ভালোবাসার স্পর্শানুভুতি পর্ব ১৩

#ভালোবাসার_স্পর্শানুভূতি
#রাইমা_মিমি
#পর্ব_১৩

তারা- এই ব্যাটা মনে হয় আজকে আর ছাড়বে না আমাকে। আল্লাহ বাচাও আমায়। তোমার এই মাসুম বান্দাকে রক্ষা করো এই খবিশের থেকে।(মনে মনে)

তারা- উফ ছাড়বেন নাকি?(বিরক্তি নিয়ে)

রাত- ইচ্ছা তো করছে না। কিন্তু কি আর করার? তবে আমার কিছু কথা আছে যা তোমাকে অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে হবে।(তারার মুখ তার বুক থেকে তুলে।)

তারা- এ আবার কি বলবে আল্লাহই জানে। উফ আল্লাহ কি ফেসাদে পরলাম আমি।(মনে মনে)

রাত- কি হলো কি ভাবছো?(তারার দুই গাল ধরে)

তারা- ন না। কিছু না।

রাত- ওকে শুনো…………

তারা- ওয়েট।

রাত- কি হয়েছে?(ভ্রু কুঁচকে)

তারা- আগে আমাকে ছাড়ুন।

রাত- উম। না তোমাকে এখন ছাড়া যাবে না। আমার তো ইচ্ছা করছে তোমাকে একদম বুকের ভিতরে ডুকিয়ে ফেলি।(তারাকে আবার বুকে চেপে ধরে।)

তারা- ওরে আল্লাহ। এতো দেখি সব কিছুতেই উল্টো করে। উফ এখন আমার নিজের মাথায় ফাটাতে ইচ্ছা করছে। কেন যে বলতে গেলাম ছাড়তে।(মনে মনে) ব্যাটা লুচু একটা।(বিড়বিড় করে)

বিড়বিড়ের কারণে লাস্টের কথাটা রাত ঠিকি শুনতে পেয়েছে।

রাত- তাই? আমি লুচু? তো একটু লুচুওয়ালা কাজ করি কি বলো? (চোখ টিপ দিয়ে বাঁকা হেসে)

তারা- নননননননননননননা।(চিল্লিয়ে)

রাত- উহুম। না বললে তো শুনবো না। লুচু উপাধি যখন দিয়েছো তো কিছু করেও দেখাই।(শয়তানি হেসে)

তারা- দ দেখুন এ এবার ক কিন্তু ব বাড়াবাড়ি হ হয়ে যাচ্ছে। আমি যেতে দিন প্লিজ।

রাত- আমি তো চাইছিলামি তোমাকে যেতে দিতে। কিন্তু তুমিই তো আমার কথা শুনছো না।

তারা- আচ্ছা বলুন তাড়াতাড়ি প্লিজ।

রাত- ওকে। শুনো কাল থেকে এইসব সেনোরিটা সেজে ভার্সিটি যাওয়া চলবে না।

তারা- মানে?

রাত- কাল থেকে বোরকা পড়ে ভার্সিটি যাবে।

তারা- না।কেন? আমি বোরকা পড়ি না।

রাত- এখন থেকে পড়বে।

তারা- কিন্তু………

রাত- কোনো কিন্তু নয়। আর কাল থেকে আমি তোমাকে নিয়ে যাব আবার দিয়ে যাবো।

তারা- এহ। বললেই হলো না। কিছুতেই না। আমি আপনার সাথে যাবো না। আমি আপনার সাথে কেন যাবো? আমার কি গাড়ি নেই নাকি? তাছাড়া লোকে দেখলে কি বলবে? আপনি আমাকে সবার সামনে খারাপ বানাতে চান? সেটা আমি কিছুতেই হতে দিব না।

রাত- এই এতো কথা শুনতে চাই না। আমি যা বলেছি তাই হবে। আমি যখন বলেছি আমি নিয়ে যাব আবার দিয়ে যাব তো যাবই। আর বলছো লোকের কথা? ডোন্ট ফরগেট দেট তোমাদের বাসাটা লোকালয় থেকে অনেকটা দূরে। এখানে শুধু কয়েকটা রিকশা আর নিজেদের গাড়ি ছাড়া কেউ থাকা না। আর আমাদের ভার্সিটিতে কেউ তোমাকে কিছু বলার সাহসই পাবে না।(গম্ভীর হয়ে)

তারা- সামনে না বলুক। পিঠ পিছে তো ঠিকি বলবে।

রাত- উফ। আই ডোন্ট কেয়ার ডেম ইট। আই ডোন্ট কেয়ার।(রেগে)

তারা- বাট আই কেয়ার।

রাত- আমি কিছু শুনতে চাই না। বাসায় যাও কাল সকালে দেখা হবে।

তারা- প্লিজ। আমার কথাটা শুনুন। এমন করবেন না। লোকে কি……..

রাত- এই বুঝিস না কি বলছি আমি? কথা কানে যায় না তোর? আমি চাই না কোনো ছেলে তোকে দেখুক। তোকে শুধু আমি দেখবো। তাই কাল থেকে বোকড়া পড়বি। আর আমি চাই না কোনো ছেলে তোকে ডিস্টার্ব করুক। তাই কাল থেকে তুই আমার সাথেই যাবি। আর হ্যা। ওয়ান মোর থিং, সামির থেকে দূরে থাকবি। এবার যা।(রেগে বলেই ছেড়ে দিল)

রাতের এটিটিউড দেখে তারার খারাপ লাগলেও কথা গুলো শুনে কেমন যেন এক ভালোলাগার অনুভূতি হচ্ছে। কিন্তু ভালোলাগার অনুভূতিকে সাইডে রেখে খারাপ লাগাকে প্রাধান্য দিয়ে অভিমান নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে যেতে নেয় তারা। কিন্তু তখনি আবার টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে।

রাত- আই এম সরি বেবি। আমি তোমার সাথে এমন করতে চাই নি। সরি বেবি। আমার ভালো লাগে না কেউ তোমাকে দেখুক। আমার রাগ হয় যখন কোনো ছেলে তোমার কথা বলে বা সামিরকে দেখলে। আমার ভয় হয় তোমাকে আবার হারিয়ে ফেলার। আমি আর হারাতে পারবো না তোমাকে। প্লিজ আমার কথাগুলো শুনো। প্লিজ।(তারার কপালে কপাল ঠেকিয়ে)

রাত- এবার যাও।(হুট করেই তারার কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে)

তারার এখন আর রাতের ছোঁয়া অদ্ভুত লাগছে না। বরং ভালোই লাগছে। কেমন কেমন অনুভূতি হচ্ছে।

তারা- হুম।(বলেই বেড়িয়ে যায়।)

রাত একদৃষ্টিতে তারার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। তারা যখন গেট দিয়ে ডুকে গেল এবং রাতের চোখের সীমার বাহিরে চলে গেল তখন রাত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেও রওনা দেয় নিজের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।

পরেরদিন সকাল বেলা,

তারা রেডি বোরকা পড়ে রেডি হয়ে নিচে নামল। তারা আগে কখনো বোরকা পড়ে নি। তাই তারাকে কেউ বোকড়ায় কেউ দেখে নি।

তারা সিঁড়ি দিয়ে নেমে ডাইনিং এরিয়াতে এলো। তারাকে বোরকায় দেখে তানিয়া চিল্লানি দিয়ে বলে-

তানিয়া- এই আপনি কে? আর এখানে এলেন কি করে? আপনাকে বাড়িতে ডুকতে দিলো কে? এহসানের সাথে দেখা করতে এসেছেন? তো এখানে কি করছেন? এভাবে কেউ অচেনা কারোর বাড়িতে ঘুরে? ভদ্রতা বলেও তো কিছু আছে নাকি? যান লিভিং রুমে গিয়ে বসুন। এহসান এখুনি এসে পড়বেন।(কিছুটা ভয় আর বিরক্তি নিয়ে)

তারা- মা কি বলছো তুমি? কাকে কি বলছো হ্যা?(রেগে)

তানিয়া- এমা এতো তারার গলা। কিন্তু কোথা থেকে আসছে।(এদিক ওদিক তাকিয়ে)

তারা- স্টপ ইট মা। আমি এদিকে।(বিরক্তি নিয়ে)

তানিয়া- কোথায় তুই মা?

তারা- তোমার সামনে।

তারা- আমার সাম……………(বলেই সামনে তাকালো।)

সামনে তাকিয়েই তানিয়া এক ঝটকা খেল। সে এতোক্ষণ ভালো করে সামনে থাকা বোরকা পরিহিত মানুষটাকে দেখে নি। যখন ভালো করে দেখল তখন তার হুশ উড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা।

আর এদিকে তারা অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে তার মায়ের দিকে।

তানিয়া- হ হ্যা হ্যা। এতো দেখি আমার তারা। আমি তো চিনতেই পারি নি। আসলে তুই তো আগে কখনো বোরকা পড়িস নি তাই।(হাসার চেষ্টা করে)

তারা- ইউ আর জাস্ট টু মাচ। একদিকে তুমি। আরেকদিকে ওই সাদা বান্দর।

তানিয়া- সাদা বান্দর মানে?

তারা- ওই রা……

তানিয়া- কি হলো রা বলে আটকে গেলি কেন বল। আর আজকে বোরকায় বা কেন?

তারা- ক কিছু না। আমি এখন থেকে বোরকাই পড়ে বাইরে যাব।

তানিয়া- কিন্তু……..

তানিয়াকে আর কিছু বলতে না দিয়ে

তারা- খাবার দাও লেট হচ্ছে আমার।

তানিয়া- আচ্ছা।(বলেই চলে গেল কিচেনে)

এদিকে এহসান মাহমুদ মর্নিং ওয়াক শেষে সবে মাএ বাড়ি ফিরেছে। মেইন ডোর থেকে লিভিং আর ডাইনিং ভালো করেই দেখা যায়। দরজায় দাঁড়িয়ে ভিতরে থাকা বোকড়া পরিহিত মহিলা দেখে সে থমকে দাঁড়ায়।

এহসান- বোরকা পড়া কে এসেছে? আমাদের বাড়ির মহিলারা তো বোরকা পড়ে না। তাহলে কে? আমার তো আজকে কোনো এপয়েনমেণ্টও দেয়া নেই কাউকে। তাহলে?

এহসান- এক্সকিউজ মি। কে আপনি? আর ভিতরে কি করে এলেন?

তারা মুখ ঘুড়িয়ে তার বাপির দিকে তাকালো।

এহসান- কি হলো বলছে…………

আর বলতে পারল না। কারণ ভালো করে দেখেই বুঝতে পারছেন এ তারা। তার প্রিন্সেস। কিন্তু তারাকে এই গেট আপে দেখার জন্য এই সকাল বেলা তিনি মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। কারণ এর আগে তারাকে বোরকা হিজাবে দেখা যায় নি।

তারা বড়লোক হলেও উশৃঙ্খল না। তার ড্রেস আপ সবসময় নরমাল মেয়েদের মতো। সে কখনো ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়ে নি। আলমারিতে থাকলেও সে তা এখন পর্যন্ত ধরে দেখে নি।

তারা- বাপিইইইইইইইইইইইইইইই।(রেগে চিল্লিয়ে)

এহসান- ও ওহ। এ এতো দেখি আমার প্রিন্সেস।(জোরপূর্বক হাসি টেনে।)

তারা- আমি তোমার থেকে অন্তত এটা এক্সপেক্ট করি নি। আমি ভেবেছিলাম আর কেউ চিনুক আর না চিনুক তুমি আমাকে চিনবে। বাট আই ওয়াজ রঙ।

এহসান- আহ আহা প্রিন্সেস। তুমি আমাকে ভুল ভাবছো। আমি তো তোমাকে চিনতে পেরেছি।

তারা- আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু হেয়ার নাথিং। বাই।(বলেই বেড়িয়ে গেল)

তানিয়া- তারা তারা খেয়ে যা মা। তারা…

কিন্তু এতোক্ষণে তারা চলে গেছে।

তানিয়া- এটা তুমি কি করলে? হ্যা? নিজের প্রিন্সেস কে চিনতে পারলে না? তোমার জন্য মেয়েটা না খেয়ে গেল।

এহসান- আব আরে আমি কি জানতাম নাকি যে ওটা আমার প্রিন্সেস।

তানিয়া- হুহ। আজকে তোমার ব্রেকফাস্ট বন্ধ।(বলেই চলে গেল)

এহসান- আরে তানি। শুনো না। আরে আরে…… যা চলে গেল। কিন্তু আমি জানি তুমি আমাকে কখনোই না খাইয়ে যেতে দিবে না।(বলেই হেসে রুমের দিকে চলে গেলেন।)

এদিকে, তারা বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। হুট করে রাত এসে তারার সামনে গাড়ি ব্রেক করল। আকস্মিক ব্রেক করায় তারা ভয়ে পেয়ে গেল। আবার রাগও হলো। তাই রাত নামতেই শুরু হলো তার ভাঙা টেপ রেকর্ড।

তারা- কি সমস্যা কি আপনার হ্যা? মেরে ফেলবেন নাকি আমাকে হ্যা? তো মেরে ফেলুন। ব্রেক করলেন কেন? যতসব। একটু শান্তি নেই। কি কুক্ষণে যে গিয়েছিলাম ওই ভার্সিটিতে আল্লাহই জানে। এখন আমার লাইফটা তেজপাতা। না আমি ভার্সিটি যেতাম না আপনার সাথে দেখা হতো না আর না আমাকে এমন উদ্ভট সাজতে হতো। জানেন আপনার জন্য আমাকে আমার বাপিও চিনতে পারে নি। (কান্না মুখ করে)

রাত- শেষ ভাষণ? চলো যাওয়া যাক।(ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)

তারা- শয়তান ব্যাটা। কই আমাকে একটু শান্তনা দিবি। তা না উল্টো ডোন্ট কেয়ার ভাব দেখাচ্ছে। ব্যাটা খবিশ, বলদ।(বিড়বিড় করে)

রাত- ও মিস। চলো।
#ভালোবাসার_স্পর্শানুভূতি
#রাইমা_মিমি
#বোনাস_পর্ব

তারা- শয়তান ব্যাটা। কই আমাকে একটু শান্তনা দিবি। তা না উল্টো ডোন্ট কেয়ার ভাব দেখাচ্ছে। ব্যাটা খবিশ, বলদ।(বিড়বিড় করে)

রাত- ও মিস। চলো।

তারা- হুহ। (বলেই ধপ করে গাড়িতে বসে গেল)

তারার কাণ্ড দেখে রাত একটা মুচকি হাসি দিয়ে সেও বসে পড়ল ড্রাইভিং সিটে।

গাড়ি চলছে আপন গতিতে। এদিকে এক বোরকা পরিহিতা রমণী ভিষন্ন মন নিয়ে বসে আছে জানালার ধার ঘেসে। জানালা দিয়ে বাইরের মনোরম পরিবেশ আর মিষ্টি বাতাসের ঝাপটা তার কাছে স্বর্গীয় এক সুখ এনে দিচ্ছে। যা তার চঞ্চল মনের ভিষন্নতা নিমিষেই গায়েব করে দিচ্ছে। কিন্তু বাহ্যিক রুপে তা প্রকাশ পাচ্ছে না।

অন্যদিকে পাশে বসা পুরুষটি তার পাশে বসা রমণীকে আড়চোখে বারবার অবলোকন করছে। এই রমণী যে তার পুরুষ মনে বারবার দোলা দেয়। বড্ড ইচ্ছা করে রমণীকে নিজের করে পেতে। বারবার কাছে আসার পরও মনে হয় “এ কাছে আসা কাছে নয়, যদি আরো কাছে আসা হয়।”

তাদের উভয়েরই চোখ জুড়া বারবার আড়চোখে দুজনকে দেখে যাচ্ছে। কেউ আগে কেউ পরে। হুট করেই উভয়ের চোখে চোখ পড়ায় থমকে যায় সময়। লজ্জায় রাঙা হয় রমণী আর মুখে মুচকি হাসি ফুটে উঠে পাশে বসা প্রেমিক পুরুষের। যার কাছে রমণীর এই লজ্জা হাসি পৃথিবী শ্রেষ্ঠ হাসি। যার মূল্য অপরিসীম। আর যা শুধু তার মনের রাণী আর তার ফুলের কলিকেই মানায়।

গাড়ি এসে দাঁড়ায় ভার্সিটির গেটে। তারাকে গেটে নামিয়ে দিয়ে রাত যায় গাড়ি পার্কিং করতে। আর বার বার বলে দিয়ে যায়।

রাত- আমি এখনি আসছি। তুমি এখানেই থাকবে। এক পা’ও নড়বে না। আমি যেন গাড়ি রেখে এসে তোমাকে এখানেই পাই।(বলেই চলে গেল)

তারা- উম আমার ঠেকা পড়েছে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে। থাকবো না আমি এখানে দাঁড়িয়ে। দেখি কি করতে পারে।(বলেই গট গট করে চলে গেল)

তারাকে আজকে বোরখায় দেখে সবাই অবাক। গত একমাসে তারাকে কেউ বোরখায় দেখে নি। সবসময় থ্রি পিজ না হলে লং টপস আর জিন্সে দেখেছে সবাই। তাই আজ প্রথম তারাকে বোরখায় দেখে সবাই অবাক।

তারা অত্যাধিক সুন্দরী হওয়ার কারণে সব ড্রেসেই তারাকে মানায়। আজকে বোরখায়ও তাকে অন্যরকম এক সুন্দরী লাগছে। যার চেহারায় নূরানি নূরানি একটা ভাব। দেখেই মনে হচ্ছে আল্লাহ ভিষণ যত্ন করে বানিয়েছেন এই নূরানি চেহারাকে। যার মুগ্ধতায় সবাই মুগ্ধ।

তারা যতই সুন্দর হোক না কেন কালকে তার পরিচয় না জানলে আজকে তাকে নিয়ে কয়েকদফা হাসির রোল পড়ে যেত ক্যাম্পাসে। যা আজকে একদমি নেই বললেই চলে। বরং সবাই আরো এসে প্রশংসা করে যাচ্ছে।

এতদিন যার সাথে তার ফ্রেন্ড সার্কেল ছাড়া কেউ ভালো করে কথা বলত না আজ সেখানে ক্যাম্পাসের প্রায় সবাই আসছে তার সাথে কথা বলতে কারণ সে মিস্টার এহসান মাহমুদের একমাএ কন্যা তারা মাহমুদ। যার বাবার আছে অশেষ ক্ষমতা এই ভার্সিটি টাকে একনিমিষেই শেষ করে দিতে আর স্টুডেন্টদের লাইফও শেষ করে দিতে। মূলত তাই এই ঘটা করে কথা বলতে আসা। কেউ ভবিষ্যতে সাহায্যের জন্য আবার কেউ নিজের লাইফটাকে গুছিয়ে নেয়ার জন্য।

তারা সবই বুঝতে পারছে। কিন্তু কিছু বলছে। কারণ সে চায় না কাদায় হাত দিয়ে হাত নষ্ট করতে। তাই সে চুপচাপ মুখে হাসি ফুটিয়ে কথা বলছে। একজন যে তাকে কিছু বলে গিয়েছিল তা সে বেমালুম ভুলে গেছে।

এদিকে রাত গাড়ি রেখে এসে দেখে তারা নেই। আর সাথে সাথেই ধপ করে রাগ উঠে গেল মাথা চাড়া দিয়ে। যেন এখন তারাকে সামনে পেলে চিবিয়েই খেয়ে ফেলবে।

রাত- এ মেয়েকে বারবার বলে গেছিলাম এখানে অপেক্ষা করতে আর এই মেয়ে কি করল? ডেং ডেং করে চলে গেল! ইচ্ছা করছে এ মেয়ের ঠেং দুটো ভেঙে দেই। তার পর সবসময় কোলে নিয়ে ঘুরবো। (বলেই রাগে গট গট করতে করতে ভেতরে গেল)

ভিতরে গিয়েই রাতের চোখ ছানাবড়া। কি দেখছে কি সে? কি হচ্ছে এখানে?

রাত- কি হচ্ছে ওখানে? সবাই এমন ভীড় করে আছে কেন? কারো কি কিছু হয়েছে? তারা! তারার কিছু হয় নি তো?(ভেবেই দৌড়ে ভীড় ঠেলে ভিতরে চলে গেল)

কিন্তু ভিতরে গিয়ে খেল আরেক ঝটকা। সাথে সাথে রাগ উঠে গেল মাথায়। যেখানে সে ভেবেছিল মেয়েটার কোনো বিপদ হয়েছে সেখানে মেয়েটা দিব্বি হেসে হেসে সবার সাথে কথা বলছে।

রাত- এ মেয়ে আমাকে একটুও শান্তি দিবে না। এদিকে আমি মরি টেনশনে আর ও? ও হেসে হেসে সবার সাথে কথা বলছে। আল্লাহ পাগল হয়ে যাবো আমি। এই মেয়ে কি আমাকে কোনো দিন বুঝবে না?(মনে মনে)

তারা রাতকে দেখেছে কিন্তু সে কিছুতেই এখন রাতের কাছে যেতে চাচ্ছে না। কারণ সে ভয়ে আছে যদি কথা অমান্য করায় কোনো টর্চার করে। তাই সে ভীড়কে টাটা বাই বাই জানিয়ে কোনো রকম দৌড়ে তার বন্ধুদের কাছে যায়।

এদিকে রাত চাইছে তারার সাথে কথা বলতে। কারণ তার মতে তারাকে কিছুটা শাস্তি দেয়া দরকার তার কথা অমান্য করার জন্য আর এতো গুলো ছেলের সাথে কথা বলার জন্য। ছেলেরা কেমন করে তার দিকে তাকিয়ে ছিল এই মেয়ে কি তা জানে? তাই তার মতে ছোট খাট শাস্তি তারার পাওয়ার দরকার। কিন্তু কিছুতেই তারার নাগাল পাচ্ছে না। যেই ভীড় ঠেলে তারার কাছে যাবে ওমনি তারা সাইড কেটে চলে গেল তার বন্ধুদের কাছে। আর এদিকে রাত গ্যাং এসে নিয়ে গেল রাতকে। যার জন্য এখনের মতো পারল না রাত তারাকে শাস্তি দিতে।

রাত- এখন তো বেচে গেলে বেবি। কিন্তু ছুটির শেষে কি করবে? গেট রেডি ফর ইউর পানিশমেন্ট। (মনে মনে বলে বাঁকা হেসে চলে গেল)

তারা তার বন্ধুদের সাথে সাথে কথা বলে সবাই চলে গেল ক্লাসে।

ক্লাস চলার মাঝে এসে হুট করেই এক স্যার এসে বলে গেল সামনে ভার্সিটিতে একটা গানের কম্পিটিশন আছে যারা নাম দিতে চায় তারা যেন ক্লাস শেষে নাম দিয়ে অডিশনের জন্য হলরুমে যায়। কারণ এই কম্পিটিশনে প্রায় ১০টা ভার্সিটি জয়েন করবে। তার মধ্যে থেকে ১ম ২য় ৩য় ভার্সিটি নির্বাচিত হবে। এই কম্পিটিশনে ভার্সিটির সকল বর্ষের স্টুডেন্টরায় নাম দিতে পারবে।

তন্নিমা- তারা তুই নাম দিবি না?

রবিন- কেন দিবে না? এতো সুন্দর গান গায় অবশ্যি দিবে।

তারা- না। আমি ভাবছি দিব না।

রিমা- কেন? কেন দিবি না তুই?

আনিকা- কি বলছিস এসব দিবি না মানে?

তারা- আরে রিলেক্স। আমার একদমি ইচ্ছা করছে না নাম দিতে। তাছাড়া আরো কতজন থাকবে। আমি সবার সাথে গান গাইতে পারি না।

অনিক- তাও দিয়ে তো দেখ। তোর কারণে হয়ত আমাদের ভার্সিটি এবারে জিততে পারে।

সবার অনেক জোড়াজুড়িতে তারা রাজি হয়ে যায়। আর নাম দেয়।

ক্লাস শেষে তারা যায় হলরুমে কারণ এখানেই অডিশন হবে।

হলরুমের সামনে মোটামুটি ভালোই লাইন লেগেছে। ১০জনের পরে তারার নাম্বার।

একে একে ১০জন গান গেয়ে আসলো। তার মধ্যে মাএ ১জন সিলেক্ট হয়েছে।

তারার ভয় করছে কারণ যেভাবে সিলেক্ট করছে।

তারার নাম্বার এলো। তারা ভয়ে ভয়ে আল্লাহর নাম নিয়ে ভিতরে গেল।

তারপর নাম, রোল আর ডিপার্টমেন্ট জিজ্ঞেস করে তারাকে বলা হলো গান গাইতে।

তারা শুরু করল।

তারা-

আমার ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে আছো তুমি হৃদয় জুড়ে
আমার ভেতরও বাহিরে অন্তরে অন্তরে আছো তুমি হৃদয় জুড়ে।
পুষে রাখে যেমন ঝিনুক খোলসের আবরণে মুক্তর সুখ
পুষে রাখে যেমন ঝিনুক খোলসের আবরণে মুক্তর সুখ।
তেমনি তোমার গভীর ছোয়ায় ও
তেমনি তোমার গভীর ছোয়ায়
ভিতরে নীল বন্দরে
আমার ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে আছো তুমি হৃদয় জুড়ে
আমার ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে আছো তুমি হৃদয় জুড়ে।।
ঢেকে রাখে যেমন কুসুম, পাপড়ির আবডালে ফসলের ধুম
ডেকে রাখে যেমন কুসুম পাপড়ির আবঢালে ফসলের ধুম।
তেমনি তোমার নিবিড় চলা ও তেমনি তোমার নিবিড় চলা মরণের মন পথ ধরে
আমার ভেতরও বাহিরে অন্তরে অন্তরে আছো তুমি হৃদয় জুড়ে এএএহেএহেএ
আমার ভেতরও বাহিরে অন্তরে অন্তরে আছো তুমি হৃদয় জুড়ে এএএহেএহেএ।

ভালো আছি
ভালো থেকো
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখ
ভালো আছি
ভালো থেক
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখ।
দিও তোমার মালাখানি ও দিও তোমার মালখানি বাউলের এই মনটারে।
আমার ভিতরও বাহিরে অন্তরে অন্তরে আছো তুমি হৃদয় জুড়ে এএএহেএহেএ
আমার ভিতরও বাহিরে অন্তরে অন্তরে আছো তুমি হৃদয় জুড়ে।
পুষে রাখে যেমন ঝিনুক খোলসের আবরণে মুক্তোর সুখ ।।
তেমনি তোমার নিবিঢ চলা ভিতরের এই বন্দরে
আমার ভিতরে বাহিরে আন্তরে অন্তরে আছো তুমি হৃদয় জুড়ে ।

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here