ভালোবাসার প্রজাপতি পর্ব -২৯+৩০

#ভালোবাসার_প্রজাপতি
#পর্বঃ২৯ (ধামাকা)
#মাহিয়া_মুন (লেখনীতে)

আদ্রিজ মাত্রই বাসা থেকে বের হয়ে গাড়িতে ঊঠে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেল।
আজিজ চৌধুরী ছাদে দাড়িয়ে সেই দৃশ্য দেখে বাঁকা হেসে উঠলো।
হাসতে হাসতেই কাউকে ফোন করে বলে উঠলো,
“কাজ হয়েছে তো।”
ফোনের ওপাশে থাকা লোকটি বলে উঠলো,
“জি স্যার। যেইভাবে বলেছেন সবটা সেভাবেই করেছি। কিন্তু স্যার একটা কথা বলবো?”
“আরেহ বলো বলো।”
“স্যার…. আদ্রিজ বাবু তো আপনারই ছেলে। আর ছেলের সাথে এরকম করাটা কি খুব দরকার।”
“সেই কৈফিয়ত আমি তোমাকে দিবো নাহ। কার সাথে কথা বলছো ভুলে যাচ্ছ নাকি। তোমাকে যেটা করতে বলা হবে তুমি শুধু সেটাই করবে।”
এই বলে আজিজ চৌধুরী ফোন কেটে দিয়ে পুণরায় সামনে তাকালেন।
হাত নাড়িয়ে বিদায় জানানোর ভঙ্গিতে বলে উঠলেন,
“Bye….. বেটা। তোমার যাত্রা শুভ হোক।”
এই বলে পূনরায় হেসে উঠলেন আজিজ চৌধুরী।
*
*
আদ্রিজ গাড়ি চালানো অবস্থায় আনমনেই গাড়ির আয়নায় তাকাতেই চমকে উঠলো।
দ্রুত গাড়ি রাস্তার সাইডে চাপিয়ে ব্রেক কষলো। পিছে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে বলে উঠলো,
“তুমি এখানে, মানে গাড়িতে কি করছো?”
নিহা হেসে বলে উঠলো,
“আপনার এই হতভম্ব হয়ে যাওয়া ফেস টা দেখার জন্যে।”
“কেন যেন বিশ্বাস হচ্ছে না। সত্যিটা বল।”
নিহা নিজের মুখভঙ্গি আগের মত রেখেই বলে উঠলো,
“আসলে হটাৎ করেই আপনার অফিস দেখার ইচ্ছে হলো। আপনিতো এখনো আমায় নিয়ে যান নি।”
“ওহহ আচ্ছা। আমায় বাসায় বললেই তো পারতে।”
“বাসায় বলে দিলে তো আর আপনার এই রিয়াকশন টা দেখতে পেতাম নাহ।”
আদ্রিজ হেসে বলে উঠলো,
“আচ্ছা সামনে এসে বসো।”
নিহা নিজেও হেসে গাড়ি থেকে বের হয়ে সামনে তাকাতেই যেন খুশি হয়ে গেল।
হেসে আদ্রিজকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
“আদ্রিজ বাবু গাড়ি থেকে বের হন।”
“কেন? আমার অফিসের দেরি হয়ে যাবে।”
“আরেহ কিছু হবে না। বের হয়ে আসুন।”
আদ্রিজ আর কিছু না বলে গাড়ি থেকে বের হয়ে আসলো।
নিহা আদ্রিজের হাত ধরে টেনে রাস্তার পাশে বিক্রি করা পানি-পুরি স্টলে নিয়ে গেল।
“কাকু পানী-পুরি দিন তো।”
“দিতেছি মা। একটু দাঁড়ান।”
আদ্রিজ ভ্রু কুচকে নিহার দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠলো,
“এই জন্যে তুমি এভাবে নিয়ে আসলে। আর এসব যে কতটা আনহেলথি খাবার কতবার করে বললে বুঝবে বলতো।”
“আহহ থামুন তো। আপনি খান না তাই মজা বুঝেন না।”
এই বলে নিহা অনায়াসে পানিপুরী খেতে লাগলো।
অনেকটা ঝাল হওয়ায় নিহার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
আদ্রিজ টিস্যু দিয়ে নিহার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়া পানি মুছে দিতে দিতে বলে উঠলো,
“আরো খাও। ঝাল আর একটু দিতে বলি।”
“আরেহ ঝাল হলেই তো খেতে মজা। পনিপুরি খাবো আর চোখ বেয়ে পানি পড়বেনা তা কি করে হয়।”
“হ্যা আর চোখের পানি মুছে দেওয়ার জন্য তো….”
আর কিছু বলতে পারলো না আদ্রিজ। তার আগেই নিহা আদ্রিজের মুখে পানিপুরি ঢুকিয়ে দিল।
আদ্রিজ রাগি চোখে নিহার দিকে তাকাতেই নিহা ইনোসেন্ট ফেস করে বলে উঠলো,
“একা খেলে পেট ব্যাথা করবে তো আমার।”
আদ্রিজ থমথমে মুখে বলে উঠলো,
“এই খাবারটা ভীষণ ঝাল। তুমি গাড়িতে গিয়ে বসো। আমি আইসক্রিম নিয়ে আসছি।”
এই বলে আদ্রিজ বিল পে করে সেই স্থান থেকে চলে গেল।
নিহা নিজেও গাড়ির দিকে হাঁটতে হাঁটতেই আনমনে ভাবতে লাগলো তার এখানে আসার ব্যাপারটা।
তার দুপুরের পর থেকেই মনে হয়েছে আজিজ চৌধুরী আদ্রিজের কিছু একটা করবে।
মন যেন কিছুতেই মানছিল না। যার কারণে নিহা আদ্রিজের আগেই গাড়িতে গিয়ে বসেছিল। তার উপর আদিত্য পালিয়ে গেছে। কখন কোনদিক দিয়ে বিপদ আসে বলা যায়না।
ভাবনারত অবস্থায় হটাৎ করেই নিহা চিৎকার করে উঠলো।
পেটের দিকে তাঁকিয়ে দেখলো গলগল করে রক্ত পড়ছে। তার সামনেই কেউ একজন মুখ ঢেকে হাতে ছুরি নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
লোকটি পুণরায় নিহার পেটে চুরি চালাতে গেলেই নিহা লোকটির হাত ধরে ফেলে। পা দিয়ে লোকটির পেট বরাবর লাথি মারে। এতে লোকটা নিচে পড়ে যায়। যার ফলে মুখ থেকে কাপড় সরে যায়।
নিহা যেটা ভেবেছিল সেটাই। লোকটি আর কেউ নয় আদিত্য।
রাস্তায় লোকজনের চিৎকারে আদিত্য দ্রুত সেই জায়গা থেকে পালিয়ে যায়।
নিহা পেটে হাত দিয়ে রাস্তায় বসে পড়ে।
আদ্রিজ মাত্রই আইসক্রিম নিয়ে এদিকেই আসছিল। গাড়ির পাশে এতো লোকজন দেখে অবাক হয়ে গেলো।
লোকজন সরিয়ে সামনে আসতেই চোখ বড় বড় হয়ে গেল।
আইসক্রিম হাত থেকে ফেলে দিয়ে দ্রুত নিহার কাছে গিয়ে নিহাকে জরিয়ে ধরলো।
“রক্ত…রক্ত কেন? কি হয়েছে, এই নিহা”
নিহা হালকা কণ্ঠে বললো,
“আমায় গাড়িতে উঠান।”
রাস্তার পাশ থেকে একজন বলে উঠল,
“একটু আগে একটা ছেলে এসে হটাৎ করেই ওনাকে ছুরি মেরে দিল। আমরা ধরার আগেই ছেলেটা পালিয়ে গেছে। আপনি দ্রুত হসপিটাল নিয়ে যান।”
আদ্রিজ দ্রুত নিহাকে গাড়িতে বসিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল।
নিহা আদ্রিজের দিকে তাকালো। লোকটা কতটা বিচলিত হয়ে পড়ছে।
“নিহা কিছু হবে না তোমার। এইতো চলে আসছি প্রায় আমরা।”
নিহা নিভু নিভু চোখে তাকিয়েই হেসে উঠলো।
হটাৎ করেই ঘড়ির কাঁটার শব্দের নেয় আওয়াজ পেতেই নিহা কিছু একটা আন্দাজ করলো। এই শব্দটা সে অনেক্ষন থেকেই পাচ্ছে। আদ্রিজের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো না কোনো ঘড়ি নেই।
নিহা চারদিকে তাকাতে লাগলো।
গাড়ির এদিকসেদিক তাকাতেই হটাৎ আদ্রিজের পায়ের দিকে নজর গেল।
চোখ বড় বড় করে আদ্রিজের দিকে তাকালো।
নিজের ব্যাথার কথা যেন মাথা থেকে চলে গেল। মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। কি করবে?
হটাৎ করেই যেন উত্তেজিত হয়ে গেল।
এই জন্যই আজিজ চৌধুরী ঐভাবে হাসছিলেন। তার মানে তিনি আদ্রিজ বাবুর গাড়িতে ব্লাস্ট করাতে চেয়েছিলেন।
নিহা পুণরায় বমের দিকে তাকিয়ে দেখলো আর মাত্র 4 মিনিটস আছে।
আদ্রিজের দিকে তাকিয়ে দ্রুত বলে উঠলো,
“আদ্রিজ বাবু সামনে নদীর পাশে গাড়িটা থামান।”
“মানে, কি বলছো। এখন তোমাকে হসপিটাল নিতে হবে।”
“সেসব পরে হবে আপনি গাড়ি থামান।”
“দেখো পাগলামি করো না নিহা।”
“আপনাকে আমার কসম গাড়ি থামান আদ্রিজ বাবু।”
আদ্রিজ চমকে দ্রুত গাড়ি নদীর উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রিজের এক পাশে থামালো।
নিহা গাড়ির জানালা দিয়ে রাস্তায় তাকিয়ে দেখলো অনেক মানুষ এখানে। গাড়ি যদি এখানে ব্লাস্ট হয় তাহলে অনেক মানুষ মারা যাবে।
চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে কোমড়ের পাশ থেকে কিছু পেপার্স বের করলো। আজ তার মন বলেছিল কিছু একটা হবে। তাই ভাগ্যক্রমে পেপার্স গুলো নিয়ে এসেছে।
আদ্রিজকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
“আদ্রিজ বাবু দ্রুত এই চার জায়গায় সাইন করে দিন।”
“নিহা তুমি কি বলছো কি করছো এসব। পাগল হয়ে গেছো। তোমায় এখন হসপিটাল নিতে হবে।”
“প্লীজ দ্রুত সাইন করুন। আমি যাবতো হসপিটাল প্লীজ সাইন টা করুন।”
আদ্রিজ আর কিছু না বলে দ্রুত সাইন করে দিলো।
নিহা জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে বলে উঠলো,
“এইগুলো চৌধুরী বাড়ির প্রপার্টি পেপার্স। আপনার বাবা ভালো লোক নয়। সাবধানে থাকবেন । আর এইগুলো যে আমি আপনার নামে করে দিয়েছি এটা যাতে কখনোই আপনার বাবা না জানতে পারে। যেভাবে চলছে সবটা সেভাবেই চলতে থাকে যেন।”
এই বলে নিহা পেপার্স গুলো আদ্রিজের পকেটে দিয়ে গাড়ির দরজা খুলে আদ্রিজকে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিল।
দ্রুত গাড়ির দরজা আটকে গাড়ির জানালা দিয়ে আদ্রিজের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
“আর হ্যা ভালোবাসি আপনাকে, আপনার থেকেও বেশি। কখনো ভুলে যাবেন না আমায়।”
এই বলে নিহা দ্রুত গাড়ি স্টার্ট দিল।
আদ্রিজের যেন সব মাথার উপর দিয়ে গেছে। কি থেকে কি হয়েছে কিছুই বুঝতে পারছে নাহ।
সামনে তাকাতেই হতভম্ব হয়ে গেল।
নিহা গাড়ি জোরে স্টার্ট দিয়ে ব্রিজের উপর থেকে নদীর মধ্যে গাড়ি সহ ঝাঁপ দিল। আর সাথে সাথেই বিকট আওয়াজে পরিবেশ যেন স্তব্ধ হয়ে গেল।
ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি মুহূর্তেই উড়ে গেলো। মানুষজনের চিৎকারে পরিবেশ ভারী হয়ে উঠলো।
আদ্রিজ এখনো সামনে তাকিয়ে আছে। যেন এখানে কি ঘটেছে কিছুই মাথায় আসছে না।
হটাৎ কেউ একজনের সাথে ধাক্কা লাগতেই সবটা যেন নিমিষেই বুঝে গেল।
“নিহা#ভালোবাসার_প্রজাপতি
#পর্বঃ৩০
#মাহিয়া_মুন

নিহা নিখোঁজ হওয়ার প্রায় সপ্তাহ দুয়েক পার হয়ে গেছে। সমস্ত নিউজ চ্যানেলে এখনো থেকে থেকে সেই খবর দেখানো হচ্ছে। পুলিশ ফোর্স বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও নিহার কোনো সন্ধান পায় নি।
চৌধুরী বাড়ি যেন হটাৎ করেই নিঃস্তব্ধ হয়ে গেছে। কারো মুখেই যেন কথা নেই। নিহা নিখোঁজ হওয়ার সাথে সাথে চৌধুরী বাড়ির হাসি যেন মুহূর্তেই মিলিয়ে গেছে।
আদ্রিজ সেদিনের পর থেকে এখনো কোনোরকম কথা বলে নি পরিবারের কারও সাথে। সারাক্ষণ রুমেই বন্ধী হয়ে থাকে।
কেউ একজন বলেছিলো,
“কেউ একজন মারা গেলে বাবা মায়ের পর সব থেকে বেশি কষ্ট যার হয় সে হচ্ছে বেষ্ট ফ্রেন্ড।”
বাবা মায়ের সাথে যা শেয়ার করতে পারে না তা অনায়াসেই বেষ্ট ফ্রেন্ড এর সাথে শেয়ার করা যায়। মেঘারও ঠিক তাই। নিহার সকল সুখ দুঃখের সাথী সে ছিলো। সেদিন সবটা শুনে মুহূর্তেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল। আর তারপর থেকে সেও চুপচাপ হয়ে গেছে।
এই মুহূর্তে পুলিশ সুপার মোঃ আবু সাঈদ আহমদ বসে আছে চৌধুরী বাড়ির ড্রয়িং রুমে।
মোটামুটি আদ্রিজ বাদে সবাই আছে এখানে।
মোঃ আবু সাঈদ আহমদ সবার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠলো,
“দেখুন মিস্টার চৌধুরী, আমরা টু-উইক বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেছি মিসেস নিহা চৌধুরীর বডি খুঁজে পাওয়ার জন্য। তবে নদীর ঢেউ অনেক বেশি ছিল ওই মুহুর্তে। বডি তলিয়ে গেছে নাকি ভেসে অন্যদিকে চলে গেছে কিছুই জানা যাচ্ছে না। আর তাই আমরা মিসেস নিহা চৌধুরকে মৃত সাব্যস্ত করলাম। আর গাড়িতে বোম রাখা হয়েছিল। মূলত বোম ব্লাস্ট এর কারণেই এরকমটা হয়েছে। কে বা কারা এমন করেছে এখনো কিছু জানা জায়নি। জানলে অবশ্যই জানানো হবে। আসি আমরা।”
এই বলে পুলিশ সুপার বের হয়ে গেলেন।
উপর থেকে আদ্রিজ সবটাই শুনলো। সে নামতেই নিয়েছিল পুলিশ সুপার এর কথা শুনার জন্য।
সবটা শুনে কোন রকম পাগলামি করলো না। নিচে নেমে সকলের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
“আমি আগামী পরশু আমেরিকা চলে যাচ্ছি।”
সবাই চমকে আদ্রিজের দিকে তাকালো।
আশা চৌধুরী ডুকরে কেঁদে উঠলো। কান্নারত কণ্ঠে বলে উঠলো
“কি বলছিস বাবা এসব।”
আদ্রিজ কিছু না বলে কঠিন চোখে আজিজ চৌধুরীর দিকে তাকালো।
কঠিন স্বরে বলে উঠলো,
“বাবা, রিভেঞ্জ অফ নেচার নামে একটা প্রবাদ আছে। প্রকৃতি সময় সাপেক্ষে সবটাই ফিরিয়ে দিবে।
Just wait and see…….”
এই বলে আদ্রিজ বাসা থেকে বের হয়ে গেল।
আজিজ চৌধুরী চমকে আদ্রিজের যাওয়ার দিকে তাকালো। আদ্রিজ কি কিছু জেনে গেল নাকি।
আজিজ চৌধুরী ভয়ে ঘামতে লাগলো।
সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আদ্রিজের চলে যাওয়ার দিকে।
মেঘের বাবা ভাই এর উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
“ভাইজান আদ্রিজ কি বলে গেলো তোমায়। রিভেঞ্জ অফ নেচার মানে। তোমায় হটাৎ এই কথা কেন বললো?”
আজিজ চৌধুরী জোরপূর্বক হেসে বলে উঠলো,
“আ….আরেহ আমি কি জানি ও কেন এসব বললো।”
এই বলে আজিজ চৌধুরী দ্রুত সেখান থেকে উঠে রুমে চলে গেল।
*
*
নিহান এবং ঊর্মি দাড়িয়ে আছে সেই ব্রিজের উপর। নিহালের চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরে পড়ছে। সে এই কয়দিন অনেক চেষ্টা করেছে নিহাকে খুঁজে পাওয়ার। জার্মানি থেকে হায়ার করে ডুবুরি নিয়ে এসেছে। তবুও কোনো ফলাফল মিললো নাহ।
সবার একই কথা। নিহার দেহ তলিয়ে গেছে। এই নদীর সাথে যে তাদের কি যোগসূত্র আছে নিহান বুঝতে পারছে না। এই নদীই কেন সব কিছু কেড়ে নেয়। নিহানের বিশ্বাস হচ্ছে না। তার বোন এভাবে চলে যেতে পারে না।
নিহান নদীর পানিতে তাকিয়ে বলে উঠলো,
“নীগ্গু আমার মন কেন যেন মানছে না। আমার মন বলছে তুই বেঁচে আছিস।”
ঊর্মি চোখের পানি মুছে বলে উঠলো,
“স্যার ম্যাম কে তো অনেক খুজেঁও পাওয়া গেল না। তবুও বলছেন বেঁচে আছে।”
“হ্যা বলছি। কারণ সে আমার বোন। জানতো ঊর্মি আমি নিহার থেকে মাত্র তিন মিনিটের বড়। তবুও কেউ দেখলে অনায়াসে বলবে আমি নিহার থেকে কয়েক বছরের বড়। আমিও বড় ভাই হওয়ার চেষ্টা করি। বড় ভাই এর মতই আগলে রাখতে চেয়েছিলাম নিহাকে। কিন্তু দেখো আমি সেটা পারলাম নাহ। বড় ভাই হয়ে আমি ব্যার্থ। আমার মন বলছে আমার বোন বেঁচে আছে। ফিরে আসবে। আমি অপেক্ষায় থাকবো। তবে আল্লাহ্ র কাছে একটাই প্রার্থনা যেখানে আছে আমার বোন যাতে ভাল থাকে, সুস্থ্য থাকে।”
ঊর্মি তাকিয়ে রইলো নিহানের দিকে। বোনকে কতটা ভালোবাসলে বোনের মারা যাওয়ার পরও ভাই বলছে যে বোন বেঁচে আছে। অবশ্য বেশিদিন ওতো হলো না বোনকে খুঁজে পেয়েছে। পুনরায় একেবারেই হারিয়ে ফেলাতেই হয়তো মানতে পারছে না বোনের মৃত্যু।
ঊর্মি ভাবে দেখলো নিহান কে এখানে রাখা যাবে না। কারণ তাঁর ম্যাম একবার বলেছিল, তার যদি কিছু হয় আর নিহান যদি সেই মুহুর্তে দেশে থাকে তাহলে যেন জোর করে হলেও জার্মানি নিয়ে যায়।
ঊর্মির ভাবনার মাঝেই নিহনের ফোন বেজে উঠলো।
নিহান চোখের পানি মুছে দেখল মিসেস প্রার্থনা খান ফোন দিয়েছে।
নিহান পুনরায় ডুকরে কেঁদে উঠলো। সে কিভাবে তার মাম কে বোনের কথা জানাবে। এখনো কিছুই জানায় নি সে।
ঊর্মি নিহানের কাধে হাত রেখে বলে উঠলো,
“স্যার আপনি কাদলে আন্টি সব বুঝে যাবে। এটা আন্টির জন্য খুব ক্ষতিকর হবে। প্লিজ কান্না করবেন না এখন।”
নিহা চোখ মুছে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে ফোন রিসিভ করতেই মিসেস প্রার্থনা খান রেগে বলে উঠলেন,
“এই ছেলে, আমি এতো ফোন দেই তুই কি দেখতে পাস না। আজ কতদিন হয়েছে মেয়েটার মুখ দেখতে পাচ্ছি না। তুই ও ফোন তুলছিস না ঊর্মি ও না। তোদের সমস্যা টা কি।”
নিহানের গলা ধরে আসছে। ঢোক গিলে কান্না দমিয়ে বলে উঠলো,
“আসলে আমি আর বোন মিলে একটু ঘুরাঘুরি করলাম কিছুদিন। তাই তোমার ফোন তুলতে পারি নি।”
“এটা কেমন কথা আর তোর গলাটা এমন শুনা যাচ্ছে কেন। তুই কি কাদছিস?”
নিহান আর না পেরে ডুকরে কেঁদে উঠলো।
প্রার্থনা খান অবাক হয়ে বলে উঠলো,
“কি হয়েছে বাবা কাদছিস কেন? কিরে কিছু বল। নিহান……”
নিহান পুনরায় নিজেকে কন্ট্রোল করে বলে উঠলো,
“হুম।”
“কদছিস কেন?”
নিহান কিছু একটা বলতেই ঊর্মি দ্রুত নিহানের থেকে ফোন নিয়ে বলে উঠলো,
“ম্যাম আমি ঊর্মি বলছি।”
“হ্যা ঊর্মি নিহান কাদঁছে কেন?”
“ম্যাম তেমন কিছুনা। আপনিই তো বলেন যে স্যার একটু বেশি ইমোশনাল। আজ একটু পরই স‌্যারের ফ্লাইট। কাল নাকি তাঁর গানের সিডিউল। বোনকে রেখে যাচ্ছে তো তাই কাদঁছে।”
“ওহহ তাই বলো। আমিতো আরো ভয় পেয়ে গেলাম। এমনিতেই মনটা কেমন যেন করছে। আচ্ছা আমার পুতুল মা কোথায়?”
ঊর্মিরো এবার যেন গলা ধরে আসছে। ঢোক গিলে বলে উঠলো,
“ম্যাম এখন আমাদের সাথে নেই আন্টি। আমি পরে আপনার সাথে দেখা করিয়ে দিব।”
“আজকে কতদিন দেখি না। এখন আবার বলছো পরে। আচ্ছা ঠিক আছে।”
ঊর্মি জোরপূর্বক হেসে নিহানের কাছে ফোন দিয়ে দিল। নিহান ফোন নিয়ে বলে উঠলো,
“আচ্ছা মাম এখন রাখি।”
এই বলে ফোন কেটে ঊর্মিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
“মিথ্যে কেন বললে? আমিতো আজ যাচ্ছি না।”
“আমরা আজই যাচ্ছি স্যার।”
নিহান কিছু বলবে তার আগেই কান্নার শব্দ পেয়ে চারদিক তাকালো। কিছুটা দূরে তাকাতেই কেউ একজনকে বসে থাকতে দেখলো। কান্নার শব্দ টাও সেদিক থেকেই আসলো।
নিহান কিছুটা কাছে যেতেই দাড়িয়ে গেল। এতো আদ্রিজ চৌধুরী।
ঊর্মি ও খানিকটা চমকে গেল আদ্রিজকে দেখে। এই লোক তো তাকে বিয়ের দিন দেখেছিল। ম্যাম এতিমখানার কেউ একজন বলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। এই লোক এখন তাকে দেখলে সমস্যা হবে। দ্রুত নিহানের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
“স্যার এটা আদ্রিজ চৌধুরি। আমাদের দেখলে সমস্যা হবে। এখান থেকে যেতে হবে।”
“কিন্তু ওনাকে সান্তনা দেয়া উচিত। কিভাবে কাদছে দেখো।”
“স্যার উনি কেঁদে মন হালকা করুক। আপনি প্লীজ এখান থেকে চলুন।”
এই বলে ঊর্মি জোরপূর্বক নিহানকে সেখান থেকে নিয়ে গেল।
*
*
আদ্রিজ চেয়েও এই মুহুর্তে কান্না থামাতে পারছে না। এই কয়দিনের জমিয়ে রাখা কান্না যেন আজ মুহূর্তেই বেরিয়ে আসলো।
আজ সকালে সে যেটা শুনেছে তার পর কিছুতেই নিজেকে সংযত করতে পারছে না।
আজ সকালে তার রুমের ব্যালকনিতে কেউ একজন ইটের টুকরা কাগজে মুরে ছুঁড়ে মেরেছিল।
আদ্রিজ কাগজটা পড়তেই যেন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল।
“স্যার, আমি আপনার বাবার দায়িত্বে নিয়োজিত একজন ব্যাক্তি। আপনার সামনাসামনি এসব কথা বলা ঠিক হবে না বিদায় আমায় এরকমটা করতে হল। প্রথমেই জানাই আমিই সেই লোক যে আপনার গাড়িতে বোম রেখেছি। মূলত আপনাকে মারার লক্ষ্যে। তবে এই কাজ আমি করলেও আমাকে করার জন্য বাধ্য করেছে অন্য একজন যার কথা প্রথমেই বলেছি। আপনার বাবা মিস্টার আজিজ চৌধুরী। সে আমাকে এরকম টা করতে বলেছে। সে চেয়েছিল আপনাকে মারতে। কিন্তু ঘটনা অন্যরকম হয়ে গেল। তার সাথে আপনার ওয়াইফ মিসেস নিহা চৌধুরির সাথে কোনো একটা বিষয় নিয়ে বহু বছর আগে থেকেই শত্রুতা। মিসেস নিহা চৌধুরি আপনার বিয়ের দিন কিছু একটা করেছিল যার বিনিময়ে আপনার বাবা তার প্রিয় মানুষ হিসেবে আপনাকে মারতে চেয়েছিল। জানিনা স্যার আপনার এসব বিশ্বাস হবে কিনা। আমি শুধু সত্যিটা আপনাকে জানিয়েছি। আর একটা কথা, মিষ্টার আজিজ চৌধুরী আপনার বাবা কিনা সেটা নিয়েই যথেষ্ঠ সন্দেহ রয়েছে। একজন বাবা কি করে তার ছেলেকে মারতে চায়। আর আমি আপনাকে এসব জানিয়েছি মূলত একটা কারণেই। আসলে আমার নিজের কাছে নিজেকে ভীষণ দোষী লাগছিল। মূলত নিজেকে একটু হালকা করার জন্যেই আপনাকে সবটা জানিয়েছি। আর যদি আমাকে খুঁজেন তাহলে পাবেন না।”
আদ্রিজ কিছুক্ষন থম মেরে বসেছিল। তার বিশ্বাস হচ্ছিল না তার বাবা……….
আর তখনই নিহার বলা শেষ কথাগুলো মনে পড়েছিল।
আদ্রিজ চিৎকার করে বলে উঠলো,
“নিহা……… তুমি কোথায়? ফিরে আসনা একবার। আমি আর পারছিনা। আমাকে কেন বাঁচাতে গেলে। আমি বেঁচে থেকেও তোমার অনুপস্থিতে মরে যাচ্ছি।”
এই বলে আদ্রিজ পুনরায় কেঁদে উঠলো।
*
*
*
#চলবে

(নিহাকি মরে গেছে😢😢😢😢😢🥺)……………..”

#চলবে

(কেমন হয়েছে জানাতে ভুলবেনা কিন্তু😒 )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here