ভালোবাসার ভেজা সন্ধ্যে পর্ব ২২

#ভালোবাসায়_ভেজা_সন্ধ্যে
#রোকসানা_রাহমান

পর্ব (২২)

আকাশ কাঁদিয়ে তুমুল বেগে বৃষ্টি হচ্ছে। মায়া কান্নার মাঝে হঠাৎ হঠাৎ ভুবন কাঁপিয়ে চিৎকার তুলছে কালচে রঙের গগন। সাথে সাথে বিজলির তীব্র রশ্মি জ্বলছে-নিভছে! মিন্মি চুলায় খিচুড়ি বসিয়েছে। বোনা খিচুড়ি। তার কাছে বৃষ্টি মানেই খিচুড়ি। সাথে কয়েক পদ ভর্তা হলে তো জিহ্বে জল আসার উপক্রম! সে খিচুড়িতে পানি দিয়ে পেঁয়াজ ছিলছে। ভর্তার প্রধান উপকরণ হলো পেঁয়াজ। যেকোনো জিনিসের সাথে পেঁয়াজ আর মরিচ মেশালেই তো ভর্তা হয়ে যায়। এটা অবশ্য তার কথা নয়,রিপ্তির কথা! কথায় যুক্তিও আছে। তাই মিন্মি রিপ্তির সাথে একমত পোষণ করে পরশুদিনই মাংসের ভর্তা বানিয়েছিলো। যদিও তেমন একটা স্বাদ পায়নি তবে খারাপও লাগেনি। মিন্মি পেঁয়াজ রেখে রসুনে হাত দিলো। শুটকি ভর্তা বানাতে গিয়ে দেখে শুটকি নেই। এই বৃষ্টির মধ্যে বাইরে যাওয়ার জোঁ নেই,শুটকি আনবে কি করে? রসুনের কয়েক কোয়া পানিতে ভেজাতে ভেজাতে বাইরে তাকালো মিন্মি। বাইরে কালো অন্ধকারের মাঝে ঘন বৃষ্টির ফোঁটায় সবকিছুই ঝাপসা দেখাচ্ছে,অন্ধকারটাও ঝাপসা! মিন্মি ঠিক বুঝে উঠতে পারছেনা যে এখন সন্ধ্যা নাকি রাত। বসার রুমেই দেয়ালঘড়িটা। রান্নাঘর থেকে হালকা উঁকি দিলো সে। সাতটা বেজে পনেরো। মুহুর্তেই মিন্মি চিন্তায় পড়ে গেলো। মনেমনে বিড়বিড় করলো,বাবা তো এখনো এলেননা। সাথে ছাতাটাও তো নেননি!

রিপ্তির রুমে দুটো জানালা। একটা উত্তরে আরেকটা দক্ষিণে। জানালা দুটো এখন প্রায়ই বন্ধ থাকে। মাঝে মাঝে ঘরের ভাপসা গন্ধ দুর করতে খোলে দেয় রিপ্তি। তবে কয়েক মিনিটের জন্য। আজও সেই উপলক্ষেই জানালা খুলেছিলো সে। কিছু সময়বাদেই বৃষ্টির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফোটা অদৃশ্যভাবে জানালার ধারগুলো ভেজাতে থাকে। জালানার কাছ ঘেষেই আনমনে দাড়িয়েছিলো রিপ্তি। দিনের আলোটা তার ভালো লাগেনা। আজ ভালো লাগেনা জিনিসটাকেই দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিলো। প্রবল ইচ্ছে! কিন্তু এইভাবে কালবৈশাখীর ন্যায় ঝড় তুলবে তা কি সে জানতো? বৃষ্টির ফোঁটা গালে পড়তেই রিপ্তি শিউরে উঠে। প্রচন্ডবেগে রক্ত চলাচল শুরু হয় শিরাউপশিরায়। বুকের বা পাশের হৃদস্পন্দনটাও হুট করেই বেড়ে গেলো। ঢিপঢিপ শব্দটা যেন বুকে নয়,রিপ্তির কানে বাজছে। সাথে সাথেই শরীরের প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় কোষগুলো কেঁপে উঠে মিথ্যে যন্ত্রণায়। রিপ্তি কাঁপছে,কাঁপছে তার অনুভূতিগুলো। রিপ্তি চট করে জানালা থেকে সরে গেলো। দু’হাতে কান চেপে ধরে আপনমনে বিড়বিড় করছে,আমি শুনতে চাইনা তোমার শব্দ! বৃষ্টি তুই চলে যা। তারমাঝেই বর্জ্যপাত। রিপ্তি ছিটকে উঠে। দৌড়ে পালিয়ে যায় নিজের রুম ছেড়ে। ছুটছে সে,কিন্তু কোথায়? কোন গন্তব্যে? ভাবীর রুম,বাবার রুমে গিয়েও সে শান্তি পেলোনা। সব জায়গায় কেন বৃষ্টি হতে হয়? কেন এমন শব্দ তুলে বৃষ্টি হতে হয়?? তারা কি জানেনা তাদের শব্দে কারো নিশ্বাসের উপস্থিতি টের পায় সে। কারো নরম ছোঁয়া অনুভব করতে পারে,কারো আদুরী গোঙানির শব্দ শুনতে পারে!

রিপ্তি বাবার রুম ছেড়ে রান্নাঘরে ছুটলো। মিন্মি পা’টায় শুকনো মরিচ বাটছিলো তারমধ্যেই রিপ্তি চিৎকার করে বললো,,

“” জানালা বন্ধ করো,ভাবী! বৃষ্টির ঝুপঝাপ শব্দ অসহ্য লাগছে। বন্ধ করো এখনি!””

মিন্মি চমকে উঠলো। হাতের পাশে থাকা পানির বাটিরা উল্টে গেলো। ভাসিয়ে দিলো বাদাম ভর্তা! হায় হায় ভঙ্গি করতেই রিপ্তি ছুটে এসে জানালা বন্ধ করে দিলো। সাথে রান্নাঘরের দরজাটাও আটকে দিলো বাইরে থেকে। মিন্মি ভেতরেই আটকা পড়েছে। উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললো,,

“” রিপি,কি হয়েছে? আমায় বন্দী করলি কেন? খোল!””

ধীরে ধীরে কান থেকে হাত সরালো রিপ্তি। নাহ! এখন আর শব্দ পাচ্ছেনা। ঠোঁটে বিজয়ী হাঁসি নিয়ে বললো,,

“” এখন কোনো শব্দ নেই ভাবী। তোমার ভর্তা বানানো হলে খুলে দিবো। এখন আমি টিভি দেখবো।””
“” এটা কেমন পাগলামি রিপি?””
“” বাবা কখন আসবে?””
“” আমাকে বলে যায়নি।””

রিপ্তি আর কথা বাড়ালো না। টিভিটা চালু করে ভলিউম একশতে দিলো।

~~~
কবির সাহেব বাসায় ফিরলেন রাত আটটায়। কাকভেজা হয়ে। মিন্মি তখনো রান্নাঘরে বন্দী। রিপ্তিই দৌড়ে বাবার শরীর মুছে দিলো। বাবার হাতে-পায়ের তালুতে সরিষা তেল ঘষতে ঘষতে বললো,,

“” কোথায় গিয়েছিলে,বাবা? এতো দেরি করে এলে কেন? তুমি বাসায় না থাকলে নিজেকে এতিম এতিম লাগে। কান্না পায়!””

কবির সাহেব মেয়ের মাথায় হাত রাখলেন। কিছু বললেননা। কিই বা বলবেন? বলার মতো কিছু নেই। আজ তার কথার ঝুড়ি খালি সাথে উপদেশের বানীগুলোও বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। রিপ্তি বাবার পাশ ঘেষে বসতে বসতে বললো,,

“” চুল বানিয়ে দিবো? ছোটবেলা রিপ্তির চুল বানানো তোমার খুব পছন্দ ছিলো।””

কবির সাহেব মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন। রিপ্তিও পুরোদমে বাবাকে খুশি করার চেষ্টা চালাচ্ছে। কবির সাহেবের চোখটা লেগে আসছে। সারাদিনের ক্লান্তিতে শরীরটা অনেক দুর্বল সাথে হার্টটাও। প্রায় ঘুমিয়েই ঘুমিয়েই নানা চিন্তা করছিলেন। তারমধ্যেই গম্ভীরগলায় বললে,,

“” রিপ্তি,মা! তোমার এখন মায়ের কথা মনে পড়েনা? আগে তো খুব কাঁদতে বারবার জেদ ধরতে মা এনে দিতে!””

রিপ্তি হাতের কাজ বন্ধ করলো। বেশ উৎসাহ নিয়ে বললো,,

“” মা তো পেয়ে গিয়েছি তাহলে আবার মনে পড়ার কি আছে? মনে তো তাকেই পড়ে যে চোখের আড়ালে চলে যায়। আমার মা তো চোখের সামনেই আছে।””
“” তাই নাকি? কে সে?””

রিপ্তি ভণিতা ছাড়াই বললো,,

“” মিন্মি মা!””

কবির সাহেবের প্রাণটা জুরিয়ে গেলেন। মনে মনে কিছুটা সস্থির নিশ্বাস টানলেন। পরক্ষণেই আবার জিজ্ঞেস করলেন,,

“”বাবা যদি চোখের আড়াল হয়? তখন কি করবে?””

রিপ্তি সাথে সাথে বাবার গলার জড়িয়ে ধরে বললো,,

“” কখনোই না। আমার বাবা সবসময় আমার চোখের সামনে থাকবে। চোখের মনি হয়ে!””

~~~

আজ খুব ভোরে ঘুম ভেঙেছে রিপ্তির। তবে বিছানা ছাড়লো আটটায়। শরীরটা এখনো আলসেমীতে মত্ত। কিছুতেই মেঝেতে পা ফেলতে চায়ছেনা। কিন্তু শরীরের সাথে তাল মেলালে তো চলবেনা। রিপ্তি ঠিক করেছে আজ থেকে ইউভার্সিটিতে যাবে। রোজ যাবে। মন দিয়ে ক্লাস করবে। কিন্তু মনটা তাই চায়তো? নাকি অন্যকিছু চায়? আচ্ছা মনটা কি আদৌ নিজের কাছে আছে? রিপ্তি হঠাৎই অনুভব করলো,তার বুকটা ফাঁকা,শূন্যতায় ডুবে আছে বিরহ অন্ধকারে!

“” এখনো বিছানা ছাড়িসনি?””

ভাবীর কন্ঠে রিপ্তির ভ্রম কাটলো। পা’দুটো মাটি ছুই ছুই। কোলে কাথা নিয়ে বিছানার ধারে বসে আছে রিপ্তি। কাঁথাটা পাশে রেখে চট করে নেমে দাড়ালো। কাঁথা ভাজ করতে করতে বললো,,

“” এইতো ছাড়লাম। আমাকে ডাকতে এসেছো নাকি অন্যকিছু?””

মিন্মি রিপ্তির কাছ ঘেষে দাড়ালো। জড়োতা নিয়ে বললো,,

“” তোর কাছে প্যাড আছে? আমারটা কবে যে ফুরোলো একদমই খেয়াল নেই। তোর ভাইও বাসায় নেই! থাকলেতো…””

রিপ্তি বাধা দিয়ে বললো,,

“” আছে। এতো মশলা মাখছো কেন ভাবী? তোমার দরকারে আমি,আমার দরকারে তুমি। আমার রুমের কোনো জিনিস ধরতে হলেও তোমার জিজ্ঞেস করতে হবেনা। যখন যা ইচ্ছে নিয়ে যেও।””

মিন্মি সামান্য হাঁসলো। আড়ষ্টভাবটা কেটে গিয়েছে। রিপ্তি কাঁথা ছেড়ে রুমের এককোনায় চলে গেলো। টেবিলের ড্রয়ার খুলে প্যাড বের করেছে। কিন্তু ভাবীর দিকে না বাড়িয়ে সেটার দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে। হঠাৎ করেই মনে পড়লো,দীর্ঘদিন ধরে সে প্যাড ব্যবহার করছেনা। করার প্রয়োজন পড়েনি। তার তো পিরিয়ডই হয়নি। গতমাসেও হয়নি আর এই মাস? রিপ্তি উদগ্রীব কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,,

“” আজ কয় তারিখ ভাবী?””
“” ২৭। কেন?””

রিপ্তির হাত থেকে প্যাডটা পড়ে গেলো। শরীরের বল হারিয়ে টেবিলের সাথে পিঠ ঠেকেছে। মিন্মি দৌড়ে এলো। রিপ্তিকে শক্ত করে ধরেছে। উদ্বিগ্ন হয়ে বললো,,

“” কি হয়েছে? তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? রিপ্তি? চোখ মেল!””

রিপ্তির মাথাটা ভাবীর কাঁধে পড়ে আছে। অস্পষ্ট গলায় বিড়বিড় করছে,দশদিন আগেই ডেট চলে গিয়েছে!

রিপ্তিকে বিছানায় বসিয়ে দিয়েছে মিন্মি। রিপ্তির গালে ছোট আঘাত করতে করতে বললো,,

“” কিসের ডেট রিপ্তি? কি আবিজাবি বলছিস? বোন আমার তাকা আমার দিকে! কি হয়েছে বল আমায়। রিপ্তিমা!””

রিপ্তি পিটপিট চোখে ভাবীর দিকে তাকালো। অস্ফুটে বললো,,

“” পানি খাবো!””

মিন্মি হন্ন হয়ে পানি আনতে চলে গেলো। পদে পদে চিন্তারা মাথায় ঘুরছে তার। হঠাৎ করে কি হলো? বাসায় তো কোনো ছেলে মানুষও নেই। কাকে ডাকবে? রাসেলকে একটা কল দিবে? উফ! আজই ওকে বাজারে পাঠাতে গেলাম? বাবার স্কুল তো কাছেই। বাবাকে কল দিবো? নাকি আমিই ডাক্তার আনতে চলে যাবো? কিন্তু রিপ্তিকে একা রেখে কিভাবে যাবো?

মিন্মির সকল চিন্তা দুর করে রিপ্তি সুস্থ হয়ে গেলো। মিন্মির আনা পানিটুকুও খেলোনা। ওড়না আর পার্সটা নিয়ে অতিব্যস্ততায় বাইরে বেড়িয়ে এলো।

~~~

রাতের টুকিটাকি কাজ শেষে রুমে ঢুকলো মিন্মি। ভেতরে বাবাকে দেখে খানিকটা অবাক হয়েছে। বাবার সাথে তার প্রায়শই কথা হয়,বেশিরভাগ সময় খাবার টেবিলে অথবা উনার রুমে। আজ হঠাৎ নিজের রুমে দেখে সামান্য অসস্থি বোধ হচ্ছে। তার মধ্যে সে রুমে ঢুকতেই বাবা এমনভাবে তাকালেন যেন তার অপেক্ষায় ছিলেন। কবির সাহেব ছেলের মুখোমুখি হয়ে বিছানায় বসেছিলেন। বউমাকে দেখে পকেটে হাত দিলেন। চাবির গোছা বের করে মিন্মির দিকে বাড়িয়ে দিলেন। মিন্মি কয়েক কদম এগিয়ে আড়ষ্টভঙ্গিতে চাবি নিলো। বাবার দিকে জিজ্ঞাসুদৃষ্টিতে তাকাতে,কবির সাহেব তরল গলায় বললেন,,

“” এটা আমার রুমের আলমারীর চাবি। তোমার শ্বাশুড়ির হাতে রাখা অনেককিছুই পড়ে আছে ওখানে। নিজের কাছে এনে রেখো।””

মিন্মি কিছু বলতে চাইলে মাঝপথে থামিয়ে দিলেন কবির সাহেব। ছেলের দিকে মুখ করে বললেন,,

“”মেয়েরা স্বামীর মধ্যে বাবার ছায়া খোঁজে। বাবা আর স্বামীর মধ্যে বিস্তর পার্থক্য। দুজনের ভালোবাসা দুরকম। একজনের সাথে আরেকজনের কখনোই মিল হয়না। তবে সুক্ষ মিলটা মেয়েরা চায়। কোনোরকম ভয়,আক্ষেক,সংসয়,দ্বিধা ছাড়াই বাবাকে যেমন ভরসার সর্বোচ্চটা অনুভব করতে পারে? ঠিক তেমনটাই স্বামীর কাছ থেকেও পেতে চায়। অনুভবের মাঝে আমি তেমন কিছু দেখতে পেয়েছিলাম। আমার রিপ্তির জন্য ওর মতো কাউকেই প্রয়োজন ছিলো। তাই তোমাদেরকে না জানিয়ে আমি অনেককিছু এগিয়েও রেখেছিলাম। কিন্তু..””

রাসেল এতক্ষণ মনোযোগীতে বাবার কথা শুনছিলো। এবার উৎসাহ নিয়ে বললো,,

“” কিন্তু কি বাবা? অনুভবকে আমারও খুব পছন্দ। আমরা একসাথে পড়েছি। বন্ধুত্বও বেশ ভালো। আমাদের রিপ্তির জন্য ওর মতো অন্য কাউকে পাবো না।””

কবির সাহেব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,,

“” এখন আর সেটা সম্ভব না।””
“” কেন?””
“” ও বিয়ে করে ফেলেছে। মেয়েটির নাম সম্ভবত লিনা।””

এমন একটা কথার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা রাসেল,মিন্মিও। রাসেল এতোটাই অবাক হলো যে বসা থেকে দাড়িয়ে গেলো। মিন্মি অবিশ্বাস্যভঙ্গিতে বললো,,

“” এটা কি করে সম্ভব? আমিতো ভেবেছিলাম অনুভব ভাই রিপ্তিকে পছন্দ করেন। উনার চালচলনে স্পষ্ট ধরা পড়তো।””

কবির সাহেবও বসা থেকে দাড়ালেন। তরল গলায় বললেন,,,

“” যা হয়ে গিয়েছে তা ভেবে সময় নষ্ট করার প্রয়োজন নেই। আমার রিপ্তিমায়ের কপালে কে আছে তা আমার জানা নেই। তবে আমি চাই খুব শিঘ্রই রিপ্তির বিয়ে দিতে। তার পুরো দায়িত্বটা তোমাদের উপর ছেড়ে দিলাম।””

কবির সাহেব কথা শেষ করে চলে যাচ্ছেন। দরজার কাছে গিয়ে ছেলের উদ্দেশ্যে বললেন,,

“” বাবার ছায়া কিন্তু বড় ভাইদের মধ্যেও দেখা যায়!””

~~~

গভীর রাত। ঘুমের তলদেশে অবস্থান করছিলেন কবির সাহেব। হঠাৎ পায়ে নরম পানির স্পর্শে ঘুম ভেঙে যায়। মৃদুসুরে বললেন,,

“” কে?””

বাবার কন্ঠ পেয়েই রিপ্তি হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। বাবার দুটি পা জড়িয়ে ধরে বলছে,,

“” আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি,বাবা। তোমার মেয়ে হয়ে আমি এতো বড় ভুল কি করে করলাম? বাবা,আমাকে শাস্তি দাও,কঠিন শাস্তি। কিন্তু তোমার থেকে দুরে ঠেলে দিওনা।””

মেয়ের ক্রন্দনে কবির সাহেবের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। কি এমন ভুল করেছে সে যে এভাবে ভেঙে পড়েছে? রিপ্তি পা ছেড়ে বাবার নিকটে আসলো,,,

“” আমার অনুভবকে চাই,বাবা। তোমার প্রিয়ছাত্রকে চাই। তুমি বললে উনি ঠিক শুনবেন। আমাকে বিয়ে করবেন। কল দাওনা। তোমার মোবাইল কোথায়? দাড়াও আমি খুজে দিচ্ছি!””

রিপ্তি পাগলের মতো এদিক ওদিক দৌড়াচ্ছে। অন্ধকারে পড়ে যেতে নিলে কবির সাহেব ধরে ফেললেন। কঠিনসুরে বললেন,,

“” কি ভুল করেছিস?””

রিপ্তি শান্ত হয়ে গেলো। মাথা নিচু করে আছে। কবির সাহেব অস্থির হয়ে পড়লেন।

“” কি হলো বল!””

রিপ্তি অস্পষ্টসুরে বললো,,

“” আমি প্রেগন্যান্ট!””

~~~
নিজের প্রিয়ছাত্র শুধু ভরসায়ই নয় বিশ্বাসটাও ভেঙে দিয়েছে। এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিলো কবির সাহেবের। এতোদিনে একটু একটু করে গড়ে তোলা অর্জিত সম্মানটাও যে যেতে বসেছে সেটাও বুঝতে পেরেছিলেন। কিন্তু এর জন্য কি রিপ্তি দায়ী? নাকি অনুভব? নাকি সে নিজেই? এমন চোখ বন্ধ করা বিশ্বাসের জন্যই আজ তার মেয়ের জীবনটা অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছেনা? আরেকটু সচেতন হলে হয়তো অন্যকিছু হতে পারতো। হতাশা,আক্ষেপ আর এক প্রকার অপরাধবোধ নিয়ে এতোটাই ভেঙে পড়েন যে সেইরাতে ঘুমেরঘোরে মৃত্যুবরণ করেন কবির সাহেব!

চলবে

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here