বুকভরা ভালোবাসা পর্ব -০১

১.
স্নিগ্ধকে স্টেজে উঠতে দেখতেই মেহুল চিৎকার করে বলে,
‘আই লাভ ইউ সিনিয়র, আই লাভ ইউ।’

ভার্সিটির একটি অনুষ্ঠানে গান গাইতে স্টেজে উঠেছিল স্নিগ্ধ। সেখানেই সবার সামনে মেহুল তাকে এভাবে প্রপোজ করে।

পাশে থাকা মেহুলের বান্ধবী ইতি মাথায় হাত দিয়ে বলে,
‘তোর কি লজ্জা নেই মেহুল? এত লোকের সামনে প্রপোজ করছিস।’

মেহুল আরো জোরে চিৎকার করে বলে,
‘সিনিয়র উত্তর দাও। তুমি কি আমার ভালোবাসা গ্রহণ করবে?’

স্নিগ্ধ মুচকি হেসে স্টেজ থেকেই বলে,
‘সরি।’

সবার সামনেই সে মেহুলকে রিজেক্ট করে দেয়। ইতি এবার মেহুলের হাত ধরে সিটে বসিয়ে বলে,
‘এবার শান্তি পেয়েছিস তো? সবার সামনে অপমানিত হয়ে কেমন লাগল?’

‘আরে এটাকে আবার কেউ অপমান বলে? আমি তোর সাথে বাজি ধরছি আগামী সপ্তাহের মধ্যেই এই ছেলে আমার বয়ফ্রেন্ড হবে।’

‘জীবনেও না। স্নিগ্ধ ভাইয়া ভার্সিটির শত শত মেয়ের ক্রাশ। কত মেয়েই তাকে প্রতিদিন প্রপোজ করে। কিন্তু স্নিগ্ধ ভাই যথেষ্ট ভদ্র। কোন মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকান না। আর সে কিনা তোর সাথে প্রেম করবে! হাস্যকর।’

‘এই মেহুল করতে পারেনা এমন কোন কাজ পৃথিবীতে নেই। বুঝে যাবি।
শুধু এক সপ্তাহ ওয়েট কর।’

স্নিগ্ধ স্টেজে গান গাইতে শুরু করে,
❝দিল হ্যায় কি মানতা নেহি❞

স্নিগ্ধর গান শুনে সবাই মুগ্ধ হয়ে যায়। মেহুল ইতিকে বলে,
‘দেখছিস স্নিগ্ধ আমার ফিলিং বুঝতে পেরেছে। তাই তো এই গান গাইছে।’

‘ওনার এই গানটা ভালো লাগে তাই হয়তো গাইছে। তুই এসব আকাশ কুসুম ভাবনা বাদ দে। আমাকে গানটা শুনতে দে। গানটা খুব ভালো লাগছে।’

‘গানের উপর ক্রাশ খাচ্ছিস খা, ভালো কথা। কিন্তু আমার স্নিগ্ধর উপর কিন্তু একদম ক্রাশ খাবি না।’

‘আমি তো ওনাকে ভাইয়ার চোখে দেখি।’

‘তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু দেখিস এই ভাইয়াকে আবার ছাইয়া বানানোর কথা ভাবিস না।’

স্নিগ্ধ গানটা শেষ করেই স্টেজ থেকে নেমে আসে। স্নিগ্ধর পর নৃত্য প্রদর্শন করতে স্টেজে ডাকা হয় মোহনাকে।

মোহনা স্টেজে উঠে খুব সুন্দরভাবে নৃত্য প্রদর্শন করে। ইতি মোহনার শাড়িটা দেখে বলে,
‘মেহুল এটা সেই শাড়িটা না যেটা তুই গতবছর পহেলা বৈশাখে কিনেছিলি। শাড়িটা মোহনার কাছে এলো কিভাবে?’

‘কাল থেকে মোহনা মামনীর কাছে বায়না করছিল যেন ওকে অনুষ্ঠানের জন্য দামী কোন শাড়ি কিনে দেয়। মামনীর কাছে টাকা ছিলনা। সকালে আমার জামাকাপড় গুছিয়ে রাখার সময় যখন শাড়িটা দেখতে পায় তখন পুরো ব্যাপারটা খুলে বলে। আমি তো এমনিতেও শাড়ি পড়িনা তাই মামনীকে বললাম এই শাড়িটা মোহনাকে দিয়ে দিতে।’

‘এই কাজটা তো ভালোই করেছিস কিন্তু এই মোহনাকে আমার একদম বিশ্বাস নেই। জানতে পারলে ঝামেলা করবে। আমি বুঝিনা মেয়েটা ছোটবেলা থেকে তোদের বাড়িতে আশ্রিত। তোরা সবাই ওকে নিজের পরিবার ভাবিস। অথচ ও সবসময় তোকে হিংসা করে। আর পড়াশোনায় একটু ভালো তাই সারাদিন সেটা নিয়ে ফুটানি মা’রে।’

‘এসব বাদ দে তো। ও যেমনই হোক মামনী অনেক ভালো। তুই তো জানিস আমার বাবা-মা দুজনেই ব্যস্ত মানুষ। মামনীই তো ছোটবেলা থেকে আমায় মানুষ করেছে।’

মোহনার নৃত্য প্রদর্শনী শেষ হয়। ইতি মোহনাকে সহ্য করতে পারতো না। তাই মোহনার কাছে গিয়ে বলে,
‘তুমি যে সবসময় মেহুলকে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবো আজ কিন্তু সেই মেহুলই তোমায় এই শাড়িটা দিয়েছে। যদি মেহুল শাড়িটা না দিত তাহলে কিন্তু তুমি নৃত্য প্রদর্শন করে এত বাহবা পেতে না। এই কারণে হলেও তোমার ওকে ধন্যবাদ জানানো উচিৎ।’

ইতির কথা শুনে মোহনা খুব রেগে যায়। সে তার মাকে কল করে যা নয় তাই বলে অপমান করে।
‘আমি কি বানের জলে ভেসে এসেছি আম্মু? ঐ বড়লোকের বেটির শাড়ি আমায় কেন দিয়েছ? আমি ওদের কোন সাহায্য চাইনা বলেই টিউশনি করিয়ে নিজের খরচ চালাই। আর তুমি,,,,’

মোহনা শাড়িটা খুলে প্যাক করে মেহুলের কাছে গিয়ে ছু’রে দিয়ে বলে,
‘আমি কারো দান নেই না। নিজের শাড়ি নিজের কাছেই রাখো।’

‘আমি এটা দান করিনি। আমি সাহায্য করেছি মাত্র। এরকম সাহায্য আমি মানুষকে করেই থাকি।’

‘আমি চেয়েছি তোমার সাহায্য? বড়লোকের মেয়ে হয়েছ জন্য নিজেকে কি ভাব তুমি? ছোটবেলা থেকে তোমাদের বাড়িতে আশ্রিত আছি মানে এই না তুমি আমাকে অপমান করবে।’

‘আমি তোমায় কখন অপমান করলাম মোহনা?’

‘ইতিকে তো পাঠিয়ে ছিলে আমাকে অপমান করার জন্যই।’

‘আমি ইতিকে পাঠাই নি।’

‘থাক আর ভালো সাজতে হবে না।’

চোখের জল মুছতে মুছতে মোহনা বাইরে চলে যায়। ইতি এগিয়ে এসে বলে,
‘এই মেয়েটা কিন্তু একটুও সুবিধার না। তুই ওর এতবড় উপকার করলি আর ও তার বিনিময়ে,,,’

‘তুই বা ওকে এসব বলতে গেলি কেন?’

‘তুই মেয়েটার যে এতবড় উপকার করলি সেটা ওকে জানাব না। সবসময় তো তোকে নিচু দেখানোর চেষ্টা করে।’

‘আমার বাবা বলেন, অন্যের কথায় কান দিয়ে সবসময় নিজের কাজ কাজ করে যাবে। তুমি যদি ঠিক কাজ করো তাহলে যে যাই বলুক নিজের কাছে ঠিক থাকলে জগৎ ঠিক।’

২.
মোহনা কাঁদতে কাঁদতে বাইরে আসার সময় মুগ্ধর সাথে ধাক্কা খায়। মুগ্ধ হলো স্নিগ্ধর ছোট ভাই।

মোহনাকে কাঁদতে দেখে মুগ্ধ বলে,
‘হ্যালো কাঁদছেন কেন এভাবে?’

‘কিছু না।’

মোহনা সেখান থেকে চলে যায়। মোহনা যাওয়ার পরপরই স্নিগ্ধ সেখানে চলে আসে। স্নিগ্ধকে আসতে দেখে মুগ্ধ বলে,
‘কি শুনলাম ব্রো? আজ নাকি কোন মেয়ে স্টেজে সবার সামনে তোমায় প্রপোজ করেছে। আমি বাইরে ছিলাম তাই জানতে পারিনি। মেয়েটা কে? কেমন দেখতে?’

তাদের কথার মাঝেই মেহুল পিছন থেকে এসে বলে,
‘হাই সিনিয়র।’

মেহুলকে দেখে মুগ্ধ ভ্রু কুচকে চিৎকার করে বলে,
‘তুমিইইইই!’

মেহুলও একই রকমভাবে বলে,
‘ইউউউ!’

মেহুলের মনে পরে যায় কিছুদিন আগের ঘটনা।

মেহুল ভার্সিটিতে আসার সময় একজন বাইকার হেলমেট পরিহিত অবস্থায় তার ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়। মেহুল চোর চোর বলে তার পিছনে দৌড়াতে থাকে। কিছু দূর গিয়ে একটা ছেলেকে হেলমেট মাথায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে গিয়ে কি’ল ঘু’ষি মা’রতে মা’রতে বলে,
‘চোর আমার ব্যাগ ফিরিয়ে দে।’

মেহুলের কথা শুনে আশেপাশের কিছু মানুষ এগিয়ে এসে ঘটনা কি জানতে চায়। মেহুল তখন পুরো ঘটনা খুলে বলে। তখন সবাই মিলে লোকটি গণ’ধোলাই দেয়।

শেষে লোকটি নিজের হেলমেট সরিয়ে বলে,
‘আমি মুগ্ধ। আমি কোন চোর নই।’

একজন পুলিশ অফিসার এসে মেহুলের ব্যাগ ফিরিয়ে দিয়ে বলে,
‘আমরা চোরটাকে ধরতে পেরেছি। এই নিন আপনার ব্যাগ।’

মেহুল বোকা হাসি হেসে মুগ্ধকে বলে,
‘সরি। আসলে আমি বুঝতে পারিনি।’

মুগ্ধ রাগে কটমট করতে করতে বলে,
‘আজকেই দিনটাই খারাপ করে দিল। আর জীবনেও এই মেয়ের মুখ দেখতে চাইনা।’

মুগ্ধকে কিছু লোক ধরে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেদিন ভালোই ধোলাই হয়েছিল মুগ্ধর।

মেহুল এতক্ষণ এসবই ভাবছিল। এরমধ্যে মুগ্ধ তার দিকে এগিয়ে এসে বলে,
‘তুমিই আমাকে চোর অপবাদ দিয়ে মা’র খাইয়ে নিয়েছিলেন না?’

‘সেটা তো ভুল বোঝাবুঝি ছিল। আমি তো সরিও বলেছিলাম।’

‘তোমার জন্য আমায় ৩ দিন বেডরেস্টে থাকতে হয়েছিল আবার বলছ ভুল বোঝাবুঝি। একবার যখন তোমায় হাতের কাছে পেয়েছি তখন রিভেঞ্জ নিয়েই ছাড়ব।’

স্নিগ্ধ মুগ্ধর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
‘তুই চিনিস এই মেয়েটাকে? এই মেয়েটাই তো স্টেজে সবার সামনে আমায় প্রপোজ করেছিল।’

মুগ্ধ মেহুলের নিজ তাকিয়ে কি’লার স্মাইল দিয়ে বলে,
‘তোমার উপর রিভেঞ্জ নেওয়ার উপায় পেয়ে গেছি। দেখি তুমি কিভাবে আমার ভাইয়ার কাছে আসতে পারো। ভাইয়া আর তোমার মাঝে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েই আমি তোমার উপর প্রতিশোধ নেব।’

চলবে তো?
#বুকভরা_ভালোবাসা
#পর্বঃ১
#লেখিকাঃদিশা মনি
>>>>

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here