বুনোভাই,পর্ব:১২+১৩

#বুনোভাই
#পর্ব_১২
#লেখনীতে_তিথি_মজুমদার

কোচিং এর পাশে একটা ক্যাফেতে ঢুকলো মৃণাল আর সিমি।কর্ণারের একটা টেবিলে দু কাপ কফির অর্ডার দিয়ে তারা দুজন বসলো।সিমিকে কেমন যেন উদভ্রান্তের মতোন লাগছে মৃণালের কাছে।কি এমন কথা বলতে চায় সিমি মৃণালকে তা মৃণাল আন্দাজ করতে পারছে না।এদিকে সিমি টেবিলের মধ্যে নিজের নখ ঘষছে বারবার। মনে হচ্ছে সে যা বলতে চায় তা কিভাবে শুরু করবে তাই ভাবছে।ওয়েটার দু কাপ ধোঁয়া উঠা গরম কফি নিয়ে এসে টেবিলে রাখলো। একটা কাপ মৃণালের দিকে আরেকটা কাপ সিমির দিকে এগিয়ে দিয়ে সে চলে গেলো।মৃণাল নিজের কফিটা সামনে টেনে হাতে তুলে একটা চুমুক দিয়ে সিমিকে উদ্দেশ্য করে বলল,

-আপু আপনি কি আমাকে কিছু বলতে চান।

-হুম।কিন্তুু কিভাবে শুরু করবো সেটা বুঝতে পারছিনা।

-আপু আপনার যদি আমাকে কিছু বলার থাকে তাহলে আপনি নিঃসংকোচে বলতে পারেন।
মৃণালের কথার মাঝে কিছু একটা ছিলো যার ফলে সিমি নিজের ভিতরের জমিয়ে রাখা কথাগুলো বলতে শুরু করলো।

-আমরা তিনজন মানে আমি, তপু,বিশান সেই স্কুল থেকে একসঙ্গে পড়াশোনা করছি। আমরা তিনজন খুবই ভালো বন্ধু তখন থেকেই।তারপর কলেজে এসে আমাদের সাথে মৃদূলের পরিচয় হয়।এরপর থেকে ও আমাদের খুব ভালো বন্ধু হয়ে উঠে। ওরা তিনজন ছাড়া আমার অন্য কোনো ছেলে বন্ধু ছিলো না কখনো আজপ নেই।আমাদের চার বন্ধুর বন্ডিং খুবই ভালো ছিলো বরাবর। মৃদুল একটু চুপচাপ স্বভাবের, আবার তপু হলো একেবারে ওর উল্টো। আর ওর একমাত্র কাজ হচ্ছে সারাদিন আমার পিছনে কিভাবে লাগা যায়।বলে একটু হাসলো সিমি।অন্যদিকে বিশান হচ্ছে এদের দুজনের সংমিশ্রণ। মানে কখনো সে শরতের শান্ত মেঘের মতন চুপচাপ আবার কখনো বৈশাখের প্রবল তান্ডব। আর তাই এই তিনজনের মধ্যে ও আমার নজরে সবসমই আলাদা একটা ব্যাক্তিত্ব নিয়ে থাকত।
এতোটুকু বলে সিমি কিছুটা মুচকি হাসলো। তারপর কফি মগে একটা চুমক দিয়ে আবার বলতে শুরু করলো,

-যখন থেকে প্রেম ভালোবাসা এসব কিছু বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই এই একজনকে নিয়েই নিজের সব স্বপ্ন সাজয়েছি।আমার সব কিছু এই একটা মানুষকে ঘিরেই তৈরি। খুব ভালোবাসি ওকে।বলে একটা দম নিলো সিমি।তারপর আবার বলতে লাগলো,
একজন মেয়ে হয়ে নিজের অনুভূতি গুলো কখনো ওর কাছে প্রকাশ করিনি।ভেবেছিলাম ও হয়তো বুঝবে আমার মনের কথা।কিন্তুু……..বলেই চোখের কোণে জমা পানিটুকু অনুমতি বিহীন গড়িয়ে পড়লো তার গাল বেয়ে।
মৃণাল এতোক্ষণ খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো সিমির প্রতিটি কথা।সিমির কথাগুলোর মাঝে একরাশ শূন্যতার অনুভব হলো মৃণালের।সিমির চোখের পানি দেখে সে উদ্বিগ্ন গলায় তার হাতের উপর নিজের হাত রেখে বলল,

-কিন্তুু কি হয়েছে আপু?তুমি এভাবে কাঁদছো কেনো।প্লিজ আপু আমাকে সবটা বলো তাহলে হয়তো তোমার মনটা কিছুটা হলেও হালকা হবে।

-কিন্তুু বিশান কোনোদিন বুঝে নি। সে কখনো আমার চোখে তার জন্য জমানো ভালোবাসার আঁচও করতে পারেনি।আর এখন সে অন্য কাওকে পছন্দ করে হয়তো মনে মনে ভালোবাসে।

-আপু তুমি কেনো নিজের ভালোবাসার কথা শানকে জানাচ্ছো না। শান যদি জানতে পারে হয়তো সেও তোমাকে ভালোবাসতে পারে।

-ভালোবাসা জোর করে হয় না মৃণালিনী!

-কিন্তুু আপু তুমি এসব কথা আমাকে কেনো বলছো?
দিধান্বিত গলায় সিমিকে জিজ্ঞেস করলো মৃণাল।

-কারণ বিশান যাকে পছন্দ করে সে আর কেউ নয় মৃণালিনী সে হচ্ছো তুমি।তোমাকে মৃন্ময়ী আপুর বিয়ের অনুষ্ঠানে দেখার পর থেকেই বিশানের তোমার প্রতি একটা সফট কর্ণার তৈরি হয়।আর যা ধীরে ধীরে ভালোবাসার রূপ নিচ্ছে এখন।ও হয়তো এর মধ্যেই তোমাকে প্রপোজ ও করবে।
সিমির মুখে বিশানের এমন মনোভাব শুনে মৃণালের পুরো শরীর কাঁপছে, তার এতোদিনের অসামাপ্তিত কিছু প্রশ্নের জট যেনো সিমির এক কথায় খোলসা হয়ে গেলো।তাহলে এর জন্যই বিশান বারবার এড়িয়ে চলা সত্যেও তার সঙ্গ এজন্যই ছাড়েনি!বিশান কি তবে সত্যি সত্যিই তাকে ভালোবাসে? কিন্তুু সে তো বিশানকে নিয়ে এমন কোনো কিছু ভাবেনি এমনকি কোনোদিন এমন কিছু হোক সেটাও সে চায় না।কারণ তার পুরো মন জুড়ে তো অন্য কারোও বসবাস।সে যে তাকেই মনে প্রানে চায়।একপ্রকার তব্দা মেরে চুপ হয়ে বসে আছে মৃণাল।
সিমি নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,

-তুমি হয়তো ভাবছো আমি তোমার কাছে আমার ভালোবাসা ভিক্ষে চাইতে এসেছি কিন্তুু সত্যি বলতে আমি তোমার কাছে এজন্যই এসেছি যাতে তুমি বিশানকে ফিরিয়ে না দাও।কারন ও ওর জীবনে কোনো মেয়েকে প্রেম নিবেদন করেনি।তোমাকে যদি করে তাহলে তুমিই সেই ভাগ্যবতী নারী যাকে কিনা বিশান ভালোবাসবে।আমি চাই তুমি ওকে আগলে রাখো নিজের ভালোবাসা দিয়ে,দোয়া করি তোমরা দুজন যেনো খুব সুখি হও।বলেই সিমি উঠে দাঁড়ালো চলে যাওয়ার জন্য। কাঁধের ব্যাগ তুলে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই মৃনাল বলে উঠলো,

-কিন্তুু আমি যে অন্য কাওকে ভালোবাসি আপু।
শান্ত চাহনি কিন্তুু তেজি গলায় বলল সে।মৃণালের এই কথাটি শুনে কেনো যেনো সিমির মনে একটা আশার আলো জ্বলে উঠলো। সে ধপ করে আবার চেয়ারে বসে পড়লো।এদিকে বাহিরের দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে মৃণাল।নিজেকে কেমন শূন্য শূন্য লাগছে তার কাছে।মনে হচ্ছে এখনই ছুটে চলে যেতে তার বুনোভাইর কাছে কিন্তুু সে জানে বুনোভাইকে সে কোনোদিন পাবে না। নিজের মনেই সে বলল,

“জানি তোমায় আমি পাবো না,
তুমি কেবল আমার যাতনা!
খাঁচায় যেমন পোষ মানে না পাখি;
বনের পাখি যেমন ত্যাগ করে না
বনের মায়া!
তুমিও তেমন আমার মায়া
আবার হয়ত ভালোবাসা!”
————————————————————–

দিনের শেষ অংশ টা হয়তো খুব দ্রুতই ফুরিয়ে যায় !পড়ন্ত বিকেল হয়তো একেই বলে !
আর দিনের শেষ ভাগের এই রংটাই বুঝি গোধুলী !
ছাদে বসে গাঢ়ো কমলা রঙ এর অস্তায়মান সূর্য টা দেখছিলো হিমেল।তার কাছে মনে হচ্ছে সূর্য্যি মামা বুড়িয়ে গেছে,তার দিকে যেন কেমন অবলিলায় তাকিয়ে আছে। চোখে বিন্দু মাত্র আঁচ লাগছে না।
কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে তার সৌন্দর্য অবলোকন করলো সে।
কি জানি ! হয়তো সত্যিই সুন্দর প্রকৃতির এই দিন রাতের সন্ধ্যিক্ষন ।
-আমার মত পাথুরে হৃদয়ের মানুষের পক্ষে তা খুজে পাওয়া রিতিমত দুঃসাধ্য কাজ ।
নিজেই নিজেকে বলল সে,

কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে চোখ ঘুরিয়ে সে মনযোগ দিলো এক ঝাক ঘরে ফেরায় ব্যাস্ত পাখিদের দিকে ।উড়ে চলেছে নিজ গন্তব্যে !কি ছকে বাঁধা নিয়ম ওদের !
ভোর হতেই জেগে ওঠা , খাবার এর খোজে বেরিয়ে পরা , সারা দিনের সমস্ত কাজ সাঝ বেলার আগেই শেষ করে ঘরে ফেরা। সত্যিই হয়তো সুন্দর ।ইশ তার বড় হিংসে হয় যদি তারও পাখিদের মতন এতো সুন্দর জীবন হতো তাহলে হয়তো তার জীবন টাও এমন উপভোগ্য হতো।
কিছুক্ষন পর সূর্য্যি মামার দিকে তাকিয়ে দেখে সে কয়েক মিনিটের ব্যাবধানে অনেকটা দূরে চলে গেছে !
এইতো ! কিছুক্খন আগেই ঐ মরা বেল গাছটার মাথার উপর ছিলো ,আর এখন নেমে গেছে অনেক নিচে ।
তার সূর্য্য কেও প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করলো

“তোর কি বড্ড তাড়া !”
নাকি সারাদিন ঠায় দাড়িয়ে তুই ক্লান্ত !?

ধীরে ধীরে সূর্য টা বেলগাছ টার ওপাশে বড় বড় গাছের আড়ালে হারিয়ে গেল ।
তখনও হয়তো সে ডুবে যায় নি ।
তার শেষ শক্তিটুকু দিয়ে দিনটাকে আলোকিত করে রাখার চেষ্টা করে গেল ।
মনে হচ্ছে আকাশ যেখানে মাটি ছুয়েছে ! সেখান কেউ কমলা রং ঢেলে দিয়েছে ।
বেচারা ক্লান্ত সূর্য টা অবশেষে আঁধারের মাঝে হারিয়ে যেতেই বাধ্য হলো হয়তো !
রাত্রী তার মহিমায় গোটা শহরে ঢেলে দিলো নিকোষ কাল অন্ধকার।
তখন শহুরে নিয়ন আর সোডিয়াম আলোয় আলোকিত !
তবু রাত্রি কে হারাতে পারেনি সে নানা রং এর আলো . . . . . . . . . . . .

প্রকৃতির এমন রুপ আজকাল তাকে খুব পোড়ায়।সেদিন ভাইয়ের শালিকার সাথে কথা বলার পর থেকেই তার বুকের বা পাশটা যেনো কেমন চিনচিন করে আজকাল।তার কেনো যেনো বারবার মনে হয় একবার হলেও তার ওই রুপা নামের মেয়েটির সামনে গিয়ে তাকে দেখা দরকার। রুপা নামের মেয়েটিকে সেদিন সে না দেখলেও কেনো যেনো তার বারবার মনে হচ্ছে সে রুপাকে চিনে আর খুব ভালো করেই জানে সে রুপাকে।সে বুঝতে পারছে না কেনো তার এমন অনুভব হচ্ছে। তাই সে এবার সিদ্ধান্ত নিলো যে সে একবার ওবাড়ি যাবে অন্তত রুপা নামক মেয়েটিকে দেখার জন্য হলেও সে একবার যাবে।

চলবে,,,,,,,,

#বুনোভাই
#পর্ব_১৩
#লেখনীতে_তিথি_মজুমদার

১৩,
-পলিথিনের বাচ্চা তুই কেমনে পারলি আমার থেকে এতো বড় একটা কথা লুকাইতে।
অগ্নিগরম চোখে পলিকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলল মৃণাল।এদিকে মৃণালের এমন রাগের সামনে পলি পুরাই ভয়ে কাঁপা-কাঁপি শুরু করে দিসে।দাঁত দিয়ে নিজের নখ কামড়াচ্ছে সে।এদিকে পলির কোনো জবাব না পেয়ে মৃণাল পূর্বের চেয়ে আরও জোরে হাক দিয়ে বলল,

-কিরে বল কেমনে কি হইলো,কবে থেকে এসব চলছে?
জবাবের আশায় পলির দিকে তাকিয়ে আছে মৃণাল।

-মৃন্ময়ী আপুর বিয়ের সময়ে আমাকে প্রথম দেখেই নাকি ওনার ভালো লেগে গেছে।এরপর কেমনে জানি আমার ফোন নাম্বার পাইছে।ঢাকা যাওয়ার পর থেকে প্রতিদিন আমারে ফোন দিত।এরপর,,,
পলি আর কিছু বলে উঠার আগেই মৃণাল আরেকটি কঠিন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো তার দিকে।

-মামারে কিছু জানাস নাই?তুই তো ছোট খাটো বিষয়ও মামাকে না জানিয়ে করিস না।আর সেখানে এতো বড় একটা কাজ করে ফেললি?
পলি কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। এখন যদি মৃণাল তার বাবাকে কিছু বলে দেয় তাহলে তো সর্বনাশের আর বাকী থাকবে না।সে একটা ফাঁকা ঢোক গিলে বলল,

-আসলে আমার নিজেরও ওনারে ভাল লাগছিলো তাই ফোনের কথাটা আব্বুকে আর বলি নাই।

মৃণাল গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে আছে পলির দিকে।তার যেনো বিশ্বাসই হচ্ছে না এটা পলি,কারণ যে মেয়ে বাবা বলতে অজ্ঞান, তার কাছে কোনো কিছুই গোপন রাখে না সে কিনা গত পাঁচ মাস ধরে প্রেম করছে তাও আবার নিজের বাবাকে না জানিয়ে।মৃণাল ভাবলো এটাই হয়তো ভালোবাসার শক্তি।, হুমায়ুন আহমেদের সে বাক্যটি তার বারবার মনে পড়ছে,তিনি বলেছিলেন”প্রেমে পড়লো চালাক মানুষ বোকা হয়ে যায়, আর বোকারা চালাক”
পলির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।ভীতু,শান্ত, চুপচাপ মেয়েটি যেনো হঠাৎ বড় হয়ে গেলো।
মৃণালের এমন থম মেরে বসে থাকা দেখে পলির মনে ভয়ের আশংকা যেনো আরও বেড়ে গেলো।সে মৃণালের হাত দুটো নিজের হাতের ভিতর নিয়ে ছলছল চোখে তাকিয়ে বলল,

-মিনু তোর দোহায় লাগে এখনই তুই এসব আব্বুরে জানাইস না।ওনি বলছেন চাকরি পেলেই বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবেন।ততোদিনে তুই প্লিজ কাওকে এই কথাটা বলিস না!

পলি হাতের উপর নিজের হাত উঠিয়ে মৃণাল তাকে আশ্বস্ত করে বলল,

-তুই চিন্তা করিস না পলি আমি এখন কাওকেই কিছু জানতে দিবো না।
পলি ততক্ষণাত মৃণালকে জড়িয়ে ধরে খুশিতে।মৃণালের বুকে একটা শূনতা যেনো মুহূর্তেই মিলিয়ে গেলো।

-বাই দা হাইওয়ে এই ও-নি-ই টা(বলার সময় সুর করে টেনেটেনে বলছে) আবার কে শুনি।

-তপেশ!
বলেই লজ্জা রাঙা মুখ নিয়ে দৌড়ে পালায় পলি।পলির এইরকম দৌড় দেখে প্রথমে কিছু বুঝতে না পারলেও পরে যখন সে বুঝে তখন উচ্চস্বরে হেসে উঠে মৃণাল।সত্যিই ভালোবাসা মানুষকে বদলে দেয়।সেও তো এই পাঁচ মাসে অনেক বদলেছে।এখন আর আগের মতন কষ্ট হলে তার কান্না পায় না,কেউ অপমান করলে তা গায়ে মাখে না,নিজের মতন নিজের একটা আলাদা জগত যেনো সে তৈরি করে ফেলেছে এখন।আজ দুদিন হলো সে গ্রামের বাড়িতে এসেছে।মেডিকেল পরিক্ষা শেষ হয়েছে অনেক আগেই রেজাল্টের জন্যই অপেক্ষা করছিলো সে ঢাকায়।আসলে সে বাড়িতে আসতে চাইলেও পারলো না মোবাশ্বেরা আহমেদ এর জন্য। মৃণালের পরিক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ার পরই সে বাড়িতে চলে আসতে চাইছে কিন্তু বাঁধ সাধলো তিনি।তার ভাষ্য মতে
– এতোদিন তো পড়াশোনা করার জন্যে কোথাও ঘুরতেও পারলি না আর কিছু দিন থেকে যা।তাছাড়া সামনে তো আবার মৃদুলের এনগেজমেন্টও আছে।

সেদিন যেনো অল্পক্ষণের জন্য হলেও মৃণালের পুরো দুনিয়া টাই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। এই একটা কথার ঘোরে যে সে কতদিন ছিলো তা সে নিজেও জানে না।নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়েও সে ওই বাড়ি থেকেছিলো শুধুমাত্র মৃদুলকে শেষ বারের মতন দেখার জন্য। কারণ সেও সেদিনই ঠিক করে নিয়েছিলো সে আর কখনো মৃদূলের মুখোমুখি হবে না।মেডিকেলের রেজাল্ট আউটের পরের সপ্তাহেই মৃদূললল আর বিপাশার এনগেজমেন্ট হয়।মৃদুল বাহির থেকে একটা কোর্স শেষ করে ফিরলেই মহা ধুমধামে বিয়ে হবে তাদের!!!!!

————————————————–
বসন্ত মানেই নতুন প্রাণের কলরব। কচিপাতায় আলোর নাচনের মতোই বাঙালির মনেও লাগবে দোলা। বিপুলল তরঙ্গ প্রাণে আন্দোলিত হবে বাঙ্গালি মন।
শীতের শুষ্কতায় বিবর্ণ প্রকৃতি যেনো ফিরে পেয়েছে তার প্রাণ এই রঙিন বসন্তে।গাছে গাছে দেখা দেয় কচি পাতা। দক্ষিণা হাওয়ায় মাতিয়ে তোলে চারিদিক। ফুলে ফুলে ভরে ওঠে সব গাছ। কৃষ্ণচূড়া, চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদা, মালতী, মাধবী, বকুল, শিমুল, পলাশসহ নানা জাতের ফুল ফোটে। আমের মুকুলের সৌরভে ম ম করে আকাশ বাতাস।
বাসন্তী রঙা শাড়ী,হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি,কপালে ছোট্ট একটা টিপ, চোখের নিচে মোটা করে গাড় কাজল, চুল গুলোকে গাড় বরাবর খোঁপা করে তার মধ্যে চন্দ্রমল্লিকা আর বুনো ফুলের মিশ্রনে তৈরি গাজরা পড়ে যেনো এক অসাধারণ বসন্ত কন্যার আজ প্রবেশ ঘটলো চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রাঙ্গণে। মৃণাল এক প্রকার মনের বিরুদ্ধে গিয়েই আজ এমন ভাবে সেজেছে।আজ তাদের মেডিক্যাল কলেজের ফেয়ারওয়েল প্লাস বসন্ত উৎসব এক সাথে উদযাপন করা হবে।মেডিক্যাল সেকশনের সিনিয়ররাই ছেলেমেয়েদের ড্রেস কোর্ড সিলেক্ট করে দিয়েছে আজকে পড়ার জন্য।মেয়েদের বাসন্তী রঙের শাড়ী আর ছেলেদের সাদা অথবা লাল রঙের পাঞ্জাবি। বিশেষ করে আবাসিক স্টুডেন্টদের জন্য এই ড্রেস কোর্ডটি বাধ্যতামূলক।

মৃণাল কলেজের মূল ফটক পেরিয়ে
শাহ আলম বীর উত্তম মিলনায়তনের দিকে হাঁটতে লাগলো।

চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মিলনায়তন রয়েছে। খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা বীর উত্তম শাহ আলমের নামে এই মিলনায়তনের নামকরণ করা হয়েছে। এটি এক হাজার দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন। আধুনিক মিলনায়তনের মতো এতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, সাজঘর, লাইটিং এবং সাউন্ড সিস্টেম রয়েছে।

যদিও আজ সেখানে বসন্তের নানারকম ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করার জন্য এবং একই সঙ্গে বসন্ত উৎসব পালন তো আছেই।নানারকম নাচ, গান,কবিতা,নাটকের মাঝে এই অনুষ্ঠান আজ ভরপুর থাকবে।
মৃণাল মিলনায়তনের ভিতরে প্রবেশ করে এককোণে বসে পড়লো।আর মনে মনে আল্লাহ কে ডাকছে,পাছে কোন সিনিয়র আবার না তাকে দেখে ফেলে এই ভয়ে।আজ এক মাস হয়েছে সে মেডিক্যাল কলেজের হলে উঠেছে।উঠার পর থেকেই কলেজের সিনিয়রদের শাস্তির কবলে সে জর্জরীত এবং বিরক্তিত।তবুও কোনো কিছু বলার যো নাই বললেই পানিশমেন্ট এর পরিমান ডাবল হয়ে যায়।ওইতো সেদিন স্নেহা সিনিয়রদের মধ্যে একজনের সাথে একটু জোরে কথা বলছে বলে তাকে তো সেদিন সারারাত রুমে ঢুকতেই দেয়নি উপরন্তু রাতের খাবারও বন্ধ করে রেখেছিলো।
এমন আরও কত কী যে হয় এখানে তা বলে শেষ করা যাবে না।
এইসব নানারকম চিন্তা ভাবনার মাঝেই মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে।প্রথমেই বসন্তের আগমনী গানের সাথে নবীন ও প্রবীণ রা নাচছে।গ্যালারীর যেদিকেই মৃণাল চোখ দিচ্ছে সেদিকেই আজ মৃণাল শুধু বসন্ত কুমারীদের দেখছে।অনেকে তো আবার জোড়ায় জোড়ায় হাতে হাত রেখে বসেও আছে।হঠাৎ করেই মৃণালের বুনোভাইয়ের কথা মনে পড়ে গেলো।কত স্বপ্ন বুনেছিলো একদিন মৃণাল তার এই মনের আঙিনায় তাতো আর মৃদূল জানে না।আর কোনোদিন হয়তো জানবেও না।হয়তো এতোদিনে সে বিদেশও চলে গেছে।ফিরে আসলেই তো আবার বিপাশার সাথে তার বিয়ে। আচ্ছা এতো কিছুর মাঝেও কী বুনোভাইয়ের একবারও মনে পড়ে এই মৃণালিনীর কথা,এতোটাই কি অযোগ্য সে যে তাকে একটু ভালোবাসা যায় না?,
হয়তো যায় না,কারন তার আর বিপাশার মাঝে যে আকাশ পাতাল তফাত।তাইতো বুনোভাই বিপাশাকেই ভালোবাসে আর কিছু মাস পর তাকেই বিয়ে করবে।আজ চারপাশে এতো রঙ,এতো আলো তবুও যোনো একরাশ অন্ধকারের মাঝে তলিয়ে যাচ্ছে মৃণাল।বুক চিড়ে কান্না আসছে তার।মুখে হাত দিয়ে কান্না চাপার বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছে সে,একটা পর্যায় নিজেকে না সামলাতে পেরে ছুটে বেরিয়ে গেলো সে হল থেকে।শাড়ীর আঁচল মুখে গুঁজে কাঁদতে কাঁদতে মূল ফটক পেরিয়ে সে উম্মাদের মতন ছুটে দৌড়াচ্ছে। দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎই তার গা গেশে রাস্তায় একটা গাড়ি ব্রেক করলো।আর তারপর যেটা হলো তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না মৃণাল।কিছু বুঝে উঠার আগেই একজন মুখোশধারী লোক তার মুখের সামনে কিছু একটা ধরতে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।আর এদিকে তাকে গাড়ীতে তুলেই গাড়ী চালক খুব দ্রুত গাড়ী চালিয়ে শাঁ শাঁ করে চলে গেলো।।

চলবে,,,,,,
কে নিয়ে গেলো মৃণালকে😯😱😕

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here