ভালোবাসতে_বারণ পর্ব ৬

#গল্পঃ_ভালোবাসতে_বারণ💔
#লেখাঃ_মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💔
#পর্বঃ__৬

আদিত্য আর তৃষ্না যাচ্ছে কয়েক দিনের জন্য বাইরে থেকে ঘুরে আাসতে। যদিও আদিত্যের তৃষ্নার সাথে যাওয়ার কোনো ইচ্ছেই নেই। তবুও যেতে হচ্ছে তাকে।
সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওনা দিলো তারা। তৃষ্না মুখ হাসিতে ছল ছল করলেও আদিত্য যেনো এক ভিন্ন চিন্তায় মগ্ন।
সারক্ষন শুধু শুভ্রতার চিন্তায় অস্থির করে তুলছে আদিত্যকে।
সারাটা রাস্তা অসস্থিতে কাটলো আদিত্যের।
দেখতে দেখতে পৌছে গেলো তারা তাদের গন্তব্যে। গাড়ি এসে থামলো এক বড় বারির সামনে।
এতোটা পথ জার্নি করে তার উপর আবার মাথায় দুঃশ্চিন্তার ছাপ।
ভেতরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে আদিত্য।
,
,
,
ওদিকে বারান্দায় দাড়িয়ে বাইরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শুভ্রতা। এই তাকানোর মাঝেও যেনো কিছু চোখে পরছেনা শুভ্রতার। আদিত্যের কথা ভাবেই এক হাত নিজের অজান্তেই পেটে চলে যায় তার। চোখ বন্ধ করে ভাবতে থাকে আদিত্যের সাথে কাটানো মুহুর্তগুলো। কতো স্বপ্নই না দেখেছিলো এই জীবনে। কে জানতো স্বপ্ন গুলো এভাবে নিমেসেই এক টুকরু কাচের মতো ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে। যাকে নিজের ভবিষ্যৎ ভেবেছিলো আজ সে ই অতিত হয়ে গেলো। এটাই কি বাস্তবতা? নিজের সন্তানের জন্যও কি একটু মায়া হয়নি তার? এতোটা নির্দয় কিভাবে হয় একটা মানুষ?
হটাৎই নিজের মায়ের ডাকে ধ্যান ভাঙে শুভ্রতার। অনুভব করছে দু,চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরছে অজশ্র তরল পদার্থ। আচ্ছা এই চোখের জলে কি এতোটাই সস্থা যে কথায় কথায় বেড়িয়ে আসছে বার বার। চিৎার দিয়ে কাদতে ইচ্ছে করছে তার। মনে হয় কাদলেই বুঝি কস্টগুলো হালকা হবে।
মায়ের আগমনের আভাশ দেখে দ্রুত চোখের জল মুছে নেয় শুভ্রতা। কিন্তু জ্বলের শেষ বিন্দুটা আড়াল করতে পারেনি সে।
— কেনো নিজেকে কষ্ট দিচ্ছিস বার বার। যে তোর ভালোবাসার দাম টা সঠিক ভাবে দিতে জানেনা। সে কি করে তোকে সারাটা জীবন আগলে রাখবে? তাছারা সাগরকে দেখ। পাগলের মতো ভালোবাসে তোকে। সব যেনেও হাসি মেনে নিয়েছে সব। এখন তুই ই ভাব কার সাথে সুখি হবি তুই। যে তোকে এই সময় খুব নির্মম ভাবে ছেরে গিয়েছে, নাকি যে তোর সব ভুল হাসি মুখে মেনে নিয়ে এই নির্মমতায় তোর পাসে দাড়িয়ে শক্ত করে ধরতে চায় তোর হাত টি। মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কান্না চাপিয়ে হাসার চেষ্টা করে সে। এই হাসিতেই যেনো সম্মতি খুজে পায় তার মা।

এতো দুর এসেও আদিত্য যেনো হারিয়ে আছে সেই পুরুনো সৃতিতে। চার দিকের মনোরম সুন্দর্য যেনো আকৃষ্ট করতে পারেনি তাকে। হাতে কপি নিয়ে পাসে এসে দাড়ায় তৃষ্না। আড় চোখে তৃষ্নার দিকে তাকিয়ে আবার প্রকৃতির দিকে তাকায় সে।
হালকা ঠান্ডা, নিশ্চুপ পকৃতি, এই সময় কপিই যেনো বেষ্ট।
কপির কাপ টা আদিত্যের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
— তোমার জন্য নিজ হাতে বানালাম। ঠান্ডায় ভালো লাগবে।

তৃষ্নার কথায় পাত্তা না দিয়ো সোজা হেটে নিচে চলে যায় আদিত্য। কিছুক্ষন আদিত্যের চলে যাওয়ার তাকিয়ে থেকে কাপ দুটু প্লোড়ে ছুরে মারে রাগে। আাসার পর থেকেই তাকে কেবল ইগনোর করে চলছে আদিত্য।
,
,
,
বাসায় বিয়ের সকল প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। আসিফ সাহেব যেনো অভিমানের পাল্লা কিছুটা হাল্কা করে সব আয়োজন করছে। সাগরও যেনো সব ভুলে নতুন ভাবে আবিস্কার করেছে শুভ্রতাকে। সাগরের সাথে বিয়েতে শুভ্রতার কোনো ইচ্ছে না থাকলেও না বলছেনা আজ।

ওদিকে রকি ও তার বাবা জাফর সাহেব বসে আছে সোফায়। হয়তো শুভ্রতার বিয়ের কথাটা রকির কান অব্দি পৌছায়নি। শুভ্রতাকে নিয়ে কথাপোকথন চলছে নিজেদের মাঝে।
— মেয়েটাকে মেরে ফেলা কি তোর ঠিক হবে বাবা?

— ওই মেয়েটা আমাদের তৃষ্নার জীবনে একটা বাধা। আমি চাই না তৃষ্নার জীবনে কোনো অশান্তি হোক।

— আদিত্য জদি কোনো ভাবে জানতে পারে? জোর করে কি সব হয় বাবা।

— সব ভেবে রেখেছি বাবা। সবাই জানবে শুভ্রতা কারো সাথে পালিয়ে গেছে। তখন আদিত্যও ভুলে যেতে থাকবে অতিত। আমি চাইনা তৃষ্নার কোনো অশান্তি হোক।

হাতে ফোনটা নিয়ে সেখান থেকে উঠেএকটু দুরে গিয়ে দাড়ায় রকি।
— হ্যা ভাই বলুন।

— শুনো আগুন, যেমনটা বলছিলাম ঠিক ওি রকম ভাবে কাজটা শেস করবে। আজ রাতেই।

— ওকে ভাই।

রাতে,
শুভ্রতার ঘরে বিয়ের জন্য জিনিস রেখে যায় তার মা। একটু পর শুভ্রতাকে সাজাতে চলে আসবে কয়েকজন। চোখ বন্ধ করে উপরের দিকে তাকিয়ে বড় বড় শ্বাস নিতে থাকে শুভ্রতা। পেটে হাত দিয়ে আজও কেদে উঠে সে। বড় একটা শ্বাস নিয়ে ওয়াশ রুমে যাওয়ার পস্তুতি নেয় শুভ্রতা। একটা অধ্যায় শেষ করে আরেকটা অধ্যায় পা বাড়াবে আজ শুভ্রতা।
হটাৎ রুমে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পেছনে তাকাতেই, কে যেনো একটা রুমাল চেপে ধরে তার মুখে। আর কিছু মনে নেই শুভ্রতার।

কিছুক্ষন পর,,,,,,,
শুভ্রতাকে সাজাতে আসে কয়েকটা মেয়ে। রুমে খুজে না পেয়ে সারা বাড়ি খুজে বেড়াচ্ছে। ততোক্ষনে বাড়িতে রটিয়ে গেছে শুভ্রতা পালিয়েছে। বড় একটা নিশ্বাস ছেরে বসে পরে আসিফ স্যার। তার মানসম্মানের আর এতটুকু রাখলোনা শুভ্রতা। হটাৎ করে তার বোন তাকে বলে উঠে,
— এটা কেমন কথা আসিফ। বিয়ের আগে এক নাটক করলো, তাও সাগরের কথায় আমি সব মেনে নিয়েছি। আর আজ বিয়ের দিন কিনা সকলের নাক কান কেটে পালিয়েছে ওই মেয়েটা? অতিথিদের কাছে কি বলবো আমি? যে আমার গুনধর পুত্র বধু বিয়ের দিন ই পালিয়েছে?

— আমায় ক্ষমা কর বোন। আর ছোট হতে পারছি না আমি। লজ্জায় মরে জেতে ইচ্ছে করছে আমার। আমায় আর ছোট করিস না।

— তোকে ছোট হতে হবে না, বৌ আমি নিয়েই বাড়ি যাবো ভাই। ওই মেয়েকে আমার আর বৌ করে ঘরে তোলার ইচ্ছে নেই। তোর জদি আপত্তি না থাকে তাহলে আমি বৃষ্টিকেই বৌ করে নিয়ে যেতে চাই। শুভ্রতার থেকে ছোট হলেও আদব কায়দা ভালোই জানে সে। লক্ষি একটা মেয়ে।

— জদিও আমি বৃষ্টিকে এত তারাতরি বিয়ে দিতে চাইনি। তবুও আজ দিতে হবে আমার। কি আমার সম্মান রক্ষা করবি তো মা?
বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে হাত দুটি একত্রিত করে, করুন কন্ঠে বলে উঠে আসিফ স্যার।

বৃষ্টি এগিয়ে বাবার হাত দুটি ধরে বলে, প্লিজ বাবা। আমার কাছে তোমার মাথা নত মানায় না।

— প্লিজ মা আমার সম্মানটা রক্ষা কর তুই?

নিরুপায় হয়ে দাড়িয়ে আছে বৃষ্টি। জীবনে এমন একটা দিন আসবে সে হয়তো কল্পনাই করেনি কখনো।যেই মানুষটিকে একদিন আগেও তার দুলাভাই ভেবেছিলো তাকেই কিনা আজ তার বিয়ে করতে হবে। কেনো হচ্ছে এমন তার সাথে। একটা মেয়ের বিয়ের জন্য জথেষ্ট প্রস্তুতি থাকা দরকার। সেই সুজুগটাও পায়নি সে। অনেক রাগ হচ্ছে আজ শুভ্রতার প্রতি তার। আমি তকো সব সময় সাপোর্টই করে এসেছি আপু। আর তুই আজ? এটা মনে রাখিস আপু, আমার জীবনে কোনো আপু ছিলোনা, আর থাকবেও না কখনো।

বৃষ্টির নিরবতা দেখে আসিফ স্যার আবারও বলে উঠে,
— প্লিজ মা তুই সাগরকে বিয়ে করে আমার সম্মান টা বাচা।

— ঠিক আছে বাবা, তোমার সম্মান রক্ষার্থে আমি সব করতে পারি। তুমি যা বলবে তাই করবো আমি।

আজ সাগরের মুখেও কোনো কথা নেই। ছোটবেলা থেকে যাকে মন প্রান দিয়ে ভালো বেসেছে সেই কিনা এই ভাবে প্রতারনা করলো তার সাথে? আজ আর কিছু বলার নেই সাগরের। বৃষ্টিকে সে মেনে নিতে পারব আমার স্ত্রী হিসেবে? না কক্ষনো না। যেই ফ্যামিলি আমার ভালোবাসার দুর্বলতাটা নিয়ে খেলেই চলছে এতোদিন। সেই ফ্যামিলির মেয়ে কে কি সুখি হতে দিবো? নেভার।

সুন্দর ভাবে বিয়েটা শেষ হলো বৃষ্টির। সাগরের দিকে বার বার আড় চোখে তাকাচ্ছে বৃষ্টি। এই লোকটা আমার স্বামি আজ থেকে। সবকিছু যেনো স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে আজ। ও কি পারবে আমাকে স্ত্রী হিসেবে মানতে?
,
,
,
নির্জন একটা জায়গায় হাত,পা বাধা অবস্থায় পরে আছে শুভ্রতা। মিঠি মিঠি আলোতে চার পাসটা কেমন অন্ধকার অন্ধকার মনে হচ্ছে তা। ভালো করে চোখ মেলতেই দেখে চার পাশে প্রচুর গাছ। হালকা আলোয় বুঝা যাচ্ছে যে এটা একটা জঙ্গল। মিঠি মিঠি চোখে সামনে তাকাতেই দেখে, তার দিকে কেমন অন্য রকম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কিছু নর- পিশাচর।

to be continue……………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here