ভালোবাসতে_বারণ পর্ব ৭

#গল্পঃ_ভালোবাসতে_বারণ💔
#লেখাঃ_মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💔
#পর্বঃ__৭

নির্জন একটা জায়গায় হাত পা বাধা অবস্থায় পরে আছে শুভ্রতা। মিঠি মিঠি আলোয় চার পাসটা কেমন অন্ধকার মনে হচ্ছে তার। হালকা আলোয় বুঝা যাচ্ছে এটা ঘন জঙ্গলে ঘেরা এক নিস্তব্দ পরিবেশ এটা।
ভয়ে একটু উঠে বসে শুভ্রতা। চোখ খুলে সামনে তাকাতেই দেখে তার দিকে অদ্ভুদ দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকে ঘিরে দাড়িয়ে আছে কিছু, নর-পিসাচর।

ভয়ে গলা শুকিয়ে আসে শুভ্রতার। হঠাৎ আচমকা চোখ খোলায় তার অদ্ভুদ লাগে বিষয়টা। একটু আগেই তো ঘরে ছিলো সে। এখন এখানে কি করে এলো?
এটা স্বপ্ন নয় তো?
নিজ হাতে একটা চিমটি কাটে শুভ্রতা।
আরে এটা তো স্বপ্ন নয়। ভয়ে ধিরে ধিরে গলা শুকিয়ে আসছে শুভ্রতা। চিৎকার দেওয়ার শক্তিটাও যেনো হারিয়ে ফেলেছে মুহুর্তেই। অবস্য এখানে চিৎকার দিলেও শুনার মতো কেও নেই। নির্জন জায়গা বাড়ি ঘরও নেই আশেপাশে।
লোক গুলোর চাহুনি দেখে ভয় জেনো দ্বিগুন আকার ধারন করলো শুভ্রতার। নিজের জন্য যতটা না ভয় হচ্ছে তার চেয়ে বেশি ভয় হচ্ছে তার অনাগত সন্তানের জন্য। মুহুর্তেই হাত দটু পেটে চলে যায় শুভ্রতার।
লোক গুলোর চাহুনিতে শুভ্রতা কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে তার সাথে এখন কি হতে চলছে। চোখের জল গাল বেয়ে পরছে তার। তবে কি আজ শেষ রক্ষেটা হবে না?
একজন লোক এগিয়ে আসছে তার দিকে। ভয়ে, আকুতি মিনতি করছে শুভ্রতা।
— প্লিজ এমন করবেন না আমার সাথে। জানিনা কে আপনারা, কি ক্ষতি করছি আমি আপনাদের, কেনোইবা আমাদের ক্ষতি করতে চাইছেন। প্লিজ, হাত জোর করে অনুরুধ করছি আপনাদের। আপনারা আমার গর্বের সন্তানের কোনো ক্ষতি করবেন না।

শুভ্রতার আকুতি মিনতি তে আরো উচ্চস্বরে হেসে উঠে লোকটি। পাসের তিন জনও হেসে উঠে খিটখিটিয়ে।
তারের হাসিতে কোনো দয়া মায়া দেখলোনা শুভ্রতা।
বুঝতে পারছে তার এই কন্নার শব্দ বিন্দু মাত্র পৌছাচ্ছেনা লোক গুলোর কানে। নিজে চেষ্টা করতে হবে। লড়তে হবে তাদের বিরুদ্ধে। নিজের জন্য নয়, গর্বের সন্তানের জন্য হলেও লড়তে হবে তাকে। সন্তান যে ধিরে ধিরে বড় হয়ে উঠছে তার।
অতি নিকটে চলে এসেছে লোক গুলো।

ফাল্গুন মাস,
শুকিয়ে আছে মাঠ ঘাট সব। বাচার একটা পথ দেখতে পায় শুভ্রতা। ঘাসের ফাকে এক মুঠু বালি খামচে ধরে শুভ্রতা। মুঠু ভর্তি বালি ছুড়ে মারে ওই লোক গুলো কে উদ্দেশ্য করে। হটাৎ চোখ বালিতে মাখামাখি হয় লোক গুলোর।
সুজুগ পেয়েই ওখান থেকে উঠে, দৌড় দেয় শুভ্রতা। বোতলের পানি দিয়ে চোখ গুলো ভালোভাবে পরিস্কার করে নেয় তারা।
— আগেই বলেছিলাম, যেই কাজ করতে এসেছি ওই কাজ করে চলে যাই। নাহ্ তোরা মানলি না, তোরা ইনজয় করবি। কর এখন ইনজয়। মেয়েটা জদি কোনো রকম বেচে যায়, তাহলে রকি ভাই কি আমাদের আর বাচিয়ে রাখবে। জিন্দা পুতে দিবে সবাইকে। মেয়েটা কোন দিকে গেলো রে?

— ওই দিকে গেছে।

— ঠিক দেখেছিস?

চোখে চশমা থাকায় বালি তেমনটা আঘাত করেনি তার চোখে।

নির্জন ঘন জঙ্গল। ছোট বেলা থেকেই ভুত প্রেতের নাম শুনলে কিছুটা ভয়ে থাকে শুভ্রতা। আর এগুলো তখনি মনে পরে গভির রাতে বিপদে পরে কেও। যেমন, গভির রাতে বাতরুমে যাওয়া।

জঙ্গটাই শেষ হচ্ছেনা যত দৌড়াচ্ছে। পেটেও পেটেও প্রচন্ড ব্যথা করছে তার। এতোক্ষন পেটে হাত দিয়ে দৌড়াচ্ছিলো। এখন তাও সম্ভব না। মাটিতে বসে পরে সে। চার পাসে তাকিয়ে দেখে কেও নেই। হয়তো ওরা হারিয়ে ফেলেছে তাকে। কিন্তু এখান থেকে বের হতে পারলেই হয়। কিন্তু এই জঙ্গল থেকে বেরোনোর পথটাও হারিয়ে ফেলেছে শুভ্রতা। ভিষন ভুতুরে পরিবেশ, চার দিকে ঝি ঝি পোকার ডাক বেড়েই চলছে। অসম্ভব ব্যথা করছে পেটে। পেটে হাত দিয়ে নিরবে চোখের জল ফেলে যাচ্ছে শুভ্রতা।

কারো পায়ের শব্দে শুভ্রতা হয়তো বুঝতে পারছে লোক গুলো তার কাছাকাছি চলে এসেছে।
চুপটি মেরে গাছের নিচে বসে আছে শুভ্রতা। লোক গুলো তার দিকেই এগিয়ে আসছে। কিন্তু উঠে দাড়াবার শক্তি নেই শুভ্রতার। লোক গুলো হয়তো দেখে ফেলেছে তাকে। এই ভেবে আবারও কুড়িয়ে কুড়িয়ে দৌড়ানোর চেষ্টা করছে সে। হটাৎ খেয়াল করলো তার আর সামনে এগিয়ে লাভ নেই লোক গুলো ঘিরে ফেলেছে তাকে।

হটাৎ জোড়ে থাপ্পর পরায় মাটিতে লুটিয়ে পরে শুভ্রতা। লোকটা একটা পিস্তল বের করে শুভ্রতার মুখ বরাবর ধরে একটা ভিলেনি হাসি দিলো।
এবার আর আকুতি মিনতি করার শক্তিটুকুও নেই শুভ্রতার। হটাৎ খেয়াল করে এতোক্ষন দৌড়ে, রক্তে পা দুটু ভিজে যাচ্ছে তার। পেটের ব্যথাও দিগুন বেরে চলছে। মৃত্যু যেনো তার দুয়ারে আজ কড়া নারছে।

হটাৎই তাদের মাঝে একজন লুটিয়ে পরে মাটিতে। বুকের এপাস ছিরে ওপাস দিয়ে বেড়িয়ে গেছে গুলি। তৎক্ষনাৎ আরেকজনের বুকে এসে লাগে গুলি। পিস্তল হাতে চার পাসটায় তাকাচ্ছে আগুন। হটাৎ তার শেষ সঙ্গিটাও লুটিয়ে পরে মাটিতে। চেচাতে শুরু করে আগুন,
— কে তুই বেড়িয়ে আয় সামনে কাপুরুষের মতো লুকিয়ে মারছিস কেনো? সাহস থাকলে সামনে এসে দাড়া।

একটা শর্টগান হাতে বেড়িয়ে এলো একটি ছেলে। বয়স, ২৫-৩০ এর মাঝামাঝি হবে। ঝাপসা চোখে শুভ্রতা দেখছে তার সামনে পরে থাকা লোক গুলো।
ধিরে ধিরো চোখ দুটু বন্ধ হয়ে আসে তার। পেটে হাত দিয়ে হালকা হাসে সে। এটাই কি তার জীবনের শেষ মুহুর্ত?
হটাৎই শুভ্রতা চোখ বন্ধ করে লুটিয়ে পরে মাটিতে। আর কিছু মনে নেই তার।
,
,
,
বাসর ঘরে বসে আছে বৃষ্টি,
আজ এই রাতটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না সে। বড় ঘোমটা একটু সরিয়ে পুরু ঘরটা একবার চোখ বুলিয়ে দেকে সে। কতো সুন্দর করেই সাজানো রুমটা। কিন্তু এই সোন্দর্যটা তার মনকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। কারন এই সুন্দর্যটা, সারা ঘরের এই সাজ টা আজ তার জন্য নয়। এই সাজের উদ্দেশ্যটা ছিলো শুভ্রতা।
যেই দিন টা ছিলো আমার ইনজয় করার একটা বেষ্ট দিন। আর সেই দিনেই কিনা নিজের বোনের জামাইকে বিয়ে করতে হলো তাকে?
আর এখন কি না নিজের বোনের জন্য সাজানো সেই ঘরে বৌ সেজে বসে অপেক্ষা করছে তার বোনের স্বামি, ওহ্ না এখন তার নিজের স্বামির জন্য।
আচ্ছা ভাইয়া কি আমায় মেনে নিবে নিজের স্ত্রী হিসেবে?

সাগর রুমে প্রবেশ করায় বুকটা ধুক করে উঠে বৃষ্টির। ভাইয়া এখন আমার সাথে কি করবে? মারবে? নাকি বকবে? নাকি কথাই বলবে না? যাই হোক আজ এই দিন টায় আমায় দার করালি আপু তুই। তোকে কখনোই ক্ষমা করবোনা আমি।

একটু নরে চরে বসলো বৃষ্টি। মা সিখিয়ে দিয়েছে সাগর ভিতরে আসলেই তাকে সালাম করতে। তাকে তো আর শিখিয়ে দেওয়ার মতো কেও কেই।
আপু, সেতো নিজেই আজ এমন একটা কঠিন মুহুর্তে পেলে গেছে আমায়।

সালাম করতে গেলেই দু পা পিছিয়ে যায় সাগর।
— আরে আরে কি করছিস তুই? জীবনে তো কখনো সালাম করলি না।

— আজ আপনি আমার স্বামী।

— ব্যাস, যতটুকু আছিস ততোটুকুতেই থাক। আমায় নিজের স্বামি মনে করে ভুক করিস না। আমি তোকে স্ত্রী হিসেবে কখনোই মানতে পারবোনা। আর আজ থেকে এই বাড়িতে থাকতে হলে আমার সব কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে থাকতে হবে। বাপের বাড়িতে রাজরানী ছিলে না কি ছিলে সেটা আমার দেখার বিষয় না। আমি যা বলবো তাই করতে হবে। আমার ডিসিশনের উপর কোনো কথা বলা যাবে না। যা বলবো মাতা নিচু করে শুন্তে হবে প্রতি উত্তর করা আমি একধম পছন্দ করিনা। আর কখনোই স্ত্রীর অধিকার ফলাতে আসতে পারবি না। যদি এইসব মেনে এই বাড়িতে থাকতে চাস তাহলে থাকতে পারিস। যদি মানতে না পারিস, তাহলে ডিবোর্স পেপারে সই করে সুন্দর ভাবে বাসা থেকে চলে যাবি।

মাথা নিচু করে সব কথা শুনছে বৃষ্টি। নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে তার। নিজের বাসর ঘরে দাড়িয়ে স্বামীর মুখে এই কথা শুনতে হবে তা হয়তো কোনো দিন ভাবতেও পারেনি বৃষ্টি। ভাইয়ার কথায় বুঝা গেলো সে আমায় একজন কাজের মেয়ের মতো রাখতে চায় বাসায়। এটাই কি ছিলো আমার ভাগ্য?
,
,
,
একদিন পর,
মিঠি মিঠি চোখে নিজেকে একটা সুন্দর সাজানো গুছানো ঘরে আবিস্কার করলো শুভ্রতা। এটাই বোধ হয় তার নতুন জীবন। মৃত্যুর মুখ তেকে ফিরে এসেছে সে। কিন্তু কে সে, যে তাকে এই নতুন জীবন ফিরিয়ে দিলো?
শুভ্রতার জ্ঞান ফিরায়, হালকা বৃদ্ধ বয়স্ক একটা মহিলা কাকে যেনো ডাক দিলো।
একটা ছেলে এসে প্রবেশ করলো রুমে।
লম্বা একটা ছেলে গায়ের রং ফর্সা। রুমে প্রবেশ করে শুভ্রতার পাসে বসে।
হালকা বয়স্ক মহিলাটি শুভ্রতাকে বলে উঠে,
— তুমি জঙ্গলে পরে ছিলে। সে ই তো তোমায় একানে নিয়ে এসেছে। তোমার নাম কি মা।

ছেলেটা বলে উঠে,
— চাচি ওর মাত্র জ্ঞান ফিরলো। এইসব পরেও জানতে পারবে। এখন একটু বাইরে যাও। ওর জন্য কিছু খাবার নিয়ে এসো।

— আচ্ছা বাবা তোমরা কথা বলো তাহলে। আমি খাবার নিয়ে আসি।

মহিলাটি চলে যাওয়ার পর শুভ্রতা বলে উঠে,
— আপনিই কি সেই, যে ওদের কে,,,,,,

— হুম। আর এইসব, চাচিকে বলবেন না। ও আমায় নিজের ছেলের মতোই ভাবে। আসলে ওর কেও নেই তো তাই আমার কাছে থাকে। কেও নেই বললে ভুল হবে, দুইটা ছেলে আছে। যারা ওকে অসুস্থ অবস্থায় রাস্তায় ফেলে গিয়েছিলো। তার পর এখানে নিয়ে আসি। বাড়ি ফিরে গেলে নাকি তার ছেলে তাকে মারবে। তাই আর জেতে চায় না। আমারও কেও নেই তাই ওকে নিজের মায়ের মতোই ভাবি।

— কেনো মারবে কেনো?

— সে অনেক কাহিনি পরে বলবো। এখন আপনার দরকার সুস্থতা।

— আপনার নামটা?

— রিদ।

— আপনার কেও নেই?

— একটা দির্ঘশ্বাস ফেলে উত্তর দিলো, নাহ্।

— ওহ্ আচ্ছা।

— এইতো খাবার এসে গেছে খাবার খেয়ে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিন।
,
,
,
দরজা বন্ধ করে আদিত্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তৃষ্না।
— কি ব্যপার দরজা বন্ধ করলে কেনো তুমি?

— তো কি করবো? তুমি আমায় ভালো বাসবে না, কাছে টানবে না। তো আমি কি করবো? এতোটা অবহেলা করছো কেনো আমায়। আজ তুমি আবায় কাছে টানবে ভালোবাসবে। আমায় নিজের করে নিবে আদিত্য।

to be continue,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here