।বরের বেশে ।সেহেরের সাথে মেটিং শেরওয়ানি ।মাথায় পাগড়ি ।তার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে ।

সেহের লজ্জায় চোখজোড়া নামিয়ে নেয় ।আরহাম এক পা এক পা করে সেহেরের কাছে এগিয়ে আসে ।সেহেরের বুক দবদব করে শব্দ করছে ।আরহাম একদম সেহেরের কাছে চলে আসে ।সেহেরের কানের কাছে মুখ এনে মুচকি হেসে ফিসফিস করে বলে

-“উফফফ ।
যা লাগছে না পুরাই আগুন !
ভেবেছিলাম আমি সার্প্রাইজ দিবো কিন্তু তার আগেই তুমি আমাকে সার্প্রাইজ আর শক দিয়ে দিলা ।”

আরহামের কথাগুলো সেহেরকে আরো বেশি লজ্জায় ফেলছে ।সে লজ্জায় কাপঁছে ।আরহাম তা লক্ষ করে আবার বলে

-“বউ তুমি এত বেশি সুন্দর কেন ? বউ সাজে তো আমার হুরটাকে আরো হাজার গুন বেশি সুন্দর লাগছে ।এখন তো চোখ ফিরানো ও মুশকিল !”

সেহের কাপাঁ কাপাঁ গলায় বলে

-“তো চোখ ফিরাতেই কে বলেছে ?”

আরহাম দুষ্টু হেসে সেহেরের কাছে এগিয়ে আসতে আসতে বলে

-“যদি চোখ ফিরাতে না পারি তবে অনেক কিছু ঘটে যাবে ।তুমি কি চাও তা ঘটুককক !”

সেহের এবার লজ্জায় শেষ মনে হচ্ছে লজ্জায় এখনই অজ্ঞান হয়ে যাবে ।আরহাম তা বুঝতে পেরে নিশব্দে হেসে হুট করে সেহেরকে কলে তুলে নেয় ।সেহের অবাক চোখে
আরহামের দিকে তাকায় ।আরহাম সেদিকে লক্ষ না করে সেহেরকে কোল তুলে হাটাঁ শুরু করে !

সেহের আরহামের গলা জরিয়ে ধরে আছে ।দুজনের ঠোঁটে প্রশান্তির হাসি ।সেহের মুচকি হেসে বলে

-“আমরা কোথায় যাচ্ছি ?”

-“সার্প্রাইজ !”

-“কি সারপ্রাইজ বলুন না !”

-“বললে কি আর সার্প্রাইজ থাকবে ? “

সেহের আর কিছু বলে না ।আরহাম সেহেরকে গাড়িতে বসিয়ে তার পাশের সিটে বসে গাড়ি স্টার্ড দেয় ।

গাড়ি এসে আরহামদের বাড়ির সামনে থামে ।সেহের বাড়ির দিকে তাকিয়ে হা হয়ে থাকে খুব সুন্দর করে সাজানো ।লাল নীল মরিচ বাতি জ্বলছে ।সেহের আরহামের দিকে বিস্মের চোখে তাকায় ।আরহাম গাড়ি থেকে নেমে সেহেরের দিকে হাত বাড়িয়ে মুচকি হেসে বলে

-“ভিতরে চলো !”

সেহের আরহামের হাতে হাত রেখে গাড়ি থেকে নামে ।কাঠের পুতুলের মত আরহামের কথা মত সব করছে ।
বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতেই সবাই একসাথে বলে

-“সার্প্রাইজজজজজ “

সেহের সামনের দিকে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে থাকে ।সে কি রিয়েক্ট করবে বুঝতে পারছেনা ।সেহের বরফ হয়ে আছে ।সামনে তার পুরো পরিবারের দাড়িয়ে আছে ।পুরো বাড়ি খুব সুন্দর করে সাজানো ।মিডিয়া আর অন্যান্য লোকেরাও রয়েছে ।আরহাম সেহেরের দিকে ঝুকেঁ বলে

-“আমাদের বিয়েটা আর পাচঁটা বিয়ের মত হয়নি ।তোমার অনেক শখ অপূর্ন রয়ে গেছে ।তাই তা পূর্ন করার সামান্য চেষ্টা !”

সেহেরের চোখে মুখে খুশির ঝলক চোখ থেকে দুই ফোটা পানি গড়িয়ে পরে ।আরহাম তা মুছে দিয়ে ।সেহেরের কপালে ঠোঁট ছুয়িয়ে বলে

-“এই দেখ তোমার ঠোঁটে হাসি দেখার জন্য এত কিছু করা আর তুমি দেখি কাদঁছো !
তুমি কি খুশি হও নি ?”

সেহের আরহামের দিকে তাকিয়ে হেসে উত্তর দেয়

-“অনেক অনেক অনেককককক বেশি খুশি হয়েছি ।ধন্যবাদ এত ভালোবাসার জন্য !”

-“উহু ধন্যবাদ না । এই ভালোবাসা তোমার প্রাপ্য ।আমার জীবনে আসার জন্য আর জীবনটাকে এত সুন্দর করার জন্য তোমায় ধন্যবাদ !”

-“ভালোবাসি ”

-“আমিও ‌অনেক বেশি ভালোবাসি আমার হুর !!!”

চলবে…….❤️❤️❤️

Plz সবাই সবার মতামত জানাবেন 😊😊😊

ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন ❤️❤️❤️#বিষাক্ত প্রেম ২

Urme prema (sajiana monir)

পার্ট:৩২

রাত ১১:৩০ বাজতে চলছে ।কিছুক্ষন আগেই পার্টি শেষ হয়েছে ।সব গেস্ট চলে গেছে ।আরহাম সেহেরকে নিয়ে রুমের সামনে যেতেই নাইসা রুমের দরজা আটকিয়ে দাড়ায় ।আরহাম ভ্রু কুচঁকিয়ে বলে

-“কি চাই তোর ?”

নাইসা দাতঁ বের করে হাসি দিয়ে বলে

-“কি চাই মানে ? ভাই তুমি কি নিয়ম কানুন ভুলে গেছ ! খালি হাতে বউ নিয়ে বাসর ঘরে ডুকবে ?
বোনদের যে একটা হক আছে ভুলে গেছ ?”

-“তাই তো বলছি তোর কি চাই ?”

-“গিফ্ট চাই গিফ্ট !
যে পর্যন্ত গিফ্ট না দিবে রুমে ডুকতে পারবেনা ।”

-“কি গিফ্ট চাই তোর ?”

নাইসা ছোট ছোট চোখ করে উপরে দিকে তাকিয়ে বলে

-“দাড়াও ভাবতে দেও !”

-“তারাতারি তোর ভাবনা শেষ কর আর বিদায় হ ।অনেক রাত হয়েছে ঘুমাবো !”

-“ছিঃ ভাই ! তুমি কেমন অধৈর্য্য ।ভাবি কি পালিয়ে যাচ্ছে !নাকি ? রাত শেষ হয়ে যাচ্ছে ? এত তাড়া দিচ্ছ কেন বলো তো !”

-“তোর কি চাই ? যা চাই তা নিয়ে এখানে থেকে ভাঘ !”

-“আমি পুরো দুদিন শপিং করবো আর পুরো শপিং বিল তুমি পে করবে !
শর্তে রাজি আছো ? যদি রাজি থাকো তাহলে রুমে ডুকতে দিবো ।”

আরহাম ছোট ছোট চোখ করে বলে

-“আমি জানতাম এমন কিছুই তুই বলবি ।
আমি জানি তো তুই গোল্ড ডিগার !
যা তোর সব শর্তে রাজি ।”

-“প্রমিজ !

আরহামের গম্ভির আওয়াজ

-হুম প্রমিজজ

নাইসা বড় একটা হাসি দিয়ে বলে

-“থেংকিউ ভাইইই ।
তুমি দিন দিন কিপটে হয়ে যাচ্ছ । বুঝেছো ?
তাই আজ সময় সুযোগ বুঝে তোমার টাকা লুটে নিলাম ।”

নাইসা নাচতে নাচতে চলে যায় ।সেহের এতক্ষন দু ভাইবোনের খুনসুটি দেখছিলো আর নাইসার কথায় বার বার লজ্জায় পড়ে যাচ্ছিলো !
নাইসা যেতেই আরহাম সেহেরের পিছনে দাড়িয়ে তার চোখে পট্টি বেধেঁ দিতে দিতে বলে

-“বিশ্বাস করো আমায় ?”

সেহের মুচকি হেসে উত্তর দেয়

-“নিজের থেকে অনেক বেশি !”

আরহাম সেহেরের গালে ঠোঁট ছুয়িঁয়ে বলে

-“আজ তোমাকে অন্য আমির সাথে পরিচয় করাবো ।অন্যতুমির সাথে পরিচয় করাবো !
আরহামের বিষাক্ত প্রেমের কথন শুনাবো ।
পারবে সইতে ?”

সেহের ঠোঁটজোড়া মেলে উত্তর দেয়

-“আমি আমার আরহামের প্রত্যেকটা রূপের সাথে‌ অবগত হতে চাই । অস্তিত্বের সাথে মিশে যেতে চাই !”

আরহাম আর কথা বাড়ায় না মলিন হেসে সেহেরকে নিজের কোলে তুলে নেয় ।রুমের দিকে পা বাড়ায় ।

পুরো ঘর মোমবাতির হলদে আলোতে আলোকিত হয়ে আছে ।বিভিন্ন রকম ফুলের ঘ্রানে পুরো ঘর মৌ মৌ করছে ।আরহাম সেহেরকে কোলে নিয়ে রুমে প্রবেশ করে ।
কোল থেকে নামিয়ে সেহেরের চোখের কাপড়টা সরিয়ে দেয় ।সেহের সামনে তাকিয়ে হা হয়ে থাকে পুরো রুম খুব সুন্দর করে সাজানো ।কিন্তু ফুল ও মোমবাতির সাথে পুরো রুম জুড়ে কিছু বড় বড় বোর্ড দেখা যাচ্ছে যা সাদা কাপড়ে ঢাকা ।সেহের ঘাড়ঁ ঘুরিয়ে পিছনে আরহামের দিকে তাকায় ।আরহামের চেহারায় ভয় ফুটে আছে ।এই শীতের ভিতর ও তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম ।সেহের ভ্রু কুচঁকিয়ে আরহামের দিকে তাকায় ।আজ তো আরহামের সবচেয়ে বেশি খুশি হওয়ার কথা ।তবে কেন তার চেহারায় এমন ভয়ে ।সেহের আরহামের কাছে যেয়ে তার হাতের উপর হাত রেখে জিগাসা করে

-“আপনি ঠি ক আছেন তো ?”

আরহাম একটা ঢোক গিলে সেহেরের চোখে চোখ রেখে বলে

-“সেহের আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই ।”

সেহের আরহামের দিকে ভ্রু কুচঁকিয়ে তাকিয়ে থাকে ।আরহাম দির্ঘ্য নিশ্বাস নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায় ।
সামনের বোর্ড গুলোর থেকে এক এক করে পর্দা সরায় !
সেহের সামনের দিকে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে থাকে ।সামনের বোর্ড গুলোতে তার ছবি পেইন্ট করা ।যা সেইদিন কিডন্যাপারের রুমে দেখেছিলো ।এসব আরহামের কাছে কি করে আসলো ? তবে কি আরহামই সেই কিডন্যাপার ?
যে তাকে মারতে চায় !
এসব ভাবতে ভাবতেই সেহেরের শরীর ভয়ে কাপঁতে লাগে ।শরীরে শীতল রক্ত বইতে লাগে ।আরহাম সেহেরের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ।সেহের ভয়ে এক পা এক পা করে পিছিয়ে যাচ্ছে ।তার চোখ থেকে টপটপ করে জল ঝড়ছে ।চেহারায় স্পষ্ট ভয়ের ছাপ !
সেহের নিচে পড়ে যেতে নেয় তার আগেই আরহাম সেহেরকে টান দিয়ে নিজের বুকে জরিয়ে নেয় ।সেহেরকে বিছানায় বসিয়ে তার পায়ের কাছে হাটু গেড়ে বসে পড়ে ।

সেহের শক্ত হয়ে বসে আছে ।তার চোখ থেকে অশ্রু ঝোড়ছে ।আরহাম নিচে বসে সেহেরের দিকে তাকিয়ে আছে ।আরহামের বুক ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে ।
আরহাম সেহেরের হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে কাদো কাদো হয়ে বলে

-“হ্যা সেহের এটা সত্যি সেদিন তোমাকে আমি কিডন্যাপ করেছি কিন্তু এর পিছনে আমার কোন খারাপ উদ্দেশ্য ছিলো না আমি শুধু আমার স্ত্রীকে কিছুসময়ের জন্য নিজের কাছে পেতে চেয়েছি ।একটু মন ভরে দেখতে চেয়েছি ।এরচেয়ে বেশি কিছু না !
তোমাকে হারিয়ে পাগল হয়ে গিয়েছিলাম এতটা বছর পর তোমাকে পেয়ে নিজের উপর কাবু করতে পারিনি ।তাই সেদিন তোমাকে কিডন্যাপ করে এনেছিলাম !”

আরহামের কথার অর্থ সেহের বুঝতে পারছেনা ।সে উত্তেজীত হয়ে আরহামকে জিগাসা করে

-“আপনি কি বলছেন আরহাম ।স্ত্রী মানে ? আর পাচঁ বছর আগে আপনার সাথে আমার কিসের সম্পর্ক ছিলো ?
প্লিজ সব কিছু ক্লিয়ার করে বলেন !”

আরহাম সেহেরকে সবটা খুলে বলে ।সেহের সবটা শুনে ভাবলেশহীন ভাবে বসে থাকে ।তার অতীতে এত কিছু ঘটে গেছে ? আরহামের সাথে তার পূর্বেই বিয়ে হয়ে গেছে ?আরহামের স্ত্রী ছিলো ! তার ভাবী আরহামের বোন ? এত এত সত্য আর ভয়ংকর অতীত থেকে সে এতদিন অজানা ছিলো ? তার উপর সব আক্রমন তার বোন করেছে !
সব শুনে সেহেরের চোখ বন্ধ হয়ে আসছে ।এতদিন একটা মিথ্যা দুনিয়ায় সে বাস করছিল ।
স্বপ্নের দুনিয়া ছিলো ! যেখানে সব কিছু কৃত্রিম ছিলো ।স্বপ্ন ভাংতেই সে বাস্তবে ফিরেছে ।যেখানে চার দিকে অন্ধকার আর ভয়ংকর অতীত নিজের কাছের লোক ভালেবাসার মানুষ গুলো তার সবচেয়ে বড় শত্রু ।এর চেয়ে খারাপ আর কি হতে পারে ?
আরহাম সেহেরকে এমন ভাবলেশহীন ভাবে বসে থাকতে দেখে বেশ ভয় পেয়ে যায় ।সেহেরের দুহাত শক্ত করে ধরে তার কোলে মাথা রেখে নিশব্দে নিজের চোখের জল ফেলছে ।
সেহের বেশ কিছুক্ষন পর শান্ত কন্ঠে বলে

-“আপনি কেন আমাকে সত্যিটা জানালেন ? যদি আমি আপনাকে ছেড়ে চলে যাই ?
কারন আপনার জন্যই তো সব ! আপনি আমার জীবনে আসার পর থেকেই তো সব তছনছ হয়ে গেছে ।”

সেহেরের কথাগুলো শুনে আরহাম স্থব্দ হয়ে যায় ।অশ্রুচোখে সেহেরের দিকে তাকায় ।সেহের এখনো শীতল চোখে তাকিয়ে আছে ।আরহাম ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বলে

-“হ্যা আমি প্রথমে চেয়েছিলাম তুমি সত্যিটা না জানো ।তোমার সামনে অতীত না আসুক তাই সব চেষ্টা করেছি ।ফুপির প্রতিটা কথা শুনেছি ।তোমার মনে আছে সেদিন নাইসা অসুস্থ হওয়ায় রাগের মাথায় তোমাকে বকে ছিলাম ? এর কারন ছিলো ফুপি নাইসা অসুস্থ হওয়ায় ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম ভেবেছিলাম নাইসার কিছু হলে যদি ফুপি তোমাকে সব জানিয়ে দেয় ? সব কিছুতে মাথা কাজ করছিলো না রাগের মাথায় টেনশনে তোমাকে বকে দিয়েছিলাম ।আমাকে ব্লাকমেইল করে বিভিন্ন কিছু করিয়েছে ।আর সত্য গোপন করার জন্য আমি সব করে গেছি ।কিন্তু আমি চাইনা তুমি কোন অন্ধকারে থাকো ।তোমার সত্যিটা জানার অধিকার আছে ।আমি আমাদের নতুন জীবন তোমাকে কোন মিথ্যা দিয়ে শুরু করতে চাইনা ।তুমি আমার স্ত্রী তোমার সব জানার অধিকার আছে ।তোমাকে সত্যিটা জানানো আমার কর্তব্য ।হুম সব সত্যের মধ্যে একটা সত্য হলো আমি তোমাকে ভালোবাসি ।আর আমার ভালোবাসায় কখনো কোন খাদ ছিলোনা !
বাকিটা তোমার সিদ্ধান্ত ।তুমি যা চাইবে তাই হবে !
তুমি চাইলে আমাকে ছেড়ে যেতে পারো ।আমি তোমাকে কোন বাধাঁ দিবোনা !”

আরহাম নিজের কথা গুলো শেষ করে সেহেরের কোলে আবার মাথা রাখে সেহেরের কমোড় জরিয়ে ধরে ।শেষের কথাগুলো বলার সময় তার গলা ধরে আসছিলো ।বুকে হাজার বার ছুড়ি চলছিলো ।
কিছু সময়পর সেহের শীতল গলায় বলে

-“আমি একা থাকতে চাই !”

আরহাম মাথা তুলে সেহেরের চোখে দিকে তাকায় ।এই চোখের ভাষা আজ আরহাম বুঝতে পারছেনা ।কেমন জানো কঠিন্যতার ছায়া ।কোন রাগ ,জ্বেদ ,মায়া অনুভূতি কোন কিছুই নেই ।মানুষ বড় আঘাত পেলে হয়তো এতটা শক্ত হয়ে যায় !
আরহাম আর কোন শব্দ করে না ।সেহেরের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে সেখান থেকে উঠে পরে ।বারান্ধার দিকে পা বাড়ায় ।আরহাম যেতেই সেহের চিৎকার করে কান্না করতে লাগে ।ভিতরে কষ্ট যন্ত্রনা কান্নার সাথে বেরিয়ে আসছে ।
আরহাম বারান্ধা থেকে ঘাড় ঘুরিয়ে একবার সেহেরের দিকে তাকায় ।সেহের বিছানায় বালিশে মুখ লুকিয়ে কান্না করে করছে ।আরহামের বুকে ব্যথায় চিনচিন করছে ।খুব ইচ্ছে করছে সেহেরকে বুকে টেনে নিতে ।কিন্তু এমন টা সে করতে পারবেনা ।কারন সেহের বলেছে সে কিছু সময় একা থাকতে চায় ।আর আরহাম তো সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে সে সেহেরের উপর কোন প্রকার সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিবেনা !
আচ্ছা সেহেরের সিদ্ধান্ত কি হবে ? সে কি আরহামকে ছেড়ে চলে যাবে ? যদি এমন হয় তাহলে আরহাম কি করে বাচঁবে !
সে তো মরেই যাবে ।সেহেরকে ছাড়া সে তো তার জীবন কল্পনা ও করতে পারবেনা ।সে পাগল হয়ে যাবে ।বেশ কিছুসময় চিন্তা করার পর আরহাম সিদ্ধান্ত নেয় যদি এমন কিছু হয় তাহলে সে নিজের জীবন শেষ করে দিবে ।তার সাথে তার এই বিষাক্ত প্রেমও শেষ হয়ে যাবে ।
বেশ কিছুক্ষন এসব চিন্তা ভাবনা করে আরহাম আকাশের পানে তাকায় ।চোখের জল গাল বেয়ে পড়ছে ।ছেলেরা সহজে কান্না করেনা ।খুব বেশি অসহায় বা খুব বেশি কষ্ট পেলেই তাদের চোখ থেকে অশ্রু ঝড়ে ।আজ আরহাম খুব বেশি অসহায় ।নিয়তীর কাছে ।আজ মনে প্রশ্ন জাগছে জীবনটা এমন না হলেও পারতো !

রাত তিনটা ঘড়ির কাটায় বাজতে চলেছে ।চারদিক কুয়াশার চাদরে ঢাকা ।আরহাম বারান্ধায় একের পর এক সিগারেট জ্বালাচ্ছে ।
হঠাৎই পিছন থেকে কেউ ঝড়ের গতিতে ছুটে এসে তাকে জরিয়ে ধরে ।তার গাঁয়ের সুবাস আরহামের অপরিচীত নয় ।তার অতি প্রিয় ।হ্যা তার সেহের তাকে জরিয়ে ধরেছে ।পিছন থেকে সেহের শক্ত করে জরিয়ে ধরে কান্নাজরিত কন্ঠে বিরবির করে বলে

-“আমি অনেক ভেবেছি আমি পারবোনা আপনাকে ছাড়া বাচঁতে ।পারবোনা এক মুহূর্ত্ব আপনাকে ছাড়া থাকতে ।অতীত কি ছিল না ছিল তাতে আমার কোন আসে যায়না ।আমি শুধু জানি আমি আপনার সাথে আপনার কাছেই থাকবো !
অনেক হারিয়েছি আর হারানোর শক্তি আমার নেই ।আমি আপনাকে হারাতে চাইনা ।
ভালোবাসি আরহাম ।খুব বেশি ভালোবাসি ।”

মুহূর্তেই আরহামের চোখে মুখে হাসি ফুটে উঠে ।বুকে উঠাল পাঠাল ঝড় বইছে ।শীতল হাওয়া তার পুরো শিরা উপশিরা বয়ে বেড়াচ্ছে ।যেন আকাশের চাঁদটা তার হাতের মুঠোয় ।আরহাম পিছনে ফিরে সেহেরের মুখে হাজার চুমু দিয়ে নিজের বুকের সাথে জরিয়ে নেয় ।এতক্ষনে আরহামের বুক থেকে যেন হাজার টনের বোঝা নেমেছে ।বুকে শান্তি বয়ে বেড়াচ্ছে !”

চলবে …..❤️

প্লিজ সবাই সবার মতামত জানাবেন 😊😊😊

ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন ❤️❤️❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here