ভালোবাসার প্রজাপতি পর্ব -২৭+২৮

#ভালোবাসার_প্রজাপতি
#পর্বঃ২৭
#মাহিয়া_মুন(লেখনীতে)

অতিরিক্ত মাত্রায় অস্বস্তি ঘিরে ধরেছে নিহাকে। অস্বস্তিতে বারবার নাড়াচাড়ায় এদিক সেদিক হচ্ছে। আর তার এই অস্বস্তির প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তার প্রাণ প্রিয় বান্ধুবি / জা।
নিহার এভাবে নাড়াচাড়ায় মেঘা রেগে বলে উঠলো,
“সমস্যা কি তোর। এভাবে নাড়াচাড়া করছিস কেন? আমি গাজরাটা পরাতে পারছি নাত।”
“তো কি করবো আমায় একটু বলে দে। তুই আমায় এটা কেমন ব্লাউজ পরিয়েছিস। পুরো পিঠ দেখা যাচ্ছে। আর শাড়ির কথা কি বলবো। এটা কোনো শাড়ি নাকি মশারী। এতো পাতলা শাড়ি।”
“হ্যা তো কি হয়েছে। কতো মিষ্টি লাগছে দেখতে সেটা বুঝি তুই চোখে দেখছিস না।”
এই বলে মেঘা নিহার মাথায় বেলি ফুলের গাজরাটি পরিয়ে দিল।
পুনরায় বলে উঠলো,
“ইসস আমার ভাসুর তো তোর এই রূপ দেখলে পুরাই টাস্কি খেয়ে যাবে। তবে ক্রেডিট টা কিন্তু পুরায় আমার।”
“বাজে কথা না বলে থাকতে পারিস না।”
“বাজে কথা কি বললাম গো ভাবী। সে যাই হোক আমিতো ভাবছি অন্য কথা। আমার এতো কষ্ট সব জলে যাবে।”
“যেমন….”
“আরেহ তোর মত আনরোমান্টিক মেয়েকে এতো কষ্ট করে সাজিয়ে দিলাম, শাড়ি পরিয়ে দিলাম কিন্তু একটু পর তো এই শাড়ি তোর শরীলেই থাক…..”
“অসভ্য মাইয়া বেশি পেকে গেছিস তাইনা। দাড়া তোকে তো……”
এই বলেই নিহা মেঘার দিকে এগিয়ে যেতে নিলেই মেঘা দৌঁড়ে দরজার দিকে চলে যায়। সেই মুহূর্তেই মেঘ এদিকটায় আসছিল। যার ফলে দুজন দুজনের সাথে ধাক্কা খেয়ে মেঝেতে পড়ে যায়।
মেঘ রেগে বলে উঠে,
“উফফ কেরে, চোখে দেখতে পান না।”
মেঘাও রেগে মেঘের চুল ধরে বলে,
“নাহ্ চোখে দেখতে পাই না। তো জনাব আমি নাহয় চোখে দেখি নাই কিন্তু আপনার চোখ টা কোথায় ছিল?”
“ও…জান তুমি। আহহ ব্যাথা পাই চুল ছাড়ো।”
মেঘা চুল ছেড়ে দিয়ে আক্ষেপের সুরে বলে উঠলো,
“কোথায় আমি পরে যেতে নিলে রোমান্টিক ভাবে এসে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরবে তানা করে নিজেও আমার সাথে পরে।”
“আমি জানতাম নাকি জান যে তুমি এখনই পরবে। জানলে তো আগে থেকেই প্রিপারেশন নিয়ে রাখতাম।”
নিহা শাড়ি ঠিক করে হাসতে হাসতে বলে উঠলো,
“আচ্ছা অনেক হয়েছে দুজনেই উঠেন এখন।”
মেঘ মেঘাকে নিয়ে উঠে নিহার দিকে তাঁকিয়ে হেসে বলে উঠলো,
“আরেহ ভাবী এখনো রুমে যান নি।”
মেঘা বলে উঠলো,
“এখনি যাবে। তোমার ভাবীর তো সাজগোজের প্রতি কোনো আগ্রহ নেই। সেই জন্যই এখানে নিয়ে এসেছিলাম।”
আশা চৌধুরী এবং অনুপমা চৌধুরী নিহার দিকে এগিয়ে আসলেন।
আশা চৌধুরী নিহার চিবুকে হাত দিয়ে বললেন,
“আলহামদুলিল্লাহ অনেক মিষ্টি দেখতে লাগছে আমার মা টাকে।”
এই বলে চোখের নিচ থেকে কাজল নিয়ে নিহার কানের কাছে দিয়ে পূনরায় বলে উঠলেন,
“কারো নজর না লাগুক। অনেক রাত হয়েছে মা। এই দুধের গ্লাস টা নিয়ে যা। আদ্রিজকে বলবি খেয়ে নিতে। মেঘা ওকে নিয়ে যা।”
মেঘা সম্মতি জানিয়ে নিহাকে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল।
নিহা যতই রুমের দিকে হেঁটে যাচ্ছে ততই যেন বুকের ভিতর ধুকধুকানি আওয়াজ বেড়েই চলছে। কই আগে তো এরকম হয় নি। এই রুমেই তো আদ্রিজ বাবুর সাথে ঘুমিয়েছে প্রায় মাস খানেক। আজ যেন অন্যরকম অনুভূতি অনুভব হচ্ছে। কারণ ছাড়াই যেন লজ্জা পাচ্ছে।
মেঘা নিহার দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠলো,
“তুই লজ্জা পাচ্ছিস ভাবা যায়। যেই মেয়ের কিনা মানুষ খুন করতে হাত কাপে না সেই মেয়ে বাসর ঘরের সামনে এসেই লজ্জা পাচ্ছে।”
“মজা নিচ্ছিস।”
“আমার কলিজা কি এতো বড় নাকি বইন। আচ্ছা রূমে যা আর শোন। গ্লাসে থাকা দুধ নিজের হাতেই খাইয়ে দিস আমার ভাসুরকে।”
নিহা চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই মেঘা দ্রুত সেখান থেকে চলে গেল।
নিহা বুকে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে দরজা খুলে রুমের ভিতরে প্রবেশ করল।
রুম অন্ধকার দেখে ভ্রু কুঁচকে গেল। পিছন থেকে দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দে পিছে তাকিয়ে দেখলো দরজা বন্ধ হয়ে আছে।
“আদ্রিজ বাবু আপনি আছেন এখানে।”
কোনো সাড়া শব্দ পেলো না। পুনরায় একই কথা জিজ্ঞেস করতেই রুমের আলো জ্বলে উঠলো।
নিহা সামনে তাকাতেই অবাক হয়ে গেল। পুরো রুম অসম্ভব সুন্দর ভাবে সাজানো হয়েছে। তার থেকেও অবাক হচ্ছে আদ্রিজ কে দেখে।
আদ্রিজ হাঁটু ভাঁজ করে বসে নিহার দিকে রিং ধরে রেখেছে।
নিহা অবাক হয়েই তাকিয়ে রইলো আদ্রিজের দিকে।
আদ্রিজ ও নিহার দিকে পলকহীন তাকিয়ে রইলো। তার এলোকেশী কে দেখতে মগ্ন সে।
নিহা কিছুক্ষণ পর আদ্রিজের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল।
আদ্রিজ হেসে নিহার হাতে রিং টি পরিয়ে দিল।
ঊঠে দাড়িয়ে মোহনীয় দৃষ্টিতে নিহার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো।
নিহা নিজেও পিছাতে লাগলো। এক পর্যায়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেল। আদ্রিজ নিহার দুই পাশে হাত রেখে নিহার কপালে ভালোবাসার পরশ দিতে গেলেই নিহা আদ্রিজের দিকে গ্লাসটি বাড়িয়ে দিল।
আদ্রিজ কপাল কুচকে নিহার হাতের দিকে তাকালো।
নিহা জোড়ে জোড়ে শ্বাস ফেলে বলে উঠলো,
“ম… মা বলেছে আপনাকে দিতে। খেয়ে নিন।”
আদ্রিজ নিহার হাতের উপর হাত রেখে গ্লাস থেকে অর্ধেক দুধ নিজে খেয়ে বাকিটা নিহাকে খাইয়ে দিল।
কিছুক্ষণ নিহার দিকে তাঁকিয়ে থেকে নিহাকে কোলে তুলে নিলো।
নিহা চমকে আদ্রিজের গলা জড়িয়ে ধরলো।
আদ্রিজ নিহাকে নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে দোলনায় বসে নিহাকেও কোলে বসালো।
নিহা স্থির হয়ে বসে রইলো আদ্রিজের কোলে।
চারদিকে তাকিয়ে আনমনেই হেসে উঠলো। বেলকনিটাও ভীষণ সুন্দর ভাবে সাজানো হয়েছে। মোমবাতির আলোয় চারদিক আলোকিত হয়ে আছে।
আদ্রিজ নিস্পলক তাকিয়ে আছে নিহার দিকে। চুলগুলো সামনের দিকে সরিয়ে দিতেই নজর আটকে গেল নিহার খোলা পিঠে। শরীল বয়ে যেন ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল। নজর কাড়লো জোড়া তিলগুলো। যেন আদ্রিজ কে কাছে টানছে। আদ্রিজ তিলগুলোর উপর ছোটো ছোট চুমুতে ভরিয়ে দিতে লাগল।
নিহা কেপে উঠলো। চোখ বন্ধ করে আদ্রিজের হাত চেপে ধরলো।
আদ্রিজ থেমে নিহার দিকে তাকালো।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠলো,
“এলোকেশী ……”
“হু…হুম।”
“আচ্ছা আমি পিঠে কিছু একটা লিখবো। তুমি তা বলবে।”
“হুম।”
আদ্রিজ নিহার পিঠে আঙ্গুল দিয়ে i লিখলো।
“বলো কি লিখেছি।”
“I.”
আদ্রিজ হেসে পুনরায় লিখলো ‘love’.!
নিহা আনমনেই বলে উঠলো,
“Love.”
আদ্রিজ আবারো লিখলো ‘you’
“You.”
আদ্রিজ হেসে নিহার কানের কাছে গিয়ে বলে উঠলো,
“I love you too.”
নিহা চুপ করে রইলো। লোকটা তার মুখ দিয়েই কথাটা বের করে নিল।
আদ্রিজ নিহার ঘাড়ে চুমু একে বলে উঠলো,
“May I…….”
নিহা কিছু বললো না।
আদ্রিজ পূনরায় একি কথা বলতেই নিহা পিছে ফিরে আদ্রিজ কে জড়িয়ে ধরলো।
আদ্রিজ আকাশের দিকে তাকিয়ে তৃপ্তিময় হাসি দিল।
নিহার মাথায় ভালোবাসার পরশ দিয়ে পূনরায় নিহাকে কোলে তুলে রুমে প্রবেশ করলো।
আকাশে থাকা চাঁদটাও যেন লজ্জা পেয়ে নিজেকে মেঘের আড়ালে লুকিয়ে ফেললো।
রাতটা কাটতে লাগলো এক জোড়া #ভালোবাসার_প্রজাপতি র পূর্ণমিলনের মাধ্যমে।
*
*
আজিজ চৌধুরী একাধারে ভাঙচুর করে যাচ্ছে।
তিনি কিছুতেই মানতে পারছে না এভাবে তার এতদিনের করা প্ল্যান নিহা খান তার উপরেই অ্যাপ্লাই করেছে।
চিৎকার করে বলে উঠলো,
“নিহা খান তোকে আমি ছাড়বোনা। টুকরো টুকরো করবো। আমার প্ল্যান আমার উপরেই অ্যাপ্লাই করেছিস। তোর কাছ থেকে পূনরায় আমি তোর প্রিয় মানুষ কেড়ে নিবো। ছাড়বোনা তোকে আমি।”
ঠিক সেই মুহূর্তেই তার ফোনে মেসেজ টোন বেজে উঠলো।
আজিজ চৌধুরী না চাইতেও মেসেজটি পড়তে লাগলেন।
“এতো জোড়ে চিৎকার করছেন কেন শশুর মশাই। এতো জোড়ে চিৎকার করলেতো প্রেশার হাই হয়ে যাবে। পরে আর আমার সাথে সমানে সমানে লাগতে পারবেন না। ভুলে গেছেন নাকি মিস্টার চৌধুরী আমি কার মেয়ে। একদম গুছিয়ে আপনার করা চাল আপনার উপরেই চাললাম। চৌধুরী বাড়ীর হাফ মালকিন এখন আমি। কথায় আছে না যে যেমন তাকে সেভাবেই বুঝাও। আর আমিতো আপনারই ছেলের বউ /আপনার বড় বউ মা। মিসেস নিহা চৌধুরী। খেলা যখন শুরু করেছেন, শেষটাও দেখার জন্যে প্রস্তুত হয়ে থাকেন বা…..বা….। আপনার রক্ত দিয়ে আমি এই খেলার সমাপ্তি টানবো।”
মেসেজটি পড়ে আজিজ চৌধুরী রেগে ফোন টি দেয়ালে ছুঁড়ে মারল।
“নিহা খান…… তৈরী থাকো। প্রিয়জন পূনরায় তোমার থেকে কেড়ে নিবো। পুনরায় তোমায় একা করবো। পুনরায় রক্তের বন্যা বইয়ে দিব।”
*
*#ভালোবাসার_প্রজাপতি
#পর্বঃ২৮
#মাহিয়া_মুন(লেখনীতে)

“ম্যাম মিস্টার আদিত্য এহসান হসপিটাল থেকে পালিয়ে গেছে।”
“কী…….”
নিহা অবাক হয়ে গেল।
তার সাথে আদ্রিজ বাবুর আনুষ্ঠানিক ভাবে বিয়ে শেষ হয়েছে প্রায় সপ্তাহ খানেক হয়েছে। এর মধ্যে নিহা এবং মেঘা পূনরায় কলেজ যাওয়া শুরু করেছে। আদ্রিজ বাবুও নিজের কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে।
তবে নিহাকে জ্বালাতে ভুলে না যেন। সুযোগ পেলেই চলতে থাকে দুজনের ভালোবাসাময় খুনসুঁটি। বিয়ের দুই দিন পরেও সারা বিকেল কাটিয়েছিল দুজন নৌকা ভ্রমণ করে।
ছোটো আদিও সারাক্ষণ বউমনি- বউমনি করে যেন মুখে ফেনা তুলে ফেলে। সেই সাথে যুক্ত হয় নিহার মেজ দেবর অর্থাৎ মেঘ ও।
মিস্টার আজিজ চৌধুরীর সাথেও চলছে পুরোদমে রেষারেষি। সুযোগ বুঝেই নিহা তার পরবর্তী কাজ করার অপেক্ষায় আছে ।
সব মিলিয়ে নিহার কাছে সময়গুলো ভালোই যাচ্ছে যেন। আজ দুপুরের রান্না করার দায়িত্ব নিহা নিজেই নিয়েছে। যদিও আশা চৌধুরীর কাছে এ নিয়ে বকাও শুনতে হয়েছে। তবে আজ সে ভেবে রেখেছে আদ্রিজ বাবুর পছন্দের খাবার নিজেই রান্না করবে।
সেই সাথে তার ভাই এর পছন্দের খাবার ও। নিহান এর ফ্লাইট আজ রাতেই । এইখানের কাজ শেষ করে সবাইকে সবটা জানিয়ে নিহাও কিছুদিনের জন্য চলে যাবে নিজের মায়ের কাছে। অভিমান করে আর কি হবে।
রান্না শেষে রুমে আসতেই তার লুকিয়ে রাখা ফোনটা বেজে উঠতেই দ্রুত রিসিভ করে। আর তাতেই ঊর্মির বলা কথা শুনে অবাক হয়ে যায়।
“কিভাবে পালিয়েছে। সেতো এখনো পুরোপুরি ভাবে সুস্থ্য হয় নি। আর গার্ড রাখা হয়েছে না, তাহলে কিভাবে পালালো?”
“ম্যাম মিস্টার আদিত্য গার্ড দের মোটা অংকের টাকা দিয়ে তাদের সাহায্যেই হসপিটাল থেকে পালিয়েছে।”
নিহা রেগে বলে উঠলো,
“বেঈমানগুলোকে আমি কম টাকা দিয়েছি নাকি। কোথায় তারা, সবগুলোকে গোডাউনে বেঁধে রাখো। বেইমানি করার শাস্তি এদের আমি হাড়ে হাড়ে বুঝাবো।”
“ওকে ম্যাম। আর ম্যাম আমি তাদের গোডাউনেই রেখেছি।”
“গুড। এখন রাখছি, আসার আগে জানিয়ে দিবো।”
এই বলে নিহা ফোন কেটে দিল।
আদিত্য পালিয়ে গেছে। তার মানে এখন দু দিক থেকেই যে কোনো সময় বিপদ হামলে পরবে। দুজনের লক্ষ্য এখন নিহা। তার আগে আদ্রিজ বাবুকে হেফাজত করতে হবে। নিহার কেন যেন মনে হচ্ছে আদ্রিজ বাবুর সামনে বিপদ। আর এর কারণটা এক মাত্র সে। সবটা কি জানিয়ে দেওয়া উচিত আদ্রিজকে?
*
*
মাত্রই গোসল সেরে ওয়াশ রুম থেকে বের হল নিহা। সাথে সাথেই এক জোড়া হাত নিহার কোমড় জড়িয়ে ধরলো।
নিহা চমকে পিছে তাকাতেই আদ্রিজকে দেখে ভ্রু কুচকে গেল। খানিকটা যে অবাকও হয়েছে তা তার চেহারা দেখে যে কেউ বুঝে ফেলবে।
নিহা অবাক হয়েই বলে উঠলো,
“একি এই সময়ে আপনি বাসায়।”
আদ্রিজ কিছু না বলে নিহার চুলে প্যাঁচানো গামছা টেনে খুলে ফেললো। পুনরায় নিহাকে জরিয়ে ধরে ভিজা চুলে মুখ গুঁজে দিল।
“আব…কি করছেন?”
“উমম.. দেখছো তো কি করছি।”
“হুম দেখছি। দেখি ছাড়ুন। এই সময়ে আপনি হটাৎ বাসায় যে।”
“কি করবো বলো। বউ আমার এতো কষ্ট করে ঘেমে একাকার হয়ে বরের পছন্দের খাবার রান্না করলো। আর বর কিনা অফিসে বসে থাকবে।”
“আপনি জানলেন কি করে।”
“তোমার শাশুড়ী ফোন দিয়ে বললো।”
“ওহহ। দেখি ছাড়ুন, ফ্রেশ হয়ে নিন। আমি ততক্ষনে নামাজ সেরে নেই।”
আদ্রিজ নিহাকে না ছেড়ে আরো টাইট করে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,
” আচ্ছা ছেড়ে দিচ্ছি আমার পাওনা টা দিয়ে দেও। সকালে তো না দিয়েই পগার পার হয়ে গেলে।”
নিহা অবাক হয়ে বলে উঠলো ,
“এখন।”
“হ্যা এখন। যদি না দেও তাহলে ছাড়ছিনা।”
নিহা কিছুক্ষণ আদ্রিজের দিকে তাকিয়ে রইল।
পরবর্তীতে পায়ের পাতার উপর ভর দিয়ে উচু হতেই আদ্রিজ নিহার কোমড় ধরে উপরে উঠিয়ে নিল।
নিহা আদ্রিজের ঘাড় জড়িয়ে ধরে পরপর কপালে – গালে চুমু একে দিল।
আদ্রিজ হেসে নিজেও নিহার কপাল – গাল এবং নাকের ডগায় চুমু দিয়ে ছেড়ে দিল।
“এইবার গিয়ে দ্রুত ফ্রেশ হয়ে আসেন।”
আদ্রিজ সম্মতি জানিয়ে ওয়াশ রুমে ডুকে গেল।
*
*
খাবার টেবিলে বসে সবাই নিহার হাতে রান্না করা খাবার বেস মজা করেই খাচ্ছে।
আদি খেতে খেতে বলে উঠলো,
“বউমনি আমার জন্যও তোমার মতো একটা মেয়ে দেখবে। যে তোমার মতই আমার পছন্দের খাবার এতো ভালো করে রান্না করে।”
মেঘ আদির কান টেনে ধরে বলে উঠলো,
“আচ্ছা তাইনা। আমি বিবাহিত ব্যাচেলর হয়ে বসে আছি আর তুই কিনা এই বয়সে বিয়ের কথা বলছিস।”
“উফফ কান ছাড়ো। আর আমার বয়স কম তো কি হয়েছে। আমি এখনি প্রায় তোমার মতো হয়ে গেছি লম্বায়।”
“হ্যা তুই তো আমার থেকেও দশ হাত লম্বা। জিরাফের মত লম্বা তোর গলা।”
“তোমার গন্ডারের মত মোটা চামড়া।”
আজিজ চৌধুরী রাগ মাখা কন্ঠে বলে উঠলেন,
“দুজন আর একটাও কথা বলবে না। চুপচাপ খেয়ে নেও। তোমাদের বউমনির হাতের করা রান্না বলে কথা।”
কথাটা যে নিহাকে অপমান করে বলা হয়েছে তা নিহা ঠিকই বুঝতে পারছে।
আজিজ চৌধুরী পূনরায় বলে উঠলেন,
“আদ্রিজ বাবা তুমি কখন বের হবে?”
আদ্রিজ খেতে খেতেই বলে উঠলো,
“এইতো বাবা একটু রেস্ট নিয়েই বের হবো।”
“ওহহ আচ্ছা সাবধানে যেও। কখন কোন দিক দিয়ে বিপদ চলে আসে বলা যায় না। নাহ মানে বিপদ তো আর বলে আসে না। বাবা হিসেবে তোমায় সতর্ক করে দেওয়া আমার দায়িত্ব।”
“It’s oka বাবা।”
আজিজ চৌধুরী হেসে নিহার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে উঠলেন।
নিহা সরু চোখে আজিজ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে রইল। লোকটা নিশ্চই কিছু একটা করতে চাইছে।
*
*
দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকেল। আদ্রিজ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তৈরী হচ্ছে।
নিহা পলকহীন তাকিয়ে রইলো তার আদ্রিজ বাবুর দিকে। এই লোকটার সৌন্দর্য যেনো দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজ কেন যেন লোকটাকে ছাড়তে ইচ্ছে করছে না। মন সায় দিচ্ছে না।
আজিজ চৌধুরীর ঐভাবে হেসে উঠার নিশ্চই কোনো কারণ আছে। সেই কারণটাই নিহা এই মুহুর্তে বুঝতে পারছে না।
“কি ব্যাপার বলতো, সেই কখন থেকে দেখছি আমার দিকে পলকহীন তাকিয়ে আছো। ইসস এখন যদি তোমার জামাই এর নজর লেগে যায়।”
নিহা আদ্রিজের বাহুতে আসতে থাপ্পড় মেরে বলে উঠলো,
“যেহেতু সে আমার জামাই তো তাতে সমস্যা টাও আমার। কিন্তু নজর লেগে যাওয়া জামাইয়ের সাথে থাকতে আমার কোনো আপত্তি নেই। তবে আমার জামাইয়ের চেহারা দেখে মনে হচ্ছে যে এতে তাঁর অনেক সমস্যা।”
“না..নাহ। আমার কোনো আপত্তি নেই।”
“আচ্ছা তাই……. তাহলে অফিসে যেতে হলেও বুঝি এতো সাজতে হয়।”
“কি বলছো সাজলাম কোথায়?….এই এক সেকেন্ড এক সেকেন্ড তুমি জেইলাস নয়তো। Are you jealous?”
“ন…… নাহ্। জেইলাস হব কেনো।”
“তাই তবে আমার কেন যেন তাই মনে হচ্ছে। আজকে আদর আদর ভাবটাও যেন একটু বেশিই দেখানো হচ্ছে। কেন বলোতো।”
“আব….কিসব উল্টা পাল্টা বলছেন। আপনার লেট হয়ে যাচ্ছে দেখুন।”
আদ্রিজ হেসে নিহার কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে বলে উঠলো,
“আচ্ছা যাচ্ছি।”
“শুনুন, সাবধানে যাবেন।”
আদ্রিজ হেসে বলে উঠলো,
“ঠিক আছে বিবি সাহেবা। আজ বাবাও বললো তুমিও বলছো, স্ট্রেঞ্জ।”
*
*
*
#চলবে
*
#চলবে

(চলম পাইছি)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here