বৈবাহিক চুক্তি পর্ব ২৭+২৮

#রোদে_ভেজা_মেঘ
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#বৈবাহিক_চুক্তি (সিজন ২)
#পর্বঃ২৭

“দ্য ব্লাক ফিয়ার্স” লন্ডনের অন্যতম এক্সপেন্সিভ এবং ঐতিহ্যবাহী পাব গুলোর মধ্যে একটা। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে এটি নির্মাণ করা হয়, পাবটিতে ঐতিহ্যবাহী অনেক কিছু থাকলেও আধুনিক যুগের জন্য এটি বেশ উপযোগী। পাবটির নিচতলায় রেস্তরাঁ থাকলেও এর উপরের তলায় পার্টি করার ব্যাবস্থা রয়েছে সাথে রয়েছে হোটেল রুমের ব্যাবস্থা। কেউ যদি সবকিছু ছেড়ে শুধুমাত্র নিজেকে সময় দিতে চায় তবে এর থেকে ভালো স্থান হতেই পারেনা।

রোয়েন এইখানে বসে একের পর এক ড্রিংক করে চলছে কিন্তু কিছুতেই নেশা ধরছে না, কারণ ওর নেশা তো অন্যথায় যাকে দেখলে মাদকতা কাজ কাজ করে।মনে হয় কয়েক বোতল উইস্কি ওকে সেবন করানো হয়েছে।ও হয়তো পৃথিবীর সবচেয়ে আনলাকি পার্সন যে তার বিয়ের প্রথম রাত এখানে কাটাচ্ছে তাও ড্রিংক করে। কিছুটা মাথা ব্যাথা নিয়ে উপরতলার রুমে প্রবেশ করলো। মাঝেমাঝে নিজের প্রতি খুব হতাশ হয়ে যায়, ওর সবচেয়ে বড় অপরাধ ও একজন মাফিয়া।

রোয়েন লিউস, দ্যা মাফিয়া লর্ড,, সবার কাছে ও একজন ক্রিমিনাল এমনকি নিজের ভালোবাসার মানুষের কাছেও।
নিজের এই মাফিয়া হওয়ার কারণে কতোটা ধুকে ধুকে মরতো সেটা শুধু ও নিজে জানে। নিজের ভালোবাসার মানুষের কাছে নিজের আসল পরিচয় পরিচয় লুকাতে কতোটা গিল্টি ফিল হতো সেটা শুধু ও জানে।প্রতিনিয়ত বলতে গিয়েও হজম করে ফেলতো কারণ ও জানে ওর আসল পরিচয় জানলে ওকে ছেড়ে দিবে ইনায়া আর তাই হয়েছে। কিন্তু সে হয়তো জানেই না তাকে পাওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত কতোটা ডেস্পারেট হয়ে যাই আমি। এতোদিনে এতোটুকুও বুঝতে পারেনি কতোটা চায় ওকে রোয়েন! কেনো ভালোবাসা না দেখে শুধু ওর ক্রিমিনাল হওয়া টাই দেখলো!

রোয়েন বিছানায় বসে সেদিনের কথা ভাবছে যেদিন ইনায়াকে প্রথম ধমক দিয়েছিলো, ও এমন কিছুই করতে চায়নি সেদিন কিন্তু যদি ইনায়া বারান্দায় যেতো হয়তো সেদিনই জেনে যেতো ও শুধু পেইন্টার কিংবা কোন কোম্পানির বস নয়। ওর আরো একটা পরিচয় আছে যেটা সবচেয়ে বড় পরিচয় দ্যা মাফিয়া লর্ড!

সেদিন ইনায়া যেতেই রোয়েন বারান্দায় গিয়ে হাটু গেড়ে বসে, সামনেই হাত পাঁ বাধা অবস্থায় এক অর্ধমৃত ইংরেজ যুবক পড়ে আছে। রোয়েন যখন রুমে একা ছিলো তখন রুম সার্ভিস দিতে একটা ছেলে ঢুকে। রোয়েন তাকে খাবার রাখতে বলে টিপস দেয়ার জন্য ওয়ালেট আনতে পিছনে ফিরতেই হঠাৎ এটাক করে বসে কিন্তু সামনে আয়না থাকায় রোয়েন পুর্বেই সতর্ক হয়ে যায় আর বেঁচে যায়। ছেলেটির চোয়াল চেপে ধরে বলে

“শেষবারের মতো সুযোগ দিচ্ছি বল তোকে কে পাঠিয়েছে?হয়তো আমি তোর জীবন রেহাই দিতে পারি”

“আমি কিছু না বললে আমি একা এখানে মারা যাবো কিন্তু যদি কিছু বলি তবে আমার সাথে আমার পরিবারও মারা যাবে। তাছাড়া আমরা মরে গেলেও বসের প্রতি লয়াল থাকি তাই আমাকে মেরে ফেল আর বাঁচিয়ে রাখ সেটা তোর ইচ্ছা। আমি কিছু বলবো না তবে যদি বাঁচিয়ে রাখিস তবে আমার হাতেই মরবি”

“তুই আমাকে মারবি?যখন মরার এতোই ইচ্ছা তো মর!”

বলেই গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিলো সেই যুবকের শরীর,ও কখনো কোন মানুষকে নিজের স্বার্থে বা বিনা কারণে মারেনি তবে কেউ ওকে মারতে আসলে তাকে ছেড়েও দেয়নি। কারণ এই পৃথিবীতে সেই বেঁচে থাকে যে লড়াই করতে জানে আর ওর মতো নিস্বংগ মানুষের জন্য একা থাকা বড্ড দায়।

কিন্তু ওতো মাফিয়া হয়ে জন্মায়নি, যতোটুকু মনে পড়ে ও নিজের মায়ের আদরের সন্তান ছিলো আর সুজি আন্টির রোহু। তবে আজকে সেই ছোট্ট রুহানের মাফিয়া হওয়ার পিছনে একটা মানুষের হাত রয়েছে, যাকে ও এতো বছর ধরে শেষ করার জন্য খুজে বেড়াচ্ছে।যার জন্য প্রতিদিন ঘৃণার পরিমাণ বেড়েই যাচ্ছে! তাকে পেলে ওর গুলি আর তার বুক দুটোকে এক করে তবে ক্ষান্ত হবে ও।তাতে যদি ওকে ক্রিমিনাল হতে হয় ও হবে, হাতে থাকা রেড ওয়াইনে শেষ চুমুক দিয়ে গ্লাস হাতে চেপে ধরলো ও যাকে গ্লাস ভেঙে হাত থেকে টপটপ করে রক্ত পড়ছে। সেদিকে ওর বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই, ঘৃণার তীব্র রেশ এখনো আখি কোটরে বিদ্যমান।

সকালে তীব্র ফোনের আওয়াজে ঘুম ভাঙলো রোয়েনের, মাথা তখনো তীব্র ব্যথা করছে তাই কিছুক্ষণ মাথা চেপে ধরে বসে রইলো। ফোনটি আবারও বেজে উঠলো তাই কিছুটা বিরক্তি নিয়েই হাতে নিলো ফোনটি কিন্তু স্ক্রিনে থাকা নাম দেখে সেই বিরক্তি যেন নিমিষেই দূর হয়ে গেলো। ‘আরাভ’

“কিরে কি মনে করে হঠাৎ ফোন করলি, এমনিতে তো তোকে পাওয়াই যায়না হুটহাট হাওয়া হয়ে যাস।তা এতোদিন পরে…”

রোয়েন কিছুটা খুশি মনেই ফোনটা তুলেছিল, অন্যসময় হলে আরাভ হয়তো অনেকগুলো কথা বলে ফেলতো কিন্তু আজ কেনো জানি নিজ থেকে কথা বলতে ইচ্ছে হলো, ওর সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা বলতে এখন শুধু আরাভই আছে।তবে রোয়েনের খুশি বেশিক্ষণ টিকলো না। কান্নায় জড়িত নারীকন্ঠ কথা বলে উঠলো

“রোয়েন, তুমি একটু আসতে পারবে?”

“কেনো কি হয়েছে আন্টি?ইজ এভ্রিথিং ওকে?”

“আ্ আরাভ সুইসাইড করেছে, অনেক ব্লিডিং হয়েছে তাই ও নেগেটিভ ব্লাড প্রয়োজন। আমি কি করবো বুঝতে পারছিনা। তুমি একটু আসবে?”

“আমি আসছি আন্টি”

রোয়েন দ্রুত কোট গায়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো,সকালে উঠেই এমন সংবাদ শুনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না ও।যতো এগিয়ে যাচ্ছে ততই যেনো হাত পা জড়োশড় হয়ে আসছে, ওর সাথেই কেনো এমন হয় সবসময়?প্রথমে মাম্মা তারপর বড় আব্বু আর এখন আরাভ। সবাই কেনো ওকে ছেড়ে চলে যেতে চায়। যাকে ভালোবাসে সেও তার থেকে দূরে যেতে,ওর মতো হতভাগা আর কেউ কি আছে?

হসপিটালে পৌঁছাতে প্রায় একঘণ্টা সময় লেগে গেলো। দ্রুত হসপিটালে পৌঁছে আরভের কেবিনের দিকে যায়, সেখানে গিয়ে দেখে আরাভের অলরেডি সেন্স ফিরে এসেছে কিন্তু ও কারো সাথে কথা বলতে চায়না। রোয়েন কিছুটা শব্দ করেই কেবিনের দরজা খুলে তারপর ধীর পায়ে আরাভের দিকে এগিয়ে যায়। পাশে থাকা চেয়ারে বসে আরাভের শুকিয়ে যাওয়া চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ তারপর শান্ত কন্ঠে বলে উঠে

“এখন কেমন লাগছে তোর?”

“বেঁচে আছি এখনো, মরে যায়নি”

আরাভের এইরকম খাপছাড়া জবাব রোয়েনের পছন্দ হলোনা কিন্তু কিছু বললো না। কারণ ও বুঝতে পারছে আরাভের মনের অবস্থা ভালো নেই। চুপচাপ কিছুক্ষণ বসার পর মুখ খুললো

“যখন বড় আব্বু মারা যায় তখন আমারো নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে হচ্ছিলো। মাম্মার পর একমাত্র কাছের মানুষ বলতে তখন সেই ছিলো। হাতে শিরায় ছুরি নিয়ে সারারাত বসে ছিলাম কিন্তু এতোটা সাহস হয়নি যে নিজেকে শেষ করে দিবো। সারারাত ভেবে বুঝতে পারলাম মৃত্যু কোন কিছুর সমাধান নয়, বাঁচতে হলে লড়ে যেতে হবে। জীবন সাজানো কোন ফুলের বিছানা নয় বরং এতে অনেক কাটা থাকে যা তোমাকে অতিক্রম করতে হবে।কাপুরুষের মতো গুটিয়ে যাওয়ার কোন মানেই হয়না, বরং যা তোমার চাই তা তোমাকে হয়তো অর্জন করতে হবে নয়তো ছিনিয়ে নিতে হবে”

“সবকিছু ছিনিয়ে নেয়া যায়না রুহান আর না সবার ছিনিয়ে নেয়ার ক্ষমতা থাকে। কিছু কিছু সময়ে অন্যের স্বার্থে নিজেকে বিসর্জন দিতে হয়। সে যদি আমাকে ছাড়া ভালো থাকে তবে থাকুক,আমি হয়তো সহ্য করতে পারছিলাম না তাই…”

“আমরা ঠিক এই জায়াগায় গিয়েই সবচেয়ে বড় ভুল করি, প্রিয় মানুষের ভালোর জন্য তাকে ছেড়ে দেয়া কিন্তু আদোও কি সে ভালো থাকে নাকি শুধু প্রতিনিয়ত ভালো থাকার অভিনয় করে যায়? আমার আর ইনায়ার কথাই ভাব! আমি জানি ও আমাকে ভালোবাসে তাই অন্যের সাথে কখনোই সুখি হবে এজন্য আমি ওকে নিজের করেই ছাড়ছি আর তার জন্য যা করতে হয় সব করেছি। আমি জানি আপাদত ও রেগে আছে কিন্তু একটা সময় সবটা ঠিক হয়ে যাবে। আমি ওকে কখনোই জোর করতাম না যদি ও আমাকে ভালো না বাসতো। তাই ভালোবাসার মানুষকে তার ভালোর জন্য ছেড়ে দেয়া সবচেয়ে ভুল কাজ কারণ যে যদি তোমায় ভালোবাসে তবে অন্যের সাথে কখনোই সুখি হতে পারবে না। তাই ছিনিয়ে নেয়া ভুল কিছু নয় যতক্ষণ সে তোমার”

রোয়েন একটানে সবটা বলে কিছুক্ষণ চুপ থেকে আরাভের মনের ভাব বুঝার চেষ্টা করলো তারপর আরাভের হাতে হাত রেখে বললো

“কোথায় থাকে মেয়েটা?এড্রেস দে আমাকে, মনে রাখিস ওই মেয়ে যদি তোকে ভালোবেসে থাকে তবে ও তোর হবে এটা আমি কথা দিলাম। দরকার হয় কিডন্যাপ করে নিয়ে আসবো তবুও নিয়ে আসবো”

রোয়েনের কথায় আরাভ কিছুটা হাসলো, রোয়েন যতোই কঠিন সাজার চেষ্টা করুক না কেনো ওর ভেতরে একটা নরম মন আছে যেটা হয়তো সবাই দেখতে পায়না।

“থাক সেসব কথা, আগে এটা বল ভাবি কেমন আছে?”

“সে ভালোই আছে নিজের খেয়ালে বিভোর, শুধু আমি নিজেকে সেথায় খুজে পাইনা আরকি”

“হঠাৎ সাহিত্যিক হয়ে গেলি নাকি? যাক ভালোই ভাবির উসিলায় এই রুপটাও দেখতে পেলাম। ভালোই প্রেমিক পুরুষ হয়ে গিয়েছো তুমি ”

রোয়েন প্রত্যুত্তরে কিছুই বললো না, প্রেম শব্দটিই অদ্ভুত, মানুষকে হঠাৎ বদলে দেয় এমনভাবে যে নিজেকেই চেনা দুষ্কর হয়ে পড়ে। রোয়েন বুঝতে পারলো আরাভ ওকে মেয়েটির পরিচয় দিবে না তাই নিজেই বের করার সিদ্ধান্ত নিলো, আর যাইহোক নিজের বন্ধুকে ধুকে ধুকে মরতে ও কখনোই দিবে না।

🌸🌸🌸

আজকাল সায়রা নিজের মনের গতি হারিয়ে ফেলেছে, সারাদিন মুভি আর কার্টুন ছাড়া যার দিন যেতো না সেই এখন কবে শেষ মুভি দেখেছে মনে পড়ছে না। ক্যালিফোর্নিয়ায় ফিরে এসেছে আজ তিনদিন, বাবা আর ফুফা মিলে ইনুকে খুজার অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই ক্লু পাচ্ছেনা। তবে সেদিকে ওর মাথাব্যথা নেই, ও জানে ইনায়া তার ভালোবাসার মানুষের সাথে খুব সুখে আছে। কিন্তু ওর জীবনটা মুহুর্তেই রঙ বদলে নিলো, যেনো হঠাৎ করেই বড় হয়ে গিয়েছে। আজকাল কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হয়না, এমনকি কাছের বন্ধুটির সাথেও নয়। ফোন বন্ধ করে রেখেছে সপ্তাহ খানেক ধরে, কারো কল ধরার ইচ্ছে ওর নেই। কালকেই কয়েকজন বন্ধু দেখা করতে এসেছিলো তাদের থেকেই জানতে পারলো সেই মানুষটি ওর খোঁজ নিয়েছে কিন্তু বিয়ের খবর শুনে আর কিছু বলেনি। হয়তো বলার মতো কিছু খুজে পায়নি,আজকাল মানুষটির কথা খুব ভাবায়।তাদের সম্পর্ক কি শুধুই বন্ধুত্ব পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিলো? তবে ওর বুক কেনো এখনো হাহাকার করে উঠে কিছু হারিয়ে ফেলার ভয়ে?

সায়রা নির্লিপ্ত ভাবে হেঁটে চলছে রেস্টুরেন্টের দিকে, কয়েকদিন পর পুরোপুরি যার হতে হবে তার সাথে দেখা করতে যাচ্ছে ও। লোকটিকে ভেবে পায়না ও, একসপ্তাহ পুর্বেও ইনায়াকে বিয়ে করার জন্য বরবেশে ছিলো অথচ আজ ওর সাথে সম্পর্ক গড়ার লক্ষ্যে উঠে পড়ে লেগেছে। পুরুষ মানুষ গিরগিটির ন্যায়, এদের রঙ বদলাতে সময় লাগেনা শুধু সুযোগ পেলেই হয়। গাড়ি থেকে নেমে কয়েকপা এগুতেই মাথায় তীব্র ব্যাথা অনুভব করলো, ঘোলাটে চোখে কয়েকজনকে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো, তারপর চোখজোড়া নিমিষেই বন্ধ হয়ে গেলো!
#রোদে_ভেজা_মেঘ
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#বৈবাহিক_চুক্তি (সিজন ২)
#পর্বঃ২৮

অন্ধকার রুমে বসে আছে সায়রা, হাত দুটো হ্যান্ডকাফ দিয়ে বাধা। সায়রা অনেক চেষ্টা করেও সেটা খুলতে ব্যার্থ হলো তাই চুপচাপ বসে থাকা ছাড়া আর কোন উপায় দেখলো না। এই বিদঘুটে অন্ধকার ঘরে থেকেও ওর তেমন একটা ভয় লাগছে না, যতোটা ভয় ঐ লোকটির আশেপাশে থাকলে হয়। প্রচণ্ড বিরক্তিকর আর গায়ে পড়া স্বভাবের লোক যাকে এক কথায় ছেচড়া বলা চলে অথচ নামটি কতো সুন্দর, জেইন শেখ! ইন্সট্রাতে জেইন ইমামকে দেখে রীতিমত ক্রাশ খেয়েছিলো ও কিন্তু নাম একি হলে কি চরিত্র সম্পুর্ণ বিপরীত।এংগেজমেন্ট হওয়ার প্রথম দিনই বিনা অনুমতিতে ওর কোমরে হাত রেখেছিলো ছবি তোলার জন্য, হোয়াট আ পার্ভার্ট!

ইনায়ার বিয়ের দিন যখন ইনায়াকে খুজে পাওয়া যাচ্ছিলো না তখন লোকটি কিছুটা সাইকোর মতো করেছিলো। ও কিছুটা সামনে যেতেই চোখাচোখি হলো লোকটির সাথে তাই ও চোখ নামিয়ে ফেলে কিন্তু নামানোর পুর্বে ঠোঁটের কোনের হাসি ঠিকই খেয়াল করেছিলো ও। লোকটি হঠাৎ বাবাইয়ের হাত ধরে বলে উঠলো

“দেখুন মিস্টার খান, এখানে মিডিয়া থেকে শুরু করে সবাই জানে আজ আমার বিয়ে।তাই আজ আমার বিয়ে যেকোন মুল্যেই হতে হবে, আমার রেপুটেশন আমার কাছে খুব ইম্পর্টেন্ট। তাই আপনাদের এক মেয়ে যখন পালিয়েছে তাই আমার সম্মান রক্ষার্থে আরেকজনকে দিয়ে সেটা পুরণ করে দেয়া কি উচিৎ নয়?”

“আমার মেয়েকে আপাদত বিয়ে দেয়ার কোন ইচ্ছে আমার নেই মিস্টার শেইখ,তাই এই বিয়ে সম্ভব নয় ”

কথাটা শুনে জেইন শেখের মাথা যে গরম হয়ে গিয়েছে তা স্পষ্ট বুঝতে পারলো ও,হাত মুঠো করে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু ঠোঁটের হাসি একদমি কমেনি লোকটি ভাবলো কি করে ওর মতো হ্যাবলাকান্তকে ও বিয়ে করবে? এমনিতে ধলা বিলাইর মতো ছেলেদের ও দুচোখে দেখতে পারেনা। এগর্ণের ঘটনা ওর এখনো স্পষ্ট মনে আছে, সব কটা ইংরেজই বজ্জাত!

“তাহলে এটলিস্ট এংগেজমেন্ট করিয়ে রাখুন!যদি এরপর বিয়ে না দিতে চান তবে তা পরে নাহয় ডিসকাস করা যাবে। আপাদত আমার সম্মান বাচানো আপনাদের প্রধান দায়িত্ব, তাছাড়া আমি আপনাদের ক্লাইন্ট বর্তমানে।আমার সুবিধা অসুবিধার উপর খেয়াল রাখা কি উচিৎ নয়?”

মিষ্টি কথার মাঝে যে রীতিমত থ্রেড দিয়েছে তা আর বুঝতে বাকি রইলো না সায়রার, এতোক্ষন ইনায়াকে ভাগতে সাহায্য করার কারণে গিল্টি গিল করলেও এখন মনে হচ্ছে ঠিকই করেছে। এই লোককে শুরু থেকেই সুবিধার মনে হয়নি।

কিন্তু বাবা যখন হুট করে রাজি হয়ে গেলো তখন ও খুব অবাক হলো। ও বাবার চোখের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো কিন্তু বাবার চোখেও অসহায়ত্ব দেখতে পেলো সাথে একটু ভরসা যে যাইহোক না সেই ওর কিছু হতে দিবে না। আর বাবার চোখে সে ভরসা দেখেই ও সেই এংগেজমেন্টে রাজি হয়েছিলো।ওর বাবা যাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সব ঠিক ছিলো, আজও হয়তো যা নিয়েছে তা ঠিক কিন্তু কেন জানি নিজের মন শান্ত করতে পারছিলো না আর না এখন পারছে। বারবার কিছু হারানোর ভয়ে বুকটা বারবার কেঁপে উঠে। আচ্ছা যাকে হারানোর কথা ভাবছে সেকি ওর কথা ভাবছে নাকি এই কয়দিনে ভুলে গিয়েছে ওকে!

সায়রা চোখ বন্ধ করে মাথা নিচু করে বসে ছিলো ঠিক তখনি কেউ একজন কব্জি চেপে ধরে ওকে বাইরের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে আর কানে থাকা ব্লুটুথ চেপে ধরে কথা বলে যাচ্ছে

“হ্যা বাটলার! আমি পেয়ে গেছি ওকে, তুমি এদিক সবটা সামলে নাও আমি এখনি ওকে নিয়ে লন্ডনে রওনা হবো।সন্ধার ফ্লাইটে রওনা দিবো, তুমি খুজে বের করো কে কিডন্যাপ করেছিলো ওকে আর কি উদ্দ্যেশ্য ছিলো তার”

ছেলেটির কথা শুনে বুঝতে পারলো ছেলেটি ওকে লন্ডন নিয়ে যাবে কিন্তু কেন?তার কথা শুনে মনে হচ্ছে সে ওকে বাঁচাতে এসেছে তবে পরিবারের কাছে না পৌঁছে দিয়ে লন্ডন কেন নিয়ে যাবে। এইসকল দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটিয়ে সায়রা মুখ খুললো

“কে আপনি? আর আমাকে লন্ডন কেনো নিবেন? উদ্দেশ্য কি আপনার?”

কিন্তু বেশি সুবিধা করতে পারলো না তার পুর্বেই মুখে আস্তো এক কস্টিপ লাগিয়ে দিলো। সায়রা কিছুটা ভ্রু কুচকে তাকালো যাতে ছেলেটি বলে উঠলো

“সেখানে গিয়েই দেখতে পাবে কেনো নিয়ে যাচ্ছি, আপাদত তোমার কথা শুনে সময় নষ্ট করতে চায়ছি না। দিস প্লেস ইজ নট সেফ! তাড়াতাড়ি বের হতে হবে এখান থেকে”

কিছুটা তাড়া দেয়ার ভংগিতে বললো ছেলেটি যাতে কিছুটা বিরক্ত হলো সায়রা, এইভাবে কথা বলা কার সাথে মিলে যায় কিন্তু কার সাথে মিলে?
একটা বিএমডাব্লিউ কারের সামনে এসে সায়রাকে পেসেঞ্জার সিটে বসিয়ে ছেলেটি ড্রাইভিং সিটে বসলো। গাড়ি কিছুদূর যেতেই খুব জোরে ব্রেক কষলো ছেলেটি যাতে সায়রা অলমোস্ট মুখ থুবড়ে পড়ছিলো। মাথা তুললেই গাড়ির সামনে পরিচিত মুখ দেখতে পেলো, সায়রা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে পাশে থাকাতেই দেখে ছেলেটি অলরেডি গাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছে। পকেট থেকে গান বের করে ছেলেটি এগিয়ে গেলো সেই ব্যাক্তির দিকে তারপর কিছুটা কঠিন কন্ঠেই বললো

“আমাকে এখান থেকে যেতে দিন নাহয় গান চালাতে বাধ্য হবো। মেয়েটি আমার জন্য ইম্পর্টেন্ট তাই ভালো করে বলছি রাস্তা থেকে সরে দাঁড়ান ”

ছেলেটির কথা শুনে লোকটিও পকেট থেকে গান বের করে পয়েন্ট করলো ছেলেটির দিকে

“মেয়েটি তোমার থেকেও বেশি আমার কাছে ইম্পর্টেন্ট, বলতে পারো আমার বেঁচে থাকার একটা মাধ্যম তাই বলছি ওকে আমার সাথে যেতে দাও”

“মনে হচ্ছে আপনি এতো সহজে ছাড়বেন না তাই আমার কাছে আর কোন উপায় রইলো না। এই মেয়েটি আমার কাছে কারো আমানত তাই ওকে এখান নেয়ার জন্য আমার যা করতে হবে আমি তাই করবো।আই হ্যাভ নো আদার অপশন!”

বলেই ট্রিগারে চাপ দিতে যাবে তার পুর্বেই কিছু একটার শব্দ শুনে থমকে গেলো

“রুহাননননন!”

পরিচিত শব্দে এখানে থাকা দুজনই যেনো থমকে গেলো, রোয়েন অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইনায়ার দিকে। মনের ভিতর প্রশ্নের ঝড় বইছে ওর কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ইনায়া কি করে জানলো ওর নাম রুহান?ওতো কখনো বলে নি!

ইনায়ার অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে রইলো রোয়েনের দিকে তারপর বলে উঠলো

“বাবা হয় আপনার, এমন কোন পদক্ষেপ নিবেন না যাতে সারাজীবন পশ্চাতে হয়”

ইনায়ার কথা শুনে সায়ানের হাত থেকে গান পড়ে গেলো, ও এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনে থাকা যুবকের দিকে। এটা ওর রুহান!ওদের সেই ছোট্ট রুহান?সায়ান রুহানের দিকে এগুতে গিয়েও এগুলো না, রুহান কেমন যেনো কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কিন্তু দৃষ্টি অনেক কিছু বলে দিচ্ছে, এই চোখে ও ঘৃণা ছাড়া অন্য কিছু দেখতে পেলো না, প্রচণ্ড ঘৃণা!

রোয়েন হঠাৎ হাতে থাকা গান ঠিক সায়ানের কপাল বরাবর পয়েন্ট করলো, চোখ দুটো লাল হয়ে আছে মনে হচ্ছে আগুনের ফুলকি বের হচ্ছে। ওই চোখ দুটো যেকোন কিছু ভস্ম করে দিতে সক্ষম। ইনায়া ভেবেছিলো রোয়েনকে তার বাবার পরিচয় বললে হয়তো গান নিচে নামিয়ে দিবে কিন্তু তার সম্পুর্ণ বিপরীত চিত্র দেখে ঘাবড়ে গেলো। রোয়েনের কারো জন্য এতোটা ঘৃণা এই প্রথম দেখতে পেলো,নিজের বাবার প্রতি এতো ঘৃণা!

রোয়েন বাঁকা হেসে সায়ানের দিকে তাকিয়ে বললো

“সায়ান জামিল খান!যাকে এতোগুলা বছর আমি পাগলের মতো খুজে বেড়াচ্ছি সে এখন আমার সামনে?এতো বড়ো সুযোগ হাতছাড়া হতে দেই কি করে?এতোগুলা বছর শুধু এই ভেবে কাটিয়েছি তোকে সামনে পেলে ঠিক কিভাবে শেষ করবো। ঠিক কি করলে তুই ততোটাই কষ্ট পাবি যতোটা আমি কষ্ট পেয়ে আমি তিলে তিলে শেষ হয়েছি, আমার অস্তিত্ব হারিয়েছি। আমার যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকে তোকে ঘৃণা করি,প্রচণ্ড ঘৃণা!”

#চলবে

(গল্পটা তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে হয়তো,ছোট করে দেয়ার জন্য স্যরি। হ্যাপি রিডিং 🙂)
#চলবে

(সায়রার কি হয়েছে তা আগামী পর্বে জেনে যাবেন ইনশাআল্লাহ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here