ভালোবাসার নতুন প্রনয়ণ পর্ব ১৩

গল্পের নামঃ- #ভালোবাসার_নতুন_প্রনয়ণ

লেখিকাঃ- #konika_islam (sanju)

part:13

হূর ক্লাস থেকে বেরহতেই এরিশ হূরের হাত ধরে সোজা হাটা দেয় বাইরের দিকে। হূর বলে যাচ্ছে কোথায় যাচ্ছি কি এইটা ঐটা। এরিশ হঠাৎ করে হূরের দিকে তাকাতেই হূর কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। তা দেখে এরিশ একটু হেসে বলে

” যদি এতোই ভয় করে তাহলে এতো বকবক করিস কেন?? হূর কিছু বলে না তা দেখে এরিশ কিছু টা রেগেই বলে

” যখন কথা বলা দরকার তখন বলবে না। নয়তো অলটাইম ঐ বি-টিবির মতো ঝিরঝির করতেই থাকে।

হূর এরিশের পা থেকে মাথা অব্দি দেখে বলে

” আপনি কি?? আপনি তো আসতো এরিশ নামক প্যারিস ভাইরাস। এখন বলবেন তো কোথায় যাচ্ছি??? বাসায় থেকে তো ফোন আসার প্রশ্নই আসে না। এরিশ বলে

” বাহ বাহ তোর এতো বুদ্ধি!!! , আল্লাহ তাহলে বুদ্ধি দিয়েছে তোকে। আমার দোয়া কবুল করেছেন। হূর হাসি দিয়ে বলে

” হ্যা আমার ব্রেনতো আর আপনার মতো হাটুতে নিয়ে ঘুরি না। যাই হোক এটা বেল কেন ডাকছেন? এরিশ ভালো মতো দাড়িয়ে বলে

” ডেটে যাবো তোর সাথে । হূর এরিশের কথা শুনে আকাশ থেকে পরছে এমন মনে হচ্ছে। এইসব কি বলছে?! হূর বলে

” পাগল আমি আপনার সাথে যাবো তাও ডেটে? নাকি আমাকে মেরে ফেলার ফন্দি আঁটছেন কোনটা!? এরিশ ধমক দিয়ে বলে

” আরেকটা কথা বলবি তোকে এখান থেকে ধাক্কা দিয়ে বিধবা পদবি গ্রহন করব। আরেকটা কথা বলবিনা।বাবা ফোন দিয়ে বলেছে তোকে নিয়ে যেতে আমার সাথে । হূর এরিশের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে বলে

” এই এই কি বললেন?? বিধবা!! আপনি জেন্ডার চেন্ঞ্জ করালেন কবে?? বিধবা তো স্ত্রী লিঙ্গ। এরিশ নিজের কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বলে

” কপাল সব কপাল। তুই কি হ্যা!! আমাকে এতো কথা বলিস, নিজে কি?? আহাম্মকের দাদার ঘরের নাতিন তুই চল এখন। হূর আমতা আমতা করে বলে

” আপনি নিজের দাদা ভাইকে আহাম্মক বললেন?? এরিশ এবার হূরের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে

” আরেকটা কথা বলবি তো আমি তোকে খুন করে ফেলব৷ হূর ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে বুঝালো সে আর কিছু বলবে না। এরিশ হূরের হত ধরে হাটতে লাগে। হূরও বাধ্য মেয়ের মতো এরিশের সাথে সাথে যেতে লাগে।

________________

এরিশ এসে সোজা বসে পরে হূরকে নিয়ে কারে। হূর কিছু বলে না চুপচাপ বসে পরে এরিশের পাশে। কিছু ধূর যেতেই হূর বুঝতে পারে এরিশ তাদের ফাম-হাউসের দিকে যাচ্ছে। তাহলে কি সত্যি বাসায় থেকে কল এসেছিল!? হূর নিজের ফোন ওন করতেই দেখে তার বাবা, কাকাইর কল এসেছিল। কিন্তু ফোন সাইলেন্ট থাকায় বুঝতে পারেনি। হূর এর আগে একবার এখানে এসেছিল। তখন সবাই একসাথে ছিল। তার ফুপিরাও ছিল আজ আবার এই বাড়ি!! হূরকে অবাক করে দিয়ে এরিশ বলে

” ফুপিরা আসবে এই বাসায়। সাথে সিফাতও আসবে। আগেই বলি সিফাতকে যেন তোর আশেপাশেও না দেখি নয়তো আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। আর মাথায় তোর যেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে যে কেন এই বাসায় হঠাৎ করে সেটা আমারও জানা নেই। হূর এরিশের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে, কিভাবে সম্ভব। এরিশ গ্লাসে দেখে নিজের চুল
গুলো ঠিক করতে করতে বলে

” পরে না চোখের পলক,,, আহহ কি আমার রূপের ঝলক। দোহাই লাগি হূর বেইবি, অন্য দিকে তাকাও। আমি সেন্স হারাবো ডাই যাবো বাঁচা পারবে না কেউ। হূর কিছু না বলে অন্য দিকে তাকায় আর এরিশ মনযোগ দেয় ড্রাইভিং-এ ।

_________
বাসায় পৌঁছাতেই এরিশের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। আদিব আর মৃধা একে অন্যের হাত ধরে দাড়িয়ে আছে আর কথা বলছে। হূর মনে মনে ভয় পাচ্ছে যদি এখন কিছু করে বসে তাহলে। এরিশকে কার থেকে নামতে দেখে মৃধা ভয়ে গলা শুকিয়ে যায়। সাথে সাথে আদিবের হাত ছেড়ে বাসার ভিতরে প্রবেশ করে। এরিশ আদিবের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে বলে

” লাস্ট বারের মতো বলছি, এরপর আমার বোনের আশেপাশে দেখলে না তোর হদিস খুঁজে পাবে না কেউ। জানে মেরে দিব। বর্তমানে কোনো কাহিনী করতে চাই না। ৫ মিনিট সময়, তোকে যেন এই বাসার আশেপাশেও না দেখি।

বলেই হূরকে নিয়ে ভিতরে ঢুকে যায়। আদিব রাগে ফুসছে, এতো অপমান সহ্য করছে একমাত্র মৃধার জন্য। আদিব চুপচাপ চলে যায়। কিন্তু সব কিছুর বদলা সে ঠিকি নিবে। বাসায় ঢুকতেই আলাইনা দৌড়ে এসে জাপ্টে ধরে হূরকে। হূর আলাইনাকে জড়িয়ে ধরে বলে

” এতো খুশি? কি হয়েছে??? এরিশ বলে

” ওমা তুই জানিস না!? আজ আলাইনার বিয়ে। আলাইনা বলে

” আমার না হূর আপ্পির বিয়ে। দিদুনকে বলতে শুনলাম আজ নাকি এক পাত্র পক্ষ হূর আপুকে দেখতে আসবে। শুনেছি ছেলে নাকি অনেক কিউট মৃধা আপু বললো। তাই ভাবছি হূর আপ্পির বরের কোনো ভাই থাকলে আমিও হূর আপ্পির মতো বউ সেজে চলে যাবো।

হূরের আর এরিশের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরলো। হূর কি বলবে! সব কেমন লাগছে! এরিশের মা এসে গম্ভীর কন্ঠে বলে

” হূর তাড়াতাড়ি যা। গিয়ে তৈরি হয়েনে। তোর ফুপি উপরে অপেক্ষা করছে।

হূর অনেক কষ্টে নিজের কান্নাটা আটকে রেখে বলে

” হুমমম আচ্ছা। হূরের মা তখন রান্না ঘরে

_________

প্রায় ঘন্টাখানিক কেটে যায়। এরিশ হূরের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেও বৃথা। তাকে কেউ একা ছাড়ছেই না। শেষে সবাই হূরকে রেডি করিয়ে বের হতেই এরিশ রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়। হূর বসে আছে আয়নার সামনে। পরনে একটা জামদানী শাড়ি। হালকা সাজ। এরিশকে দেখে হূর বেশ চমকে যায়। এরিশ হূরের দিকে তাকিয়ে বলে

” তুই এই বিয়ে করবি না। নিচে গিয়ে সবাইকে বলবি তুই এই বিয়েতে রাজি না। এরিশের কাথা শুনে হূর বলে

” কেন বলবো? ছেলে দেখতে শুনতে ভালো, ফুপি বললো বিয়ের পর আমাকে পড়াবে। আর কি চাই আর ছেলেকে নাকি আমিও চিনি। এরিশ বলে

” নামি কি ছেলের? হূর মাথা নিচু করে বলে

” নীলআদ্র। নামটা শুনা মাত্র এরিশের মাথায় আগুন ধরে যায়। এরিশ জাস্ট বলে

” দেখ এবার আমি কি করি…..। হূর এরিশকে বলে

” এমন করে কি লাভ! আপনি যতটা সহজ ভাবছেন তেমনটা সহজ না। সবাই মানবে না, আর আমি চাই না কারো সাথে আমার সম্পর্ক খারাপ হোক।

এতেও এরিশের কিছু যায় আসে না। হূরকে একপলক দেখে নিচে নেমে আসে এরিশ। এরিশকে এভাবে যেতে দেখে হূরও যেতে লাগে এরিশের পিছু পিছু।

এরিশ তার বাবার কাছে গিয়ে বলে

” বাবা আজকি হূরকে দেখতে আসবে?? এরিশের বাবা বলে

” হ্যা, ছেলে তোদের নীলা মেমের ভাই। হূরকে খুব পছন্দ করে । ছেলেও শুনলাম ভালো। এরিশ বেশ জুড়েই বলে

” ভালো ভালো শুনে আমার কানের সব ভালো ব্যাকটেরিয়া গুলো মারা গেছে। কি এমন আছে নীলআদ্রের মাঝে!! ওর থেকে ভালে ছেলে আছে। নীল হূরের জন্য পার্ফেক্ট না
__________
এরিশের এমন কথা শুনে সবাই চুপ। হূর দাড়িয়ে আছে শিড়ির এক কোনে। এরিশের মা গিয়ে হূরের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।

হূরের বাবা বলে

” হ্যা তাতো আছেই কিন্তু এরিশ বাবা তুমি এভাবে বলছ কেন? এরিশের বাবা সায়েদ কে থামি দিয়ে বলে

” তো হূরের জন্য কে পারফেক্ট??

হূরের দাদি বলে

” দেখ এরিশ তোর সব পাগলামি আমি মেনে নেই। কিন্তু এটা না সিফাতকে তুই দেখতে পারিস না তাই ওকে এই বাড়িতে আসতে দেয়নি। সিফাত হূরকে পছন্দ করত কিন্তু তোর বলাতে আমি বিয়ের কথা বাড়ায়নি। এখন আবার কি!!।

এরিশের বাবা সবাইকে চুপ করতো বলে এরিশকে বলে

” তুমি কি হূরকে পছন্দ করো?? এরিশ নির্দ্বিধায় বলে দেয়

” হ্যা করি। উপস্থিত কয়েকজন বাদে সবাই অবাক। মৃধা, দিদুন তার ফুপি, আরো কিছু আত্মীয়-স্বজন

এরিশের বাবা আবার বলে

” তুমি হূরকে বিয়ে করতে চাও?? এরিশ ভ্রু কুচকে বলে

” আজব তো তুমি থাকতে এই কথা আমার কেন বলতে হবে?? হূরের চাচি বেশ খুশি। কারণ হূরকে তার বরাবরই খুব পছন্দের, আর নিজেদের মেয়ে নিজেদের বাসায় থাকবে। হূরের মাও খুশি। মৃধা দিদুনের কানে কানে বলে

” দিদুন বিয়ে টা আটকাও নয়তো সব শেষ করে দিবে এই হূর। দেখছ কেমন সবাইকে হাত করে নিয়েছে। হূরের দিদুন বলে

” আমি এই বিয়ে মানি না। এরিশ হূরের দিকে তাকিয়ে বলে

” না মানলে কিছু করার নেই। এরিশের দিদুন বলে

” এই বিয়ে হলে আমি আর এই বাসায় থাকবো না। এরিশ হূরকে পাশকাটিয়ে উপরে উঠতে উঠতে বললো

” থাকবে না ভালো কথা, আমাদের বিয়ে খেয়ে তারপর তুমি তোমার মেয়ের সাথে যেও। আর লাইফটা আমার তোমার না দিদুন। তোমার এইসব নিয়মে আমাকে জড়াতে এসো না।

বলেই চলে যায়। হূর এখনো সেখানে দাড়িয়ে আছে। হূর তার কাকিমার দিকে তাকাতেই কাকিমা তার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকায়। হূর এবার কেঁদে দেয় আর বলে

” বিশ্বাস করো আমি কাকিমা জানতাম না। এরিশ ভাইয়া এমন কিছু করবে। এরিশের মা হেসে দেয় আর বলে

” ধূর পাগলী। আমিতো আরো খুশি হয়েছি। যা উপরে যা দেখ এরিশ কোথায়।

___________

হূরের দিন একরকম বাড়ি মাথায় করে নিয়েছে।
হূরের সাথে সাথে আলাইনাও ছাঁদে আসে। উপর দিকে একটু ঝামেলা হলেও সবটা সামলে নেয় এরিশের বাবা। এরিশও ছাঁদের কোনে। আলাইনা এরিশকে বলে

” বাহ বাহ এক বলে অল আউট করে দিলা। এরিশ আলাইনা কে বলে

” তুই নিচে যা আমার হূরের সাথে কথা আছে। আলাইনা বলে

” না তো এইভাবে যাবো, দেনাপাওনার ব্যাপার আছে না?? এরিশ বলে

” চকোলেট এনে দিব যা। আলইনা চলে যায়। এরিশ বলে

” দেখ হূর তুই এখন চাইলেও আমার না চাইলেও। মানুষটা আমি স্বার্থপর। কিন্তু আমার থেকে বড় স্বার্থপর তুই। আমার জন্য তোর একটুও খারাপ লেগেনি। এইযে আমার সাথে এমন করতে যাচ্ছিল না সেটা সুদসময় ফিরে পাবি। হূর কিছু বলতে যাবে তখনই এরিশ বলে

” যা এখান থেকে। হূর ভয়ে দুইপা পিছিয়ে যায়। হূরতো ভেবেছিল তার বিয়ের পর এরিশ ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু এরিশের সাথে যে তার বিয়ে হবে ধারনার বাইরে ছিল। এখন নিচে গিয়ে না করলে এরিশ হুংকার দিয়ে উঠবে।

হূর নিচে নামছে হঠাৎ করে কেউ হূরের রুমাল দিয়ে মুখ চেপে ধরে। কিছুসময় ছটফট করার পর। হূরে শান্ত হয়ে যায় আর ধীরে ধীরে চোখ বুজে ফেলে।

চলবে
ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here