ভালোবাসার স্পর্শানুভুতি পর্ব ৭

#ভালোবাসার_স্পর্শানুভূতি
#রাইমা_মিমি
#পর্ব_৭

(এখন থেকে লেখিকা তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে কথা বলবে।)

এভাবেই চলতে থাকল রাত আর তারার দিনকাল। রাতের টর্চার আর তারার বিরক্তি। সামিরের যেচে কথা বলা। সাথে এনির ক্লাস নিয়ে অপমান। তবে এতে তারা খুব একটা গুরুত্ব দেয় না। প্রতিবারই রহস্যময় একটা হাসি দিয়ে এনিকে এড়িয়ে যায়। এনির রাগ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। এনির মতে রাত কেন এই মিডিলক্লাস মেয়ের সাথে কথা বলে আর তাকে এড়িয়ে চলে। কি আছে ওই মেয়েতে যা তার নেই।

আগামীকাল তারাদের নবীণবরণ উৎসব। পুরো শহরকে জানিয়ে প্রতিবছর এই অনুষ্ঠান পালন করে তারাদের ভার্সিটি। দেশের নামিদামী সব লোকজন আসবে।

গত ৫বছর ধরে এই অনুষ্ঠানের সব কাজ, পরিচালনা রাতের গ্যাং করে আসছে। তবে এতো বছর রাত বিদেশে সব বলেছে আর তার গ্যাং কাজ করেছে। এবারেও তারাই করবে। এইবার তো রাত স্বয়ং নিজে উপস্থিত আছে। তাই আরো ভালো করে এরেঞ্জমেণ্ট করা হয়েছে।

মাঠের এককোণে বকুল গাছের নিচে বসে আছে তন্নিমা, রবিন, অনিক, আনিকা আর তারা। রিমা আজকে আসে নি। তারা গোল হয়ে বসে আলোচনা করছে। দেখে মনে হচ্ছে সিরিয়াস কিছু। আজকে তাদের আলোচনার মূল বিষয় আগামীকালের নবীনবরণ অনুষ্ঠান। কালকে কে কি পড়বে তা নিয়েই আলোচনা হচ্ছে। এক একজন এক এক কথা বলছে। কারোর কথায় কেউ সহমত পোষণ করছে না। তাদের মধ্যে একপ্রকার ঝগড়া লেগে যাব যাবে ব্যাপার।

তখনি মাইকে বলা হয়।

একজন- এটেনশন এভরিওয়ান। সবাইকে যার যার ডিপার্টমেন্ট এ যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে। কালকে কোন ডিপার্টমেন্ট কিভাবে সাজবে তা নিয়ে তাদের নিজ নিজ ডিপার্টমেন্ট এ মাস্টার্স এর ভাইয়া আপুরা এসে বলে যাবে। সো গো বেক টু দা ক্লাস। ফাস্ট।

এনাউসমেন্ট শুনার সাথে সাথে সবাই চলে গেল যার যার ডিপার্টমেন্ট এ। পুরো মাঠ খালি হয়ে গেল।

আনিকা- চল চল। (বলেই দৌড়)

সবাই হেসে আনিকার পিছন পিছন যাচ্ছে।

সবাই বসার সাথে সাথে রাত আসে তারাদের ক্লাসে।

রাত- হাই এভরিওয়ান।(তারার দিকে তাকিয়ে)

রাতের তাকানো দেখে তারা একটা ভেংচি কেটে মুখ গুড়িয়ে নেয়। যা দেখে রাত হেসে দেয়।

সবাই- হাই।

আনিকা- ওয়াও তাহলে রাত আমাদের ডিপার্টমেন্ট এর হেড। ওয়াও। আমি তো এমনিই ক্রাশিত। (বলেই গালে হাত দিয়ে রাতের দিকে তাকিয়ে আছে)

তারা- লুচু মাইয়া।

তারা কথা বলে চোখ গুড়িয়ে দেখে ক্লাসের সব মেয়ে এমন গালে হাত দিয়ে রাতের দিকে তাকিয়ে আছে। যেন চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে।

তারা- সবগুলো লুচু।হুহ।

তারার কেন যেন রাগ উঠলে। কেন সবাই রাতকে এভাবে দেখবে। হুট করেই রাতের কথায় ধ্যান ভাঙে তারার।

রাত- তো কাল তোমাদের নবীনবরণ। সবাই জানো আমাদের ভার্সিটি অনেক জাঁকজমক ভাবে আয়োজন করে এই অনুষ্ঠান। তো এইবার আমাদের ইচ্ছা আরো সুন্দর করে করব। তাই আমাদের সাজসজ্জার এই ছোট চেষ্টা। তো কালকে তোমাদের ড্রেস কোড হচ্ছে ব্ল্যাক। মেয়েরা ব্ল্যাক শাড়ি পড়বে। আর ছেলেরা ব্ল্যাক পাঞ্জাবি সাথে সাদা পাজামা। সো ইয়া শেষ সবার সাথে কালকে দেখা হচ্ছে। (বলেই তারার দিকে একবার তাকিয়ে চলে গেল)

তন্নিয়া- থেংক গড ভাইয়া আমাদের কাজ করে দিয়েছে। না হলে এতোক্ষণ আমাদের চুল ছেঁড়াছিঁড়ি হয়ে যেত।

সবাই আজকের মতো চলে গেল। ভার্সিটি অনেকটাই সাজানো হয়ে গেছে। অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। যদিও ফিনিশিং টাচ দেয়া হয় নি। তাও অনেক সুন্দর লাগছে।

পরেরদিন,

ভার্সিটিতে গিয়ে সবাই অবাক। কারণ ভার্সিটি অনেক অনেক অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। এতো সুন্দর করে সাজানো হয়েছে যে ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।

আস্তে আস্তে সবাই আসতে শুরু করেছে। রাতরা আগেই এসে পড়েছে কারণ তাদের কিছু কাজ ছিল। শেষ করে সবাই রাতের জন্য বরাদ্দকৃত রুমে গিয়ে রেডি হয়ে নিল।

রাত সাদা পাঞ্জাবি আর কালো পাজামা পড়েছে। চুলগুলো স্পাইক করা, হাতে দামী ঘড়ি, চোখ সানগ্লাস। এককথায় ক্রাশ খেয়ে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো লাগছে। সব মেয়েরা একধ্যানে তাকিয়ে আছে তার দিকে। যেন চোখই সরছে না।

তন্নিমা- কিরে মরে গেছিস তুই? আর কখন লাগবে আসতে? অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেলে পরে আসবি তুই?(ফোনে তারাকে বকে)

তারা- আরে আমি রাস্তায়। এসে গেছি।(বলেই ফোন রেখে দিল)

অনিক- কোথায় ও?

তন্নিমা- আসছে।

আনিকা- তারা আসতে থাক। রিমা ওই দিকে তাকিয়ে দেখ।

রিমা- কি?(বলেই তাকিয়ে দেখল রাত। দেখেই ক্রাশ) এই কেউ আমারে ধর।

রবিন- এহ ঠেকা পড়ছে। পইড়া মইরা যা তুই।

রিমা রবিনের দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে ভেংচি দিয়ে আবার রাতে মনযোগ দিতে গেছিল। কিন্তু কপাল মন্দ রাত অন্য কোথাও চলে গেছে।

রিমা- কুত্তা তোর জন্য চলে গেল।(কাঁদোকাঁদো মুখ করে)

যা দেখে সবাই জুড়ে হেসে দিল।

তখনি অনিকের নজর গেল ভার্সিটির গেটে। তাকিয়েক হা হয়ে গেল। মুখ দিয়ে অটোমেটিক বেড়িয়ে গেল,

অনিক- ওয়াও।

অনিকের কথা আর দৃষ্টি অনুসরণ করে সবাই গেটে তাকায়। আর সবার চোখ যেন বেড়িয়ে আসার উপক্রম।

রিকশা থেকে নামার সময় রিকশায় লেগে শাড়ির কুচি নষ্ট হয়ে গেছে। তা ঠিক করতে করতে আর বিড়বিড় করতে করতে গেট দিয়ে ডুকছে তারা। আশেপাশে তার কোনো হুশ নেই। সব ছেলেরা যে তাকে একদৃষ্টিতে দেখছে সে দিকে তার খেয়াল নেই।

তারা- উফ আজাইরা জামেলা। শাড়ি কেউ পড়ে। যতসব প্যারা।

কুচি ঠিক করে তন্নিমাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। তাদের দিকে তাকিয়ে দেখে সবাই হা হয়ে একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

তারা- কি হলো এমন হা করে আছিস কেন সবাই? মুখে তো তেলাপোকা ডুকবে।

সাথে সাথে সবার মুখ বন্ধ।

তন্নিমা- ইয়াক ছি কিসব বলিস তুই। এলিয়েন।

তন্নিমা- চুপ কর সবাই।

তন্নিমা তারার কাছে গিয়ে তারাকে দাড় করিয়ে তারাকে কেন্দ্র করে গোল গোল ঘুরে তারাকে দেখছে।

তন্নিমা- ওরে তারা রে। তোকে যা লাগছে না কি বলব। এক কথায় আগুন সুন্দরী লাগছে তোকে। দেখ ছেলেরা কেমনে দেখছে তোকে। ছেলেদেরই কি দোষ তোকে যা লাগছে তাতে তো আমিই ক্রাশ খেয়ে ফেলেছি। ইসসি রে আমি যদি ছেলে হতাম রে তুই এতোক্ষণে কিডন্যাপ হয়ে যেতিস।

সবাই হা হয়ে তন্নিমার দিকে তাকিয়ে আছে। এই মেয়ে এতো কথা জানে? আগে তো সব সময় বোবা হয়ে থাকতো। এখন তো দেখছি মোটরের মতো চলছে।

তন্নিমা- কি হয়েছে? সবাই আমার দিকে এমন করে তাকিয়ে আছিস কেন?(সবার রিয়েকশন দেখে)

রিমা- তুই তন্নিমা?(একটা শুকনো ঢুক গিলে)

তন্নিমা- মানে?(ভ্রু কুঁচকে)

রিমা- না মানে তুই এতো কথা জানি আমরা তো জানতামি না।(ক্যাবলা হেসে)

তন্নিমা- তো?

তারা- না কিছু না। চল অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাচ্ছে।

অনিক- এদের বকবকে অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেল গো।

সবাই এসে সামনের দিকে বসে পড়ল। তখনি আসে সামির। আর তারার সাথে কথা বলতে থাকে। তারা না চাইতেও ভদ্রতার খাতিরে মুখে হাসি ঝুলিয়ে কথা বলতে থাকে।

রাত চেঞ্জ করে এসেই তারাকে খুঁজতে থাকে। গেটে তারাকে দেখে ক্রাশ খেয়ে চিতপটাং হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা।

রাত- এই মেয়ে আমাকে নির্ঘাত মেরে ফেলবে আজকে।(বুকে বাঁ পাশে হাত রেখে ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে বলে)

তারাকে দেখতেও ক্রাশ খাওয়ার মতোই লাগছে।

কালো জামদানি শাড়ি। কানে দুল, হাতে চুড়ি। গলায় সিম্পল একটা হার, চুলগুলো খুলা, মুখে হালকা মেকআপ। এককথায় পরীর মতো লাগছে তারাকে। কালো শাড়িটা একদম ফুটে উঠেছে তার শরীরে।

কিন্তু রাতের হাসি বেশিক্ষণ থাকল না যখন দেখল আশেপাশে সবাই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তারার দিকে। ধপ করে রাগটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠল।

রাত- এই মেয়ে এতো সেজেছে কেন? আমি কি তাকে সাজতে বলেছি। দেখতে পারছে না সব ছেলেরা কেমন করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। ইচ্ছা করছে ইচ্ছা করছে….

বলেই সামনে ওগুতে নিলে মেঘ এসে ওকে জোড় করে নিয়ে যায় কি জানি এখনো কমপ্লিট হয় নি বলে। বাধ্য হয়ে যেতে হয় রাতকে। কারণ ফাংশন এখনি শুরু হবে।

চলবে?

ভুল এুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন এবং উৎসাহ দিবেন। ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here