বুকভরা ভালোবাসা পর্ব -০৪

#বুকভরা_ভালোবাসা
#পর্বঃ৪
#লেখিকাঃদিশা মনি

স্নিগ্ধ কোন উত্তর দেওয়ার আগেই মুগ্ধ তাকে টেনে বাইরে নিয়ে যায়। স্নিগ্ধ মুগ্ধর হাত ছাড়িয়ে বলে,
‘এভাবে আমায় নিলে এলি কেন? তুই কাজটা একদম ঠিক করলি না।

মুগ্ধঃতো আমি কি করব? তুমি জানোনা আম্মু অলরেডি তার বোনের মেয়ের সাথে তোমার বিয়ে ঠিক করে রেখেছে। আগামী মাসে তোমাদের এনগেজমেন্ট হতে চলেছে। অন্য একটা মেয়ে তোমাকে প্রপোজ করবে এটা কেমন দেখায়?

স্নিগ্ধঃআমাদের বিয়ের কথাবার্তাই শুধু হয়েছে। এখনো বিয়ে হয়ে যায়নি।

মুগ্ধঃতার মানে কি তুমি মেহুকে পছন্দ করো ভাইয়া?

স্নিগ্ধ কোন উত্তর দেয়না। স্নিগ্ধর এই মৌনতাকেই সম্মতির লক্ষণ ভেবে নেয় মুগ্ধ। তবে স্নিগ্ধ মেহুলকে পছন্দ করে জানতে পেরে তার কেমন জানি খারাপ লাগছিল। তার কেন এরকম ফিলিং হচ্ছিল সেটা মুগ্ধ নিজেও বুঝতে পারল না।

৭.
‘মেহুল এভাবে কাদিস না। স্নিগ্ধ ভাইয়া তো না বলে নি। এমনটা তো হতে পারে তিনিও তোকে পছন্দ করেন।

ইতির কথাটা শুনে মেহুল কান্না থামিয়ে ভ্রু কুচকে বলে,
‘যদি ভালোবাসতো তাহলে এভাবে নিজের ভাইয়ের কথায় নাচতে নাচতে চলে যেত না। আমি বুঝে গেছি ও আমায় একটুও ভালো বাসেনা। ঠিক আছে, কোন ব্যাপার না। স্নিগ্ধ যদি আমায় ভালো না বাসে তাহলে আমিও আর স্নিগ্ধকে ভালোবাসব না। আমি মুভ অন করব।

কথাটা বলে শেষ করে মেহুল হনহন করে পার্টি থেকে বের হয়ে একা রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে বাড়ি ফিরতে থাকে।

রাস্তায় কিছু বখাটে ছেলে এসে মেহুলকে বিরক্ত করতে থাকে। মেহুল তাদের মধ্যে একটি ছেলেকে থাপ্প’র মা’রলে ছেলেটি মেহুলকে টেনে নিয়ে যেতে থাকে।
মোহনাও তাদের দিকেই আসছিল। মেহুল ‘বাচাও’ বলে চিৎকার করছিল কিন্তু মোহনা কোন সাহায্য তো করেই না বরং দূর থেকে দাড়িয়ে মজা নিতে থাকে। আর বলতে থাকে,
‘একদম ঠিক হয়েছে। ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি তোর বাবা-মা তোকে মাথায় তুলে নাচে। ভালো হবে যদি আজ এই ছেলেরা তোর বড় কোন সর্ব*নাশ করে। তাহলে আমি মাদ্রাসায় ১ হাজার টাকা দেব।

আচমকা কেউ একজন এসে মেহুলকে দূরে সরিয়ে বখাটে ছেলেদের সাথে ফা’ইট করতে শুরু করে। মেহুল অবাক হয়ে দেখতে থাকে। ছেলেটার ফাই’টিং স্কিল দেখে মেহুল ফিদা হয়ে যায়।

ছেলেটি একবার তার দিকে ঘুরে তাকালে মেহুল আরো অবাক হয়।
‘স্নিগ্ধ তুমি!’

স্নিগ্ধকে এভাবে দেখে মেহুলের অবাক হওয়ারও যথেষ্ট কারণ ছিল। ভার্সিটিতে স্নিগ্ধর অনেক প্রশংসা করে সবাই। সে কোন ঝামেলায় জড়ায় না। সবসময় শান্ত থাকে। নামের সাথে কাজ একেবারে মিলে যায়। আর আজ কিনা সেই ছেলেটি এত ভালো ফাই’ট করছে।

স্নিগ্ধর সাথে পেরে উঠতে না পেরে বখাটে ছেলেগুলো পালিয়ে যায়। স্নিগ্ধর হাতের দিকে একটু কে’টে যায়। মেহুল তার ব্যাগ থেকে ফাস্ট এইড বক্স বের করে স্নিগ্ধর হাতে ব্যান্ডেজ করতে করতে বলে,
‘তুমি এত ভালো ফাইট জানো সিনিয়র। আমি তো ভাবতেই পারিনি।

স্নিগ্ধ মৃদু হেসে বলে,
‘বিদেশে থাকতে শিখেছিলাম। তবে আমার এসব পছন্দ না। আজ যখন দেখলাম ছেলেগুলো এভাবে তোমার ক্ষতি করতে চাইছে তখন আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না।

মেহুল ভ্রু কুচকে বলে,
‘আমার ক্ষতি হলে আপনার কি?’

স্নিগ্ধ কিছুটা সময় নিয়ে বলে,
‘প্রত্যেক পুরুষের দায়িত্ব কাপুরুষদের হাত থেকে নারীদের রক্ষা করা।

স্নিগ্ধর উত্তরটা শুনে মেহুলের খুব ভালো লাগে। স্নিগ্ধ মেহুলকে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য তাকে নিজের গাড়িতে ড্রাইভ করে বাড়িতে পৌঁছে দিতে চায়। মেহুলও রাজি হয়।

দূর থেকে এসব দেখে মোহনার গায়ে যেন ফোস্কা পড়ে। মোহনা বলতে থাকে,
‘এই মেয়েটার ভাগ্য এত ভালো কেন? এই এত ভালো ভাগ্যের জন্য ওকে আমার সহ্য হয়না। কিন্তু কোন ব্যাপার না। আমি আছি তো। আমি ছোটবেলা থেকে কষ্টে বড় হয়েছি আর আমার চোখের সামনে মেহুলকে সুখে বেড়ে উঠতে দেখেছি। একবার ভাগ্য আমারও সঙ্গ দেবে। সেদিন আমি মেহুলকে দূর্ভাগ্যের স্বাদ গ্রহণ করাবো।

স্নিগ্ধ মেহুলকে তার বাড়ির সামনে নামিয়ে দেয়। মেহুলের বাড়িটা দেখে স্নিগ্ধ অবাক হয়ে যায়। স্নিগ্ধ মেহুলকে জিজ্ঞেস করে,
‘এটা বিখ্যাত গায়ক মনির চৌধুরীর বাড়ি না? কে হন উনি তোমার?’

‘উনি তো আমার বাবা।

‘আমি তো জানতামই না। আমি মনির চৌধুরীর অনেক বড় ফ্যান। তার সব গান শুনি। তার একটা মেয়ে আছে সেটাও জানতাম। তুমি যে সেই মেয়ে সেটা ভাবতে পারি নি।

‘আসলে বাবা সবসময় পার্সোনাল লাইফ আর প্রোফেশনাল লাইফকে আলাদা ভাবে রাখেন।

‘ও আচ্ছা। আমার খুব ইচ্ছা ছিল মনির স্যারের একটা অটোগ্রাফ নেওয়ার। তুমি কি আমাকে এই ব্যাপারে সাহায্য করতে পারবে? মানে তোমার বাবার একটা অটোগ্রাফ এনে দিতে পারবে?’

‘কেন পারব না? এখন তো বাবা চট্টগ্রামে আছে একটা কনসার্টে। কাল বাবা ফিরে আসবে। কালকে এখন আমি তোমার সাথে বাবার দেখা করিয়ে দেব।

স্নিগ্ধ মৃদু হেসে সেখান থেকে চলে যায়। স্নিগ্ধর চলে যাওয়ার পর মেহুলও চলে যায়।

৮.
‘তোকে আজ খুব খুশি খুশি দেখাচ্ছে। ব্যাপারটা কি?’
ইতির কথাটা শুনে মেহুলের ঘোর কা’টে। সে সবিস্তারে কালকের রাতের সব ঘটনা বলতে থাকে। সব শুনে ইতি বলে,
‘কাল রাতেই তো তুই বললি স্নিগ্ধ ভাইয়াকে ভুলে যাবি। আর আজ অন্য কথা বলছিস।

‘কালকের কথা ভুলে যা তো। আজকের কথা ভাব। আমি তো আজ খুবই এক্সাইটেড হয়ে আছি। স্নিগ্ধকে বাবার সাথে দেখা করাবো।

‘তো কি হিসেবে দেখা করাবি? সিনিয়র নাকি হবু জামাই?’

‘দুটোই।

‘কি? তোর বাবাকে এখনই সব বলবি নাকি?’

‘না। এখন কিছু বলব না। সঠিক সময়ে সব বলব। আগে স্নিগ্ধর দিক থেকে কোন ইতিবাচক কথা শুনি।

তাদের কথার মাঝখানে মুগ্ধ সেখানে চলে আসে। মুগ্ধ এসে মেহুলকে বলে,
‘মেহু। তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।

মুগ্ধকে এভাবে নরম স্বরে কথা বলতে দেখে মেহুল প্রথমে তো খুব অবাক হয়। মনে মনে ভাবে নিশ্চয়ই কোন কুমতলব আছে। কারণ এই ছেলে তো এত ভালোভাবে কথা বলার মানুষ নয়।

মেহুল মুগ্ধকে সাফ জানিয়ে দেয়,
‘যা বলার বলো। আমি শুনছি।

‘একটু এদিকে এসো।

‘যদি বলতে চাও এখানে সবার সামনে বলো। আমি এদিক ওদিক যেতে পারব না।

‘আমি তোমাকে,,,,’

মেহুল ভ্রু কুচকে বলে,
‘আর কিছু বলতে হবে না। আমি বুঝে গেছি তুমি আমাকে ভালোবাসো তাইতো? এটা নিশ্চয়ই নতুন চাল।

মুগ্ধ এবার রেগে গেয়ে বলে,
‘আরে মেহু আমি তোমাকে এটাই বলতে চাই যে আমার ভাইয়ের জন্য অলরেডি ভাবী পছন্দ করে রেখেছি। তোমাকে কিছুতেই আমার ভাবী হতে দেবোনা। আজ এখানে সবার সামনে তোমায় চ্যালেঞ্জ করলাম।

‘আমিও তোমায় চ্যালেঞ্জ করছি। তোমাকে আমায় ভাবী হিসেবে মেনে নিতেই হবে।

মুগ্ধ রাগে কটমট করতে করতে সেখান থেকে চলে যায়। মোহনা এতক্ষণ দাড়িয়ে থেকে তাদের সব কথা শুনছিল। মুগ্ধ চলে যেতেই সে মেহুলকে এসে কথা শোনায়।
‘তোমার মতো নির্লজ্জ মেয়ে আমি একটাও দেখিনি। তোমার বাবা-মা তোমায় বুঝি এইসব শিক্ষা দিয়েছে।

মেহুল এমনিতেই রেগে ছিল। তার উপর মোহনার এরকম কথা শুনে সে আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না। মোহনাকে বলেই দেয়,
‘শিক্ষাই সবাইকে ভালো করতে পারে না। নাহলে তোমার মায়ের এত ভালো শিক্ষা, এত বই পুস্তক পড়েও কেন তুমি এত হিংসুটে হলে বলোতো আমায়।

মেহুলের কথাটা শুনে মোহনা অপমানিত বোধ করে। ইতিও এবার খুব খুশি হয় মেহুলকে এভাবে নিজের হয়ে কথা বলতে দেখে।

মোহনা তখন সেখান থেকে চলে যায়। মুগ্ধর কাছে গিয়ে বলে,
‘আমি আপনাকে সাহায্য করতে চাই মেহুল আর স্নিগ্ধর ব্যাপারে।

মুগ্ধ মোহনার মুখের উপরেই বলে দেয়,
‘আমার কারো সাহায্য লাগবে না। আমি নিজেই যা করার করব।

মোহনা এতে আরো রেগে যায়। মেহুলের উপর তার রাগ,ক্ষোভ হিংসা সব বাড়তে থাকে। মোহনা এবার ঠিক করে নেয় মেহুলের থেকে স্নিগ্ধকে কেড়ে নিয়েই সে মেহুলের উপর শোধ তুলবে।

স্নিগ্ধ বসে বসে গিটার বাজাচ্ছিল। মেহুল তার কাছে গিয়ে বলে,
‘আমার বাবা ফিরে এসেছে। চলো এখন গিয়ে তার সাথে দেখা করবে।

স্নিগ্ধও মেহুলের বাবার কথা শুনে স্বেচ্ছায় তার সাথে চলে যায়।

মেহুল বাড়িতে গিয়েই তার বাবাকে দেখে বলে,
‘ড্যাডি তুমি এসেছ? আমি আমার সিনিয়রের সাথে তোমার দেখা করাতে এসেছি। উনি কিন্তু তোমার অনেক বড় ফ্যান। ওর নাম স্নিগ্ধ। আর স্নিগ্ধ তুমি তো চেনো ইনি হলেন মিস্টার মনির চৌধুরী আমার বাবা।

স্নিগ্ধকে দেখে মেহুলের বাবা ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর বলে,
‘মেহুল তুমি কি তোমার এই সিনিয়রকে ভালোবাসো।

মেহুল থতমত হয়ে বলে,,,,,
চলবে কি?
>>>>

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here