ভালোবাসার স্পর্শানুভুতি পর্ব ১২

#ভালোবাসার_স্পর্শানুভূতি
#রাইমা_মিমি
#পর্ব_১২

সবাই রায়হানকে মেয়ের সাথে দেখা করতে বলে কিন্তু রায়হান না করে দেয় আর বলে একবারে বিয়েতেই দেখবে। ছবি দেখাতে চাইলেও দেখে না সে। অগত্যা বিয়ে দিনই দেখে সে তার স্ত্রীকে।

আর দেখেই একটা ঝটকা খায়।

কারণ বধু বেশে অর্থাৎ লাল বেনারসি শাড়ি আর গাঁ ভর্তি গহনা হালকা সাজসজ্জা নিয়ে বিছানার উপর গুটিসুটি মেরে বসে আছে মিস অনিমা জাহান থুক্কু মিসেস অনিমা জাহান আবার মিসেস রায়হান আহমেদ।

রায়হান তো নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছে না। তার মনে হচ্ছে সে কোনো ঘোরের মধ্যে আছে।

সারাদিনের ক্লান্তি শেষে মাএ ননদিনী আর ভাবিগণ অনিমাকে বিছানা বসিয়ে দিয়ে গেল। আর নানারকম মজা করে গেল।

এতক্ষণ সবার সাথে হেসে কথা বললেও অনিমার মনের এককোণে ভয় হচ্ছিল আর সদ্য বিয়ে হওয়া স্বামীকে নিয়ে।

অনিমা- আচ্ছা উনি কি আমাকে সময় দিবেন? না আমার উপর নিজের অধিকার ফলাবেন।(এসবই ভেবেই ভয়ে গুটিসুটি মেরে বসেছিল অনিমা।)

হুট করেই দরজা খুলার শব্দ পেয়ে আরো জড়সড় হয়ে যায়। কিন্তু অনেকক্ষণ যাবত কোনো সাড়াশব্দ না পাওয়ায় মাথা তুলে তাকায় তার সদ্য বিয়ে হওয়া স্বামীর দিকে। আর তাকিয়েই ঝটকা।

আসলে অনিমা রায়হানের সাথে দেখা করতে চেয়েছিল কিন্তু রায়হান দেখা না করায় তারো ইগো হার্ট হয়। তাই সে ইগোর বসে ছেলের ছবি দেখে নি। শুধু নাম শুনেছিল রায়হান আহমেদ।

এখন প্রশ্ন নাম শুনার পরেও কেন চিনল না? ভার্সিটিতে তারা সারাদিন ঝগড়া করত।

আসলে রায়হানকে ভার্সিটিতে সবাই ধ্রুব নামে জানত। কারণ রায়হানের নাম রায়হান আহমেদ ধ্রুব। আর ধ্রুব হচ্ছে রায়হানের ডাকনাম। তাই এহসানও রায়হানকে ধ্রুব বলেই ডাকে। তাই রায়হান আহমেদ নাম শুনেও অনিমা চিনতে পারে নি।

অনিমা জলদি বিছানা থেকে নেমে এসে বলল।

অনিমা- ধ্রুব ভাইয়া আপনি এখানে?(ভ্রু কুঁচকে)

বিয়ের দিন বাসর রাতে সদ্য বিয়ে করা বউয়ের মুখে ভাইয়া আর এখানে সে কি করছে জানতে চাওয়ায় রায়হান ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। সাথে তার হুশও ফিরল।

রায়হান- মানে?

অনিমা- মানে আবার কিসের? আমার বাসর ঘরে আমার বরের জায়গায় আপনি কি করছেন? আর এমন বিয়ের শেরওয়ানি কেন? এই আপনি আমার বরকে গুম করে দেন নি তো? সত্যি করে বলুন।(আংগুল তুলে)

রায়হান- আরে আজব আমি কাউকে কেন গুম করব? আর আমার ঘরে আমি ছাড়া কে আসবে?

অনিমা- আপনার ঘর মানে?(ভ্রু কুঁচকে)

রায়হান- হ্যা আমার ঘর। এটা আমার ঘর। আর তুমি এখন আমার ঘরে আছো। আমার বউ হয়ে। বুঝেছ?(ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)

অনিমা- এই এক মিনিট। আমি আপনার বউ মানে? আমি আপনার বউ কি করে হলাম? আমার তো রায়হান আহমেদের সাথে বিয়ে হয়েছে।

রায়হান- তুমি হয়ত আমার পুরো নাম জানো না।(আলমারি থেকে কাপড় নিতে নিতে)

অনিমা- কে বলেছে আমি জানি না আপনার নাম তো রায়হান আ…………….(কিছু একটা ভেবে)

রায়হান- বন্ধ হয়ে গেল কেন? বলো।

অনিমা- আপনার নাম র রায়হান আ আহমেন ধ ধ্রুব।(সংকুচিত হয়ে)

রায়হান- ইয়েস। আই এম রায়হান আহমেদ ধ্রুব।

অনিমা- ননননননননা এ হতে পারে না আমি আপনাকে কিছুতেই বিয়ে করতে পারি না। আমি এ বিয়ে মানব না।

রায়হান- মানা ছাড়া তোমার কাছে কোনো অপশন নেই। সো যাও ফ্রেশ হয়ে আসো বেবি। গো।(তোয়ালে অনিমার হাতে দিয়ে)

অনিমা- ইইইইইইই। দেখে নিব আমি আপনাকে হুহ। দেখব কি করে থাকেন সারাজীবন আমার সাথে।(বলেই রাগে গটগট করতে করতে ওয়াসরুমে চলে গেল)

এইদিকে রায়হান দাঁড়িয়ে বাঁকা হাসি দিচ্ছে।

রায়হান খুব ভালো করেই জানে অনিমা তাকে ছেড়ে যেতে পারবে না। কারণ রায়হানের বাবার সাথে অনিমার বাবা একটা এগ্রিমেন্ট রায়হান আর অনিমাকে দিয়ে সাইন করিয়ে নিয়েছে। সেখানে খুব সুন্দর করে লিখাছিল “রায়হান কখনো অনিমাকে ছাড়তে পারবে না। আর অনিমাও কখনো রায়হানকে ছাড়তে পারবে না। যদি কখনো তারা ডিভোর্স করতে চায় তাহলে কোর্ট সে এপ্লিকেশন গ্রহণ করবে না।” আর এই এগ্রিমেন্ট এ অনিমা আর রায়হান উভয়েরই সাইন আছে।

রায়হান আর অনিমার বাবা কৌশলে তাদের দিয়ে সাইন করিয়ে নিয়েছে। কারণ উভয় বাবারই ধারণা ছিল তাদের ছেলে মেয়ে হয়ত একসাথে থাকতে চাইবে না। কারণ তারা তাদের ছেলে আর মেয়েকে চিনেন। তাই এই ব্যবস্থা।

এভাবেই তাদের দুষ্ট মিষ্টি ঝগড়ার মধ্যে দিয়ে দিন কাটতে থাকে রায়হান আর অনিমার। ওইদিকে এহসান আর তানিয়ার সংসার চলছে খুবই ভালোভাবে। এহসান আর রায়হানের ব্যবসা সারা দেখে আলোড়ন সৃষ্টি করে। অল্প সময়ে তাদের সাফল্য তাক লাগানোর মতো।

এদিকে অনিমা আস্তে আস্তে রায়হানকে ভালোবাসতে শুরু করেছে। রায়হান তো আগে থেকেই বাসত। রায়হানের মিষ্টি মিষ্টি রোমান্টিক টর্চার অনিমার মনে একধরণের ভালোলাগার সৃষ্টি করেছে।

এভাবেই তাদের দিন কাটতে থাকে। কিন্তু এহসান আর তানিয়ার সংসারে এখন সুখ থাকলেও দুখ বিরাজমান। কারণ তানিয়া সন্তান জন্ম দিতে পারছে না। তারা বিভিন্ন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করছে কিন্তু কারো কোনো সমস্যা দেখা যাচ্ছে না। তাও তারা চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে রায়হান আর অনিমার ভালোবাসাও একে অপরের কাছে প্রকাশ পেয়েছে। আর তাদের ভালোবাসার দিনগুলোও ভালোই কাটছে। তাদের ভালোবাসা আরো বাড়াতে তাদের সংসারে এক নতুন সদস্য আসছে।

অনিমা প্রেগন্যান্ট এই খবরটা শুনে তানিয়ার খুশি যেন ধরে না। সে অনিমার বেবির জন্য নানা রকম কাজ করছে যে নিজের বেবি হবে।

দেখে দেখে ৯মাস চলে গেল। অনিমার কোল আলো করে এলো এক ফুটফুটে ছেলে সন্তান। নাম রাখা হয় রাত। রাতকে সবার প্রথমে তানিয়া কোলে নেয়।

আস্তে আস্তে রাত বড় হতে থাকে। রাতের যখন ৩বছর তখন খবর আসে তানিয়া মা হতে চলেছে। বিয়ের ঠিক ৬বছর পর তানিয়ার কোল আলো করে জন্ম নেয় এক কন্যা সন্তান। প্রথম কোলে নেয় অনিমা।

মায়ের কোলে এক ছোট ফুটফুটে পরী দেখে রাতের যেন আর খুশি ধরে না। সে নিজে তার নামে সাথে মিলিয়ে মেয়েটির নাম রাখে তারা।

আস্তে আস্তে রাত আর তারা বড় হতে থাকে। তাদের অগোচরে তাদের অভিভাবকগণ বড় হলে তাদের বিয়ে দিয়ে তাদের সম্পর্ক আরো দৃঢ় করে তোলবে বলে ঠিক করে।

কিন্তু হুট একটা ঝড় এসে সব তছনছ করে দিয়ে যায়। আর ভেঙে দিয়ে যায় দুই বন্ধুর সম্পর্ক আর তাদের ওয়াদা। রাত আর তারা হয়ে যায় একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন।

(বাকি অতীত পরে)

বর্তমান,

রাতের গাড়ি এসে দাঁড়ায় মাহমুদ ভিলার সামনে। মাহমুদ ভিলা একটা চোখ ধাঁধানো বাড়ি। যেমন সুন্দর দেখতে তেমন বিশাল জায়গা নিয়ে তৈরী।

আহমেদ ভিলাও কোনো অংশে কম না। মাহমুদ ভিলা থেকে আরো বেশি সুন্দর বলা চলে। সবই রাতের গুণে। (গুণের কথা পরে জানব)

গাড়ি থামতেই তারা তড়িঘড়ি করে বের হয়ে যেতে নেয়। তারা যখনি গাড়ির দরজা খুলে বের হতে যাবে তখনি পিছন থেকে হাত ধরে টান দেয় রাত। যার ফলে তারা বের হতে না পেরে উল্টো ভিতরে ডুকে ড্রাইভিং সিটে বসে থাকা মানুষটার উপর পড়ে যায়।

রাত তারার পিঠে হাত দিয়ে তারাকে আরো নিজের সাথে চেপে নেয়। এতে তারা অসস্তিতে পড়ে যায়। সে জানে রাতের কাছে আসলে তার এমন অদ্ভুত ধরণের অসস্তি হয় কেন? মনে হয়ে হার্ট যখন তার স্পীড আরো বাড়িয়ে দেয়। এমন বাড়িয়ে দেয় যে মনে হয় এখনি ফুর করে বেড়িয়ে আসবে। সাথে একধরণের ভালো লাগাও কাজ করে। এমন হাজারো অদ্ভুত অনুভূতি তারাকে রাতের সামনে অসস্তিতে ফেলে দেয়।

কিন্তু নিজের হুশকে ঠিক করে নিজের মনের কথা না শুনে নিজের মস্তিষ্ককে গুরুত্ব দিয়ে তারা রাতের কাছ থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য ছুটাছুটি শুরু করে। হাত দিয়ে ঠেলতে থাকে রাতকে যাতে রাত তাকে ছেড়ে দেয়।

কিন্তু তারার এত এনার্জি লস তারার কোনো কাজেই লাগছে না। বরং তাকে ক্লান্ত করে দিচ্ছে। কারণ রাতকে সে এক ইঞ্চিও সরাতে পারছে না উল্টো রাত তাকে আরো শক্ত করে চেপে ধরছে। এক সময় তারা নিজের সমস্ত এনার্জি লস করে ক্লান্ত হয়ে শান্ত হয়ে যায়। আর নেতিয়ে পড়ে।

রাত- কি? এনার্জি শেষ? আর করবে না ছুটাছুটি? কি হলো করো।(বাঁকা হেসে)

তারা- প্লিজ ছাড়ুন। বাসায় যাব। কেউ দেখে ফেলবে।(ক্লান্ত সুরে)

রাত- হ্যা তা ছেড়ে দিবই। কিন্তু আগে আমার কাজটা তো করে নেই।

তারা ঝট করে উঠে বলল।

তারা- কাজ মানে? কি কাজ?

রাত- উফ চুপ কর। আমাকে আমার কাজ করতে দাও। (রেগে)

রাতের রাগ দেখে তারা চুপসে গেল। সে আবার মাথা নিচু করে ফেলল।

রাত হুট করেই কিছু না বলে তারার কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিল।

রাতের এমন কাজে তারা বেহুঁশ হওয়ার উপক্রম। লোকটা হুটহাট এমন কাজ করে যে তারার লজ্জার শেষ থাকে না। পরিচয় জেনেছে তো কি হয়েছে? সবসময় এমন করতে হবে? আশ্চর্য।

তারা- আপনি সবসময় এমন করেন কেন?

রাত- কেমন করি?(তারাকে আরো নিজের সাথে চেপে ধরে)

তারা- আ আব। কিছু না ছাড়ুন।

রাত- উফ খালি ছাড়ুন ছাড়ুন করো কেন হ্যা? আমাকে কি ভালো লাগে না তোমার হ্যা? ওই সামিরকে ভালো লাগে তোমার? হ্যা? ওর সাথে যখন কথা বলো তখন তো কিছু হয় না। যখন আমি আসি তখনি ছাড়ুন ছাড়ুন করো।(রেগে)

রাতের রাগ দেখে আবার চুপসে গেল আর বিড়বিড় করতে শুরু করল।

তারা- হুহ। ব্যাটা খবিশ। সবসময় খালি এমন করে। ভালো করে কথা বললে কি হয়। সবসময় রেগে আর ধমকিয়ে কথা বলতে হবে। আমি কি ওই সামিরের সাথে কথা বলি নাকি। ওই তো বারবার কথা বলতে আসে। আমি তো এড়িয়েই যাই। তাও আমারি দোষ দিবে। হুহ। ব্যাটা অসভ্য।( বাচ্চা মুখ ককরে বিড়বিড় করে)

তারা বিড়বিড় করলেও রাতের সাথে জড়িয়ে থাকার কারণে রাত তারার সব কথাই শুনতে পেল। আর তারার বাচ্চামো মুখ করে কথা বলতে দেখে তার ঠোঁটের কোণে এক মুচকি হাসি ফুটে উঠল।

রাত- পাগলী একটা। হুম পাগলী। তবে শুধুই আমার পাগলী।(মনে মনে কথাটা বলেই তারাকে আরো জোড়ে জড়িয়ে ধরল।)

তারা- এই ব্যাটা মনে হয় আজকে আর ছাড়বে না আমাকে। আল্লাহ বাচাও আমায়। তোমার এই মাসুম বান্দাকে রক্ষা করো এই খবিশের থেকে।(মনে মনে)

চলবে?

ভুল এুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন এবং উৎসাহ দিবেন। ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here