ভালবাসার মেঘ বৃষ্টি পর্ব -০১

জামাই সেঁজে এসেছেন একটা দুশ্চরিত্র মেয়েকে বিয়ে করতে।
[জামাইয়ের দিকে তাকিয়ে একটা ছেলে কথা গুলো বলে।]
আজ আহিকার বিয়ে। বাবা-মায়ের পছন্দ করা ছেলেকে আহিকা বিয়ে করছে আজ। আহিকার হুবু বর বিয়ে করতে আসার কিছু সময় পর দেখতে সুন্দর একটা ছেলে বরের সামনে দাঁড়িয়ে কথা গুলো বলে।
আহিকার বাবা জামির সাহেব সেইখানে ছিল ছেলেটার এমন কথা শুনে তিনি অনেক রেগে যান।
জামির সাহেবঃ এইসব কি ফালতু কথা বলছো। আমার মেয়ে কোন দুশ্চরিত্র না আর তুমি বা কে এইসব বলার।
ছেলেটি জামির সাহেবের দিকে নিজের চোখের ভুরু
কুঁচকে তার থেকে চোখ সরিয়ে বরের দিকে তাকিয়ে বলে… কোন বাবাই বলবে না তার মেয়ে খারাপ,আবার অনেক বাবা হইতো জানেই না যে তার মেয়ে খারাপ। উনি হইতো জানে না যে তার মেয়ে খারাপ বা জেনে ও এখন বলতে চাইছে না। আর আমার নাম আহাম খান। আশা করি আমাকে আর কোন পরিচয় দিতে হবে না।
সবাই ছেলেটির নাম শুনে তার দিকে অবাক চোখে তাকায়।
জামির সাহেবঃ তুমি এইখানে এসে আমার মেয়ের নামে বাজে কথা বলবে বানিয়ে বানিয়ে আর আমি সেইসব কথা শুনে চুপ করে থাকব।
আহাম জামির সাহেবের কথা শুনে বরের দিকে তাকিয়ে বলে….
আহামঃ শুনতে খারাপ লাগলে ও কথাটা সত্যি যে আহিকার সাথে আমি তিন বার হোটেলের রুমে সুখের সময় কাটিয়েছি।
আহাম কথাটা শেষ করতে না করতে তার গালে জোরে একটা চড় পড়ে। আহাম রাগে পাশে তাকিয়ে দেখে আহিকা রাগী চোখে তাকিয়ে আছে।
আহিকাঃ আপনার সাহস হই কি করে আমার নামে মিথ্যা বলার। কি প্রমাণ আছে আপনার এই বাজে কথা গুলার যা আপনি বানিয়ে বানিয়ে বলছেন।
আহাম একটু মুচকি হেসে আহিকার দিকে এইকু ঝুকে আস্তে আস্তে বলে…
আহামঃ আমাকে কি তোমার কাছে কাচা খেলোয়াড় মনে হই। আমি যখন এইখানে আসছি তোমার বিয়ে ভেঙ্গে তোমার জীবন নষ্ট করেই এখান থেকে যাব।
এরপর আহাম তার ফোন বের করে আহিকার হুবু বরকে তার আর আহিকার কিছু পিক দেখাই তারপর আহিকার হুবু বরকে বলে….
আহামঃ এখনো যদি এই মেয়েকে বিয়ে করতে চাও তাহলে করতে পার।
আহিকার হুবু বর বলে…
– আমি কি পাগল যে এমন একটা দুশ্চরিত্র মেয়েকে আমি বিয়ে করবো।
জামির সাহেনঃ এইসব কি বলছো তুমি।
– আপনি চুপ থাকেন একটু আগে না বলছিলেন আপনার মেয়ে ভালো তাহলে এইসব কি?
এই বলে ফোনটা নিয়ে আহিকার বাবার সামনে ধরে।
আহিকার বাবা ফোনের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে ফেলে।
– এখন মাথা নিচু করে ফেললেন কেনো? মেয়েকে আগে থেকে ভালো করে রাখতে পারেন নাই।
আহিকাঃ একদম আমার বাবার সাথে অসম্মান করে কথা বলবেন না বলছি।
-দুশ্চরিত্র মেয়ে আবার আমাকে কথা শুনাতে আসে।
আহিকাঃ মুখ সামলে কথা বলবেন বলছি…
আহিকা আর কিছু বলতে যাবে তার আগে জামির সাহেব তার গালে জোরে একটা চড় মারে।
আহিকাঃ বাবা তুমি কি করছো?
জামির সাহেবঃ একদম চুপ, একটা কথা তুই তোর মুখ দিয়ে বলবি না আর বাবা তো একদমই বলবি না। তোর বাবা মরে গেছে।

-আলনাদের ড্রামা আপনার দেখুন। আমরা সবাই চলে যাচ্ছি। এই বাড়িতে আর এক মিনিট থাকা যাবে না।
এই বলে বরযাত্রীরা সবাই এক এক করে চলে যাই র আহিকার আন্তীয় -স্বজনরা ছি ছি করতে করতে চলে যায়৷ পাড়া- প্রতিবেশিরা আহিকা আর তার বাবা-মাকে অনেক কথা শুনিয়ে চলে যাই।
আহিকার মা কান্না করতে থাকে আর তার বাবা ধব করে একটা চেয়ারে বসে পরে মাথায় হাত দিয়ে।
আহিকা রাগে আহামের গালে আরো দুইটা চড় মারে আর বলে….
আহিকাঃ আমার সাথে কেনো এমনটা করলেন। এইভাবে আপনি আমার সাথে প্রতিশোধ নিলেন, আপনি আমার সব শেষ করে দিলেন।
আহাম আহিকার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে…
আহামঃ সেইদিন আমি বলেছিলাম তোর সবকিছু আমি শেষ করে দিব।
আহিকা কিছু বলতে যাবে তখনি ধব করে একটা শব্দ হই। আহিকা পিছনে তাকিয়ে দেখে তার বাবা মাটিতে পরে আছে।
আহিকা জোরে বাবা বলে দৌড়ে তার বাবার কাছে যায় আর দেখে তার বাবা অজ্ঞান হয়ে পরে আছে।
আহিকা আর তার মাকে তার বাবাকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাই।

হাসপাতালে……

ডাক্তারঃ এই রোগীর সাথে কে আছেন?
আহিকাঃজি,আমি ওনার মেয়ে।
ডাক্তারঃআপনার বাবাকে কিছুদিন আগে ও বলে দিয়েছি যেনো উত্তেজিত না হই আর কোন কিছু নিয়ে টেনশন না করে।
আহিকাঃ ডাক্তার আপনি কি বলছেন আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
ডাক্তারঃ আপনার বাবার হার্টের সমস্যা অনেক দিন ধরে। আমি আপনার বাবাকে হার্টের অপরেশন করতে কিন্তু আপনার বাবা বলে যে মেয়েকে বিয়ে দিতে অনেক টাকা লাগবে তাই অপরেশন পরে করবে। তাই আমি তাকে সাবধান করে দেয় যেনো কখনো উত্তেজিত না হয় তাহলে তার অবস্থা খারাপ হবে। কিন্তু সে কথা মেনে চলেনি। তাই এখন তার অবস্থা খারাপ তাড়াতাড়ি অপরেশন না করলে হয়তো বাঁচবে না।

আহিকা ডাক্তারের কথা তার পায়ের নিচের মাটি জেনো সব আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছে।
আহিকা নিজেকে শক্ত করে ডাক্তারকে বলে….
আহিকাঃ অপরেশনের জন্য কতো টাকা লাগবে?
ডাক্তারঃ সব মিলে পাঁচ-ছয় লাখ।
আহিকা কথা শুনে ধব করে পাশের চেয়ারে বসে পড়ে।
আহিকা কান্না করছে আর ভাবছে এতো টাকা সে কোথায় পাবে? আজ এতো কিছু হবার পর কেও তাদের পাশে ও দাঁড়াবে না।
আহিকা আর কিছু ভাবতে পারছে না তার মাথাটা জেনো খুব ব্যাথা করছে।
আহিকা তার মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে সে নিরবে চোখের পানি ফেলছে। মায়ের দিকে তাকিয়ে আহিকার বুকের ভিতর জেনো মোচড় দিলো।

আহিকা তার মায়ের কাছে গিয়ে বলে…
আহিকাঃ মা তুমি এইখানে থাক আমি দেখছি টাকা কোথা থেকে আনতে পারি।
আহিকার মাঃ তুই টাকা কোথায় পাবি।

আহিকাঃ আমার বিয়ের গহনা গুলো এখন বিক্রি করে কিছু নিয়ে আসি আর বাকি টাকা দেখি কেও ধার দেই কিনা। মা তুমি থাক আমি আসতাছি।
আহিকা গহনা গুলো এক ব্যাগে ভরে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে রাস্তা দিয়ে হাটছে। তখনি হঠাৎ একটা লোক এসে আহিকার হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে দৌড় দেয়। আহিকা তার পিছনে পিছনে দৌড় দেয় তাকে ধরান জন্য কিন্তু ধরতে পারেনা।
আহিকা গহনা গুলো হারিয়ে রাস্তায় বসে কান্না করতে থাকে। কি করবে এখন, কোথায় যাবে আহিকা বুঝতে পারছে না। হঠাৎ আহিকা খেয়াল করে তার পাশে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।
আহিকা পাশে তাকিয়ে দেখে আহাম দাঁড়িয়ে। আহামকে দেখে আহিকার অনেক রাগ হয়।
আহিকা রাগে বলে….
আহিকাঃ আবার কেনো এসেছেন আর কি বাকি আছে? সব কিছুই তো শেষ করে দিছেন। আপনার কারনে আমার বাবার আজ এই অবস্থা। আমার বাবার কিছু হলে আমি আপনাকে ছারবো না।
আহামঃ আরে এতো রাগ করছো কেনো? আমি তো তোমাকে সাহায্য করতেই আসছি।
আহিকা আহামের কথা শুনে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে
বলে…..
আহিকাঃ সবকিছু নিজে শেষ করে এখন আবার সাহায্য করতে এসেছেন। বাহ্….। তা এখন কি আমাকে মেরে সাহায্য করতে এসেছেন।
আহামঃ আমি আমার সময় নষ্ট করার মুঠে নেই তাই সরাসরি বলছি। যা হয়েছে সব তোমার জন্যই হয়েছে মনে আছে সেই দিনের কথা। আজ সেই দিনের জন্যই তোমার এ অবস্থা।
আহিকাঃ মনে থাকবে না কেনো সবই মনে আছে তার জন্যই তো আপনার প্রতি এত ঘৃণা।
আহামঃ আমাকে একদম রাগাবে না বলছি। আমাকে রাগালে আর তোমার বাবাকে তোমার বাঁচতে হবে না।
আহিকাঃ মানে?
আহামঃ মানে তোমার বাবার অপারেশনের জন্য টাকা লাগবে যা তোমার কাছে নেই। আজকের পর কেউ তোমাকে টাকা দিবে বলে ও আমার মনে হচ্ছে না।

আহিকা জানে আহাম যা বলছে সব সত্যি বলছে।
আহাম আবার বলতে থাকে…
আহামঃ আমি তোমার বাবার চিকিৎসার জন্য টাকা দিবো সাথে আরো পাঁচ লাখ।
আহামের কথা শুনে আহিকা অবাক হয়ে তার দিকে তাকায়।
আহামঃ অবাক হবার কিছু নেই টাকার বিনিময়ে আমার কিছু চায় ।
আহিকাঃ মানে?
আহামঃ আমাকে বিয়ে করতে হবে তোমার।
আহিকা রাগে বলে….
আহিকাঃ আপনার মতো খারাপ মানুষকে বিয়ে করা থেকে মরে যাওয়া অনেক ভাল।
আহামঃ হাসালে আমাকে, বিয়ে না করলে তুমি মরবে না, মরবে তোমার বাবা,তোমার বাবা মারা গেলে ভাবো তোমার মায়ের কি হবে? তোমার মায়ের সামনে তখন দাঁড়াতে পারবে?

আহিকা কি করবে বুঝতে পারছে না। একদিকে তার পরিবার অন্যদিকে তার জীবন। সে জানে আহামকে বিয়ে করলে তার জীবন নরক হয়ে যাবে, অন্যদিকে না করলে তার বাবাকে বাঁচতে পাারবে না, কারণ আর কোনো উপায় ও নেই।
আহিকা ভাবে তার বাবা বেঁচে না থাকলে তার জীবনের কোনো দরকার নেই। তাই তার বাবার জীবনের জন্য নিজেকে নরকে ঠেলে দিলো।
আহিকাঃ আমি রাজি বিয়েতে। তবে একটা কথা আমাকে বিয়ে কেনো করছেন।
আহামঃ সময়ের সাথে সাথে বুঝে যাবে। চলো এখন হাসপাতালে যায়।

আহিকা আর আহাম হাসপাতালে যায়।
হাসপাতালে গিয়ে আহিকা দেখে একজন লোক আহামের কাছে আসে আর কিছু পেপার দেয়।আহাম পেপারে সাইন করে আহিকাকে দেয় আর বলে…
আহামঃ এখানে সাইন করে দাও।
আহিকাঃ কি এইটা?
আহামঃ আমাদের বিয়ের পেপার। এইটাই সাইন করার পর আমি টাকা দিবো।
আহিকা বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে সাইন করে দেয়। আহাম তারপর অপরেশনর জন্য টাকা জমা দিয়ে বাকি টাকা আহিকার হাতে দেয়। আহিকা টাকা গুলো নিয়ে বাবার কেবিনে যায় তখনি তাকে দেখে তার বাবা রেগে যায় আর বলে…
জামির সাহেবঃ এখানে কেনো এসেছিস,বের হয়ে যা আমার চোখের সামনে থেকে, আর কখনো আমার সামনে আসবি না। আমার মেয়ে মরে গেছে।
আহিকা বাবার উত্তেজিত হওয়া দেখে কান্না করতে করতে সেখান থেকে বের হয়ে যায়।

কয়েক ঘন্টা পর….
আহিকার বাবার অপারেশন হয়ে গেছে। সে এখন সুস্থ আছে তবে জ্ঞান ফিরেনি।
আহাম আহিকাকে বলে…
আহামঃ আমাদের এখন বাসায় যেতে হবে।
আহিকাঃ আমার মা- বাবাকে একা রেখে আমি এখন যেতে পারবো না।
আহামঃ আমি তোমাকে বিয়ে করেছি তার মানে আমি যা বলবো তাই করবে।
আহিকার আর কিছুই করার নেই কারন টাকার কাছে সে নিজেকে বেঁচে দিয়েছে।
আহিকা বাকি টাকা গুলো তার মাকে দিয়ে আহামের সাথে চলে আসে।

দুজনে গাড়িতে বসে আছে। আহিকা কান্না করছে তখনি আহাম আহিকাকে একটা জিনিস দেয়।
আহিকাঃ কি আছে এর ভেতর?
আহামঃ খুলে দেখো?
আহিকা খুলে অবাক। তার চুরি যাওয়া সব গহনা ভিতরে।
আহিকাঃ তারমানে আমাকে ফাঁসানোর জন্য এইসব করে ছিলেন।
আহাম তার দিকে তাকিয়ে শয়তানি একটা হাসি দেয়। যা দেখে আহিকার বুক কেঁপে ওঠে। না জানি তার জন্য কি অপেক্ষা করছে ওই বাড়িতে।
আহিকাদের গাড়ি একটা বাড়ির সামনে এসে থামে।
আহাম গাড়ি থেকে নেমে আহিকা কে নামতে বলে। আহিকা ভয়ে গাড়ি থেকে নামে। দুজনে বাসার ভিতরের দিকে যাচ্ছে আর আহিকার ততই ভয় বারছে না জানি তার জন্য কি অপেক্ষা করছে।
আহাম বাসার মেন দরজা খুলতে……

চলবে…..
#ভালবাসার_মেঘ_বৃষ্টি
#Avigya_Ayaat
[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here