#গল্পঃ_ভালোবাসতে_বারণ💔
#লেখাঃ_মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💔
#পর্বঃ__১৩
গাড়ি চলছে একটা নির্জন রাস্তায়। অসস্থিতে বার বার গাড়ি থামাতে বলছে শুভ্রতা। কিন্তু শুভ্রতার কথা একটাও কানে নিলোনা আদিত্য। নিজের মতো করে ড্রাইভ করছে সে।
গারি এসে থামলো একটা নির্জন রাস্তায়। চার দিকে লোকজন তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না।
গাড়ি থামাতেই শুভ্রতা নেমে চলে যাচ্ছে। আদিত্য নেমে তাকে মিশিয়ে নিল গাড়ির সাথে। শুভ্রতাকে দুই হাতে বন্ধি করে তার দিকে তাকিয়ে আছে আদিত্য।
— শুভ্রতা, কেনো এমনকরছো তুমি? একটাবার শুনো আমার কথা।
— ছারো আমায়। আমি কারো কথা শুনতে ইচ্ছুক নই।
— বিশ্বাস করো শুভ্রতা। আমি এখনো আগের মতোই তোমায় নভালোবাসি। এমন একটা দিন কাটেনা এমন একটা রাত কাটেনা যখন আমি তোমার কথা ভাবিনা। তুমি আমার থেকে অনেক দুরে চলে গেছো শুভ্রতা। তোমায় না পাওয়ার কষ্ট আমায় কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে শেষ করে ফেলছে আমায়।
— আমি এখন কাওকে ভালোবাসিনা, ছেরে দাও আমায়।
— তোমার চোখ বলছে তুমি এখনো আমায় ভুলতে পারোনি। ঘৃনার আড়ালে তোমার চোখে এখনো আমি ভালো বাসার আভাস দেখতে পাচ্ছি। কেনো আমার সাথে মিথ্যা বলছো শুভ্রতা কেনো? কেনো না চাইতেও দুরে ঠেলে দিচ্ছো বার বার?
— দুরে? কে কাকে কতোটা ধুরে ঠেলে দিয়েছে ওটা তোমাকে নতুন করে বুঝাতে হবেনা আদিত্য। আশা করি তোয়ার ভালো করেই মনে আছে।
— আমি মানছি শুভ্রতা, আমি স্বিকার করছি। খুব অন্যয় করেছি তোমার সাথে আমি। কিন্তু বিশ্বাস করো এর পেছনেও একটা কারণ ছিলো। পাঁচটা মিনিট সময় দাও আমাকে। আমার সত্যিটা আমি তোমায় বলতে চাই।
— প্লিজ ছারো আমায় লাগছে।
— আমি জানি শুভ্রতা, তোমার মনে জমে থাকা ব্যথার কাছে এটা কিছুই না। প্লিজ মাত্র পাঁচ মিনিট।
কিছু না বলে চুপ করে দাড়িয়ে আছে শুভ্রতা। অনেক সময় নিরবতা সম্মতির লক্ষন।
একটা নিরব জায়গায় বসে সব খুলে বলে আদিত্য।
— তুমি কি জানো, তুমি চলে যাওয়ার পর দিন গুলো কিভাবে কেটেছে আমার? কতোটা ঝড় সহ্য করতে হয়েছে আমার।
— আমি জানি শুভ্রতা তোমার উপর কি ঝড় বয়ে গেছে। আমার কাছে কোনো উপায় ছিলোনা, আমি জানতাম তোমারসাথে কিছু কারাপ হতে পারে। তাই আমি আমার ছোট ভাই রিদকে বলেছিলাম তোমায় দেখে রাখতে। বিশ্বাস করো আমি তোমার দৃষ্টির আড়াল হয়েও এতোটা বেকেয়ালি হয়ে যাই নি।
— এই যে আমার সন্তান। ধিরে ধরে বড় হয়ে উঠছছে। আর তোমার বাবার লোকেরা মেরে ফেলতে চেয়েছিলো ওকে।
— আমি তোমারে এ্যাবরশনের কথা বললাম কারণ আমি জানতাম তুমি এটা কখনোই করবে না। বিশ্বাস করো, ওইদিন তোমায় ওই ভাবে দুরে ঠেলে না দিলে আমি জীবনে আরো একটা মুল্যবান জিনিস হারিয়ে ফেলতাম।
ওই দিন রাতে বাবা আমায় ডেকে নিয়ে যাওয়ার পর,
— বাবা হটাৎ করে এমন জরুরি তলব?
— কারন আছে নিশ্চই। তার আগে তুই এটা বল, শুভ্রতা নামের মেয়েটা তোর কি হয়?
কিছুক্ষন নিরব থেকে বলে উঠে আদিত্য,
— আমি ওকে ভালোবাসি বাবা।
— হোয়াট? তুই কি ভুলে গেলি তৃষ্নার সাথে তোর এ্যাংগেইজমেন্ট হয়ে গেছে।
— ওটা তো আমার ইচ্ছায় হয়নি বাবা। তাছারা আমি ওইসব ব্যাপারে কিছু জানতাম ও না।
— কিচ্ছু শুনতে চাইনা আমি, তুই শুভ্রতার থেকে দুরে থাকবি। অনেক দুরে।
— চাইলেই সব সম্ভব না বাবা। তাছারা বাবা,,,,
— জানি আমি। আর এটাও জানতাম তুই আমার গর্ব। কিন্তু এটা তুই কি করলি?,ছি ছি ছি।
— আমি ওকে ছারতে পারবোনা বাবা, ভালোবাসি আমি ওকে।
— ভালোবাসা? আমার ছেলে হয়ে সামান্য একজন স্কুন টিচারের মেয়েকে এই ঘরের বৌ করার স্বপ্ন দেখছিস তুই?
— ভালোবাসা ধনি গরিব মানেনা বাবা। হয়তো আমাদের কাছে একটু বেশি আছে আর ওদের কাছে একটু কম।
— আমার সম্মানটা এভাবে শেষ করিস না বাবা। বাবা হয়ে হাত জোর করে অনুরুধ করছি তোর কাছে।
— প্লিজ বাবা এমন বলো না। আমি তোমাকে যেমন ভালোবাসি তেমন ওকেও।
— তার মানে তুই ওকে ছারতে ওারবি না? তাহলে আমার একটা কথা শুনে রাখ। জদি ওই মেয়েকে তুই চাস তাহলে আমাকে হারাতে হবে তোর। এটাই আমার শেষ কথা।
,
,
,
আমি বাবাকে হারাতে চাইনি শুভ্রতা। বাবার মুখে মৃত্যুর খবর শুনে নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি।
— তাহলে আজ কেনো এলে?
— আমি নিজেকে আর মানাতে পারছিনা শুভ্রতা। প্লিজ শুভ্রতা। আমায় আজ দুরে ঠেলে দিও না। আর বিশ্বাস করো আমি একমুহুর্তের জন্যও তৃষ্নার মায়াজালে আবদ্ধ হই নি। সব সময় দুরে দুরে রেখেছি তাকে আমি।
— আচ্ছা আদিত্য, আমাদের কপালে সুখ সইবে তো?
,
,
,
,
আজ বৃষ্টি চলে যাচ্ছে সাগর নিজে এসেছে তাকে নিতে। বিকেলে বৃষ্টিকে নিয়ে চলে গেলো সাগর। গাড়িতে বসে আর চোখে বার বার সাগরের দিকে তাকাচ্ছে বৃষ্টি।
— কি হলো এভাবে চোরের মতো বার বার তাকাচ্ছিস কেনো?
— তোমাকে দেখছি। আর একটা কথা বলোতো।
— কি?
— তুমি কি আমায় মিস করেছো এই কয়েকদিনে?
কিছু বলছেনা সাগর।
— কি হলো, বলনা তুমি কি আমায় মিস করছো?
— চুপ করে থাকতে পারিস না?
চুপ চাপ বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে বৃষ্টি। সাগর খেয়াল করে বৃষ্টি অনেক্ষন দরে চুপ করে আছে।
— কি হলো? একেবারে চুপ হয়ে গেলি দেখছি।
— ভালো লাগছেনা। আপুর জন্য খারাপ লাগছে খুব।
— ওর কথা একধম আমার সামনে বলবিনা। চুপচাপ থাক তাই ভালো।
,
,
,
আজমল চৌধুরি নিচে নামতেই দেখে সোফায় বসে আছে রকি আর জাফর সাহেব।
— আরে কখন এলি তোরা? একটিবার বললিও না। আচ্ছা ভালো করেছিস এসে।
— আমরা এখানে থাকতে আসিনি আঙ্কেল। সাবধান করতে আসছি আপনাকে।
— এভাবে কথা বলছো কেনো তুমি?
— মানুষের দৌর্যের একটা সীমা থাকে আঙ্কেল। সেই সীমা টা যদি ক্রস হয়ে যায় না তখন মাথা এমনিতেই খারাপ হয়ে যায়।
— মানে,,,
জাফর সাহেব বলে উঠে,
— চুপ কর রকি। আমি বলছি।
দেখ আজমল তোর সাথে আমার বন্ধুত্যটা সেই ছোট বেলা থেকেই। সেই সুবাধে তৃষ্নার সাথে তোর ছেলের বিয়ের কথা পাকা করে রাখি। এতো কিছুর পরও আদিত্যকে আজ শুভ্রতার সাথে দেখলাম আমি। এইসবের মানে কী?
— কি বলছিস তুই?
— শুধু মাত্র তৃষ্নার ভালোবাসা ও রকির জেদের জন্য আমার সিদ্ধান্ত থেকে এক পা নরিনি আমি। নাহলে তোর ওই দুশ্চরিত্র ছেলের সাথে সব জানার পর কখনোই আমি তৃষ্নার বিয়ের কথা নিয়ে এগুতাম না।
— মুখ সামলে কথা বল জাফর।
— কুল আঙ্কেল কুল। সাউন্ড যত নিচে ততোই দু পরিবারের জন্য ভালো হবে। তৃষ্নার বিয়ে আদিত্যের সাথেই হবে। কিন্তু এখন এলাম শুধু বুঝাতে আপনাদের। জদি আপসে কিছু না হয় তাহলে কিন্তু?
— তুমি কি আমায় ভয় দেখাচ্ছো রকি?
— কি যে বললেন না আঙ্কেল। ভয় দেখালেইবা কি করতে পারবেন আপনি?
— তুমি তো দেখছি কিভাবে কথা বলতে হয় ওটাও জানো না।
— রকি সহজে কথা বলেনা। রকি শুধু কথা বলায়। আদিত্যের জন্য লাস্ট চান্স এটা।
— চ্যালেন্জ নিচ্ছো? তাহলে এটা শুনে রাখো আদিত্যের সাথে তৃষ্নার বিয়ে বিয়ে কিছুতেই হবে না আমি থাকতে। যে পরিবার ছেলেকে ভদ্র ভাবে চলতে শিখাতে পারেনি। সে মেয়ের কথা আর কিই বা বলার আছে? আমি শুধু আদিত্যকে পাঠিয়ে এটা দেখতে চেয়েছিলাম, তৃষ্নার চরিত্য কেমন? যে মেয়ে বিয়ের আগে অনয় একটা ছেলের সাথে কোথাও যেতে পারে ওি মেয়ের চরিত্য আর কতোই বা ভালো হতে পারে।
— আঙ্কেল আপনি কিন্তু,,,
— আওয়াজ নিচে করো রকি। এটা আমার বাড়ি তোমার বাড়ি নয়যে উচু গলায় কথা বলবে। কথা বাড়িও না, আর দরজাটা ঐদিকে।
কিছু না বলে দ্রুত পায়ে হেটে বেড়িয়ে যায় রকি।
জাফর সাহেব কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে চলে যায় ওখান থেকে।
রকির পাসে গাড়িতে উঠে বসে জাফর সাহেব।
— এটা কি করলি রকি? সব কিছুতে এমন মাথা গরম করা উচিত নয়। তৃষ্না জদি জানতে পারে বিষয়টা,, ও খুব সেন্সিটি। না জানি কি করে বসে।
— চিন্তা করোনা বাবাআদিত্যকে তৃষ্নার সাথে বিয়ে করিয়ে যদি ঘর জামাই করিয়ে না রাখতে পারি তাহলে আমার নামও রকি না।
To be continue……….