ভালোবাসার স্পর্শানুভুতি পর্ব ৬

#ভালোবাসার_স্পর্শানুভূতি
#রাইমা_মিমি
#পর্ব_৬

উনি চোখ খুলার পর সামনে তাকিয়ে যা দেখলাম তাতে আমার অন্তর আত্মা কেপে উঠল।

কারণ উনার চোখ লাল রক্তবর্ণ ধারণ করে আছে। চোখ দিয়ে যেন আগুন বের হচ্ছে। এই আগুনে যেন উনি আমাকে জ্বলসে দিবেন। উনার চোখ দেখে আমি ভয়ে একটা শুকনো ঢুক গিললাম। তারপর একটু সাহস জুগিয়ে বললাম,

আমি- আ আপনি? আ আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন কেন?(ভয়ে ভয়ে)

উনি কোনো কথা না বলে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন। যা দেখে আমি আরো ভয় পেয়ে গেলাম।

আমি- ক কি ক করছেন?(পিছাতে পিছাতে)

কিন্তু এতেও উনি কোনো রিয়েক্ট করলেন না। বরং আরো এগিয়ে আসতে লাগলেন।

আমি ভয়ে একদম দেয়ালের সাথে লেগে আছি। আর উনি আমার ঠিক মুখ বরাবর সামনে আমার দুই সাইডে উনার দুই হাত দিয়ে আমাকে বন্ধি করে দাঁড়িয়ে আছেন। যার ফলে আমি বামেও যেতে পারছি না। আবার ডানেও যেতে পারছি না।

আমি- ক কি ক করছেন? যেতে দিন আমাকে।

রাত একহাত দিয়ে আমার সামনে মুখের সাথে লেপ্টে থাকা চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে দিয়ে বললেন,

রাত- সামিরের সাথে কি কথা হচ্ছিল?(ভাবলেশহীন হয়ে আমার মুখে স্লাইড করতে করতে)

আমি- ম মানে?

রাত- সকালে দেখলাম সামির তোমার সাথে কথা বলছে আর তুমিও খুব সুন্দর করে সামিরের সাথে কথা বলছিলে। তারপর আবার দেখলাম ক্লাসেও তোমরা সামিরকে নিয়ে কথা বলছিলে। সো বলো কি কথা বলছিলে?

আমি- কিছুই বলছিলাম না।

রাত- আমি জানি তোমরা কিছু তো বলছিলে। এখন চুপচাপ না থেকে বলে ফেল কি বলছিলে এতে তোমারই মঙ্গল।

আমি বুঝলাম বাবু জেলাস। আমার সামিরের সাথে কথা বলা বাবুর পছন্দ হয় নি। এটা তার ছোটবেলা থেকেই অভ্যাস। ছোটবেলা থেকেই উনি আমাকে কোনো ছেলের সাথে দেখতে পারেন না। তাই তো ওই কাজটা করেছিল। কাজটার কথা মনে করেই ভয়ে গাঁ শিউরে উঠল। কিন্তু পরক্ষণেই আবার গতদিনের সেই মেয়েটার সাথে চিপকে থাকার কথাটা মনে পড়ে গেল। আর রাগে আর ঘৃণায় গাঁ হিরহির করতে লাগল। তাই কিছু না বলে মুখে অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিলাম।

আমার মুখ ঘুরিয়ে নেয়া যে উনার পছন্দ হয় নি বরং রাগটা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে তা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি। উনি শক্ত করে আমার গাল চেপে ধরে মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললেন,

রাত- আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি তোমাকে কলি।(রেগে)

আমি- কিন্তু আমি বলতে বাধ্য নই।(আমিও রেগে)

রাত- এই কার সাথে তেজ দেখাচ্ছো? ভুলে গেছো আমাকে? হ্যা? আমি জিজ্ঞেস করছি সামিরের সাথে কি কথা বলছিলে বলতে। সো চুপচাপ বলো না হলে….

আমি- না হলে? না হলে কি করবেন আপনি? যা করার করে নিন। কিছু বলব না আমি।

রাত- ওকে ফাইন কিছু বলতে হবে না। বাট ফার্দার তোমাকে যেন সামিরের আশেপাশে না দেখি। হি ইজ এ প্লেবয় এন্ড ব্যাড বয়। সো ডিসটেন্স মেইনটেইন করে চলবে। না হলে আমি কি করতে পারি তা সম্পর্ক এ তোমার কোনো ধারণায় নেই।

আমি- করব না। পারব না আপনার কথা শুনতে। আমি সামিরের সাথে কথা বলব। হি ইজ মাই ফ্রেন্ড। আমি তার সাথে কথা বলব, ঘুরতে যাব, মজা করব আপনি না করার কে?

আমার কথা শুনে উনি যেন তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন।

রাত- আমি কে না? আমি কে?

আমি- হ্যা হ্যা। কে আপনি? আমার উপর আপনার কোনো অধিকার নেই। সো ডিসটেন্স আপনি মেনে চলবেন।(বলেই চলে যেতে নিলে রাত খপ করে আমার হাত ধরে ফেলে)

তারপর টান দিয়ে নিজের সাথে চেপে ধরে ঠোঁটে ঠোট মিলিয়ে দেয়। তবে এ কোনো ভালোবাসার পরশ নয়। এতে আছে প্রচুর রাগ। যা আমার ঠোটকে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে।

টানা ২০মিনিট যাবত ঠোঁটের উপর নিমর্ম অত্যাচার চালাচ্ছে রাত। আমি চেয়েও তাকে সরাতে পারছি না। আমার হাত, পা এমন ভাবে ধরে আছে যে আমি নাড়াচড়া পর্যন্ত করতে পারছি না। আর সেখানে তাকে সরানোর তো কোনো প্রশ্নই আসে। আস্তে আস্তে তার অত্যাচার ভালোবাসার পরশে রুপান্তিত হচ্ছে। পরম আবেশে শুষে নিচ্ছে আমার ঠোট। একসময় আমাকে ছেড়ে দেয়।

আমি ছাড়া পেয়ে মুখে হাত দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে নিচে বসে পড়ি। এমন সময় সে এসে আমাকে দাড় করিয়ে নিজের সাথে চেপে ধরে বলে।

রাত- আমি কে তার পরিচয় হয়ত পেয়ে গেছো। আর হ্যা তোমার উপর সবচেয়ে বেশি অধিকার আমার। আমার থেকে বেশি কারোর নেই। সো যা বললাম মাথায় ঢুকিয়ে নেও। সামিরের সাথে যেন না দেখি।

বলেই বেরিয়ে গেল। আমি এখনো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করেই কেঁদেই চলেছি। রাতের এমন কাজ আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। রাতের প্রতি ঘৃণা যেন আরো কয়েকগুণ বেড়ে গেল। আমি চোখ মুছে দৌড়ে বেড়িয়ে গেলাম। তারপর নিজেদের ক্লাসে গিয়ে দেখলাম স্যার নেই। তাই ব্যাগটা নিয়ে সোজা বেড়িয়ে গেলাম ভার্সিটি থেকে। পিছন থেকে তন্নিমারা সবাই অনেক ডাকছিল। কিন্তু আমি তা উপেক্ষা করে বেড়িয়ে গেলাম। গেটেই রিকশা দাঁড়িয়ে ছিল। তাই সোজা চলে গেলাম বাসায়।

রাতে,

বারান্দার রকিং চেয়ারে বসে আছে রাত। তার দৃষ্টি আকাশের দিকে। হুট করেই তার নজর যাই তার সাইডে রাখা গিটারটাতে। তাই তুলে নেই। তারপর চোখ বন্ধ করে,

Khairiyat pucho, kabhi to kaifiyat pucho
Tumhare bin deewane ka kya haal hai
Dil mera dekho, na meri haisiyat pucho
Tere bin ek din jaise sau saal hai
Anjaam hai tay mera Hona tumhe hai mera
Jitni bhi hon dooriyan filhaal hain
Yeh dooriyaan filhaal hain Ho…

চোখ বন্ধ থাকা অবস্থায় চোখের কোণা দিয়ে কয়েকফোটা পানি গড়িয়ে পড়ল। তাও মুখে হাসি নিয়ে আবার গাইতে শুরু করল।

Khairiyat pucho, kabhi to kaifiyat pucho
Tumhare bin deewane ka kya haal hai
Dil mera dekho, na meri haisiyat pucho
Tere bin ek din jaise sau saal hai

হাটতে হাটতে ঘরের দিকে এগিয়ে।

Tumhari tasveer ke sahaare mausam kayi guzaare
Mausami na samjho par ishq ko humaare
Nazron ke saamne main aata nahi tumhare
Magar rehte ho har pal manzar me tum humare

তারার একটা বড়ছবি রাতের বেডরুমে টানানো। ওটার সামনে দাঁড়িয়ে।

Agar ishq se hai mila Phir dard se kya gila
Iss dard mein zindagi khush haal hai
Yeh dooriyaan filhaal hain O…
Khairiyat pucho kabhi to kaifiyat pucho
Tumhare bin deewane ka kya haal hai

আবার চেয়ারে বসে।

Dil mera dekho, na meri haisiyat pucho
Tere bin ek din jaise sau saal hai
Anjaam hai tay mera Hona tumhe hai mera
Jitni bhi hon dooriyan filhaal hain
Yeh dooriyaan filhaal hain.

গান শেষ করে গিটারটা রেখে চেয়ারে গাঁ এলিয়ে দিয়ে,

রাত- বুঝলে না তুমি আমায় কলি বুঝলে না। সব সময় কেন দূরে সরে থাকো কলি? তোমার কি কষ্ট হয় না কলি? জানো আমার না ভিষণ কষ্ট হয়। ইচ্ছা হয় সবসময় তোমার সাথে থাকি। তোমায় দেখি। তোমার সাথে কথা বলি। তোমায় আদর করি। কিন্তু পারি না। কেন পারি না কলি? কেন দাও না তো আমায় সে অধিকার? কি দোষ আমার? বড্ড ভালোবাসি তোমায় কলি। কেন বুঝো না? তোমায় অন্য কারোর সাথে দেখলে কষ্ট হয় আমার। বুকটা ব্যথায় চিনচিন করে উঠে। ইচ্ছা হয় সব শেষ করে দেই। পাগল পাগল লাগে নিজেকে। কেন বুঝো না তুমি কেন?(মনে মনে এসব আওড়াতে আওড়াতে একসময় রকিং চেয়ারেই ঘুমিয়ে যায় রাত।)

ভার্সিটি থেকে ফিরেই যে দরজা জানালা বন্ধ করে বসেছি এখনো খুলি নি। মা এসে ডেকে জিজ্ঞেস করে গেছে। আমি কথা ঘুরিয়ে মাকে বুঝিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। বাপি এসে ডেকে গিয়েছিল রাতে খাওয়ার জন্য। কিন্তু যাই নি। তখন থেকে কান্না করেই যাচ্ছি। কান্না যেন কিছুতেই থামছে না।

বারবার রাতের করা কাজ আর রাতের কথা গুলো মনে পড়ছে। কেন করল রাত এমন? কেন তার প্রতি আমার রাগ আর ঘৃণাটা আরো বাড়িয়ে দিল কেন? রাত যা করেছে একদম ঠিক করে নি। এর জন্য ওকে আমি কিছুতেই ক্ষমা করব না। কিছুতেই না। বলেই উঠে দৌড়ে গেলাম ওয়াসরুমে। তারপর বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে আয়নায় নিজেকে দেখে আতকে উঠলাম আমি। চোখ মুখ ফুলে গেছে। ঠোঁটের কথা তো ছেড়েই দিলাম। ঠোট ফুলে ইয়া বড় হয়ে গেছে। কামড়ের ফলে যে রক্ত বের হয়েছিল তা শুকিয়ে জমাট বেধে আছে ঠোঁটের কোণে। যা দেখে রাগটা আরো হিরহির করে বেড়ে গেল।

আমি- ব্যাটা বজ্জাত, খাবিশ কি করেছে আমার ঠোটটাকে। আল্লাহ আমি এখন বাইরে যাবো কি করে? মানুষকে মুখ দেখাবই বা কি করে। ঘর থেকে বের হলেই তো মা বাপি জিজ্ঞেস করবে। কি বলব তাদের? শয়তান ব্যাটা ইচ্ছে করছে ইচ্ছে করছে ব্যাটার দাঁত ভেঙে দেই। ঠোট কেটে দেই। ব্যাটা খবিশ। তোর কখনোই ভালো হবে না দেখিস। আমার ঠোটের এমন হাল করেছিস তো দেখিস তোর বউ তোর ঠোট ছিঁড়ে ফেলবে। পরে সবাই তোকে ঠোট কাটা রাত বলবে। হুহ।(রাগে গজগজ করতে করতে রাতকে বকতে থাকলাম।)

চলবে?

ভুল এুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন এবং উৎসাহ দিবেন। ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here