ভালোবাসতে_বারণ পর্ব ৫

#গল্পঃ_ভালোবাসতে_বরণ💔
#লেখাঃ_মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💔
#পর্বঃ__৫

আদিত্য আর তৃষ্নার এ্যাংগেজমেন্ট এর ছবি গুলো হাতে নিয়ে বসে আছে শুভ্রতা। চখের অশ্রু যেনো আজ আর কোনো বাধা মানছে না তার। বুকের ভিতরটা কেমন চিন চিন করছে। মুহুর্তেই যেনো একে একে ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে তার সব স্বপ্ন। রাগে ফ্লোড়ে ছুরে মারে ছবি গুলো। হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কাদতে শুরু করে শুভ্রতা।
পাসে আসে আছে তার মা ও বাবা আর ছোট বোন বৃষ্টি।
শুভ্রতার কান্নার মাঝে তার মা বলে উঠে,
— এখন বুঝ, তোর জীবনটা নষ্ট করে অন্য একজনকে নিয়ে ঠিকই শুখে থাকবে সে। আর তোর জীবনটা? যার কথা সে একটি বারও ভাবলো না। ওইসব বড়লোকের ছেলের কাছে তোর মতো দু,চারটা মেয়ের জীবন নষ্ট হওয়া কোনো বিষয়ই না।

তার মাঝে, আসিফ স্যার বলে উঠে,
— সাগরের সাথে আমার কথা হয়েছে সবকিছু জেনে শুনেও তোকে বিয়ে করতে রাজি সে। এখন ডিসিশন তোমার।

— আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা বাবা।

— আমাকে বাবা না ডাকলেই আমি খুশি হবো। তোমার মতো মেয়ের মুখে বাবা শুনার চাইতে মরে যাওয়াই ভালো। কর্তব্য ছিলো ওইটা পালন করছি আমি। অতি শিগ্রই বিয়ের ব্যবস্থা করছি প্রস্তুত হও।
,
,
,
সোফায় বসে আছে রকি ও তার বাবা। উপরে দরজা বন্ধ করে নিরব হয়ে বসে আছে তৃষ্না। মুখে কোনো কথা নেই তার।
আদিত্যের বাবা আজমল চৌধুরি এসে উপস্থিত হলো সেখানে।
— কি ব্যপার হটাৎ এমন আর্জেন্ট ডাকার কারন?

রকি সামনের দিকে ঝুকে বলে উঠে,
— ছোট্ট একটা কারনে ডাকলাম আংকেল। ভাবলাম ব্যপারটা আমরা নিজেদের মাঝেই শেষ করে নিই।

আজমল চৌধুরি একটু অবাক হয়ে ভ্রু কুচকে তাকায় রকির দিকে,
হাত বাড়িয়ে কয়েকটা ছবি আজমল চৌধুরির হাতে তুলে দেয় রকি।
ছুবিগুলো হাতে নিতেই মাথায় বাজ পরে আজমল চৌধুরির। আদিত্যের সাথে শুভ্রতার পাসাপাসি হাটা কিছিু পিক। এতে একটু অবাক হলেও বিচলিত হলো না আজমল চৌধুরি।
এর মাঝে রকি বলে উঠে,
— আদিত্যের রানিং গার্লফ্রেন্ড।

আজমল চৌধুরি বলে উঠে,
— কিভাবে শিউর হলে? ফ্রেন্ড ও তো হতে পারে তাইনা?

— আপনার কি মনে হয় আংকেল? রকি কোনো খবর না জেনেই আপনাকে এখানে ডেকেছে? আমার একমাত্র বোনের হবু স্বামির খবর রাখবো না এটা কি হয়।

চুপ করে বসে আছে আজমল চৌধুরি,

— আর আংকেল আরেকটা কথা, মেয়েটা প্রেগনেট।

কথাটা শুনতেই বুকের ভিতরটা ধুক করে উঠে আজমল চৌধুরির।

এর মাঝে রকি আবার বলে উঠে,,
— জদি ভাবেন এইটা দেখে আমরা বিয়েটা বন্ধ করে দেবো তাহলে ভুক ভাবছেন। বিয়েটা হবে। কারণ তৃষ্না ভালোবাসে আদিত্যকে। ওই যে রুমে এখনো দরজা বন্ধ করে বসে বসে কাদছে। আর তৃষ্নার সুখের জন্য আমি সব করতে পারি। প্রয়োজনে এমন দু,চারটা মেয়ের লাশও ফেলে দিতে পারি। আপনাকে ডেকেছি এই জন্যই যে, আদিত্যকে বুঝানোর দায়িত্যটা আপনার আংকেল। আর সরি আংকেল আজ এভাবে আপনার সাথে কথা বলার জন্য। জানেনইতো আমি আমার বোনকে কতটা ভালোবাসি।
,
,
,
বারান্দায় বসে চোখ বন্ধ করে আছে আজমল চৌধুরি। আদিত্যকে ডেকে পাঠিয়েছে সে।

ছাদে হাটাহাটি করে একের পর এক ফোন করে যাচ্ছে শুভ্রতাকে। রিসিভ করছেনা সে। এতে আদিত্য বিরক্ত হয়ে হেটে নিচে চলে যায়। তৎক্ষনাত তার মনে হয় যে বাবা তাকে ডেকে পাঠিয়েছে।
কিন্তু কেনো, এভবে তো কখনো ডাকেনি তাকে। কে জানতো, হয়তো আজই তার ব্যক্তিগত বইয়ের একটা অধ্যায় শেষ হতে চলছে।
বরান্দায় গিয়ে বাবার পাসে বসে আদিত্য,
— বাবা কিছু বলবে আমায়?

আদিত্যকে দেখে মাথাটা তুলে তাকায় আজমল চৌধুরি।
,
,
,
রাত তখন গভির, খাটের সাথে হেলান দিয়ে ফ্লোড়ে বসে আছে শুভ্রতা। তার দৃঢ় বিশ্বাস আদিত্য এমন করতে পারেনা তার সাথে। যেই আদিত্যকে গভির ঘুমে স্বপ্ন দেখে গভির রাতে বায়না ধরতাম দেখার জন্য, তখন সেই ইচ্ছে পুরনের জন্য বর্ষনের সেই রাতেও লাগাতার বৃষ্টিকে তুচ্ছ করে এসে ফাইপ বেয়ে উঠে কপালে চুমু একে দিয়ে বলতো ভালোবাসি। ছোট ছোট ইচ্ছে পুরনে যে হাজারো কঠিন বাধা পেরিয়ে ছুটে আসতো আমার কাছে সেই কখনোই ঠকাতে পারেনা আমাকে। এটাই শুভ্রতার দৃঢ় বিশ্বাস।

শুভ্রার বোন বৃষ্টি অনেকভাবে বুঝানোর চেষ্টা করছে তাকে। কিন্তু কিছুতেই লাভ হচ্ছেনা।
— তুই এক কাজ করতে পারিস আপু। আদিত্য ভাইয়াকে ফোন দিয়ে কাল দেখা করতে বল। তার পর তার মুখ থেকেই সত্যিটা যেনে নে। এগুলো ইডিট করা ছবি ও তো হতে পারে।

শুভ্র তাড়াহুরা করে খুজতে থাকে ফোনটা। খুজেই পাচ্ছেনা সে। বৃষ্টির ফোন দিয়ে কল দিতেই খুজে পায় সে। ফোন হাতে নিয়ে দেখে আদিত্যের সতেরটা মিসড কল।
তারাহুরা করে ফোন দেয় আদিত্যের নাম্বারে।

অন্য মনস্ক হয়ে সোফায় গা এলিয়ে বসে আছে আদিত্য। বাবার কথা গুলো যেনো দু কান জুড়ে বাজতে থাকে তার।
হটাৎই শুভ্রতার ফোন আসায় কিছুক্ষন স্কিনের দিকে তাকিয়ে থাকে আদিত্য। আবার ফোন দিতেই রিসিভ করে সে।

— কিভাবে পারলে তুমি?

—””

— কথা বলছো না কেনো? ওহ্ তোমার তো এখন আমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করবে না। যাই হোক, কাল একটু দেখা করতে পারবে?

— কখন?

— বিকেলে?

— হুম আসবো আমি,,,,,,

— আচ্ছা রাখি, বাই।

বড় একটা দির্ঘশ্বাস নেয় আদিত্য।
,
,
,
পরদিন,
— তুমি আমার সাথে এমন কেনো করলে আদিত্য? আমার জন্য কি একটুও মায়া হলোনা তোমার? আচ্ছা আমার জন্য তোমার মায়া নাইবা লাগলো। কিন্তু তোমার সন্তান?
বলোনা এইসব মিথ্যে ওই মেয়েটার সাথে তোমার কিছু নেই। বলোনা আগের মতো প্লিজ, যে আমিই তোমার পুরু পৃথিবী। চুপ করে আছো কেনো বলোনা। চলোনা আমরা অনেক দুরে চলে যাই। যেখানে কেও খুজে পাবেনা আমাদের। আমি কথা দিচ্ছি আমরা খুব সুখে থাকবো সেখানে। আমাদের সন্তানকে আমরা দুজনে মিলে বড় করতে চাই।

— আমায় ক্ষমা করো শুভ্রতা আমি পারবোনা।

আবাক চোখে আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে শুভ্রতা,
— কি বলছো তুমি?

— তুমি এ্যাবরশন করিয়ে নাও শুভ্রতা। এ্যাবরশনের সব খরচ আমি দিবো।

— ফকিন্নি মনে হয় আমাকে তোমার? দায়িত্বই যদি নিতে না পারো তাহলে কেনো এতো কাছে আসলে আমার? কেনো এভাবে বলছো। দের টা বছর নিজ হাতে গড়া এই রিলেশনশিপ।

— আমায় ক্ষমা করে দাও শুভ্রতা।

— প্লিজ, আদিত্য। আমি ভিক্ষা চাইছি তোমার কাছে একমুঠু সুখ। আমাদের সন্তানটার কথা ভেবে হলেও এমনটা করোনা আদিত্য।

— আমি চাইলেও তোমায় কাছে টেনে নিতে পারছিনা শুভ্রতা। এক অভিশপ্ত বেড়াজালে আজ আমি আবদ্ধ।

— তোমার কাছে যতই আছি ততোই আমি হুস হারিয়ে ফেলছি। আমার মনকে মানাতে পারছিনা আমি। ভালো থেকো।

আদিত্ব এক পা এক পা করে পিছুতে পিছুতে হাত দিয়ে ইশারা করছে, ভালো থেকো।
দ্রুত গিয়ে গাড়িতে উঠে আদিত্য।
হাত বাড়িয়ে কাদতে কাদতে হাটু গড়ে বসে পরে শুভ্রতা। বৃষ্টি তাকে শান্তনাও দিতে পারছেনা আজ। শুধু আদিত্যের দিকে একরাশ অভিমান নিয়ে নিক্ষেপ করছে তৃক্ষ ঘৃনার দৃষ্টি।

গাড় এসে থামে একটা নির্জন যায়গায়। যেখানে আদিত্যের আত্বচিৎকারের আওয়াজ কেও শুনতে পাবেনা।
আমরা সকলেই জানি যে সত্যিকারের ভালোবাসাকে কখনো আটকানো যায়না। কিন্তু কখনো কখনো থমকে যায় জানা অজানা কিছু কারনে।
,
,
,
রাত তখন গভির,
বালিশ ভিজিয়ে কান্না করে চলছে শুভ্রতা। আদিত্যের কথগুলো যেনো আজ প্রত্যেকটা ত্বিরের মতো করে আঘাত করেছে বুকের বা পাসে। বুক ফেটে কান্না আসছে আজ তার। পেটে হাত দিয়ে অনুভব করছে নিজ সন্তানের আম্মু ডাকার মুহুর্তটা।
পেটে হাত দিয়ে বলতে শুরু করে,
— সরি বাবা, তোমাকে তোমার বাবার ভালোবাসা আমি দেখাতে ব্যর্থ। কিন্তু তোমাকে আমি আমার ভালোবাসায় বড় করতো। তোমার জন্য হলেও আমাকে বেচে থাকতে হবে। তাকে দেখাতে হবে একটা মেয়ে কখনো দুর্বল নয়। তোমাকে আমি নিজ হাতে গড়ে তুলবো, ওই চৌধুরি পরিবারকে দেখাতে চাই এটাই আমার সন্তান।
,
,
,
দু,দিন পর,
হাতে নীল-পালিশ লাগিয়ে ছাদে হেলেধুলে হেটে বেড়াচ্ছে তৃষ্না। ছাদের এক পাসে দাড়িয়ে তাকিয়ে আছে তার ভাই রকি ও আজমল চৌধুরির কথপোকথনের দিকে।

রকি বলে উঠে,
— আদিত্য ও তৃষ্নাকে কয়েকদিনের জন্য বাইরে পাঠাতে চাই। ওরা নিজেদের মতো সময় কাটাক।

চায়ের কাপে চুমু দিয়ে আজমল চৌধুরি বলে উঠে,
— আমার কোনো প্রব্লেম নেই।আর আদিত্যকে আমি মানিয়ে নিয়েছি। আমি জানতাম আদিত্যকে মানাতে পারবো। ওকে কিভাবে মানাতে হয় তা আমার খুব ভালো করেই জানা আছে।

একটু ভিলেনি হাসি দিয়ে রকি বলে উঠে,
— আদিত্য আর তৃষ্নাকে আগে বিদায় করি। পরে কোনো প্রব্লেম আমি দেখতে চাইনা আমার বোনের জীবনে। তাই শুভ্রতা নামের মেয়েটার অস্তিত্ত ও রাখতে চাইনা আমি। কচু কাটা করে করে গঙ্গার জ্বলে ভাসিয়ে দেবো তাকে।

To be continue,,,,,,,,,,,,,,,,

আজকের পর্বটা লিখতে কেমন জানি চোখ ভিজে গিয়েছিলো আমার। অনেকেই বিরক্ত হচ্ছেন গল্পটা নিয়ে। আবার অনেকেই নানান প্রশ্ন করছেন গল্পের ইন্ডিং নিয়ে। যা নিয়ে এক প্রকার গল্পটা লিখার ইচ্ছেটাই চলে গেছে। একটু বড় করার ইচ্ছে থাকলেও আপনাদের মতামতের উপর ভিত্তি করে তা করছি না। তবে হ্যা, ইন্ডিং হ্যাপি হবে। আশা করি উত্তর পেয়ে গেছেন সকলে। ভালোবাসা অরিরাম সকল পাঠক-পাঠিকাদের প্রতি।💝💝💝💝💝

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here