বিষাক্ত প্রেম পর্ব -১৮+১৯+২০

#বিষাক্ত প্রেম ২

Urme prema (sajiana monir)

পার্ট: ১৮

(কাল আমার আইডিতে সমস্যা হয়েছিলো দুপুরের পর থেকে লগইন করতে পারছিলাম না তাই গল্প দিতে পারিনি সরি 😓। )

নিজের কাছের মানুষগুলোর থেকে ধোকা পাওয়া খুব বেশি কষ্টের ।মানুষ সব সয্য করতে পারলেও বিশ্বাসঘাতকতা সয্য করতে পারেনা ।
সেহের রুমে এসে নিজের চোখের জল ফেলছে ।হঠাৎ ই রুমে কারো আসার শব্দ সেহের তারাতারি করে নিজের চোখের জল মুছতে ব্যস্থ হয়ে পরে । পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে আরহাম এসেছে ।অফিসের জন্য রেডি হচ্ছে ।সেহের আরহামের সামনে যেয়ে দাড়ায়। আরহাম সেহেরের এমন কাজে বেশ অবাক হয় ।কপাল কুচঁকিয়ে জিগাসা দৃষ্টিতে সেহেরের দিকে তাকায় ।সেহের আরহামের হাতে ঘড়ি পড়িয়ে দিয়ে ওয়ালেট টা আরহামের দিকে এগিয়ে দিয়ে মলিন হেসে বলে

-“আমার খুব ইচ্ছা ছিলো বিয়ের পর রোজ সকালে আমার হাসবেন্ড যখন অফিসে যাবে আমি তাকে রেডি করে দিবো !”

আরহাম তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে
-“তুমি তো আমাকে নিজের হাসবেন্ড মানো না আর বলেছিলে কোন দিন মানবেও না !
আমার কাছাকাছি থাকলে তোমার তো শ্বাস বন্ধ হয়ে যায় গা ঘিন ঘিন করে তাই না ?
তো এখন আমার কাছে এসেছো কেন !
এসব নাটক কেন ?”

-“আগের আমি আর এখনকার আমির মাঝে অনেক পার্থক্য ।”

-“এক রাতে এত পরিবর্তন ?
সত্যি কি তুমি পরিবর্তন হয়েছো নাকি আমাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য নতুন কোন নাটক করছো ।”

সেহের অবাক হয়ে বলে
-“আমার এসব কিছু আপনার নাটক মনে হচ্ছে ?”

-“তা নয় তো কি !
যে মেয়ে আমাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য নিজেকে মারা চেষ্টা করতে পারে তার কাছে এটা বড় কিছুনা।”

আরহামের প্রত্যেকটা কথা সেহেরের বুকে তীরের মত লাগছে ।সেহেরের চোখে জল চকচক করছে মনে হচ্ছে এখনই টপ করে বৃষ্টির মত ঝড়ে পড়বে ।সেহেরের নাক টেনে বড় শ্বাস নিয়ে কাপাঁ কাপাঁ গলায় বলে

-“আমি জানি আরহাম আপনি আমার উপর খুব বেশি রেগে আছেন ।রেগে থাকারই কথা ।আমি এতদিন যা যা করেছি আপনাকে ভুল বুঝেছি এত অপমান করেছি সব কিছুর পর আপনার এমন ব্যবহার স্বাভাবীক !
কিন্তু আমিও হার মানবোনা নিজের চেষ্টা চালিয়ে যাবো আবার আগের মত আপনার মনে নিজের জন্য জায়গা করে নিবো ।আদর্শ স্ত্রী হবো নিজের সব দায়িত্ব পালন করবো ।যা হারিয়েছি তা আবার আদায় করে নিবো !”

সেহের নিজের কথা শেষ করে আরহামের আরো কাছে এগিয়ে যায় তারপর পায়ের আঙ্গুলের উপর ভর দিয়ে দাড়িয়ে চোখ বন্ধ করে আরহামের কপালে চুমু একেঁ দেয় ।
আরহাম এবার বেশ বড়সড় শক খায় ।সেহের আরহামের রিএকশন দেখে মিটমিট করে হাসছে ।
আরহাম সেহেরের দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে গাড়ির চাবিটা নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে পরে ।সেহের মুচকি হেসে আরহামের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে !

আরহাম যাওয়ার পর আশা বেগম রুমে আসে ।সেহের আশা বেগমকে দেখে বলে

-“মা আপনি ?
কোন দরকার ছিলো তো আমাকেই নিচে ডেকে নিতেন ।কষ্ট করে সিড়ি বেয়ে কেন উপরে এসেছেন ।”

-“না রে মা কষ্ট কিসের ।নিচে বসে বসে বোর হচ্ছিলাম তাই ভাবলাম তোর সাথে সময় কাটাই ।”

-“আমিও তাই ভাবছিলাম ।যাক ভালো হয়েছে এখন আপনার থেকে উনার ছোটবেলার গল্প ,পছন্দ অপছন্দ সব জেনে নিবো ।”

আশা বেগম মুচকি হেসে সেহের মাথায় হাত রেখে বলে

-“মা তুই মন থেকে সবটা মেনে নিয়েছিস তো ? দেখ মা আমি জানি আমার ছেলেটার বড্ড বেশি রাগ জ্বেদ রাগলে তার কোন কিছুর হুস থাকেনা মাঝে মাঝে খুব বেশি পাগলামো করে কিন্তু সব কিছুর মাঝে এটাও সত্যি যে আমার ছেলেটা খুব বেশি ভালোবাসে তোকে ।এতটা ভালোবাসে যে তোর জন্য দুনিয়াদারী সব কিছু ছাড়তেও রাজি ।
আমার ছেলেটাকে কখনো ছেড়ে যাস না তাহলে হয়তো ওকে বাচাঁতে পারবোনা ।“

সেহের আশা বেগমের হাতের উপর হাত রেখে তাকে আশ্বাস দিয়ে বলে

-“মা আমার উপর ভরসা রাখুন আমি কখনো আরহামকে একা ছেড়ে যাবোনা ।
আমি জানি আমি অনেক ভুল করেছি ।আরহামকে অনেক কষ্ট দিয়েছি কিন্তু মা আর না অনেক ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে এখন সব ঠি ক হবে ।আমি আরহামের মান অভিমান দূর করে সব আগের মত স্বাভাবীক করবো ।আমাদের বিয়েটা আর পাচঁটা বিয়ের মত হয়নি কিন্তু আমাদের বাকি জীবন খুব সুন্দর করে সাজাবো ।”

-“আমি দোয়া করি সারাজীবন তোরা সুখে শান্তিতে একসাথে থাক।
আচ্ছা এসব কথা ছাড় তোকে কিছু দেখানোর ছিলো !”

সেহের উৎসুক দৃষ্টিতে আশা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে

-“কি মা ?”

-“আমার সাথে আয় দেখাচ্ছি ।”

বলেই সেহেরের হাত ধরে রুমের কাবার্ডের সামনে নিয়ে যায় । আশা বেগমের কি করতে চাইছে সেহের কিছুই বুঝছে না ।হেবলার মত তাকিয়ে আছে ।
আশা বেগম কাবার্ড খুলে দিয়ে বলে

-“এই নে তোর সার্প্রাইজ !”

সেহের সামনের দিকে তাকিয়ে হা করে আছে ।পুরো দেয়াল জুরে কাবার্ডে বিভিন্ন রকমের শাড়ি ,লেহেঙ্গা ,গ্রাউন মেচিং ব্যাগ ,জুতা ,জুইলারী রাখা আছে ।আর সবগুলো জিনিসই খুবই সুন্দর দেখেই মনে হচ্ছে অনেক এক্সপেনসিভ ।সেহের আশা বেগমের অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে

-“মা এসব কার ?”

আশাবেগম সেহেরের এমন বোকার মত কথা শুনে মৃদ্যু হেসে বলে

-“যেহেতু তোর রুম তো অন্য কারো তো আর হবেনা।
অবশ্যই তোর জন্য এসব !”

-“এতকিছু আমার জন্য ?
মা এতকিছুর কি দরকার ছিলো ।”

-“দরকার ছিলোনা মানে অবশ্যই দরকার ছিলো ।তাছাড়া আমি এসব করিনি ।এসব আরহামের পাগলামো ।প্রত্যেকটা জিনিস নিজে পছন্দ করে কিনেছে ।আমি যখন জিগাসা করি , এখন এসব পাগলামো কেন ? বিয়ের পর তোকে নিয়েই শপিং করতে পারতো ।
আরহাম উত্তরে বলে ,শপিং এ যাবে আসে পাশের লোকজন আমার সেহেরের দিকে তাকাবে তাকে চোখ দিয়ে গিলে খাবে ।তা আমার সয্য হবেনা ।আমি চাইনা আমার সেহেরের উপর কারো নজর পরুক আমার সেহেরকে দেখার অধিকার শুধু আমার ।ওর প্রয়োজনীয় সব কিছু বলা মাত্রই বাড়িতে পৌছিয়ে যাবে ।
সেদিন আরহামের কথা শুনে খুব বেশি অবাক হয়েছিলাম কতটা ভালোবাসলে ,কতটা পাগল হলে কেউ এসব করতে পারে ।এমন পাগলের মত ভালোবাসতে পারে !”

সেহেরের আশা বেগমের কথা শুনে থ মেরে আছে ।
চোখ গুলো জলে চকচক করছে মনে হচ্ছে এখনই বৃষ্টির ন্যায় ঝড়ে পড়বে ।
সত্যি তো কতটা ভালোবাসলে কেউ এমন করতে পারে ?
এতটা ভালোবাসে আরহাম তাকে ?
তার জন্য কত কি করলে আর সে কি করলো ? আরহামকে অবিশ্বাস করলো ,তাকে কষ্ট দিলো ,তাকে যা তা বলে দিলো !
সেহেরের নিজের গালে কোষিয়ে ২ টো থাপ্পর মারতে ইচ্ছে করছে ।
আশা বেগম সেহেরের টলটল চোখ দেখে সেহেরের গালে হাত রেখে বলে

-“যা হয়েছে তা অতীত ছিলো ।পুরোনো সব কথা ভুলে যা ।নতুন করে আবার সব শুরু কর !”

সেহের মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে বলে

-“হ্যা মা আমি নতুন করে আবার আমাদের জীবন সাজাবো যেখানে কোন অবিশ্বাসের ছায়াও থাকবেনা ।
আমি আমার আরহামকে আবার আগের রূপে নিয়ে আসবো !”

-“তাই যেন হয় !
অনেক বেলা হয়েছে ,আমি নিচে গিয়ে দেখি দুপুরের রান্না কতদূর পৌছালো ।”

আশা বেগম কথা শেষ করেই নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় হঠাই সেহের কিছু একটা ভেবে পিছন থেকে আশা বেগমকে ডাকে ।তিনি পিছন ফিরে বলে

-“কিছু বলবি মা ?”

-“মা কিছু জিগাসা করার ছিলো !

-“এতে পার্মিশনের কি আছে বলে ফেল ।”

-“মম.. মা উনি দুপুরে কোথায় লান্চ করে ।”

-“ড্রাইভার কে দিয়ে খাবার পাঠিয়ে দেই ।”

-“আ..আসলে মা ব..বলছিলাম কি ইয়ে মা..মানে

আশা বেগম বেশ বুঝতে পারছে সেহের কি বলতে চাইছে তিনি মুচকি হেসে সেহেরের গাল টেনে বলে

-“আরহামের জন্য লান্চ নিয়ে যেতে চাও তাই তো ?
এতে এত লজ্জা পাবার কি আছে ।লান্চ ও করা হবে এক সাথে সময়ও কাটানোও হবে । আমিও আগে প্রায়ই তোমার শ্বশুরের জন্য অফিসে লান্চ নিয়ে যেতাম ।
তোমাদের নতুন বিয়ে হয়েছে দুজনের একসাথে সময় কাটানো দরকার ।যাও তারাতারি রেডি হয়ে নেও আমি লান্চ পেকিং করে দিচ্ছি ।
আর শুনো এমন ভাবে তৈরী হও যেন আমার ছেলে নিজের চোখ ফেরাতে না পারে ।”

সেহের শ্বাশুরীর কথা শুনে লজ্জায় লাল নীল হয়ে যাচ্ছে ।কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা ।লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে !
আশা বেগম মুচকি হেসে নিচে চলে যায় ।

মাত্রই গাড়ি অফিসের সামনে থামে ।সেহের খাবারের ব্যাগটা শক্ত হাতে ধরে বড় একটা নিশ্বাস নেয় । তার মনে কিছুটা সংকোচ কাজ করছে ।না জানি আরহাম তাকে অফিসে দেখে কেমন ভাবে রিয়েক্ট করবে ? কি ভাববে ? আরো না না রকম প্রশ্ন জাগছে ।
ড্রাইভারের ডাকে তার ধ্যান ভাঙ্গে। ড্রাইভার বলে

-“মেডাম অফিসে আইয়া পড়ছি !
আফনে দাড়ান আমি গাড়ি রাইখা আহি তারপরে সারের কেবিনে লইয়া যাই ।”

-“সমস্যা নেই ভাইয়া !
আমি যেতে পারবো আপনি গাড়িতেই থাকেন ।”

-“ বড় মেডাম তো কইছে সারের কেবিনে আফনেরে দিয়া আইতে ।
পরে বড় মেডাম জানলে রাগ করবো ”

-“আমি মাকে সামলিয়ে নিবো ।আপনি চিন্তা করবেন না ।এই নিন টাকা কেনটিন থেকে লান্চ করে নিয়েন ।

সেহের নিজের কথা শেষ করে অফিসের দিকে পা বাড়ায় ।মায়ের কথা মন খুব সুন্দর করে সেজেছে যেন তার থেকে আরহামের চোখ ফিরতে না পারে ।কালো রংয়ের সোনালি পাড়ের শাড়ি পড়েছে ।চোখে মোটা করে কাজল দিয়েছে ঠোঁটে হালকা গোলাপি রং এর লিপস্টিক ।কমোড় পর্যন্ত চুলগুলো হাওয়ায় দুলছে ।
আফিসে ডুকতেই আসে পাশের লোকজন হা হয়ে তাকিয়ে আছে ।ছেলেরা তো তাকিয়ে আছেই মেয়েরাও চোখ ফিরাতে পারছেনা ।সবাইকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সেহেরের কেমন জানো খচখচ লাগছে ।বারবার নিজের চুল গুলো কানের নিচে গুজচ্ছে ।আরহামের কেবিন কোন দিকে সে জানে না ।কার কাছে জিগাসা করবে তা ও বুঝতে পারছে না ।তার উপর আসে পাশের সবাই তার দিকে কেমন অদ্ভুদ ভাবে তাকিয়ে আছে ।সেহের একবার নিজের দিকে তাকিয়ে চোখ বুলিয়ে নেয় ।না সব কিছুই তো ঠি ক আছে তাহলে সবাই তাকে এমন নজরে দেখছে কেন ?
সেহের চার দিকে চোখ ঘুরিয়ে দেখে অফিসের মেয়েগুলো বেশ স্টাইলিশ তাদের ওয়েস্টান ড্রেস-আপ ।হয়তো তাদের এখানে সেহেরের এমন শাড়ি পরাটা বেমানান লাগছে তাই এমন অদ্ভুদ ভাবে তাকিয়ে আছে ।
কয়েকটা মেয়ে সেহেরের দিকে তাকিয়ে কি যেনো কানাকানি করছে ।এসব দেখে সেহেরের মুখটা এতটুক হয়ে যায় ।
সেহেরকে এমন ভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে একটা মেয়ে তার দিকে এগিয়ে এসে জিগাসা করে

-“মেম আপনি কি কাউকে খুজঁচ্ছেন ?”

সেহের পিছন ফিরে দেখে বেশ ২২-২৩,বছরের বেশ সুন্দরী একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে চুলগুলো ব্রাউন কালার গায়ের রং দুধের মত সাদা পড়নে হাটু পর্যন্ত কালো স্কার্ট আর সাদা শার্ট ।

-“আপনি কি আমার কথা শুনতে পারছেন ?”

মেয়েটির ডাকে সেহেরের ধ্যান ফিরে ।সেহের গলা ঝেড়ে শান্ত স্বরে বলে

-“জ্বি আরহাম খানের কাছে এসেছি ।
উনার কেবিনটা কেবিনটা কোন দিকে ?”

-“মেম স্যার তো এখন একটা জরুরী মিটিং এ আছে ।মিটিং শেষ না হওয়া পর্যন্ত উনার কেবিনে কাউকে ডুকতে দিতে নিষেদ করেছেন ।
আপনি ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করুন স্যারের মিটিং শেষ হলেই আপনাকে ডাকবো ।”

সেহের আর কথা বাড়ায় না । খাবারের ব্যাগটা হাতে নিয়ে চুপচাপ চেয়ারে বসে থাকে ।আরহামের মিটিং শেষ হওয়ার অপেক্ষায় ।

মাত্রই আরহামের মিটিং শেষ হয়েছে ।চোখ বন্ধ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে ।এমন সময়ই ফোনটা বেজে উঠে ।চোখ খুলে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে তার মা ফোন করেছে ।আরহাম ফোন টা রিসিভ করে বলে

-“হ্যা মা বলো “

-“সেহের ঠি ক মত পৌছিয়েছে ?”

-“আমি তো অফিসে ।
সেহের কোথা থেকে আসবে ?”

আশা বেগম বেশ চিন্তিত হয়ে বলে

-“এখনো পৌছায়নি।
সেহের তো সেই কখন বাড়ি থেকে বের হয়েছে এতক্ষনে তো পৌছিয়ে যাবার কথা ।”

আরহামের এবার রেগে বলে

-“কি হয়েছে মা স্পষ্ট ভাবে বলো !
সেহের কোথায় ?”

-“তোর জন্য অফিসে খাবার নিয়ে গেছে ।এতক্ষনে তো পৌছিয়ে যাবার কথা সেই দুপুর ১ টায় বের হয়েছে এখন বাজে ৩:৩০ টা ।”

এ কথা শুনা মাত্রই আরহামের মাথা বিগড়ে যায় ।কোন উত্তর না দিয়ে ফোনটা কেটে সাথে সাথে সেহেরের ফোনে ফোন দেয় ।ফোন বাজছে কিন্তু রিসিভ করছেনা ।বেশ কয়েক বার ট্রায় করে কিন্তু ফোন ধরছে না ।আরহাম রেগে ফোনটা ফ্লোরে আছাড় মারে ।
হঠাৎই মনে পরে সে বলেছিলো মিটিং চলা কালিন কাউকে ভিতরে না আসতে দিতে ।তবে কি সেহের এসে চলে গেছে ।সাথে সাথে কেবিনের বাহিরে চলে আসে চিৎকার করে তার পি .এ কে ডাকে ।আরহামের চিৎকার শুনে মেয়েটি ভয়ে তারাতারি ছুটে আসে ।
আরহাম গম্ভির ভাবে প্রশ্ন করে

-“আমার সাথে দেখা করতে কোন মেয়ে এসেছিলো ?”

মেয়েটি ভয়ে ভয়ে উত্তর দেয়

-“জ্বি স্যার !”

আরহাম রেগে দাতেঁ দাতঁ চেপে বলে

-“ইউ স্টুপিড।
তুমি আমাকে এখন বলছো ?”

মেয়েটি ভয়ে কাপাকাপিঁ করছে ।অফিসের সবাই আরহামের রাগ দেখে হা হয়ে আছে ।আরহাম আবার চিৎকার দিয়ে বলে

-“মেয়েটি কোথায় ?”

মেয়েটি কাদোঁ কাদোঁ গলায় বলে

-“স্যার ওয়েটিং রুমে বসে আছে ।”

আরহাম আর এক সেকেন্ড ও দেরী করেনা ।ওয়েটিং রুমের দিকে ছুটে যায় ।ওয়েটিং রুমে যেয়ে দেখে সেহের খাবার ব্যাগটা কোলে নিয়ে শক্ত করে জরিয়ে ধরে বসে আছে আর বার বার ঘড়ি দেখছে ।আরহাম বড় একটা নিশ্বাস ছাড়ে ।কিছু সময় আগে বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলো ।সেহেরের হয়তো কোন ক্ষতি হয়েছে এসব ভেবে তার আত্না কেপেঁ উঠেছিলো ।কিন্তু এখন সেহেরকে নিজের চোখের সামনে দেখে শান্তি লাগছে ।তারাতারি করে সেহেরের কাছে যেয়ে তাকে টান দিয়ে নিজের বুকের সাথে জরিয়ে ধরে ।পাগলের মত তার সারা মুখে চুমু দিতে লাগে ।সেহের হ্যবলার মত তাকিয়ে আছে !”

চলবে….❤️❤️❤️#বিষাক্ত প্রেম ২

Urme prema (sajiana monir)

পার্ট: ১৯

আরহাম একের পর এক চুমু দিচ্ছে সেহের গোল গোল চোখ করে হ্যবলার মত তাকিয়ে আছে ।সব কিছু তার মাথা দু হাত উপর দিয়ে যাচ্ছে ।এমন কি হয়েছে যে এংরি বার্ড এমন নরম হয়ে নেতিয়ে গেল ?
সেহের পিছনে তাকিয়ে দেখে অফিসের সব লোক জন হা করে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে ।তারা হয়তো তাদের বসের এই রূপটা হজম করতে পারছেনা ।সেহেরের বেশ লজ্জা লাগছে ।আচ্ছা এই লোক এমন বেপরোয়া কেন ? সবার সামনে কেউ কি এমন ভাবে জরিয়ে ধরে ? লজ্জায় সেহেরের মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে ।
আরহাম এখনো সেহেরকে শক্ত করে বুকের সাথে জরিয়ে ধরে আছে ।পিছনে থেকে অফিসের লোকজন কানাকানি শুরু করে দিয়েছে ।সেহের তা দেখে আরহামের দিকে মাথা উচুঁ করে তার দিকে তাকিয়ে মিনমিন করে বলে

-“কি করছেন ।আসে পাশের সবাই তাকিয়ে আছে তো ।।”

সেহের কথা যেন আরহামের কানেই যায়নি সে আগের মত বুকের সাথে জরিয়ে ধরে আছে ।এবার সেহের আরহামের বুকে আলতো করে ধাক্কা দিয়ে বলে

-“ প্লিজ ছাড়ুন !
সবাই দেখছে ।”

আরহামের হুস আসে সেহেরের ধাক্কায় ।সে আসে পাশে তাকিয়ে দেখে সত্যি সবাই তাদের দেখছে ।আরহাম পিছনে ফিরে জোরে ধমকের স্বরে বলে

-“এখানে দাড়িয়ে কি দেখছেন ।
এখানে কি তামাশা চলছে ?

আবার রেগে ধমকে বলে

-“এক্ষুনি যার যার কাজে ফিরে যান ।”

২ সেকেন্ডে পুরো জায়গা খালি হয়ে যায় ।যে যে যার যার মত চলে গেছে ।
সেহের চুপচাপ খাবারের ব্যাগ নিয়ে দাড়িয়ে আছে ।আরহাম সেহেরের মাথা থেকে পা পর্যন্ত একবার দেখে নেয় ।সেহেরকে অফিসে শাড়ি পড়ে আসতে দেখে তার মাথা বিগড়ে যায় ।সেহেরের হাত ধরে টানতে টানতে নিজের কেবিনে নিয়ে যায় ।সেহের আরহামের এমন হঠাৎ রেগে যাওয়ার কারন কিছুতেই বুঝছেনা ।আরহাম কেবিনের দরজা লক করে এক পা এক পা করে সেহেরের দিকে এগিয়ে আসতে লাগে ।সেহের ভয়ে ঢোক গিলে পিছনের দিকে যাচ্ছে ।
আরহাম সেহেরের একদম কাছে এসে শক্ত করে তার কমোড় চেপে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলে ।দুজনের মাঝে ১ তিল পরিমান ফাকাঁ নেই ।সেহেরের হার্ট বিট খুব দ্রুত বাড়ছে সে চোখ বন্ধ করে মাথা নিচু করে আছে ।
আরহাম সেহেরের থুতনি ধরে উচুঁ করে ।সেহেরের চোখ আরহামের চোখে পড়তেই সে আরহামের চোখে স্পষ্ট রাগ দেখতে পারছে ।আরহাম দাতেঁ দাতঁ চেপে বলে

-“তুমি শাড়ি পরে সেজেগুজে বাড়ি থেকে কেন বের হয়েছো ?”

আরহামের কথায় যেন সেহের আসমান থেকে পরে ।অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলে

-“এ্যাাাাাাাাাা ।মানে আমি শাড়ি পড়েছি সেজেছি তাই আপনি রেগে আছেন ?
আমি ভেবেছি হয়তো আমি কিনা কি বড় অপরাধ করে ফেলেছি তাই আপনি এমন রেগে আছেন ।”

আরহাম চুপ করে শান্ত ভাবে তাকিয়ে সেহেরকে দেখছে ।সেহের আবার নিজের দিকে চোখ বুলিয়ে দেখে নেয় ।সবই তো ঠি ক আছে তাহলে সমস্যাটা কোথায় ?সেহের নিজের প্রশ্নের কোন উত্তর না পেয়ে আরহামের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টিয়ে বলে

-“কেন আমাকে কি দেখতে খুব বাজে লাগছে ?
এটা তো আপনার পছন্দের শাড়ি গুলোর মধ্যে একটা ছিলো ।”

এবার আরহামের মেজাজ আরো বেশি বিগড়ে যাচ্ছে ।এ মেয়ে এমন অবুঝ কেন সবটা কি তাকে ভেঙ্গে বুঝাতে হবে ? সে কি কিছু নিজের থেকে বুঝে নিতে পারে না ?
এবার আরহাম বেশ রেগে বলে

-“আমি শাড়ি গুলো এনেছি আমার সামনে পড়ার জন্য ।ঐ শাড়ি পরে অন্যকারো সামনে আসার জন্য না !
লিসেন তোমার যত সাজগোজ আছে সব আমার সামনে করবে ।তোমার দিকে অন্যকেউ তাকাবে , তোমার সৌন্দর্য অন্যকেউ দেখবে তা আমি সয্য করতে পারবোনা ।
তুমি আমার তো তোমাকে সব ভাবে দেখার অধিকার শুধু আমার রয়েছে ।নেক্সট টাইম এমন সেজেগুজে শাড়ি পরে বাড়ি থেকে বের হবেনা ! ”

সেহেরের হা করে আরহামের দিকে তাকিয়ে আছে ।সে আরহামের কথা শুনে হাসবে না কাদঁবে তা ভেবে পাচ্ছেনা ।কেউ কাউকে নিয়ে কতটা পজেসিভ হলে এমন কথা বলতে পারে ?
এলোক কি সত্যি পাগল নাকি ।
সেহের ফিক করে হেসে দেয় ।আরহাম ছোট ছোট রাগি চোখে সেহেরের দিকে তাকিয়ে আছে ।সেহের আরহামের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলে

-“সিরিয়াসলি আরহাম ?
আমাকে এতটা ভালোবাসেন যে কেউ তাকালে ও সয্য করতে পারেন না !”

আরহাম সেহেরের কথায় থতমত খেয়ে যায় ।সে সেহেরের কথা এড়ানোর জন্য বলে

-“তুমি খাবার নিয়ে কেন এসেছো ?
ড্রাইভার কে দিয়ে পাঠিয়ে দিতে !”

সেহের বেশ বুঝতে পারছে আরহাম তার কথা এড়ানোর জন্য এসব বলছে ।সেহের মুচকি হেসে বলে

-“আমার ইচ্ছে ছিলো আজ দুপুরে আপনার সাথে লান্চ করবো নিজে হাতে আপনাকে খায়িয়ে দিবো তাই আমি নিয়ে এসেছি ।”

-“খাবারে বিষ টি -স মিলিয়েছো নাকি ? যে এত জোর করছো নিজ হাতে খায়িয়ে দেওয়ার জন্য !”

আরহাম কথাটা মজার ছলে বললেও সেহের আরহামের কথায় খুব বেশি আঘাত পায় ।আরহাম তাকে এতটা নিচু মনে করে ? আরহামের মনে তার জন্য এই ধারনা ?
এসব ভেবে মুহূর্তেই সেহেরের মুখ কালো মেঘে ডেকে যায় চোখ দুটো টলটল করছে মনে হচ্ছে এখনই বৃষ্টি নামবে ।সেহের আর কোন কথা না বলে আরহামের সামনে খাবার রেডি করে দিতে লাগে ।আরহাম বেশ বুঝতে পারছে সেহের তার কথাটা সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছে ।
সেহের খাবার রেডি করে দিয়ে যেই যেতে নিবে ঠি ক সেই সময় আরহাম পিছন থেকে তার হাত খপ করে ধরে ফেলে ।সেহের পিছনে ফিরে শান্ত স্বরে বলে

-“কিছু লাগবে ?”

আরহাম সেহেরের চোখের দিকে তাকিয়ে আনমনে বলে

-“হুম তোমাকে লাগবে ।”

সেহের আরহামের কথার অর্থ বুঝতে না পেরে আবার জিগাসা করে

-“জ্বি বুঝলাম না কি লাগবে ।”

-“ইয়ে মানে বলছিলাম কি ।আমার কিছু কাজ আছে যা এখনই কমপ্লিট করতে হবে ।তুমি যদি একটু খায়িয়ে দিতে তাহলে কাজ করতে সুবিধা হতো !”

এসময় আরহাম পুরোপুরি ফ্রি ।তার কোন কাজ নেই ।সরাসরি সেহেরকে বলতে পারছেনা তার হাত থেকে খেতে চায় ।তাই এই বাহানা দিতে হচ্ছে ।
সেহের কোন কথা না বলে প্লেটে খাবার সার্ভ করে আরহামে খায়িয়ে দিতে লাগে ।আরহাম মুগ্ধ নয়নে সেহেরকে দেখছে ।আজ তার বউটা কে সত্যি খুব সুন্দর লাগছে ।তার হুর থেকে চোখই সড়াতে পারছেনা ।বার বার তার বুকে উথাল পাথাল ঝড় তুলে দিচ্ছে ।ইচ্ছে করছে সেহেরকে জরিয়ে ধরে বুকের সাথে মিশিয়ে ফেলতে ।

সেহের হাত ধুঁয়ে এসে টেবিলের প্লেট বাটিগুলো গুজগাজ করছিলো ।আরহাম বেশ মনযোগ সহকারে সেহেরের প্রত্যেকটা কাজ দেখছিলো ।সেহেরের মন খারাপটা স্পষ্ট তার মুখে ফুটে উঠেছে ।মজার ছলে আরহাম তার হুরটাকে খুব বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছে এতোটাও বলা তার উচিত হয়নি !
সেহের কাজ শেষ করে যেই যেতে নিবে হুট করে আরহাম তার হাত টেনে নিজের কোলে বসায় ।আজ সেহের ছুটাছুটি করার চেষ্টা করেনা খুব শান্ত ভাবে বসে আছে ।এতক্ষন আরহামের উপর তার যেই অভিমানের মেঘ ছিলো আরহামের কাছে টানাতে তা চোখ থেকে বৃষ্টির ন্যায় ঝড়ে পড়ছে ।
কারো উপর অভিমান করে থাকলে পরবর্তিতে যদি সে ব্যক্তি কাছে টেনে নেয় তখন আরো বেশি কষ্ট হয় বুক ফেটে কান্না আসে ।সেহেরের ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে আরহামের এভাবে টেনে নেওয়াটা তার ভিতর ভেঙ্গে চুরমার করে দিচ্ছে বুক ফাটিয়ে তার কান্না আসছে !
সেহেরের চোখ থেকে জল টপটপ করে আরহামের হাতের উপর পড়তেই আরহামের হুস আসে ।সে সেহেরের দুগালে নিজের হাত রেখে তার দিকে ফিরায় ।সেহেরের চোখে জল দেখে আরহামের তিব্র যন্ত্রনা হচ্ছে ।
সেহের আরহামের দিকে মাথা তুলে তাকিয়ে কাপাঁ কাপাঁ গলায় বলে

-“এখন আর আমাকে আগের মত ভালোবাসেননা তাই না ?
আমাকে দেখলে কি খুব বেশি ঘৃনা হয় !”

সেহেরের কথাগুলো আরহামকে খুব বেশি যন্ত্রনা দিচ্ছে ।মনে হচ্ছে কেউ তার বুকে সেকেন্ডে সেকেন্ডে হাজারো ছুড়ি আঘাত করছে ।
আরহাম সাথে সাথে সেহেরকে নিজের বুকের সাথে জরিয়ে ধরে তার চুলের ভাজে নিজের মুখ ডুবায় ।অনেক সময় অনেক কথা মুখে বলতে হয়না স্পর্শ আর অনুভূতির মাঝেই তা বুঝে নেওয়া যায় ।
সেহের খুব শক্ত করে আরহামকে জরিয়ে ধরে আস্তে আস্তে তার কান্নার বেগ থামছে ।
এভাবে বেশ কিছু সময় কেটে যায় ।হঠাৎই দরজায় কেউ নক করায় আরহামের ধ্যান ফিরে ।সে সেহেরকে নিজের বুক থেকে তুলে দেখে তার চোখ মুখ লাল হয়ে আছে চোখের কাজলটা লেপ্টে গেছে ।আরহাম রুমাল দিয়ে চোখের লেপ্টে থাকা কাজলটা মুছে দেয় ।সেহের মাথা নত করে আছে আরহাম সেহেরের চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিতে দিতে বলে

-“তুমি এখানে ৩০ মিনিট বসো আমি কাজ গুলো শেষ করেনি পরে এক সাথে বাড়িতে যাবো ।”

সেহের মাথা ঝাকিয়ে পাশের চিয়ারটায় বসে পরে ।আরহাম পিওন কে ডেকে সেহেরের জন্য শর্মা আর চকলেট মিল্কশেক অর্ডার করে ।
সেহের আরহামের কাজ গুলো আড়চোখে দেখছে ।পিওন খাবার নিয়ে আসতেই আরহাম খাবার গুলো সেহেরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে

-“পুরোটা শেষ করো !”

-“না না আমি এখন কিছু খাবো না ।আসার সময় নাস্তা করে এসেছি তাই খুদা নেই ।”

-“আমি রহিমার কাছ থেকে শুনেছি আপনি ১২ টায় সকালের নাস্তা করেছেন ।তাই খাওয়ার সময় আপনাকে জোর করিনি ।
বাসা থেকে এসেছো ৩-৪ ঘন্টা হয়ে গেছে তো খেয়ে নেও !”

-“সত্যি আমি খেতে পারবোনা !”

আরহাম সেহেরের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকাতেই সেহের আর কথা বাড়ায় না চুপচাপ খেতে লাগে ।
সেহের মিল্কশেকে চুমুক দিয়ে বলে

-“আচ্ছা আপনি আমার সব খবরাখবর রহিমা খালা থেকে নেন ।তাই না ?
আমি কখন কি করছি না করছি সব ।এত কষ্ট না করে , আমাকে সরাসরি ফোন করে জিগাসা করলে কি হয় ?
আমাকে ফোন দিলে কি আমি আপনাকে ফোনের ভিতর থেকে কামড় দিবো ?”

আরহাম আড়চোখে সেহেরের দিকে একবার তাকিয়ে আবার কাজে মন দেয় ।সেহের আরহামের ডোন্ট কেয়ার ভাব দেখে মুখ ভেঙচি মেরে আবার খেতে শুরু করে ।
আরহামের কাজ শেষ ।মাত্রই দুজন গাড়িতে উঠেছে বাড়ির উদ্দেশ্য ।শীতের শুরু তাই তারাতারিই বেলা ডুবে যায় ।চারপাশে অন্ধকার নেমে এসেছে ।রাস্তায় লাল নীল বিভিন্ন বাতি জ্বলছে ।দিনের চেয়ে রাতের বেলা ঢাকা শহর আরো বেশি সুন্দর হয় ।গাড়ি নিজ গতিতে চলছে ।আরহাম সেহের থেকে বেশ দুরত্ব রেখে বসেছে ।মিনিমাম দুজনের মাঝে ১ হাত পরিমান ফাকাঁ ।সেহের তা লক্ষ করে একদম আরহামের গাঁ ঘেষে বোসে খালি স্থান পূর্ন করে দেয়।আরহাম জানালার দিক থেকে ঘাড়ঁ ঘুরিয়ে ছোট ছোট চোখ করে ভ্রু কুচঁকিয়ে সেহেরের দিকে তাকায় ।সেহের ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আরহামের কাধেঁ মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে ফেলে ।আস্তে আস্তে আরহামের সাথে আরো জরিয়ে যায় ।আরহাম রোবটের মত বসে আছে ।
সেহের এক চোখ খুলে দেখে আরহামের বেশ বিরক্তি নিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে ।তা দেখে সেহের মিটমিট করে হেসে বিরবির করে বলে

-“সবে তো শুরু মিস্টার হাসবেন্ড ।
আরো কত কি সইতে হবে !”

সেহেরকে দেখানোর জন্য মুখে বিরক্তি প্রকাশ করলেও আরহামের মনে বেশ শান্তি লাগছে ।সেহেরের কাকাকাছি থাকলে সে নিজের দিনদুনিয়া সব ভুলে যায় ।
সেহেরের কথাগুলো আরহামের কান এড়ায়নি । আরহাম মনে মনে বলে

-“আমার হুর আমি তোমার সব জ্বালাতন সইতে প্রস্তুত ।”

আরহাম আর সেহের বাড়ির ভিতর প্রবেশ করতেই একটা মেয়ে ছুটে এসে আরহামকে জরিয়ে ধরে ।সেহের অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ।আরহাম প্রথমে বেশ অবাক হয়ে যায় পরে মেয়েটার মুখ দেখেই খুশিতে পিচ্ছি পিচ্ছি বলে চেচাঁতে লাগে ।সেহের সব কিছু শুধু অবাক চোখে দেখছে ।
আরহাম মেয়েটার গালে হাত রেখে বলে

-“আরে পিচ্ছি এত দিন পর ? কেমন আছিস তুই ।”

-“ভালো আছি ভাইয়ু ।তুমি কেমন আছো ।”

-“আমিও ভালো আছি ।
তুই তো দেখছি আগের চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর হয়ে গেছিস !”

-“সুন্দর তো হতেই হবে ।
তোমাকে বিয়ে করতে হলে তো তোমার বরাবর হতে হবে তাইনা ?”

বলেই দুজন হা হা করে ঘর কাপিয়ে হাসতে লাগে ।এতক্ষন সেহের কথা গুলো স্বাভাবীক ভাবে নিলেও বিয়ের কথা শুনার পর আর স্বাভাবীক ভাবে নিতে পারেনা ।
রাগে সেহেরের কান দিয়ে ধুয়াঁ বের হচ্ছে !
আরহাম আর মেয়েটি কথা বলছে পাশে যে সেহের দাড়িয়েঁ আছে সেদিকে তাদের কোন খেয়ালই নেই ।সেহের ছোট ছোট চোখ করে দুজনকে দেখছে ।
হঠাৎ মেয়েটির সেহের দিকে চোখ যেতেই সেহেরকে দেখিয়ে বলে

-“ভাইয়ু এই মেয়েটা কে ?”

মেয়েটির কথা শুনে আশা বেগম সামনে এগিয়ে এসে বলে

-“তোমার আরহাম ভাইয়ার ওয়াইফ ।তোমার ভাবী !”

মেয়েটি সেহের দিকে হাত বাড়িয়ে বলে

-“হায় ।আমি নাইসা ।আরহাম ভাইয়ার ফুফাতো বোন !”

সেহের মুচকি হেসে হাত মিলিয়ে বলে

-“হ্যালো ।আমি সেহের আরহাম খানঁ “

আরহাম সেহেরের মুখে নিজের নাম শুনে বেশ অবাক হয় ।সেহেরের দিকে তাকিয়ে দেখে চেহারায় স্পষ্ট রাগ ভেসে উঠেছে ।সেহেরের জেলাসি দেখে আরহামের বেশ মজা লাগছে ।
আরহাম সেহেরের জেলাসি বাড়ানোর জন্য নাইসার হাত ছাড়িয়ে তাকে উপরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলে

-“এসব ছাড় । তোর সাথে অনেক কথা আছে উপরে চল !”

সেহের ছোট মুখ করে আরহাম আর নাইসার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে ।তার বেশ রাগ উঠছে ।ইচ্ছে করছে আরহামের চুল টেনে ছিড়ে ফেলতে ।নিজের রাগের উপর কন্ট্রোল করে সেহের মনে মনে বলে

-“ঢং দেখলে গাঁ জ্বলে ।
আবার আমার কাছে এসো , নাকে দড়ি দিয়ে যদি না ঘুরিয়েছি তো আমার নামও সেহের আরহাম খানঁ না হুহ !”

আরহাম সোফায় পা উঠিয়ে বসে গেম খেলছে । নাইসা কমোড়ে হাত দিয়ে আরহামের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । আরহাম তা লক্ষ করে মোবাইলটা সাইডে রেখে বলে

-“হোয়ার্ট ???
এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন ?”

-“তুমি এটা কি করলে ভাইয়া ?”

-“আমি আবার কি করলাম ?”

-“আমাকে ভাবীর সাথে ভালো করে কথা ও বলতে দিলেনা ।টেনে নিয়ে আসলে ।
তুমি জানো না আমি পুতুল ভাবীর কত বড় ফ্যান ।
ইসসস কত কিউট ভাবী একদম যেল জেন্ত পুতুল একটা দেখলেই ইচ্ছে করে গাল গুলো টেনে দেই ।তোমার জন্য একটু ভালো করে কথা বলতে পারলাম না ।তুমি যেমনটা বলেছিলে আমি পুতুল ভাবীকে ইগনোর করেছি ।
কিন্তু সত্যি আমার দ্বারা পুতুল ভাবীকে ইগনোর করা হবেনা আমার তো পুতুল ভাবীকে দেখলেই জরিয়ে ধরে তাকে চুপু খেতে ইচ্ছে করে ।
তোমার ভাগ্য ভালো আমি মেয়ে। ছেলে হলে তুমি আর পুতুল ভাবীকে পেতে না ।”

-“উফফ কত কথা বলিস তুই ।পুতুল ভাবীর ননদ এবার তো চুপ কর !
এক নিশ্বাসে এত কথা কি ভাবে বলিস ?
তুই যদি আমাকে হেল্প না করিস তো জীবনে তোর ফুপি ডাক শুনার ভাগ্য হবেনা !”

-“ছিঃ ভাই ।তুমি দিন দিন কেমন নিলজ্জ হয়ে যাচ্ছে ছোট বড় মানো না !”

-“এখানে নিলজ্জের কি আছে ?
যা সত্যি তাই বললাম !”

-“অকে অকে ঠি ক আছে তুমি যা বলবে তাই করবো ।বাট আমি পুতুল ভাবীকে বেশি কষ্ট দিতে পারবোনা !
ভাবীর কিউটনেস ইগনোর করা যায় না ।”

-“হয়েছে হয়েছে আমার বউয়ের দিকে আর বদ নজর দিতে হবে না ।”

নাইসা মুখ ভেঙচি দিয়ে অন্যদিকে ফিরে তাকায় ।

চলবে……❤️

প্লিজ সবাই সবার মতামত জানাবেন 😊😊😊#বিষাক্ত প্রেম ২

Urme prema (sajiana monir)

পার্ট: ২০

[আমার এক রিলেটিভের বিয়ে ছিলো তাই দুদিন গল্প দিতে পারিনী সরি ।]

অন্ধকার রুমে সেহের মন খারাপ করে শুয়ে আছে ।চোখ দুটো দেয়ালে টাংগানো বড় ঘড়ির দিকে ।
সেই ৮:৩০ টায় ডিনার করে নাইসার রুমে গেছে ।এখন ঘড়িতে ১১ বাজতে চলেছে আরহাম এখনো ফিরেনি ।
সেহেরের মন মরা হয়ে শুয়ে আছে ।
আরহাম রুমের সামনে আসতেই দেখে পুরো রুম ঘুটঘুটে অন্ধকার ।সেহের হয়তো ঘুমিয়ে গেছে ।এখন রুমে লাইট জ্বালানো একদমই উচিত হবেনা ।সেহেরের ঘুমের সমস্যা হতে পারে ।তাই আরহাম কোন শব্দ না করে ছোট ছোট পায়ে চোরের মত রুমে প্রবেশ করে ।হঠাৎ রুমের সব লাইট জ্বলে যায় ।আরহাম বেশ চমকিয়ে যায় ।সামনে তাকিয়ে দেখে সেহের দু কমোড়ে হাত রেখে আরহামের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ।সেহের আরহামের দিকে এগিয়ে আসতে লাগে ।আরহাম ভয়ে ঢোক গিলে নেয় ।
সেহের একদম আরহামের সামনাসামনি দাড়িয়ে ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে চিৎকার করে বলে

-“কয়টা বাজে সেই খেয়াল আছে ?আমি কতক্ষন ধরে রুমে ওয়েট করছি আর আপনার কোন খবরই নেই আড্ডায় মজে ছিলেন ।এটা কি ঠি ক হলো ?”

আরহাম গলা ঝেড়ে বলে

-“এতে ঠি ক বেঠিকের কি হলো ।
তোমার ঘুম পেয়েছিলো তুমি ঘুমিয়ে যেতে আমার জন্য অপেক্ষা করার কি দরকার ছিলো ?”

-“আপনি আমার হাসবেন্ড আরহাম ।দুদিন হলো আমাদের বিয়ে হয়েছে ।আপনার আমাকে সময় দেওয়া উচিত ।আর আপনি তা না করে সেই সন্ধ্যা থেকে অন্য কারো সাথে সময় কাটাচ্ছেন ।”

-“লিসেন সেহের । প্রথমত তুমি এই বিয়ে মানো না ।দ্বিতীয়ত অন্যকেউ না আমার কাজিন সে ।
বাই দ্যা ওয়ে তুমি কি জেলাস ?”

সেহের কাধঁ নাচিয়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে

-“না তো একদম না !
আমি কেন জেলাস হবো ।”

আরহাম ফোনটা বেড সাইডের পাশে টেবিলে রেখে শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বলে

-“তাই তো তুমি কেন জেলাস হবে !
আমি কারো সাথে থাকি না থাকি ।কোন মেয়ের সাথে কাছে যাই না যাই তাতে তোমার কি আসে যায় ।তাই না ?”

এতসময় সেহের নিজের রাগ চেপে ধরে রাখতে পারলেও এখন আর পারলোনা ।ভয়ংকর ভাবে সে রেগে গেছে ।আরহামের কাছে যেয়ে তাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে তার উপরে চড়ে শার্টের কলার চেপে ধরে ।ফলে শার্টের দুটো বোতাম ছিড়ে যায় ।কিন্তু সেহেরের সেই দিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই সে আরহামকে নিজের কাছে টেনে এনে বলে

-“অন্য কোন মেয়ের কাছে যাই মানে কি ?
অন্যকোন মেয়ের নাম মুখে আনলেও না আপনার খবর আছে ।চুল টেনে ছিড়ে ফেলবো ।অন্যকোন মেয়ে আপনার কাছে আসলে তাকে কাচাঁ চিবিয়ে খাবো !
আপনি আমার ।
শুধুই আমার হাসবেন্ড !
অন্যকেউ তাকালে তার চোখ কাটাঁ চামচ দিয়ে উপড়ে ফেলবো ।
আর শুনুন ২৪ ঘন্টা শুধু আমার নাম যববেন বুঝেছেন ?”

বলেই সেহের রেগে বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে ।আরহাম অবাক চোখে সেহেরকে দেখছে ।সেহেরের সব রূপ দেখলেও এই রূপের সাথে সে কোন দিন পরিচীত ছিলোনা ।ভয়ংকর রূপ ।কিন্তু এই ভয়ংকর রূপেও তার বউটাকে কম সুন্দর লাগেনা ।বরং সুন্দরর্য আরো শতগুন বেড়ে যায় ।
পুরোই আগুন !
আজ আরহাম তার বউয়ের মধ্যে নিজের রং খুজে পেয়েছে ।তার চোখে আরহামকে হারানোর ভয় দেখেছে ।আজ প্রথমবার সেহের আরহামের প্রতি নিজের ‌অধিকার খাটিয়েছে ।
অবশেষে বউটাকে ও নিজের রঙে রাঙিয়েই দিলো ।

আরহাম সেহেরকে নিচে ফেলে মাথায় হাত রেখেলসাইডে আধঁ শোয়া হয়ে শুয়ে পড়ে । সেহেরের দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হেসে সামনের চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিতে দিতে বলে

-“উফফফ এত রাগ এত জ্বিদ !
মারডালা ।
এত জেলাসি কেন ? তবে কি আমি ধরে নিবো তুমি সত্যি সত্যি আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছ !”

সেহের আরহামের কথায় লজ্জায় পড়ে যায় ।আরহামের ঠোটেঁর কোনে এখনো দুষ্টু হাসি লেগে আছে ।সেহের লজ্জায় অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে আদো আদো স্বরে বলে

-”ক…কই আ…আম…ইইই প্রেমে হাব..ডুবু খাচ্ছি !
আপনি একটু বে..বেশি বেশি ভা.বচ্ছেন ।”

আরহাম বেশ বুঝতে পারছে সেহের লজ্জা পাচ্ছে ।তাই সে এই মুহূর্তে তাকে কোন ভাবে ফোর্স করতে চায় না ।
যখন সেহেরের মনে হবে সে তার মনের কথা বলার জন্য প্রস্থুত বা নিজের থেকে আরহামকে বলবে সে আরহামকে ভালেবাসে সে সময় আরহাম তাকে কাছে টেনে নিবে তার থেকে সবটা জানবে ।এই মুহূর্তে সেহেরকে আর লজ্জায় ফেলতে চায়না সে ।কিন্তু বেশকিছুক্ষন ধরে সেহেরের গলার তিলটা তাকে খুব বেশি জ্বালাতন করছে ।না চাইতেও বার বার সে দিকে চোখ যাচ্ছে ।আরহাম আর নিজের সাথে আপস করলো না টুপ করে তিলটায় গভীর ভাবে ঠোঁট ছুয়িঁয়ে সেহেরের উপর থেকে উঠে তোয়াল নিয়ে শিস বাজাতে বাজাতে ওয়াশরুমে ডুকে পরে ।সেহের হা হয়ে আরহামের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে ।আরহাম ওয়াশরুমে ডুকতেই ফিক করে হেসে লজ্জায় মুখ ডাকে ।

আরহাম ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে রুমের লাইট অফ সেহের পাশ ফিরে ঘুমিয়ে আছে ।আরহাম ধীর পায়ে বিছানার দিকে এগিয়ে আসে ।সেহেরের পাশে শুয়ে মৃদ্যু হেসে সেহেরের কপালে আলতো করে ভালোবাসার পরশ একেঁ দেয় ।তারপর পিছন থেতে তাকে জরিয়ে ধরে তার পিঠে মুখ লুকিয়ে শুয়ে পরে ।
সেহেরের ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটে উঠে ।এত সময় ইচ্ছে করে চোখ বুঝে ছিলো যাতে আরহামের সামনে লজ্জায় না পড়তে হয় ।
সেহের চোখ বুঝে মুচকি হেসে মনে মনে বলে

-“আমার উপর যতই রাগ অভিমান করে থাকেন না কেন , আমি জানি আপনি আমাকে এখনো পাগলের মত ভালোবাসেন !”

সেহেরের ঘুম ভেঙ্গেছে সেই ভোরে ফ্রেশ হয়ে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে বিছানার পাশে এসে বসে ।বেশ শীত পড়েছে হাত পা ঠান্ডায় অবশ হয়ে আসছে ।তাই তারাতারি করে বিছানায় উঠে কম্বোলের ভিতর পা ডুকিয়ে বসে ।এখনো বাড়ির কেউ ঘুম থেকে উঠেনি ।তো নিচে গিয়ে সফায় বসে বসে ঝিমাতে হবে ।তার চেয়ে ভালো রুমে বসেই ঝিমানো ।
সেহের বিছানার সাথে হ্যালান দিয়ে ফেসবুকিং করছে ।পাশেই আরহাম উপুড় হয়ে ঘুমাচ্ছে ।সেহেরের চুল বেয়ে পানি টপটপ করে আরহামের চোখের উপর পড়ছে ।সেহেরের সেদিকে খেয়াল নেই ।
কনকনে শীতের সকালে বরফের মত ঠান্ডা পানি চোখের উপর পড়তেই আরহাম বিরক্তির সাথে চোখ মেলে তাকায় । কোথা থেকে পানি ফোটা পড়ছে তা দেখার জন্য ।চোখ খুলে পাশে তাকাতেই দেখে সেহের ভেজা চুলে কম্বোল লেপ্টে বসে আছে ।ঠান্ডার কারনে গাল নাক গোলাপি হয়ে আছে ।রক্ত লাল ঠোঁট দুটো শীতে তীরতীর করে কাপছেঁ চেহারায় নুরানি ভাব ফুটে আছে ।মুহূর্তেই আরহামের কপালের আকাঁ বাকাঁ রেখা গুলো গায়েব হয়ে যায়।তার চোখে মুখে স্নিগ্ধতা ফুটে উঠে ।
ভাবেনি সকালটা এত সুন্দর ভাবে শুরু হবে ।এখনো সবটা স্বপ্ন মনে হয় ।সেহেরকে মন ভরে দেখছে সে ।সেহেরকে মন ভরে দেখার কোন সুযোগ সে হারাতে চায়না ।
সেহের ফেসবুকিং করতে করতে বেখেয়ালি তে পাশে তাকাতেই “ওমাগোওওও “ বলে লাফিয়ে উঠে ।আরহাম সেহেরের এভাবে ভয় পাওয়া দেখে কিটকিটিয়ে হাসতে লাগে ।সেহের মুখ চুখা করে ছোট ছোট চোখে আরহামের দিকে তাকিয়ে আছে ।আরহাম অনেক কষ্টে নিজের হাসি চেপে বলে

-“ভয় পেয়ে গেছ ?
কাছে আসো ফু দিয়ে দেই !”

সেহের মুখ ভেংচি দিয়ে বলে

-“লাগবেনা আপনার ফু দেওয়া !
এভাবে কেউ তাকিয়ে থাকে ?
আমি হঠাৎ করে দেখে ভয় পেয়ে গেছি ।”

আরহাম মিটমিট করে হাসছে ।সেহের ছোট ছোট চোখ করে সন্দেহের দৃষ্টিতে আরহামের দিকে তাকিয়ে বলে

-“বাই দ্য ওয়ে ,আপনি এভাবে তাকিয়ে কি দেখছিলেন ?”

-”তোমাকে !”

-“আমি জানি ,আমি সুন্দর তো এভাবে তাকিয়ে থাকতে হবে না ।”

আরহাম ঠোঁট উল্টিলে বলে

-“উহু ! মোটেও না ।”

সেহের এবার অবাক হয়ে তাকিয়ে হালকা চেচিঁয়ে বলে

-“কি বললেন আমি সুন্দর না ?”

-“একদমই না !”

-“সত্যি ?”

-“একদম সত্যি !”

কথাটা যেন সেহেরের ইগোতে লাগে ।সেহের মুখ ছোট করে বলে

-“আচ্ছা ঠিক আছে ।আপনার আর আমার সাথে থাকতে হবেনা ।আপনি আপনার সব কিছু নিয়ে থাকেন আমি এ ঘর থেকে গেলাম !”

সেহের মান করে বিছানা ছেড়ে উঠতে নেয় এমন সময়ই আরহাম পিছন থেকে হ্যাচকা টান মেরে সেহেরকে নিজের বুকে ফেলে ।সেহের আরহামের দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে দেখে ।আরহামের ঠোঁটের কোনে দুষ্টু হাসি ।সেহের আরহাম থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলে

-“ছাড়ুন !আমি তো সুন্দর না আমাকে যেতে দিন। “

আরহাম সেহেরের পাগলামো দেখে মিটমিট করে হাসছে ।সেহেরকে নিজের আরো কাছে এনে তার চোখের দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে বলে

-“তুমিই তো বললে আমাকে আমার সব কিছু নিয়ে থাকতে ।আমার সবকিছু তো তুমি তো তোমাকে ছাড়া কি করে থাকি ?”

সেহের আরহামের কথায় মুচকি হেসে তার বুকে মাথা রাখে ।আরহাম তার চুলে বিলি কেটে দিতে লাগে ।আস্তে আস্তে সেহের আবার ঘুমে তলিয়ে যায় !

ঘুম ভাঙ্গে সকাল ৯ টায় লাফিয়ে ঘুম থেকে উঠে কোন রকম ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে যায় ।সিড়ি দিয়ে নামার সময় নিচ থেকে বেশ জোরে হাসির আওয়াজ শুনতে পায় ।সেহের বেশ কৈতহল নিয়ে সেদিকে এগিয়ে যায় ।গিয়ে দেখে আরহাম আর নাইসা সোফায় বেশ কাছাকাছি বসে আছে ।দুজনের হাতে চকলেট আরহামের নাকে চকলেট লেগে আছে ।আর তা নিয়েই দুজন হাসাহাসি করছে ।
সকাল সকাল এসব দেখে সেহেরের মেজাজ খারাপ হয়ে যায় ।সে আরহামের কাছে যেয়ে দাতেঁ দাতঁ চেপে বলে

-“গুড মর্নিং “

নাইসা মুচকি হেসে বলে

-“গুডমর্নিং !”

সেহের আরহামের দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু আরহামের সেদিকে খেয়ালই নেই সে নাইসার সাথে কথা বলতে ব্যস্থ ।বেশ কিছু সময় সেহের তাদের দিকে তাকিয়ে থাকে আরহামের কাছ থেকে কোন উত্তর না পেয়ে সেখান থেকে রেগে চলে যায় । সেহের যেতেই নাইসা বলে

-“দিলে তো সকাল সকাল পুতুল ভাবীর মুড অফ করে !
কি দরকার ছিলো এমন করার ?”

-“আহহহহ ! তোর পুতুল ভাবীকে এভাবে জেলাস হতে দেখে আমার মনে যে কি শান্তি লাগে । “

-“পরে যেন আবার এমন না হয় যে ভাবী রেগে তোমাকে ছেড়ে চলে যায় !”

-“এক দম কু দোয়া করবিনা বলে দিলাম !
আমার সেহের আমাকে ছেড়ে যেতেই পারেনা ।”

সবাই একত্রে বসে নাস্তা করছে আরহাম আর নাইসা পাশাপাশি বসেছে ।সেহের অন্যপাশে বসে দুর থেকে দুজন কে দেখছে ।কাল থেকে আরহামের প্রত্যেকটা কাজে বেশ রাগ হচ্ছে তার সাথে কষ্ট ও পাচ্ছে ।আরহামকে অন্যকোন মেয়ের এতটা কাছাকাছি দেখে সে অবস্থ না ।পারছেনা নিজের স্বামীকে অন্যকারো এতটা কাছাকাছি দেখতে ।তার খুব কষ্ট হচ্ছে ।
পাশের আশা বেগম খাবার মুখে তুলতে তুলতে বলে

-“তোমাদের নানু অসুস্থ আমি একটু পর উনাকে দেখতে যাবো ।ফিরতে রাত হবে !
সেহের মা তুমি এদিকে সামলাতে পারবেতো ?”

সেহেরের কোন উত্তর না পেয়ে আশা বেগম সেহের দিকে তাকায় ।তাকিয়ে দেখে সেহের অন্যমনস্ক হয়ে বসে খাবার নিয়ে নাড়াচাড়া করছে ।আশা বেগম সেহেরকে আবার ডাকে কিন্তু এবার ও সেহেরের কোন অন্যমনস্ক হয়ে আছে ।
আশা বেগম সেহেরের কাধেঁ হাত রাখতেই সেহের লাফিয়ে উঠে ।আদো আদো আওয়াজে বলে

-“জ্বি জ্বি মা ।”

-“তুমি ঠি ক আছো তো মা ?
কেমন জানো মনমরা দেখাচ্ছে ।
অসুস্থ নাকি !”

সেহের জোরপূর্বক ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা টেনে বলে

-“না মা আমি একদম ঠিক আছি ।
আপনি কি জানো বলছিলেন !”

-“বলছিলাম একটু পর আমি বাবার বাসায় যাবো ।
তোমাদের নানু অসুস্থ ।ফিরতে রাত হবে ।
তুমি এদিকে সামলাতে পারবে !”

-“মা আপনি চিন্তা করবেন না আমি ঠিক সামলিয়ে নিবো ।
আপনি নিশ্চিন্তে যান !”

আশা বেগম মৃদ্যু হেসে বলে

-“আমি রহিমাকে বলে দিচ্ছি ও তোমাকে হেল্প করবে !
আর একটা কথা কোন খাবারে জিরা দিওনা নাইসার এতে এলার্জি আছে ।”

সেহের মাথা ঝুকিঁয়ে উত্তর দেয়

-“আচ্ছা মা !”

নাস্তার পর আশা বেগম তার বাবার বাড়ি চলে যায় ।সেহের একা তাই আজ আরহাম অফিসে যায় না বাসায়ই থেকে যায় ।
সেহের দুপুরের রান্নার জন্য সবকিছু গোজগোছ করছে ।এমন সময়ই আরহাম কিচেনে প্রবেশ করে ।সেহের আরহামকে দেখে তার দিকে একবার তাকায় পরক্ষনেই চোখ ফিরিয়ে আবার নিজের কাজে মন দেয় ।
আরহাম বেশ বুঝতে পারছে সেহের রেগে আছে ।তাই আর একটু রাগানোর জন্য মজা করে বলে

-“বলছিলাম কি বিকেলে আমি আর নাইসা একটু বের হবো ।তুমি বাড়িতে একা থাকতে পারবে তো ?”

সেহের কোন কথা বলে না ।আরহাম আবার বলে

-“বুঝতেই তো পারছো মেয়েটা এতদিন পর ঢাকায় এসেছে ।তাই ভাবছি তাকে নিয়ে আসে পাশে কোথাও থেকে ঘুরে আছি ।
তুমি কি যাবে ?”

সেহের কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরহাম আবার বলে

-“না থাক তুমি যেয়ে কি করবে ।তুমি বরং বাসায়ই থাকো !”

সেহের রেগে চেচিঁয়ে বলে

-“আপনারা যা মন চায় করেন ।যেখানে মন চায় যান !
আই ডোন্ট কেয়ার !”

বলেই সেহের রেগে কিচেন থেকে বের হয়ে যায় ।আরহাম মিটমিট করে হাসতে হাসতে বলে

-“জ্বলছো রুচির মত ফুলছো ।আবার বলছো আই ডোন্ট কেয়ার !
ভাঙবে তবুও মচকাবে না তাই তো ?
তোমার মুখ ভালোবাসি কথাটা যদি না বের করেছি তবে আমার নাম ও আরহাম খানঁ না ।”

চলবে….❤️

প্লিজ সবাই সবার মতামত জানাবেন 😊😊😊

ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন ❤️❤️❤️

প্লিজ সবাই সবার মতামত জানাবেন😊😊😊

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন❤️❤️❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here