ভালবেসে রাখব কাছে পর্ব -২১+২২+২৩

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ২১

দুপুর ২ টা বেজে ৭ মিনিট,আপুর সাথে বসে বসে অনলাইনে কিছু ড্রেস দেখছি।আপুর গায়ে হলুদ আর বিয়েতে পড়ার জন্য।সেদিন ত কিছুই কিনতে পারলাম না কাব্য ভাইয়ের জন্য তাই এখন শপিংটা অনলাইনেই করব ভাবছি।
আর হে বাবা বিয়েটা মেনে নিয়েছে।তখন বাবা বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে হঠাৎ করেই বলে উঠে বিয়েটা মেনে নিবে।আর বাবা আজ মেঘ ভাইয়াদের বাড়িতে গেছিল,সাদাফ ভাইয়াকে সাথে নিয়ে।আর মামা,মামুর সাথে কথা বলে ওদের আবারও বিয়ে দিবে ধুমধাম করে ঠিক করে এসেছে।আর সেটা সামনের সপ্তাহেই,আর ততদিন আপু আমাদের বাড়িতে থাকবে।কথাটা শুনে সবাই খুশিতে আটখানা,আমি ত আপুকে জড়িয়ে ধরে রীতিমতো লাফালাফি শুরু করে দিয়েছিলাম।অবশেষে আপুর জীবনটা স্বাভাবিক হল আপুর ভালবাসা পূর্নতা পাবে,ভাবতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।
আর এই সবটা সম্ভব হয়েছে সাদাফ ভাইয়ার জন্য,কিন্তু তাকে ত ধন্যবাদই জানানো হয় নি।কথাটা ভেবেই আপুকে বলে তার রুম থেকে দৌড়ে এসে পড়লাম আমার রুমে,আর সাদাফ ভাইয়াকে ফোন লাগালাম।কিন্তু ভাইয়া ধরল না,তাই আমি ভাবলাম উনার বাড়িতে যাব গিয়ে সরাসরিই ধন্যবাদ জানাব।তাই ঝটপট নেভি ব্লু কালারের একটা গাউন পড়ে,মাথায় হিজাব বেঁধে,সাইডে একটা উর্না ফেলে দিলাম।তারপর হালকা একটু লিপস্টিক আর চোখে কাজল দিয়ে তৈরি হয়ে বাবাকে বলে বেরিয়ে পড়লাম।উদ্দেশ্য এখন সাদাফ ভাইয়ার বাড়িতে যাওয়া।

আধা ঘন্টা পর এসে পৌঁছালাম সাদাফ ভাইয়ার বাড়িতে,আর গেট দিয়ে ঢুকার সময় দেখি আন্টি বাগানে দাঁড়িয়ে কার সঙ্গে যেন রেগে কথা বলছে ফোনে।আমি আন্টির কাছে গিয়ে উনাকে পিছন থেকে চোখে ধরলাম,ছোট থেকেই এ অভ্যাস আমার।আন্টিকে দেখলেই এভাবে পিছন থেকে চোখে ধরব।আন্টি এবার ফোনটা রেখে আমার হাতের উপর হাত রেখে কিছুটা রেগে বলে উঠে,,,

“কে এভাবে ধরেছে আমাকে?”

“তোমাকে এভাবে আর কে ধরতে পারে হুম!”

আমার এই কথাটা শুনে আচমকা আন্টির চেহারা থেকে রাগটা বিলীন হয়ে মুখে হাসি ফুটে উঠে।

“আরে আমি কী সত্যি শুনছি নাকি এটা,আমার সাবিহা মামনি এসেছে।”

আমি এবার আন্টির চোখ থেকে হাত সরিয়ে অভিমানি স্বরে বলে উঠি।

“হুম হয়েছে হয়েছে আর মামনি মামনি বলতে হবে না,তুমি ত আমাকে চিনতেই পারলে না।”

“আমার মামনিটার অভিমান হয়েছে বুঝি,ওলেলে আমার কিউট মামনিটার অভিমান হয়েছে!”(গাল টেনে)

“সরো একদম কথা বলবে না আমার সাথে।”

“সরি মামনি এমনটা আর কখনও হবে না,আসলে ফোনে কথা বলছিলাম ত তাই বুঝতে পারি নি।”

“হুম ঠিক আছে,ঠিক আছে কোন সমস্যা নেই,এবারের মত ছেড়ে দিলাম।কিন্তু তুমি রেগে ওভাবে কার সাথে কথা বলছিলে?”

আমার কথা শুনে আন্টির চেহারার রং আবারও পাল্টে যায়।

“কোন সমস্যা হয়েছে?”

“আরে না না,কোন সমস্যা হয় নি।”

“আচ্ছা আন্টি পারসনাল কোন বিষয় হলে বলতে হবে না।”

“আরে না তেমন কিছুই নয়,তুই এসব নিয়ে ভাবিস না কিছু হয় নি।তুই বরং ভিতরে যা আমি আসছি ফোনে কথা বলে।”

“আচ্ছা আন্টি সাদাফ ভাইয়া কী বাড়িতে আছে?”

“হে হে ঐ পাগলটা ভিতরেই আছে,তুই যা।”

“আচ্ছা আন্টি।”

তারপর আমি ভিতরে চলে এলাম,আর ঐদিকে আন্টির হঠাৎ করেই কিছু একটা মনে পড়ে যায়।আর দৌড়ে উনিও ভিতরে আসার জন্য দৌড় দেয়।

_______________________________________

সাদাফ ভাইয়াকে খুঁজতে খুঁজতে উনার ঘরের সামনে চলে এলাম,আর যখনি ঘরের ভিতরে প্রবেশ করব তখন আমি যা দেখি তার জন্য মোটেও প্রস্তত ছিলাম না।আমার দৃষ্টি স্থীর হয়ে আসে একটা জায়গায়, নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।আমি দরজার সামনেই ঠায় দাড়িয়ে আছি,সাদাফ ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে আছে একটা মেয়ে।মেয়েটার গায়ে খুব ছোট একটা পোশাক যেটা দেখে আমি নিজেই লজ্জায় পড়ে যাচ্ছি।ভিতরে যাব নাকি চলে যাব সেটা ভাবতে ভাবতেই সাদাফ ভাইয়ের চোখ পড়ে আমার উপর।আর উনি সেটা দেখে গাবড়ে গিয়ে মেয়েটাকে একটা ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়।আমি সেটা দেখে বেরিয়ে আসতে নিলেই সাদাফ ভাই আমার সামনে এসে কাঁধে হাত দিয়ে অস্থির হয়ে বলে উঠে,,,

“সাবিহা তুমি যা দেখেছো তা সত্যি নয়,তুমি আমাকে ভুল বুঝো না।আমার পুরো কথাটা শুনো তুমি,অর সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।আমি তোমাকে ভালবাসি সাবিহা,তুমি আমার সব।তুমি প্লিজ আমাকে ভুল বুঝো না,তুমি ভুল বুঝলে আমি মরে যাব।তুমি ছাড়া আমি অন্য কোন মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকানো ত দূরে থাক ভাবতেই পারি না।তুমি আমাকে,,,

কথাগুলো এক নিশ্বাসে চলেছে উনি,আমি এবার উনাকে হাত দিয়ে থামিয়ে দেই।

“গতরাতে মাত্র বললাম ভালবাসতে চাই আপনাকে,আর আজকেই আপনার নিজের নিকৃষ্টতম রূপ দেখিয়ে দিলেন।কাব্য ভাইয়ের থেকেও জঘন্য মানুষ আপনি।কাব্য ভাই যা করে তা সরাসরি করে কিন্তু আপনি ত মিচকা শয়তান।আপনার প্রতি ঘৃনা হচ্ছে,আর কখনও আমার সামনে আসবেন না আপনি।”

সাবিহার কথাশুনে সাদাফের চোখের কোনে জল জমা হয়,চোখের পানিগুলো টলমল করছে।যেকোন সময় তা গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়বে।সাদাফের মনে ঝড় বয়ে যাচ্ছে,সে যে ভয়টা পেয়েছে সেটা সত্যি হল।সাবিহা তাকে ভুল বুঝেছে,এবার কী সাবিহা তার থেকে দূরে সরে যাবে।তবে সাদাফের কী হবে?এমন অনেক কথা নিজ মনে ভেবে চলেছে সাদাফ।

আমি সাদাফ ভাইয়ের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে এবার মেয়েটার সামনে গিয়ে দাঁড়াই মেয়েটার মুখে কেমন একটা তৃপ্তির হাসি।আমি বাঁকা হেঁসে মেয়েটার গায়ে আমার উর্নাটা পেঁচিয়ে দিতে দিতে সাদাফ ভাইয়ের দিকে ভ্রু কুঁচকে বলে উঠি।

“কী ভেবেছেন এমনটাই বলব আমি!”

আমার কথাশুনে সাদাফ ভাই চোখে জল নিয়ে অবাক চোখে তাকায় আমার দিকে।

“এত অবাক হওয়ার কী আছে!এমনটা ভাবাই স্বাভাবিক নয় কী!আপনারা যেভাবে ছিলেন তাতে ত এসব বলাই স্বাভাবিক।কিন্তু আমি আপনাকে বিশ্বাস করি,আপনার ভালবাসার প্রতি আমার বিশ্বাস আছে।তাই চোখের দেখাটাকে বিশ্বাস করলাম না,আমি জানি আপনি কেমন।আর এই আপুটাও যে কেমন সেটাও বুঝা হয়ে গেছে আমার।উনি যেরকম পোশাক পড়েছে তাতে করে যে কেউ বলতে পারবে উনি কেমন?”

আমার কথাশুনে সাদাফ ভাইয়ের মুখে হাসি ফুটে উঠে,আর উনি হাসি মুখে কিছু বলতে নিলেই।আমি উনাকে হাত দিয়ে থামিয়ে রেগে বলে উঠি,,,

“অবিশ্বাস করি নি ঠিকই কিন্তু রাগ হচ্ছে খুব আপনার উপর।একটা মেয়ে আপনাকে এভাবে জড়িয়ে ধরেছে আর আপনি তাকে কিছুই বললেন না।আমি আসার পর যেভাবে দূরে ঠেলেছেন সে কাজটা আগে করতে পারলেন না!

সাদাফ ভাই কিছু বলবে তার আগেই আমি বলে উঠি,,,

“আপনার সাথে পরে কথা বলব আগে বলুন এই গরিলা মার্কা মহিলা কে?”

এবার মেয়েটা রেগে ফোঁস করে উঠে।

“এই মেয়ে তুই কী বললি আমাকে?আমি গরিলা মার্কা মহিলা?আমি?”

“এখানে আপনি আর আমি ছাড়া কোন মেয়েকে ত দেখছি না যাকে মহিলা বলব।আর আমি নিজেকে নিজে ত এই কথাটা অবশ্যই বলব না তাই না!”

“How dare you!তোর সাহস হল কী করে আমার সাথে এভাবে কথা বলার?তুই জানিস আমি কে?”

“এই গলা নিচে,আরেকটা উঁচু আওয়াজে কথা বললে গলা কেটে হাতে ধরিয়ে দিব।আর আপনি নিজেই ত জানেন না আপনি কে ত আমি জানব কীভাবে?”

আমার কথাশুনে সাদাফ ভাই মুচকি হাসেঁ আর মেয়েটা রাগে ফেটে যাচ্ছে।আমি কিছু বলব তখন সেখানে উপস্থিত হয় সাদাফ ভাইয়ার মা,উনাকে দেখে আমি বলে উঠি।

“আন্টি এই মেয়েটা কে?”

“মামনি শান্ত হ,আমি তকে সব বলছি।তুই আমার সাথে আয়,মাথা ঠান্ডা কর।”

“আন্টি আমার মাথা ঠান্ডাই আছে,আর তুমি এখন এখানেই বলবে এই মেয়েটা কে?”

“এটা সাদাফের ক্লাসমেট লিজা।”

“ওহহো চিনতে পেরেছি ত,এই লিজাই ত সাদাফ ভাইয়ার সাথে আমাকে ছোট বেলায় দেখলেই মারার জন্য তেড়ে আসত তাই না!এখন বুঝলাম ব্যাথাটা কোন জায়গায়।”

“হ্যাঁ আমি সেই,যে তকে শয্য করতে পারত না একদমই।তকে মেরে ফেলতেও আমার হাত কাঁপবে না কারন তুই আমার থেকে সাদাফকে কেড়ে নিয়েছিস।তোর জন্য সাদাফ আমাকে সবসময় এড়িয়ে চলেছে,তোর জন্য সাদাফ আমার ভালবাসার,,,

ঠাস করে একটা আওয়াজ হওয়াতে লিজা চুপ করে যায়।লিজা আর কিছু বলার আগেই ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেই আমি,লিজার না সাদাফ ভাইয়ের।সাদাফ ভাই গালে হাত দিয়ে বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে,আন্টি আর লিজা দুজনেই খুব অবাক।আমি এবার রেগে বলে উঠি,,,

” কী ভাবছেন থাপ্পড়টা গরিলা মার্কা মহিলাকে না মেরে আপনাকে কেন মারলাম?আপনাকেই থাপ্পড়টা মারা দরকার আপনারই সামনে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে আর আপনি চুপচাপ শুনে চলেছেন!আপনার ত উচিত ছিল এই মহিলার গালে একটা দেয়ার কিন্তু আপনি?”

“এই মেয়ে তুই বারবার কাকে গরিলা বলে যাচ্ছিস আর সাদাফের গালে থাপ্পড় দিয়েছিস কেন?তকে ত আমি,,,”

কথাটা শুনে আরেকটা থাপ্পড় বসিয়ে দেই সাদাফ ভাইয়ের আরেক গালে।লিজা এবার কিছুটা ভয় পেয়ে যায় আর চুপ করে দাঁড়িয়ে পড়ে।আমি সেটা দেখে সাদাফ ভাইকে বলে উঠি,,,

“আমাকে এতগুলো কথা বলল আর আপনি চুপ করে শুনছেন?এসেছিলাম ধন্যবাদ জানাতে কিন্তু এখন ধন্যবাদ দেয়ার বদলে আপনাকে জ্যান্ত চিবিয়ে খেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু এখন সেটা করাও সম্ভব নয় কারন এই গরিলা মার্কা মহিলার ছোয়া লেগে আছে আপনার গায়ে।”

কথাটা বলেই লিজাকে টেনে হিঁচড়ে ঘর থেকে বের করে নিয়ে এলাম।এই লিজা ছোট বেলায় আমাকে অকারনে মারত তাই আপু বলে ডাকি না।এই মেয়েকে এখানে রাখা মানেই আবার কখন কী ঝামেলা করে ঠিক নেই তাই বের করে দিচ্ছি।এটা ত আমারই শ্বশুর বাড়ি তাই একে বের করার জন্য আমার ২য় বার ভাবতে হবে না।আর এই গরিলা মার্কা মেয়ে ছোটার চেষ্টা করে চলেছে কিন্তু ছুটতে পারছে না।

অন্যদিকে সাদাফ গালে হাত দিয়ে অবাক চোখে সাবিহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।সাদাফের মার যেন চোখ বেরিয়ে আসবে এমন অবস্থা।কিন্তু পরক্ষনেই তিনি হাসিতে ফেটে পড়ে,সেটা দেখে সাদাফ ভ্রু কুঁচকে বলে উঠে,,,

“এভাবে হাসছো কেন?”

“বাপরে বাপ আমার মামনিটা পুরাই আগুন,উফফ এমন একটা মেয়ে যে আমার বাড়ির বউ ভাবতেই মজা লাগছে।আমার পাগল পোলার জন্য উপযুক্ত জীবনসঙ্গী।”

কথাগুলো হেঁসে বলতে বলতে উনি রুম থেকে বেরিয়ে যায় আর সাদাফ মুচকি হেসে বলে উঠে,,,

“হায় ম্যা মার জাওয়া😍,,,আবারও প্রেমে পড়ে গেলাম তোমার।তোমার মত মেয়েকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়ে ধন্য আমি।”

পরক্ষনেই সাদাফের মুখের হাসি গায়েব হয়ে চিন্তার ছাপ ফুটে উঠে।

“সবই ত ঠিক আছে কিন্তু যেভাবে রেগে বেরিয়ে গেলো তাতে ত রাগ ভাঙ্গানোর জন্য আমাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে।”

#চলবে…

(খেলতাম না😐,,,,কত কষ্ট করে অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তি নিয়ে আসলাম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটাব বলে কিন্তু এই সাবিহা সব কিছুতে পানি ডাইল্লা দিলো😤)#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ২২

অনেকদিন পর আজ স্কুলে যাব,তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে একদম রেডি হয়েই নিচে নামলাম।বাবা আর আপু ডাইনিং টেবিলে বসে আছে,মা খাবার বেড়ে দিচ্ছে।আমি হাসিমুখে বাবার পাশের চেয়ারটা টেনে বসে পড়ি,বাবা আমাকে দেখেও না দেখার ভান করে বসে রয়েছে।বাবা গতকাল আপুদের বিয়েটা মেনে নিলেও আমার উপর অভিমান করে আছে।তাই বাবা কাল থেকে একটা কথাও বলে নি আমার সাথে।আমি এবার মুখটা ছোট করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াই।তখন আপু বলে উঠে,,,

“এই কই যাস তুই না খেয়ে?খেয়ে যা।”

“আপু আমি খাব না,স্কুলে যেতে দেরি হয়ে যাচ্ছে আমি গেলাম।”

“হেনা তোমার মেয়েকে বলে দাও না খেয়ে স্কুলে যাওয়া যাবে না।”

বাবার কথাশুনে আমার খুব হাসি পাচ্ছে কিন্তু আপাতত হাসি কন্ট্রোল করে বাবার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে মাকে বললাম।

“মা বলে দাও,তোমার মেয়েকে কেউ খাইয়ে দিলে খাবে,নয়ত না খেয়ে চলে যাবে।”

“আল্লাহ তায়া’লা আমাদের দুটো হাত দিয়েছে কাজে লাগানোর জন্য,তাই হাতদুটো কাজে লাগাতে শেখাও তোমার মেয়েকে।”

“হাতদুটো আপাতত পকেটে আছে তাই কাজে লাগাতে পারছি না,ত মা বলে দাও খাইয়ে দিতে নয়ত খাব না।”

এবার মা আমার কান টেনে ধরে বলে উঠে,,,

“দুই বাপ,বেটি মিলে কী শুরু করেছিস হুম!দুজন সামনা সামনি রয়েছিস তারপরও আমার মাধ্যমে কথা চালান করছিস কেন?”

“মা লাগছে ছাড়ো ত,আর আমার কী দোষ বলো ত সব ত আমার হিটলার বাবার,,,

বাকিটা না বলে জিভ কামড়ে ধরি,আর ভয়ে ভয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে দেখি বাবা গম্ভীর মুখ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আমি সেটা দেখে বোকার মত হাসার চেষ্টা করি।আর মার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দেই এক দৌড়,আর এক দৌড়ে একদম গাড়িতে গিয়ে বসে পড়লাম।বাপরে আজ জোড় বাঁচা বেঁচে গেছি,কার সামনে কী বলে ফেললাম উফফ!সাবিহা তুই দিনদিন বাচাঁল হয়ে যাচ্ছিস নিজেকে সামলা সাবিহা।নয়ত কবে যেন এত কথা বলার জন্য মাইর খাস।নিজের মনে এসব বকবক করে চললাম স্কুলে যাওয়ার উদ্দেশ্য।

____________________________________

হঠাৎ করেই গাড়িটা থেমে যায় মাঝ রাস্তায়,আমি সেটা দেখে ড্রাইভার চাচাকে জিজ্ঞেস করি।

“গাড়ি থামালেন কেন চাচা?”

“সামনে ত সাদাফ স্যার দাঁড়ায়ে আছে গাড়ি লইয়া,এমন ভাবে রাখছে কোনদিকেই যাইতে পারমু না।”

আমি চাচার কথাশুনে উঁকি দিয়ে দেখি সাদাফ ভাই ফোন হাতে নিয়ে ড্রাইভিং সিটে দরজা খুলে বসে আছে।এক পা নিচে আরেক পা গাড়িতে দিয়ে,
ভাবখানা এমন যেন কোন সিনেমার হিরো।উনার পাশেই নিলয় ভাইয়া বসে আছে,সাদাফ ভাইয়ের দৃষ্টি আমার গাড়িতেই আবদ্ধ।উনি এবার গাড়ি থেকে নেমে আমার দিকে এগিয়ে আসে।কিন্তু উনার সাথে এখন কথা বলতে চাইছি না আমি।এখন কথা বললেই ঝামেলা হবে,গতকালকের ঘটনা এখনও ভুলি নি আমি।রাগটা আগের মতই আছে,এখন আসছে হয়ত রাগ ভাঙ্গাতে কিন্তু সেটা ত হতে দেয়া যায় না।কয়দিন শাস্তি পাক কালকের ঘটনার জন্য।তাই ড্রাইভার চাচাকে বললাম গাড়ি পিছনে নিয়ে অন্য রাস্তায় যেতে।আমার কথামত চাচা গাড়ি স্টার্ট দেয় আর পিছনে ঘুরাতে নিলেই সামনে এসে দাঁড়ায় সাদাফ ভাই।আমার সেটা দেখে রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে,কিন্তু তারপরও রাগটা কন্ট্রোল করে গাড়ি থেকে নেমে উনার সামনে দাঁড়ালাম।আর হাত গুজে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে উঠলাম,,,

“কী চাই?গাড়ি থামানোর কী মানে?”

“তোমাকে চাই।”

“রাস্তাঘাটে রোমিওগিরি কম কইরেন,নয়ত পাবলিক দিয়ে মাইর খাওয়াতে আমার বেশি সময় লাগবে না।”

“মাইর খেতেও রাজি আছি,কিন্তু তোমার এইরকম অবহেলা মানতে পারছি না।কাল থেকে একের পর এক কল দিয়েই যাচ্ছি কলই ধরছো না।তোমার বাড়িতে গেলাম দেখাও করলা না,দরজা বন্ধ করে বসে ছিলা।এসবে খুব পুড়ছি আমি,কালকের পুরো ঘটনাটা ত আমাকে বলতে দাও।আমার কথা না শুনেই এভাবে শাস্তি দিচ্ছো আমাকে।”

“এক্সকিউজ মি!আপনাকে আমি কী অবিশ্বাস করেছি?”

“না সেটা করো নি,কিন্তু,,,

” যতটুকু জিজ্ঞেস করছি ততটুকু বলবেন এর বেশি কথা বলবেন না।আমি আপনাকে অবিশ্বাস করি নি আমি জাস্ট আপনার ভুলটা আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছি।আপনাকে একটা মেয়ে জড়িয়ে ধরে ছিল আপনি তাকে সাথে সাথে সরিয়ে না দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন।আমাকে দেখার পর সরিয়েছেন,এই কাজটা কী আপনার আগে করা উচিত ছিল না?আবার আপনারই সামনে একটা মেয়ে আমার মৃত্যু কামনা করছিল আর আপনি তাকে কিছুই বললেন না।তার জন্য কী আমার রাগ করা জায়েজ নয়?”

“সাবিহা আমি,,,

” চুপ একদম চুপ,কোন কথা নয়।পথ ছাড়ুন আমার লেট হচ্ছে।”

“না আগে তুমি আমার কথা শুনবে তারপর যাবে।”

“আপনার কথাতে চলবে নাকি?”

“দরকার পড়লে আমার কথাতেই চলবে,কারন সে অধিকার আমার আছে।”

“আপনার সাথে কথা বলে লাভ নেই,আপনি কথা শোনার মানুষ নন।”

কথাটা বলেই গাড়িতে উঠে বসলাম,আর চাচাকে ড্রাইভ করতে বললে উনিও তাই করে কিন্তু গাড়ি চলছে না।সেটা দেখে সাদাফ ভাই হাসতে হাসতে বলে উঠে,,,

“গাড়ি কী চাকা ছাড়া চলবে নাকি!আর চাকা কী হাওয়া ছাড়া চলে নাকি!”

কথাটা বলেই উনি আবারও হাসিতে মেতে উঠে।আমি আবারও গাড়ি থেকে নেমে চাকা চেক করে দেখি উনার কথাই সত্যি।আর কাজটা যে উনিই করেছে সেটা বুঝতেও বাকি নেই আমার।অসম্ভব রকম রাগ লাগছে,তাই রেগে উনার কলার টেনে ধরে বলে উঠলাম।

“এটা কী করলেন?এসব করে কী প্রমান করতে চাইছেন আপনি?”

“তোমার সাথে কথা বলতে চাইছি,সেদিনের ঘটা সবটা তোমাকে বলতে চাইছি।”

“আমি শুনতে চাই না,তাই ভালোয় ভালোয় পথ ছাড়ুন।”

উনি একটু সাইড হয়ে বলে উঠে,,,

“তোমাকে ত শুনতে হবেই আর তুমি কই যাবে যাও কে আটকে রেখেছে!আমি ত আটকাই নি।”

উনার কথাশুনে নিজের মাথার চুল নিজেরই ছিড়তে ইচ্ছে করছে।তাই উনাকে আর কিছু না বলে গাড়ি থেকে ব্যাগটা নিয়ে হনহনিয়ে হেঁটে চলেছি।আর সাদাফ ভাইয়ের গুষ্টি উদ্ধার করছি বকে।কিন্তু বেশিক্ষণ বকতে পারলাম না পাশ থেকে কেউ বলে উঠে।

“আমার বউটা রূপে রূপবতী,আর রাগে লঙ্কাবতি।কিন্তু যেমনই হোক আমারই ত বউ তাই না।আমার লক্ষী বউটা,রাগটা একটু কমাও না।”

আমি সামনের থেকে চোখ সরিয়ে উনার দিকে একপলক তাকিয়ে মুচকি হেঁসে বলে উঠি,,,

“চোখটা একটু বন্ধ করুন।”

উনি অবাক হয়ে বলে উঠে,,,

“কেনো?কেনো?কেনো?”

“আগে করুন না তারপর দেখতেই পাবেন।”

“ঠিক আছে করছি কিন্তু কোন দুষ্টুমি করা যাবে না।”

কথাটা বলেই উনি চোখ বন্ধ করে ফেলেন,আর আমি সেই সুযোগে দেই এক দৌড়।আর একটা চলন্ত বাসে উঠে পড়ি,বাসে উঠেই হাসিতে মেতে উঠি আমি।কিন্তু হঠাৎ করেই মনে হলো আমি হাওয়ায় ভাসছি,পড়ে যাব এখনি।তাই চোখমুখ খিচে বন্ধ করে ফেলি,তখন কেউ বলে উঠে।

“মিসেস সাদাফ কী ভেবেছেন আমাকে বোকা বানিয়ে এভাবে পালিয়ে যাবেন হুম?কিন্তু সেটা ত হবার নয়,যতদিন আমি আছি ততদিন আমার থেকে পালাতে পারবে না।তাই পালানোর চেষ্টা করেও লাভ নেই।”

সাদাফ ভাইয়ের গলা শুনে আমি চোখ খুলে দেখি উনি আমাকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আর বাসের সবাই আমাদের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে,কিন্তু উনাকে দেখো কেমন করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।যেনো আশেপাশের লোকজনের তাকানোতে উনার কিছুই যায় আসে না।আমি এবার আস্তে করে বলে উঠি,,,

“নামান আমাকে,সবাই দেখছে।”

“উুহু নামাবো না,যে দেখার দেখুক তাতে আমার কী?আমি ত অন্য কোন মেয়েকে কোলে নেই নি,আমার একমাত্র বউকে কোলে নিয়েছি।”

“প্লিজ এমন করবেন না,নামান আমাকে।আমার লজ্জা করছে।”

“ইসসস্ লজ্জায় একদম লাল হয়ে গেছে গো,ইচ্ছে করছে টুপ করে একটা চুমু দিয়ে দিতে।”

আমি উনার কথা শুনে চমকে তাকাই উনার দিকে,আর উনি চোখ টিপ মারে।উনার লক্ষ্মণ আমার ভালো লাগছে না।

“প্লিজ এমন করবেন না,এটা পাবলিক প্লেস।ছোট বড় অনেকে আছে এভাবে থাকাটা মোটেও শোভনীয় লাগছে না,নামান আমাকে।”

উনি একটু ভেবে ফট করে বলে উঠে,,,

“ওকে ছাড়ব কিন্তু আমি ত কোন কাজ এমনি এমনি,,,

” এমনি এমনি করেন না আর আপনার একটা শর্ত আছে তাই ত!মেনে নিলাম যা বলবেন সেটাই করব কিন্তু এখন নামান আমাকে।”

“ভেবে বলছো ত?”

আমি দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠি,,,

“হ রে ভাই ভেবেই বলছি,এবার নামা আমারে।”

উনি আমার কথা শুনে বাঁকা হেঁসে কোল থেকে নামায়,আমি আর কোন দিকে না তাকিয়ে বাস থামাতে বলে তাড়াতাড়ি নেমে যাই।আমার পিছন পিছন উনিও নেমে যায়,আর আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে লজ্জা পাওয়ার মত ভাব নিয়ে বলে উঠে,,,

“বউ ও বউ,,,আমার না প্রেম প্রেম পাচ্ছে।”

উনার কথাশুনে আমি ধামধুম কয়টা কিল বসিয়ে দেই উনার পিঠে।আর উনি খিলখিলিয়ে হেঁসে চলেছে।শালা বজ্জাত কাজটা করল কী আজ!এতগুলো মানুষের সামনে,ছিঃ ছিঃ ছিঃ।

______________________________________

দেয়ালের সাথে দুই হাত চেপে ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছে কাব্য ভাই আমাকে।উনি আমাকে বারবার বলে চলেছে আমার সাথে কথা বলতে চায় উনি।কিন্তু আমি সে কথা না নিয়ে প্রতিনিয়ত ছোটার চেষ্টা করে চলেছি উনার থেকে কিন্তু উনি ছাড়ছে না।

#চলবে…

(আগামীকাল গল্প দিব না,পরসু থেকে রেগুলার গল্প দিব ইনশাআল্লাহ।)#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ২৩+২৪

“আরে এভাবে টেনে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন,ছাড়ুন আমাকে।”

সাদাফ ভাই আমার হাত ধরে টেনে রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।আমি আমার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করেই চলেছি কিন্তু উনি ছাড়ছেও না কিছু বলছেও না।কিছুক্ষণ পর উনি আমাকে একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে আসে।রেস্টুরেন্টে এসে দেখি নিলয় ভাইয়া বসে আছে,আমি ভ্রু কুঁচকে সাদাফ ভাইয়ার দিকে তাকাই।সেটা দেখে সাদাফ ভাই ইশারায় বলে বসো,আমিও বসে পড়ি।আমি এবার ভদ্রতার খাতিরে নিলয় ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করি।

“কেমন আছেন ভাইয়া?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।তুমি কেমন আছো সাবিহা?”

“আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি।”

“নিলয় তুই গিয়ে ওর্ডার দিয়ে আয়।”

“কেন?ওয়েটার ত এখানেই আসবে ওর্ডার নিতে।উনি শুধু শুধু ওখানে কেন যাবে কষ্ট করে?”

“তুমি বড্ড বেশি কথা বলছো,চুপ করে বসো।”

নিলয় ভাইয়ার সামনে আমাকে এভাবে ধমক দিয়ে কথা বলাতে আমি গাল ফুলিয়ে চুপ করে বসে রই।সেটা দেখে নিলয় ভাইয়া আমাকে হাসানোর জন্য মুচকি হেঁসে বলে উঠে,,,

“সাবিহা একটা প্রশ্ন করি?”

আমি একবার সাদাফ ভাইয়ের দিকে তাকাই উনিও আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি এবার নিলয় ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করে বলে উঠি,,,

“জি ভাইয়া বলুন না কী বলতে চান?”

“ওয়েটার নাম কেন রাখা হয়েছে জানো?”

এটা আবার কেমন প্রশ্ন!আমি ভাবনায় পড়ে যাই,সেটা দেখে সাদাফ ভাইয়া আর নিলয় ভাইয়া মুচকি মুচকি হাসছে।আমি এবার গাল ফুলিয়ে বলে উঠি,,,

“জানি না ত।”

নিলয় ভাইয়া হাসল সাথে বজ্জাত সাদাফ ভাইটাও হাসল।আমার রাগ লাগল,উওর জানা নাই থাকতে পারে তার জন্য এমন হাসা লাগে নাকি!”

“ওয়েটার ওয়েট করায় বলেই ওয়েটার বলা হয়।”(আমার এক বড় ভাইয়ের বলা সংজ্ঞা🤭)

আমি কিছু বুঝতে না পেরে বলে উঠলাম,,,

“মানেহ?”

“মানে হল আমরা রেস্টুরেন্টে এসে কিছু ওর্ডার করলে ওয়েটার কিন্তু সেটা আমাদের ওয়েট করিয়েই দেয়।”

আমি নিলয় ভাইয়ার এমন কথায় হু হা করে হেঁসে উঠি,কী যুক্তি বাপরে বাপ।ওয়েটার ওয়েট করায় বলে নাকি নাম রাখা হয়েছে ওয়েটার।কথাটা ভেবেই আরেকদফা হাসিতে মেতে উঠলাম।তখন নিলয় ভাইয়া সাদাফ ভাইয়ার কানে বলে উঠল,,,

“নে ভাবির মুড ঠিক করে দিলাম,এবার তুই সামলা।আর সবসময় ধমক দিয়ে কিংবা রাগ দেখিয়ে কথা বলা বন্ধ কর।নয়ত তোর কপালে দুঃখ আছে,কারন সাবিহা অবলা নারী নয়।এখন আমি আছি বলে তকে কিছু বলল না নয়ত তোর মাথায় চুল থাকত কী না সন্দেহ আছে আমার।তাই সময় থাকতে থাকতে সাবধান হয়ে যা নয়ত কপালে দুঃখ আছে।”

নিলয় ভাইয়া কথাটা বলেই চলে যায়,আর সাদাফ ভাইয়া নিলয় ভাইয়ার কথাশুনে হাসল।কিন্তু কিছু বলল না,নিলয় ভাইয়া যাওয়ার পর সাদাফ ভাই আমার হাতটা উনার হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে উঠে।

“সরি সাবিহা,গতকালকের ঘটনার জন্য।”

আমি হাতটা সরাতে চাইলাম কিন্তু উনি ছাড়লেন না।

“হাত ছাড়ুন আমার,এমন হুটহাট হাত ধরাধরি আমার একদম পছন্দ নয়।”

“সাবিহা আমি জানি তুমি রাগ করেছো কিন্তু বিশ্বাস করো আমি সে সময়টাই পাই নি লিজাকে সরানোর জন্য।তার আগেই তুমি চলে আসো।”

“কেন সরাতে কী চব্বিশ ঘণ্টা লাগত নাকি!”

“সাবিহা প্লিজ বাঁকা বাঁকা কথা বলো না,রাগটা কমিয়ে বুঝার চেষ্টা করো একটু।তখন লিজা আমার রুমে এসেই হঠাৎ করে আমাকে জড়িয়ে ধরে।আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই তুমি চলে আসো।”

“আচ্ছা মানলাম উনি আপনাকে হঠাৎ করে জড়িয়ে ধরেছে,আপনি সরানোর সময় পান নি।কিন্তু আপনার সামনে যে আমাকে এতগুলো কথা বলল তার জন্য ত আপনার কিছু বলার উচিত ছিল।তখন ত কিছু বলেননি,তখন ত মুখে গোল আলু ডুকিয়ে রাখছিলেন।”

“সাবিহা আমি মানছি আমি ভুল করেছি,কিন্তু এবারের মত মাফ করে দাও প্লিজ।সামনে থেকে এমন কিছুই হবে না,প্লিজ রাগ করে থেকো না।তুমি যে রাগ করে আমার সাথে কথা বলছো না এটা আমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে।প্লিজ এবারের মত মাফ করে দাও আমাকে,আর কখনও এমনটা হবে না।”

“করব তবে একটা শর্ত আছে।”

“তোমারও শর্ত আছে!”

“হ্যাঁ আছে,আপনার থেকেই এই শর্ত দেয়া নেয়া শেখা।এবার আপনার ট্রিকস আপনার উপরই ট্রায় করব।রাজি থাকলে বলুন নয়ত আমি আসি।”

“না না বলো কী শর্ত আছে?”

“আমার শর্ত হল গরিলা মার্কা মহিলার আশেপাশে যাতে আর না দেখি আপনাকে।যদি উনার ছায়া ও আপনার পাশে দেখি তবে উস্টা মাইরা উগান্ডা নিয়ে ফেলব আপনাকে।”

“পাগলি একটা(গাল টেনে),রাজি আমি।”

আমি একগাল হেঁসে উনারও গাল টেনে বলে উঠি,,,

“গুড বয়।”

“আমার গুলুমুলু বউটা,পুরাই কিউটের ডিব্বা,দয়ার সাগর বেগম রোকেয়া,ডাকাত বউ আম,,,

কথাটা বলেই উনি জিব কামড়ে ধরে।

” কী😒?”

“হে হে,কই কিছু না ত।”

“আমি ডাকাত?”

“হে হে(বোকার মত হেসেঁ)তুমি ডাকাত হতে যাবে কেন?ডাকাত ত আমি,আমি ডাকাত হয়ে তোমাকে কেন ডাকাত বলব!আমি একদমই তোমাকে ডাকাত বলি নি,আমি ত বলেছি আমার বউটা খুব ভালো,খুব,,,

” হয়েছে হয়েছে আর মূলাপাম মারতে হবে না,আপনি যে কী কী বলতে পারেন সেটা আমার অজানা নয়।নেহাত এটা রেস্টুরেন্ট নয়ত আপনার খবর আছিল।”

“খবরা খবর পরে নিবে এখন নাও খেয়ে নাও সবাই।”

টেবিলে খাবার রাখতে রাখতে নিলয় ভাইয়া কথাটা বলে উঠল।আমি সাদাফ ভাইয়ের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে খাওয়া শুরু করলাম,তিনজনেই খেয়ে নিলাম।খাওয়ার পর নিলয় ভাইয়া আমাকে জিজ্ঞেস করে,,,

“সাবিহা এখন ত সবই ঠিক আছে,তোমার গলাও ত ঠিক হয়ে গেছে।এবার বলো ত সেদিন তোমার সাথে কী হয়েছিল?”

“আপুর বিয়েটা হোক তারপর এসব নিয়ে কথা বলব।এখন এসব নিয়ে কথা বললে ঝামেলা হবে আর আপুর বিয়ের আনন্দটাই মাটি হয়ে যাবে তাই এখন এসব বাদ দিন।আপুর বিয়ের পর সব বলব আমি,ততদিন আপনারা একটু অপেক্ষা করুন।
আর আমি এখন উঠি,আমাকে যেতে হবে।আপুর কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মামুর বাড়িতে আছে সেগুলো আনতে যেতে হবে।”

মামুর বাড়িতে যেতে হবে কথাটা শুনেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে সাদাফ ভাই।

“তোমাকে যেতে হবে না,কাব্য সেখানে আছে।ত যাওয়ার দরকার নাই।”

“কাব্য যেখানে থাকবে তার ভয়ে কী আমি সেখানে যাব না নাকি!কাব্যর ভয়ে কী আমি ঘর বন্দি হয়ে বসে থাকব?”

“আমি সেটা বলি নি কিন্তু এখন সেখানে না যাওয়াই ভালো।কখন কী করে বসে ঠিক নেই তাই যেও না।”

“আমার যাওয়াটা প্রয়োজন,চাইলে আপনিও সাথে আসতে পারেন সমস্যা নাই।কিন্তু তারপরও আমার যেতে হবে।”

কথাটা বলেই আমি বেরিয়ে আসি রেস্টুরেন্ট থেকে।আমার পিছন পিছন সাদাফ ভাই আর নিলয় ভাইয়াও আসে।তারপর তিনজনে মিলেই চললাম মামুর বাড়িতে।

_____________________________________

মামুর বাড়িতে ঢুকেই মামিমাকে দেখতে পাই ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছে,আমি মামিমাকে দেখে দৌড়ে জড়িয়ে ধরি।

“কেমন আছো মামিমা?”

“আমার মা টা এসে গেছে না আমি একদম ভালো হয়ে গেছি।”

“কেমন আছেন আন্টি?” (সাদাফ ভাইয়া)

“আরে সাদাফ বাবা যে,আলহামদুলিল্লাহ বাবা ভালো আছি।তুমি কেমন আছো?”

“আমিও ভালো আছি।”

“তোমার সাথে কে?চিনলাম না ত,সেদিনও হসপিটালে দেখেছিলাম।”

“আমার ফ্রেন্ড নিলয়।”

“ওহহ,তুমি কেমন আছো বাবা?”

“আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি।”

“আচ্ছা মামিমা তোমরা কথা বলো আমি উপর থেকে আপুর লাগেজটা নিয়ে আসি।আর হিয়া স্কুল থেকে আসে নি?”

“না আসে নি ত,এখনই এসে পড়বে।তুই যা লাগেজটা নিয়ে আয়।”

“আচ্ছা মামিমা।”

তারপর আমি উপরে চলে আসি,আর মামিমা সাদাফ ভাইয়াদের সাথে কথা বলছে।আমি ধীরে সুস্থে হেঁটে যাচ্ছি মেঘ ভাইয়ার রুমে।কিন্তু হঠাৎ করে কেউ আমাকে টেনে আনে একটা রুমে।আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই সামনে থাকা মানুষটা আমার হাতটা দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।সবকিছু এত তাড়াতাড়ি হয়েছে যে আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলি।

“চিৎকার করিস না সাবিহা,তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।”

কাব্য ভাইয়ার কথাশুনে আমি চোখ খুলি,আর উনাকে দেখে রেগে যাই খুব।নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি উনি ছাড়ছেই না।

“প্লিজ তুই শান্ত হ আমি তোর কোন ক্ষতি করব না।তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।কথা শেষ হলেই ছেড়ে দিব,প্লিজ আমার কথাটা শোন।”

আমি তারপরও উনার কোন কথা কানে না নিয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে চলেছি।উনি এবার আমার হাত ছেড়ে আমার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।আমি রেগে উনার দিকে তাকাই,উনি সেটা দেখে বলে উঠে।

“ভালো করে বলছিলাম শুনছিলি না,তাই গায়ে হাত তুলতে হল।তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে,আমার কথাটা শোন প্লিজ।অনেক কিছু বলার আছে তকে,প্লিজ শান্ত হ।”

আমি উনাকে কিছু না বলে উনার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে রেগে হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে আসি।আর কাব্য গালে হাত দিয়ে চোখের পানি ফেলছে।

#চলবে,,,

(কেমন আছে গো আমার গল্পের পাঠক/পাঠিকাগন? দুইদিন খুব ব্যাস্ত ছিলাম তাই গল্প দিতে পারি নি।তার জন্য খুবই দুঃখিত আমি,গল্প দিতে পারি নি তার জন্য আমারও খুব খারাপ লাগছিল।কিন্তু ব্যাস্ত থাকার কারনে গল্প দেয়া হয়ে উঠে নি।কিন্তু আজ থেকে আবার রেগুলার গল্প দিব ইনশাআল্লাহ।

আমার গল্পের পাঠক/পাঠিকাগন কাব্যকে কেমন শাস্তি দিতে চায়?সবাই বলে যাও কাব্যকে কেমন শাস্তি দেয়া যায়🥰।যার শাস্তি দেয়ার টেকনিকটা আমার কাছে ভালো লাগবে সেটাই কাব্যর জন্য ঠিক করব😁।সবাই সবার মতামতটা জানিয়ে যাও পিলিজ🙃।)

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ২৪

কাব্য ভাইয়ের রুম থেকে বেরিয়ে হনহনিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলাম।আমাকে এভাবে রেগে বেরোতে দেখে মামিমা,সাদাফ ভাইয়া পিছন থেকে অনেক ডাকল।আমি কারো কথা না শুনেই রেগে হেঁটে চলেছি।কাব্য পেয়েছেটা কী?শালার হাতির নাতিকে ভাই বলতেও লজ্জা লাগছে।যখন তখন হাত ধরে টানাটানি,গায়ে হাত তোলা,প্রতিশোধ নেয়ার জন্য কিডন্যাপ করা,ব্লা ব্লা।এতকিছু আর শয্য হইতাছে না,ইচ্ছে করতাছে খুন করে ফেলতে।এসব ভেবে রেগে হনহনিয়ে হেঁটে চলেছি,কিন্তু হঠাৎ করেই কেউ পিছন থেকে আমার হাত ধরে আটকে ফেলে।পিছনে তাকিয়ে দেখি সাদাফ ভাই,এমনিতেই মেজাজ গরম হয়ে আছে তার উপর আবার উনিও এসে সেই টানাটানি শুরু করছে।তাই এবার আর রাগটা কন্ট্রোল করতে পারলাম না।

“এই কী পেয়েছেন টা কী আপনি?যখন তখন এমন হাত ধরে টানাটানি করেন কেন?আপনাকে বলছি না এমন হাত ধরে টানাটানি করা আমার পছন্দ নয়।তারপরও একই কাজ কেন করছেন বারবার?মানছি আপনার সাথে আমার ছোট বেলা বিয়ে হয়েছে তাই বলে কী যা খুশি তাই করবেন?নিজের লিমিটে থাকুন,নয়ত ভালো হবে না।হাত ছাড়ুন আমার,আর একদম পিছন পিছন আসবেন না আমার।”

কথাটা বলেই রেগে হনহনিয়ে চলে এলাম,পিছন দিকে একবার ফিরেও তাকাই নি।পিছন ফিরলে হয়ত সাদাফ ভাইয়ের চোখের জলটা দেখতে পারতাম।

এইদিকে সাবিহার কথা শুনে সাদাফের চোখে জল চলে আসে।সে ত এসেছিল জানতে যে কাব্য কিছু করেছে কী না যার কারনে ওভাবে রেগে বেরিয়ে এসেছে।কিন্তু সাবিহা যে এতকিছু বলে ফেলবে সাদাফ ভাবতে পারে নি।সাবিহার কথায় সাদাফ খুব কষ্ট পেয়েছে,সাদাফ তার চোখের জল মুছে চলে আসে।

____________________________________

কাব্য ফ্লোরে বসে বেডে হেলান দিয়ে সিগারেট টানছে,আর নিজের করা সমস্ত খারাপ কাজগুলো মনে করছে।কাব্যর চোখ দিয়ে প্রতিনিয়ত পানি ঝড়ছে।

“ভালবাসায় অন্ধ হয়ে আমার আপন মানুষদেরকে কতই না কষ্ট দিয়েছি।হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে কত কষ্টই না দিলাম,বিশেষ করে সাবিহাকে।মেয়েটার সাথে কী কী না করেছি আমি,কিন্তু তারপরও মেয়েটা কেমন শক্ত রয়েছে।যাকে কষ্ট দিয়ে এতদিন পৈশাচিক আনন্দ পেতাম আজ তার কথা ভেবেই কষ্ট পাচ্ছি।কাউকে কষ্ট দিয়ে হয়ত সাময়িক সুখ পাওয়া যায়,কিন্তু সেটা ক্ষনস্থায়ী নয়।কাউকে কষ্ট দিলে তার থেকে শতগুণ কষ্ট পেতে হয় নিজেকে, কথাগুলো যে কতখানি সত্যি সেটা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি আমি।।তাই কাউকে কষ্ট না দেয়াই ভালো,তাতে আল্লাহ তায়ালা নারাজ হবেন না,আর আমার মত অবস্থাও কারো হবে না।
সাবিহা মেয়েটা খুব ভালো,নয়ত দুইজন ভালবাসার মানুষকে এক করার জন্য ওভাবে কিডন্যাপ করে বিয়ে দেয় নাকি?যেখানে আমার জন্য ভাইয়ের বিয়েটা ভাঙ্গল,আর আমি কিছুই করতে পারলাম না সেখানে সাবিহা ঠিকই তাদের বিয়েটা করিয়ে দিলো।সাবিহার সাহস আছে বলতে হবে,আগে ভীতু ছিল কিন্তু এখন অনেক সাহসী হয়েছে।কিন্তু এই সাহসের জন্য ত আমি মাফ চাওয়ার সুযোগটাই পাচ্ছি না,সামনে গেলেই ত ঠাস আর ঠুস করে মেরে দেয়।কিন্তু যেভাবেই হোক সাবিহার কাছে আমার ক্ষমা চাইতেই হবে।”

কথাগুলো ভেবে কাব্য হাতের সিগারেট ফেলে দিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে নিশানকে ফোন লাগায়।নিশানের সাথে কাব্য সবটা মিটমাট করে নিয়েছে,কারন কাব্য নিশানকে কথা দিয়েছে সাবিহাকে আর কষ্ট দিবে না।
একবার রিং হতেই নিশান ফোন ধরে।

“দোস্ত কেমন আছিস?”

“ভালো আছি,তুই কেমন আছিস?”

“আর ভালো থাকা!” (মন খারাপ করে)

“কেন আবার কী করেছিস তুই?সাবিহাকে কিছু বলিস নি ত?”

“আরে না সেসব কিছুই না,আসলে আজ সাবিহা আমাদের বাড়িতে এসেছিল।”

“ত কী হয়েছে?”

“ত আমি অর সাথে কথা বলার জন্য টেনে আমার রুমে নিয়ে আসি ক্ষমা চাওয়ার জন্য।কিন্তু সাবিহা আমার কোন কথাই শুনছিল না,তাই একটা থাপ্পড় মারি।ভেবেছিলাম ঠান্ডা হয়ে যাবে থাপ্পড় খেয়ে তারপর মাফ চাইব।কিন্তু উল্টা সাবিহা রেগে আমার গালে থাপ্পড় মেরে চলে যায়।”

“একদম ঠিক করছে।তুই কী মানুষ হবি না কাব্য?কথায় কথায় এত গায়ে হাত কেন তুলিস?আর ওভাবে টেনে এনে মাফ চাওয়ারই বা কী মানে?ভালো করে বলে সাবিহার সাথে কথা বলতে পারতি,মাফ চাইতে পারতি।কিন্তু তুই ত তুই ই,সবসময় তুই এমন গায়ে হাত তুলিস।আর সবার আগে নিজের রাগটাকে প্রাধান্য দিস বেশি,আর তোর মুখের আগে হাতটা বেশি চলে।তাই হাতটাও সামলা নয়ত এমন করলে সাবিহা তকে এই জন্মে মাফ করবে না উল্টা তরে বিনা নোটিসে অন্য গ্রহে পাঠাইয়া দিব,যেখানে কোন মানুষ থাকবে না থাকবে শুধু তোর মত এলিয়েন।”

“এখন কী করব?”

“কী করবি আবার!রাগ কমা,হাত পা কন্ট্রোল কর আর একটু মাথা খাটিয়ে কাজ করতে শিখ।”

“কিন্তু সাবিহা ত আমার সাথে কথা বলতেই চাইছে না।”

“তুই যে আচরন করিস তাতে কথা না বলাই স্বাভাবিক।দেখি আমি কোন ব্যাবস্থা করতে পারি কী না!”

“ঠিক আছে।”

কথাটা বলে নিশান ফোনটা রেখে দেয় আর কাব্য ভাবতে থাকে কীভাবে সাবিহার সাথে দেখা করে মাফ চাইবে।

____________________________________

বিকাল ৩টা বেজে ৫৬ মিনিট,রুমে পায়চারি করছি আর ভাবছি তখন সাদাফ ভাইয়ার সাথে রাগ দেখানোটা বারাবাড়ি করে ফেলছি।সাদাফ ভাইয়া নিশ্চয়ই খুব কষ্ট পেয়েছে,আমিও না রেগে গেলে কিছু মনে থাকে না।যে আচরন করেছি তার জন্য ক্ষমা চাইতেই হবে।নয়ত আমিও শান্তি পাব না আর ঐদিকে সাদাফ ভাইও কষ্ট পাবে।উনাকে বড্ড বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলি আমি,নাহ উনাকে আর কষ্ট দিব না।কথাগুলো নিজ মনে বিড়বিড় করেই সাদাফ ভাইয়ের বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়লাম।ফোনও দিতে পারতাম কিন্তু ফোনে কথা বলাই একরকম আর সরাসরি কথা বলাই আরেক রকম।বাড়িতে যাওয়াই ভালো আমার মনে হয় তাই বাড়িতেই যাব।

সাদাফ ভাইয়ার বাড়িতে এসে আন্টির সাথে একটু কথা বলে সাদাফ ভাইয়ের রুমে চলে এলাম।উনি ত ঘরে নেই,তাই সারাবাড়ি খুঁজতে খুঁজতে ছাঁদে চলে এলাম।এসে দেখি উনি একটা দোলনায় বসে আছে,আমিও ধীরে ধীরে উনার পাশে গিয়ে বসি।উনি আমার উপস্থিতি টের পেয়েছে কিন্তু কথা বলছে না।খুব কষ্ট পেয়েছে আর খুব রাগ করে আছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে,তাই আমি এবার একটা শুকনো ঢোক গিলে বলে উঠলাম।

“সাদাফ ভাইয়া তখন রাগ দেখানোর জন্য সরি,আসলে তখন মেজাজ খুব খারাপ ছিল।আর আপনি ত জানেনই আমার রাগ উঠলে মাথা ঠিক থাকে না।তাই প্লিজ রাগ ক্ষমা করে দিন আমাকে।”

উনি কিছু না বলে দোলনা থেকে উঠে ছাদের কিনার ঘেসে দাঁড়ায়।আমিও উনার সামনে দাঁড়িয়ে কানে হাত দিয়ে ইনোসেন্ট ফেস করে বলে উঠি।

“সরি বলছি ত,প্লিজ ক্ষমা করে দিন।”

উনি এখনও কিছু বললেন না ঘুরে অন্যদিকে চলে গেলেন,সেটা দেখে আমার খুব রাগ লাগল।তাই আমি ছাদের উপরে একটা আম গাছে চড়লাম,আর কিছুটা চেঁচিয়ে বললাম।

“এই ফুলাইন্না,কথা বলবেন নাকি এখান থেকে ঝাপ দিয়ে শহীদ হয়ে যাব!”

উনি এবার পিছন ফিরে আমাকে গাছে দেখে ঘাবড়ে গেলেন,আর ছুটে গাছের নিচে দাঁড়ালেন আর রেগে বললেন।

“কী করছো এসব?নামো ওখান থেকে,পড়ে গেলে দাঁত আর দাঁতের জায়গায় থাকবে না।”

আমি গাছের ডালে হাত পা ছড়িয়ে ভালো করে বসি।আর একটা আম পেরে সেটাতে কামড় দিয়ে চিল মুডে উনার দিকে তাকিয়ে বলি।

“যাক বাবা মুখের কস্টেপ ত খুলল,,,উফফ এতক্ষণ ভালো করে বলছিলাম কিন্তু আপনি কথাই বলছিলেন না।আর এখন কী সুন্দর করে কথা বলছেন,এবার বলেন মাফ করে দিছি।”

“বেশি কথা বলবে না একদম,তাড়াতাড়ি নিচে নামো।”

“নামব না আগে বলুন,মাফ করে দিছি।”

“থাপ্পড় খেতে না চাইলে নিচে নামে এক্ষুনি।”

“আজিব ত!আমি বলি কী আর উনি বলে কী?”

“সাবিহহহহহহা,নামবে তুমি নাকি আমি উপরে আসব?আমি আসলে কিন্তু ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।”

“এত রাগ করার কী আছে নামছি ত!”

কথাটা বলেই গাছ থেকে দুইটা আম পেড়ে নিচে নেমে পড়লাম,আর উনার সামনে দাঁড়িয়ে জামা আর হাত থেকে ময়লা ঝাড়তে ঝাড়তে বলে উঠলাম।

“এবার বলুন মাফ করে দিছেন,আপনি আমার উপর রেগে নেই।আর মাফ করে দিলে আপনাকে এত্তগুলা কিউট কিউট আম দিব।”

“এই মেয়েটা না পুরাই শয়তানের ডিব্বা,গাছে উঠে থ্রেট করে আমার গাছের আম দিয়ে আমার রাগ ভাঙ্গাতে চাইছে।কই একটু রোমান্টিক ভাবে রাগ ভাঙ্গাবে।তা না করে এভাবে থ্রেট করল,আল্লাহ আর কতকিছু দেখতে হবে আমাকে।”(মনে মনে)

“আমার গাছের আম দিয়ে আমার রাগ ভাঙ্গানো তাই না!”

“হি হি হি,,,গাছে কী নাম লেখা ছিল এটা আপনার গাছ?”

“তবে রে দুষ্টু দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা।”

কথাটা বলেই সাদাফ হেঁসে সাবিহাকে তাড়া করে আর সাবিহাও হেঁসে দৌড় লাগায়।

#চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here