ভালোবাসার স্পর্শানুভুতি পর্ব ১৭+১৮

#ভালোবাসার_স্পর্শানুভূতি
#রাইমা_মিমি
#পর্ব_১৭

সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু হঠাৎ আসা ঝড় যেন সব এক নিমিষেই তছনছ করে দিয়েছে।

সবার আসা শেষ। শুধু তারার বাকি। তারার বন্ধুরা সহ রাত অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে কখন তারা আসবে।

সবার অপেক্ষার সমাপ্ত ঘটিয়ে প্রবেশ করল তারা। পরণে লাল কালো বল গ্রাউন। যাতে তাকে ডিসনি প্রিন্সেসের মতো লাগছে। চুলগুলো ফ্রান্স বিনুনি করা। সামনের কাটা চুল গুলো বাইরে কানের পাশে সেট করে রাখা। হাত,গলা আর কানে ডায়মন্ডের হালকা গহনা। এককথায় যাকে বলে অসাধারণ। পুরো রাজকুমারী।

ও হো রাজকুমারের বর্ণনা দিতে তো ভুলেই গেছি।

রাত পড়েছে কালো কালো কোর্ট ভিতরে লাল শার্ট, কালো জিন্স, হাতে দামী ঘড়ি, কালো সুজ, চুল গুলো স্পাইক করা। এককথায় জাতির ক্রাশ লাগছে।

তারা আসতে দেখে দৌড়ে রাত তারার কাছে যায়।

রাতকে দেখে তারা একটা মিষ্টি হাসি উপহার দেয়। রাত তারার দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেই তারা রাতের হাতে হাত রেখে তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায়। তারপর একটা লাল গোলাপের তোড়া এগিয়ে দেয় রাতের দিকে। রাত তা হাসি মুখে গ্রহণ করে। গোলাপের সাথে তারার রাতকে আরো একটা জিনিস দেয়। মানে কার্ড টাইপ কিছু। রাত তা খুলে দেখতে নিলে তারা মানা করে আর বলে

তারা- এখন না। পার্টি শেষে দেখবেন। প্লিজ।(হাত দিয়ে আটকে)

রাত- আচ্ছা ঠিক আছে। চলো ভিতরে।(বলেই তারার হাত ধরে হাটা দেয়।)

রাত গ্যাং এসে রাতকে ডাক দেয় কারণ কেক কাটার সময় হয়েছে। একটু পরেই কেক কাটবে তাই কিছু কাজ বাকি আছে। তা রাতকে এখনি শেষ করতে হবে। তাই রাত তারাকে তার ফ্রেন্ডদের সাথে থাকতে বলে চলে গেল।

তারা গিয়ে সবার সাথে আড্ডায় মেতে উঠল।

রিমা- ওয়াও জানু। তোকে কি লাগছে রে।(খুশিতে গদগদ হয়ে)

আনিকা- যা বলেছিস। ময়না তোকে না সেই লাগছে। হায় মেয়ে হয়ে আমি তোর উপর ক্রাশ খেয়ে গেলাম রে।(বুকে হাত দিয়ে)

তারা- যাহ কি যে বলিস না তোরা।(লজ্জায়)

অনিকা- হায় হায় লাড়কি সারমাতি ভি হে।(হেসে)

তন্নিমা- সত্যি তোকে অনেক সুন্দর লাগছে। রাত ভাইয়া তো আজকে তোর থেকে চোখই ফিরাতে পারছে না। এই তোরা দেখলি না তখন কেম ডেবডেব করে তাকিয়ে ছিল।(সবার উদ্দেশ্যে)

রিমা- আরে হ্যা তাই তো। তা ম্যাডাম কি চলে?(তারাকে পিঞ্চ করে)

তারা- কিছু চলে না। শুন না তোদেরও অনেক সুন্দর লাগছে।(কথা ঘুরানোর জন্য)

আনিকা- কথা ঘুরাচ্ছিস! আচ্ছা ঠিক আছে। কিছু আর বললাম না। হুহ।(মন খারাপের অভিনয় করে)

তারা- ওরে বাবা আমাদের আনিকা বেগম রাগও করতে পারে? আর এটা এখনো না জানা আমি।

আনিকা- এই একদম বেগম বলবি না। কে বেগম? কোথায় বেগম? আমি আনিকা আফরোজ। কোনো বেগম টেগম নই হ্যা।

রবিন- আচ্চা যা তুই বেগম নস। তুই আনিকা রাণী এখন চুপ যা।

রবিন কথাটা বলার সাথে সাথেই সবাই জুড়ে হেসে দিল। আর এটা দেখে আনিকা আরো রেগে গেল।

আনিকা- তোরা সবগুলা বজ্জাত। হুহ।(বলেই মুখ ঘুড়িয়ে নিল)

তাদের আড্ডা দেওয়ার মাঝ পথেই হুট করে সব লাইটস অফ হয়ে গেল। সবাই কি হলো কি হলো বলে চিল্লানো শুরু করল।

হুট স্পট লাইট জ্বলে উঠল। যার উপর স্পট লাইট জ্বলেছে সে হলো মেঘ। মাইক হাতে মেঘ বলতে শুরু করল।

মেঘ- গুড ইভিনিং এভরিওয়ান। মে আই হ্যাভ ইউর এটেনশন প্লিজ। আজ আমরা এখানে এসেছি সবাই আমাদের প্রিয় বন্ধু। জিগারের দোস্ত, কলিজা রাত আহমেদের জন্য। কারণ আজ তার জন্মদিন। মানে এই দিনেই সে এই দুনিয়াতে এসেছিল। যার জন্য আমরা তাকে পেয়েছি। আমি বেশি কিছু বলব না রাতের সম্পর্কে। কারণ রাতকে আপনারা সবাই খুব ভালো করেই চিনেন। তার আচার ব্যবহার সব কিছুই আপনাদের জানা। আজকের এই অনুষ্ঠান যেহেতু তার জন্মদিন নিয়ে করা তাই আমি আর বেশি কথা বলব না। এখম রাত কেক কাটবে। তারপর সবাই যে যার মতো ইঞ্জয় করবেন। আশা করছি সবার ভালো লাগছে। ধন্যবাদ।

(আমি কখনো বক্তব্য দেই নাই। তাই খারাপ হইলে কেউ মাইন্ড কইরেন না।)

মেঘ মাইক রেখে দৌড়ে গেল আকাশের কাছে। তারপর দুই বন্ধু মিলে বিশাল একটা কেক এনে রাখলো একদম মাঝে।

রাত দাড়িয়ে আছে কেকের সামনে সাথে দাঁড়িয়ে আছে তার বন্ধুরা। এনি ডং করে রাতের একহাত জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। যাতে রাতের বিরক্ত লাগছে৷ বারবার এনিকে সরিয়ে দিতে চাইছে কিন্তু এনি সরছে না।

এদিকে তারা একটু দূরে তার বন্ধুদের সাথে দাঁড়িয়ে আছে। আর রাগে ফুসছে। সে কিছুতেই এনিকে এভাবে রাতের হাত জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।

এদিকে রাত এদিক সেদিক তাকিয়ে তার কলিকে খুজছে। হুট করেই তার চোখ গেল একটু দূরে তারা দাড়িয়ে আছে তার বন্ধুদের সাথে। রাগ হচ্ছে রাতের। কারণ সে এখন কেক কাটবে। আর সে চাইছে তারা তার সাথে থাকুক। তাই সে জোর করে এনির হাত ছাড়িয়ে তারার কাছে গেল। তারপর তারার হাতটা ধরে নিয়ে এলো সামনে।

তারা অন্যদিকে মতো মনস্থির করছিল৷ কারণ রাত আর এনিকে সে এভাবে নিতে পারছে না। তাই সে তার দৃষ্টি অন্যদিকে নিক্ষেপ করেছিল। কিন্তু হুট করেই কেউ এসে হাত ধরে টান দিয়ে নিয়ে যেতে থাকে। আকস্মিক কাজে তারা বুঝতে পারছিল না কি হচ্ছে। তাই সামনে থাকা মানুষটার দিকে তাকায় সে। আর তাকিয়ে দেখে রাত তার হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে।

রাতের এমন কাজে কেউ খুব একটা অবাক হলো না। কারণ এতো দিনে কম বেশি সবাই জেনে গেছে রাত আর তারার মাঝে কিছু একটা চলছে। তাই কেউ রাতের এমন কাজে মাথা ঘামালো না। সবাই বরং আরো উৎসাহই দিচ্ছে। কিন্তু এতো সবার ভিড়ে শুধু একজন রাগে ফুসছে৷ আর সে হলো এনি। যার কিছুতেই রাতের সাথে তারাকে সহ্য হচ্ছে না।

তার কেক কাটল। আর এনিকে অবাক করে দিয়ে প্রথম বাইট টা খাইয়ে দিল তারাকে। এনি ভাবতেও পারি নি রাত এমন কাজ করবে। সে ভেবেছিল হয় তাকে রাত প্রথম বাইটটা খাইয়ে দিবে। যার জন্য রাগ হওয়া সত্ত্বেও অধীর আগ্রহে দাঁড়িয়ে ছিল এখানে। কিন্তু এখন তার রাগে আর অপমানে কান্না আসছে।

এদিকে রাতের এমন কাজে তারাও অবাক। কিন্তু ভালো লাগছে খুব। ভালোবাসার মানুষের প্রথম প্রায়রিটি হতে কার না ভালো লাগে। তার ক্ষেত্রেও তাই। সেও রাতকে কেক খাইয়ে দিল।

একে একে সবাই রাতকে কেক খাইয়ে দিল।

তারপর শুরু হলো গান বাজনা। এখন সবাই যে যার মতো মজা করছে। অনেকে নাচ করছে আবার অনেকে অন্যদের সাথে দাঁড়িয়ে তা ইঞ্জয় করছে।

এনি এখন এই সুযোগটাকেই কাজে লাগাতে চাইছে। সে চাইছে রাতের সাথে ডান্স করতে। তাই সে রাতের দিকে এগিয়ে গেলেই রাত তাকে সাইড কেটে এগিয়ে গেল তারার দিকে। তারা তখন বন্ধুদের সাথে কথা বলছি।

রাত- এই যে মিস। আমি কি আপনার সাথে ডান্স করতে পারি?(তারার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে)

তারা হ্যা হয়ে তাকিয়ে আছে রাতের দিকে। এই লোকের মাথায় কখন কি চাপে তা কেউ বলতে পারবে না।

রাত- হ্যালো। কি হলো? কিছু তো বলো।

তারা- আব। আমি তো নাচতে পারি না।

রাত- নো সমস্যা। আমি শিখিয়ে দিব।

তারা- কিন্তু……….

রিমা- উফ কি কিন্তু কিন্তু করছিস যা না। রাত ভাইয়া এতো বার করে বলছে যা যা।

সবাই- হ্যা যা।

অগত্যা সবার কথায় রাজি হলো তারা। রাতের হাতে হাত রেখে এগিয়ে গেল সামনে।

তখন সফট মিউজিক বাজছিল। রাত তারাকে আসতে দেখে মেঘ দৌড়ে গিয়ে গান চেঞ্জ করে দিল।

রাত তারার এক হাত নিজের কাধে রেখে অন্য হাত নিজের হাতের মুঠই নিয়ে নিল। আর নিজের একটা হাত দিল তারার কোমড়ে। রাতের ছোয়ার যেন তারার কাম্পনের সৃষ্টি হচ্ছে। গান চলতে শুরু করল। সাথে শুরু হলো রাত আর তারার নাচ।

Bulave tujhe yaar aaj meri galiyan
Basaun tere sang main alag duniya
Bulave tujhe yaar aaj meri galiyan
Basaun tere sang main alag duniyaa
Na aayein kabhi dono mein zara bhi faasle
Bas ek tu ho, ek main hoon aur koyi na
Hai mera sab kuch tera tu samajh le
Tu chaahe mere hakk ki zameen rakh le
Tu saanson pe bhi naam tera likh de
Main jiyu jab jab tera dil dhadke
Tujhse mera yeh jee nahi bharta
Kuch bhi nahi asar ab karta
Meri raah tujhse
Meri chaah tujhse
Mujhe bas yahin reh jana
Lagi hain teri aadatein mujhse jab se
Hai tere bin pal bhi baras lagte
Bulave tujhe yaar aaj meri galiyan
Basaun tere sang main alag duniyaa
Jo hove tu udaas mujhe dekhe hass ke
Tu chaahe mere hakk ki zameen rakh le
Tu saanson pe bhi naam tera likh de
Main jiyu jab jab tera dil dhadke
Tujhse mili toh seekha maine hasna
Aaya mujhe safar mein theharna
Main toh bhool gayi duniya ka pata
Yaara jab se hai tujhe jaana
Hai tu hi dil jaan hai meri ab se
Ve zikr tera na jaaye mere lab se
Bulave tujhe yaar aaj meri galiyan
Basaun tere sang main alag duniyaa
Jo hove tu udaas mujhe dekhe hass ke
Tu chaahe mere hakk ki zameen rakh le
Tu saanson pe bhi naam tera likh de
Main jiyu jab jab tera dil dhadke
Pyar di raawan utte yaar tu le aaya
Mainu jeene da matlab aaj samajh aaya
Paraya mainu kar naa, na tu sohneya
Channa main toh turr jaana

নাচ শেষ হতেই চারদিকের হাততালিতে ভরে গেল। সবাই তাদের নাচ দেখে খুশিতে পঞ্চমুখ। কারণ এতো সুন্দর নাচ করেছে তারা। আর গানটাও যেন তাদের জন্য তৈরি হয়েছে। গান যেন তাদের মনের কথা একে অপরের কাছে ব্যক্ত করে দিয়েছে। তারা এমন ভাবে গানের মাঝে ডুবে ছিল যে আশেপাশে সবাই যে তাদের মুগ্ধনয়নে দেখছিল সে দিকে তাদের খবর নেই।

সবাই তাদের মুগ্ধ নয়নেই দেখছিল শুধু একজন ছাড়া। আর সে হলো এনি। তার মতে এটা পৃথিবীর সব থেকে জঘন্য নাচ ছিল। এখানে যদি তারার জায়গায় সে হতো তাহলে এটা গোল্ড মেডেল পাওয়ার মতো নাচ হতো।
#ভালোবাসার_স্পর্শানুভূতি
#রাইমা_মিমি
#পর্ব_১৮

সবাই তাদের মুগ্ধ নয়নেই দেখছিল শুধু একজন ছাড়া। আর সে হলো এনি। তার মতে এটা পৃথিবীর সব থেকে জঘন্য নাচ ছিল। এখানে যদি তারার জায়গায় সে হতো তাহলে এটা গোল্ড মেডেল পাওয়ার মতো নাচ হতো।

পার্টি শেষ। রাতের থেকে বিদায় নিয়ে যে যার মতো চলে যাচ্ছে। কিন্তু তারা দাড়িয়ে আছে। কারণ তার যে কিছু কথা বাকি রাতের সাথে। যা তার মনের কথা। তাই সে এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে। রাতই।তাকে এখানে থাকতে বলে গেছে।

প্রায় ৩০ মিনিট হতে চলল তারা দাড়িয়ে আছে। এখন তার বিরক্ত লাগছে। পুরো গ্রাউন্ড খালি হয়ে গেছে। শুধু তারা দাড়িয়ে আছে। বিরক্ত নিয়ে তারা পুরো গ্রাউন্ড হাটাহাটি করছে। আপাতত বিরক্ত সহ্য করার এই একটাই উপায়।

আরো ১০মিনিট চলে গেল। কিন্তু না রাতের আসার খবর নেই। তারার এইবার অনেক বিরক্ত লাগছে। তাই সে হাটা ধরল রাতকে খুজার উদ্দেশ্যে।

তারা এদিকে সেদিক সব দিক খুজে ফেলেছে কিন্তু রাতের দেখা নেই। এভার তারার কান্না পাচ্ছে। আর মনে যতসব উদ্ভট চিন্তা ভর করছে।

তারা- আচ্ছা উনি কি আমাকে এখানে রেখেই চলে গেছেন? কিন্তু তা কি করে সম্ভব? ন না এটা উনি কিছুতেই করতে পারেন না। উনি নিশ্চয় এখানেই আছেন। আমি আরেকটু খুঁজে দেখি বরং।(বলেই চোখের পানি মুছে আবার খুজা শুরু করল।)

তারা খুজতে খুজতে গার্ডেনে গেল। আর রাতকে পেয়েও গেল কিন্তু যে অবস্থায় পেল তা তারা কখনোই আশা করে নি। আশা করেনি বললে ভুল হবে। ভুল করে স্বপ্নেও ভাবে নি সে।

তারা দেখছে এনি দোলনায় বসে আছে আর রাত দাড়িয়ে তাকে কিস করছে। যা দেখে তারার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। সে যেন ফিজড হয়ে গেছে। হাত পা যেন তার অবশ হয়ে আসছে। সে কিছুই ভাবতে পারছে না কারণ তার সামনে এমন একটা দৃশ্য চলছে যা তার কল্পনার বাইরে।

তারা অনেক কষ্টে অতীতের ভয়কে ভুলে রাতকে ভালোবেসে ছিল। কিন্তু রাত তাকে ধোকা দিল? কি করে পারল তা করতে?

তারা- ন না। এ এ হ হতে প পারে ন না। উ উনি আ আমাকে ধ ধোকা দিতে প পারেন না। ক কিছুতেই পারেন না। আমি এখনি গিয়ে উনাকে জিজ্ঞেস করব। (বলেই এগুতে নেয় তারা।)

কিন্তু পরে যা শুনল তাতে তার পৃথিবী যেন থমকে গেল।

এনি- আই লাভ ইউ রাত।

রাত- আই লাভ ইউ!(ব্যাঙ্গ করে)

কিন্তু রাতের ব্যাঙ্গ করে বলা কথাটা তারা দেখতে পেল না। কারণ সে রাতের পিছনে ছিল। তার কানে এখন শুধু একটা কথায় বাজছে “আই লাভ ইউ”। কথাটা শুনে তারা দু কদম পিছয়ে গেল। সে আর নিতে পারছে না। রাত পরে আর কি বলেছে তার একটা কথাও তার কান দিয়ে যাচ্ছে না। তার কান যে সেই কথাতেই আটকে আছে। কি হচ্ছে কি তার সাথে? কেন হচ্ছে? তারা এখানে এক মুহূর্ত না দাড়িয়ে দৌড়ে বেড়িয়ে গেল রেস্টুরেন্ট থেকে। তারা এখন পাগল প্রায়। সে পাগলের মতো দৌড়াচ্ছে।

এদিকে,

তারাকে দাড় করিয়ে রেখে রাত চলে গিয়েছিল সবাইকে বাই বলতে। সবাইকে বাই বলে তারার কাছে আসার সময় হুট করেই এনি এসে দাড়ায় সামনে। রাত এনিকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই এনি রাতের হাত ধরে ফেলে।

এনি- রাত তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।

রাত- এখন আমি ফ্রী নই এনি। যা বলার আছে তা কালকে বলো। এখন আমাকে যেতে হবে।(বলেই হাত ছাড়িয়ে নিতে যায়)

এনি আরো শক্ত করে ধরে বলে।

এনি- প্লিজ রাত। আমি তোমার বেশি সময় নিব না। প্লিজ রাজ।

রাত- ওকে বলো।(বিরক্তি নিয়ে)

এনি- এখানে না চলো গার্ডেনে।

রাত- উফ এনি। তোমার যা বলার আছে তা তাড়াতাড়ি বললে বলো না হলে ছাড় আমাকে।

এনি- প্লিজ রাত।(বাচ্চাদের মতো কাদোকাদো মুখ করে)

রাত- উফ। ওকে চলো।

গার্ডেনে এসেছে ১০মিনিট হলো কিন্তু এনি এখনো চুপ। কিছুই বলছে না সে। রাতের এবার রাগ উঠছে।

রাত- এনি তুমি কি কিছু বলবে আমাকে? নাকি চলে যাবো আমি? দেখো এখানে দাড়িয়ে থাকার মতো ফালতু সময় আমার কাছে নেই। যা বলার তাড়াতাড়ি বলো প্লিজ।(রাগে দাতে দাত চেপে।)

রাতের কথা শুনে এনি ন্যাকা কান্না শুরু করে দেয়। হঠাৎ এনির এমন কান্নায় রাত ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়। সে বুঝতে পারছে না সে কি এমন বলেছে যে এনি কান্না করছে।

রাত এনির কাছে গিয়ে বলে।

রাত- এনি এনি কি হয়েছে? কান্না করছো কেন?

এনি কিছু না বলে ন্যাকা কান্না করে ঘুরেই রাতকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে। এনির এমন কাজে রাত অবাক। তার সাথে তার রাগও হচ্ছে। কিন্তু একটা কান্নারত মানুষের উপর সে এখন তার রাগ দেখাতে চায় না। তাই সে চুপ হয়ে আছে কিন্তু এদিকে তার অসস্তিও হচ্ছে। কিন্তু তাও শান্তনা দেওয়ার জন্য এনির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো।

রাত- এনি কি হয়েছে? এনি?(মাথায় হাত বুলিয়ে)

এনি কিছু না বলে শুধু হিচকি তুলে কাদছে।

রাত এনিকে নিজের থাকে ছাড়িয়ে নিয়ে দোলনায় বসালো।

রাত- এবার বলো কি হয়েছে? কাদছো কেন?

এনি কৌশলে এদিক সেদিক চোখ বুলিয়ে নিল। হুট করেই তার চোখ আটকে গেল একটা পরীতে। কিন্তু পরীটাকে এনির কাছে তার শএু মনে হয়। আর এই শএুকে দূর করার জন্যই তো তার এই প্ল্যান।

আসলে তারা যখন বলেছিল তার কিছু বলার আছে তাকে তখনি এনি সেখানেই ছিল। রাত যখন তাকে দাড় করিয়ে রেখে গেল তখনো সে ওখানেই ছিল। আর কৌশলে তারার কথা শুনল। তারার মুখে যা শুনল তাতে তার ভয় হতে থাকল রাতকে হারানোর ভয়। কারণ রাত এমনি সারাদিন তারা তারা করে। এখন যদি তারা রাতকে প্রপোজ করে তাহলে তো কথাই নেই। রাত এককথায় হ্যা বলে দিবে।

ওখানে দাঁড়িয়ে সে অনেক চিন্তা করল কিভাবে তারাকে কথাটা বলার থেকে আটকানো যায়। সে অনেক চিন্তা করল।প্রথমে ভেবেছিলাম রাতকে তারার বিরুদ্ধে নিবে কিন্তু পরক্ষণেই আবার চিন্তা করল রাত কখনোই বিশ্বাস করবে না। তার থেকে তারাই বেটার অপশন। তাই সে তারাকেই বেছে নিল। তার খুব সুক্ষ্মভাবে প্ল্যান করল তারার মনে রাতের জন্য বিষ ভরার। যেই ভাবা সেই কাজ।

সে যখনি দেখল তারা আসছে তখনি আহ করে উঠল।

এনি- আহ।(বলেই চোখে হাত দিয়ে আর্তনাদ করে উঠে)

রাত- এনি? এনি কি হয়েছে? ব্যথা পেয়েছো কোথাও? এনি?

এনি- আহ রাত আমার চোখ কি পড়েছে। অনেক জ্বালা করছে চোখটা। আহ।

রাত- চোখে কিছু পড়েছে? ওকে ওকে তুমি এখানে বসো আমি পানি নিয়ে আসছি।

এনি- আহ প্লিজ রাত যেও না। পানি লাগবে না। একটু ফু দিয়ে ময়লা টা বের করে দেও।

রাত- ফু দিব? কিন্তু পানি আনলে তো ভালো……..

এনি- আহ প্লিজ রাত তাড়াতাড়ি করো।

রাত- আচ্ছা ঠিক আছে। এদিকে ফিরো।

রাত হাত দিয়ে এনির মুখটা ধরে এনির চোখে ফু দিতে থাকে। আর এদিকে এনি তাকিয়ে দেখে তারা অবাক দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। এনি এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে আলতো করে রাতকে জড়িয়ে ধরে যাতে রাত বুঝতে না পারে।

আর ঠিক এটাকেই দেখেই তারা কিস মনে করে ভুল বুঝেছে। তারা যখন রাতকে জীবন জিজ্ঞেস করতে যাবে তখনি এনি রাতকে বলে।

এনি- আই লাভ ইউ রাত।

রাত- আই লাভ ইউ!

আর তারা ঠিক এইটুকুই শুনেছিল। যার জন্য তার ভুলটা আরো বেশি তার মনের উপর ঝেকে বসেছে। আর পরেরটুকু না শুনেই চলে যাওয়ার ফলে তারার এই ভুলটুকু রয়েই গেল।

রাত- আই লাভ ইউ! সিরিয়াসলি? তুমি জানো এই কথাটার মানে কি? আর তাছাড়া আমি তোমাকে কতবার বলেছি যে আই ডোন্ট লাভ ইউ।

এনি- বাট রাত আই রেয়ালি লাভ ইউ।

রাত- ওহ প্লিজ এনি প্লিজ স্টপ। যা বলবে বলে ডেকে ছিলে প্লিজ তাড়াতাড়ি তা বলো।

এনি- তুমি এখনো বুঝতে পারছো না আমি কি বলতে চেয়েছিলাম? আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর আমি তোমাকে তাই বলতে চেয়েছিলাম।

রাত- ওয়াট? তুমি এটা বলতে এখানে ডেকে ছিলে? সিরিয়ালি? ইউ ষ্টুপিড গার্ল তুমি জানো কি করেছো তুমি? তোমার এসব ফালতু কথার জন্য আমি এতোক্ষণ এখানে দাড়িয়ে ছিলাম? আর ওইদিকে……. (রেগে চিল্লিয়ে)

এনি- ওই দিকে?

রাত- কিছু না ইউ ফুল।(বলেই চলে যেতে নেই।)

এনি- রাত প্লিজ আমার কথাটা শুনো। আমি সত্যি বলছি আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। প্লিজ রাত আমাকে গ্রহণ করো প্লিজ রাত।(রাতের হাত ধরে)

রাত- এনি লিভ মাই হ্যান্ড। (রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে)

এনি- নো রাত।

রাত- আই সেইড লিভ মাই হ্যান্ড ডেম ইট। আমি তোমাকে পরে দেখে নিব। যা করেছো একদম ভালো কর নি। আই উইল সি ইউ।(রেগে চিল্লিয়ে বলেই দিল দৌড়।)

এদিকে এনি দাড়িয়ে বাঁকা হাসছে।

এনি- যাও যাও রাত বেবি। কিন্তু তারাকে আর পাবে না। হা হা হা হা।(শয়তানি হাসি দিয়ে)

রাত সেই জায়গায় গিয়ে দেখে তারা নেই।

রাত- সিট সিট সিট। আহহহহহ(চিল্লিয়ে)

রাত আবার এদিক সেদিক দেখা শুরু করল। কিন্তু তারা কোথাও নেই।

তখনি পাশ দিয়ে একটা সার্ভেন্ট যাচ্ছিল। রাত তাকে দাড় করাল।

রাত- এক্সকিউজ মি।

সার্ভেন্ট- জি স্যার?

রাত- এখানে যে একজন দাড়িয়ে ছিল সে কোথায়?(উত্তেজিত হয়ে)

লোকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রাতের দিকে। রাত বুঝতে পেরেছে লোকটা বুঝতে পারে নি।

রাত- এখানে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে ছিল কালো লাল গ্রাউন পড়া, মোটামুটি স্বাস্থ্য। কোথায় সে?(একটু শান্ত হয়ে)

লোকটি- ওহ স্যার ওই মেম? ওই মেম তো দৌড়ে চলে গেল দেখলাম ।

রাত- দৌড়ে চলে গেল মানে?

লোকটা- হ্যা। মেম কিছুক্ষণ এখানে দাড়িয়ে ছিল। তারপর কাকে যেন খুজছিল। তারপর গার্ডেনের দিকে গেল আর কিছুক্ষণ পর দৌড়ে বেড়িয়ে গেল।

এবার রাত বুঝতে পেরেছে সব।

রাত- ধন্যবাদ আপনাকে।

লোকটি – স্বাগতম স্যার।(বলেই চলে গেল)

রাত- তার মানে তারা দেখেছে আমাকে আর এনিকে। কিন্তু ওভাবে চলে গেল কেন? আর কি বা বলতে চেয়েছিল?(চিন্তা করেই হাত পড়ে পকেটে।)

পকেট থেকে কার্ডটা বের করে দেখে খুব সুন্দর করে সাজানো কার্ডটা। রাত খুলে দেখল তাতে তার জন্মদিনের শুভেচ্ছা লেখা আর এর হোটেলই রুম নাম্বার লেখা। রাত রুম নাম্বার দেখে কিছুটা অবাক হলো। তারপর রিসেপশনিস্ট এর কাছে গিয়ে জানতে চাইল রুম সম্পর্কে। রিসেপশনিস্ট যা বলল তা শুনে রাত অবাকের চূড়ায়।

রাত- এই রুমটা কিসের জন্য বুক করা হয়েছে?

রিসেপশনিস্ট- এক মিনিট স্যার আমি দেখে বলছি।

রাত- ওকে।

রিসেপশনিস্ট- স্যার এই রুমটা তারা মাহমুদ বুক করেছে রাত আহমেদের জন্য। কিছু স্পেশাল কারণে। ঠিক কি কারণে তা আমরা জানি না।

রাত- ওকে। আমি রাত আহমেদ। চাবি টা দিন আমি নিজে গিয়েই দেখছি।

রিসেপশনিস্ট- এই যে স্যার।

রাত চাবিটা নিয়ে সে রুমের সামনে গেল। চাবিটা দিয়ে দরজাটা খুলে সে অবাক। অবাক বললে ভুল হবে সে অবাকের শীর্ষ তে পৌছে গেছে। কারন সারা ঘর সুগন্ধি মোমবাতি দিয়ে সাজানো, সাথে নানা রকম ফুল, সাদা, লাল রঙের পর্দা, সামনে ইয়া বড় একটা কেক। রাত ভিতরে ডুকে তো আরো অবাক। তার মাথা যেন কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ সামনে মোমবাতি দিয়ে সুন্দর করে “আই লাভ ইউ রাত” লেখা।

(বাকিটা পরবর্তী পর্বে।)

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here