বেলা_শেষে_ফেরা পর্ব ১৮+শেষ

#বেলা_শেষে_ফেরা

#পর্ব_১৮

#লেখনীতে_Suchona_Islam

পর্দার কিছুটা ফাঁক দিয়ে সকালের মিষ্টি আলো তূর্ণার মুখে পরেছে। ঘুমুঘুমু চোখে সে আবিষ্কার করলো নতুন পরিবেশে। তন্ময় তূর্ণাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে, তা দেখে তূর্ণা এক গাল হেসে দিয়ে তন্ময়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। তারপর আস্তে আস্তে তন্ময়ের পাশ থেকে সরে এসে, উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো।
তন্ময়দের বাসার মানুষ ঘুম থেকে ৮ টার দিকে উঠে। তূর্ণা সবসময় খুব ভোরে উঠে নামাজ পরে তারপর তার মা’র সাথে কাজে হাত লাগাতো। আজ’ও তার ব্যতিক্রম হলো না। তূর্ণা নামাজ পড়ে নিয়ে, নাস্তা বানাতে চলে গেলো রান্নাঘরের দিকে।

আমেনা বিনতে সকালে নামাজ পড়ে’ই বারান্দায় বসে তাসবিহ পাঠ করেন। সকলে যখন ঘুম থেকে উঠে তখন সে রুম থেকে বের হয়। রোজাকার দিনের মতো বারান্দায় বসে আজ’ও তাসবিহ পাঠ করছেন। কিন্তু হঠাৎ রান্নাঘরে থেকে থালা-বাসনের আওয়াজ শুনতে পেয়ে সেখানে যান আমেনা বিনতে। গিয়ে দেখেন তূর্ণা নাস্তার আয়োজন করছেন, কি কি বানাবেন সকলের জন্যে। আমেনা বিনতে একটু অবাক হলেও পরে খুশি হয়ে গেলেন। দাদী-নাতবউ দু’জনে খোশগল্প করতে করতে সকালের নাস্তা বানানো শেষ করলেন।

“বুবু গো হুনো (শুনো)। আইজ (আজ) তোমার শাশুড়ি সকালে উঠতে পারে নাই মনে অয় (হয়)। তুমি আইজ (আজ) তারে (তাকে) নাশ্তা (নাস্তা) দিয়া (দিয়ে) আইয়ো (এসো)। রাগ আর কতক্ষুন (কতোক্ষন) রাখবো। নতুন বউয়ের হাতের জাদু দেইখা (দেখে) সে’ও খাওনের (খাবারের) লগে (সাথে) গইলা (গলে) যাইবো (যাবে), দেইখো বুবু! ”
“জ্বী দাদী!”

তন্ময় ঘুম থেকে উঠে নিজেকে একা আবিষ্কার করলো। তারপর ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো সে। বিছানা বসেই সে ভাবতে লাগলো, তার তো বিয়ে হয়েছিলো কিন্তু তার বউ কোথায়। আশেপাশে লক্ষ্য করলো বাসর তো আছে তবে বউ নাই কেনো। তাহলে কি বউকে সে স্বপ্নে বিয়ে করেছে। কপালে হাত দিয়ে আফসোস করার মতো বসে আছে তন্ময়। মিনিট কয়েক বাদে তূর্ণা রুমে প্রবেশ করে তন্ময়কে বললো, “তন্ময় যাও ফ্রেশ হয়ে নাও। ব্রেকফাস্ট করবে!” তূর্ণার আওয়াজ পেয়ে তন্ময় দৌড়ে গিয়ে তূর্ণাকে কোলে তুলে নিলো। তূর্ণা তন্ময়ের হুটহাট কান্ডে অবাক হয়ে যায়। তারপর তন্ময় তূর্ণাকে বললো, “কোথায় গিয়েছিলে তুমি। আমি তোমাকে না পেয়ে আফসোস করছিলাম। ভেবেছি কাল যে বিয়ে করলাম, বাসর ঘরে সারারাত গল্প হলো সেগুলো কি সব স্বপ্ন নাকি।”

তূর্ণা হাল্কা হেসে তন্ময়ের চুলে আলতো ছুঁয়ে দিয়ে বললো, “যাও ফ্রেশ হয়ে নাও। নাস্তা খাবে!”
“হু খুদা তো লেগেছে। তবে এখন মিষ্ট কিছু খেতে ইচ্ছে হচ্ছে।” তন্ময়ের মাথায় এবার দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো।
“হ্যা আমি তোমার জন্যে কফি বানিয়েছি তো।”
“এ মিষ্টি ওই মিষ্টি না।” ডেভিল হাসি দিয়ে।
“কি বলছো কি। মাথা’তেই যাচ্ছে না।”
“ওই যে গোলাপি ঠোঁটের ছোঁয়া, ওটাই হবে আজ আমার সকালে মিষ্টি খাবার।” দুষ্টু হাসি দিয়ে কোলের মাঝে’ই তূর্ণাকে আরো কাছে টেনে নিলো তন্ময়। এখন তূর্ণা তন্ময়ের কান্ড দেখে লজ্জায় তন্ময়ের গলা জড়িয়ে ধরলো। তূর্ণার এহেম কান্ডে তন্ময় জোরে হেসে দিলো।

……………………….

“এই মেয়ে তোমাকে আমি বারবার কাল বলে দিয়েছিলাম না। আমার সামনে আদিখ্যেতা কম কম করবা। আর নাস্তা দিয়ে আমাকে তুমি গলাতে পারবে, কখনোই না। আমার’ও হাত-পা আছে শরীরে। আমি আমার নাস্তা বানিয়ে খেয়ে নিতে পারবো। ফের যদি আমার সামনে এসেছো তো তোমার বাপের বাড়িতে আমি নিজে রেখে আসবো তোমায়।” খুবই কর্কশ কন্ঠে কথাগুলো বললো আফরোজা জান্নাত তূর্ণাকে।
সকালে সবাই খাবার টেবিলে আসলে’ও আসেনি তার শাশুড়ি। তাই টি-টেবিলে করে শাশুড়ির জন্যে নাস্তা পরিবেশন করে নিয়ে যাচ্ছিলো তার রুমের দিকে। আফরোজা জান্নাত তখন ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে আসলো এবং তূর্ণাকে দেখে তার রাগ বের করে কথাগুলো শোনালো।

তূর্ণা কান্না করতে করতে বললো, “খাবারের সাথে রাগ করতে নেই মা। আচ্ছা বেশ আমি আপনার সামনে আর আসবো না। তবে খাবার’টা খেয়ে নিবেন। আপনি অসুস্থ ভেবে আমি’ই আজ নাস্তা বানিয়ে দিয়েছি। আপনি দয়া করে খাবার’টা অপচয় করবেন না মা। আমি আপনাকে ওয়াদা করছি আপনার সামনে আমি আর আসবো না।” কান্না করতে করতেই তূর্ণা সেখান থেকে প্রস্থান করলো। আফরোজা জান্নাত খাবারের দিকে তাকিয়ে থাকলো।

…………………………

দেড় বছর পর…

আজ বাসার সকলেই খুশি। কেননা আজ সবাই জানতে পেরেছে তূর্ণা মা হবে। দুই মাসের অন্তঃস্বত্তা তূর্ণা। তাই সবার খুশি আর দেখে কে। তারিকুল চৌধুরী খুশির সংবাদ পেয়ে’ই বাজারে ছুটেছে মিষ্টির দোকানে। তূর্ণাদের বাসার লোকেরা বাসা থেকে রওনা দিয়েছে ফলমূল-মিষ্টান্ন নিয়ে মেয়ের শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে। তন্ময় অফিসে ছিলো সে খুশির খবর পাওয়া মাত্রই ছুট লাগায় বাড়ির উদ্দেশ্যে। তূর্জয় ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো, খবর পাওয়া মাত্রই বাসার দিকে রওনা দেয়।

“কিরে তৃণ ঘাস। আমার আগে’ই মা হয়ে গেলি। আর আসাদ তো প্ল্যানিং’ই করছে না। বলদ’টা বলে কিনা এখনো নাকি আমাকে বাচ্চা লাগে, আর সে এখন বাচ্চা বাপ হতে চায় না। তখন মন চায় ওকে আচার বানিয়ে খেয়ে ফেলি। যাই হোক কনগ্রেচুলিশন বাবুই!” ফোনে মুনিয়া তূর্ণাকে উইশ জানাচ্ছে। মুনিয়া ভিডিও কল দিয়েছে তূর্ণাকে। আসাদের সাথে অফিসের একটা কাজে তারা চট্টগ্রামে যায়। মুনিয়া তো খুব খুশি খালামণি হতে পেরে।
“থ্যাংকস মোনা!” মুনিয়ার খুশিতে হাল্কা হেসে নেয় তূর্ণা।
“আই এ্যাম সো এক্সাইটেড। অবশেষে আমি খালাম্মু হবো। ইয়ে….!” ফোনের ওপার থেকেই মুনিয়া নাচতে শুরু করে দিয়েছে। তা দেখে তূর্ণা হেসে দিলো।
“তা আমার বাচ্চা বান্ধবী। এবার তুই’ও প্ল্যানিং করে কনসিভ করেই নে।”
“হ্যা তাই-ই ভাবছি। তোর দেখাদেখি আমি নিবো না এটা কি হতে পারে। তবে শুন, বেবি যাই-ই হোক না কেনো। আমিই তোর বেবিকে বেশি আদর করবো বুঝলি।”
“ওকে মহারানী। শুন-না তন্ময় এসেছে বোধহয়। গাড়ির হর্ণ শুনতে পেলাম হয়তো। তোর সাথে রাতে কথা হবে, এখন রাখলাম।”
“ওকে। আর তুই নিজের খেয়াল রাখিস কেমন।”
“হু!”

তন্ময় তূর্ণাকে কোলে নিয়ে সারা রুমে ঘুরছে। সে বাবা হবে ভাবতেই খুব খুশি। তূর্ণা বেচারির এমনি’তেই মাথা চক্কর দেয় আর তন্ময় এখন তাকে ঘুরিয়ে আরো বিপদে ফেলছে। তন্ময় বুঝতে পেরে তূর্ণাকে বিছানায় হেলান দিয়ে শোয়ালো। তারপর পেটের কাছে কান পেতে রেখে বলতে লাগলো, “এইখানে আমার ছোট্ট দুনিয়া আছে তাই না তূর্ণা। এইখানে, ঠিক এইখানে।”
তন্ময়ের খুশি দেখে তূর্ণার চোখ থেকে খুশির অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।

…………………………

আফরোজা জান্নাত খুব’ই খুশি তার পরিবারে নতুন মেহমান আসছে বলে। সে তো আগে’ই টের পেয়েছিলো তূর্ণা মা হবে।
সেদিনের পর থেকে তূর্ণা কখনোই তার শাশুড়ির সামনে পরে নি। তাতে আফরোজা’র রাগ কিছুটা হলেও কমেছে তূর্ণার প্রতি। কিন্তু বাড়ির সবাই যেমন তূর্ণাকে খুব ভালোবাসে, তা দেখাদেখি তারও ইচ্ছে করে তার ছেলের বউ’কে আগের সব কিছু ভুলে বুকে টেনে নিতে।

রাতে আফরোজা জান্নাত লুকিয়ে তন্ময়ের রুমে এসেছে। সেখানে এখন কেউ নেই। সবাই ড্রইংরুমে বসে নতুন মেহমান নিয়ে খোশগল্পে মেতে উঠেছে। হাতে আমের আচারের বয়োম। গ্রীষ্মকাল বলে আম দিয়ে সে নিজ হাতে আচার বানিয়ে রেখেছিলো। তূর্ণা তখন রুমে’ই ওয়াশরুমে ফ্রেশ হচ্ছিলো। আচারের বয়োম বেড-টেবিলে রাখতেই, তূর্ণা ওয়াশরুমে থেকে বেড়িয়ে আসে। হঠাৎ আওয়াজে আফরোজা জান্নাত চমকে যায়। আফরেজা জান্নাতের হাতে আচারের বয়োম ও তার রুমে এভাবে শব্দ না করে আসাটায় তূর্ণা কিছুটা বিস্ময় হয়ে যায়। আফরোজা জান্নাত তো থতমত খেয়ে তূর্ণাকে বললো, “এএএগুলো এএএনেছিলাম। এ সসসসময়টায় আচার খেখেখেতে মন চায়। আআআআমি ববয়োম’টা রেখে যাচ্ছি।” এ বলেই আফরোজা জান্নাত রুম ত্যাগ করলো। তূর্ণা সেখানে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো।

“তূর্ণা কি হয়েছে কাঁদছ কোনো এভাবে! তোমার পেইন হচ্ছে কি!” তন্ময় অনেক ঘাবড়ে যায় তূর্ণার কান্না দেখে।
“তন্ময় জানো জানো আজ কি হয়েছে। মা আমার জন্যে আচার এনে আমার সাথে কথা বলেছে। এ অশ্রু যে খুশির অশ্রু। আমি কি তাহলে মা’য়ের ভালোবাসা পাবো তন্ময়। বলো না, বলো না, বলো না তন্ময় পাবো তো!” খুশিতে তূর্ণা পাগলের মতো আচারণ করছে। এবার তন্ময় একটু শান্ত হলে সে’ও অনেক খুশি হয়ে বললো, “হ্যা! তুমি পাবে। এই বেবি’টাই আমাদের সবাইকে সম্পূর্ণ এক করে দিবে দেখিও তুমি।”
“তাই-ই যেনো হয় তন্ময়। তাই-ই যেনো হয়।”

“ভাবী তখন বাবা আমকে রাস্তায় পেয়ে মিষ্টি পুরো এলাকায় বিলিয়ে দিতে বলেছিলো। পা আর কোমড়ের ব্যথায় আমি বাসায় এসে’ই ঘুমিয়ে নিয়েছিলাম। তাই তো তোমার সাথে দেখা হয়নি আমার। এই নাও তোমার গিফট। আমি চাচ্চু হচ্ছি এইজন্য তোমাকে গিফট করলাম।” তূর্জয় একটা প্যাকেট তূর্ণার হাতে তুলে দিলো। খুব সুন্দর একটা শাড়ি গিফট করেছে তূর্জয় তূর্ণাকে। তা দেখে তূর্ণা বললো, “বোকা ছেলে! এসবের কি দরকার ছিলো বল। আমাকে এমনি’ই উইশ করতি আমি খুশি হয়ে নিতাম।”
“না ভাবী আমার স্টাইল একটু অন্যরকম সেটা তো জানোই তুমি। আমি কি ভাইয়ের মতো নাকি।” শার্টের কলার ধরে একটা ভাব নিয়ে কথাটা বললো তূর্জয়।
“ভাইয়ের মতো কি?” তন্ময়, তানিয়া ও তামিম ঘরে ঢুকেই তূর্জয়ের কথা শুনে নেয়। ফলে তন্ময় তূর্জয়কে উল্টো প্রশ্ন করে বসে। তূর্জয় এবার পরল বিপাকে।
“ভাই তোর সমস্যা’টা কি বল তো। আমি যখনই তোকে নিয়ে কথা বলি না কেনো। উড়ে আসি’স কেনো পাখির মতো।” একটু বিরক্তি নিয়ে তন্ময়কে কথাটি বললো তূর্জয়।
“তো আমার নামে সুনাম করবি। আমি শুনতে আসবো না তো কি তোর গিএফ আসবে হাদারাম।”
“ভাই এটা ঠিক না। ভাবী ভাই’কে কিছু বলো না তুমি।” বাচ্চাদের মতো মুখ করে তূর্ণাকে তূর্জয় বললো কথাটা।
তূর্ণা দুই ভাইয়ের কান্ডে হেসে যাচ্ছে। তামিম তূর্ণার পাশে বসে বললো, “আপু আমি কি সত্যিই মামা হচ্ছি তাহলে। কেমন একটা ‘মামা মামা’ ফিল আসছে।” এক্সাইটেড হয়ে তূর্ণাকে কথাটা বললো তামিম।
“এইতো লাইনে আসছোস ভাই। আয়, বুকে আয়।” তূর্জয় তামিমকে বুকে জড়িয়ে নিলো।
তূর্ণার যখন থেকে বিয়ে হয়েছে। এ বাসায় তামিমের যাওয়া আসা হতো অনেক। তূর্জয় ও তানিয়ার খুব প্রিয় একজন মানুষ তামিম। তূর্জয় তো তামিমকে তার মতো করে নিতে চায়। সে যেমন দুষ্টু এবং সব কিছুতে পটু, তেমি তামিমকে’ও বানিয়ে নিতে চায় তূর্জয়। তামিম’ও কিছুটা তূর্জয়ের মতো হয়েছে, তবে পুরোটা না।

“তামিম তুমি কিন্তু তূর্জয়ের মতো দুষ্টু হয়ে যাচ্ছো।” তন্ময় তামিমকে বললো কথাটি।
“ভাইয়া, ওতোটা না কিছুটা!” তামিমের এই কথায় রুমের সবাই হেসে দিলো। তানিয়া তামিমকে বললো, “এই আমার ছোট্ট ক্রাশড। তুমি তো বেশ দুষ্টু হয়েছো। অবশ্য বড় হলে তোমাকে কিন্তু আমি ‘ছো’ মেরে নিয়ে যেতাম। হিহিহি!”
সকলেই আনন্দে উচ্ছশিত হচ্ছে।
#বেলা_শেষে_ফেরা

#পর্ব_১৯ (অন্তিম পর্ব)

#লেখনীতে_Suchona_Islam

“দেখছো বুবু। আমি কইছিলাম (বলছিলাম) না তুমারে (তোমাকে)। যে একদিন তুমার (তোমার) শাশুড়ি ঠিকই তুমারে অনেক আদর-যত্নে ভইরা (ভরে) দিবো। এহন (এখন) দেহো (দেখো) তুমার প্যাট (পেট) বাঁধতে না বাধঁতে’ই তুমার শাশুড়ি কইলাম (কিন্তু) তুমার জন্যে খুশিতে পাগল হইয়া (হয়ে) গেছে।” আমেনা বিনতের কথা শুনে তূর্ণার মন খুশিতে নেচে উঠলো। এরপর বললো, “হ (হ্যা) দাদীমা। আমি তো জানি আপনের (আপনার) কতার (কথার) কুনু (কোনো) এদিক-ওদিক হইবো (হবে) না। আমার আপনের উপরে পুরা (পুরো) বিশ্বাস আছিলো (ছিলো)। তয় (তবে) আমার একটু ভয় হইতাছে (হচ্ছে) দাদীমা। পাঁচ মাস তো পইরা (পরে) গেলো। পেট’টাও মাশা-আল্লাহ হইছে (হয়েছে)। মনের ভিতরে যে ভয়ডা (ভয়টা) কাজ করতাছে (করছে) ওডা (ওইটা) কেমনে (কিভাবে) দূর করমু (করব) দাদীমা। আপনে (আপনি) একখান (একটা) উপায় বার কইরা (করে) হালান (ফেলেন) তো। অতি ডরে (ভয়ে) আমার মাথা’ও এহন (এখন) কাজ করে না।”

আফরোজা জান্নাত সকালের নাস্তার পর কিছু কাজ বাকি থাকায় সেগুলো সেরে নেয়। বাসায় শুধু আমেনা বিনতে, তূর্ণা ও আফরোজা জান্নাত ছিলেন। আফরোজা জান্নাত এখন তার ছেলের বউকে চোখে হারায়। অনেক আদর করে, অনেক ভালোবাসে তূর্ণাকে। তূর্ণা’ও শাশুড়ির আদর পেয়ে খুশিতে মশগুল। এ পরিবারে সে সবার ভালো বাসা পেয়েছে তাতে সে নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করে।

“এই মেয়ে কি সব বলিস তুই।” আফরোজা তখন রান্নাঘরে থালা-বাসন ধুয়েছিলো। তাই ডাইনিং টেবিলে বসে হাত মুছতে মুছতে তূর্ণাকে কথাটা বললো।
“না মা তেমন কিছু না আসলে নার্ভাস লাগছে, আবার ভয়’ও করছে।”
“নার্ভাস তো লাগবেই। আমার তন্ময়ের আগে যে মেয়েটা হলো তার সময় আমি খুব নার্ভাস ছিলাম। পরেরবার যখন তন্ময় আসবে তখন নার্ভাসনেস কম ছিলো।” আফরোজা জান্নাত এবার একটু দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।
“তন্ময়ের আগে একটি মেয়ে’ও হয়েছিলো। তবে মা তার কি হয়েছিলো!” তূর্ণা তার শাশুড়িকে জিজ্ঞেস করল।
“তার যখন আড়াই বছর, তখন সে নতুন হাটতে পারে। আর এই হাটাতে পারা’টাই আমার কাল হলো। আমি তখন আমার শ্বশুর বাড়িতেই থাকতাম। বাড়ির পাশে বাঁধাই করা পুকুর ছিলো। সেখানে আবার আমার শ্বশুর মাছ চাষ করতেন। তো আমার মেয়ে নতুন নতুন হাটতে পেরে খুব খুশি। যেদিন সে মারা যায়, সেদিন সে উঠানে হাটা-হাটি করছিলো। আমি আর মা মিলে রান্নাঘরে খাবার বানাতে ব্যস্ত ছিলাম। সেদিন আবার আমার আব্বা-চাচারা এসেছিলেন, তাই ব্যস্ত ছিলাম। বাড়ির সাথে’ই যেহেতু পুকুর ছিলো সে হাটতে হাটতে পুকুরে গিয়ে পরে যায় আর আমরা কেউ তা বুঝতে পারিনি। ঘন্টাখানেক পর আমার কাজ শেষ হলে তাকে খাবার খাওয়ানোর জন্যে এদিক-ওদিক খুঁজতে থাকি কিন্তু পাই না। পরে পুকুরের পাশে এসে আমি একটা চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারাই।” এতটুকু বলেই আফরোজা জান্নাত থামলেন। সে শাড়ির আঁচল দিয়ে তার চোখের পানি মুছলেন। তূর্ণার এখন বেশ খারাপ লাগছে, কেন সে এ ব্যপারে জিজ্ঞেস করতে গেলো তার শাশুড়িকে। আমনা বিনতে’ও তার কাপড়ের আঁচল দিয়ে নোনাজল মুছে নিলেন। আফরোজার কষ্ট দেখে তূর্ণা বললো, “মা আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি আপনাকে কষ্ট দিতে চাই নি।”
তূর্ণার কথা শুনে আফরোজা জান্নাত মুচকি হেসে বললেন, “ধূর বোকা মেয়ে! তুই আমাকে কষ্ট দিতে যাবি কেনো। আমার বড় মেয়েটি নাই তাতে কি, আমার তন্ময়, তূর্জয়, তানিয়া আর এখন তো তুই’ও আছিস।” কথাটা বলে তূর্ণার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন আফরোজা জান্নাত। তূর্ণার চোখ ভিজে উঠলে শাশুড়িকে জড়িয়ে ধরে এবং বলে, “আপনার ভালোবাসা পেয়ে আমি ধন্য মা, আমি ধন্য।”

……………………….

সন্ধ্যা থেকে বাসার ছাদ ভর্তি মানুষ। কারণ আজ তূর্জয়ের জন্মদিন। বাসায় তারিকুল চৌধুরী থাকায় সে বড় করে প্রোগ্রাম করতে পারে নি, তারিকুল চৌধুরীর পছন্দ না তাই। তবে কয়েকজন বন্ধু-বান্ধবীদের নিয়ে এসেছে তূর্জয়। তূর্জয় দুই দিন আগে থেকে তামিমকে নিয়ে এসেছিলো। তামিম’ও খুব খুশি তূর্জয়ের জন্মদিন বলে।

রাত ৮টার দিকে কেক কাটা হলো তূর্জয়ের। সেখানে তূর্জয়ের বন্ধুরা সবাই উপস্থিত। তূর্জয়ের নতুন গিএফ শুধু খাবারের কথা’ই তূর্জয়কে জিজ্ঞেস করে চলেছে। আগের’টা শুধু তূর্জয়কে প্যারা দিতো। এই ধরুন যেমন, তূর্জয়কে খালি শপিংয়ে নিয়ে যেতে বলতো। মুভি দেখতে নিয়ে যেতে বলতো। ডজন ডজন মেকআপ কিনে দিতে বলতো। এসব তূর্জয়ের কাছে প্যারা লাগতো। অবশ্য সে মেয়েটির সাথে তূর্জয় একমাসের মতো রিলেশন ছিলো। এবার’ও বেচারা বিপাকে ফেঁসেছে। তাই মনে মনেই দুঃখ পুষে নিলো সে।

“হ্যালো আমার সম্মানীয় ক্ষেত মার্কা বন্ধুগণ ও ফকিন্নি মার্কা বান্ধবীগণ। তোরা আমার জন্মদিনে আসছিস আর আমার পকেট ফাকা করছিস। তোরা বন্ধু নামে অলঙ্কার। আমি তো ভালা মানুষ তাই কলঙ্ক বলতে পারি না তোদের। তবে কম কম খাবার আনছি। কিপ্টা বললেও অসুবিধা নাই। তোরা হলি গিয়ে পরজীবী, যেমন’টা গাছে দেখা যায়।”
তূর্জয়ের এক বন্ধু বলে উঠলো, “ওই শালা! আজ জন্মদিন বলে তুই ট্রিট দায়ে পরে দিলি। না হলে পরজীবী কে তা ভালো করে’ই সবাই জানে। তুই যা খাদক না। আর তোর ওই গিএফ’ও আমাদের পকেট ফাকা করে। বাটপারি তুই করলি আর দোষী হলাম আমরা!” তূর্জয়ের গিএফ শুনে নি কথাটা। সে তো বিরিয়ানি খেয়েই যাচ্ছে। বেচারা হাফ ছেড়ে বাঁচলো। কেননা যদি শুনতে পেতো তার নামে সুনাম হচ্ছে, তাহলে তাকে আস্ত রাখতো না রাক্ষসী’টা।
“হেহেহেহে। চিল মামা, চিল!” বোকার মতো হেসে দিলো তূর্জয়।
“ধূর তোর চিল-ফিল। আজকে আমরা শুধু তোর পকেটই মারবো না। তোর অবস্থা’ও নাজেহাল করবো।”
“ভাইরে ভাই এমনটা করিস না। নইলে আমার ইজ্জত চলে যাবে।” অসহায় হয়ে গেলো তূর্জয় বন্ধুদের কাছে।
“হেহে মামা! তোর বন্ধুগণ আমরা। তোর জন্মদিনে তোর ইজ্জতের ফালুদা না করলে আমরা বন্ধু হলাম কোন দুঃখে।”

“এই লিটল বেবি! তুমি তো খুব কিউট। তুমি আমার বন্ধু হবে!” তূর্জয়দের বাসার নিচ তলায় থাকে ‘মুসম্মৎ স্নেহার্থী’ নামের একটি মেয়ে তামিমের সাথে কথা বলছে। তূর্জয়ের এক বান্ধবীর কাজিন হয় স্নেহার্থী। স্নেহার্থীকে জোর করে নিয়ে আসে তার কাজিন তূর্জয়ের জন্মদিনে। যদিও সে আসতে চায় নি, তবুও তাকে নিয়ে আসলো তার কাজিন।

তূর্জয় মুখে লেগে থাকা কেক টিস্যু দিয়ে মুছে যাচ্ছে। তখন তার বন্ধুগণ তাকে আদর করে কেক দিয়ে পুরো মাখিয়ে দিয়েছিলো। ভাগ্যিস বাসার লোক কেউ ছিলো না। শুধু তামিমকে নিয়ে এসেছে সে, তা না হলে আজ তার যে করুন অবস্থা হয়েছে তাতে তার বাবার কাছে খবর গেলে তার বাবা বেশ রেগে যেত। তূর্জয় খেয়াল করে স্নেহার্থী তামিমের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।

স্নেহার্থী তূর্জয়ের ক্রাশ। দেখতে খুব’ই মিষ্টি মেয়েটা। কিন্তু স্নেহার্থী তূর্জয়কে দেখলে ভয় পায়। কেননা সে ভাবে বাড়িওয়ালার ছেলের সাথে অসভ্যতামো করলে বাসা থেকে চলে যেতে বলবে। স্নেহার্থী এবার ইন্টারে উঠছে মাত্র। তূর্জয়ের ছোট অনেকটা। তাই তূর্জয়কে স্নেহার্থী ‘ভাইয়া’ বলে সমোন্ধন করে। তাতে তূর্জয় মনে মনে বলে, “বইন! তুমি আমারে জাদু, সোনা, বাবু এসব বলিয়ো। ঢঙ্গিদের মতো হলেও আমি মেনে নিব। তবু’ও তোমার মুখ থেকে ভাই শুনতে চাই না। তোমার মুখে আমাকে ভাই মানায় না। কিন্তু….!”

“এই পিচ্চি! তুমি আমার ভাইয়ের সাথে কি করছো?” তূর্জয় স্নেহার্থীকে প্রশ্ন করলো। তূর্জয়ের আওয়াজ শুনে স্নেহার্থী ভয় পেয়ে যায়। পরে আমতা আমতা করে বলে, “আআআমি তো এএএই কিককিউট বববাবু’টার সাথে ককথা বলছছিলাম। আআআমি সররি ভভাইয়া। আআআমি আসি এএএখন।” স্নেহার্থী ছাদ থেকে চলে যায় নিচে।
“ধূর এই মেয়েটা সব সময় পালায়।”
“ভাইয়া উনি তোমার ক্রাশড নাকি!” তামিম তূর্জয়কে জিজ্ঞেস করলো।
“হ্যা! কিন্তু ও একটা পিচ্চি মেয়ে। আর আমার সাথে ওর মিলবে না। জাস্ট ওকে একটা কথা বলতাম। ও যেনো আমাকে ভাইয়া না বলে ডাকে। মেয়েটা মিষ্টি বলে ওকে ভালো লাগে আমার। ও জাস্ট আমার ক্রাশ, আর কিছু না।”
“ও এবার বুঝেছি।”

“ধূর ছাইয়ের মাথা। আমি বন্ধু পাইছি নাকি শত্রু, কে জানে বাবা। এমন গিফট মানুষ করে, নাকি এজিদের বংশধর। ভাল্লাগেনা কিছু।” তূর্জয় বিরক্তি নিয়ে গিফট বক্সগুলো সব একে একে খুলছে। পাশে তামিম, তূর্ণা, তানিয়া হেসে কুপোকাত। কারণ গিফট বক্সে তূর্জয়ের ছেলে বন্ধুরা তাকে কেউ কেউ ইট, মেয়ে পুতুল, পা’য়ের চপ্পল, রান্নার খুন্তি গিফট করেছে। এসব গিফট দেখে বিরক্ত হয়ে মন ভালো করার জন্যে তূর্জয় এবার তার গিএফের গিফট বক্সটা খুললো। তার গিএফ তাকে একটি ঘড়ি গিফট করেছে। বেচারার মন প্রথমে একটু ভালো হলে’ও পরে তার বুক ফেটে আসছে। কারণ ঘড়িটা নষ্ট ঘড়ি।

এবার তূর্ণা, তানিয়া, তামিম সজোরে হেসে দিলো। তূর্জয় কান্না ফেস করে রাখলো। বেচারা মনে মনে ভাবছে, আর কখনোই সে এসব ফাজিলদের জন্মদিনে আর জীবনে’ও ইনভাইট করবে না।
“এবার বুঝেছি, বাবা কেনো জন্মদিনে বাসায় লোক নিয়ে আসা পছন্দ করেন না।” তূর্জয় মন খারাপ করে কথাটা বললো।
“এবার বুঝো কত ধানে কত চাল। হিহিহিহি!” তানিয়া তূর্জয়ের দুঃখের পুকুরে আরো পানি ঢেলে দিলো।
“ফাজিল মেয়ে কাটা ঘা’য়ে আরো লবণ দিস তাই না!” তূর্জয় মুখ’টা আরো অসহায়ের মতো করে রেখেছে।
“ও কেনো লবণ দিবে। তুই মন ভালো করার কোনো উপায় বার কর!” তূর্ণা তূর্জয়কে বুঝ দিচ্ছে।
“হ্যা ভাইয়া না খুব’ই চুইট গান পারে।” তানিয়া তূর্জয়কে টিটকারি মেরে কথা বললো।
“তাই নাকি। তাহলে তূর্জয় তুই তোর পছন্দের গান গেয়ে শোনা আমাদের। এতে তোর মন’ও ভালো হয়ে যাবে, আর আমরা’ও তোর গান গাওয়া উপভোগ করলাম।”
“ওকে ভাবী! তবে আমি ভাইয়ের গিটার’টা নিয়ে আসছি ওয়েট।”
“হু!”
তূর্জয় যেতে’ই তানিয়া বললো, “ভাবী তুমি সত্যিই ছোট ভাইয়ার গান শুনবে!” অসহায়ের মতো তূর্ণাকে কথাটা জিজ্ঞেস করলো তানিয়া।
“হ্যা তো কি হয়েছে।”
“আরে আমি তো এমনিই তাকে গান গাওয়ার কথা বলছিলাম, যাতে তার মন ভাল হয়। আর তুমি তো আগুনে পানি ঢালার মতো কাজ করলে। এখন আমি এখান থেকে পালাই কি করে।’
“আহা আমি কি করলাম আবার। দেখি ওর গানের কন্ঠে কেমন তারপর না হয় আমি তোকে পালাতে বলবো। এখন চুপ করে বস আমার পাশে।”
তূর্ণার কথা মতো তানিয়া তার পাশে বসে পরল। তূর্জয় তন্ময়ের গিটার নিয়ে আসছে। বিছানায় বসে এরপর গলা ঝেড়ে নিলো। তানিয়া তো কানে আঙ্গুল দিয়ে রাখছে, যেন গান না শুনতে পারে। তামিম তানিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে, সে কিছু বুঝতে পারছে না।

“আজকাল ভালোবাসা একটু স্ট্রেঞ্জ
হুট-হাট বাবু আর হুট-হাট চেঞ্জ,
কে যেন কার সাথে বোঝা বড় দায়
এই মিঙ্গেল আর সিঙ্গেল হায়।
প্রেমে পড়ে মাখামাখি চলে রাত দিন
চেরাগ হাতে ঘষাঘষি তুমি আলাদীন,
ভালোবাসা শুধু নাকি ফাস্টফুডে যায়
আমি শালা বুঝিনা, কী এত খায়?”

“এই এইটা কি গান গাইতেছিস!” তূর্ণা গানের কণ্ঠ+লিরিক্স শুনে অস্থির হয়ে যাচ্ছে।
“আরে ভাবী ওয়েট করো না সম্পূর্ণ গাইতে দাও আগে।”
তূর্ণাকে থামিয়ে তারপর আবার গান গাইতে শুরু করলো তূর্জয়।

“মনগড়া আনাগোনা
আমি জান, তুমি সোনা,
কিছু মিছু যান টান
খাইসেন দাইসেন বাড়ি যান।
কানে মুখে কানাকানি
চলে তুমি আমি জানি,
ফাপর টাপর টপর টপর
ক্রাশ খাচ্ছো লক্কর ঝক্কর।

ফান টানে মাখামাখি
জান তুমি আমার পাখি,
পাখি পাখি পক পক
প্রোফাইলটা লক লক,
ভালো টালো যত কালো
ভালোবাসা মহাকালো।

সারাদিন ঘ্যানঘ্যান প্যান প্যান আর
বাবু খাইছো? বাবু খাইছো? ..
আহা, আস্ক করোনা, আস্ক করোনা
বাবু খাইছো? বাবু খাইছো? ..
আহা, আস্ক করোনা, আস্ক করোনা।”

“ওই চুপ। এটা তোর পছন্দের গান। আদৌ এটা গান নাকি ছাইয়ের মাথা।” তূর্ণার মনে হচ্ছে গান শুনে সে মাথা ঘুরে পরে যাবে।
“হ্যা। আজকাল এইটাই তো ট্রেন্ড গান। কেনো শুনো নাই তুমি। যাই হোক গান কেমন হলো আগে ওটা বলো!”
“ভাইয়া গানটা বন্ধ করো। আমার মনে হচ্ছে আমি শ্বাস নিতে পারবো না।” তামিম তূর্জয়কে বললো কথাটি।
“চুপ পঁচা ছেলে। তোর তো আমার সব পছন্দ, গানও পছন্দ হবে।”

“তোর গান শুনে মনে হচ্ছিল, আমার হাতে যদি রিমোট থাকতো তাহলে তোরে’ই পাল্টায় দিতাম।” তূর্জয় পিছনে তাকিয়ে দেখে তন্ময় দরজার কাছে দাড়িয়ে আছে। তূর্জয় একটা ঢোক গিললো। কারণ তন্ময়ের পারমিশন ছাড়া গিটার নিয়ে এসেছে তাই।

“তা তোর চিল্লানি বন্ধ হলে আমার বউকে এবার ছাড়। আর আমার গিটার ধরছিস কেনো তুই?” তূর্জয়কে প্রশ্ন করলো তন্ময়।
“আরে ভাবী গান শুনতে চাইছে। গানের সাথে গিটারের সুর মিলাবো বলেই তো তোর গিটার নিয়ে আসছি।”
“তানিয়া তূর্ণাকে বলিস নাই তূর্জয়ের গান সম্পর্কে?” তন্ময় তানিয়া প্রশ্ন করল।
“হ্যা বলছিলাম। কিন্তু ভাবী শুনলো না আমার কথা উল্টা আমাকে’ই চুপ করে রাখলো।”
“আমি কি জানতাম নাকি মগেরমুলুক এমন গান গায়। তাহলে ওকে আমি কখনোই গান গাইতে বলতাম না।”
“ভাবী তুমিও…!” তূর্জয় অভিমান করে বারান্দায় চলে গেলো।
“এইজন্য’ই ছোট ভাইয়ার গানকে ‘চুইট’ বলেছি সুইট নয়।” তানিয়া কথাটি বললো।
আবার’ও হেসে কুপোকাত সবাই।

…………………………

আজ তূর্ণার ডেলিভারি হবে। সে খুব’ই ভয় পাচ্ছে। মুনিয়া ও আসাদ’ও এসেছে হসপিটালে। মুনিয়া’ও পাঁচ মাসের অন্তঃস্বত্তা। আসাদ তাকে নিয়ে এ অবস্থায় আসতে চায় নি তবু’ও জোর করে এসেছে সে।

সবাই তূর্ণাকে আশস্ত করছে ঠিক’ই কিন্তু ভয় তো কাজ করবেই। লাস্ট যখন তূর্ণার আল্ট্রা করানো হয় তখন জানতে পারে তূর্ণার টুইন’স হবে। সবাই তো খুব খুশি।

তূর্ণাকে অটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। ভয় সবার মনে গ্রাস করছে। ডক্টর বলেছেন বাচ্চাদের পজিশন ঠিক নেই তাই সিজারিয়ান করানো হবে তূর্ণাকে। তাই সবার মনে ভয়ের শেষ নেই। তন্ময় তো জ্ঞানহীন হয়ে গেছে। সে মাঝে মাঝে অটির দরজায় আঘাত করছে এবং চিৎকার করে ডক্টর’কে বলছে তার তূর্ণার যেনো কিছু না হয়।

দীর্ঘ ৩ ঘন্টার পর অপারেশন সাকসেসফুল হলো। টুইন’সের একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে হয়েছে। ডক্টর জানিয়েছেন তূর্ণা আর গর্ভবতী হতে পারবেন না। তাতে তন্ময়ের কোনো আপত্তি নেই। দু’টো বাচ্চা’ই অনেক তার জন্যে।

……………………….

২৭ বছর পর…

আজ তন্ময় তূর্ণার পাশে নেই। গত বছরে’ই তার মৃত্যু হয়েছে। এখন তূর্ণা বুড়ি হয়ে গিয়েছে। তূর্ণাকে নিয়ে তার সন্তান, নাতি-নাতনিরা এসেছে কক্সবাজারে। সন্ধ্যার দিকে একা সমুদ্রের একটি পাথরের উপরে বসে সে তন্ময়ের কথা ভাবছে। আওয়াজ’টাও বুড়িয়ে গিয়েছে।

তূর্ণা আধো আধো বলছে, “তুমি চলে গিয়েছো আমাকে ফেলে একা। আর কতো তোমার প্রহর গুনবো আমি। হয়তো আজ’ই আমার শেষ দিন। তুমি যেমন বেলা শেষে আমাকে রেখে চলে গিয়েছো। আমি’ও আসছি তোমার কাছে বেলা শেষে। এই ভালোবাসার মেলবন্ধন যেন বেলা শেষে’ই ফিরে তন্ময়।”

#সমাপ্ত

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here