#গল্পঃ_ভালোবাসতে_বারণ💔
#লেখাঃ_মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💔
#পর্বঃ__৪
বাবার মুখে এ্যাবরশনের কথ শুনে যেনো মুহুর্তেই মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো শুভ্রতার। অবাক চোখে বাবার দিকে তাকিয়ে থাকে সে।
— এটা তুমি কি বলছো বাবা? এটা আমার সন্তান। আমি রাখতে চাই একে।
— লজ্জা করেনা তোর কথাটা মুখে আনতে? বিষয়টা জানাজানি হওয়ার আগে এ্যাবরশনের জন্য তৈরি হ। ছরিয়ে গেলে আবার অনেক বড় কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।
— মা বাবাবে একটু বুঝাও না, যা দোষ করেছি আমি করেছি। তার শাস্তি কেনো আমার সন্তানকে পেতে হবে মা। ওতো নিশ্পাপ।
আসিফ স্যার কড়া গলায় বলো উঠে,
— এখন কি বলতে চাইছিস তুই?
— প্লিজ বাবা এমন করো না, ও আমার সন্তান। মা হয়ে কিভাবে আমি পারি এমনটা করতে? আমি ওকে রাখতে চাই বাবা।
— শুভির মা শুনছো কি বলছে তোমার মেয়ে। তোমার মেয়েকে বুঝাও।
— আমি বুঝে শুনেই ডিসিশনটা নিয়েছি বাবা।
কিছুক্ষন রাগি দৃষ্টিতে শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে থেকে সেখান থেকে চলে যায় তার বাবা।
চলছে সময়,
এই কয়দিনে আসিফ স্যার শুভ্রতার সাথে কোনো কথা বলেনি। চারদিকে নানান চিন্তা পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া অবহেলা গুলো যেনো কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে শুভ্রতাকে। সাগরের কানেও চলে গিয়েছে কিছু খবর, চুপচাপ ছিলো তখন সে, ভাবার জন্য কিছুটা সময় চাইলো সাগর।
দেখতে দেখতে কেটে গেলো কিছু দিন। হাওয়া বদলের দিন ঘনিয়ে এলো কাছে। চার দিকের দুশ্চিন্তা, ভয়ে শুভ্রতার চেহারায় কেমন একটা ফ্যাকাসে ভাব নিয়ে হাজির হলো। এই ভয় জেনো আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলো শুভ্রতার জীবনে।
কথায় আছে,
পরিশ্রমে ধন আনে,
পূন্যে আনে সুখ।
অনসতায় দারিদ্র আনে,
পাপে আনে দুখ।।।।।।।
,
,
,
তৃষ্না আসছে আজ। তার বাবা জাফর সাহেব ও ভাই রকি যাচ্ছে তাকে রিসিভ করতো। যদিও আদিত্যকে জোড়াজোরি করেছে যাওয়ার জন্য।
আদিত্য যাচ্ছে না কারণ বিকেলে শুভ্রতাকে তার ডাক্তার দেখানোর কথা।
পরদিন তৃষ্না আসায় বাড়িতে বিরাট বড় পার্টির আমেজ। আদিত্য সহ সকলেই যাচ্ছে পার্টিতে। গাড়ি থেকে নেমে দেখে সবকিছুতে অন্য রকম সাজগোজ।
ভেতরে জেতেই জাফর সাহেব হেসে উঠে জড়িয়ে ধরলো আজমল চৌধুরিকে।
— আরে আসুন আসুন বেয়াই সাহেব। আপনাদের জন্যই অপেক্ষা করছিলাম এতক্ষন। আয় আয় এতো দেরি করলি কেন?
— আর বলিস না, এই মহিলা মানুষের সাজগোজ বুঝিসই তো। কয়েক ঘন্টা ধরে ঘষা মাজা না করলে তাদের নাকি সাজই হয় না। অবশেষে আসলাম তো নাকি?
— আরে আদিত্য বাবাজি আসো আসো তোমার জন্যই তো আজ পুরুপুরি আলাদা আয়োজন।
আদিত্য কিছু বুঝতে না পেরে একটু গাল টেনে হাসার চেষ্টা করে।
পার্টি প্রায় শুরু। অন্য রকম ভাবে সেজেছে তৃষ্না। সব মিলিয়ে অপরুপ লাগছে তাকে। এই সোন্দর্য টাও যেনো মুগ্ধ করতে পারেনি আদিত্য কে। তার মন ধ্যন সব কিছুই যে পরে আছে শুভ্রতার কাছে।
সকলের সামনে দাড়িয়ে বলতে শুরু করে তৃষ্নার ভাই রকি।
— লেডিস এন্ড জেন্টেল মেন, সকলকে জানাই আমার পক্ষ থেকে প্রান ঠেলা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আপনারা সকলে জানেন, আমার এক মাত্র ছোট বোন তৃষ্নার ফিরে আসায় ও তার এংগেইজমেন্ট এ এই আয়োজন। এই হলো আমার বোন তৃষ্না। আমি মনে করি সময় নষ্ট না করে আমাদের এংগেইজমেন্ট এর কাজটা সেরে নেওয়া যাক। আর জন্য আমি ডাকতে চাই, তৃষ্নার একমাত্র জীবন সঙ্গি, মানে তৃষ্নার হবু বর। তাকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবার মতো কিছু নেই, বাবার একমাত্র বন্ধু, বিশিষ্ঠ শিল্প পতি আজমল চৌধুরির সু-জোগ্য সন্তান আদিত্য চৌধুরি।
রকি কথাটা বলে উঠতেই আদিত্য অবাক হয়ে তার বাবার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন খোজার চেষ্টা করে।
তার বাবা হাসি মুখে তাকে চোখের ইশারায় যেতে বলে সেখানে।
— এটা কি হলো বাবা? আমাকে কিছু না জানিয়ে এতো কিছু করে ফেললে তোমরা।
তার বাবা হাসি মুখে বলে উঠে,
— ধরে নে এটা একটা সারফ্রাইজ।
— আমার ও তো একটা মতামত থাকতে পারে বাবা?
— আমি জানি আমাদের মতামত মানেই তোর মতামত। তাছারা তোদের বিয়ে তো অনেক আগে থেকেই ঠিক করা।
— এটা কেমন কথা বাবা? এমন ওতো হতে পারে আমি তৃষ্নাকে বিয়ে করতে চাইনা।
আজমল চৌধুরি এবার সিরিয়াস ভাবে বলে উঠে,
— মজা করিস না,,,,, যা এবার। সবাই তোর দিকে তাকিয়ে আছে। এমন কিছু করিস না যাতে আমার মাথা সকলের কাছে নিচু হয়।
— আমি মজা করছি না বাবা, তাছারা তোমাকে আমার কিছু বলার আছে,,,,,,
— যা শুনার পরে শুনবো,,,, এখন যা, সকলে তোর দিকে তাকিয়ে আছে। না জানি কি ভাবছে?
উপায় না পেয়ে মান সম্মানের কথা ভেবে হলেও আদিত্যকে যেতে হচ্ছে তৃষ্নার দিকে। তৃষ্না পলকহিন ভাবে তাকিয়ে আছে আদিত্যের দিকে। আদিত্য কাছে আসতেই যেনো নিজের ঘোর থেকে বেরিয়ে আসলো তৃষ্না।
নিরুপায় ভাবে তৃষ্নাকে আন্টি পরাতে হলো আদিত্যের।
সব শেষে বাড়ি ফেরার প্রস্তিতি নেয় সবাই। জদিও তাদের ছারতে চাইছেনা জাফর সাহেব। কিন্তু আদিত্য আর এক মুহুর্তও এখানে থাকতে রাজি নয়। তাই আজমল চৌধুরি তাদের বুঝিয়ে বিদায় নিচ্ছে। আদিত্য বিরক্তিকর ভাবে সেখান থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছে।
মুহুর্তেই আদিত্যের হাত হিচকে টেনে রুমে এনেই দরজা বন্ধ করে দেয় তৃষ্না।
আদিত্য অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তৃষ্নার দিকে।
— এই মেয়ে এই তোমার সাহস কি করে হয় আমায় এভাবে রুমে নিয়ে আসার?
— কেনো? হবু বরকে রুমে নিয়ে আসা বারণ নাকি? তাছারা আমাদের এংগেইজমেন্ট ও হয়ে গেছে। আর হবু বড় থেকে হবু টা বাদ দিলেই তো বর তাই না?
আদিত্য কিছু বলার আগেই তৃষ্না তাকে দেওয়ালের সাথে চেপে দু, হাতে বন্ধ করে ফেলে।
— দেখো তৃষ্না ভালোয় ভালোয় সরে যাও বলছি।
— কেনো লজ্জা পাচ্ছো বুঝি?
আদিত্যের কপাল হতে নিচের দিকে মুখের এক পাসটা এক আঙুল দিয়ে স্পর্স করছে তৃষ্না।
অসস্থিতে নিজের রাগ সামলানোটা মুসকিল। তৃষ্নার হাত ধরে ছুরে মেয়ে গদ গদিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসে আদিত্য। টাল সামলাতে না পেরে প্লোড়ে ছিটকে পরে তৃষ্না। হটাৎ এমনটা হওয়ায়, তৃষ্না অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে আদিত্যের দিকে।
এতে একটু লজ্জা বোধ করে তৃষ্না। ব্যপারটা এতো সিরিয়াসলি নেয়নি সে। নিজেই লজ্জা বোধ করতে থাকে।
– ধুর প্রথম দেখায় কেও এমন করে। ব্যচারা কতটা লজ্জা পেয়েছে। তুই কিনকরতে যে কি করিস তৃষ্না। ভেবেই নিজের মাথায় নিজে চুটি মারে সে।
,
,
,
বিছানায় চুপটি মেরে বসে আছে শুভ্রতা। তার পাসে বক বক করে যাচ্ছে বৃষ্টি।
— ওফ বুঝলাম না,,, যেই মানুষটার তোর প্রতি এতোটা সিরিয়াস না তাকে কেনো ভালোবাসতে গেলি তুই। কতো দিন চলে গেছে এখনো কিছু করতে পারছেনা সে। আসলে সত্যি কথা কি জানিস আপু?
বর্তমানে মানুষ ফ্রেম করতে চায় কিন্তু, ভালোবাসতে ভয় পায়। আমার মনে হয় তোকে নিয়ে এতোটা ভাবতে চায় না। তাছারা আজকাল ছেলেদের বুঝা বড় মুশকিল, কে জানে? তাছারা ওরা এতো ক্ষমতাশিল ফ্যামিলি আমরা চাইলেও কিছু করতে পারবো না।
— চুপ কর না বৃষ্টি বাজে বকছিস কেনো এমন। আমি জানি আদিত্য এমন না, ও ঠিকই একটা কিছু করবে। তার উপর আমার পুরু বিশ্বাস আছে।
,
,
,
ছাদে এদিক ওদিক পায়চারি করছে আদিত্য। কি থেকে কি হয়ে গেলো আজ। যাই হোক অনেক হয়েছে, আর বসে থাকলে হবে না কিছু একটা ভাবতে হবে।
কিন্তু আজ শুভ্রতার সাথে তেমন কথা বলেনি আদিত্য। তাই ফোন টা বের করে শুভ্রতার নাম্বারে ফোন দিলো।
বৃষ্টির সাথে কথা বলার সময় আদিত্যের ফোন আসায়, বারান্দায় চলে যায় শুভ্রতা।
দু,এক দিন পর,
নিরবে বসে কান্না করে চলছে শুভ্রতা। বুকের ভেতরটা যেনো দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে তার। মুহুর্তেই যেনো ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে সব স্বপ্ন। ফ্লোড়ে ছুরে মারে হাতে থাকা আদিত্য ও তৃষ্নার সেই এংগেইজমেন্টের ছবি গুলো।
To be continue………