ভালোবাসাটা_ঘৃণার পর্ব ১১+১২

#ভালোবাসাটা_ঘৃণার (সিজন ২)
#Only_Love
#Anisha_Sabiha
পর্ব ১১
অনেকক্ষণ হয়েছে আমরা একে ওপরকে জড়িয়ে ধরে সময় কাটাচ্ছি। মনের মাঝে যেমন ভালোবাসার অনুভূতিগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে ঠিক তেমনই সৃষ্টি হচ্ছে ভয়ের। জানি না পেছনদিক টাতে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা বা গোপন চোখ আমাদের খেয়াল করছে কি না! আমি চাই না কোনোমতেই রিক রায়জাদা আর মাহতাব রায়জাদার সন্দেহকে সত্যি প্রমাণ করতে। তাহলে আমার এতোদিনের পরিশ্রম বৃথা হয়ে যাবে। একসময় উনাকে ঠেলতে শুরু করলাম আমি। আয়াশের মাঝে কোনো পরিবর্তন এলো না। উনি আমার দুই গালে হাত রেখে নরম গলায় বললেন….
–“আল্লাহকে অশেষ ধন্যবাদ। আমার নিশাপাখি কে কেঁড়ে নেন নি উনি। এই খুশি আমি কোথায় রাখব জানি না। তবে আজকে আমি অনেক খুশি। আমার এতো আপনজন হারানোর পরে অন্তত তুমি হারিয়ে যাওনি।”

কথাগুলো বলতে বলতে উনার চোখের কোণায় পানি চিকচিক করতে দেখলাম। উনার মুখের কোণে হাসি যেমন লেগে রয়েছে তেমনই চোখের কোণে পানি। একে কি বলে আনন্দের অশ্রু? তবে এই অশ্রুটা একদমই বেমানান লাগছে উনার চোখের কোণায়। রাগ, কঠোরতা, জেদ এসবই মানায় উনার এই সুন্দর চোখে। তাই নিজের দুটো হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুল উনার চোখের কোণায় ধরলাম। উনি পরম আবেশে চোখ বুজলেন। আমি হাতটা সেভাবেই রেখে বললাম…..
–“আমি কি করে বাঁচলাম জানতে চান না?”
আয়াশ চোখ খুললেন। এপাশ ওপাশ মাথা নাড়িয়ে বললেন…..
–“না। তুমি কি করে বেঁচে আছো সেটা জানতে চাই না। আমার কাছে সব থেকে বড় বিষয় তুমি বেঁচে আছো আর আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছো। তোমাকে ছুঁতে পারছি আমি আবারও। এটাই বড় বিষয়।”

মাঝে মাঝে উনার কথাগুলো আমাকে মনে করিয়ে দেয় উনি হয়ত আমাকে আমার চেয়েও বেশি ভালোবাসেন। এতোটা কেন ভালোবাসেন? আদোও এতো ভালোবাসার যোগ্য আমি? নিজের ওপরই হেসে কপালে হাত দিয়ে টোকা দিলাম। কি ভাবছি আমি? ভালোবাসাতে আর ভালোবাসা পেতে কখনোই যোগ্যতা লাগে না। যোগ্যতার জায়গা নেই এখানে। আয়াশ আমার কান্ড দেখে ভ্রু কুঁচকে বললেন….
–“কি ভাবছো?”
আমি হেসে দিয়ে উনার বুকে কপাল ঠেকিয়ে বললাম….
–“কিছু না।”
–“ইইইই! সরি সরি, ভুল সময় হাজির হয়ে গেছি।”

চিৎকার শুনে আয়াশকে ছেড়ে ছিটকে দূরে এলাম আমি। ছোট আমগাছের কাছে অহনা দাঁড়িয়ে একচোখ খুলে আরেক চোখ বন্ধ করে জ্বিহ্বাতে কামড় দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওর চোখেমুখে দুষ্টুমির ভারি ছাপ পড়েছে। আয়াশ অহনাকে দেখে শ্বাস ছেড়ে শার্টের দুই হাত জড়িয়ে বললেন….
–“এটা নতুন কি? তোমার স্বভাবই এমন। যখন তখন ভুল সময় হাজির হওয়া। যার তার সঙ্গে মাথায় ঢিপ খাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি!”
আয়াশের কথা শুনে ফিক করে হাসতেই অহনা চোখমুখ লাল করে আমাদের দিকে তাকালো। আয়াশের দিকে তেড়ে এসে বলল….
–“একদম বাজে বলবেন না। আমি সময়ের ক্ষেত্রে খুব পজেসিভ। আমাকে সময় নিয়ে কথা বললে কিন্তু সহ্য করতে পারব না বলে রাখলাম।”

আয়াশ মাথা দুলিয়ে চোখ বড় বড় করে বললেন….
–“মাই গড! ভয় পেয়েছি তোমার হুমকিতে।”
কথাটা বলে দম ফেটে হাসতে শুরু করলেন উনি। পেটে হাত দিয়ে অনবরত হাসতে থাকলেন। অহনা তো গাল ফুলিয়ে গটগট করে চলে গেল। আমি উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি উনার দিকে। উনাকে আমি যতদূর দেখেছি উনি মটেই হাসিঠাট্টা করার মানুষ নন। নিজের কাছের জন ছাড়া এসব ফাইজলামি উনি মটেই করেন না। অথচ অহনার সঙ্গে প্রথম দিন থেকে কেমন জানি লেগেই চলেছেন। তবে ব্যাপারটা বেশ মজাদার!
হাসি থামিয়ে আমার দিকে তাকালেন উনি। অহনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে উনি পকেটে হাত গুঁজে বললেন…..
–“এই অহনা কে বলো তো? কি করে ওর সঙ্গে পরিচয় হলো তোমার? একটু রাগী রাগী ভাব আছে। তবে বেশ লাগে ওকে।”

–“ওর নিজস্ব কোনো পরিচয় নেই। আমার মতোই অনাথ (শ্বাস ছেড়ে)। তবে আমার তাও পরিচয় আছে। ওর তাও নেই। ছোট থেকেই অনাথ আশ্রমে বড় হয়েছে। আর ওখানকার নিয়মই তো ১৮ বছর পার হলে ওখানে থাকা যাবে না। তাই বেরিয়ে এসেছিল। তারপরেই আকাশ ভাইয়ার সঙ্গে দেখা। আকাশ ভাইয়ার মা-বাবা থাকলেও দুজনেরই ডিভোর্স হয়েছে। বড় হবার পর থেকে কারো কাছেই থাকে না। অহনাকে পেয়ে দুজন ভাইবোনের মতোই থাকত।”
আয়াশ নিচ দিকে তাকিয়ে সব কথা শুনলেন কথা শেষ হতেই উনি এগোতে এগোতে বললেন….
–“ইয়েস, এই আকাশটা কে বলো তো? ওর সঙ্গে একই রুমে থাকছো। ব্যাপারটা আমার মটেই ভালো লাগছে না। ওকে ভালো লাগে না আমার। আমার ভালো লাগে না মানে তোমারও লাগবে না।”

চোখ ছোট ছোট করে ফেললাম আমি। কোমড়ে এক হাত রেখে বললাম….
–“আমরা একই রুমে থাকি কিন্তু বেডে না। রাতে সব লাইট ওফ করে দেওয়া হয় তখন আকাশ ভাইয়া নিচে ঘুমায়। সে যথেষ্ট ভালো একজন মা….”
আমাকে মাঝপথে থামিয়ে দিলেন উনি। আমার দিকে ঝুঁকে নিজের আঙ্গুল ঠোঁটে ঠেকিয়ে বললেন….
–“হুঁশশ। ভালো হক বেস্ট হক তাতে কিছু যায় আসে না আমার। তোমার মুখে ওর প্রশংসা শুনতে জাস্ট কান মনে হচ্ছে ফেটে যাচ্ছে। সো ওর নামে যত প্রশংসা অন্য কেউ করবে। বাট তুমি না। আর আরেকটা কথা, তুমি আজ থেকে আমার ঘরে থাকবে। দ্যাটস ফাইনাল। ওই রায়জাদা দের তো আমি আজকেই মারব।”

বিস্ফোরিত চোখে তাকালাম আমি। উনি আমার কোনোরকম কথা শুনে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলেন উনি। আমি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললাম…..
–“আপনার ঘর, আকাশ ভাইয়ার ঘর, অহনার ঘর, সেঁজুতি মায়ের ঘর। প্রত্যেকটা ঘরে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো আয়াশ। আর আমি চাই না আপনি ওদের মারুন। মারবেন না আপনি।”
আয়াশের পায়ের কদম থেকে গেল। পেছন ফিরে চোখমুখ জড়িয়ে তাকালেন উনি। রাগান্বিত হয়ে বললেন….
–“তুমি কি চাইছো? ওদের আমি ছেড়ে দিই?”
–“সেটা যদি চাইতাম তাহলে রোশনকে খুন করতাম না। বুদ্ধি কি লোপ পেয়েছে আপনার? আমি ওদের সামান্য মৃত্যুর মাধ্যমে এতো সহজে মুক্তি দেব না। ওরা আমার মা-বাবা আর আপনার মা-বাবাকে যে যন্ত্রণা দিয়ে মেরেছে তার দ্বিগুন যন্ত্রণা দিয়ে মারতে চাই। ঠিক সেই কারণ আমি এতো বড় একটা খেলা খেলছি। একবার ভেবে দেখুন, নিজের সব থেকে কাছের বন্ধু যখন বিশ্বাসঘাতকতা করে প্রাণ নেয় তখন সেই মৃত্যুটা কতো কষ্টের হয়!”

আয়াশ আমার হাত ছেড়ে দিলেন। শান্ত হয়ে গেল উনার চাহনি। হঠাৎই কপালের রগ ফুলে উঠল উনার। সায় দিয়ে বললেন….
–“ঠিকই বলেছো। তুমি কি করতে চাইছো?”
আমি আশপাশটা আরো ভালোভাবে দেখে নিলাম। শুকনো ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বললাম….
–“এখন কিচ্ছু বলা সম্ভব নয়। আপনার ফোন নম্বর আমাকে দিয়ে দিন। যা হবে ফোনে। ওরা বাজপাখির মতো দৃষ্টি দিয়ে আমাদের ওপর নজর রাখে। সেদিন আপনি জিজ্ঞেস করেছিলেন না? আদ্রিতা আপনার সন্তান কি না? সেদিন আমি উত্তর দিতে পারিনি। রিক রায়জাদা ছিল আপনার পেছনে আড়ালে। আজ বলছি, আদ্রিতা আপনারই রক্ত। আপনার অংশ। আমার আর আপনার ভালোবাসার অংশ আয়াশ।”

আয়াশ কিছুক্ষণ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন। তারপরেই অস্থির হয়ে পড়লেন। ছটফটানি শুরু করলেন। হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়লেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন….
–“সত্যি বলছো তুমি?”
–“কি মনে হয়? আপনার পর আর কাউকে ভালোবেসেছি?”
উনি উম্মাদের মতো হাসতে শুরু করলেন। আমিও উনাকে আটকায় নি। মাঝে মাঝে উম্মাদের ন্যায় হাসা ভালো। উনি উঠে দাঁড়ালেন। আমি উনার কাঁধে হাত রেখে বললাম….
–“আপনাকে শুধু এটা খেয়াল রাখতে হবে আপনার যে সব মনে পড়েছে এটা যাতে কেউ না জানে। রিক রায়জাদা আর মাহতাব রায়জাদার সাথে ঠিক আগের মতোই ব্যবহার করতে হবে। বাকিটা পরে জানবেন।”
আয়াশ মুচকি হেসে আগে আগে দ্রুত চলে গেলেন। আমি উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।

প্রোপার্টির কাগজ নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছেন মাহতাব। উনার কপালে বেশ কয়েকটা ভাঁজ। এই পেপারে কি করে সই করাবেন আয়াশকে সেটাই বুঝে উঠতে পারছেন না উনি। ওদিকে রিক অস্থির হয়ে উঠেছে প্রোপার্টি পেপার সই করিয়ে মেরে ফেলবে আয়াশকে। কিন্তু আয়াশ তো কম চালাক নয়। ওর তো শুধু স্মৃতিশক্তিই শুধু লোপ পেয়েছে। বুদ্ধি তো আর শুষে নিতে পারেনি! মাথা যেন আর চিন্তা নিতে পারছে না। চশমাটা খুলে বেডে বসে পড়লেন উনি। নিজের চোখ হালকা কচলে কিছু একটা ভাবতে লাগলেন উনি। প্রায় মিনিট বিশেক কেটে গেল এভাবেই। মাথায় খেলতে লাগল কোনো নতুন ষড়যন্ত্রের সূচনা পর্ব। ফোনটা হাতিয়ে হাতে নিলেন উনি। চশমা লাগিয়ে কারো নম্বর ডায়াল করে কানের কাছে ধরলেন ফোনটা। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে বললেন….
–“হ্যালো, কি খবর? কেমন আছিস রায়হান?”

ওপর পাশ থেকে জবাব এলো….
–“আরে বাহ! এতোদিন পর মনে পড়ল আমাকে? ভালোই তো আছি। তুই কেমন আছিস?”
–“হুমম চলছে দিনকাল কোনোভাবে।”
আরো কিছু কথা চলল টুকটাক। কথার মাঝে মাহতাব বলে উঠলেন…..
–“তা তোর মেয়ের বিয়ে-শাদি দিয়েছিস?”
–“না। মেয়েটাকে তো চিনিস। মনমতো ছেলে পাচ্ছে না। একমাত্র মেয়ে আমার। ওর পছন্দেই তো সব হবে তাই না?”
মাহতাব হাসার চেষ্টা করে বললেন….
–“অবশ্যই অবশ্যই। বলছিলাম যে আমার বাড়িতে একটা ছেলে আছে বুঝলি। আমার বেস্টফ্রেন্ড ছিল বলেছিলাম না? তার ছেলে। তো চলে আয় একদিন সময় করে মেয়েকে নিয়ে। আমি সিউর তোর মেয়ের ছেলে পছন্দ হবেই হবে।”

ওপাশ থেকে রায়হান সাহেব কিছুটা ভাবুক হয়ে পড়লেন। নির্লিপ্ত ভাবে বললেন….
–“বলছিস? পছন্দ হবে?”
–“তোকে গ্যারান্টি দিচ্ছি। তোকে না হয় একটু পরেই ছবি পাঠিয়ে দিচ্ছি দেখে নিস।”
–“আচ্ছা ঠিক আছে। দেখছি ব্যাপারটা।”
ফোন কেটে দেন মাহতাব। যা করার খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে। এই বিয়ের মাধ্যমেই সব সম্পত্তি লিখে নেওয়া যাবে আর জানাও হয়ে যাবে আয়াশ ঠিক কতটা কি মনে আছে। এক ঢিলে দুটো পাখি মারতে চান উনি।

রাতের খাবারের পর্ব শেষ করে সবাই যে যার ঘরে। আমি আদ্রিতাকে নিতে আয়াশের রুমের দিকে যাচ্ছি। সেই বিকেলে আয়াশের কাছে রয়েছে আদ্রিতা। আমার কাছে আসেনি এখনো মেয়েটা। সব থেকে অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে আমাকে ছাড়া যেই মেয়েটা এক মূহুর্ত থাকতে পারত না সেই মেয়েটা আজ আমাকে ভুলে যাবার পথে।
আয়াশের রুমের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই চোখ পড়ল আদ্রিতার দিকে। আদ্রিতা উল্টো হয়ে শুয়ে চকলেট খেতে ব্যস্ত। ও শুধু নিজেই খাচ্ছে না সেই সঙ্গে গাল দুটোকেও সুন্দর ভাবে খাইয়ে দিচ্ছে। শুধু তাই নয় বেডশিটের কিছু অংশকেও খাইয়ে দিচ্ছে। ঘরের ভেতর প্রবেশ করলাম আমি। আমার দিকে একপলক চেয়ে চকলেট মুখে দিয়ে আধো আধো গলায় বলে উঠল….
–“মা….মাম্মা!”

আমি বেডের কোণায় বসে আদ্রিতাকে কোলে নিয়ে বললাম….
–“এটা কি হচ্ছে? চকলেট কেউ এভাবে খায়? দেখি দাও আমি খাইয়ে দিই।”
আদ্রিতা কিছুতেই আমার হাতে চকলেট দিতে রাজি নয়। ওর মুখের আশেপাশে লেগে থাকা চকলেট হাত দিয়ে মুছে দিলাম সযত্নে। তারপর ওকে জিজ্ঞেস করলাম…..
–“তোমার মি. হ্যান্ডসাম কোথায়?”
–“দানি না। এত্তু আগে ঘল থেকে বেলিয়ে গেল। এত্তু পলেই আসবে বলেতে।”
কথাটা বলে আবারও চকলেট খেতে মগ্ন হয়ে পড়ল আদ্রিতা। আজকে শুক্রবার। উনার অফিস নেই। সেই কারণে সারাদিন আদ্রিতার সঙ্গেই কাটিয়ে দিয়েছেন উনি। হয়ত বাইরে কোনো কাজেই গেছেন। এসব ভাবতে না ভাবতে পায়ের ধুপধাপ আওয়াজে ধ্যান ভাঙল আমার।

সরু দৃষ্টিতে তাকালাম সামনে। আয়াশ ঘরে প্রবেশ করলেন। উনাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে গেল আমার। উনার হাতে কাগজের মতো কিছু একটা। সেটা দুমড়ে হাতে রেখে দিয়েছেন উনি। সিংহের মতো ফুঁসে চলেছেন বারে বারে। হঠাৎ হাতে থাকা জিনিসটা ফ্লোরে ফেলে দিলেন। আমার দিকে চেয়েও কিছু বলতে গিয়ে বলতে পারলেন না। আমিও জিজ্ঞেস করতে গিয়ে পারলাম না। ধীর গলায় বললাম….
–“আর ইউ ওকে?”
আয়াশ উত্তর দিলেন না। উনি যে চরম ভাবে রেগে আছেন সেটা হারে হারে বুঝতে পারছি। আর কোনো কিছু না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম আমি আদ্রিতাকে নিয়ে।

রুমে গিয়ে আদ্রিতাকে আমার পাশে বসিয়ে ফোন নিয়ে বসে পড়লাম। আয়াশকে কল করতে যেতেই উনার নম্বর থেকে মেসেজ এলো। সঙ্গে সঙ্গে ওপেন করলাম মেসেজ। স্পষ্ট লিখা আছে….
–“কথা আছে। স্টোর রুমের দিকে এসো।”
আমি আকাশ ভাইয়ার কাছে আদ্রিতাকে দিয়ে তাড়াতাড়ি স্টোর রুমের উদ্দেশ্যে পা চালালাম।
রুম থেকে বেরিয়ে দোতালায় নামতেই মনে হলো কারো পায়ের আওয়াজ পাচ্ছি। থেমে গেলাম। কেউ আমার দিকে নজর রাখছে বুঝতে পারছি। তাই নিচ তালায় নেমে এলাম। পা না থামিয়েই বিদ্যুৎ এর গতিতে পেছনে ঘাড় ঘুরাতেই রিক রায়জাদাকে দেখতে পেলাম। আমার নজরে পরে হকচকিয়ে উঠল সে। বাঁকা হাসি দিয়ে বললাম….
–“আমাকে ফলো করলেই সব সত্যিটা বেরিয়ে আসবে না। আপনার এই ছোট্ট মস্তিষ্ক আপনি বরণ অন্য কাজে লাগান।”

রিক রায়জাদা আমার দিকে এগিয়ে এলেন। মাথা ঝুঁকিয়ে এক ভ্রু উঁচিয়ে বলল….
–“দিন আমরাও আসবে। মাইন্ড ইট।”
–“নাউ গেট আউট।”
অপমানে মুখটা থমথমে করে আমার পাশ কাটিয়ে চলে গেল সে। তাচ্ছিল্যের চোখে তাকালাম। লোভী মানুষগুলো বোধহয় এমনই হয়। এতোদিন তো তাদেরই দিন ছিল। তবুও কি শখ মিটছে না? শুনেছি যারা লোভে ফেঁসে যায় তাদের চাওয়ার শেষ থাকে না। এই অমানুষের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।আর এদের দিন ফিরে আসতে দেব না আমি।
হেঁটে হেঁটে দোতালার শেষ প্রান্তে বাঁক ঘুরে স্টোর রুমের দিকে এলাম। সেখানে টিমটিমে আলোতে আয়াশের শক্ত চোখমুখ বোঝা যাচ্ছে। আমি একটু একটু করে উনার সামনে তাকাতেই মাথা তুলে তাকালেন উনি। হিংস্র চোখমুখ দেখে আঁতকে গেলাম আমি।

কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম….
–“কি হয়েছে আপনার? যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন। সময় নেই আমার হাতে রিক সন্দেহ করছে।”
আয়াশ কিছু না বলে আমার হাতে কিছু একটা দিলেন। মুচড়ানো একটা কোনো ছবি। জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে চাইলাম।
–“এটা কি?”
–“খুলে দেখো।”
ছবিটার ভাঁজ খুলতে লাগলাম আমি। একটা মেয়ের ছবি আবিষ্কার করলাম। একটা সুন্দর মেয়ের হাসোজ্জল ছবি। কিছুই বুঝলাম না। আয়াশ ছবিটা দিয়ে কি বোঝাতে চাইছেন? আমি কিছু জিজ্ঞেস করবার আগেই উনি চোয়াল শক্ত করে বললেন….
–“ওই মাহতাব রায়জাদা আমার সহ্যের সীমার বাইরে চলে যাচ্ছে নিশাপাখি। আই কান্ট টলারেট হিম। ওই জানোয়ারের সাহস হয় কি করে আমার সঙ্গে অন্য কারো বিয়ে ঠিক করার? ওকে আজ আমি এক্ষুনি মেরে ফেলব।”

উনি জায়গা ছেড়ে যেতে নিলেন। আমি উনার হাত আঁটকে ধরলাম। আমাকেও যেন পরোয়া করতে চাইছেন না উনি। হিংস্র থেকে হিংস্রতম হয়ে উঠেছেন। আমার হাত বার বার ছাড়ানোর চেষ্টা করছেন। আমিও উনার ব্যবহারে বিরক্ত হলাম। তিক্ত মিশ্রিত সুরে বললাম….
–“আচ্ছা, আপনি ওদের মারতে চান? কি করে মারবেন শুনি?”
–“কেন? আমাকে চেনো না তুমি? তুমি তো নিজেই একদিন আমাকে গ্যাংস্টার প্রমাণ করে জেলে ঢুকিয়েছিলে। আমি কতটা ভয়ানক হতে পারে সেটা তুমি জানো। আমার কাছে যা যা অস্ত্র আছে সব দিয়ে ওদের অনায়াসে শেষ করা যাবে। এতোদিন অস্ত্র থেকে দূরে ছিলাম বলে আমাকে দুর্বল ভেবো না। আমি তোমার স্থানে অন্যকাউকে রাখতে পারবো না মায়াবিনী। তোমার স্থান কেউ ছুঁতে পারবে না। এই বিয়েটা আমার কাছে যন্ত্রণার মায়াবিনী! ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড।”

দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে উনাকে বুঝানোর চেষ্টা করলাম।
–“আমি জানো আপনি মারতে পারবেন ওদের। এজন্য আপনার নিজের লোকের সাহায্য লাগবে। আছে আপনার সেই আগের মতো লোকজন? যাদের মাধ্যমে নিজের গ্যাং তৈরি করেছিলেন? আছে সেই সব অস্ত্র?”
আয়াশ চুপ হয়ে গেলেন। আমি উনার চুপ হওয়া দেখে বললাম….
–“এখন আমাদের কাছে কিচ্ছু নেই আয়াশ। আপনাকে এটা বুঝতে হবে। ওরা এখন আমাদের থেকে বেশি পাওয়াফুল। আপনার কাছে থাকা অস্ত্র আর লোকজন কিছুই নেই। আপনার লোকজনকে ওরা মেরে ফেলেছে। আপনার বাড়িতে থাকা অস্ত্র সরিয়ে ফেলেছে।”

আয়াশ এবার অস্থির হয়ে উঠলেন। মাথায় হাত রেখে উত্তেজিত হয়ে বললেন….
–“তাহলে কি করব আমি বলে দাও? এতো বছর পরেও আমি তোমাকে আর আমাদের সন্তানকে নিয়ে কেন সংসার করতে পারব না আমি?”
আমি কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বুকে পাথর রেখে বললাম….
–“আপনি এই বিয়ের জন্য রাজি হয়ে যান।”
#ভালোবাসাটা_ঘৃণার (সিজন ২)
#Only_Love
#Anisha_Sabiha
পর্ব ১২
আমাকে থাপ্পড় মারতে গিয়েও থেমে গেলেন আয়াশ। আমি চোখ বন্ধ করে ঘাড় ঘুড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছি। কয়েক সেকেন্ড পর চোখ খুলে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম উনার দিকে। যেই মানুষটা আমাকে আঘাত করার কথা ভাবতে অবধি পারেন না সেই মানুষটা আজ আমার গায়ে হাত তুলতে যাচ্ছিলেন। চোখের পানি বাঁধ মানতে চাইছে না। তবুও ঢক গিলে বললাম….
–“আপনি আমাকে মারতে চান?”
আয়াশ হাত নামিয়ে নিলেন। বড় একটা শ্বাস নিয়ে বললেন….
–“আমি বিয়ে করতে পারব না। যেখানে আমার স্ত্রী আছে। আমার সন্তান আছে। আমি আমার স্ত্রী-সন্তানকে যথেষ্ট ভালোবাসি। যাই হয়ে যাক এই বিয়ে হবে না।”

কথাটা বলে দাঁড়ালেন না উনি। অন্যদিকে ফিরে হাঁটতে শুরু করলেন। আমার থেকে অনেকটা দূরে চলে গেলেন উনি। আমি কন্ঠ শক্ত করে বললাম….
–“আপনি যদি আমাকে একটুও বিশ্বাস করে থাকেন এই বিয়েতে রাজি হবেন।”
তবুও দাঁড়ালেন না চলে গেলেন উনি। এবার আর কান্না থামাতে পারলাম না। বসে পড়লাম দেয়াল ঘেঁষে। আমি যে মনে পাথর তুলে উনাকে বিয়েতে রাজি হতে বলেছি উনি কি জানেন? হয়ত জানেন না। এছাড়া কিই বা করার ছিল আমার? কিচ্ছু করার ছিল না। আমি অসহায়। আয়াশ যদি বিয়েতে রাজি না হয় তবে মাহতাব রায়জাদা নিশ্চিত হয়ে যাবে যে আয়াশের আমার কথা কিছু না কিছু মনে আছে। সব কিছু জেনেশুনেই এই চাল চালছে সে। আয়াশ যেভাবে চলে গেলেন উনাকে দেখে মনে হলো না উনি রাজি হবেন বিয়েতে। জানি না কি হবে এতোকিছুর পরিণাম!

সকাল বেলা ব্রেকফাস্টে প্রথমে মিষ্টি দেওয়াতে বেশ অবাক হলাম। মিষ্টিটা নিজহাতে সার্ভ করছে রিক রায়জাদা। ভাবা যায়? বিস্ফোরিত নয়নে চেয়ে উৎসাহ নিয়ে বললাম…..
–“হঠাৎ মিষ্টি? সরি টু সে বাট আমি মিষ্টি খেতে পছন্দ করি না।”
রিক আমার কথা কানেই তুলল না। আমার প্লেটে আরো দুটো মিষ্টি দিয়ে বলল…..
–“আমেরিকাতে সুখবর পেলে কি হয় জানি না বাট আমাদের এখানে সুখবর পেলে মিষ্টি খাওয়ানো হয়।”
–“সুখবর? কিসের সুখবর?” (ভ্রু কুঁচকে)
রিক রায়জাদা মিষ্টির হাঁড়ি টেবিলে রেখে একটা মিষ্টি নিজের মুখে পুরে নিয়ে ধীরস্থির হয়ে বললেন…..
–“আয়াশের বিয়ে হচ্ছে। আর দারুণ ব্যাপার হচ্ছে আপনারাও আছেন। আপনারা থাকায় আমাদের আনন্দ আরো দ্বিগুন হবে তাই না মি. রেজওয়ান?”
আকাশ ভাইয়ার দিকে তাকালো রিক।

আকাশ ভাইয়া সুখবর নামক অতি যন্ত্রণাদায়ক খবরটা শুনে খাওয়া থামিয়ে আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। অহনা কাশতে শুরু করে দিয়েছে তাই পানি ঢকঢক করে খেয়ে সেও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তারা বোধহয় এই সুখবরটা মোটেও এক্সপেক্ট করেনি। তাদের মতো আমিও করিনি। তাই হুট করে থমকে বসে আছি। আশেপাশে যেন সব কিছু স্থির। অবশেষে রাজি হয়েই গেলেন আয়াশ। আমিই তো রাজি হতে বলেছিলাম উনাকে তবে আমার এতোটা কষ্ট সইতে হচ্ছে কেন?
–“কি হলো মি. রেজওয়ান? আপনি তো দেখি খাওয়ায় থামিয়ে দিয়েছেন।”
অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল আকাশ ভাইয়া। জোর করে হাসার চেষ্টা করে বলল….
–“এতো বড় সুখবর তো তাই একটু অবাক হয়েছি।”

মাহতাব রায়জাদা এতোক্ষণ সবার কথা শুনতে মগ্ন ছিলো। খাবার মুখে নিয়ে সে হাসতে হাসতে বলল…..
–“আপনারা বোধহয় আমাদের জন্য লাকি হয়ে এসেছেন। আপনারা বিজনেস ডিল করছেন। আর আপনারা থাকতে থাকতে আয়াশের বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই বাড়ির জন্য আপনারা সত্যিই শুভ।”
আকাশ ভাইয়া নকল হাসি দিয়ে আমার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। আমি চোখের কার্নিশে লেগে থাকা পানি গড়িয়ে পড়ার আগেই অগোচরে মুছে নিলাম। মুখে হাসি ঝুলিয়ে বললাম….
–“ইয়েস। আমরা লাকি হওয়ারই কথা। দিনে দিনে বুঝতে পারবেন আরো কত ভালো কিছু ঘটবে আপনাদের সঙ্গে।”
–“তাই যেন হয়। তাহলে মিষ্টিমুখ টা করে নিন।”

আমি মিষ্টির দিকে তাকালাম। আদ্রিতা পাশের চেয়ার থেকে ডেকে উঠল…..
–“মা…মাম্মা।”
–“হ্যাঁ মাম্মা?”
–“মিত্তার হ…হ্যামসাম।”
কথাটা বলে সিঁড়ির দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল আদ্রিতা। আমি সেদিকে তাকাতেই যন্ত্রণা আরো দ্বিগুন হয়ে বিঁধল আমার পুরো শরীরে। দম আঁটকে যেতে শুরু করল। সাদা রঙের শার্ট পড়ে হাতের কনুই গুঁজতে গুঁজতে নেমে আসছেন উনি। মুখটা অন্যান্য দিনের মতো সেই হাসোজ্জল ভাবটা নেই। কাঁপা কাঁপা হাতে মিষ্টিটা তুলে নিলাম আমি। আয়াশ এসে সরাসরি আমার সামনের চেয়ারে বসল। এক পলক আমার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল…..
–“খাবার দাও আমাকে। অফিসে যেতে হবে।”

আমি উনার সামনের পুরো মিষ্টি মুখের ভেতর ঢুকিয়ে দিয়ে চিবুতে লাগলাম। আয়াশ আমার দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছেন। আমার মিষ্টি খাওয়া দেখে আদ্রিতার দিকে তাকালেন উনি। আদ্রিতাকে তার কাছে যেতে ইশারা করতেই আদ্রিতা তড়তড় করে চেয়ার থেকে নেমে দৌড় দিল আয়াশের দিকে। ভাগ্য কতটা খারাপ হলে নিজের স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের মিষ্টি খেতে হতে পারে জানা নেই আমার। তবে আমাকে উনার বিয়ের আগের প্রত্যেকটা মূহুর্তে যে কাঠখড়ির মতো পুড়ে মরতে হবে সেটা হারে হারে বুঝতে পারছি। হঠাৎ মাহতাব রায়জাদা ব্যস্ত হয়ে বলে উঠলেন….
–“আয়াশ, তুমি অফিসে যাবে মানে কি? আজকে তোমার জন্য পাত্রীপক্ষ ছুটে আসছে। তুমি না থাকলে কি বিশ্রী ব্যাপার হবে বলো তো।”

আয়াশ তখন আদ্রিতার ছোট্ট হাতে চুমু খেতে ব্যস্ত। চুমু খেয়েই উনি কারো দিকে না তাকিয়ে বললেন…..
–“আমি চেষ্টা করব বিকেলের মাঝে ফিরতে। কিন্তু সিউরিটি দিতে পারছি না সরি।”
এরপর আর কোনো প্রকার কথা বললেন না উনি। খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে একবার উনার দিকে তাকালাম। উনি একবারো তাকালেন না। বিয়ে ঠিক হওয়াতে যেন চরম নির্দয়ের উপাধিটা অর্জন করতে চলেছেন। খেয়েই উঠে চলে গেলেন নিজের ঘরে। আমার গলার নিচে তেমন খাবার নামলো না। এই কষ্ট, এই দহন নিয়ে খাবার খাওয়া অসম্ভব! অল্প খেয়ে টেবিল থেকে উঠে এলাম।

সিঁড়ির দিকে উঠতেই আমার হাত ধরে আকস্মিকভাবে কেউ টেনে নিয়ে এলো সিঁড়ির কোণার রুমে। অন্যমনস্ক হয়ে ছিলাম আমি। ব্যাপারটাই চরম হতবাক হলাম। সেঁজুতি মা আমাকে নিজের ঘরের সামনে দাঁড় করিয়ে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিল। তারপর অস্থির ভঙ্গিতে বলে উঠল…..
–“এসব আমি কি শুনছি? যুরবাজ বিয়ে করছে?”
অন্যপাশ ফিরে গেলাম আমি। গলা খাঁকারি দিয়ে বললাম….
–“হ্যাঁ।”
সেঁজুতি মা আমাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে কঠোর গলায় বলল….
–“তুই ওকে বিয়ে করতে দিচ্ছিস কি করে? ওর মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে?”
–“আমিই ওকে বিয়ে করতে বলেছি সেঁজুতি মা।”
তার মুখ হা হয়ে গেল। আমার কাঁধ ধরে ঝাঁকাতে শুরু করল সে। আমি নিচ দিকে তাকিয়ে থাকলাম।
–“তোর মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে? তুই বুদ্ধিহীনের মতো কাজ কি করে করছিস?”

–“আমার কিছু করার নেই। কিছু না। আমি বুঝেশুনেই উনাকে বিয়েতে রাজি হতে বলেছি। নয়ত ওরা সতর্ক হয়ে যেতো। শুধু বিয়েতে রাজি হতে বলেছি। বিয়ে করতে বলিনি। ওই বিয়ে হবেও না।”
আমার কথা কিছুই বুঝল না সেঁজুতি মা। ভাবলেশহীন হয়ে চেয়ে রইল আমার দিকে। আমি কিছু না বলেই সেখান থেকে চলে এলাম। পিছু ডাকলো আমাকে কয়েকবার। সাড়া দিলাম না। মনের সঙ্গে যুদ্ধ করে হেরে যাচ্ছি বার বার। বুকের বাম পাশে চিনচিনে ব্যথা সহ্য করার সীমা অতিক্রম করতে বসেছে। সিঁড়ির ওপর যত ধাপ ফেলছি ততই দুর্বল হয়ে যাচ্ছি।

রুমে এসেই কল করলাম আয়াশকে। প্রথম বার ফোন তুললেন না উনি। দ্বিতীয় বারও ফোন তুললেন না। তৃতীয় বার কল করতে না করতেই ওপাশ থেকে ঝাঁঝালো গলা ভেসে এলো।
–“কেন ফোন করছো? আরো তামাশা করানোর বাকি আছে তোমার?”
উনার এই রাগ ভরা কথায় ব্যথিত হলাম। দুর্বল গলায় বললাম….
–“এটা কিভাবে কথা বলছেন আপনি?”
–“কেন? তুমি তো বোধহয় এটাই চেয়েছিলে। আমরা অচেনা হয়ে থাকি একে ওপরের। চাওনি? সেই কারণেই বিশ্বাসের ওপর আঙ্গুল তুলে রাজি করিয়েছো আমাকে।”
আমি সোজাসাপটা ভাবে জবাব দিলাম।
–“একটু আমার ঘরের বাইরে আসবেন?”
ওপাশ থেকে ফোন কেটে গেল। উনি কি আসতে চান না?

আমার ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো। মিনিট দুয়েক পর আমার ঘরের দরজায় ঠকঠক আওয়াজ হলো। বাইরে গিয়ে দেখলাম উনি এসেছেন। এতো দুঃখের মাঝে উনি তো আমার একমাত্র সুখ। আমি বাইরে বের হতেই উনি বাঁকা চোখে তাকিয়ে বললেন….
–“আদ্রিতা আমার ঘরে ঘুমিয়ে পড়েছে। নিয়ে যেয়ো ওকে। আমি অফিসে যাব।”
আমি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে শান্ত গলায় বললাম….
–“আমি রাগ করেছেন আমার ওপর? আপনাকে পরিস্থিতি বোঝায় চেষ্টা করতে হবে। আমাদের হাতে কিছুই নেই আয়াশ।”
–“তাই বলে তুমি আমাকে এভাবে বাধ্য করবে? তোমার ওপর অসম্ভব রেগে আছি আমি। কাজটা ঠিক করো নি। তোমাকে আমি উম্মাদের মতো ভালোবাসি। তুমি তার প্রতিদান এভাবে দিচ্ছো?”

আয়াশ আমাকে একনাগাড়ে ভুল বুঝে চলেছেন। চোখজোড়া ছলছল করে উঠল আমার। শুধু অশ্রু গড়িয়ে পড়ার অপেক্ষা। কিছু বলার সুযোগ টুকুও দিলেন না উনি। আবারও শক্ত গলায় বললেন….
–“আমি তোমাকে আঘাত করতে পারি না বলে তুমি যা ইচ্ছে করে যাচ্ছো আমার সঙ্গে। অনেক অন্যায় করে যাচ্ছো আমার সঙ্গে। প্রথমত, তুমি বেঁচে থেকেও আসোনি আমার কাছে। দ্বিতীয়ত, আমার সন্তানকে কতগুলো দিন আলাদা করে রেখেছিলে আমার থেকে। ওর জন্মানোর সময় বা ওর জন্মানোর আগে আমি থাকতেই পারিনি। সন্তান জন্মানোর আগে কত সুন্দর স্মৃতি থাকে জানো? কোনোকিছু করতে পারিনি আমি।”
–“আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন।”
বেশ অসহায়তাপূর্ণ আর শুকনো গলা আমার।

আয়াশ আমার হাতটা ধরে হাতের দিকে তাকিয়ে বলল….
–“না বুঝছি না। একটাই কথা বলতে চাই যে, তুমি এমন কিছু করো না যাতে আমার #ভালোবাসাটা_ঘৃণার হয়ে যায়। আমার সম্পর্ক আবারও যেন আগের মতো খামখেয়ালি না হয়।”
কথাটা বলে হাত ছেড়ে দিলেন উনি। পেছন ঘুরে পকেটে হাত গুঁজে বললেন….
–“আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। অফিস যেতে হবে।”
শুধুমাত্র নিজের সবটুকু রাগ ঝেড়ে চলে গেলেন উনি। আমাকে উনার ভুল ধারণা বদলাবার সুযোগই দিলেন না। মাঝে মাঝে মনে হয় কিছু সময় থাকে যখন সব কিছুই ভুল ভাল হয়।

সময় দুপুর একটা পঁচিশ মিনিট। আকাশ ভাইয়ার ল্যাপটপে কিছু কাজ করে চলেছি আমি। বেশ কিছুক্ষণ পর আদ্রিতাকে কোলে নিয়ে ঢুকলেন আকাশ ভাইয়া। আমাকে মনোযোগী হয়ে দেখে ভ্রু কুঁচকে দাঁড়ালো আমার পাশে। ল্যাপটপের স্ক্রিন দেখার চেষ্টা করে বলল….
–“কোনো কাজ করছো?”
–“কাজ তো অবশ্যই। একটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ কাজ।”
আদ্রিতাকে বেডে বসিয়ে দিয়ে উৎসুক হয়ে ঝুঁকে পড়ল আকাশ ভাইয়া। জানার জন্য জিজ্ঞেস করল….
–“কি কাজ?”
আমি মুখে কিছু বললাম না। ল্যাপটপে টাইপ করে দিলাম।
–“যেই জমিতে হোটেল তৈরির কথা মানে আমাদের যেই জমি নিয়ে ডিল হয়েছে সেখানে একটা পুরোনো বাংলো আছে না? সেটা তো দেখতে কয়েকদিন পর যাচ্ছি তাই না?”

আকাশ ভাইয়া মাথা ঝাঁকালো। আমি আবারও টাইপ করলাম।
–“এই ডিলের মাঝে শেয়ার তো মারহাব রায়জাদারও আছে। তাই ভাবছি সেখান থেকেই মারহাব রায়জাদাকে মৃত্যুভয়ের একটা ট্রেলার দেব।”
–“কিন্তু কিভাবে?”
আমি ল্যাপটপটা নিচে নামিয়ে ভাবতে লাগলাম। চোখ টেনে ধরে বললাম…..
–“ভাবতে থাকি। কোনো না কোনো উপায় ঠিক পেয়ে যাব।”

চলবে…..🍂🍂
বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর ছোট করে দেওয়ার জন্য দুঃখিত। আমি একটু ব্যস্ত আছি।
চলবে…..🍂🍂
বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here