ভালোবাসার রং মিছিল পর্ব -১৪+১৫

#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা:ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১৪

সবাই টেবিলে খেতে বসেছে।ইরিনা আর মৌ ইরহাম ইয়াদ আর ইলমাকে যত্ন করে খাওয়াচ্ছে।ইরিনা বেগম জোর করেই ইয়াদ ইলমাকে রেখে দিয়েছে।ইরহাম ও চলে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু ইরিনা যেতে দেয়নি।অর্ষা মুখ বাকিয়ে মনে মনে বলে,,

—“ইশশ ঢং দেখে বাঁচি না বাবা।জামাই জামাই করে পাগল বানিয়ে দিচ্ছে।আমাকে খাওয়াবে ভালো ভালো তা না এই অসভ্য পুরুষ মানুষকে জামাই আদর দিচ্ছে।এটা আমার মা না হয়ে এই বজ্জাত ব্যাডার মা হলে ভালো হতো।”

ইরহামের খেতে খেতে জান শেষ।কালকে থেকে ইরিনা আর মৌ ইচ্ছা মতো খাইয়ে যাচ্ছে তাকে।এতো খাবার ইরহাম কখনোই খায় না।নিজের হেলথ্ এর ব্যাপারে খুব সচেতন ইরহাম।একদিনে খেয়ে সে মনে হয় দশ কেজি বেড়ে গিয়েছে।তবুও হাসি মুখে খাচ্ছে।

—“আম্মু আর দিবেন না অনেক হয়েছে আর দিলে খেতে পারবো না সব নষ্ট হবে”

—“না না বাবা বাহানা দিলে চলবে না তো।খেতেই হবে তোমাকে সব”

ইরহাম অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,,
—“আম্মু সত্যি আর পারবো না দিবেন না প্লিজ”

ইরিনা আর দেয় না।মৌ রহমান ইলমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিচ্ছে সযত্নে।ইলমা অবাক হয়ে এবাড়ির সবাইকে দেখছে।এতো ভালো কেনো এরা।আরিশা খাচ্ছে আর ইয়াদকে জ্বালাচ্ছে।ইয়াদ বিরক্ত হলেও কিছু বলে না।

অর্ষা নিজের মতো খেয়ে চলেছে।ইরহামকে নিয়ে এতো আদিখ্যেতা তার মোটেও পছন্দ হচ্ছে না।আগে সবাই তাকে নিয়ে মেতে থাকতো আর এখন এই বজ্জাত ব্যাডারে নিয়ে।বিরক্তির সপ্তম পর্যায়ে চলে যাচ্ছে।তার মাই এসব করছে আর কাকে কি বলবে সে।অর্ষার খাওয়া শেষ উঠতেও পারছে না।রুশানকে বলে,,

—“রুশাইন্না আমাকে নিয়ে একটু ড্রয়িংরুমে চল”

রুশান ভেংচি কেটে বলে,,,
—“জীবনে জ্বালাইছোস না এখন তার প্রতিশোধ নেবো তোর বররে বল নিয়ে যাইতে পারবো না আমি”

রুশানের কথায় অর্ষা কটমট দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালো।রুশান তা দেখে মুখ বাঁকালো।অর্ষা উশাকে বলল,,,

—“উশা আমাকে একটু ড্রয়িংরুমে নিয়ে চল”

উশারও খাওয়া শেষ।ও অর্ষাকে নিয়ে হাত ধুইয়ে নিজেও ধুয়ে ড্রয়িংরুমে এসে বসে।আরিশা আর ইলমাও কিছুক্ষণ পর এসে ওদের পাশে বসে।চারজন মিলে গল্প করা শুরু করে দিয়েছে।ছেলেদের খাওয়াও শেষ।সবাই এসে ড্রয়িংরুমে বসে পরে।ইরহামের অবস্থা কাহিল।বেচারাকে ইরিনা আর মৌ মিলে খাইয়ে খাইয়ে শেষ করে ফেলেছে।

ইয়াদ বসে ফোন টিপছে।অর্ষাকে মাথা থেকে বের করতে চাইছে।চাইলেও সম্ভব না।কিন্তু চেষ্টা তো করে দেখতেই পারে।ইয়াদ ফোনে তাও অর্ষার ছবি ঘাটছিলো।কিন্তু কিছুক্ষণ দেখে ফোনে অর্ষার যত ছবি ছিলো ডিলিট করে দিলো।এরপর অর্ষার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে মনে মনে বললো,,,

—“আমি না হয় তোমায় ডুবে ডুবে ভালোবেসে গেলাম।তোমার জন্য আমার মনের #ভালোবাসার_রং_মিছিল গুলো না হয় ধামা চাপা পরে থাক।তুমি সুখী থেকো।তোমার সুখেই আমার সুখ অর্ষা।”

ইরহাম এসে সিঙ্গেল সোফায় বসে পরে।রুশান নাইমকিছু নিয়ে কথা বলছে।মুহিব অর্নার সাথে ফোনে কথা বলছে।রুহান ঘুমাতে চলে গিয়েছে।মৌ ইরিন যাওয়ার সময় ঘুমাতে যাওয়ার জন্য তাড়া দিয়ে গিয়েছে।কিন্তু এরা কি শোনার মতো মানুষ।রুশান বলে ওঠে,,,

—“সবাই ছাদে যাই মাত্র দশটা বাজে এখন কেউই ঘুমাই না আমরা তার থেকে বরং ছাদে গিয়ে আড্ডা দেই”

অর্ষার খুশিতে লাফাতে ইচ্ছে করছে কিন্তু পায়ে ব্যাথার কারণে পারবে না।অর্ষার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিলো রাতে বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিবে।অবশেষে তার ইচ্ছাটা পূরন হচ্ছে।অর্ষা খুশির ঠেলায় দিক বেদিক হারিয়ে বলে ফেলে,,,

—“রুশাইন্না রে তোরে যে কি করতে মন চাচ্ছে রে। মনে হচ্ছে তোরে জড়াই ধরে একখান চুম্মা দেই”

অর্ষার কথা শুনে উপস্থিত সবাই চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে থাকে অর্ষার দিকে।সবাই অদ্ভুত ভাবে তাকাতে দেখে অর্ষার মাথায় আসে ও কি বলেছে।নিজের প্রতি ভীষণ বিরক্ত হয়।লজ্জায় কারো দিকে তাকাতেও পারছে না।জামাইয়ের সামনে ভাইকে চুমু দিয়ার কথা বলে ফেলেছে ছি ছি ছি।

রুশান কপাল চাপড়াচ্ছে।আগেই বোঝা উচিত ছিলো এই মেয়ে সবার সামনে ভুলভাল না বকলে এর শান্তি হয় না।ইরহাম নিজের মতো ফোন চেপে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে কিছু শুনেইনি।অর্ষা স্বাভাবিক কোনো কথা বলেছে।ইয়াদ অর্ষার কথা শুনে হেসে ফেলেছে।মেয়েটা এতো দুষ্ট অর্ষার এই স্বভাবের জন্যই প্রেমে পরতে বাধ্য হয়েছে ইয়াদ।

রুশান নাক সিটকে বলে,,,
—“ছি ছি অর্ষা তুই জামাই থাকতে ছোট ভাইরে চুম্মাইতে চাস।তোর জামাই রে চুমু দে একশো ডা আমাগে সমস্যা নাই বোইন।”

রুশানের কথা শুনে অর্ষার কাশি শুরু হয়ে গিয়েছে।এই ছেলের কি কোনো বুদ্ধি হবে না ইরহাম স্যারের সামনে এমন বেহায়াপনা কথা বলতে কি লজ্জা করলো না।অর্ষা রাগি দৃষ্টিতে তাকালো রুশানের দিকে।অর্ষা রুশানকে হাতে পেলেই কাঁচা চিবিয়ে খাবে।ইলমা আরিশা হেসে যাচ্ছে।ইরহাম ফোন পকেটে পুরে গম্ভীর কন্ঠে বলে,,,

—“তোমরা আড্ডা দিবে বললে না চলো ছাদে চলো সবাই।এই টপিক এখানেই অফ।”

রুশান দৌড়ে নিজের ঘরে চলে গেলো।সবাই উপরে উঠতে লাগলো।সবাই চলে গিয়েছে বলতে গেলে।ইরহাম এসে অর্ষাকে কোলে তুলে নিলো।অর্ষা কলার খামচে ধরলো।অর্ষা ইরহামের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।ইরহাম সোজা হাঁটতে হাঁটতে বলল,,,

—“ইডিয়ট এভাবে কেউ কারো দিকে তাকিয়ে থাকে।এমন ভাবে তাকিয়ে আছো যেনো ছেলে দেখোনি তুমি কখনো এন্ড আই নো আই আম হ্যান্ডসাম ম্যান”

অর্ষা ভাবতেও পারিনি ইরহাম এমন কথা বলবে।ইরহামের দৃষ্টি সোজা তবু সে বুঝলো কি করে অর্ষা তাকে দেখছে।অর্ষার লজ্জা লাগে ইরহামের কথায়।তাও সে বলে,,,

—“ওরে আমার চেহারে হিরো আলমের লাইট ভার্সন আপনি।বুঝতে পারছেন তো কি বলতে চাইছি?আবার নিজেকে ভাবে হ্যান্ডসাম।আপনি হ্যান্ডসাম এর h টাও না বুঝেছেন”

—“এর জন্যই তো তুমি ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে ছিলে।”

অর্ষার মুখ বন্ধ করার জন্য এই একটা কথায় যথেষ্ট ছিলো।ইরহাম মনে মনে হাসে।ছাদে আসতেই দেখে সবাই গোল করে বসে আছে।ইয়াদের পাশে আরিশা, উশা নাইম পাশাপাশি মুহিব আর ইলমা পাশাপাশি বসে আছে।রুশান এখনো আসেনি।ইরহাম ইয়াদের পাশে বসে অর্ষাকে নিজের পাশে বসায়।

রুশান গিটার আর কফি নিয়ে হাজির।রুশা এসে ইলমা আর অর্ষার মাঝে বসে পরে।সবাইকে কফি দিয়ে বলে,,

—“আজকে সবাই মিলে গান গাওয়া যাক আমি সব ব্যবস্থা করে এসেছি”

অর্ষা রুশানের হাত থেকে ছো মেরে গিটার ছিনিয়ে নেয়।রুশান ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় অর্ষার কান্ডে।অর্ষা গিটারে সুর উঠাটে চায় কিন্তু পারে না।তার ভীষণ সখ গিটার বাজানোর।রুশানকে বললেও রুশান শেখাইনি কখনো।ইরহাম খেয়াল করে অর্ষার হাতের উপর হাত রেখে বাজাতে থাকে ঠিকমতো।

অর্ষা নিজের হাতের উপর ঠান্ডা স্পর্শ পেয়ে শিউরে ওঠে।এরকম স্পর্শের সাথে তার এইন প্রথম পরিচয়।রুশান মুহিবের নাইম বাদে অন্য কোনো ছেলের সাথে কখনো কথাও বলেনি অর্ষা।ইরহামের স্পর্শ কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে।

রুশান তো মুখ ফসকে বলেই ফেলে,,,
—“ইশ কি রোমান্টিক।আল্লাহ সিঙ্গেল মানুষের সামনে এমন করতেছে না জীবনেও ভালো হবে না এদের”

ইরহাম ধমক দিয়ে বলে,,,,”সাট আপ স্টুপিড অতিরিক্ত কথা বলো তুমি”

রুশান ইরহামের ধমকে লাফিয়ে উঠে।ইলমার গায়ে গিয়ে পরে।বেচারি চিকনি ইলমার অবস্থা খারাপ।রুশান কাঁদার ভান করে বলে,,,

—“অর্ষারে তোর জামাই এখনো আমাগে দুলাভাই হতে পারলো না সেই স্যারই রয়ে গেলো রররররে”

—“তুমি চুপ করবে ইডিয়ট।বাচ্চামো করা কি তোমাদের স্বভাব।ভার্সিটিতে পরো তাও বাচ্চামো করছো।তোমাদের থেকে তো আরিশা ম্যাচিউর।”

—“দেখলি দেখলি অর্ষা আমাকে কিভাবে অপমান করছে তোর বর”

অর্ষা ইরহামকে রাগ দেখিয়ে বলে,,,

—“আমরা না হয় বাচ্চামো করি তাহলে এখন আপনি কি করছেন এটা ভার্সিটি না এটা আমার বাড়ি মানে আপনার শ্বশুর বাড়ি এখানে স্যারগিড়ি করছেন লজ্জা লাগে না”

—“না লজ্জা লাগে না কারণ তোমাদের সোজা করতে হলে যা করার তাই করবো আমি”

রুশান অর্ষা একসাথে বলে,,
—“ইন ইউর ড্রিম মি.আমরা ভালো হচ্ছি না”

ইরহাম ভ্রু কুচকে তাকায় দুই ভাই বোনের দিকে।ইলমা বলে ওঠে,,,
—“আরে তোমরা এইগুলো রাখো।জানো দা ভাই কতো সুন্দর গান গাইতে পারে।দা ভাই একটা গান গাও না”

ইরহাম না বললেও কেউ শুনতে চায় না।ইয়াদও জোর করে।সবার জোর করায় ইরহাম গিটারে সুর তুলে গাইতে থাকে,,,

অবাক চাদের আলোয় দেখো
ভেসে যায় আমাদের পৃথিবী,
আড়াল হতে দেখেছি তোমায়
নিষ্পাপ মুখখানি

অবাক চাঁদের আলোয় দেখো
ভেসে যায় আমাদের পৃথিবী
আড়াল হতে দেখেছি তোমায়
নিষ্পাপ মুখখানি

ডুবেছি আমি তোমার চোখের,অনন্ত মায়ায়
বুঝিনি কভু সেই মায়া,তো আমার তরে নয়।

ডুবেছি আমি তোমার চোখের,অনন্ত মায়ায়,
বুঝিনি কভু সেই মায়া, তো আমার তরে নয়।

চলবে~#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা:ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১৫

ইরহামের গান গাওয়া শেষ হতেই সবাই প্রশংসা করে। অর্ষা চোখ বন্ধ করে গান শুনছিলো। চোখ খুলে নড়েচড়ে বসে।ইরহাম চোখ বন্ধ করেই গাইছিলো।চোখের সামনে অর্ষার মুখটা ভেসে উঠছিলো।উশা বলে উঠে,,

—“স্যার আপনি তো দারুন গানের গলা।অনেক সুন্দর হয়েছে”

ইরহাম অর্ষার কথা শুনে মৃদু হাসে।রুশান উশার মাথায় থাপ্পড় মেরে বলে,,,

—“স্যার কি রে দুলাভাই বল দুলাভাই।আর হা দদদদদদদদদুলাভাই আপনার গানের গলা বেশ।আমার বিয়েতে আপনি গান গাইবেন কিন্তু”

ইরহাম কটমট দৃষ্টিতে তাকায় রুশানের দিকে।ইলমা তো হাসতে হাসতে শেষ।আরিশারও সেম অবস্থা।উশা মুহিব,অর্ষা মুখ টিপে হাসছে।ইরহাম দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,

—“তোমাদের দুই ভাই বোনের সমস্যাটা কোথায় বলো তো।সব সময় আমার পিছে লাগো।এতো সমস্যা কেনো?”

—“আরে দুলাভাই কি যে বলেন আমার তো কোনো সমস্যা নেই একে বারে ফিট আছি।একেবারে একজন ত্রুটি পূর্ণ পুরুষ মানুষ”

রুশান দাঁত কেলিয়ে কথাটা বলে।ইরহাম তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রুশানের দিকে তাকালো।রুশান বোকা বোকা হাসি দিয়ে অন্য দিকে তাকালো।ইলমা বলে ওঠে,,

—“তোমরা থামো তো।এই রুশান ভাইয়া আপনি যখন এতো কথা বলছেন তাহলে একটা গান শুনান”

রুশান পরে যায় বিপাকে।সে তো গান গাইতে পারে না।গিটার বাজায় শখে আরো একটা কারণ হলো অর্ষা।অর্ষার গানের গলা ভীষণ ভালো।রুশান অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়।ইরহাম বাঁকা হাসে রুশানের অবস্থা দেখে।

—“আমার না গলা ব্যাথা আজকে।অন্য একদিন শোনাবো ঠিক আছে।”

ইলমা শুনতে না চাইলেও রুশান ভুলভাল বুঝিয়ে দেয়।অর্ষা তো হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা।সবাই টুকটাক আড্ডা দিয়ে যায় যার রুমে যাওয়ার উদ্দেশ্য রওনা হয়।ইয়াদ গেস্টরুমে থাকবে আর ইলমা উশা আরিশার সাথে তার রুমে।অনেক রাত হয়ে গিয়েছে।আরিশা ইলমা ঘুমে ঢুলছে।

—“ইয়াদ ইলমাকে একটু দিয়ে আয় ভাই।আমিই দিয়ে আসতাম কিন্তু অর্ষাকে তো দেখছিসও ঘুমিয়ে পরেছে অলরেডি”

ইয়াদ মাথা নাড়িয়ে ইলমাকে নিয়ে যায়।রুশান আরিশাকে রুমে দিয়ে আসে।অর্ষা তো গল্প করার মাঝেই ইরহামের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরেছে।ইরহাম মুচকি হেসে অর্ষাকে কোলে তুলে নেয়।অর্ষাকে রুমে নিয়ে এসে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে দরজা আটকে পাশে বসে অর্ষার।

—“আমি তোমার শরীর ছোয়ার আগে তোমার মন ছুঁতে চাই প্রেয়সী।”

ইরহাম অর্ষার কপালে পরে থাকা চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দেয় ইরহাম।বাইরে বাতাস হচ্ছে হয়তো মাঝরাতে বৃষ্টি হতে পারে।ইরহাম অর্ষার শরীরে চাদর টেনে নিজে অর্ষার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে দেখতে থাকে অর্ষাকে।

৩২.

সকালে ঘুম থেকে উঠতেই অর্ষার চোখ কপালে।ইরহাম অনেকটা কাছে সে।তাড়াহুড়ো করে ইরহামের কাছ থেকে সরে আসে।ইশ কি লজ্জা।সে ইরহামের এতো কাছে গেলো কিভাবে।পায়ের ব্যাথা টা কালকে থেকে একটু কমেছে।অর্ষা খুড়িয়ে খুড়িয়ে ওয়াশরুমে যায় ফ্রেশ হতে।

ইরহামের ঘুম ভেঙে যায়।চশমা পরে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে অর্ষা নেই।তখনই অর্ষা ভেজা মুখে বের হয়।হয়তো মাত্র মুখ ধুয়ে এসেছে।মুখ থেকে পানি গরিয়ে পরছে।ইরহাম গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।অর্ষাকে দেখে তার মাথায় একটা কথায় ঘুরপাক খাচ্ছে “সিগ্ধময়ী”।হ্যা অর্ষা একমাত্র তার সিগ্ধময়ী,ব্যক্তিগত সিগ্ধময়ী।

অর্ষা মুখ মুছে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আছড়াতে থাকে।ইরহামকে খেয়াল করেনি এখনো।আয়নার ভেতর দিয়ে ইরহামের দিকে চোখ যেতেই দেখে ইরহাম তার দিকে তাকিয়ে আছে।ইরহামের দৃষ্টিতে কিছু একটা ছিলো।অর্ষা চোখ নামিয়ে নেয়।

—” এই যে বজ্জাত পুরুষ আপনি এমন অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো হ্যা”

অর্ষার বোকা বোকা কথা শুনে ভীষণ হাসি পায় ইরহামের।ইরহাম ভ্রু কুচকে বলে,,

—“আমি তো তোমার দিকে তাকায়নি আমি তো আয়নায় নিজেকেই দেখছিলাম”

ইরহাম থেমে আবার অর্ষার চোখে চোখ রেখে ভ্রু নাচিয়ে বলে,,,
—“ওয়েট আমি তোমাকে দেখছিলাম তোমার ভষ্যমতে তাহলে তো তুমিও আমাকেই দেখছিলো।”

অর্ষা থতমত খেয়ে যায়।ইরহাম যে তাকেই তার জালে ফাসিয়ে দিলো।ইরহাম মৃদু হাসে অর্ষার আড়ালে।অর্ষা নিজের মতো চুল আছড়াতে থাকে।ইরহাম ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৮:৩০ টা বাজে।
ভার্সিটিতে ১০ টা থেকে ক্লাস আজ তার।দ্রুত ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে অর্ষা রুমে নেই।রেডি হয়ে নিচে নামে।

আসিফ আহমেদ আহিন আহমেদ দাদু সবাই বসে আছে।অর্ষা আসিফ আর আহিন আহমেদের মাঝে বসে আছে।অর্ষাকে একহাতে জড়িয়ে ধরে আছে আসিফ আহমেদ।ইরহাম নিচে এসে সবাইকে সালাম দিয়ে বলল,,,

—“শুভ সকাল আব্বু এন্ড সবাইকে”

ছোটরা চিল্লিয়ে বলল,,,”শুভ সকাল”

ইরহাম বিরক্ত হয়।আসিফ আহমেদ বুঝতে পারেন ইরহামের বিরক্তির বিষয়টা।সবাইকে থামতে বলেন তিনি।ইরহাম মোটেও কোলাহল পছন্দ করে নাহ।তবুও ভদ্রতার খাতিরে এই ক’দিন সয্য করছে।ইয়াদ চোরা চোখে দেখছে অর্ষাকে।

সবাই একসাথে সকালের নাস্তা করতে বসে।অর্ষার পা আগের থেকে অনেকটা ভালো।আজকে ভার্সিটি না যেতে পারলেও আগামী কালকে যেতে পারবে।ইরহাম ইয়াদ ইলমা সবাইকে বিদায় দিয়ে বাড়ি যাওয়ার জন্য রওনা হয়।ইরহাম নিজের গাড়িতে করে ভার্সিটিতে যাবে আর ইয়াদ ইলমা আরেকটায় যাবে।

৩৩.

আজকে অর্ষা ভার্সিটিতে যাচ্ছে।ইরহামের সাথে বিয়ে হওয়ার পর সে জেনো কেমন কেমন হয়ে গিয়েছে।আগে ইরহাম সামনে থাকলে কিছু হতো না এখন সামনে থাকলে অস্বস্তিরা সব ঘিরে ধরে তাকে।রুশানের বাইকে করে দুজন যাচ্ছে।যাওয়ার আগে অবশ্য ইরিনা বেগম একশোটা উপদেশ দিয়ে দিয়েছে তাকে।

রুশান দাঁত কেলাচ্ছিল দাঁড়িয়ে।বাইকে উঠে বসিয়ে দিয়েছে কয়েক ঘা রুশানকে।রুশান বেচারা মুখ বুঝে সয্য করেছে।ভার্সিটি যেতেও অস্বস্তি হচ্ছে সবাই কি বলবে স্টুডেন্ট হয়ে কিভাবে প্রফেসরকে বিয়ে করলো সে।অর্ষা আজেবাজে চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করলো।

ভার্সিটির সামনে আসতেই অর্ষা দেখলো মুহিব,অর্না,নাইম উশা দাঁড়িয়ে আছে।অর্ষা ওদের দেখে বাইক থেকে লাফিয়ে নেমে দৌড়ে ওদের কাছে যায়।
আচমকা অর্ষাকে দৌড়ে আসতে দেখে সবাই চমকে লাফিয়ে উঠলো।অর্ষা ওদের সামনে এসে হাপাতে হাপাতে বলল,,,

—“কিরে ভুলেই গিয়েছিস আমাকে”

অর্না মিষ্টি করে হেসে বলল,,,

—“আপু শুভেচ্ছা তোমার নতুন জীবনের জন্য।তুমি জীবনে অনেক সুখী হও।স্যার তোমাকে ভীষণ ভালোবাসুক”

অর্ষার শেষের কথাটা শুনে লজ্জা পেলো।ইরহাম নাকি তাকে ভালোবাসবে এটাও মানতে হবে তাকে।ইরহাম যেদিন তাকে ভালোবাসবে সেদিন হয়তো অর্ষাকে পৃথিবীতে পাওয়া যাবে না।নিশ্চিত মঙ্গলগ্রহ থেকে ঘুরে আসবে অর্ষা একবার।

—“দুঃখিত আপু তোমার বিয়েতে না থাকতে পারার জন্য।”

অর্ষা মুচকি হেসে বলে,,,,”সমস্যা নেই কিউটি”

রুশান আসতেই সবাই ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে।ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতেই অর্ষার চোখ পরে ইরহামের দিকে।করিডোর দিয়ে হেঁটে নিজের কেভিনে যাচ্ছে।পরনে কালো জিন্স আর নীলরঙা শার্ট।দেখতে বেশ হ্যান্ডসাম লাগছে।আশেপাশে দেখে চোখ নামিয়ে ফেলে অর্ষা।

অর্ষাকে দেখে অথৈ দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে।অর্ষা মৃদু হাসে।রুশানসহ বাকি সবাই বিরক্ত হয়।অথৈ নেকা কন্ঠে বলে,,,

—“দোস্ত কেমন আছিস রে।আর সরি আমি বিয়েতে যেতে পারিনি রে তার জন্য।”

অর্ষা সরল মনে বলে,,,
—“আরে সমস্যা নেই।তোর প্রবলেম ছিলো বলেই হয়তো যেতে পারিস নি।এতে সমস্যা নেই”

অথৈ অর্ষার সরল মনে বলা কথা শুনে সয়তানি হাসি দেয়।যা কারো চোখে না পরলেও দূর থেকে একজন লক্ষ্য করেছে।অথৈ এগিয়ে আসে রুশানের দিকে।রুশান এমন ভাব করে যেনো সে কাউকে চেনে না।
নিজের মতো ফোন দেখতে থাকে।আসলে সে ইলমার ফেসবুক আইডি খোঁজার চেষ্টা করছিলো।ইলমাকে প্রথম দেখেই যে রুশান তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।

—“কিরে রুশান কথা বলবি না আমার সাথে”

রুশান ফোন পকেটে পুরে অন্যদিকে তাকিয়ে বলে,,,
—“ওহ তুই!খেয়াল করিনি বল কি বলবি”

—“এতো দিন করে দেখা তুই তবুও এভাবে কথা বলবি”

রুশান বিরক্ত হয় প্রচুর।মানুষ কিভাবে এতো বেহায়া হয় এই মেয়েকে না দেখলে সে জানতে পারতো না।বিরক্তিরা সব ঘিরে ধরেছে তাকে।রুশান অথৈকে পাশ কাটিয়ে বাকি সবার কাছে যেতে থাকে।অথৈ রাগে ক্ষোভে ফোসফোস করতে থাকে।

—“আমি তোকে ছাড়ব না অর্ষা তোর জন্যই রুশান আমাকে পাত্তা দেয় না।বিয়ে হলেও ঝামেলা গেলো নাহ।”

#চলবে~

আসসালামু আলাইকুম।নেক্সট নাইস না দিখে প্লিজ গন্তব্য মূলক কিছু লিখুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here