ভালোবাসার স্পর্শানুভুতি পর্ব ১৬

#ভালোবাসার_স্পর্শানুভূতি
#রাইমা_মিমি
#পর্ব_১৬

তারাকে নিয়ে রাত সারাদিন ঘুরলো। তারপর সন্ধ্যায় তারাকে তার বাসায় নামিয়ে দিয়ে রাত চলে গেল।

রাতে খাওয়াদাওয়া করে তারা বিছানায় গাঁ এলিয়ে দেয়। আর শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকে আজকে সারাদিনের কথা। আর ভেবেই মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠে।

তারা যখন বিছানায় শুয়ে শুয়ে রাতের কথা ভাবছিল তখনি ফোন ভেজে উঠল। ফোনের শব্দে তারার ধ্যান ভাঙে।

তারা- এখন আবার কে ফোন দিল?

তারা ফোন হাতে নিয়ে দেখে অচেনা নাম্বার। তাই তারা রিসিভ না করে কেটে দিয়ে রেখে দিল। তারপর আবার বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিল।

কিছুক্ষণ পর আবার ফোন এলো। তারা তাকিয়ে দেখল আবার সেই নাম্বার।

তারা- কে রে এ? এতোবার ফোন দিচ্ছে? আচ্ছা দরকারি নয় তো? কিন্তু আমার সাথে কার দরকার? যার হোক আগে ধরি তো নাহলে আবার কেটে যাবে।

তারা ফোন রিসিভ করে কানে নিতেই শুনতে পেল ধমক। ফোনের অপর পাশ থেকে কেউ তাকে ধমকিয়ে যাচ্ছে।

রাত- কোথায় ছিলে এতোক্ষণ হ্যা? ফোন ধরছিলে না কেন? কোন রাজ কাজটা করছিলে শুনি?(ধমকে)

তারার আর বুঝতে বাকি নেই ফোনটা কে করেছে।

রাত- কি হলো বলছো না কেন? স্পিক আপ ডেম ইট।

তারা- আব। না আসলে খেতে গিয়েছিলাম তাই আর কি। খালি বকেন কেন?(ভয়ে ভয়ে)

এবার যেন রাত একটু শান্ত হলো। এবার একটু নরম স্বরে কথা বলতে লাগল।

রাত- সরি আসলে ফোন ধরছিলে না তাই টেনশন হচ্ছিল।

তারা- ওহ। খেয়েছেন?

রাত- হুম। খেয়ে এসেই তোমাকে ফোন করছিলাম।

তারা- ওহ।

রাত- আজকে দিনটা কেমন ছিল কলি?

তারা- আমার জীবনের বেষ্ট দিন ছিল আজকে। অনেক ইঞ্জয় করেছি আমি। আমার অনেক ভালো লেগেছে।(এক্সাইটেড হয়ে)

রাত- তাই?

তারা- হুম।

রাত- তো এই বেষ্ট দিনটা যে উপহার দিয়েছে তারও তো কিছু পাওনা আছে তাই না?

তারা- ক কি?(ভয়ে)

রাত- আমি কি জানি তুমি কি দিবে?

তারা- আমি কি দিব? আপনার তো সবি আছে।

রাত- আচ্ছা থাক এখন দিতে হবে না। আমি না হয় অন্যসময় চেয়ে নিব।

তারা- ঠিক আছে। কিন্তু আমার সাধ্য মতো জিনিস চাইবেন। যা দিতে পারব।

রাত- অবশ্যই। যা আমি চাইব তা শুধু তুমিই দিতে পারবে।(দুষ্ট হেসে)

তারা রাতের কথার মানে বুঝতে পেরে লজ্জায় লাল নীল বেগুনি হয়ে গেল।

সারারাত তারা দুজন তাদের কথোপকথন চালিয়ে গেল। তাদের প্রেম কথনের স্বাক্ষী হলো এ রাত।

এভাবেই দিন কাটতে লাগল। দেখতে দেখতে চলে গেল পুরো একটা বছর।

এ একবছরে অনেক কিছু চেঞ্জ হয়ে গেছে। সবার জীবনে নতুন মোড় এসেছে। অনেক জীবন গুছিয়ে গেছে আবার অনেক জীবন এলোমেলো হয়ে গেছে।

রাত গ্যাং পড়াশুনো শেষ করে ভার্সিটি থেকে চলে গেছে। তন্নিমা আর রবিন রিলেশনশিপে আছে। মেঘ আর রিমাও একে অপরকে ভালোবাসে। আনিকার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। সামনেই বিয়ে। অনিক বেচারা এখনো কোনো রিলেশনশিপে যায় নি।

এদিকে রাত আর তারার জীবনেও এসেছে নতুন মোড়। তবে তা ভালো নয় বরং মন্দ মোড়। যা তাদের আলাদা করে দিয়েছে। তবে আলাদা শুধু তারার ক্ষেএেই হয়েছে। রাতের ম্যাডনেস এখনো আছে। তবে তা আড়ালে।

এদিকে, এনির সাথে রাতের বিয়ের কথা চলছে। চলছে বললে ভুল হবে। এনিই উঠে পড়ে লেগেছে রাতকে বিয়ে করতে। যার জন্য এনির বাবা রাতের বাবার কাছে প্রস্তাব দেন। রাতের বাবা বলেছে তারা রাতের সাথে কথা বলে জানাবে।

এদিকে, গত ৬মাস ধরে রাত বিদেশে।

কেন? চলুন ফ্ল্যাশব্যাকে,

৬ মাস আগে,

তারা আর রাতের সম্পর্ক ভালোই চলছে। তারা একে অপরে অত্যাধিক পরিমাণে ভালোবেসে ফেলেছে। তবে তা এখনো একে অপরের কাছে প্রকাশ্য নই। সারাদিন একসাথে থাকা আর সারারাত ফোনালাপে তাদের প্রেম আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাঝে মাঝে রাতের পাগলামি তারাকে রাতের প্রতি আরো দুর্বল করে তুলছে।

সামনে রাতের জন্মদিন। তাই তারা প্ল্যান করছে রাতকে সারপ্রাইজ দিবে সাথে তার ভালোবাসার কথাও প্রকাশ করবে। যেই ভাবা সেই কাজ।

আজ রাতের জন্মদিন। রাত একটা বিশাল পার্টি এরেঞ্জ করেছে। যাতে তারারা সবাই আমন্ত্রিত। তারা তার সুবিধার জন্য রাতের বুক করা হোটেলেই সারপ্রাইজের আয়োজন করেছে।

এদিকে, রাতের মনেও চলছে একি কথা। সেই চাইছে আজকে সবার সামনে তার মনের কথা তারাকে বলতে। তাই সে তার প্ল্যান মতো কাজে লেগে পরেছে।

রাতের জন্মদিন যে হোটেলে প্ল্যান করা হয় তা দেশের নামিদামির একটা। আর রাত মানেই স্পেশাল আর ইউনিক। তাই রাত তার পার্টি কে ইউনিক করবে আজকে তারাকে প্রপোজের মাধ্যমে।

সকলের ড্রেসকোড ঠিক করা হলো ব্লাক এন্ড রেড। সাথে বার্থডে বয়রো।

পুরো হোটেলের গার্ডেন এরিয়া সহ দ্বিতীয় তলা বুক করেছে রাত। কারণ তার অনেক বন্ধু রাতে থাকবে।

পুরো হোটেলটাকে ব্লাক এন্ড রেড রোজে অপরূপ সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। যাকে বলে চোখ ধাঁধানোর মতো। সাথে রেড বেলুন আর ডিজাইনার জিনিস দিয়ে ইউনিক করে তোলা হয়েছে পুরো হোটেলকে।

রাতের কথা মতো সব সুন্দর করেই গুছিয়ে দিয়েছেন হোটেল ম্যানেজমেন্ট। তাও পুরোটা সে নিজে দেখে দেখে করিয়েছে। যাতে কোনো ভুল না হয়।

এখন বাজে রাত ৮টা। সবাই যার যার মতো আসছে। যেহেতু পার্টিটা শুধু তাদের জন্য তাই এখানে কোনো বয়স্ক লোক নেই। রাতের বাবা মা পর্যন্তও নেই।

আস্তে আস্তে রাত ভারছে। সবাই একে একে এসে পড়েছে কিন্তু রাত যার জন্য অপেক্ষারত তার দেখা নেই। সবাই একে একে রাতকে উইশ করে যাচ্ছে। সাথে নানা রকম গিফট। তারার বন্ধুরাও চলে এসেছে। এখন শুধু তারার আসাই বাকি।

এদিকে এনি এসে ঝাপটে ধরল রাতকে। রাতের অসস্তি হলেও বন্ধুত্বতার খাতিরে আগলাভাবে আলতো করে রাতও তাকে জড়িয়ে ধরল। এনি রাতকে উইশ করে রাতকে গিফট দিয়ে তার নিজের মতো করে বকবক শুরু করে দিল।

রাতের বিরক্ত লাগছে। তাও কিছু বলতে পারছে না। কারণ একে ফ্রেন্ড তার উপর আবার ফেমিলি ফ্রেন্ড। সব মিলিয়েই সে জোরপূর্বক হাসি টেনে দাঁড়িয়ে আছে এনির পাশে। কিন্তু এনির এসব ফালতু বকবকে রাতের কোনো মনযোগ নেই। সে শুধু বারবার সদর দরজার দিকেই তাকিয়ে আছে। আর তার কলির অপেক্ষায় আছে।

এদিকে সবাই লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে এনির দিকে। যা তাকে খুবই গৌরবিত করছে। শুধু একজন যার রাগে গাঁ জ্বলে যাচ্ছে। শুধু পারছে না এনিকে গিয়ে থাপ্পড় দিতে। হ্যা লোকটা আর কেউ না আকাশ। আকাশ আগে থেকেই এনিকে পছন্দ করে কিন্তু কখনো বলতে পারে নি। কারণ এনি রাতকে ভালোবাসে আর তার তাকে বন্ধু ভাবে। আর সে চায় না ভালোবাসার দাবি নিয়ে গিয়ে বন্ধুত্বটাও হারাক। কিন্তু ভালোবাসা তো কিছুই মানে না। মানুষ আর যাই পারুক না কেন ভালোবাসার মানুষের উশৃঙ্খলতা কিছুতেই সহ্য করতে পারে না। ভালোবাসার মানুষকে কেউ বাজে নজরে দেখুক তা মানতে পারে না। আকাশের ক্ষেএেও তাই।

চলবে?

একটু প্যাচ লাগিয়ে দিলাম। দেখা যাক কি হয়। হি হি। আর আজকের পর্ব একটু ছোট হয়ে গেছে তার জন্য দুঃখিত। কালকে থেকে আবার বড় করে দিব ইনশাল্লাহ। ভুল এুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন। ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here