ভালবাসার মেঘ বৃষ্টি পর্ব -০২

#ভালবাসার_মেঘ_বৃষ্টি
#Avigya_Ayaat
পর্বঃ২

আহিকাদের গাড়ি একটা বাড়ির সামনে এসে থামে।
আহাম গাড়ি থেকে নেমে আহিকা কে নামতে বলে। আহিকা ভয়ে গাড়ি থেকে নামে। দুজনে বাসার ভিতরের দিকে যাচ্ছে আর আহিকার ততই ভয় বারছে না জানি তার জন্য কি অপেক্ষা করছে।
আহাম বাসার মেন দরজা খুলতে অহিকা দেখে বাসার ভিতরটা বাহিরের থেকে ও বেশি সুন্দর।
আহিকা ভাবছে এ বাসায় কে কে আছে, তারাই বা তাকে দেখে কি বলবে, তার সাথে কেমন ব্যবহার করবে।
আহিকা নানান কথা ভাবছে এমন সময় আহাম বলে….
আহামঃ এতো না ভেবে ভিতরে আসো,এমনি এ বাড়িতে তোমার কপাল খারাপ।
অহিকা কথা গুলো শুনে চুপ হয়ে থাকে কারণ সে সব জেনেই এই আগুনে ঝাপ দিয়েছে।
আহিকা বাসার ভিতরে যায়। অনেক বড় বাড়িটা। সে চারদিকে তাকিয়ে দেখে বাসার ভিতর অনেক সুন্দর সুন্দর জিনিস। কিন্তু এতো বড় বাড়িতে কোনো মানুষ দেখতে পাচ্ছে না। আহিকা ভাবে হইতো এখন অনেক রাত তাই সবাই ঘুমাচ্ছে।
আহামঃ আমার পিছনে আসো।
এই বলে আহাম সিড়ি দিয়ে উপর তালায় যেতে থাকে। আহিকা ও তার পিছনে যেতে থাকে।
আহাম একটা রুমে যাই আহিকা ও ভয়ে ভয়ে সেই রুমে ঢুকে।
আহিকা রুমে ঢুকার সাথে সাথে আহাম রুমের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে দেয়।
আহিকা তা দেখে ভয়ে ভয়ে বলে….
আহিকাঃ দ….দরজা বন্ধ করলেন কেনো?
আহাম আহিকার দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে আর মুচকি হাসচ্ছে।
আহামের এমন কান্ড দেখে আহিকার ভয় আরো বেড়ে যায়।
আহিকা মনে মনে ভাবছে…
আহিকা ঃ আজ সত্যি সত্যি না জানি তার সর্বনাশ হয়ে যাবে। আল্লাহ আমাকে এই শয়তানটার হাত থেকে রক্ষা করো।
আহিকা এসব ভাবচ্ছে আর এক পা এক পা করে পিছনের দিকে যাচ্ছে । কিন্তু হঠাৎ করে আহাম তাকে ধরে ফেলে।
আহিকাঃ আ…আপনি আমার হাত ধরছেন কেনো? আমার হাত তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেন বলছি।

আহাম ঃ ১০ লাখ টাকা দিয়ে তোমাকে কি আমি আমার বাসায় মূর্তি বানিয়ে রাখার জন্য এনেছি।
আহিকাঃ সে দিন ক্যাম্পাসে তোর গালে সবার সামনে চড় না মেরে বুকে ছুড়ি মারার দরকার ছিলো।
আহাম আহিকার কথা শুনে তার গাল জোরে চেপে বলে….
আহামঃ আমার সাথে একদম তুই তুই করে কথা বলবি না।
আহিকাঃ তোর সাথে কথা বলার আমার কোনো ইচ্ছায় নেই।
আহাম রাগে আহিকাকে ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দেয় আর বলে….
আহামঃ আমার সাথে আর কখনো কন্ঠ উচু করে কথা বললে তোর অবস্থা খুব খারাপ হবে মনে রাখিস।
এই বলে আহাম রুম থেকে বের হয়ে যায়।
আহাম রুম থেকে বের হবার পর আহিকা ফ্লোর থেকে ওঠে তাড়াতাড়ি রুমের দরজা বন্ধ করে দেয় আর বিছানায় গিয়ে বসে। আহিকা বিছানায় বসে মনে মনে ভাবছে…..
আহিকাঃ আহাম আমি বুঝে গেছি তোর সামনে কখনো নিজেকে দূর্বল ভাবা যাবে না, আমাকে সবটা সময় সাহসী থাকতে হবে, তোর সাথে লড়তে হবে। আমি ও দেখতে চায় তুই কি করতে পারিস আর আমি কি করতে পারি। আমার সাথে যাযা করেছিস তার প্রতিশোধ আমি নিয়ে ছাড়বো।
এসব ভেবে তারপর বিছানায় ঘুমিয়ে পড়ে।

সকালে….
আহিকার ঘুম ভাঙ্গে কারো শব্দে। আহিকা ঘুম থেকে ওঠে ভাল করে বুঝার চেষ্টা করে যে কে ডাকছে।
আহিকা বুঝে যে একজন লোক তার রুমের দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে আর বলছে….
– আহাম বাবা দরজা খুলো, তোমাকে বড় সাহেব ডাকছে।
আহিকা বেশি কিছু না ভেবে দরজাটা খুলে দেয়।
আহিকা দরজার বাহিরে দেখে একজন মধ্যবয়স্ক লোক দাঁড়িয়ে।
লোকটি আহিকাকে দেখে চোখ বড় বড় করে সেখান থেকে তাড়াতাড়ি চলে যায়।
আহিকা কিছু বুঝতে পারে না তাই কিছু না ভেবে আবার রুমের ভিতর চলে আসে।
কিছু সময় পর আহিকা নিচে কারো জোরে চিল্লানোর শব্দ পাই। তাও আহিকা রুমেই বসে থাকে।
রুমের দরজা খুলা ছিলো হঠাৎ একজন মহিলা এসে আহিকাকে টেনে নিচে নিয়ে যায়।
হঠাৎ এমন হওয়ায় আহিকার বুঝতে একটু সময় লাগে।

আহিকা, আহাম দুজনে চুপ করে দাড়িয়ে আছে।
তাদের সামনে মধ্যবয়স্ক লোক রাগি মুখে দাঁড়িয়ে আছে তার পাশে সেই মহিলা আর দরজার পাশে যাকে দেখেছিলো আহিকা সেই লোক।
মধ্যবয়স্ক লোকটি রাগি কন্ঠে আহামকে বলে….
-তোমার খুব সাহস বেড়েছে, বাসার বাহিরে যাতা করো আবার এখন বাসার ভিতরে মেয়ে নিয়ে আসছো।
আহামঃ দাদু আমার কথাটা তো শুনো।
আাহামের কথায় আহিকা বুঝতে পারে ওই লোকটি আহামের দাদু।
আহামের দাদুঃ আমি তোমার কোন কথায় শুনতে চায় না।
আর আহিকার দিকে তাকিয়ে বলে…..
আহামের দাদুঃ এই মেয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেনো, আমার বাসা থেকে তাড়াতাড়ি বের হয়ে যাও।
আহিকা মনে সাহস নিয়ে আহামকে বলে…
আহিকাঃ বাসা থেকে বের হয়ে কোথায় যাবো তা আপনার দাদাকে বলতে বলেন।
আহামের দাদাঃ মানে?
আহিকাঃ মানে আহাম আামাকে বিয়ে করে এখানে নিয়ে আসছে।

আহামের দাদা আহামের দিকে তাকিয়ে বলে….
দাদাঃ আহাম এই মেয়ে কি সত্যি কথা বলছে?
আহামঃ হুমমম।
আহিকা আহামকে বলে…
আহিকাঃ শুধু হুমমম বললেন কেনো? আমাকে কেনো
বিয়ে করেছেন, কিভাবে আমার বিয়ে ভেঙ্গে, আমাকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করেছেন সব বলেন।
আহিকার কথা শুনে আহাম তার দিকে রাগি চোখ দিয়ে তাকায়।
আহিকা ঃ আরে রাগছেন কেনো? এতো কিছু করে বিয়ে করলেন আর এখন তা নিজের পরিবারের কাছে বলবেন না এইটা তো ঠিক না।
আহামের দাদুঃ আহাম কি বলছে এই মেয়ে?
আহিকাঃ আহাম কি বলবে আমি বলছি সব
এরপর আহিকা সব খুলে বলে।
আহিকার কথা শেষ হবার সাথে সাথে আাহামের গালে জোরে একটা চড় মারে তার দাদু।
আহাম গালে হাত দিয়ে দাদুর দিকে তাকিয়ে আছে।
আহামের দাদুঃ একটা মেয়ের সাথে এমন করেছিস আমার তো মন চাচ্ছে তোকে মেরে ফেলি। যা আমার চোখের সামনে থেকে দূরে যা।
আহাম আহিকার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।
আহামের দাদু আহিকাকে বলে….
দাদুঃ তোমার নাম কি?
আহিকা ঃ আমার নাম আহিকা।
দাদুঃ অনেক সুন্দর নাম। তুমি রুমে যাও আমি তোমার জন্য খাবার আর কাপড় পাঠায় দিচ্ছি।
পাশে থাকা মহিলার দিকে তাকিয়ে বলে আহামের দাদু বলে…
দাদুঃ আহামের খালা আহিকার জন্য তোমার একটা শাড়ি দিয়ে আসো রুমে।
এরপর আহামের দাদু নিজের রুমে চলে যায়। আহিকা ও সেই আগের রুমে চলে আসে।
কিছু সময় পর…
দরজায় একজন লোক এসে আহিকাকে ডাকছে।
আহিকা দরজা খুলে দেখে সেই আগের লোকটি।
লোকটি আহিকাকে বলে…
– এগুলো তোমার খাবার। আমি আহামকে বাবা বলে ডাকি, তোমাকে কি মামুনি বলে ডাকতে পারবো?
আহিকাঃ হুমম।
– আমার নাম কবির। আহাম কাকা বলে ডাকে।
আহিকাঃ আমি ও কাকা বলবো।
– আচ্ছা, এখন খাবার গুলো খেয়ে নাও। কিছু লাগলে আমাকে ডাক দিও।
আহিকাঃ আচ্ছা কাকা।
এরপর খাবার গুলো দিয়ে সে চলে যায়। আহিকার খুব খিদে পেয়েছিল তাই তাড়াতাড়ি সব খেয়ে নেয়।
খাবার খেয়ে বসে আছে এমন সময় আহামের খালা আসে।
আহামের খালা ঃ এই যে নবাবজাদী এসেই আমাদের আহামকে মার খাওয়ালে। যে তেজ দেখা যাচ্ছে তাতে সত্যিই দুশ্চরিএা নাকি কে জানে?
আহিকাঃ মুখ সামলে কথা বলবেন। এতোই যদি আহামের প্রতি টান তাহলে তাকে সুশিক্ষা দেন নাই কেনো?
আহামের খালাঃ বাবারে… কি ফাজিল মেয়ে….
এইযে তোমার শাড়ি।
আহিকা শাড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে একটা পুড়নো শাড়ি।
আহিকাঃ এই বাড়ির বউরা কি পুরনো শাড়ি পরে।
আহামের খালাঃ যা দিয়েছি চুপচাপ পরে নাও।
আহিকাঃ আমি চুপ থাকতে পারবো না, আমি এখনি দাদুর কাছে যাচ্ছি।
আহামের খালাঃ না…….,আমি ভাল শাড়ি নিজেকে আসছি।
এরপর আহামের খালা একটা ভাল শাড়ি দিয়ে যায়।
আহিকা ফ্রেশ হয়ে শাড়ি পরে বসে তার বাবা-মার কথা ভাবছে তখনি পিছন থেকে আহিকার নাম ধরে কেও ডাক দেয় আহিকা পিছনে ফিরে দেখে আহামের দাদু।
আহিকাঃ কিছু কি বলবেন দাদু?

দাদুঃ আমি জানি তোমার সাথে আহাম খারাপ করেছে। তাই তুমি এখান থেকে চলে যাও। আমি তোমাকে সাহায্য করবো। আমি তোমার সাথে আরো অন্যয় হোক আমি চাই না।
আহিকাঃ চলে তো আমি যাবো তার আগে আমার সাথে অন্যায়ের প্রতিশোধ আমি নিয়ে তারপর আমি যাবো। আমাকে বিয়ে করে এনেছিলো নরকের আগুনে জ্বালাতে কিন্তু সেই আগুনে সে নিজেই জ্বলবে।আমার শুধু আপনার সাহায্য চাই।
আহামের দাদুঃ আমি তোমার পাশে আছি কারন একটা মেয়ের সাথে অন্যয় আমি কখনো মেনে নিবো না।
আহিকাঃ তাহলে কাল থেকে দেখবেন আমার আসল খেলা।
পরের দিন…..
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here