ব্লাক ডায়মন্ড পর্ব ৫

#ডার্ক ডায়মন্ড
#আফরিন ইভা
#পর্ব-০৫

__________________

” ভয়ে ভয়ে মীরা চোখ খুলে তাকালো।
মীরা বুকে হাত দিয়ে দেখলো, হৃদপিণ্ডটা ডিপ ডিপ করছে।
মীরা কী দেখলো কিছুই বুঝতে পারছেনা, দেখতে অনেকটা কুকুরের মতো, লাল লাল চোখ দুটি দেখতে অনেক ভয়ংকর, পায়ে ধারালো নখ বিশিষ্ট ।
নখের কথা মনে পড়ে মীরা আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো, যা দেখলো ভয়ে আঁতকে উঠলো, এখনো তাজা রক্ত গড়গড়িয়ে পড়ছে মীরার গলা থেকে, মীরার পুরো জামায় রক্ত লেগে আছে।
রক্ত দেখে মীরা ভয় না পেয়ে অদ্ভুত এক নেশা ভরা চাহনিতে তাকিয়ে আছে রক্তের দিকে।
রক্ত দেখে মীরার যেনো তৃষ্ণা পেয়েছে। ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখা পানি থেকে এক গ্লাস পানি ঢেলে তারাতাড়ি পান করলো মীরা।
পানি খাওয়ার সাথে সাথে গলার রক্তের চাপ একটু কমে গেছে মীরার।
মীরা রক্তের দিকে খুব বেশি আর তাকায়নি, তারাতাড়ি ওয়াশ রুমে গিয়ে জামাকাপড় চেঞ্জ করে ফেললো।”

-মীরা বারান্দার চেয়ারখানায় হেলান দিয়ে ভাবতে লাগলো, হিংস্র প্রানীটার কথা।
প্রানীটা মীরাকে খুব হিংস্র ভাবে চেপে ধরলো কেনো, আর এটা রুমে প্রবেশ ই বা করলো কিভাবে, আর চোখ গুলো এমন ভয়ার্ত কেনো?
প্রানী টার কথা মনে হলেই মীরার শরীরের লোমশ কাটা দিয়ে উঠে।
মীরার বয়স যতোটা ২৫ বছরে ধাবিত হচ্ছে, এসব ঝামেলা ততোটা বেড়ে যাচ্ছে।
যা এখন নিত্য নৈমিত্তিক রুটিনে পরিণত হয়েছে, যা হরহামেশাই ঘটে যাচ্ছে মীরার সাথে।

মীরা মনকে কোনো রকম শক্ত করে মায়ের কাছে গেলো।
গিয়ে মা’কে বেশ কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে রাখলো।
মীরার আম্মা অবাক হয়ে মেয়ের কান্ডকারখানা দেখছে।
মীরার মাথায় আদর মাখা হাত বুলাতে বুলাতে বলল, কিরে মা তোর কি মন খারাপ?

– মায়ের কথা শুনে মীরা নড়েচড়ে বসলো।
মীরা মুখে জোরপূর্বক হাসি ফুটিয়ে বললো,আচ্ছা আম্মা বলোতো, যদি কখনো দূরে চলে যা-ই আমাকে ভুলে যাবে না তো?
আমাকে ফেলে থাকতে পারবে তো?

” মীরার আম্মা অবাক হয়ে মেয়ের কথা শুনছে, আর আড়ালে দুচোখের জল মুছছে।”

– মীরার আম্মা যে কাঁদছে মীরা তা খেয়াল করেনি।

” মীরার মা নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনি, হাউমাউ করে মীরাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো।”

– মীরা মোটেই এরজন্য প্রস্তুত ছিলেন না।
মীরা মায়ের চোখের জল মুছে দিচ্ছে আর বলছে আম্মা তুমি কাঁদছো, সরি আম্মা আমি বুঝতে পারিনি তুমি এতোটা সিরিয়াস নিবে ব্যাপারখানা?

মীরার আম্মা নিজেকে সামলে মীরার গালে আলতো করে হাত রেখে বললো, তুই কথা দে,

-মীরা অবাক হয়ে আম্মার হাতে হাত রাখলো।

– আম্মা মীরার হাত শক্ত করে চেপে ধরলো, বললো তুই যেখানে যাস এই আম্মাকে কখনো ভুলবিনা?

– মীরা ছলছল চোখে আম্মার দিকে তাকালো। মীরা আজ আম্মার কথা কিছুই বুঝতে পারছেনা।
আম্মা আজ যা বলছে মীরার কাছে সব যেনো ধোঁয়াশা লাগছে।

– কিরে তুই তাহলে এই আম্মাকে ভুলে যাবি?

– মীরা আম্মাকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদছে, আর বুক ফাটা আর্তনাদ নিয়ে বলছে, কি বলছো আম্মা আমি তোমাকে কিভাবে ভুলবো, তুমি যে আমার প্রাণ, এই পৃথিবী যতোদিন থাকবে আমি তোমার আর বাবার মেয়ে হয়েই থাকবো, এবার যতো দূরেই থাকি না কেনো?

” আম্মা মীরার কপালে গভীরভাবে অনেক গুলো চুমু খেয়ে বললো, লক্ষী মেয়ে আমার এজন্যই তো তোকে আমি ইরা থেকেও বেশি ভালোবাসি।
ছোটবেলা থেকেই তুই অনেক লক্ষী মেয়ে ছিলি, খুবি শান্ত ছিলি, অন্য বাচ্চাদের থেকে তুই অনেক আলাদা ছিলি, ছোটবেলা থেকেই তোর চোখগুলে ছিলো বাদামি রঙের।

-মীরা অবাক হয়ে আজ মায়ের কথাগুলো শুনছে, আর মনের গভীরে নিয়ে গাঁথছে।

– আম্মা মীরার গাল টেনে দিয়ে বললো আর তুই ছিলি তোর বাবার প্রিয় কণ্যা।

– যেই নাম নিয়া ভূত হাজির হোয়া,

-আম্মা ও মীরা পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো মীরার বাবা এসেছে।
মীরা দৌড়ে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো।
মীরার বাবা মীরাকে কপালে চুমু খেয়ে বললো, এতোক্ষণ মা মেয়ে কি নিয়ে কথা হচ্ছিল?

” মীরা আম্মার দিকে তাকালে আম্মা চোখ দিয়ে মীরা কে কিছু একটা বলতে নিষেধ করলো।
মীরাও বাবাকে এ নিয়ে আর কোনো কথা বলেনি।

____________________

মীরা আজ অনেকদিন পর রুদ্রের ফ্ল্যাটে গেলো, মীরার জানা মতো এ সময় রুদ্র বাসায় থাকে না তাই ভাবলো আন্টির সাথে একটু দেখা করে আসি, অনেকদিন হলো আন্টির সাথে দেখা হয়না।
মীরা চারদিক তাকিয়ে কিচেনে গিয়ে আন্টি কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।

আন্টি পেছনে না তাকিয়েই বুঝতে পারলো মীরা এসেছে।
আন্টি মীরা বলে ডেকে উঠলো।

– আন্টি তুমি কিভাবে বুঝলে আমি এসেছি?

– কি যে বলিস মা, মায়েরা না দেখেও সবকিছু বুঝতে পারে।
এখন বল এতোদিন পর এই আন্টি টার কথা মনে পরলো বুঝি?

– মীরা মনে মনে বললো, মনে তো খুব পড়ে কিন্তু একজনের কথা মনে করলেই যে আর আসতে চায় না এ মন, বেপরোয়া মন তবুও বার-বার ওকে নিয়ে ভাবতে ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে পড়ে।
মীরা মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো, আন্টি খুব ব্যাস্ত ছিলাম তাই আসতে পারি নি, কিন্তু বিশ্বাস করো মনে যে তুমি সারাক্ষণ ঘুরেফিরে বেড়াও।

“আন্টি মীরার গালে আলতো করে হাত রেখে বললো, তুই তো আমার পাগলি…..
বলে বাকিটা না বলে থেমে গেলো।
আন্টি কথা ঘুরানোর জন্য বললো, মীরা একটা কাজ করতে পারবি, নে ধর এই এই ফ্লাক্সে তুলসী পাতার গরম জল রাখা আছে তুই এটা নিয়ে রুদ্রের রুমে দিয়ে আয়।

– মীরা ঢোক গিলে আন্টির দিকে তাকালো।

– আন্টি কিছু একটা বুঝতে পেরে বললো, চিন্তা করিসনা আমার দুষ্টু ছেলে এখনো বাসায় ফিরেনি। তাছাড়া তুই তো জানিসই ও এই সময় বাসায় থাকেনা।

– মীরা ফ্লাক্সটা হাতে নিয়ে লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রুদ্রের রুমের দিকে রওনা দিলো।
রুদ্র নেই জেনেও মীরার হাত পা কেমন শিথিল হয়ে আসছে, হসপিটালের কথাগুলো মনে করলে দু-চোখ অশ্রুজলে ঝাপসা হয়ে আসে।
অসাবধানতায় ফ্লাক্সটা পড়ে যেতে লাগলে মীরা চট করে ধরে ফেলে।
মীরা আর কিছু না ভেবে ভয়ে ভয়ে রুদ্রের রুমে উঁকি মেরে দেখলো রুদ্র আছে কি-না?
মীরা দেখতে পেলো রুম একদম পরিপাটি তার মানে রুদ্র সত্যিই আসেনি।

মীরা ফ্লাক্সটা রেখে পেছন ঘুরে তাকিয়ে কিছু একটার সাথে ধাক্কা খেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো।
মীরা চোখ খুলে তাকিয়ে যাকে দেখলো কলিজা টা মূর্ছা গেলো।
রুদ্র ভাই দাঁড়িয়ে কিন্তু কিভাবে উনি তো এ সময় বাসায় থাকেন না।

-মীরা অবাক হয়ে বললো, আপনি?

– রুদ্র ভাই ভেজা চুল গুলো মুছতে মুছতে বললো,কেনো তুই কি অন্য কাউকে আশা করছিলি?

– মীরার মাথায় রাগ উঠে গেলো তবুও নিজেকে শান্ত রেখে বললো, তা নয়, আপনিতো এই সময় বাসায় থাকেন না.।

– আমার বাসা আমি যখন খুশি আসবো।
কথাটা বলে মীরার কাছে খুব কাছে এগিয়ে আসলো।

মীরা রুদ্রের দিকে তাকিয়ে দেখলো, রুদ্রের চুল থেকে পানির ফোঁটা গুলো কপালে এসে গড়িয়ে পরছে, সামনের চুলগুলো কপাল ছুঁয়ে আছে, তা দেখে মীরার হৃদয় বিক্ষিপ্ততায় বিক্ষুদ্ধ হতে লাগলো।
রুদ্রের চোখে আজ এক অদ্ভুত অনূভুতি খেলে যাচ্ছে। রুদ্রের গরম নিশ্বাস মীরার বুকে এসে উতালপাতাল করে দিচ্ছে। রুদ্রের এতো কাছে আসাটা মীরার যেনো সহ্য হচ্ছে না, দম আঁটকে আসছে। মীরার মন বড্ড বেহায়াপনায় চাইছে রুদ্র ভাইকে একটি বার জড়িয়ে ধরতে। মীরার বুকের জমানো সব কষ্ট দূর আকাশে উড়িয়ে দিতে।
মীরা এক অদ্ভুত অনূভুতিতে চোখ বন্ধ করে ফেললো।

” মীরা তুই কি অসুস্থ?

-রুদ্রের কথা শুনে মীরা চোখ খুলে তাকালো।

” আমার কাছে কিন্তু খুব সন্দেহ হচ্ছে?
তুই কি কারো প্রেমে ট্রেনে করে হাবুডুবু খেতে খেতে ডুবে যাচ্ছিস? তোকে কিন্তু খুব একটা সুবিধার মনে হচ্ছে না।

– মীরা রুদ্রের দিকে তাকিয়ে দেখলো, রুদ্র মুখ চেপে চেপে হাসছে।

রুদ্রের এ হাসি মীরার বুকে এসে কঠিনতর ধাক্কা দিলো।
মীরা মনে মনে বললো, সেই কবেই আপনার প্রেমে হাবুডুবু খেতে খেতে মরে মরে বেঁচে আছি রুদ্র ভাই, যদি একটিবার আপনি তার খবর রাখতেন।
আপনার দেওয়া এই হৃদয়ে জমানো ব্যাথা যা আমি তিলেতিলে হজম করে যাচ্ছি।
কিন্তু চাইলেই কি সব চাওয়া পাওয়া হয় বলেন?

মীরা রুদ্র ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে শান্তভাবে জবাবে বললো, না রুদ্র ভাই আমি ভালো আছি, খুব ভালো।
আপনি ডক্টর তাই হয়তো আপনার কাছে সবাইকে অসুস্থ মনে হয়।

– রুদ্র ভাই রেগে গিয়ে মীরার হাত শক্ত করে চেপে বললো, তোর কি মনে হয়, আমি পাগলের ডাক্তার বলে আমাকেও পাগল বলে মনে হচ্ছে তোর?
তুই আমাকে ডাক্তারি শেখাতে আসবি না বুঝলি।

” রুদ্র ভাই হাতটা এমনভাবে চেপে ধরলো, ব্যাথায় চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পরলো।
কি এমন দোষের কথা বললাল যাঁর কারনে রুদ্র ভাই আমাকে এতোটা জোরে হাত চেপে ধরলো, রুদ্র ভাইয়ের সাথে কি এমন শত্রুতা যাঁর কারনে উনি আমাকে সহ্যটুকু পর্যন্ত করতে পারেন না।
আজ উনি আমার হাতে যতো ইচ্ছে ব্যাথা দিক কিছুই বলবোনা। হাতের ব্যাথাটা হয়তো উনি দেখতে পাবেন,
কিন্তু এ হৃদয়ের গহীন ব্যাথাটা কোনোদিন দেখতেই পাবেন না।

“যে ব্যাথা দিয়েছো তুমি
ব্যাথাকাতুর আজ আমি,
হয়নি বলা কথাগুলো কভু
দু’চোখ বেয়ে জল পরেছে তবুও।”

ছলছল চোখে রুদ্র ভাইয়ের দিকে তাকালাম।

রুদ্র ভাই হাত টার দিকে তাকিয়ে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে বারান্দায় চলে গেলো।

-হাতটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম হাতটা ভীষণ লাল হয়ে গেছে, রুদ্র ভাইয়ের পাঁচ আঙুলের দাগ একদম লেগে গেছে।
দাগটা দেখে আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারিনি, ব্যাথাকাতুর হৃদয় নিয়ে হনহনিয়ে নিজের রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিলাম।

নিজেকে আজ বড্ড অগোছালো লাগছে, ইচ্ছে করছে সব কাঁচের টুকরোর মতো ভেঙে গুঁড়িয়ে দেই।

মীরা খাটের উপর লম্বা করে বালিশটা মুখের উপর দিয়ে চেপে ধরে রেখেছে, কান্নার শব্দ যেনো বাহিরে না যায়, সে জন্য বালিশটা চেপে ধরে কাঁদছে।
বুক ফাটা আর্তনাদে মীরার চোখ আজ যেনো থামতেই চাইছে না।
রুদ্র ভাই কেনো করেন এমন, আপনাকে খুব বেশি ভালোবাসি বলে, আপনাকে চাই বলে, আপনি তো ঠিকই বুঝেন কতোটা আঘাত পাই আমি, আপনার দেওয়া আঘাত গুলো খুব করেই হৃদয়ে আমার দাগ কেটে যাচ্ছে।
সেই ছোট বেলা থেকেই আপনার সাথে খেলতে গেলে আপনি আমাকে সবার সামনে তাড়িয়ে দিয়ে বলতেন, তোর সাথে খেলবোনা আমি, আপনার কাছে সবচেয়ে খারাপ কেউ থাকলে সেটা হলাম আমি।
শুধু একটিবার আপনি আমায় আপন করে
নিয়েছিলেন, যেদিন সবাই বেড়াতে গিয়ে পানিতে পড়ে গিয়েছিলাম আমি, তখন আপনি আমায় কেনো বাঁচিয়েছিলেন, কেনো কেনো?
এতো কষ্ট দিবেন বলে।

কাঁদতে কাঁদতে মীরার শরীর একদম ক্লান্ত হয়ে গেলো।
বড্ড তৃষ্ণা পেয়েছে মীরার, গলাটা একদম শুকিয়ে গেছে।
মীরা উঠে বসলো, গ্লাস টা হাতে নিয়ে ঢকঢক করে গিলতে লাগলো।
হঠাৎ মীরার কাছে পানির স্বাদটা কেমন যেনো অমৃত মনে হলো।
মীরা গ্লাস টা সামনে এনে দেখলো এ যে রক্ত, একদম তাজা রক্ত।

#চলবে—–

বিদ্রঃ সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন আশা করি। আগামীকাল গল্প দেওয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here