বিষাক্ত প্রেম পর্ব -২১+২২+২৩

#বিষাক্ত প্রেম ২

Urme prema (sajiana monir)

পার্ট: ২১

(কাল হয়তো গল্প দিতে পারবোনা ।দয়া করে কেউ অপেক্ষা করবেনা )

মাত্রই আরহাম নাইসা দুপুরের খাবার খেতে নিচে এসেছে ।এত সময় দুজন একসাথে উপরের ডান সাইডের বারান্ধায় আড্ডা দিচ্ছিলো ।সেহের রান্না শেষ করে সব কিছু টেবিলে সার্ভ করছে ।খাবারের মেনু তে রয়েছে সাদা ভাত ,মুরগী কষা ,মিক্সড ভেজিটেবল ,ডাল বুনা ।যদিও সেহের খুব একটা রান্না পারে না ।এসব কিছু ইউটিউব থেকে শিখে করেছে !
নাইসা চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলে

-“বাহ্ খাবারের স্মেলটা তো জোস !
আহ দেখতেও খুব ইয়ামিইইই লাগছে ।”

সেহের জোরপূর্বক মলিন হাসি দিয়ে ।আরহাম আর নাইসার প্লেটে খাবার তুলে দেয় ।আরহাম আড়চোখে নিজের বউ কে দেখছে ।চুলগুলো হাত খোপা করা শাড়ির আচঁলটা কমোড়ে বাধাঁ কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম । একদম খাশঁ গৃহিনী লাগছে তার বউ টাকে ।
আরহামকে সেহেরের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে পাশ থেকে নাইসা আরহামের পেটে খোঁচা মেরে বলে ।

-“ভাইয়ু ভাবীকে এভাবে দেখলে কি পেট ভরবে ? খাবার ও তো খেতে হবে নাকি !
খাওয়া শেষে মন ভরে ভাবিকে দেখ ।”

আরহাম নাইসার মাথায় চাপর মেরে বলে

-“চুপ কর বেয়াদপ মেয়ে ।নিজের খাওয়ায় মন দে !”

নাইসা মুখ ভেংচি মেরে খেতে লাগে ।সেহের দুর থেকে দুজনের খুনসুটি দেখছে ।দুর থেকে কিছু শুনতে না পেলেও দুজনের মাঝে বেশ ভাব আছে তা বুঝাই যাচ্ছে ।সেহের দির্ঘ্য একটা শ্বাস ছেড়ে সেখান থেকে প্রস্থান করার জন্য পা বাড়ায় ।পিছন থেকে আরহাম বলে

-“সেহের !
বসো আমাদের সাথে লান্চ করে নেও ।”

সেহের সামনে ফিরে উত্তর দেয়

-“আমি এখন টায়ার্ড একটু রেস্ট করতে চাই । লান্চ পরে করে নিবো ।”

আরহাম আর জোর করেনা ।আজ সারাদিন অনেক পরিশ্রম করেছে এখন তার রেস্ট নেওয়া প্রয়োজন ।আরহাম ভেবে রাখে খাওয়া শেষে রুমে সেহেরের জন্য খাবার নিয়ে যাবে ।নিজ হাতে তাকে খায়িয়ে দিবে ।
সেহের রুমে এসে বিছানায় পা তুলে হ্যালান দিয়ে বসে ।মাত্রই চোখ বন্ধ করে এমন সময়ই নিচের থেকে চিৎকার চেচাঁমেচির আওয়াজ শুনতে পায় ।সাথে সাথে চোখ খুলে ছুটে নিচে চলে যায় ।নিচে গিয়ে দেখে নাইসা বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে ।তার শ্বাস কষ্ট হচ্ছে ।চোখ বড় বড় হয়ে উল্টিয়ে যাচ্ছে ।পাশেই রহিমা খালা নাইসার হাত পা মালিশ করছে ।আরহাম ডক্টোরের সাথে কথা বলছে ।সেহের তারাতারি করে নাইসার রুম থেকে ইনহেলার খুজেঁ এনে নাইসার মুখে ধরে ।কিছুসময়ের মধ্যেই ডাক্টার এসে পৌছায় ।

ডাক্টার নাইসাকে চেকআপ করে বলে

-“উনার কি এলার্জি সমস্যা আছে ?”

আরহাম শান্ত গলায় উত্তর দেয়

-“জ্বি ডক্টোর ।
জিরায় এলার্জি সমস্যা আছে ।”

-“উনি হয়তো জিরা মিশ্রিত কোন খাবার খেয়েছে তাই এমন শ্বাস কষ্ট হচ্ছিলো ।
আর একটু দেরী হলে বড় কোন অঘটন ঘটে যেত !”

আরহাম চিন্তিত হয়ে বলে

-“এখন কেমন আছে ?

-“জ্বি এখন সুস্থ আছে ।শরীর কিছুটা দূর্বল আমি মেডিসিন দিয়ে যাচ্ছি ।২-১ দিনের মধ্যে পুরেপুরি সুস্থ হয়ে যাবে ।
আচ্ছা আমি এখন আসি ।”

আরহাম মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি জানায় ।ডাক্টার চলে যায় ।আরহামের এই মূহুর্তে খুব বাজে ভাবে মেজাজ খারাপ হচ্ছে সেহেরের উপর ।সে জেনে শুনে ইচ্ছে করে খাবারে কি করে জিরা দিতে পারে ?
সে জানতো নাইসার এতে এলার্জি সমস্যা আছে ।আজ বেশি কিছু হলে নাইসার মৃত্যুও হতে পারতো ।অল্পতে বেচেঁ গেছে ।এসব ভাবতে ভাবতেই আরহামের চোখ পড়ে সেহেরের দিকে ।সেহের নাইসার জন্য জুস বানিয়ে নিয়ে এসেছে ।আরহাম রেগে সেহেরের হাত চেপে ধরে রুমের বাহিরে টানতে টানতে নিয়ে আসে ।হঠাৎ আরহামের এমন ব্যবহারে সেহের বেশ অবাক হয়ে যায় ।তার চোখে মুখে আতংকের ছাপ ।আরহাম কেন এমন করছে কিছুই বুঝতে পারছেনা ।
সেহের নিজেকে স্বাভাবীক রেখে বলে

-“আপনার যা বলার পরে বলেন ।আমি নাইসাকে জুসটা দিয়ে আসি ।”

আরহামের পাশ কাটিয়ে যেতে নেয় ।আরহাম সেহেরের বাহু শক্ত করে ধরে তাকে থামিয়ে দেয় ।জুসের গ্লাসটা ফ্লোরে ছুড়ে মেরে চেচিঁয়ে বলে

-“এবার জুসে কি মিশিয়েছো ? বিষ ?”

আরহামের কথায় সেহের বিষ্মিত চোখে তার দিকে তাকিয়ে থাকে ।আরহাম কি বলছে কিছুই তার মাথায় ঢুকছেনা ।আরহাম আবার বলে

-“তুমি জানতে জিরাতে নাইসার এলার্জি তার পর ও ইচ্ছে করে খাবারে জিরা দিয়েছো তাই না ?
সেহের তোমার থেকে এমনটা আশা করিনি !
বাচ্চামো স্বভাবের একটা লিমিট আছে ।সবকিছুতে বাচ্চামো মানায় না !
নাইসা বাচ্চা মেয়ে ।তুমি জেলাসির বসে তার সাথে এমন কিছু কি করে করতে পারো ।যদি ওর কিছু হয়ে যেত কি জবাব দিতাম আমি ফুপিকে ?
সত্যি তুমি আজ খুব বাজে একটা কাজ করেছো !”

-“আপনার মনে হয়ে আমি এমন কিছু করবো ?
এতটা নিচ আমি ?
আমি রান্নার সময় বেশ সাবধানে রান্না করছি ।যাতে অসাবধানতার বসে কোন কিছুতে জিরা না পরে ।
আর আপনি বলছেন আমি এসব ইচ্ছে করে করেছি ?”

-“যে মেয়ে নিজেকে মারার করার চেষ্টা করতে পারে সে মেয়ে সব পারে ।
এখানে মনে হওয়ার কিছু নেই অবশ্যই তুমি করেছো ।তুমি সব রান্না করেছো ।তো জিরা কি নিজ পায়ে হেটেঁ আসেনি ?অবশ্যই তুমিই ইচ্ছে করেই দিয়েছো !
লিসেন সেহের এই মুহূর্তে তোমার সাথে তর্ক করার একদম মুড নেই ।আমি চাইনা রেগে এমন কিছু তোমাকে বলে দেই যাতে তুমি কষ্ট পাও ।তো এই মুহূর্তে আমার চোখের সামনের থেকে তোমার চলে যাওয়াটাই ভালো !”

আরহামের কথায় সেহেরের চোখ থেকে টপটপ করে পানি ঝোরছে ।সেহেরের হতবাক হয়ে আরহামের দিকে তাকিয়ে আছে ।আরহামের তার সম্পর্কে এমন নিচু ধারনা ?
সে ভাবলো কি করে যে সেহের নাইসার ক্ষতি করার জন্য ইচ্ছে করে জিরা মিলিয়েছে ?
এতদিনে এই চিনলো আরহাম তাকে ।সেহেরের চোখ থেকে জল গাল বেয়ে পড়ছে ।খুব কান্না আসছে ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কান্না করতে কিন্তু সে এখানে কান্না করবেনা ।আরহামের সামনে তো একদমই না ।চাই না তার কারো ভালেবাসা কারো সহানুভূতি ।সেহের সেখানে আর এক সেকেন্ড ও থাকে না ।ছুটে চলে যায় নিজের রুমে ।

আরহাম ড্রইং রুমের সোফায় গাঁ এলিয়ে চোখ বুজে বসে আছে ।দু আঙুল দিয়ে কপালে আকাঁ বাকাঁ ভাজগুলোতে বোলাচ্ছে ।মাথা ঝিমঝিম করছে খুব বেশি টায়ার্ড সে ।পাশের রুমেই নাইসা ঘুমাচ্ছে ।মাথাটাও খুব ধরে আসছে আরহামের ।
আরহাম চেচিঁয়ে রহিমা খালা বলে

-“খালা এক কাপ কফি নিয়ে আসেন ।”

কিছুসময় পর খালা কফি নিয়ে আসে আরহামের সামনে রাখে ।আরহাম কফির মগটা নিয়ে রহিমা খালার দিকে তাকায় ।রহিমা খালা মাথা নত করে অপরাধী ভঙ্গিতে দাড়িয়ে আছে ।আরহাম কফির মগে চুমুক বলে

-“খালা কিছু বলবেন ?”

রহিমা খালা ভীত গলায় ভয়ে ভয়ে বলে

-“বাজান আইজ খাওনের ভিতরে বউ মা জিরা দেয় নাই ।আমি দিছি ।আমি ভাবছি হয়তো বউমা মুরগীতে জিরা দিতে ভুইলা গেছে তাই আমি পরে দিছি ।
এতে বউমার কোন দোষ নাই !
আমারে মাফ কইরা দেন বাজান আমি জানতাম না যে নাইসা মার জিরাতে এলার্জি ।”

আরহাম রহিমা খালার কথা শুনে যেন আসমান থেকে পড়ে ।রাগে ক্ষোভে নিজের মাথার চুল টেনে ধরে ।এ সে কি করলো সেহেরকে শুধু শুধু এতগুলো কথা শুনিয়ে দিলো !
যেখানে বেচারীর কোন দোষই নেই ।তার একবার তো ভাবা উচিত ছিলো যে সেহের আর যাই করুক কখনো কারো ক্ষতি করতে পারেনা ।এর বদলে নিজেকে শেষ করে দিবে কিন্তু অন্যকারো কোন ভাবেই সে ক্ষতি করবেনা ।সে তার শত্রুই হোক না কেন !
আরহামের নিজেকে খুন করতে ইচ্ছে করছে কি করে পারলো সে মেয়েটাকে এতটা কষ্ট দিতে তাকে অবিশ্বাস করতে ।
আরহাম রেগে হুংকার দিয়ে উঠে ।রহিমার খালার দিকে তাকিয়ে চেচিঁয়ে বলে

-“আপনি আমাকে এই কথা আগে বলেন নি কেন ?”

রহিমা খালা ভয়ে কেঁপে উঠে ।কান্না জরিত কন্ঠে বলে

-“বাজান আমি ভাবছি আপনি ঠান্ডা হইলে কমু ।”

আরহাম বেশ বিরক্তির সাথে রাহিমা খালার দিকে তাকিয়ে ।উপরের রুমে ছুটে যায় ।রুমে যেয়ে দেখে সেহের রুমে নেই ।বিছানা এলোমেলো হয়ে আছে ।বোঝাই যাচ্ছে কেউ এখানে শুয়ে ছিলো ।আরহাম কাপাঁ কাপাঁ হাত বালিশের উপর রাখতেই টের পায় বালিশটা ভিজে আছে ।তার মানে সেহের এখানে শুয়ে এতক্ষন কান্না করছিলো ।আরহাম রাগে পাশে থাকা কাচেঁর গ্লাসটা শক্ত করে ধরে ফলে অতিরিক্ত চাপের কারনে গ্লাসটা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায় ।আরহামের হাত থেকে রক্ত ঝোড়ছে কিন্তু সেদিকে তার খেয়াল কই ? সে তো রুমের জিনিস ভাংচুর করছে ।পাগলের মত সব কিছু ভাংছে ।নিজের রাগ জ্বিদ ঘরের জিনিসের উপর উঠাচ্ছে ।
হঠাৎই সেহেরের কথা মনে পড়তেই উন্মাদের মত তাকে পুরো ঘর খুজঁতে লাগে ।কিন্তু সেহের সেখানে নেই ।ফোনটা বিছানায় পরে আছে ।তারাতারি করে নিচে চলে যায় ।পুরো বাড়ি তাকে খুজঁতে লাগে ।কিন্তু এতে কোন লাভ হয়না ।কোথাও সেহেরকে পায়না ।বাড়ির সব কাজের লোককে জিগাসা করে কিন্তু সবার কাছে একই জাবাব তারা জানেনা সেহের কোথায় ।
আরহাম চেচিঁয়ে বলে

-“একটা মানুষ বাড়ি থেকে গায়েব হয়ে গেল ?
কেউ জানোনা মানে কি ?”

এমন সময় দাড়োয়ান চাচা দরজার কাছে দাড়িয়ে মাথা নত করে বলে

-“বাবা বউমা কে ঘন্টা খানেক আগে বাড়ি থেকে বের হতে দেখেছি ।”

আরহাম চেচিয়েঁ বলে ।

-“তাকে আটকালেন না কেন ?আমাকে কেন খবর দিলেন না ?
সাথে কি গাড়ি নিয়ে গেছে ?”

দাড়োয়ান চাচা মাথা নিচু করে আমতা আমতা বলে

-“বউমাকে আটকানোর সাদ্য কি আছে বাজান !
আমি জিগাস করার আগেই চট করে রিক্সায় উঠে যায় ।যাওয়ার সময় দেখে মনে হচ্ছিলো খুব রেগে আছে ।”

আরহাম আর এক সেকেন্ড ও সময় নষ্ট না করে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরে ।সেহের কোথায় যেতে পারে ? নিশ্চয়ই বাবার বাড়িতে গেছে ।তাই আরহাম সেহেরের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হয় ।
কিছুদূর যেতেই জ্যামে আটকা পরে ।রাস্তায় অনেক ভিড় ।আরহাম বার বার হর্ন বাজাচ্ছে কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না ।তাই আরহাম বিরক্ত হয়ে গাড়ির কাচ খুলে বাহিরে মাথা বের করে পাশে দাড়িয়ে থাকা বাদামওয়ালাকে জিগাসা করে

-“সামনে এত জ্যাম কিসের ?কি হয়েছে ?”

বাদামওয়ালা পান চিবাতে চিবাতে বলে

-“সাহেব সামনে ঘন্টাখানেক আগে একসিডেন্ট অইছে ।রিকশা আর টেরাকের ।রিক্সায় ২০-২১ বছরের একটা মাইয়া আছিলো ।টেরাকের চাপা পইরা লগে লগে মইরা গেছে ।”

কথাটা শুনতেই আরহামের মেরুদন্ড শীতল হয়ে গেল ।ভয়ে হৃদপিন্ড ধপধপ করছে গলা শুকিয়ে আসছে ।দাড়োয়ান চাচা বলেছিলো সেহের রিক্সা দিয়ে গেছে ।তবে কি সেহের ?
না না সে কি ভাবছে ।সেহের কি করে হবে । তার সেহেরের কিছু হতে পারেনা ।সেহেরের কিছু হবেনা ।কিন্তু মস্তিষ্ক বলছে সামনে এগিয়ে দেখতে ।আরহাম গাড়ি থেকে বের হয়ে বেশ ভয়েভয়ে কাপাঁ কাপাঁ পায়ে সামনে আগায় ।মনে মনে শুধু একই দোয়া করে এটা যেন তার সেহের না হয় ।
আস্তে আস্তে ভীর ঠেলে ভিতরে ঢুকে !
#বিষাক্ত প্রেম ২

Urme prema (sajiana monir)

পার্ট:২২

আরহাম কাপাঁ কাপাঁ পায়ে ভিড় ঠেলে সামনে এগিয়ে যায় ।ভয়ে তার হাত পা কাপঁছে ।সামনে তাকানোর সাহস পাচ্ছেনা সে ।লাশটিক চারদিকে পুলিশ ঘিরে আছে ।
রাস্তা রক্তে ভিজে আছে ।
আরহাম ভয়ে ঢোক গিলে অনেক সাহস নিয়ে সামনে তাকায় ।
না এটা তার সেহের না এটা ‌অন্যকেউ ।সাথে সাথে আরহামের চোখ থেকে দু ফোটা খুশির জল বেরিয়ে আসে ।প্রশান্তির নিশ্বাস নেয় সে ।
মেয়েটার মুখ একদম নষ্ট হয়ে গেছে ।পুরো শরীর রক্তাক্ত ।চেহারা চেনা যাচ্ছেনা ।আরহাম আর সেখানে দেরী না করে গাড়িতে উঠে পরে ।গাড়ি ঘুরিয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে সেহেরের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেয় ।

সেহের বিছানায় গাঁ এলিয়ে কপালে হাত দিয়ে চোখ বুজে আছে ।সামনেই নিলাদ্রি আর আফিয়া বসে অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে ।সেই বিকালে বাড়িতে এসেছে ।বাড়িতে এসে কারো সাথে কোন কথা না বলে দেখা না করে সরাসরি নিজের রুমে এসে এভাবে গা এলিয়ে শুয়ে আছে ।বেশ কয়েকবার সেহেরের মা ,চাচীরা এসে তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে কিন্তু সেহের কারো সাথে সে টু শব্দ পর্যন্ত করেনি ।আফিয়া আর নিলাদ্রী একে অপরকে চোখে ইশারা করছে ।সেহের কেন এমন করছে ? কি হয়েছে তা জিগাসা করতে !
কিন্তু কেউ সাহস কুলিয়ে উঠতে পারছেনা ।
বেশকিছু সময় পর নিরবতা ভেঙ্গে আফিয়া বলে উঠে

-“সেহের কিছু কি হয়েছে ? তুই হঠাৎ এখানে !”

সেহের কপাল থেকে হাত সরিয়ে বিরক্তির নজরে আফিয়ার দিকে তাকায় তারপর ঝাঁজালো স্বরে উত্তর দেয়

-“কেন বিয়ে হয়েছে বলে আমি পর হয়ে গেছি ?
এবাড়িতে কি আসা যাবেনা !
চলে যাবো ?”

নিলাদ্রী মন খারাপ করে বলে

-“আহা ! রেগে যাচ্ছিস কেন ।
আমরা কি একবারো তা বলেছি ?
বিয়ের আগে এই বাড়ি যতটুকু তোর ছিলো এখনও ততটুকুই রয়েছে ।একটুও কমেনি ।”

সেহের হ্যালান দিয়ে বসতে বসতে বলে

-“সকালে তো খুব বলছিলি আজ তোর জন্মদিন আমি যেন আসি ।তো এখন এমন রিয়েক্ট করছিস কেন ?”

নিলাদ্রি আহ্লাদী স্বরে বলে

-“আমি তো ভাইয়াকেও সাথে নিয়ে আসতে বলেছিলাম !”

সেহের সরু চোখে তাকিয়ে উত্তর দেয়

-“কেন ? ঐ লোককে না নিয়ে আসলে কি তোরা আমাকে বাড়িতে ডুকতে দিবিনা ?
এখন কি নিজের বাড়িতে আসতে গেলেও ঐ লোক কে নিয়ে আসতে হবে !”

পাশ থেকে আফিয়া বলে

-“আচ্ছা সেহের তুই আবার ভাইয়ার সাথে ঝগড়া টগড়া করে আসিসনি তো ?”

মুহূর্তেই সেহেরের মুখের রং পাল্টিয়ে যায় ।চোখ গুলো জ্বলে ভরে যায় ।গলাটা ধরে আসছে তার ।সেহের কাপাঁ কাপাঁ গলায় বলে

-“না ঝগড়া করতে যাবো কেন !
তার শান্তি আর স্পেসের দরকার ছিলো ।তাই তার থেকে দূরে সরে এসেছি ।”

কথাটা শেষ হতেই তার চোখ থেকে ২ ফোটা জল গড়িয়ে পরে ।সাথে সাথে তা হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে ফেলে ।
নিলাদ্রি আর আফিয়া দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে ।তারা বেশ বুঝতে পারছে সেহের বাড়ি থেকে রাগ করে এসেছে ।তাই রুম থেকে বেরিয়ে চুপি চুপি আরহামকে ফোন করে জানায় ।

সন্ধ্যায় সবাই ড্রইং রুমে একত্রিত হয়েছে ।একটু পরই নিলাদ্রি বার্থডে কেক কাটবে ।তেমন বড় কোন আয়জন করা হয়নি ।ঘরয়া ভাবে আয়জন করা হয়েছে ।রুশা আর সেহেরের ফুপিও এসেছে ।শত হলেও নিজের মেয়ের জন্মদিন বলে কথা ।হয়তো মায়ের ‌অধিকার ফলাতে পারবেনা কিন্তু দূর থেকে দোয়া তো করতে পারবে !
বুকে সেই আশা নিয়ে আসা ।সেহেরকে অনেক রিকোয়েস্ট করার পর নিচে এসেছে ।এক কোনায় চুপটি করে দাড়িয়ে আছে ।রুশাকে তার একদম সয্য হচ্ছে না খিচ খেয়ে শুধু তাকে সয্য করছে ।
সবাই খুব খুশি আজ অনেকদিন পর পুরো পরিবার একসাথে ।সেহেরকে বেশ কয়েকবার আরহামের কথা জিগাসা করেছে সবাই সেহের প্রতিবার উত্তরে বলে “সে ব্যস্থ তাই আসবেনা “
নিলাদ্রি ছুড়ি নিয়ে প্রস্তুত কেক কাটবে ।যেই কেক কাটতে নিবে এমন সময় কেউ ঝড়ের গতিতে বাড়িতে ঢুকে সেহেরকে জরিয়ে ধরে ।হঠাৎ এমন ভাবে আসায় সেহের হতভম্ব হয়ে যায় ।সেহেরকে একদম নিজের সাথে মানুষটা জরিয়ে রেখেছে ।মানুষটার গায়ের সুবাস সেহেরের খুব পরিচীত আর প্রিয় ।প্রশান্তির একটা শ্বাস টেনে নেয় সেহের ।সে জানে এটা আরহাম তার আরহাম !
কিন্তু মুহূর্তেই দুপুরের ব্যবহারের কথা মনে পড়তেই একরাশ অভিমান তার বুকে জমে ।নিজেকে আরহাম থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে ।কিন্তু আরহামও নাছোড়বান্ধা নিজের বুকের সাথে শক্ত করে ধরে আছে সেহের কে ।
সেহের আসে পাশে তাকিয়ে দেখে তার বাবা ,চাচা চাচীরা সবাই মাথা নত করে মিটমিট করে হাসছে ।আর তার নিলজ্জ কাজিন গুলো ৩২ টা দাতঁ বের করে হাসছে ।
সেহের সবকিছু খেয়াল করে আরহামের কানের কাছে দাতেঁ দাতঁ চেপে ফিসফিস করে বলে

-“কি করছেন ?
সবাই তাকিয়ে আছে !
আমাকে ছাড়ুন ।”

-“উহু ছাড়বোনা আমি ।
তুমি জানো আমি কতটা ভয় পেয়ে গেছিলাম ?
আমার জান বের হয়ে আসছিলো মনে হয়েছে আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলেছি ।”

সেহের বিরক্তির কন্ঠে বলে

-“আপনার এই নাটক আমার একদম সয্য হচ্ছেনা ।দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার ।
ছাড়ুন আমাকে !”

আরহামের সেহেরের কথায় কোন ভ্রুক্ষেপ নেই সে আগের মত চোখ বন্ধ করেই সেহেরকে নিজের সাথে জরিয়ে রেখেছে ।সেহের এবার পড়েছে মহা বিপদে ।লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে তার ।এই লোক এতটা নিলজ্জ কেন ?
আসে পাশের কোন দিকের তার কোন খেয়ালই নেই !
সেহের এবার গর্জন করে বলে

-“আপনি যদি আমাকে এখন না ছাড়েন তাহলে আমি ,আমি কান্না করবো !

আরহাম সেহেরের কথা শুনে হাতের বাধঁন হালকা করে সেহের থেকে দূরে সরে আসে ।কারন সে সব সয্য করতে পারলেও সেহেরের কান্না সয্য করতে পারবেনা !
সেহেরকে ছেড়ে আশে পাশে তাকিয়ে দেখে সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে আরহাম তা দেখে লজ্জায় মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে

-“সরি !এভাবে আসার জন্য
আসলে দুপুরে টুকটাক বিষয় নিয়ে দুজনের মাঝে একটু ঝামেলা হয়েছিলো ।সেহের রেগে না বলে চলে এসেছিলো ।
তাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম !”

সেহেরের বাবা মুচকি হেসে বলে

-“না বাবা সরি বলতে হবেনা ।
আমরা তো সেহেরকে বলেছিলাম যেন তোমাকে নিয়ে আসে ।
যাক ভালো হয়েছে তুমি এসেছো ।”

আরহাম মুচকি হেসে বলে

-“ধন্যবাদ আংকেল ।”

আরহাম সেহেকের দিকে তাকিয়ে দেখে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার চোখের চাহনি বলে দিচ্ছে “আজ আপনাকে আমি খুন করবো ”।আরহাম সেহেরের এমন অগ্নিদৃষ্টির প্রতিউত্তরে টেডি হাসি দেয় ।সেহের বিরক্তি নিয়ে মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নেয় ।
নিলাদ্রি কেক কেটে সবাইকে খায়িয়ে দেয় ।সবাই বেশ আনন্দ ফুর্তিতে মেতে উঠে ।সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এখানেই আজ রাতটা কাটাবে ।
বেশ ঠান্ডা পড়েছে। তাই রাতে সবাই ছাদে বিবিকিউ পার্টি করছে ।নিলাদ্রি ,আফিয়া ,কনক ,আরহাম ,সেহের , রুশা ,নিল (নিলাদ্রীর বড় ভাই )বাড়ির বড়রা সবাই আগুনের চারদিকে গোল হয়ে আড্ডা দিচ্ছে ।নিল তার গিটারের টুং টাং সুর তুলছে ।নিলাদ্রি আফিয়া কনক আড্ডা গান গাইছে ।রুশা তার মায়ের গায়েঁ হ্যালান দিয়ে গেম খেলছে ।বড়রা সবাই এটা ঐটা নিয়ে কথা বলছে ।
আর এদিকে আরহাম পলকহীন ভাবে সেহেরকে দেখছে আগুনের হলদে আভাটা সেহেরের মুখে পড়ছে ভয়ংকর সুন্দর লাগছে তাকে ।আরহামকে এমন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে সেহের নিজের মুখ ঘুরিয়ে নেয় ।
আরহাম তা দেখে মুচকি হাসে সে জানে তার বউটা বেশ রেগে আছে তার উপর ।
রাত ২ টা বাজতে চলছে বড়রা নিচে চলে গেছে ।কিন্তু এখনো ছাদে তুমুল আড্ডা চলছে ।সবাই বেশ হাসি মজা করছে এটা ঐটা নিয়ে কথা বলছে ।আরহাম ও তাদের সাথে যোগ দিয়েছে ।শুধু সেহেরই মুখ ফুলিয়ে বসে আছে ।
হঠাৎই নীল আরহামকে উদ্দেশ্য করে বলে

-“ভাই আপনি তো খুব সুন্দর গান গাইতে পাড়েন ।আমাদের একটা গান শুনান ।”

পাশ থেকে নিলাদ্রী আর কনক নীলের সাথে তাল মিলিয়ে বলে

-“প্লিজ ভাইয়া !”

আরহাম একবার সেহেরের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়িয়ে দুষ্টু হেসে বলে

-“অকে ,অকে !
গানটা আমার বিউটিফুল বউকে ডেডিকেট করে গাইছি ।”

সেহের মুখ ভেংচি মেরে ফোন গুতাতে ব্যস্থ হয়ে পড়ে ।আরহাম তা দেখে মুচকি হেসে গিটারে সুর তুলে গাইতে লাগে

ও বউউ !

(সেহের সাথে সাথে ফোন রেখে হ্যবলার মত আরহামের দিকে তাকায় )

কেন আমার কাছে আসো না ।

ও বউউ ! তুমি আমায় কি ভালোবাসনা ?

ও বউউ ! কেন আমার কাছে আসো না ।

শুন ঝগড়া মারামারি ভুলে যাই তাকাতারি ইতনা গুস্সা কিউ ?

তুমি কেন এত বোকা সাজো ? আমায় একটু বুঝো শুননাাা আই লাভ ইউ !

ও বউউউউ ।তুমি আমায় কি ভালোবাসোনা ।

ও বউ কেন আমার কাছে আসো না ।

ও বউউ ! তুমি আমায় কি ভালোবাসনা ?

ও বউউ ! কেন আমার কাছে আসো নাাাাাা ।”

আরহাম গান শেষ করতেই সবাই উল্লাসে চিৎকার করে উঠে ।সেহের লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছে ।এ লোক এমন নিলজ্জা কেন ?
সবসময় তাকে ইচ্ছে করে এমন লজ্জাজনক সিচ্যুয়েশনে ফেলে ।আরহাম গিটার পাশে রেখে ।সেহের দিকে তাকিয়ে কানে ধরে বাচ্চাদের মত তাকিয়ে আদুরে গলায় বলে

-“জানপাখিইইইই !
আ’ম সে সরি ।
এবারের মত প্লিজ ক্ষমা করে দেওওও ।”

সবাই পাশ থেকে চিৎকার করে বলে ক্ষমা করে দে সেহের ।সেহের সেদিকে কোন গুরুত্ব না দিয়ে সেখান থেকে উঠে অন্যপাশে চলে যায় ।হাত ভাজঁ করে ছাদের কার্নিস ঘেসে দাড়ায় ।
সে চাদেঁর দিকে তাকিয়ে আছে ।তার চোখ গুলো অভিমানের জলে চকচক করছে ।কিছুক্ষন পর পিছনে কারো অস্তিত্ব টের পায় সেহের ।সে খুব ভালো করে জানে পিছনে আরহাম দাড়িয়ে আছে ।তার গায়ের সুবাস ঠি ক বলে দিচ্ছে ।কিন্তু না সে পিছনে ফিরবেনা !
না তার সাথে কথা বলবে ।
হঠাৎই পিছন থেকে আরহাম সেহেরকে নিজের বুকের সাথে গভীর ভাবে জরিয়ে নেয় ।
#বিষাক্ত প্রেম ২

Urme prema (sajiana monir)

পার্ট:২৩

(খুব তারাতারি অতীত সামনে আসবে)

আরহাম পিছন থেকে সেহেরকে জরিয়ে ধরে আছে ।কিন্তু সেহেরের সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই ।তার চোখজোড়া দূর আকাঁশের দিকে ।চোখে নোনা জলে চকচক করছে ।
আরহাম আগের মত ঘাড়ে মুখ লুকিয়ে শান্ত স্বরে বলে

-“তুমি না বলে কেন চলে এসেছো ।
জানো কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম ?
আজ আসার সময় রাস্তায় যখন এক মেয়ের এক্সিডেন্টের কথা শুনেছি আমার ভয়ে কলিজা শুকিয়ে গিয়েছিলে ।
ভেবেছি আ..আমি হয়তো ….

-“ভেবেছেন সেই মেয়েটি হয়তো আমি ছিলাম এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছি তাই তো ?
যদি ঐ এক্সিডেন্টে আমি মারা যেতাম তবে বেশি ভালো হতো ।”

আরহাম সাথে সাথে সেহেরকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিজের বুকের সাথে জরিয়ে নেয় ।আরহামের চোখে মুখে মুহূর্তেই আতংক ফুটে উঠেছে ।বেশ শক্ত করে সেহেরকে নিজের সাথে জরিয়ে রেখেছে ।মনে হচ্ছে বাধঁন হালকা হলেই সেহের হয়তো হারিয়ে যাবে ।আরহাম চোখ বন্ধ করে কাপাঁ কাপাঁ গলায় বলে

-“আর কখনো এসব কথা বলবেনা ।শুনেছো তুমি ?(ধমকের স্বরে )
তুমি আমার ।শুধুই আমার ।আমার থেকে তোমাকে কেউ কোন দিন আলাদা করতে পারবেনা ‌অন্ততো আমি বেচেঁ থাকতে তা হতে দিবো না ।”

সেহের কান্না করতে করতে বললো

-“কি হবে বেচেঁ থেকে ?
এই যন্ত্রনাদায়ক জীবন থেকে মরন অনেক শান্তির ।অন্ততো এমন কষ্ট তো পেতে হবেনা !
আমার আর এসব যন্ত্রনা সয্য হয়না আরহাম ।আমি শান্তুি চাই ।”

আরহাম সেহেরের দুগালে হাত রেখে চোখ মুছে দিতে দিতে বলে

-“তাই হবে জান ।
আজের পর থেকে কখনো তোমার চোখে অশ্রু আসতে দিবোনা সবসময় তোমাকে আগলে রাখবো ।তুমি যেমন বলবে সব কিছু তোমার মন হবে ।”

সেহের আরহামের হাত ঝাড়ি দিয়ে সরিয়ে দেয় ।আরহামের দিকে অশ্রুসজল চোখে তাকিয়ে কাপাঁ কাপাঁ গলায় বলে

-“আরহাম আপনার কি সত্যি মনে হয় যে আমি আমার জেলাসির কারনে কাউকে মারতে চেষ্টা করবো ?
আপনার এতটা নিচ মনে হয় আমাকে ?”

আরহাম সেহেরকে কাছে টেনে এনে তার হাত জোড়া নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে মাথা নত করে কান্নায় জর্জরীত কন্ঠে বলে

-“সেহের এমন অনেক কিছু আছে তোমার অজানা ।
ফুপি প্রতি আমার কিছু দায়বদ্ধতা আছে ।হঠাৎ নাইসা অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় আমি অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম ।আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিলো তাই রাগে টেনশনে আমি তোমাকে ঐ সব কিছু বলে দিয়েছি ।আমি তার জন্য যদি হাজার বার তোমার থেকে ক্ষমা চাই তাও কম হয়ে যাবে ।
প্লিজ সেহের ট্রায় টু আন্ডারস্ট্যান্ড !
আমি ইচ্ছে করে তোমাকে আঘাত করতে চাইনি ।”

-“এমন কি দায়বদ্ধতা আছে আপনার যে আপনি এতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন ?”

আরহাম চুপ করে মাথা নত করে আছে ।
সে পারবেনা অতীতের সেই ভয়ংকর সত্যিটা বলতে ।সে চায়না সেহের সেই ভয়ংকর সত্যির সম্মখীন হোক ।এতটা বছর তার থেকে এই সত্যি আড়াল করে গেছে সে চায়না সেই সত্যি সামনে আনতে ।সেই অতীত সামনে আসলে সবকিছু তছনছ হয়ে যাবে ।তার সেহেরকে তার হারাতে হবে ।না সেই অতীত কখনো সেহেরের সামনে আসতে দিবেনা যত যাই হোক না কেন !
দুজনের মাঝে নিরবতা বিরাজ করছে ।সেহের নিরবতা ভেঙ্গে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে

-“পারবেন না তো বলতে ?
ঠি ক আছে যেদিন সত্যিটা বলতে পারবেন সেদিনই সব ঠিক হবে !”

এসব বলে আর এক সেকেন্ড ও সেখানে অপেক্ষা করেনা সেহের ।হুরহুর করে ছাদ থেকে নেমে যায় ।আরহাম ছোট্ট একটা নিশ্বাস নেয় ।চোখজোড়া তার ছলছল করছে ।জীবনটা তাকে এমন এক মোরে এনে দাড় করিয়েছে যে চারদিকে তাকালে শুধুই অন্ধকার দেখতে পায় ।যেই একটু আলোর দিশা পেয়ে সেদিকে ছুটে আসে ।তা ধরার জন্য হাত বাড়ায় সেই সময়ই আলোটা নিবে যায় ।অদ্ভুদ জীবন তার ।বিষের চেয়েও বেশি তিক্ত তার এই জীবন !

কিছুক্ষন পর ছাদ থেকে নেমে রুমে আসতেই দেখে পুরো রুম অন্ধকার আচ্ছন্ন ।আরহাম আর ঘরে আলো জ্বালায় না ।ওয়াশরুমে ডুকে ফ্রেশ হয়ে নেয় ।রুমে এসে সেহেরের পাশে শুয়ে পড়ে ।সেহের অন্যপাশ ঘুরে শুয়ে আছে ।ফুপিয়ে কান্নার শব্দ আসছে ।আরহাম সেহেরের কাছে চলে যায় একদম তার গা ঘেষে যায় ।আলতো করে তাকে বুকে টেনে আনে । সেহের বাধাঁ দিতে চাইলেও পারেনা ।আরহামের শক্তির সাথে পেরে উঠেনা ।
আরহাম সেহেরের কপালে ঠোঁট ছুয়িয়ে আদুরে গলায় বলে

-“জানপাখিইইইই !”

সেহের কোন উত্তর দেয়না ।আরহাম আবার বলতে লাগে

-“আমি জানি আমি তোমাকে খুব বড় কষ্ট দিয়ে ফেলেছি ।তার জন্য তুমি আমাকে কষ্ট দেও ।নিজেকে কেন দিচ্ছ ?
আমাকে মারো কাটো বকো যা ইচ্ছে তাই কর ।কিন্তু প্লিজ নিজেকে এই ভাবে কষ্ট দিওনা ।”

সেহের মাথা তুলে শীতল কন্ঠে বলে উঠে

-“আপনি আমাকে পেয়ে গেছেন বলে কি আমার কোন মুল্যে নেই ?”

আরহাম মুচকি হেসে উত্তর দেয়

-“জানপাখি ! তোমার মূল্যে আমার কাছে কতটুকু তা তুমি আন্দাজও করতে পারবেনা ।কখনো যদি এমন কোন পরিস্থিতী আসে তোমার সুখের বিনীময়ে আমার জীবন দিতে হয় ।তবে নির্দ্বিধায় হেসে হেসে নিজের দেহ থেকে প্রান ত্যাগ করবো ।
কারন আমার কাছে তুমি অমূল্য রতন !”

সেহের ভাবলেশহীন ভাবে আরহামের দিকে তাকিয়ে আছে ।যদিও অন্ধকারে সবটা অস্পষ্ট কিন্তু আরহামের চোখের ভালোবাসাটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ।চোখে অনুতাপের আগুন ।সেহের আর কিছুক্ষন এই চোখে তাকিয়ে থাকলে মায়ায় পরে যাবে ।যা সে চায় না !
তাই আস্তে করে চোখ নামিয়ে বুক থেকে সরে আসতে নেয় ।কিন্তু আরহাম তা হতে দেয়না ।সেহেরের মাথা শক্ত করে নিজের বুকের সাথে ধরে ।করুন গলায় বলে

-“থাকোনা জানপাখি !
হয়তো কাল এই মুহূর্তটা নাও পেতে পারি ।তোমাকে সারাজীবনের জন্য মুক্ত করে হারিয়েও যেতে পারি ।”

কথাটা শুনতেই সেহেরের বুক কেপে উঠে ।সেহের আরহামের বুক খামচে ধরে ।চোখ থেকে দু ফোটা জল গড়িয়ে আরহামের বুকে পরে ।
আরহাম এক হাতে সেহেরের চোখের জল মুছে দেয় ।কপালে নিজের ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে বলে

-“আজ অনেক কান্নাকাটি হয়েছে আর না !
এবার একটু ঘুমানোর চেষ্টা করো ।”

বলেই আরহাম সেহেরের চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগে ।আস্তে আস্তে সেহেরের চোখ জোড়া লেগে আসে ।ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমায় ।

সকাল সাতটা চারদিকে কুয়াশায় ঘেরা তাই মনে হচ্ছে এখনো ভোর চারটা পাঁচটা বাজে ।সেহের গভীর ঘুমে মগ্ন ।আরহাম মুচকি হেসে সেহেরের কপালে ঠোঁটে ঠোঁট বুলিয়ে বিছানা ত্যাগ করে ।ফ্রেশ হয়ে নিচে বাগানের মর্নিং ওয়াক করতে চলে যায় ।
বেশ কিছু সময় কেটে গেছে আরহাম বাড়িতে ডুকবে এমন সময়ই পিছন থেকে বাচ্চার আওয়াজ কানে ভেসে আসে ।
আরহাম পিছনে তাকিয়ে দেখে অনুশা ছোট ছোট হাতে তাকে পিছন থেতে ধরে আছে ।আরহাম আশে পাশে তাকিয়ে একবার দেখে নেয় মনিশা আছে নাকি ।না মনিশা নেই ।আরহাম হাটুঁ ভাজ করে অনুশার সামনে বসে বলে

-“কিছু বলবে মাম্মাম ?”

অনুশা আদো আদো গলায় বলে

-“আপনি মিষ্টিমার হাসবেন্ড ! তাই না ?”

আরহাম মুচকি হাসে অনুশার প্রশ্নে তার পর বলে

-“হুমমমম মাম্মাম !”

-“তো আমি আপনাকে কি ডাকবো ?”

আরহাম অনুশার হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে

-“মামু বলে ডাকবে মাম্মাম ।”

অনুশা কনফিউজড হয়ে বলে

-“কিন্তু মামু কি করে হও ?
মামু মানে তো মায়ের ভাই ।তাই না ?”

আরহামের চোখ জোড়া জলে ভরে উঠে ।আজ কেমন পরিস্থিতীর সামনে সে দাড়িয়ে আছে নিজের ভাগনিকে তার মামা হওয়ার পরিচয়টা দিতে পারছেনা সে ।কি জবাব দিবে সে অনুশার এই প্রশ্নের ?
আরহাম কিছু বলতে নিবে তার আগেই মনিশার ধমকের আওয়াজ তাক কানে আসে ।মনিশা ধমকের স্বরে বলে

-“অনুশাাাাাাা !
অনুশা তোমাকে কতবার বলেছি অপরিচীত লোকের সাথে কথা না বলতে ।তুমি কি আমার কথা বুঝো না ?
যাও ! এক্ষুনি ঘরে যাও ।”

অনুশা কান্না করতে করতে ঘরে চলে যায় ।মনিশা বাড়ির দিকে পা বাড়াতেই পিছন থেকে আরহামের যেই পরিচীত ডাক তার কানে ভেসে আসে ।আরহাম বলে

-“মনি !
এতটা ঘৃনা করিস নিজের ভাইকে ? ”

মনিশা নিজেকে শক্ত করে আরহামের ডাকে পিছনে ফিরে বলে

-“কে মনি ? আমার নাম মনিশা ।
আর আমার কোন ভাই নেই ।আমার বাবা মা ভাই সবাই সেদিনই মারা গেছে যেদিন আমার স্বামী মারা গেছে ।
আপনি আমার কাছে শুধু মাত্র আমার স্বামীর খুনি !”

আরহাম ভেজা চোখে তাকিয়ে কাপাঁ কাপাঁ গলায় বলে

-“মনি সত্যিটা তুই জানিস ।সেদিন সাফিনের সাথে যা যা হয়েছে কোন কিছুতেই আমি জরিত ছিলাম না ।
তার পরও কেন আমাকে এমন শাস্তি দিচ্ছিস ? কেন নিজের পরিবার থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখছিস ?”

মনিশা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে

-“পরিবার ?কোন পরিবার ? আমার কোন পরিবার নেই ।এটা আমার বাড়ি এরাই আমার পরিবার ।
আর সেদিন সাফিনের সাথে যা যা হয়েছে সব কিছুর জন্য আপনি আর সেহের দায়ি । হ্যা মিস্টার আরহাম খাঁন। আপনাদের দুজনের জন্য আজ আমি স্বামী হারা আর আমার সন্তান নিজের বাবা হারিয়েছে ।
আমি আপনাদের শুধু ঘৃনা করি শুধুই ঘৃনা করি ।
আর একটা কথা অতীত সামনে আসলে আপনার সেহের আপনার থাকবে তো ? ”

মনিশা নিজের কথা শেষ করে বাড়িতে চলে যায় ।আরহাম সেখানেই ঠাই দাড়িয়ে থাকে ।বার বার তার কানে মনিশার বলা শেষ কথাটা বাজছে ।সত্যি কি সেহের অতীত জেনে তাকে ছেড়ে চলে যাবে ? তাকে কি সত্যিই সেহেরকে হারাতে হবে ?

চলবে……..❤️

Plz সবাই সবার মতামত জানাবেন😊😊😊

ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন ❤️❤️❤️
চলবে…..❤️

Plz সবাই সবার মতামত জানাবেন😊😊😊

ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন ❤️❤️❤️
চলবে ….❤️

Plz সবাই সবার মতামত জানাবেন 😊😊😊

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ।❤️❤️❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here