ভালোবাসতে_বারণ পর্ব ৩

#গল্পঃ_ভালোবাসতে_বারণ💔
#লেখাঃ_মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💔
#পর্বঃ__৩

বিয়ের আগে প্রগনেটের বিষয়টা তার বাবাকে কি করে বুঝাবে শুভ্রতা? তার উপর আবার একজন স্কুল শিক্ষক আসিফ স্যার। চারদিকে ভালো নাম ডাক আছে তার। সমাজে সকলে তাকে সম্মানিত মানুষ হিসেবে চিনে। মেয়ের এমন একটা কাজ কি কি প্রশ্রয় দিবে সে? বলতেই বুকটা কেপে উঠে শুভ্রতার। তার উপর আবার শুভ্রতার বিয়ে নিয়ে উঠে পরে লেগেছে সে।
কিভাবে বলবে তা ভেবে একটা লম্বা শ্বাস নিলো শুভ্রতা।
মনে একটু সাহস জুগিয়ে বলে উঠে,
— তোমরা কি সত্যিই বিয়ের ব্যপারে সিরিয়াস বাবা?

— মজা মনে হওয়ার কারণ?

— না বাবা আমি এখন বিয়ে করতে চাচ্ছিনা।

— কেনো সমস্যা কোথায়?

— বাবা, আমি শুধু সাগর ভাইয়াকে একজন ভাইয়ের চোখেই দেখি।

মেয়ের কথা শুনে হেসে দিলেন আসিফ স্যার।
— আরে ধুর পাগলি। বিয়ের পর দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।

শুভ্রতা মাথা নিচু করে বলে উঠে,
— বাবা আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।

— বল না শুনছি,,,,,

— বাবা আমি আসলে,,,,,,

তার আগেই আসিফ স্যারের ফোনটা বেজে উঠে, হাত দিয়ে থামিয়ে দেয় শুভ্রতাকে। ফোন রিসিভ করে কথা বলতে থাকে সে।
এদিকে বড় একটা দির্ঘশ্বাস নেয় শুভ্রতা। সাহসটাও যেনো মুহুর্তে হারিয়ে ফেললো সে।

গাড়ি থেকে নেমে কিছুটা পথ নিস্তব্দে হেটে চলছে শুভ্রতা ও আদিত্য। আজ কারো মুখে কোনো কথা নেই।
নিরবতা ভেঙে শুভ্রতা বলে উঠে,
— কিছু কি ভেবেছো?

কোনো উত্তর পায়নি শুভ্রতা,
— এই যে শুনতে পাচ্ছো আমার কথা?

আদিত্য কিছু না বলে বলে উঠে,
— ফুসকা খাবে?

শুভ্রতা সামনে তাকিয়ে দেখে একটা ফুসকার দেকান।
— আমি খাওয়ার কথা বলছি না।

— হুম, শুনছি আমি, কিন্তু কিছু প্রশ্নের উত্তর হুট করেই দেওয়া যায় না। সামনে চলো।

— কোথায়?

— ফুসকা খেতে।

— উহু,,,,

— কেনো আগেতো প্রতিদিনই বায়না ধরতা।

ফুসকা হাতে বসে দুজন। এর মাঝে আদিত্য বলে উঠে,
— জানো শুভ্রতা আমরা এখন ঠিক এই ফুসকার মতো। তারাহুরু করতে গেলেই ঠুস করে শেষ হয়ে যাবো। যা ভাবার আস্তে আস্তে ভাবতে হবে।

— ওদিকে বাবা বিয়ে নিয়ে উঠে পরে লেগেছে।প্লিজ কিছু একটা করো। চলো না আমরা বিয়ে করে ফেলি? যদিও পরিবার আমায় মেনে নিবে না। তবুও এটা ছারা কোনো পথ দেখছি না।

আদিত্য কিছুটা ভ্রু কুচকে বলে উঠে,
— কাওকে কিছু না জানিয়েই?

— হুম। দেখবে যখন আমাদের কিউট বেবিটা হবে তখন বাবা মা আর রাগ করে থাকতে পারবে না।

— এতোটাই যদি সহজ হতো সব কিছু তাহলে আমার ছোট ভাই রিদের দুটি বছর পরিবার থেকে বিচ্ছেদ থাকতে হতো না। তুমি তো সবটা জানো না?

— জানি তো,, আঙ্কেল তাকে তেজ্য সন্তান হিসেবে বলে দিয়েছে।

— কেনো জানো?

— না।

— একটা মেয়ের সাথে রিলেশন ছিলো রিদের। মেয়েটার বিয়ে হয়ে যাচ্ছিলো। বাবাও সম্পর্কটা মেনে নিচ্ছিলো না। তাই রিদ কাওকে না জানিয়ে, মেয়েটার সাথে পালিয়ে বিয়ে করে নেয়। তার পর বাবার সামনে আসে। সেইদিন রিদকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় বাবা। পর দিন ই তেজ্য সন্তান হিসেবে বিচ্ছেদ করে দেয় তাকে। তার সাথে মাঝে মাঝে যোগাযোগ হলেও এখন আর হয় না। কোথায় আছে কেমন আছে কিচ্ছু জানি না। এতোদিন একটাই চিন্তা ছিলো রিদকে খুজে বের করে বাবাকে বুঝিয়ে বলার। কিন্তু এখন আমিও যদি একই কাজ করি তাহলে বাবা নিতে পারবে না। তাছারা বাবা তৃ,,,,,

— থেমে গেলে কেনো বলো,

— না, কিছুনা। চলো সামনে যাওয়া যাক।

ফুসকা ওয়ালাকে বিল দিয়ে সামনে হাটতে থাকে আদিত্য।
শুভ্রতাও তার পাসা পাসি।
— তোমার বাসায় কেও কি এই বিষয়টা জানে শুভ্রতা?

— না, বৃষ্টি ছারা কেও জানে না। আজ হোক কাল হোক জানবে তো নিশ্চই।

কিছু না বলে নিরবে হেটে চলছে আদিত্য।
নিরবতার ভাষা কিছুই বুঝতে পারছেনা শুভ্রতা।
,
,
,
রাতে শুভ্রতাকে ডাক দেয় তার বাবা। বাবার রুমের দিকে যাচ্ছে শুভ্রতা। যতই এক পা বাড়াচ্ছে ততোই বুকটায় ধুক ধুক শব্দ বেরে উঠছে।
বাবার রুমের সামনে গিয়ে কাপা গলায় বলে উঠে আসবো বাবা?
— হুম আয়।

বাবার অনুমতি পেয়ে শুভ্রতা বাবার পাসে গিয়ে দাড়ায়।
— বস, তখন কিছু বলতে চেয়েছিলি তুই। কেনো বিয়েটা করতে চাস না?

— বাবা আমি, একজনকে ভালোবাসি। তাকে ছারা আমি অন্য কাওকে স্বামি হিসেবে মানতে পারবো না।

মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে একটু অবাক হয় আসিফ স্যার। রাগি চোখে বলে উঠে,
— কে সে,,,,,,

বাবার এমন কঠোর কন্ঠে কিছুটা কেপে উঠে শুভ্রতা। কাপা গলায় উত্তর দেয়,
— আদিত্য, বাবা।

— মানে কি ওই আজমল চৌধুরির ছেলে?

— হ্য বাবা।

— দেখ শুভ্রতা, তোকে আমি স্বাধিনতা দিয়েছি তার মানে এই নয় যে তুমি আমার সিদ্ধান্তের উপর কথা বলবে। তুমি একজন সাধারন ঘরের মেয়ে, তোমায় এতো বড় ফ্যামিলি নিয়ে স্বপ্ন দেখা মানায় না।

— ভালাবাসাটা কি অপরাধ বাবা?

— আমি কিছুই শুনতে চাই না। তোর বিয়ে যেখানে ফিক্স করা সেখানেই করতে হবে তোকে।

— জোর করে কি ভালোবাসা হয় বাবা?

এর মাঝেই তার মা আদ্রিতা বেগম বলে উঠে,
— কিভাবে কথা বলে তা কি দিন দিন ভুলে যাচ্ছিস শুভ্রতা,, তোর বাবার ডিসিশন টাই ফাইনাল। যা গিয়ে নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পর।

কাদতে কাদতে সেখান থেকে বেড়িয়ে যায় শুভ্রতা।
আমরা জানি সত্যিকারের ভালোবাসাকে আটকানো যায়না। যে কোনো কিছুর বিনিময়ে ফিরে পেতে চায় প্রিয় মানুষটিকে। কিন্তু কিছু কিছু ভালোবাসার ফাটল এতোটাই বড় হয় যে তা জুরে দেওয়া অসম্ভব হয়ে দাড়ায়।

বেলকনিতে দাড়িয়ে কাদতে থাকে শুভ্রতা। খাটের এক পাসে গুটিশুটি মেরে ঘুমুচ্ছে বৃষ্টি।
শুভ্রতার মা এসে দাড়ায় শুভ্রতার পাশে।
মাকে জড়িয়ে ধরেই কেদে দেয় শুভ্রতা।
— দেখ শুভ্রতা তো বাবা একটা কথা দিয়েছে। এই কথার দাম তো রাখতেই হবে। জেদ করিস না মা। আর দু,এক মাস পরই হয়তো তোদের বিয়ে। খুব জোরে তিন মাস। এর মাঝে তুই নিজেকে প্রস্তুত করার সময় পাবি।

— আমি পারবো না মা অন্য কাওকে বিয়ে করতে। তাছারা সাগর ভাইয়াকে আমি নিজের ভাইয়ের চোখেই দেখি। তুমি একটু বাবাকে বুঝাও না মা।

— দেখ তোর বাবার মুখের উপর কথা বলার সাহস এই বাড়িতে কারোরই নেই। আমি কিছু বললেও লাভ হবেনা। তুই ভুলে যা ওকে।

— চাইলেই সব সম্ভব না মা। তার থেকে না হয় আমি দুরেই চলে গেলাম কিন্তু তার সন্তান? এটার থেকেও কি আমি দুরে চলে যেতে পারবো? এই নিশ্পাে বাচ্চাটার কি দোষ? তার কি তার বাবা মা দুজনের আদর পাওয়ার অধিকার নেই?

মেয়ের কথায় কিছুটা অবাক হয় আদ্রিতা বেগম।
— মানে?

শুভ্রতা কাদু কাদু গলায় বলে উঠে,
— আদিত্যের সন্তান আমার গর্ভে মা।

নিজের মেয়ের মুখে এমন একটা কথা শুনবে তা হয়তো কখনো কল্পনাও করেনি আদ্রিতা বেগম। একজন মা হিসেবে খুব ব্যর্থ মনে হচ্ছে নিজেকে। তার মেয়ে হয়ে এমন একটা কাজ করবে তা বিশ্বাসই হচ্ছে না তার।
,
,
,
পর দিন,
— ছি ছি ছি, আমার মেয়ে ভাবতেও লজ্জা হচ্ছে তোকে। কিভাবে পারলি এটা তুই। তোর এই হত ভাগা বাবার মান ইজ্জতের কথা একবারও ভাবলি না তুই। সারা বছর সকলকে শিক্ষার পথ দেখাতাম আমি। জানা ছিলোনা নিজের মেয়েটাই এতোটা অ-শিক্ষিত ছিলো। লোকের কাছে মুখ দেখাবো কি করে আমি? সাগরকেই বা কি জবাব দিবো?

মাথা নিচু করে বসে আছে শুভ্রতা।
আসিফ স্যার ঠান্ডা মাথায় বলে উঠে,
— বুঝলাম, একজন ভালো মেয়ের বাবা হওয়ার মতো কোনো যোগ্যতাই আমি রাখি না। যোগ্যতা থাকলে নিশ্চই আমার মেয়ে একটা আদর্শ পথ দেখতো। যেহেতু আমি বাবা হিসেবে অযোগ্যই ছিলাম তাই আমায় এই দিন দেখতে হচ্ছে আজ। মান সম্মানের কথা চিন্তা করে হলেও এই অ-প্রত্যাশিত সত্যটা চাপা দিতে হচ্ছে আমায়। এ্যাবরশনের জন্য প্রস্তুত হও।

মুহুর্তেই চোখ দুটু বড় বড় কতে বাবার দিকে তাকায় শুভ্রতা।,,,,,,,,,,

To be continue,,,,,,,,,,,,,,,,,

অনেকদিন পর হুট করে লেখালিখি আরম্ব করলাম তাই হয়তো অতটা ঘুচিয়ে তুলতে পারছিনা। ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here