ভালোবাসার স্পর্শানুভুতি পর্ব ১৯+২০

#ভালোবাসার_স্পর্শানুভূতি
#রাইমা_মিমি
#পর্ব_১৯

রাত চাবিটা নিয়ে সে রুমের সামনে গেল। চাবিটা দিয়ে দরজাটা খুলে সে অবাক। অবাক বললে ভুল হবে সে অবাকের শীর্ষ তে পৌছে গেছে। কারন সারা ঘর সুগন্ধি মোমবাতি দিয়ে সাজানো, সাথে নানা রকম ফুল, সাদা, লাল রঙের পর্দা, সামনে ইয়া বড় একটা কেক। রাত ভিতরে ডুকে তো আরো অবাক। তার মাথা যেন কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ সামনে মোমবাতি দিয়ে সুন্দর করে “আই লাভ ইউ রাত” লেখা।

রাত- তারা আমাকে ভালোবাসে? সিরিয়ালি? আমাকে প্রপোজ করার জন্য তারা এতো কিছু প্ল্যান করেছিল? সারপ্রাইজ দিবে বলে?(এক্সাইটেড হয়ে)

রাত- আমি তো ভাবতেই পারছি না। আমার কলি আমাকে আমাকে ভালোবাসে। ভালোবাসে আমাকে আমার কলি। আমার এতোদিনের কষ্ট সফল হয়েছে। এখন আমার কলি আমার।(ডাবল এক্সাইটেড হয়ে)

রাত- কিন্তু কলি! কলি কোথায়? এক মিনিট এক মিনিট একটু আগে ওই সার্ভেন্টটা কি বলেছি? কলি কাদতে কাদতে দৌড়ে বেড়িয়ে গেছে। ওহ সিট। কি করে ভুলে গেলাম আমি। সিট সিট সিট। এখন কলি কোথায় আছে কে জানে? কতো রাত হয়ে গেছে। এখন কোথায় আছে। আল্লাহ তুমি দেখো। (বলেই দৌড়ে বেড়িয়ে গেল রাত।)

রাত পাগলের মতো দৌড়ে পার্কিং এ গেল। তারপর গাড়ি নিয়ে সোজা বেরিয়ে গেল। তারা বেরিয়ে গেছে বেশি সময় হয় নি। তাই তার ধারণা বেশি দূর হয়ত যাই নি। কিন্তু মনের মাঝে অন্যরকম ভয়ও কাজ করছে। একা একটা মেয়ে তাও হেটে যাচ্ছে আল্লাহ না করুক যদি কোনো খারাপ কিছু হয়।

রাত- ন না ক কিছু হবে না আমার কলি। আমি আসছি। আমি আসছি কলি। কিছু হতে দিব না আমি তোমার।(বলেই গাড়ির স্পীড আরো বাড়িয়ে দিল)

রাত যে স্পীডে গাড়ি চালাচ্ছে রাত হয়ে যাওয়ায় রক্ষা। দিন হলে এতোক্ষণে এক্সিডেন্ট হয়ে যেত।

এদিকে তারা পাগলের মতো কাদতে কাদতে দৌড়াচ্ছে। দিক বেদিক তার হুশ নেই। তার মাথায় শুধু রাতের এনিকে করা কিস আর বলা আই লাভ ইউ টাই ঘুরছে। যা তাকে খুব বেশি পোড়াচ্ছে।

এদিকে সে যে রাস্তার মাঝে এসে পড়েছে সেদিকে তার কোনো হুশ নেই।

এদিকে অন্যলোকরাও রাতের খালি রাস্তা পেয়ে রাতের মতো স্পীডে গাড়ি চালাচ্ছে।

তারা শুধু কাদছে আর দৌড়াচ্ছে। এদিকে সামনে থেকে যে একটা গাড়ি ফুল স্পীডে তার দিকে ধেয়ে আসছে সে দিকে তার বিন্দু মাএ খেয়াল নেই।

তারা দৌড়াচ্ছে আর গাড়িও তার দিকে ধেয়ে আসছে। গাড়ি একদম নিকটে। খালি তারাকে এখন ধাক্কা দিবে। এমন সময় কেই হুট করেই তারাকে টান দিয়ে সরিয়ে দেয়। তারাকে টান দেওয়ার সময় টানদাতার হাত গাড়িটার সাথে লেগে যায়। ফুল স্পীডে গাড়ি হওয়ায় হাতে ভালোই ব্যথা পায়। হাত দিয়ে রক্ত পরতে থাকে।

এদিকে হুট করেই কারো দেয়া টান সামলাতে না পেতে তারা ছিটকে পড়ে রাস্তার ফুটপাতের পাশে। মাথাটা হালকা ফুটপাতে লাগায় কেটে গিয়ে রক্ত পড়তে থাকে। তাছাড়া হাতে পায়েও কিছু জায়গায় ছিলে গেছে। তারা ব্যথায় আহ করে উঠল।

মাহমুদ ভিলা,

এহসান- তানি। তানি।(একটু জোরে ডাক দিল।)

তানিয়া- হ্যা। কি হয়েছে তাড়াতাড়ি বলো আমি খাবার সার্ভ করছি।

এহসান- তারা এখনো আসে নি?

তানিয়া- না গো এখনো তো আসে নি মেয়েটা।

এহসান- এতো রাত হয়ে গেল এখনো কেন আসছে না? ফোন করে জিজ্ঞেস করো নি?

তানিয়া- করেছিলাম। বলল কি নাকি কাজ আছে একটু দেরি হবে। আর আমাদের খেয়ে নিতে বলল। সে নাকি খেয়েই আসবে।

এহসান- কাজ আছে? কিন্তু রাতে আবার কি আজ? তাছাড়া গাড়িটাও নেই নি। এতো রাতে একা কি করে আসবে মেয়েটা?

তানিয়া- ওর কোন বন্ধু নাকি ওকে পৌছে দিয়ে যাবে। তুমি এতো চিন্তা করো না তো এসে যাবে। চলো খাবে চলো।

এহসান- আচ্ছা ঠিক আছে আমি বরং একটা ফোন করে দেখছি।

তানিয়া- ঠিক আছে।

এহসান ফোন দিচ্ছে কিন্তু বারবার অপর পাশ থেকে মধুর কণ্ঠ ধারী মহিলা বলছে “আপনি যে নাম্বারটিতে কল করেছে তা এই মুহুর্তে বন্ধ আছে।”

এই মধুরতা সম্পন্ন কণ্ঠ এখন এহসানের কাছে বিষাদ গাচ্ছে। কারণ তার একমাএ মেয়ের ফোন লাগছে না। চিন্তা যেনো ঝেকে বসেছে।

তানিয়া- কি হলো পেলে?

এহসান- না। বারবার বন্ধ বলছে।

তানিয়া- দেখো হয়ত মেয়ে মজা করতে গিয়ে ফোনের কথাই ভুলে গেছে।

তানিয়া তারার মা। এহসান থেকে তার চিন্তা বেশি বই কম নয়। তাও মনকে এটা ওটা বলে শান্তনা দিচ্ছেন। তাছাড়া তার মেয়ে সচরাচর এসবে যায় না তাই মেয়েকে একটু ফিডম দিচ্ছে সে। যাতে মেয়ের মন টাও একটু ভালো থাকে।

এহসান- তোমার আবার কি হলো?

তানিয়া- না না কিছু না। চলো।

এহসান- হুম চলো।

আহমেদ ভিলা,

রায়হান- অনি এটা কি তোমার ছেলে কোনো কাজ করল?

অনিমা- মানে?(ভ্রু কুচকে)

রায়হান- না মানে। আজকে তার জন্মদিন। আমি কোথায় ভেবেছিলাম বাসায় ফেমিলি পার্টি দিব। সবার ফেমিলি আসবে। সবার সাথে তাকে পরিচয় করিয়ে দিব। সাথে এনাউন্সমেন্ট করব সে আমার বিজনেসের দায়িত্ব নিবে। তা না………

রায়হানকে আর শেষ করতে না দিয়ে।

অনিমা- হ্যা তুমি তো তাই চাও। আমার একটামাত্র ছেলে আনন্দ মজা না করে জীবনটা তোমার ওই আবুলের বিজনেস করেই শেষ করুক।

রায়হান- যাকে আবুলের বিজনেস বলছো না সেই বিজনেসের জন্যই তোমাদের এতো ফুটানি। না হলে এতোদিনে কোথায় যে থাকবে আল্লাহই জানে।

অনিমা- এই এই তুমি কিন্তু আবার আমার রাগ তুলছো বলে দিলাম। আমি কিছু ছেড়ে দিব না বলে দিলাম।

রায়হান- কি আর পারো। মা ছেলে সারাদিন শুধু রাগ আর নিজেদের জেদ দেখাতেই পারো। যেমন মা তার তেমন হয়েছে ছেলে।

অনিমা- এই একদম বাজে কথা বলবে না। একদম বলবে না। এতোই যখন আমাকে নিয়ে তোমার সমস্যা তাহলে কেন পড়ে আছো আমার সাথে?

রায়হান- দেখো আমি তোমার সাথে এখন কোনো কথা বলতে চাই না। (বলেই চলে গেল)

অনিমা- আমি যখন তার সাথে কথা বলার জন্য মরে যাচ্ছি হুহ।(বলে সেও চলে গেল)

তারা আর সামির বসে আছে রাস্তার পাশের বেঞ্চে। দুইজনেই নিরব। শুধু একটু পর পর তারার ফুপিয়ে কেঁদে উঠার শব্দ শুনা যাচ্ছে।

হ্যা ঐ সময় সামিরই ছিল যে তাকে বাচিয়েছে। তারার ব্যথায় আহ করে উঠার শব্দ শুনে সামির নিজের হাত ঝাড়া দিয়ে দৌড়ে যায় তারার কাছে।

গিয়ে দেখে তারার কপাল থেকে রক্ত পড়ছে।

সামির- তারা। তারা তোমার কপাল থেকে তো রক্ত পড়ছে। কি করি কি করি?(চিন্তা করতে করতে)

অপরদিকে তারা শুধু ফুপিয়েই যাচ্ছে। তার কোনো কথা কানে ডুকছে না। কপালে কাটার ফলে যে ব্যথা হচ্ছে তা তার কাছে কোনো রকমই লাগছে না। হয়ত মনের ব্যথা শরীরের ব্যথার উপর ভারী পড়ে গেছে।

এদিকে অতিরিক্ত কান্না, সাথে দৌড়ানো আর এখন রক্ত পড়া যার ফলে তারার শরীর অতিরিক্ত দুর্বল হয়ে পড়ছে। বারবার ঢুলে পড়ে যাচ্ছে।

সামির তাড়াতাড়ি পকেট থেকে রুমাল বের করে তারার মাথায় বেধে দিল। এদিকে যে তার হাত থেকে রক্ত পড়ছে সেদিকে তার খেয়াল নেই। কেন যেন এই মেয়েটাকে সামিরের আজ বড্ড বেশি মায়াবী লাগছে। বড্ড বেশি।

সামির তারাকে বসিয়ে তারা জামা থেকে একটা অংশ ছিড়ে নিজের হাতে বেধে নিল। তারপর তারা কোলে তুলে নিয়ে গিয়ে বেঞ্চে বসালো। তারপর এক হাত দিয়ে তাকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরল। তারা ক্লান্তিতে সামিরের উপর ঢলে পড়ল।

কিছুক্ষণ নিরবতার পর সামির শুনতে পেল তারা যেন কি বিরবির করছে আর ফুপিয়ে উঠছে।

সামির বারবার তারাকে ডাকছে কিন্তু তারার হুশ নেই। সে একমনে বিরবির করে যাচ্ছে আর কাদছে।

সামির- তারা। তারা কি হয়েছে তোমার? তুমি এতরাতে এখানে কেন? আর কাদছোই বা কেন? তারা?(হাত দিয়ে তারার গালে হালকা থাপ্পড় দিয়ে হুশ ফিরানোর চেষ্টা করে)

তারা এবার একটু জোরেই কেদে দিল যার শব্দ সামির খুব ভালো করেই শুনতে পেল। আশেপাশে কেউ থাকলে সেও শুনতে পেত।

সামির- কি হলো তারা বলো?

তারা- আই লাভ ইউ।

কথাটা শুনে সামির যেন থমকে গেল। সে ভাবতেই পারছে না তারা তাকে আই লাভ ইউ বলছে। কিন্তু পরক্ষণেই যা শুনল তাতে তার ভুল ধারণা ভেঙে চুরমার হয়ে গেল।

তারা- আই লাভ ইউ। আই লাভ ইউ রাত। আই রিয়েলি লাভ ইউ৷ প্লিজ আমাকে ধোকা দিয়ো না। প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না। রাত রাত রাত। (বলেই সামিরকে রাত ভেবে জড়িয়ে ধরে তারা আবার নেতিয়ে গেল)

সামির তাকে ভালোবাসে না কিন্তু তাও কেন যেন তারার বলা কথাগুলো সামিরের মনে রক্তক্ষরণের সৃষ্টি করছে। যা তাকে কষ্ট দিচ্ছে, প্রচুর কষ্ট। কিন্তু কেন তা তার জানা নেই। তার অজান্তেই তার চোখ দিয়ে দুই ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল। সামির তা মুছে আবার তারাকে একহাতে জড়িয়ে ধরে বসে রইল কিছুক্ষণ।

এদিকে, খানিকটা দূর থেকে কেউ একজন অশ্রুসিক্ত অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তারা আর সামিরের দিকে।

হ্যা কেউ টা আর কেউ নয় রাত।

রাত হন্তদন্ত হয়ে তারাকে খুজছিল। হুট করেই তার চোখ যায় সামনে বেঞ্চে। সেখানে দুজন বসে আছে। একজন মেয়ে আর একজন ছেলে। রাত প্রথমে গুরুত্ব না দিলেও ভালো করে তাকিয়ে দেখে মেয়েটি তারা। রাত তাড়াতাড়ি গাড়ি থামিয়ে জলদি নেমে অগ্রসর হয় তারা দিকে। কিন্তু কিছুদূর যাওয়ার পর চোখ যায় পাশে বসা সামিরের দিকে। সামিরকে দেখেই ধপ করে রাগ উঠে যায় রাতের। তাও আবার তারাকে এমন জড়িয়ে থাকা অবস্থায়। রাত রাগে কিছুদূর যেতেই তারার বলা প্রথম কথাটা শুনেই থমকে যায়। তার পা যেন বরফ হয়ে গেছে। তারা প্রথমটুকু একটু জোরে বলায় রাত শুধু প্রথমটুকুই শুনেছে। বাকিটুকু বিরবির করে বলায় বাকি টুকু সামির ছাড়া আর কেউ শুনতে পায় নি। রাতও না।

রাত- তারা এটা কি বলছে? ও সামিরকে আই লাভ ইউ বলছে? কি করে হতে পারে? ও তো আমাকে ভালোবাসে। আমাকে প্রপোজ করার জন্য সারপ্রাইজ প্ল্যান করেছিল। তাহলে? না না কোনো ভুল হচ্ছে। তারা এমন কিছুতেই করতে পারে না। আমি এখনি জিজ্ঞেস করব তারাকে। আর এই সামিরকে এখনি শেষ করে ফেলব আমি। এখনি।(বলেই সামনে আগায় রাত)

কিন্তু এতোক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। সামির তারাকে নিজের গাড়িতে বসিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে যাএা শুরু করেছে মাহমুদ ভিলার উদ্দেশ্যে। এহসান মাহমুদকে সবাই চেনে তাই তারার বাসা খুজতে সামিরের কষ্ট করতে হয় নি।

এদিকে পাগলের মতো সামিরের গাড়ির পিছনে দৌড়াচ্ছে রাত। বারবার বলছে গাড়ি থামাতে। কিন্তস্পীড বেশি হওয়ায় গাড়ি জলদি রাতের চোখের আড়াল হয়ে গেছে আর সামির শুনতেই পায় নি রাতের ডাক।

রাত ১২টা বাজে। মাহমুদ ভিলার সবাই চিন্তায় অস্থির। তানিয়ার ভিপি ফল করছে কিন্তু তাও সে ঘরে যাবে। যতখন না তার মেয়ে আসছে সে যাবে না কিছুতেই যাবে না। তার মেয়ে এসবে কখনো যায় না। আজ নিজে এসে বলেছিল তাই না করতে পারে নি। কিন্তু এখন চিন্তায় সে নিজেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। তার এতো সাধনার ফল এই একটা মেয়ে। কত চিকিৎসা মানত করে পেয়েছে মেয়েকে সে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই কলিংবেল বেজে উঠল। কাজকে কিছু বলতে না দিয়ে তানিয়া দৌড় দিল দরজার দিকে।

এদিকে এহসান তাকে বারবার আস্তে যেতে বলছে কিন্তু সেদিকে তার খেয়াল নেই।

দরজা খুলেই দেখে একটা ছেলে তার মেয়েকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। তাও তার মেয়ে অচেতন। মেয়ের মাথায় রুমাল বাধা যাতে প্রায় অনেকটা রক্ত লেগে আছে সাথে জামাতেও। সাথে তানিয়ে একটা চিতকার দিয়ে মেয়েকে স্পর্শ করতে লাগল।

এদিকে তানিয়ার চিতকার শুনে এহসান দৌড়ে এসে দেখে একি অবস্থা। এহসান কিছু বলতে যাবে তার আগেই সামির বলল।

সামির- আংকেল আন্টি আমি জানি আপনাদের চিন্তা হচ্ছে ওর এমন কি করে হলো? আমি সব বলব আগে তারাকে শুয়ে দিতে হবে।

কেউ আর কিছু না বলে তাড়াতাড়ি সামিরকে তারার রুম দেখিয়ে দিল।

সামির তারাকে শুয়ে দিয়ে তানিয়াকে তারাকে চেঞ্জ করে দিতে বলল।

এদিকে এহসান ডাক্তারকে ইমিডিয়েটলি আসতে বলে দিয়েছে।

কিছুক্ষণ পর ডাক্তার দেখছে তারাকে। তারার কপালের রক্ত পরিষ্কার করে বেন্ডেজ করে দিয়েছে। সাথে সামিরের হাতও। তারার এখনো জ্ঞান ফিরে নি। ডাক্তার বলেছে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে অজ্ঞান হয়ে গেছে আর শরীর কিছুটা দুর্বল। কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্ঞান ফিরে আসবে। ডাক্তার একটা সেলাইন তারার শরীরে দিয়ে আর কিছু ওষুধ লিখে দিয়ে চলে গেল।

এহসান ডাক্তারকে এগিয়ে দিয়ে এসে সামিরকে জিজ্ঞেস করল

এহসান- কি করে এমন হলো বাবা? ও তো কোন পার্টিতে গেছিল। তাহলে এমন কি করে হলো?

সামির তারার কান্নার কথা ছাড়া এক্সিডেন্টের কথা এহসান আর তানিয়াকে বলল।

সবশুনে এহসান আর তানিয়া সামিরকে খুব করে ধন্যবাদ জানালো। কারণ আজ সামির না থাকলে তারা তাদের সাত রাজার ধন এক মানিককে হারাতো। ভেবেই বুকটা কেপে উঠে এহসান আর তানিয়ার।

সামির- আজকে তাহলে আসি আংকেল?

তানিয়া- এমা যাবে কি? আগে খাবে তার পর ওষুধ খাবে তারপর যাবে।

সামির- না আন্টি তার দরকার নেই। বাসা………..

সামিরকে আর বলতে না দিয়ে।

এহসান- দরকার নেই মানে? একশ বার দরকার আছে। তুমি আমাদের এতোবড় উপকার করেছো তোমাকে এমনি এমনি কি করে যেতে দেই।

তানিয়া- আর কোনো কথা নয়। চলো বাবা।

অগত্যা সামির খেয়ে দেয়ে তারপর বেড়িয়ে গেল নিজের বাসার উদ্দেশ্যে।
#ভালোবাসার_স্পর্শানুভূতি
#রাইমা_মিমি
#পর্ব_২০

অগত্যা সামির খেয়ে দেয়ে তারপর বেড়িয়ে গেল নিজের বাসার উদ্দেশ্যে।

সকালে তারার জ্ঞান ফিরলে সে নিজেকে নিজের ঘরে আবিষ্কার করে। হহন্তদন্ত হয়ে উঠতে গেলে মাথা চেপে ধরে আহ করে উঠে।

তানিয়া তারার পাশেই ছিল। সারারাত মেয়ের চিন্তায় এক ফোটাও ঘুমাতে পারে নি। তাহাজ্জুদ পড়ে, তারপর ফজরের নামাজ পড়ে, কিছু আয়াত আর সূরা পড়ে তারাকে ফু দিয়ে কিছুক্ষণ তারার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল সে৷ তার সাত রাজার ধন এই মেয়ে। অনেক কষ্ট করে এই একটা মাএ সন্তান পেয়েছে সে যার জন্য সবসময় আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন তিনি। তাই কখনো মেয়ের সামান্য জ্বর হলেও পাগল হয়ে যান তিনি। আর কাল এতোবড় একটা ঘটনা ঘটেছে ভাবতেই তার গা শিউরে ওঠে। আল্লাহ ঠিক সময় সামিরকে না পাঠালে কি হতো ভেবে হু হু কেদে উঠে। সারারাত স্বামী স্ত্রী তাদের সন্তানের মাথার কাছে বসে আল্লাহকে স্মরণ করে গেছেন। আর শুকরিয়া আদায় করেছেন। ফজরের আযান দিতেই এহসান বেরিয়ে যায় মসজিদে নামাজের উদ্দেশ্যে। তার তানিয়া ঘরেই নামাজ আদায় করে নেয়।

এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে তানিয়ার আঁখি জোড়া নিদ্রায় নিবু হয়ে গেছে তা তার জানা নেই। মেয়ের মাথার কাছে হেলান দিয়ে বসেই ঘুমিয়ে যান তিনি।

হুট করেই মেয়ের আর্তনাদ শুনে হন্তদন্ত হয়ে উঠে বসেন তিনি। তাকিয়ে দেখেন মেয়ে তার মাথায় হাফ দিয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে ব্যথায় কাতরাচ্ছে। যা মায়ের মনকে অশান্ত করে তুলেছে। পাগলের মতো হয়ে তারার কাছে গিয়ে তারাকে জড়িয়ে ধরে অশ্রুসিক্ত নয়নে জিজ্ঞেস করছে।

তানিয়া- কি হয়েছে মা? কি হয়েছে? মা কে বলো কি হয়েছে? কোথায় সমস্যা হচ্ছে? মাথা ব্যথা করছে?(হন্তদন্ত হয়ে)

তারা অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে তার জননীর দিকে। এই সেই জননী যিনি সারাদিন তারা এটা করিস না, ওটা করিস না, এটা কর, ওটা কর বলে বকতে থাকে এর সেই জননীই যখন তার কিছু হয়, সমস্যা যতই ছোট হোক না কেন পাগল হয়ে যায়। তারার শরীরে আচ লাগবে কি তার আগে যেন সেই মরে যাবে। মেয়ে ছ্যাঁকা লাগবে বলে আজ পর্যন্ত রান্নাঘরে যেতে দেই নি সে। ঠান্ডা লাগবে বলে বৃষ্টিতে ভিজতে দেয় নি। সবসময় গরম পানি ব্যবহার করেছে। স্কুল কলেজ ভার্সিটি যাবে রাস্তায় কত ধরণের সমস্যা হয় বলে মেয়েকে আলাদা করে গাড়ি কিনে দিয়েছে। যাতে কখনো তাকে অপেক্ষা করতে না হয়। এই সেই জননী যে মেয়ের সামান্য জ্বরেই পাগল হয়ে যায়। মেয়েকে না দেখে এক মুহূর্ত থাকতে পারে না। মাঝে মাঝে এহসান জিজ্ঞেস করে।

এহসান- এই যে আমার মেয়ের মা জননী, মেয়েকে যে এক মুহূর্ত না দেখে থাকতে পারো না যখন মেয়ের বিয়ে দিবে তখন কি করবে শুনি? নাকি মেয়ের বিয়েই দিবে না?

তানিয়া- কি যে বলো না তুমি বিয়ে কেন দিব না। অবশ্যই দিব। সব মায়েরই শখ থাকে তাদের মেয়েকে বিয়ে দিবে। মেয়ে জামাই দেখবে। নাতি নাতনি নিয়ে খেলবে। তেমন আমারও আছে। আমিও আমার মেয়েকে বিয়ে দিব। তবে হয় পাশেই থাকবে এমন ছেলের কাছে না হলে ঘর জামাই রেখে দিব।

এহসান- তোমার প্রথম অপশন গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ আশেপাশে যে ছেলেরা আছে তারা তারার হাটুর বয়সী। যাকে বলে একদম বাচ্চা। আর আমি আমার প্রিন্সেসের বিয়ে কোনো বাচ্চার সাথে দিব না।(বলেই হা হা করে হেসে উঠেন)

তানিয়া- তাহলে সেকেন্ড অপশন।

এহসান- তা মানা যায়। কিন্তু তোমার মেয়ে কি তা মানবে?

তানিয়া- মেয়ে মানবে না মেয়ের বাপও মানবে।

এহসান- আরে আমি তো মেনেছিই। না করলাম নাকি?

তানিয়া- হুম৷ আচ্ছা এতোক্ষণ যে প্রশ্নগুলো আমাকে করলে তাতে তোমার কি উত্তর?

এহসান- মানে?

তানিয়া- মেয়ের বিয়ে? মেয়ের বিয়ে দিয়ে দূরে পাঠিয়ে দিলে তুমি কি করে থাকবে?

এহসান- আব। আমার কাজ আছে আমি আসছি।(কথা কাটিয়ে চলে গেল)

তানিয়া যানে এ প্রশ্নের জবাব এহসান দিতে পারবে না। কারণ ঠিক তানিয়ার মতো এহসানের কাছেও তারা তার কলিজা। আর কলিজা ছেড়ে সহজে কেহ থাকতে পারে না। কথাটা ভেবেই হেসে চলে যায় তানিয়া।

তানিয়া- কি হলো বলছো না কেন? কোথায় সমস্যা হচ্ছে?(মাথায় হাত বুলিয়ে চিন্তিত সুরে)

তারা- শান্ত হও মা। আমি ঠিক আছি। কোথাও সমস্যা হচ্ছে না আমার৷ এই যে দেখো।(শান্ত করার চেষ্টা করে।)

তানিয়া মেয়েকে ভালো করে দেখে মাথায় একটা ভালোবাসার পরশ একে দিল।

তানিয়া- চলো ফ্রেশ হবে আমি তোমার খাবার নিয়ে আসছি।

তারা- কিন্তু মা আমি এখানে এলাম……..

তানিয়া বুঝতে পেরেছে তারা কি বলতে চাইছে। কিন্তু তানিয়া চাইছে না এই ব্যাপারে এখন কোনো কথা তারাকে বলতে বা জিজ্ঞেস করতে।

তানিয়া- আগে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে ওষুধ খাবে তার পর বাকি সব কথা।

তারা আর কিছু বলল না। মাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে সারারাত চিন্তায় একফোঁটাও ঘুমায় নি। তাই আর কিছু না বলে মায়ের কথা মতো কাজ করল।

তারা ফ্রেশ হয়ে খেয়ে ওষুধ খেয়ে নিল। কিছুক্ষণ পরে এহসান এলো। এসে মেয়ের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আয়াত আর সূরা পড়ে ফু দিল।

এহসান- প্রিন্সেস তুমি ওখানে গেলে কি করে? তোমাকে তো কারোর সাথে করে আসার কথা ছিল। তাই তো তুমি গাড়ি নিলে না। তাহলে?

এহসান কে আর বলতে না দিয়ে।

তানিয়া- আহ রাখো তো এসব কথা। এসব কথা পরে হবে ক্ষণ। এখন আমার মেয়েটাকে একটু রেস্ট নিতে দাও।

এহসান- আহা তানিয়া তুমি বুঝিতে পারছো না আমার জানাটা দরকার। আর তাছাড়া যেই গাড়িতে আমার মেয়ের এক্সিডেন্ট হতে যাচ্ছিল ওই গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে তো থানায়। সাথে ওর ওই ইররেসপন্সিবল বন্ধু টাকেও জিজ্ঞেস করতে হবে কি করে আমার মেয়েকে এই এহসান মাহমুদের মেয়েকে এতো রাতে একা গাড়ি ছাড়া ছেড়ে দিল। হাউ কোড সি?

এহসানের কথা শুনে তারার রাতের কথা মনে পড়ে গেল। রাতের করা সেই ধোকার কথা মনে পড়ে গেল। তারপর কাদতে কাদতে বেড়িয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু সবচেয়ে বেশি পোড়াচ্ছ রাতের দেওয়া ধোকাটা। যেন পুড়িয়ে ভিতর ছাড়খাড় করে দিচ্ছে। রাতের কথা ভাবতেই আঁখি যুগল ভরে এলো তার। এ যেন যে কোনো সময় বিনা মেঘে বজ্রপাতের সংকেত। কিন্তু তা সে তার মা বাবার সামনে প্রকাশ করতে চায় না। তাই কৌশলে চক্ষু জলটুকু মুছে নিল। কিন্তু তাও পারে নি একজনের চক্ষুকে আড়াল করতে। সে চোখ তার মালিককে তারা আড়াল করা চোখের জল ঠিকি দেখিয়েছে।

কথায় আছে “মায়ের চোখকে কখনো ফাকি দেওয়া যায় না। সন্তানের সবকিছু সবসময় মায়ের নখদর্পনে থাকে।” তারার ক্ষেএেও হয়েছে তাই। পারে সে আড়াল করতে তার চক্ষু জল তানিয়ার থেকে।

তানিয়া- কি হলো তারা? কান্না করছিস কেন? কি হয়েছে? বল মাকে? কোথাও ব্যথা হচ্ছে? মাথা ব্যথা হচ্ছে? বল মা।(হন্তদন্ত হয়ে)

তারা নিজেকে সামলে জোরপূর্বক মুখে হাসি টেনে বলল।

তারা- আহ মা উত্তেজিত হচ্ছো কেন? দেখো আমার কিছু হয় নি। ক্লান্তি লাগছে তাই চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে গেছে। তুমি তো জানোই আমার বেশি ক্লান্তি লাগলে ঘামের সাথে অটোমেটিক চোখ দিয়ে পানিও বের হয়।(বলেই হেসে দিল)

তানিয়া- ঠিক বলছিস তো?

তারা- আরে বাবা হ্যা। আর বাপি কোনো মামলা টামলা করতে হবে না। তাছাড়া আমার গাড়ি নাম্বারও মনে নেই। আমার বন্ধুই আমাকে দিয়ে যেতে আসছিল কিন্তু মাঝ পথে তার কাজ পড়ে যাওয়ায় ওকে চলে যেতে হয়। আমি তার গাড়ি দিয়েই আসছিলাম কিন্তু হুট করেই গাড়িটা খারাপ হয়ে যায়। আমি গাড়ি থেকে বের হয়ে ফোনের নেটওয়ার্ক খুজছিলাম যাতে তোমাকে ফোন দিতে পারি কিন্তু কখন যে রাস্তার মাঝে চলে গেলাম টেরই পেলাম না। তাই বলছি কাউকে কিছু বলার দরকার নেই। দোষটা আমারই ছিল।(কৌশল মিথ্যা কথা বলে দিল)

এহসান- কিন্তু তাও…………

তারা- কোনো কিন্তু নয়। এ নিয়ে আর কথা হবে না।

এহসান- আচ্ছা ঠিক আছে।(গম্ভীর হয়ে)

তারা- আই লাভ ইউ বাপি।(বলেই এহসানকে জড়িয়ে ধরল)

এহসান- আই লাভ ইউ টু প্রিন্সেস।(হেসে এক হাতে তারার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে)

তানিয়া- আর আমি?

এহসান- কে তুমি? তুমি বাদ।

তারা- হুম। যাও যাও তুমি বাদ।(হেসে)

তানিয়া- আচ্ছা? তাহলে আজও থেকে আমার কাছে আসা দুইজনেরই বন্ধ। আমি কেউ না তো? তো থাকো। আমি চললাম।

এহসান- এই রে প্রিন্সেস তোমার মা তো রেগে গেল। এখন কি হবে?

তারা কিছুক্ষণ চিন্তা করে।

তারা- আইডিয়া।

তারা তাড়াতাড়ি ফোন নিয়ে সার্ভেন্টকে কল দিল।

তারা- তাড়াতাড়ি একগুচ্ছ লাল গোলাপ আর একটা বড় চকলেট বক্স রেখে এসো মা বাপির ঘরে ফাস্ট।

তারা- নেও বাপি করে দিলাম তোমার কাজ।

তারপর দুই বাপ মেয়ে হাসিতে মেতে উঠল।

এহসান আর তারা জানে তানিয়া গোলাপ আর চকলেট পাগল। তানিয়া গোলাপ এতোই ভালোবাসে যে বাগানের অর্ধেকটা গোলাপ গাছ দিয়েই ভরা। আর তানিয়া বিয়ের আগে থেকেই চকলেট পাগল। তার আর এহসানের মাঝে কখনো ঝগড়া হলে এহসান চকলেট এনে দিলেই সে গলে জল হয়ে যেত। এমন হয়েছে তারা জন্মের পর এহসান যখন তারাকে চকলেট এনে দিত তানিয়া তা থেকে কিছু চকলেট চুপিচুপি নিজে খেয়ে নিত। একদিন তারা নিজের হাতেই তানিয়াকে ধরেছিল চকলেট খাওয়া অবস্থায়৷ সেই থেকেই তারা জানে তার মায়ের সবকিছু মেনেজ করার রাস্তা হলো গোলাপ আর চকলেট।

তানিয়া ঘরে গিয়ে দেখে বিছানায় গোলাপগুচ্ছ আর চকলেট রাখা। তানিয়া খুব ভালো করেই জানে এই কাজ কার। তাই সে হেসে গোলাপগুলো হাতে নিয়ে গন্ধ নিতে থাকে আর চকলেট বক্স থেকে একটা বের করে খেতে থাকে।

সারাদিন ঘরে শুয়ে থেকে তারা বিরক্ত হয়ে গেছে। তাই তার সহ্য করতে না পেরে আস্তে করে উঠে নিচে গেল। গিয়ে দেখে তার মা কাজ করছে। তারাকে দেখে দৌড়ে এসে তারাকে ধরে সোফায় বসায়।

তানিয়া- আরে তুই নিচে এলি কেন? তোকে না শুয়ে রেস্ট নিতে বলেছি।

তারা- আর কত মা? সারাদিন তো শুয়েই ছিলাম।

তানিয়া- আরো থাকবি। জানিস কালকে কি হয়ে যেতে পারতো? ভেবেই আমার গা শিউরে উঠছে। ভাগ্যিস ওই ছেলেটা ছিল।

তারা- ছেলে?

তানিয়া- হ্যা ছেলে। কি যেন নাম? ওই ওই স স। হ্যা মনে পড়েছে সামির। ভাগ্যিস সঠিক সময়ে ছেলেটা তোকে দেখেছিল। না হলে যে কি হতো। আল্লাহ রক্ষা করছে।

তারা- সামির!

তানিয়া- হ্যা সামির। ওহ তুই তো অজ্ঞান ছিলি তাই তোর মনে নেই। ওই সামিরই তোকে কাল নিয়ে এসেছিল। জানিস ছেলেটা তোর জন্য হাতে ব্যথাও পেয়েছে। ভাগ্যিস ছেলেটা ছিল। এমন অসাবধান কেউ হয়। ছেলেটা মনে হয় তোকে চেনে।

তারা- হ্যা আমিও চিনি। আমাদের ভার্সিটির সিনিয়র।

তানিয়া- তাহলে এক কাজ করিস দেখা হলে ছেলেটাকে একটা ধন্যবাদ জানিয়ে দিস। তুই বস আমি তোর জন্য জুস নিয়ে আসি।

তানিয়া চলে যেতেই তারা ভাবতে লাগল কালকের সব কথা।

এদিকে, সারাদিন হতাশা আর দুশ্চিন্তায় কেটেছে রাতের। কারণ না তারা ভার্সিটি এসেছে আর না তারার ফোন লাগছে। নিজের উপর রাগও হচ্ছে খুব। কেন যে গিয়েছি ওই এনির সাথে কথা বলতে।

ভার্সিটি এসে হন্ন হয়ে খুজেও যখন তারাকে পেল না তখন গেল তারার বন্ধুদের কাছে। গিয়ে জানতে পারল তারাও কিছু জানে না। তারা ফোন বন্ধ থাকায় কেউ যোগাযোগ করতে পারছে না।

তারপর গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে গেল তারার বাড়ির উদ্দেশ্যে। শুধু একটাবার তারাকে দেখার জন্য। ও ঠিক আছে তা জানার জন্য। কিন্তু ভাগ্য খারাপ হলে যা হয়। সেখানে গিয়েও কোনো লাভ হলো না। অগত্যা ফিরে আসতে হলো তাকে খালি হাতে।

সারাদিনের রাগ, বিরক্ত আর অভিমান সব দেখিয়েছে আর বন্ধুদের উপর। কেউ কিছু বুঝতে না পারলেও এটা জানে হয়ত কোনো কারণে রেগে আছে সে।

এভাবেই সাতদিন চলে গেল। রাত প্রতিদিন চেষ্টা করেছে তারার সাথে দেখা করার, কথা বলার কিন্তু পারে নি।

আজ সাতটা দিন পর সে আবার পা দিয়েছে তার ভার্সিটির মাটিতে। সাথে সাথে সামির এসে হাজির। তারা হাসি মুখে সামিরের সাথে কথা বলতে বলতে ভিতরে যেতে লাগল। কিন্তু একজোড়া চোখ যে তাদের অগ্নিদৃষ্টিতে দেখছে সে দিকে তাদের কারোই খেয়াল নেই।

ওইদিন আবার সামির তারাদের বাসায় যায়। ওইদিন তারা সামিরকে ধন্যবাদ জানিয়ে গল্প করতে মেতে উঠে। আস্তে আস্তে ভালো সময় কাটতে থাকে সামিরের সাথে। আর তার ফল এখন তারা খুব ভালো বন্ধু।

এতদিন পর সবার সাথে দেখা হয়েছে তাই জমে উঠেছে ওদের আড্ডা। সবাই তারাকে নানারকম কথা জিজ্ঞাসা করছে আর তারাও তা হেসে হেসে জবাব দিচ্ছে। হুট করেই কেউ এসে তারার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। আকস্মিক ঘটনায় প্রথমে তারা কিছু বুঝতে না পারলেও পরে ভালো করে তাকিয়ে দেখে এটা রাত। সাথে সাথে তার মনে পড়ে যায় ওইরাতের দেওয়া ধোকার কথা। সাথে রাগ চেপে যায় মাথায়।

হুট করে দাড়িয়ে হাতটা ঝাড়ি মেরে ছাড়িয়ে নেয় রাতের হাত থেকে। আর চিতকার করে বলতে থাকে।

তারা- আপনার সাহস কি করে হয় আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাওয়ার? এই তারা মাহমুদের? হু আর ইউ?(রেগে)

তারার এমন রাগ দেখে রাত নিজেই ধমে যায়। তাও নিজে রাগটাকে বজায় রেখে আবার তারা হাত ধরে বলে।

রাত- চলো। তোমার সাথে আমার কথা আছে।

তারা আবার হাত ছাড়িয়ে নেয়।

তারা- আমার আপনার সাথে কোনো কথা নেই। আসছি।

রাত- এই কোথায় যাচ্ছো? আমার সাথে যেতে বলেছি চুপচাপ চলো।

তারা- কেন? কেন আমি আপনার কথা শুনে চলবো? আমি আপনার খাই না আপনার পড়ি যে আপনি যেমন বলবেন ওমন করেই চলতে হবে?

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here