ভালোবাসার স্পর্শানুভুতি পর্ব ১৫

#ভালোবাসার_স্পর্শানুভূতি
#রাইমা_মিমি
#পর্ব_১৫

অনিমার কাছে এসে দাঁড়িয়ে যেই অনিমাকে জড়িয়ে ধরতে যাবে তখনি অনিমা দিল এক চিল্লানি।

রায়হান- কি হয়েছে? কি হয়েছে?(উত্তেজিত হয়ে)

অনিমা কাঁদোকাঁদো মুখ করে রাগ নিয়ে রায়হানের দিকে তাকালো।

অনিমার এমন তাকানোতে রায়হান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল।

রায়হান- কি হয়েছে? এমন করে তাকিয়ে আছো কেন?(ভ্যাবাচেকা খেয়ে)

অনিমা- তোমার জন্য। শুধু তোমার জন্য।(কাঁদোকাঁদো রাগি ফেস নিয়ে)

রায়হান- আমার জন্য কি?(ভয় পেয়ে)

অনিমা কিছু না বলে রায়হানকে রাগ দেখিয়ে দৌড়ে চলে গেল রান্নাঘরে।

এদিকে রায়হান বেচারা এখনো হতভাক। তার বউ তাকে কি বলে গেল তা সে কিছুই বুঝতে পারল না।

অনিমা আবার রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে এসে দেখে রায়হান এখনো ওখানে দাঁড়িয়ে কি চিন্তা করছে। রায়হানকে দেখেই রাগটা মাথা চেপে বসল।

রায়হানের কলার ধরে রায়হানকে জুড়ে জুড়ে ঝাঁকিয়ে বলতে লাগল।

অনিমা- শুধু তোমার জন্য। শুধু তোমার জন্য আজকে আমার এতো স্বাদের তরকারিটা পুরে গেল। শুধু তোমার জন্য।(রেগে)

রায়হান তো হতবাক। তরকারির জন্য তার বউ এভাবে তার কলার ধরে টানাটানি করছে। ভাবাহ যায় এগুলা।

রায়হান- আরে তরকারি পুড়ে গেছে তো কি হয়েছে আবার রান্না করে নাও। আর আমার কলার ছাড়ো। এসব কেমন স্বভাব অনি। আমি তোমার স্বামী হই স্বামীর সাথে কেউ এমন ব্যবহার করে?

অনিমা- হ্যা আমি করি। আর কি যেন বলছিলে আবার রান্না করব? আমাকে কি তো কাজের লোক মনে হয় যে যখন যা বলবে তাই করব? আর ওইটা শাপলার ডাটার(কোন অঞ্চলে একে কি বলে ডাকে আমার জানা নেই। তাই আর আঞ্চলিক নাম লিখলাম না) তরকারি ছিল। এখন আমি আবার শাপলার ডাটা পাবো কোথায়। বলি তোমার আরেক বউ কি এসে দিয়ে যাবে?(রেগে)

রায়হান- এটা কেমন কথা অনি? আমার কি আরেক বউ আছে নাকি যে দিয়ে যাবে?

অনিমা- ওহ তার মানে তুমি কি বলতে চাইছো যে বউ থাকলে ঠিকি দিয়ে যেত তাই না? তার মানে তুমি আরো বিয়ে করতে চাও? ও বাবা গো তুমি আমাকে কার সাথে জুড় করে বিয়ে দিলে গো। আমি আর থাকবো না বাবা। নিয়ে যাও আমাকে বাবা। ও বাবা।(জুড়ে চিল্লিয়ে কান্না করে)

রায়হান- শুরু হলো এক আপদ। একে এখন শান্ত না করালে বাবার কাছে আবার খবর পাঠিয়ে দিব। তারপর বাবা বকা শুরু করবেন। এই বুড়ো বয়সে আমি বাবার কাছে বকা শুনতে মোটেও রাজি নই।(মনে মনে)

রায়হান- অনি অনি। দেখো তুমি ভুল ভাবছো। আমি কি আরেকটা বিয়ে করতে পারি নাকি? পারলে তো কবেই করে ফেলতাম।(বলেই জিভে কামড় দিল)

অনিমা- কিহ! কি বললে তুমি?ও বাবা গো। ও মা গো। ও আল্লাহ গো।

রায়হান- যাহ কি বলে ফেললাম। ইচ্ছা করছে এখন নিজের মাথা নিজে ফাটাতে। কিন্তু তা তো করা যাবে না। কিছুতেই না। বরং একে থামাই।(মনে মনে)

রায়হান- দেখো অনি। আমি কথাটা ওভাবে বলতে চাই নি।

রায়হানের কথা শুনে অনিমা শব্দ করে কান্না বন্ধ করে হেচকি তুলে ভ্রু কুচকে তাকায়।

রায়হান- আব। আমি বলতে চেয়েছিলাম দেখো আমি কি করে বিয়ে করবো বলো আমি তো তোমাকে ভালোবাসি। ভালোবাসি তাই তো তোমার সব কিছু মেনে চলি। তোমার পাশে থাকি। তুমি আমার ভালোবাসার মানুষ। আমার সন্তানের মা। আমি কি কখনো এমন কাজ করতে পারি যাতে তুমি কষ্ট পাও? দেখো লক্ষ্মীটি কালকে আমি তোমার জন্য অনেক গুলো শাপলার ডাটা নিয়ে আসব। তুমি ইচ্ছা মতো রান্না করো ঠিক আছে? এখন কান্না অফ করো প্লিজ।(মুখ ভার করে)

রায়হানের কথা শুনে অনিমার খুব ভালো লাগছে। লোকটাকে প্রথম প্রথম তার ভালো না লাগলেও পরে আস্তে আস্তে একদম ভালোবেসে ফেলেছে। মুখে যতই বলুক এই লোকটাকে ছাড়া সে একদিনও থাকতে পারবে না।

এদিকে রাতের করা কাজে তারার দম যায় যায় অবস্থা। কারণ রাত কিছু না বলেই হুট করে তারাকে কোলে তুলে নেয়। তারপর পাশের সিটে বসিয়ে দেয়।

আশেপাশে যত ছেলে মেয়ে পথযাএী ছিল সবাই রাতের করা কাজটা দেখেছে। এদের মধ্যে কেউ মুখ টিপে হাসছে, আবার কেউ জুড়ে হেসে সিটি বাজাচ্ছে, আবার কেউ কেউ রাগে ফুসছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি রাগে ফুসছে এনি আর সামির। রাগে যেন এক একজনের সারা শরীর পুড়ে যাচ্ছে।

এদিকে, রাত তারাকে বসিয়ে নিজে বসে গাড়ি স্টার্ট দিল। গাড়ি চলছে আপন গতিতে। এদিকে তারা বসে আছে মুখ ফুলিয়ে ওদিকে রাতও বসে আছে মুখ ফুলিয়ে।

কিছুপথ যাওয়ার পর তারা বুঝতে পারল এটা তার বাসায় যাওয়ার রাস্তা না।

তারা- আমরা কোথায় যাচ্ছি? এটা তো বাসার রাস্তা নয়।

রাত- আমি জানি বাসার রাস্তা নয়। আমরা অন্য কোথাও যাচ্ছি।

তারা- কিন্তু কোথায়?

রাত- গেলেই দেখতে পাবে।

তারা আর কিছু না বলে চুপ করে বসে রইল। কারণ সে জানে সে যতই প্রশ্ন করুক না কেন রাত এখন বলবে না। অগত্যা চুপ করেই বসে রইল। আর মন দিল জানালার বাইরে। আর উপভোগ করতে থাকল প্রকৃতির লিলা।

রাত যে রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। তা একদম নির্জন রাস্তা। আশেপাশে গাছগাছড়া দিয়ে ভরপুর। আর এসব গাছগাছড়া ভরপুর প্রকৃতি দেখতেই ব্যস্ত তারা। তাদের এগিয়ে যাওয়া আর গাছগাছড়ার পিছিয়ে যাওয়া সাথে মিষ্টি বাতাস তারা খুব ভালোভাবে উপভোগ করছে। সে যেন এক স্বর্গীয় অনুভূতি।

কিছুক্ষণ গাড়ি এসে থামল একটা লেকের পাশে।

রাত আগে গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে তারার পাশের দরজাটা খুলে দিল। তারা গাড়ি থেকে বের হয়ে এলো।

তারা বের হয়ে আশেপাশে চোখ বুলানোর সাথে সাথেই তারার মুখ হা হয়ে গেল।

এত সুন্দর জায়গা। কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ থেকে একদম বিচ্ছিন্ন একটা পরিবেশ। যেখানে নেই কোনো কোলাহল। নেই কোনো যানজট। শুধু সবুজ প্রকৃতি।

চারপাশে সবুজ গাছপালায় ছেয়ে থাকা একটা লেক। তারা দৌড়ে চলে গেল লেকের কাছে। প্রকৃতি দেখে যেন সে মুগ্ধ হয়ে গেছে। অপরূপ মুগ্ধতায় যেন ছেয়ে আছে চারপাশ। এ যেন প্রকৃতির মিলনাস্থল।

চারপাশ দেখে তারার মুখে হাসি ফুটে উঠে। কোলাহলপূর্ণ এলাকায় থাকতে থাকতে যে বোর হয়ে গেছিল। তাই তাদের পুরনো বাড়িটাকে বাপিকে বলে নতুন করে তোলা হয়েছে। আর এখন তারা সবাই তাদের পুরনো বাড়িতেই থাকে।

তাও এখানের সৌন্দর্য যেন চোখ ধাঁধানো। তারা খুশিতে এদিক সেদিক দৌড়াদৌড়ি করছে। তার মন খারাপ যেন নিমিষেই গায়েব হয়ে গেছে। তাকে যেন সবুজের বুকে ভেসে বেড়ানো নীল পরী লাগছে। আবার নীল প্রজাপতিও বলা যায়।

আর দূরে দাঁড়িয়ে একজন সেই নীল প্রজাপতিকে অবলোকন করে যাচ্ছে। এ যেন তার জীবনে দেখে সবথেকে সুন্দর দৃশ্য। যা সে কখনো হারিয়ে ফেলতে চায় না।

তাই সে তারার অজান্তেই নিজের ফোনে ক্যামেরা বন্ধী করে নেই সেই দৃশ্য।

তারা তার দুনিয়াতে এতই মশগুল যে তার সাথে অন্য কেউ আছে তা সে বেমালুম ভুলে গেছে।

রাত- এই যে নীল প্রজাপতি। আর কতো লাফাবেন। এখন চলুন একটু একসাথে হাটি। আমি যে আছি তা তো ভুলেই গেছেন মনে হয়।

রাতের কথায় তারা ভিষণ লজ্জা পেল। সত্যিই তো প্রকৃতির এ অপরুপ দৃশ্য দেখে সে সত্যিই ভুলে গেছিল রাতের কথা।

রাত- কি হলো? চল।

তারা- হুম।(মাথা নিচু করে লজ্জা ভঙ্গীতে)

তারার লজ্জা পাওয়া মুখটা রাতের ভিষণ ভালো লাগছে। ইচ্ছা করছে তারার গাল দুটু একবার ছুঁয়ে দিতে।

রাত নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে তারার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে তারার দুগালে হাত রাখে আর তারাকে নিজের কাছে টেনে নেয়।

হুট করেই রাতের এমন কাজে তারা অবাক হয়ে যায়। এই লোকটা কখন কি করে তা তারা বুঝতে পারে না। কখনো রাগ তো কখনো ভালোবাসা মশাইয়ের।

তারা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাতের দিকে। আর ইশারায় জিজ্ঞেস করল কি?

রাত কিছু না বলে মুচকি হাসি দিল। তারপর তারাকে ছেড়ে দিয়ে তারার হাত ধরে আবার হাটা ধরল।

তারা দুজন হেটে এসে বালুর উপর বসল।

তারা দূরে দৃষ্টি দিয়ে বলল।

তারা- একটা কথা বলব?

রাত- হুম।(তার দৃষ্টিও দূরে)

তারা- আপনি যখন আমাকে ছুয়ে দিন তখন না আমার কেমন যেন লাগে। কেমন একটা হয় মনে। এক অন্যরকম অনুভূতি হয় মনে। যা বাপি মা ছুলে হয় না। কেন হয় এমন?

রাত দৃষ্টি তারাতে এনে বলে।

রাত- এ অনুভূতির একটাই নাম। এ অনুভূতির নাম হলো #ভালোবাসার_স্পর্শানুভূতি। যখন আমি তোমাকে ছুঁই তখন তোমার মধ্যে যে অনুভূতি হয় আমারও সেই অনুভূতি হয়। ইচ্ছা হয় সবসময় তোমাকে ছুঁয়ে দেখি। আমার #ভালোবাসার_স্পর্শানুভূতি তোমাকে দেই। ইচ্ছা সারাজীবন আমার #ভালোবাসার_স্পর্শানুভূতি তে ভরিয়ে রাখি তোমায়।

রাতের কথা শুনে তারার খুব লজ্জা করছে আবার ভালোও লাগছে। এ যেন এক মিশ্র অনুভূতি খেলা করছে তার মনে। যে অনুভূতি নাম সে এতোদিন জানত না আজ সে তার সেই অনুভূতির নাম জেনেছে। তার নাম #ভালোবাসার_স্পর্শানুভূতি।

চলবে?

ভুল এুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন। ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here