বেলাশেষে -২ পর্ব -০৫

#বেলা_শেষে- ২

[০৫]

ফ্যালফ্যাল নয়নে তাকিয়ে আছি আমার হাতে থাকা মোবাইলের দিকে। স্কিনে এগারো ডিজিটের নাম্বার জ্বলজ্বল করছে। সাহস করে কল রিসিভ করে উঠতে পারছি না। দেখতে দেখতে কলটা কেটে গেলো। কল কেটে যাওয়ার পরে বড় করে শ্বাস ত্যাগ করলাম আমি। এ যাত্রায় বেঁচে গেলাম। কারন কলটা ছিল আননোন নাম্বার থেকে, আর কে কল করেছে সেটাও আমার অজানা নয়। কিছুক্ষণ আগে যখন ভাইয়ার কাছে পড়তে গিয়েছিলাম তখন সে বারবার করে বলে দিয়েছে, আননোন নাম্বার থেকে কল আসলে আমি যে রিসিভ না করি। মোবাইলটা রেখে যখনি উঠতে যাব তখন আবারও কল বেজে উঠলো। আমি বিস্ময় দৃষ্টিতে সে দিকেই তাকিয়ে রইলাম। কল বাজতে বাজতে এবারও কেটে গেলো আমি রিসিভ করলাম না। কিছুক্ষণ পর আবারও সেই একই নাম্বার থেকে কল আসলো। এভাবেই মোট ছয় বার কল আসার পর সাত বার কল বাজার পর আমি রিসিভ করি। তারপর ওপাশের ভয়েজ শুনে আমি কিছুক্ষণ থো মেরে দাঁড়িয়ে রইলাম।

তিনদিন ধরে বাসায় বন্ধিআমি। এই তিনদিনে বাসা থেকে কোথাও যাওয়া হয়নি আমার। কলেজে যাইনি একদিন ও। ভাইয়া আমাকে কলেজে যেতে দিচ্ছে না। আবার কোথাও বেড়াতে নিয়েও যাচ্ছে না। সারাদিন বইতে মুখ গুজে বসে থাকি আমি। সকাল বেলা ভাইয়া আমাকে পড়া দেখিয়ে দেয়, সারাদিন আমি সেগুলোই পড়ি আর রাতে এসে ভাইয়া আমার পড়া নেয়। এভাবেই কাটছে আমার দিন। সারাদিনের পড়া শেষ করে ভাইয়ার রুমে যাচ্ছি এখন পড়া দিতে। দরজার সামনে এসে দাঁড়াতেই ভাইয়ার কথা শুনে দাঁড়িয়ে গেলাম আমি,

-আমি সব ব্যবস্থা করে রেখেছি। তোরা সবাই চলে আয়।

ওপাশ থেকে কি বলল বুঝতে পারলাম না। ভাইয়া হ্যাঁ হ্যাঁ করে কল কেটে দিলো। মোবাইলটা বিছানার উপর রেখে দু-হাতে মাথার চুল টেনে ধরে বিছানায় বসলো সে। ততক্ষণে আমি রুমের ভেতরে ডুকে ভাইয়ার সামনে এসে দাঁড়িয়েছি। ভাইয়া এখনো মাথার চুল চেপে ধরে বিছানায় বসে আছে। আমার উপস্থিতি টের পেল না সে। আমি তার সামনে দাঁড়িয়ে জিগ্যেস করলাম,

-তোমার কি মাথা ব্যথা করছে ভাইয়া। আমার কথা শুনে মহাশয় মাথা তুলে আমার দিকে তাকালো। আমি আবারও বললাম,

-না মানে মাথা চেপে বসে আছো তো তাই জিগ্যেস করলাম।

-আমি ঠিক আছি মিষ্টি। বলেই উঠে দাঁড়ালো সে। আমার সামনে পকেটে দু-হাত গুজে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর বলল,

– ডিনার করেছিস??

– না।
আমার বলার সাথে সাথে ভাইয়া আমার হাত থেকে বই নিয়ে নিলো। তারপর বলল,

– যা ডিনার করে ঘুমিয়ে পর। আজ কোন পড়া হবে না।

-কিন্ত কেন?? আমার তো সব পড়া শেষ হয়নি এখনো।

-কাল পড়বি আজ নয়। ভাইয়ার কথা শুনে আমি তার হাত থেকে আমার বইটা ছো মেরে নিয়ে নিলাম। শক্ত গলায় বলল,

-সবসময় কি তোমার কথামতো চলতে হবে নাকি। আমি আজ এখান থেকে কোথাও যাব না। কাকে আসতে বললে তুমি। তোমার গার্লফ্রেন্ড, আমিও দেখবো তোমার গার্লফ্রেন্ডকে। আমি কোথাও যাব না এখন থেকে। একদমে কথাগুলো বলে বিছানায় পায়ের উপর পা তুলে বসলাম। ভাইয়া আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইলো। আসলে আমি যে তার কথা শুনে ফেলেছি এটা সে বুঝতে পারে নি।

ভাইয়া আমাকে কিছু বলবে তখনি তার মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠে। আমার দিকে ক্রোধান্বিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সে কল রিসিভ করে। ওপাশ থেকে কিছু একটা বলার পর ভাইয়া তার মোবাইলের উপর হাত রেখে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে, ফিরে এসে তোকে যেন আমার রুমে না দেখি। তারপর হনহন করে চলে যায়। আমিও কম কিসে ভাইয়ার কথা বলার সময় আমি মুখ ঘুড়িয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলাম। সে চলে যেতেই আমি ভাইয়ার মতো করে বললাম, ফিরে এসে তোকে যেন আমার রুমে না দেখি। হু বললেই হলো। তারপর ভাইয়ার রুমের চারিপাশটাতে চোখ বুলাতে লাগলাম। ভাইয়া তার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে আসবে অথচ রুমের কোন পরিবর্তন নেই। তাই আমি তার রুমটা গুছাতে লাগলাম। তখন আমার চোখ আটকে যায় টেবিলের নিচে কয়েকটা বোতলের দিকে , লম্বা কাচের বোতল। আচ্ছা এগুলো কিসের বোতল। বোতলগুলো টেবিলের নিচ থেকে বের করলাম। নাকের কাছে নিতেই বাজে একটা গন্ধ ভেসে আসলো। আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না এগুলো কি হতে পারে। আর এখন ভাইয়ার রুমে কে আসছে।

খাটের উপর একটা ওয়াইনের বোতল আর একটা গ্লাস রেখে তার সামনে বসে আছি আমি। আমার কত দিনের ইচ্ছে ছিলো ওয়াইন খাওয়ার। ওয়াইন বিয়ার রাম ওয়িস্কি খেয়ে মানুষ কত সুন্দর করে কথা বলে থাকে। আমিও বলবো। ফাইনালি আমার সেই ইচ্ছেটাও পূরণ হতে চলেছে। খুশিতে নাগিন ড্যান্স দিতে ইচ্ছে করছে আমার। গ্লাসে ওয়াইন ঢেলে নিলাম। তারপর একহাতে নাক চেপে ধরে পুরো এক গ্লাস ওয়াইন পেটের ভিতরে চালান করে দিলান। এক গ্লাস খেয়ে মন ভরে নি তাই আরো এক গ্লাস খেয়ে নিলাম। এভাবে এক গ্লাস করে ওয়াইন খাচ্ছি আর তখনি রুমে আগমন ঘটলো ভাইয়া ও তার বন্ধুূদের। আমাকে এভাবে খাটের উপরে দেখে ভাইয়া দরজার সামন দাঁড়িয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে। ভাইয়ার মতো তার বন্ধুূদের ও একই অবস্থা। সবাই রসগোল্লার মতো গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ভাইয়ার এক বন্ধু ভাইয়ার কাছে এসে ফিসফিস করে বলল,

– এসব কি হচ্ছে অভি। তোর বোন তো দেখি পুরো এক বোতল ওয়াইন নিজের পেটে চালান করে দিয়েছে। এবার তাকে সামলাবে কে?? আন্টি জানতে পারলে তোর সাথে সাথে আমাদের কপালেও দুঃখ আছে। অভি ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আবার আমার দিকে তাকালো। রাগে হাতের মুঠি শক্তকরে নিয়ে দাঁত কটমট করে বলল,

-এসব কি হচ্ছে মিষ্টি? ভাইয়ার কন্ঠশুনে আমি সে দিকে তাকালাম। একি আমি তো তিনটা ভাইয়াকে দেখতে পাচ্ছি। দু হাতে চোখ কচলিয়ে মিটমিট করে তাকালাম। হ্যাঁ ঠিক দেখছি আমি। তিনটা ভাইয়া। আমি হেসে দিলাম। তারপর তর্জনী দিয়ে দেখিয়ে দেখিয়ে বলতে লাগলাম, একটা ভাইয়া, দুটো ভাইয়া, তিনটা ভাইয়া। এবার ইচ্ছে করছে এই তিনটা ভাইয়াকেই ছুয়ে দেখতে। তাই বিছানা ছেড়ে দাঁড়ানো বৃথা চেষ্টা করলাম। সোজা হয়ে দাঁড়াতে গিয়ে নিজের ব্যালেন্স হাড়িয়ে পড়ে যেতে নিলে ভাইয়া এসে আমাকে ধরে ফেলে। আমি সেই অবস্থাতেই সামনের দিকে হাত বাড়িয়ে বললাম,

-এইতো ধরে ফেলেছি তোমাকে। ভাইয়া আমাকে ধমক দিয়ে সোজা করে দাঁড়া কড়িয়ে দিলো। আমি ঠোঁট উল্টিয়ে ভাইয়ার দুই গাল টেনে দিয়ে বলল, কি সফট্। ইচ্ছে করছে আপেলের মতো করে তোমার গালেও একটা কামড় বসিয়ে দেই। আচ্ছা কোনটা বেশী টেষ্ট হবে আপেল নাকি তোমার এই সফট্ গাল। আমার কথা শুনে ভাইয়ার চোখ কোটর থেকে বেড়িয়ে আসার উপক্রম। সে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি এবার ঠোঁট উল্টিয়ে ভাইয়ার নাক টেনে দিলাম। ভাইয়া আমার হাত ছাড়িয়ে আমাকে বিছানার উপর বসিয়ে দিলো। তারপর কোমল কন্ঠে বলে উঠল,

-চুপচাপ এখানে বস। আমি মুখে আঙ্গুল দিয়ে বসে রইলাম। তারপর ভাইয়া তার বন্ধুদের কাছে চলে যায় এবং তাদের কিছু একটা বলতেই তারা সকলে রুম থেকে চলে যায়। সবার চলে যাওয়ার পর ভাইয়া সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। তখন আমি বিছনা ছেড়ে উঠে দাঁড়াই আর ঢলতে ঢলতে ভাইয়ার সামনে কাছে গিয়ে তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরি ঘটনার আকস্মিক ভাইয়া ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। আমি ভাইয়ার পিঠে মাথা ঠেকিয়ে বিরবির করে কিছু বলতে থাকি। যেটা ভাইয়া শুনেও বুঝতে পারছে না। তাই সে আমাকে ছাড়িয়ে সামনে এসে দাঁড় কারলো। আমি আবারও ভাইয়ার গাল টেনে দিয়ে দু হাতে তার গলা জড়িয়ে ধরি। ভাইয়া ঠোঁট কামড়িয়ে বিরক্তি প্রকাশ করছে। চোখ মুখে তার বিরক্তির ছাপ উপছে পড়ছে। আমাকে বার বার ছাঁড়ানোর বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে ভাইয়া। সে আমাকে যতই ছাঁড়ানোর চেষ্টা করছে আমি তাকে ঠিক ততটাই শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছি।

-উপস্ তুমি এত কি এত কিউট ক্যান ভাইয়া। তোমার নাক তোমার গাল কত কিউট। হাত দিয়ে ভাইয়ার নাক আর গাল ধরে বললাম। তারপর আমার দৃষ্টি স্থির হলো ভাইয়ার ঠোঁটের দিকে। সরু চিকন গোলাপী ঠোঁট যুগল বেশ আকর্শন করছে আমাকে। কিছুক্ষণ সে দিকে তাকিয়ে থেকে চট করে ভাইয়ার অধরে চুমু খেয়ে বসলাম। ঘটনার আকস্মিক ভাইয়া থো মেরে দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর হাত দিয়ে তার অধরে স্পর্শ করে আমার দিকে তাকালো। আমি আমার অধরে হাসি ফুটিয়ে এখনো তাকিয়ে আছি ভাইয়ার ওই গোলাপী ঠোঁটযুগলের দিকে।

চলবে,,,,,,,,

#মাহফুজা_আফরিন_শিখা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here