#বৈধ_সম্পর্ক
#সিজন_২
#পর্ব_২০
#Saji_Afroz
.
.
.
-সব কথা বলতে হয়না। কিছু কথা লুকায়িত থাকাই শ্রেয়।
.
কথাটি বলেই মেহেনুবা চলে গেলো।
আরাফ দাঁড়িয়ে রইলো নিজের জায়গায়।
.
তোমাকে যে ভালোবাসে তুমি যদি তার কাছেই থাকো, তবে সুখী বেশি হবে।
এমন একটা প্রচলিত কথা শুনেছে আরাফ।
আজ তাসুর কথা শুনে মেহেনুবাকে উপলব্ধি করতে চেয়েছে আরাফ। পেরেছেও সে।
মেহেনুবার চোখে নিজের জন্য ভালোবাসা দেখেছে আরাফ।
মুখে স্বীকার না করলেও চোখে স্বীকারোক্তি প্রকাশ পেয়েছে তার।
আগে যদি মেহেনুবার ভালোবাসা উপলব্ধি করতে পারতো তাহলে কি এমন কষ্ট পেতে হতো!
.
-আরাফ?
.
আফরানের ডাকে ঘোর কাটলো আরাফের।
বাবার ডাকে সে বারান্দা থেকে বেরিয়ে রুমে আসলো।
তার উদ্দেশ্যে আফরান সরাসরিই প্রশ্ন করলো-
সবটা ভেবে এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছিস তো?
-কিসের?
-মেহেনুবা কে বিয়ে।
-হু।
-বিয়ের পরে যদি উপমা ফিরে আসে? তাহলে?
-আসবেনা।
-আসলেও কি করবি এখন থেকে ভেবে নে।
-হুম।
-আমি নিজে দুটো বিয়ে করে তোকে এসব জ্ঞান কেনো দিচ্ছি ভাবছিস?
-না বাবা!
-ভাবতেই পারিস। তবে আমার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা ছিলো। ভুলও বলতে পারিস। কিন্তু আমার সাথে যেটা হয়েছে সেটা তোর সাথে হতে হবে বলে কথা নেই। তাই যা সিদ্ধান্ত নিবি ভেবেই নিবি।
আমার মতো সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগিস না।
আমরা তোর সাথে আছি।
-জ্বী আব্বু।
.
কথাটি বলেই চলে গেলো আফরান।
বিছানার উপরে বসে আরাফ নিজেরমনে বললো-
উপমা আমার ভুল, আমার ভুল উপমা, ভুল আমার উপমা।
আজ থেকে এটাই সত্যি!
.
.
.
মুনিরার মনে আছে আরাফ কে নিয়ে ভয়।
আরাফ যে উপমাকে সত্যিকার অর্থে ভালো বেসেছে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
কিন্তু উপমা আরাফের জন্য সঠিক নয়। যদিও আরাফ তা আজ বুঝতে পেরেছে। তবুও ভয় থেকেই গেলো মনের মাঝে মুনিরার।
ভালোবাসা যে বড্ড বেহায়া। সে নিজেও বেহায়াপনা করেছে। কিন্তু তার ভালোবাসার মানুষটি উপমার মতো ছিলোনা। তাইতো আরো বেশি ভালোবেসে ফেলেছিলো সে আফরান কে।
উপমা ফিরে আসলেও কোনোদিনও আরাফ কে ভালো থাকতে দিবেনা। তাই যা করা উচিত খুব দ্রুত করতে হবে।
হ্যাঁ, আরাফ আর মেহেনুবার বিয়েটা খুব দ্রুত সারতে হবে।
একবার সমাজের সকলের সামনে বিয়েটা হয়ে গেলে উপমা নামের আপদটা বিদায় হবে তাদের জীবন থেকে।
এসব ভেবে লম্বা একটা শ্বাস ফেললো মুনিরা।
এগিয়ে গেলো সে ড্রয়িংরুমের দিকে।
.
.
.
ড্রয়িংরুমে বসে আছে সকলে।
আরাফ ও মেহেনুবার বিয়ে নিয়ে আলোচনা চলছে।
মুনিরা সকলের উদ্দেশ্যে বললো-
যতো দ্রুত সম্ভব মেহেনুবা কে বউ করে আনতে চাইছি আমরা।
.
পাবেল হেসে বলে উঠলো-
আমার বাবারা পরশুই চলে আসবে সো আমার কোনো সমস্যা নেই। বরং আমিও নিশ্চিত হবো বিয়েটা হয়ে গেলে।
.
পাবেলের কথা শুনে যেনো মনে শান্তি পেলো মুনিরা।
সায়নীর দিকে তাকিয়ে বললো-
সাত দিন পরেই বিয়ের তারিখ দিই?
.
সায়নী বললো-
খুব তাড়াহুড়ো হয়ে যাচ্ছেনা?
-সবই যখন ঠিক আছে দেরী কেনো করবো!
-না মানে আত্নীয়-স্বজনদের দাওয়াত দেয়া, কেনা-কাটা এসব করতে হবেনা? এতো তাড়াহুড়ো করলে কি হয়! আমাদের একমাত্র ছেলের বিয়ে বলে কথা!
.
-জ্বী সাতদিন পর নয়, বিয়েটা ১মাস পরে দিলে ভালো হয়।
.
পেছন থেকে মেহেনুবার কথা শুনে সকলে তার দিকে দৃষ্টি দিলো।
মেহেনুবা শান্ত স্বরে বললো-
নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছি এতো তাড়াহুড়ো করতে চাইনা।
সবটা আস্তেধীরে করতে চাই। যাতে পরবর্তীতে এই নিয়ে কোনো আক্ষেপ না থাকে।
.
মেহেনুবার ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে আছে তাসু।
সে মেহেনুবাকে সমর্থন করে বললো-
হ্যাঁ! আমাদের মার্কেটিং করতেই তো ১০দিনের মতো লেগে যাবে।
সাত দিনে বিয়ে! জাস্ট ইমপসিবল।
.
মুনিরা বললো-
আরে সব হয়ে যাবে। আমরা আছি না!
.
মুনিরার উদ্দেশ্যে পাবেল বললো-
আমি জানি মেহেনুবাকে সবার অনেক পছন্দ কিন্তু
মেহেনুবা ঠিক বলছে। তাড়াহুড়ো করা ঠিক হবেনা। তাছাড়া আমার বড় মেয়ে মেহেনুবা। এমনভাবে বিয়ে দিবো যেনো এই বিয়ের কথা সকলের মনে থাকে।
.
সায়নী বললো-
হ্যাঁ। তাহলে পরের মাসেই বিয়েটা হচ্ছে।
.
সায়নী মনেমনে খুশি হলেও মুনিরা হতে পারলোনা।
সায়নী এখনো ভাবছে উপমা ভুল বুঝে ফিরে আসবে।
আর মুনিরার চিন্তা, সে ফিরে আসলে সবটা ভেস্তে যাবে। এমন টা যেনো না হয়।
.
.
.
সিড়ি বেয়ে উপরে উঠছে মেহেনুবা ও তাসু।। তাদের ডেকে মিশিকা বললো-
জামা কাপড় গুছিয়ে নে তোরা। কাল সকালেই বাসায় যাবো।
.
মেহেনুবা ‘আচ্ছা’ বলে তাসুর সাথে উঠতে লাগলো।
এদিকে মিশিকার কথা শুনে সায়নী বললো-
চলে যাবি মানে! কেনো যাবি?
-বারেহ! দেশে যে একটা বাড়ি আছে সেটা ভুলে গেলে চলবে! আর তাছাড়া ভাইয়ার বাসায়ও থাকতে হবে কিছুদিন। নাহলে রাগ করবেন।
-এখান থেকে যা। আবার চলে আসিস।
-নারে। আবার আসবো। যতোদিন দেশে আছি আসা যাওয়া তো থাকবেই। তুই আর জোর করিস না।
.
.
-তাসু তুই রুমে যা। আমি একটু আসছি।
.
মেহেনুবার কথা শুনে তাসু দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে বললো-
ওহহো! হবু হাসবেন্ড এর রুমে গিয়ে ইটিস পিটিস করবি!
-ছিঃ!
.
মেহেনুবার দিকে তাকিয়ে তাসু বললো-
তুই এতো সিরিয়াস হয়ে যাস কেনো বল তো আপু! আমি তো জাস্ট ফান করছিলাম।
-যা তো তুই। রুমে যা। আমি আসছি।
.
.
আরাফের রুমের সামনে এসে মেহেনুবা বললো-
আসতে পারি?
-হুম।
-আমাদের বিয়ের ডেইট ঠিক হয়েছে।
.
কথাটি শুনেই যেনো বুকের ভেতরে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করলো আরাফ।
তার মুখের দিকে তাকিয়ে মেহেনুবা বললো-
দেরী আছে। আরো এক মাস বাকি। সময় টা আমি চেয়ে নিয়েছি। কেনো জানো?
-কেনো?
-তোমাকে সময় দিলাম ভাবার জন্য। যাতে পরবর্তীতে তোমার আফসোস না হয়।
.
-আরাফ?
.
সায়নীকে দেখে মেহেনুবা বললো-
আসুন আন্টি।
-ওহ তুমি আছো। আচ্ছা আমি পরে আসবো।
-না আন্টি, কথা শেষ আমার।
.
মেহেনুবা চলে যেতেই আরাফের পাশে এসে বসলো সায়নী।
আরাফের উদ্দ্যেশ্যে সে বললো-
আগামী মাসে তোর বিয়ে শুনেছিস?
-হু।
-এক সপ্তাহ পরেই হয়ে যেতো কিন্তু…
-মেহেনুবা সময় চেয়েছে। কেনো জানো?
-হয়তো কেনাকাটা, প্রস্তুতি এসবের জন্য।
-না। ও সবটা জানে উপমার ব্যাপারে।
.
অবাক চোখে তাকিয়ে সায়নী বললো-
সত্যি?
-হ্যাঁ। তাই আমাকে সময় দিয়েছে।
-হুম। বুদ্ধিমতি মেয়েটা। কিন্তু সবটা জেনেও বিয়েতে রাজি হলো! অবাক করার মতো বিষয়টা।
-হু।
.
আরাফের হাত ধরে সায়নী বললো-
তবে তোকে মেহেনুবা ভালোবাসে।
-হয়তো।
-আর তুই উপমা কে।
-হুম।
-এখনো বাসিস?
-না।
-মনের কথা?
.
মুখটা ফ্যাকাসে করে আরাফ জবাব দিলো-
বুঝতে পারছিনা। কিন্তু ওকে আমি ভালোবাসতে চাইনা।
.
মৃদু হাসলো সায়নী।
আরাফের উদ্দেশ্যে বললো-
আমি তোকে বলেছিলাম নিজের ভালোবাসা কে সুযোগ দিতে।
-হুম।
-দিয়েছিলি তুই। কিন্তু ফলাফল শূন্য। তোর ভালোবাসা হয়তো ভুল ছিলো। সুযোগ পেয়েও তাই ফিরে আসেনি।
তবে এরপরেও আমি ভয়ে ছিলাম। কেনো জানিস? উপমা যদি নিজের ভুল বুঝতে পেরে ফিরে আসে! কিন্তু আজ মেহেনুবা আমার ভয়টা কাটিয়ে দিলো। উপমার জন্য সে আরো একটা মাস বাড়িয়ে দিলো।
-মানে?
-মানে এবার সব কিছু ভাগ্যের উপরে ছেড়ে দে। উপমা যদি ভুল বুঝে নিজে ফিরে আসে এই এক মাসের ভেতর তাহলে তাকে মেনে নিবি। মেহেনুবার হয়তো কষ্ট হবে তবে সাময়িক।
আর যদি উপমা ফিরে না আসে তবে তুই তাকে মানাতে যাবিনা। এবার ভালোবাসা প্রমাণ করার সুযোগ ওর, তোর না।
-এতো কিছুর পরেও উপমা ফিরে আসলে মেনে নিতে বলছো তুমি?
-হুম। কারণ ও তোর ভালোবাসা। তবে হ্যাঁ, যদি নিজ থেকে তোর বিয়ের আগে ফিরে আসে তবেই।
.
সায়নীকে জড়িয়ে ধরে আরাফ বললো-
ধন্যবাদ আমার মনটা হালকা করার জন্য।
আমি আসলেই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলাম।
উপমা যদি আমার হয় তবে ফিরে আসবে। কেননা ভুলটা তার, আমার নয়। আর না আসলে আমি তাকে ভুলে যাবো, ভুলে যাবো।
.
.
.
রোমানের বাবার সাথে কথা বলে উপমার রুমে আসলেন রুপা আক্তার।
উপমার উদ্দেশ্যে তিনি বললেন-
রোমান ফ্যামিলি ট্যুরে দেশের বাইরে যাবে।
এক মাসের ভেতর বিয়েটা করতে পারবেনা। কারণ এতো তাড়াহুড়ো করে রোমানের বাবা ছেলের বিয়ে দিতে চান না৷ আমি তো সবটা খুলে বলতে পারছিনা তাই তারা আমাদের অবস্থা বুঝছেন না।
-তাহলে অন্য পাত্র দেখো।
-পাগলামি করিস না উপমা। পাত্র হলেই তো হয়ে গেলো না!
-কেনো পাত্রের কি অভাব পড়ছে!
-এতো অল্প সময়ে কোন পরিবার আয়োজন করতে রাজি হবে বল!
-আমি জানিনা কিছু।
-বিয়ে করতে পারবেনা তবে এনগেজমেন্ট সারতে পারা যায় বলেছেন রোমানের বাবা। কিন্তু তাও সপ্তাহ খানেক পর। বিশাল আয়োজন ছাড়া এনগেজমেন্ট ও করতে নারাজ তারা।
-ঠিক আছে। বিশাল আয়োজন শুরু করে দাও।
এনগেজমেন্ট হলে এনগেজমেন্ট! আমি আরাফ কে দেখাতে চাই, ওকে ছাড়া আমি ভালো থাকবো।
-হ্যাঁ। আমার মেয়ের এনগেজমেন্ট দেখেই সে পাগল হয়ে যাবে। তোর দাম কতোটা সে বুঝবে।
.
.
.
পরেরদিন সকাল ১০টা….
ব্যাগ কাল রাতেই গোছানো হয়ে গিয়েছে। মিশিকা ডাক দিয়েছে বেশকিছুক্ষণ হলো।
নিজের বাসায় যাবার জন্য তৈরী হয়ে নিলো মেহেনুবা।
তবে কেনো যেনো রুম থেকে বেরুতেই ইচ্ছে করছেনা তার।
এই বুঝি গেলে আর আসতে পারবেনা!
আরাফ কে দেখতে পারবেনা, পাবেনা তার সঙ্গ!
ভাবতেই মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে মেহেনুবার।
হ্যাঁ মেহেনুবা উপলব্ধি করতে পেরেছে, আরাফ কে ভালোবাসে সে।
আরাফ কে সে ভালোবাসে সেটা উপলব্ধি করার পর থেকেই বেহায়া মনটা তার আশেপাশে থাকতে চায় সারাক্ষণ।
কি অন্যায় কি ভুল সে জানেনা। শুধু জানে সে আরাফ কে ভালোবাসে।
তবে এই ভালোবাসা মানেই যে আরাফ কে কাছে পেতে হবে তা নয়। আরাফ সুখে থাকলেই সে খুশি হবে।
নিজের ইচ্ছেকে দমিয়ে রাখতে রাজি সে আরাফের জন্য।
.
-ব্যাগ গুছিয়েছো?
.
দরজার পাশে আরাফ কে দেখে দাঁড়িয়ে পড়লো মেহেনুবা।
আরাফ তার উদ্দেশ্যে বললো-
নিচে সবাই অপেক্ষা করছে তোমার জন্য। তাই ডাকতে এসেছি।
-হু ব্যাগ গোছানো হয়ে গিয়েছে।
.
মেহেনুবার পাশে এসে আরাফ ব্যাগটা হাতে নিয়ে বললো-
আসো।
-থাক আমি পারবো।
-সমস্যা নেই, আসো তুমি।
.
আরাফের সাথে সিড়ি বেয়ে নিচে নামছে মেহেনুবা।
হঠাৎ সে বলে উঠলো-
এক মাস পরে কি হবে আমরা কেউই জানিনা। তবে দোয়া করবো, তুমি যেনো তোমার ভালোবাসা ফিরে পাও।
.
(চলবে)