ভালোবাসার ভেজা সন্ধ্যে পর্ব ২১

#ভালোবাসায়_ভেজা_সন্ধ্যে
#রোকসানা_রাহমান

পর্ব (২১)

রিপ্তি পেছন না ঘুরেই দাড়িয়ে আছে। বা হাতে পিঠ ছুতেই বুকটা ধক করে উঠলো। অজানা ভয়, আসঙ্কা আর লজ্জার স্রোত বয়ছে শিরা উপশিরায়। কারো নিশ্বাসের শব্দ পাচ্ছে সে,তাহলে কি অনুভব তার দিকে এগিয়ে আসছে? রিপ্তির হাত-পায়ে কাপুনি উঠে গেলো। দৌড়ে পালাবে,তখনি দুটো হাত কোমড় জড়িয়ে ধরলো।

মুগ্ধ চোখ,ভেজা ঠোঁট
অনুভূতির ক্রন্দে
ভাসুক আবেগ,ডুবুক বিবেক
ভালোবাসায় ভেজা সন্ধ্যে!(রোকসানা)

~~~
“” এই আধরাততিরে জামাকাপুড় খুইললা শুইয়া আছস ক্যান? ভূতে ধরছেনি?””

নানির কর্কশ কন্ঠে লাফিয়ে উঠলো রিপ্তি। নিজের দিকে চাইতে লজ্জায় চাদরটা খামচে ধরলো। নানির সামনে সে এভাবে পড়ে ছিলো? মরার ঘুমে? ঘুম আসলোই কিভাবে? সে তো এমন অসময়ে ঘুমায়না। রিপ্তি আপ্রাণচেষ্টায় আছে চাদরটাকে নিজের শরীরের বস্ত হিসেবে ধরে রাখতে। নানি তিক্তকন্ঠে বললেন,

“” আর কি দেখমু আল্লাহই জানে। বিয়ার বয়স পার অইয়া যাইতাছে তাও বিয়ার কোনো খবর নাই। এমন বিয়াত্তা মাইয়ারে ঘরে একলা ফালাইয়া রাখলে এগুলাই তো দেখতে হইবো। শরীর তো জ্বলবোই,হেইডা পুরুষ মাইনসের ছুইলেও না ছুইলেও।””

পরিবানু গটগট করে ওয়াশরুমে গেলেন। ওযু করছেন হয়তো। এশার আযান শোনা যাচ্ছে। রিপ্তি বিছানা ছাড়লো। চটজলদি জামা পড়ে নিচ্ছে। নানি এখনি বের হবে। আর কোনো লজ্জা পেতে চায়না সে। তাড়াহুড়োয় রিপ্তি উল্টো জামা পড়েছে। সেলাই উপরে। পায়জামার বাধুনিটা সামনে থেকে পেছনে চলে গেলো। হাতের থরথর কাঁপনে ফিতেতে শক্ত গিট্টু লেগে গেলো। সুতি ওড়নাটা বুকে জড়িয়ে রুম ছাড়ছে। মাথা যন্ত্রণা হচ্ছে তার। শরীরের বিশেষ জায়গাতেও শীর্ণব্যথার উপস্থিতি টের পাচ্ছে। ঠিকমতো হাঁটতে পারছেনা। মন চাইলেও শরীর তার সাথে সায় দিচ্ছেনা। ধীরগতিতে বসার রুমের দিকে এগুচ্ছে। কি হয়েছে তার সাথে ঠিক মনে করে উঠতে পারছেনা। তবে ঝাপসা একটা মুখ চোখের সামনে বারবার এদিকওদিক ছুটছে। যা ভাবছে তা যদি সত্যি হয়??? রিপ্তি আর কিছু ভাবতে পারলোনা। যন্ত্রণা তীব্র হতে তীব্রে রুপান্তর হচ্ছে। বসার রুমের পরিষ্কার আলো চোখে আবছা হয়ে ঠেকছে।

বাবা বসার রুমে বেতের চেয়ারে বসে আছেন। ভাইয়াও আছে। কিন্তু ভাবী নেই। ভাবী কি এখনো আসেনি? আসবেনা কেন? ভাইয়া নিশ্চয় এতোরাতে ভাবীকে একা রেখে আসবেনা। হয়তো অন্য কোথাও আছে। অন্যকাজে। রিপ্তি পেছন ঘুরতেই ভাবীর সাথে ধাক্কা খেলো। গরম চা এসে পড়লো রিপ্তির ওড়নায়। রিপ্তি অপ্রস্তুতে দ্রুততারসহিত বললো,,

“” সরি! সরি ভাবী। আমি দেখিনি!””

চায়ের কাপটা নিচে পড়ে সামান্য শব্দও হলো। ভেঙে গিয়েছে। মিন্মি সেদিকে নজর দিলোনা। রিপ্তির ওড়না ঝাড়তে ঝাড়তে বললো,,

“” গরম চা ছিলো রিপি,ওড়নাটা খোল,শরীর পুড়ে যাবে!””

মিন্মি নিজেই ওড়না টেনে খুলে নিলো। রিপ্তির জামায়ও চা পড়েছে। মিন্মি জামায় হাত দিতে গিয়ে গলায় হাত দিলো।

“” তোর গলায় দাগ কিসের রিপ্তি? দেখি আলোর দিকে ঘুরতো!””

ভাবীর কথায় রিপ্তি আৎকে উঠলো। চট করে ভাবীর হাত থেকে ওড়নাটা ছিনিয়ে নিলো। গলা ঢাকতে ঢাকতে বললো,,

“” কই দাগ? চা পড়েছে তাই হতো। একটু পরই ঠিক হয়ে যাবে।””

মিন্মি রিপ্তির ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছে। সন্দেহকন্ঠে বললো,,

“” তোর ঠোঁট…””

রিপ্তি অন্যদিকে ঘুরে গেলো। ভয়ে শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছে তার। ভাবী এসব কি বলছে? তাহলে কি সত্যি সত্যি আমার সাথে কিছু হয়েছে?? রিপ্তির অন্তরআত্মা কুকিয়ে উঠলো। হঠাৎ করেই যেন পুরো শরীরে ব্যথার যন্ত্রণার ছুটোছুটি শুরু হয়ে গেছে। ক্ষিপ্রতা বহুগুন! রিপ্তি আর স্থিরভাবে দাড়িয়ে থাকতে পারছেনা। অস্থিরতায় তার সব লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়ার উপক্রম। রিপ্তি ভারীগলায় বললো,,

“” আমার মাথাটা খুব ব্যথা করছে,ভাবী। আমি
একটু ঘুমোবো। কেউ ডাকতে এসোনা। পরে উঠে খেয়ে নিবো।””
“” একটু রঙ চা করে দিবো? তোর ভাইয়া কে বলি মাথাব্যথার ট্যাবলেট এনে দিতে?””

রিপ্তি ব্যস্তগলায় বললো,,

“” না লাগবেনা। ঘুমোলেই সেরে যাবে।””

রিপ্তি আর একদন্ডও ভাবীর সামনে দাড়ালোনা। সাহসই নেই। কেমনজানি ধরা পড়ার ভয়। ব্যস্তপায়ে নিজের রুমে ছুটছে। কিছু একটা ভেবে ভাবীর দিকে ঘুরলো।

“” ভাবী,তোমরা যখন এলে তখন আমি ছাড়া আর কেউ ছিলো বাসায়?””
“” আর কেউ বলতে?””
“” অ…””

রিপ্তি নামটা উচ্চারণ করতে গিয়েও থেমে গেলো। ভাবী এখনো সন্দেহদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। রিপ্তি জোরপূর্বক হাসি নিয়ে বললো,,

“” অন্যকেউ!””
“” না তো। বাসায় অন্যকেউ কোথা থেকে আসবে? তুমি তো একাই ছিলে।””

রিপ্তির মন নানারকম ভাবনায় জর্জরিত। রুমের দিকে ছুটছে। দরজায় খিল দিয়ে ওড়না খুলে ফেললো,ভীতপায়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছে। অবাকদৃষ্টিতে চেয়ে আছে নিজের দিকে। এগুলো কিসের চিহ্ন? খুব কড়া কোনো আঘাত নয়,তবুও কেন যন্ত্রণাদায়ক লাগছে? রিপ্তির ইচ্ছে হলো গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে। এ সে কি ভুল করে ফেললো?? কেন করলো? এমন কিছু হওয়ার তো কথা ছিলোনা। রিপ্তি নিজের চুলের গোড়ায় খামচে ধরলো। নিজের সাথেই নিজে বিড়বিড় করছে,,এটা আমি কিভাবে করলাম? আমি তো উনার উপর রেগে ছিলাম। রাগ থেকে এমন মারাত্মক ভুল কি করে করলাম? কিভাবে সম্ভব হলো? কি ছিলো উনার ছোয়ায় যে আমাকে এমন ভুল করতে বাধ্য করলো! ভালোবাসা? কিন্তু উনি তো কখনো বলেননি উনি আমায় ভালোবাসেন! ভালোবাসা থাকলেই কি এমন মারাত্মক ভুল করতে হবে? কেন আটকালাম না আমি? কেন? কেন? কেন?

~~~

আজ তিনদিনবাদে রিপ্তি নিজের ক্যাম্পাসের জন্য রেডি হচ্ছে। আয়না দেখতে ইচ্ছে করেনা তার। নিজেকে নিজে দেখলেই লজ্জা পায়। তাহলে ঐ মানুষটার সামনাসামনি কি করে হবে? উনার চোখের দিকে তাকাতে পারবে তো? ভাবনা রেখেই ব্যাগটা কাধে নেয় রিপ্তি। বাবার কাছে বিদায় নিয়ে বের হবে,তখনি মিন্মি এলো,,

“” অনুভবের সাথে তোর কথা হয়?””
“” কেন?””
“” উনার সাথে দরকারী কথা আছে। আমার কথা বলিস তো।””

রিপ্তি আর বাইরে যেতে পারলোনা। সোজা ভেতরে ঢুকে গেলো। একদম নিজের রুমে। ভেতর থেকে দরজা আটকে দিলো। মিন্মি অবাক। দরজায় কড়া নাড়লেন,,

“” কিরে,কি হলো? ক্লাসে যাবিনা?””
“” ভালো লাগছেনা ভাবী!””
“” মাত্রই তো বের হলি,এরমধ্যে আবার কি হলো?””

রিপ্তি বিছানায় বসে পড়লো। হুট করেই হাসি পেলো। নিঃশব্দের হাসি নিয়ে বললো,,

“” জানিনা,ভাবী!””

রিপ্তি এখনো হেসেই যাচ্ছে। লাজুক হাসি। যে মানুষটাকে সে দেখতেই পারতোনা সেই মানুষটা তার সব দেখে নিলো? ছি! আমি উনার সামনে যেতে পারবোনা। কিছুতেই না। লজ্জায় মরেই যাবো! রিপ্তি পুরো তিনদিন বাদে আয়নার সামনে দাড়ালো। ওড়না সরিয়ে গলায় হাত বুলাচ্ছে। দাগ নেই। মিলে গিয়েছে। কিন্তু এখনো তার ছোয়া অনুভব করতে পারছে। রিপ্তি আরেকদফা গাঢ় লজ্জা নিয়ে আয়না থেকে নিজেকে লুকালো।

~~~

বারোটা দিন পেরিয়ে গেলো রিপ্তি ক্যাম্পাসে যাচ্ছেনা। লজ্জা অনেকটা কেটে গিয়েছে। কিন্তু এবার তার মনে ভয়েরা জায়গা করে নিয়েছে। এতোগুলো দিন চলে গেলো অনুভব তো একবারও তার খোঁজ করেনি। তার তো খোঁজ নেওয়ার জন্য এখানে আসার প্রয়োজন নেই। তবুও কেন নেয়নি? লুকিয়ে নিচ্ছে কি? নাকি নিচ্ছেইনা। হয়তো নেওয়ার প্রয়োজন নেই! ‘প্রয়োজন নেই’ কথাটা যেন রিপ্তির ভেতরে ঘা তুলে দিলো। বিষাক্ত ঘা! এমনটাও কি হতে পারে? রিপ্তি মন আর ভাবনার সাথে যুদ্ধ চালাচ্ছে। মন বলছে উনি এতো বাজে নয়,কিন্তু ভাবনারা সারাক্ষণ খারাপটাই সামনে আনছে। কি করবে? নিজে থেকেই অনুভবের সামনে দাড়াবে? গিয়ে কি বলবে,,আমিও কি আপনার বাবুওয়ালা মেয়েবন্ধু?

রিপ্তি ধৈর্যহারা হয়ে তেরোতম দিনে ক্যাম্পাসে হাজির। মূল ফটকে ঢোকার পর থেকে সচেতনদৃষ্টি ফেলছে চারপাশে। চোখের তারারা চাতকপাখির ন্যায় চিৎকার করছে অনুভবকে দেখার জন্য। উনার কথা শোনার জন্য,গান শোনার জন্য কানদুটো ছটফট করছে। কোথায় আছে সে? কোন গ্রহে হারিয়েছে? কেউ যে এদিকে উতলা,ব্যাকুল,হন্ন হয়ে খুজছে সে কি জানেনা? কোথায় পাবো আপনাকে? কোথায় আপনি লাল ব্যাঙ?

রিপ্তি চোখ মুছে মাইলের পর মাইল হাঁটছে। পুরো ক্যাম্পাস চষে বেড়াচ্ছে। তবুও অনুভবের দেখা মেলেনি। তবে কি উনি আমায় ধোকা দিলেন? ‘ধোকা’ শব্দটা রিপ্তির ভেতরের সব অনুভূতিকে পুড়িয়ে দিতে চাচ্ছে। সন্ধ্যা নামার আগ মুহুর্তে রিপ্তি রেল স্টেশনে পৌছুলো। নিজের মনকে নিজেই শান্তনা দিচ্ছে,হয়তো আজ উনার ক্লাস নেই!

দ্বিতীয়,তৃতীয়,চতুর্থ দিনেও যখন অনুভবের দেখা পেলোনা রিপ্তি বেশ ঘাবড়ে গেলো। অনুভবের ডিপার্টমেন্টেও চলে গিয়েছিলো। সেখান থেকেও কোনো কোনোরকম খোঁজ পায়নি সে।

~~~

“” রিপ্তিমা!””

মাথায় বাবার আদরের স্পর্শে রিপ্তি চোখ মেললো। কিন্তু বাবার মুখটা দেখতে পাচ্ছেনা। কবির সাহেব মোলায়েম কন্ঠে বললেন,,

“” রুম অন্ধকার করে রেখেছো কেন? শরীর খারাপ?””

রিপ্তি ক্লান্তকন্ঠে বললো,,

“” না,বাবা। আলো ভালো লাগছিলোনা।””
“” তোমার ক্লাস কেমন চলছে?””
“” ভালো।””
“” বড্ড অনিয়ম করছো। এটা কি ঠিক?””
“” আমার ভালো লাগেনা,বাবা।””
“” তোমার কি আমাকে কিছু বলতে ইচ্ছে করছে?””
“” না।””

কবির ছোট্ট নিশ্বাস ছাড়লেন। মেয়ের মনের ভেতরের কথাগুলো তিনি কখনোই সামনে আনতে পারেননা। কিন্তু কেন? বাবা হিসেবে কি আমার ভালোবাসাটা এতোটাই দুর্বল? দশ,পনেরোদিন ধরে তিনি মেয়েকে লক্ষ করছেন। চালচলনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। কেমনজানি সবকিছুতে অনিহা,অনাগ্রহ দেখাচ্ছে। ইদানিং রুমের লাইট অফ করে সন্ধ্যাবেলা শুয়ে থাকছে। কি হয়েছে ওর? এদিকে অনুভবের নাম্বারটাও বন্ধ পাচ্ছে। এই মাসেই তো মা-বাবাকে নিয়ে আসার কথা ছিলো। বিয়ের কথা পাড়তে! কবির সাহেবের মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। অজানা আসঙ্কায় ভুগছেন তিনি! মেয়ের পাশেই কিছুক্ষণ বসে রইলেন। সময় নিয়ে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে উঠে পড়লেন নিজ রুমের উদ্দেশ্যে।

~~~

“” চেহারার একি হাল হয়েছে রিপি!””

তৃণার কন্ঠে ক্লান্ত হাসলো রিপ্তি। দুর্বল চোখেই মেয়েটার দিকে চেয়ে আছে। বিয়ের দু-মাসেই পাক্কা গিন্নি হয়ে গেছে। কি সুন্দর শাড়ী পড়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে,গুছিয়ে কথা বলছে,মুরুব্বীদের মতো উপদেশ দিচ্ছে,মাঝেমাঝে শাসনিবাক্যও তুলছে।

“” চুপ করে আছিস কেন? চুলে কি শ্যাম্পু লাগাসনা? অমন কালো ঝলমলে চুলগুলো এতো রুক্ষ কি করে হলো? চিকনও হয়ে গিয়েছিস। খাওয়া দাওয়া করছিসনা নাকি?””

রিপ্তি ছোট্ট করে বললো,,

“” তোকে খুব সুন্দর লাগছে!””

তৃণা লাজুক হাসলো। ফিসফিসিয়ে বললো,,

“” হবোনা? মেয়েদের আসল সৌন্দর্য প্রস্ফুটিত হয় স্বামীর ছোয়ায়,বুঝলি?””

‘ছোয়া’ কথাটা যেম ধারালো ছুরি হয়ে বিধলো রিপ্তির বুকে। হঠাৎ করেই অস্থির হয়ে গেলো। বসা থেকে উঠে পড়লো। তৃণার ব্যাগটা ছিনিয়ে নিয়ে ঘাটছে!

তৃণা ক্ষীণ আর্তনাদ নিয়ে বললো,,

“” কি খুজছিস? পাগলের মতো আচরণ করছিস কেন?””
“” তোর ফোন কোথায়?””
“” নেই।””
“” নেই মানে?””

মুহুর্তেই তৃণার সৌন্দর্যের সোনালী আভাটা মিলে গেলো। মুখে ভর করেছে কালো আধার। দুখীমুখ বানিয়ে বললো,,

“” তোর দুলাভাই আমাকে মোবাইল ব্যবহার করতে দেয়না।””

রিপ্তি চটে গেলো। ইচ্ছে হচ্ছে টাকলুর টাকবেলটা এখনি ফাটিয়ে দিতে। কি দিয়ে ফাটাবে? ইট,পাথর নাকি হাতুরী? রিপ্তি অনেকটা ক্ষেপে গিয়ে বললো,,

“” টাকলুটা কই? চল আজ উনার মাথা ফাটাবো!””
“” এসব কি বলছিস রিপ্তি? ও তোর দুলাভাই হয় আর উনিতো আমাকে রেখে চলে গিয়েছেন। এক সপ্তাহ পর এসে নিয়ে যাবেন।””

অনুভবের সাথে কথা বলার ক্ষীণ আলোটাও নিভে গেলো। রিপ্তি ধপ করে বিছানায় বসে পড়লো। মাথায় হাত পড়াটা বাকি!

~~~
দু’মাসের বেশি হতে চললো অনুভবের সাথে যোগাযোগ করতে পারছেননা কবির সাহেব। এভাবে হুট করে হারিয়ে যাওয়া ছেলে তো নয় অনুভব। তাহলে? কোনো বড় দুর্ঘটনার শিকার হয়নি তো অনুভব? এক প্রকার ধৈর্য্যচ্যুত হয়ে পড়লেন কবির সাহেব। বড্ডবেশি ব্যাকুলতায় ভুগছিলেন। তাই আর সময় নষ্ট না করে ভোরের ট্রেণে ঢাকা পাড়ি দিলেন উনি।

কালো রঙের বিশাল গেইটের সামনে দাড়িয়ে আছেন কবির সাহেব। হ্যা এটাই অনুভবদের বাড়ী৷ অনুভবের পরিবারের সাথে পরিচয় আছে তার। তবে সেটা গ্রামে। এই শহরের বাড়ীতে কখনো যাতায়াত হয়নি। খুব নার্ভাস ফিল করছেন তিনি। এভাবে না জানিয়ে হুট করে চলে আসায় কে কি ভাববে কে জানে! কিন্তু প্রয়োজনটা যে খুব বেশি! খুব বেশি দরকারী। গেটটা ভেতর থেকে আটকানো। কবির সাহেব হালকা বাড়ি দিতেই গেট খুলে গেলো। মধ্যবয়সী সুস্বাস্থ অধিকারী এক লোক মাথা বের করে বললেন,,

“” কি চাই?””
“” অনুভব। অনুভব কি বাসায় আছে?””
“” স্যার তো বাড়িতে নেই।””
“” ওহ! জামাল সাহেব?””
“” উনি আছেন।””
“” আমি উনার সাথে কথা বলতে চাই। জরুরী।””

দারোয়ান সরুচোখে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলেন কবির সাহেবকে। কপাল কুঁচকে গেট থেকে সরে দাড়ালো।

কবির সাহেব ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বললেন,,

“” অনুভব কোথায় গিয়েছে বলতে পারবে?””
“” বিদেশ গেছেন।””

কবির সাহেব মাঝপথেই আটকে গেলেন। চোখে,মুখে অবিশ্বাস্যের ছাপ স্পষ্ট! কবির সাহেব কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললেন,,

“” বিদেশ? কেন?””
“” কেন আবার, ছোট মেডামরে নিয়া হানিমুনে গেছেন!””

কবির সাহেব নিজের শরীরের ভারসাম্য হারালেন। পড়ে যেতে নিলে,দাড়োয়ান ধরে ফেললো। দুর্বলকন্ঠে বললেন,,

“” পানি খাবো!””

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here