ভালোবাসার হাতছানি পর্ব ৪

#ভালোবাসার_হাতছানি
#লেখিকা-সানজিদা সেতু
#পর্ব-০৪
(পরদিন)
আরহামের ভাষ্য….
রাত প্রায় বারোটা,কটেজের পেছনের দিকের আউটহাউজের সামনে দাঁড়িয়ে আছি,শ্রেয়ার জন্য অপেক্ষা করছি।আজ শ্রুতি আর আকাশের গায়ে হলুদ ছিল,ছিল বলছি কারণ অফিসিয়াল প্রোগ্রাম কিছুক্ষণ আগেই শেষ হয়ে গেছে বাট আনঅফিসিয়ালি এখনও দুই পক্ষের কাজিন আর বন্ধু বান্ধবরা নিজেদের মত করে আনন্দ করছে।গায়ে গলুদের ডান্স পার্ফমেন্সের এক ফাঁকে শ্রেয়া আমার হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে দিয়েছিল আর তাতে লেখা ছিল,
“একসাথে আইসক্রিম খেতে চাইলে রাত ঠিক বারোটায় আউটহাউজে আসতে পারেন,আমি অপেক্ষা করব”
শ্রেয়া রাত বারোটায় আসতে বললেও আমি একটু আগেই চলে এসেছি।পৃথিবীর সবথেকে কঠিন কাজটা হলো কারো জন্য অপেক্ষা করা,আর সেটা আমি এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।
অবশেষে অপেক্ষার অবসান হলো,গুটি গুটি পায়ে শ্রেয়া এগিয়ে আসলো।আমিও ওর দিকে এগিয়ে গেলা
– Hi!Thanks for coming.আমিতো ভেবেছিলাম আপঞ্জ আসবেনই না,যাই হোক আইসক্রিম খাবেনতো?ওয়েট..এই যে আপনার আইসক্রিম,ভেনিলা ফ্লেভার নাকি চকলেট?
– আইসক্রিম হাতে নিয়ে অবাক চোখে উনার দিকে তাকালাম
– অবাক হওয়ার কিছু নেই,আসলে আপনার আসতে দেরি হবে ভেবে আইসবক্স সাথে নিয়েই ঘুরছিলাম তাই…
– আইসবক্স নিয়ে ঘুরছিলেন মানে!আপনি কি আইসক্রিমের বিজনেস করবেন বলে ভাবছেন নাকি?
– তা কেন হবে!আসলে এত রাতে আইসক্রিম পাবো কিনা সন্দেহ ছিল আর তাছাড়া আপনি ঠিক কোন ফ্লেভার পছন্দ করেন জানতাম না তাই সবগুলোই…
– You know what,you are just crazy
– সে যাই বলেন,By the way এখানে যখন এসেছেন তারমানে আমার ফ্রেণ্ডশিপের প্রপোজালটা আশা করি একসেপ্ট করছেন।So frineds?
আমার বাড়িয়ে দেওয়া হাতে ও হাত রাখার আগেই কটেজের ওদিক থেকে প্রচণ্ড চেঁচামেচি আর ছোটাছুটির আওয়াজ শুনতে পেলাম।শ্রেয়া একবার ওদিকে তাকিয়েই ছুটে বেরিয়ে গেল।আমিও আর দেরি করলাম না,সাত পাঁচ না ভেবেই শ্রেয়ার পিছু পিছু ছুটতে লাগলাম…

হলরুমে একেবারে পাংশু মুখে বসে আছেন ইকবাল আঙ্কেল আর খন্দকার আঙ্কেল,বাঁকিরা রুমের দরজায় কান পেতে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে,রুমের ভেতরে কি হচ্ছে শোনার চেষ্টা করছে।রুমের দরজা বন্ধ তাই ভেতরে কি হচ্ছে কেউ কিছুই বুঝতে পারছে না।সবাই শুধু এটুকুই জানে যে কনে মানে শ্রুতিকে পাওয়া যাচ্ছে না!পাওয়া যাচ্ছে না মানে ও বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে আর যাওয়ার আগে একটা চিঠি রেখে গেছে আর তাতে লেখা ছিল,
“আব্বু,আম্মু,সরি তোমাদের ব্যবসায়িক স্বার্থে আমি আমার জীবনের এত বড় একটা ডিসিশন নিতে পারব না।আমি এখনও বিয়ের জন্য রেডি না তাই চলে যাচ্ছি।পারলে ক্ষমা করে দিও আর আমাকে খুঁজতে অযথা টাইমওয়েস্ট কর না,খুঁজে পাবে না I’m sorry…
শ্রুতি”
রুমের দরজা খুললো আরও প্রায় ঘণ্টা খানেক পর,দুই হবু বেয়াইয়ের মুখেই তখন স্পষ্ট হাসির রেখা খুটে উঠেছে।সবাই একরকম কনফিউজড হয়ে ওদিকে ছুটে গেল সবার সাথে আমিও।সবার উৎসুক মুখের দিকে তাকিয়ে মুখ খুললেন ইকবাল আঙ্কেল…
– এভাবে হা করে কি দেখছো?কাল বাদ পরশু বিয়ে আর এখনও সবাই হাত-পা গুটিয়ে বসে আছো!যাও যাও সবাই প্রিপারেশন শুরু কর,অনেক কাজ পড়ে আছে
(ইকবাল আঙ্কেলের কথা শুনে সবার মধ্যে একটা গুঞ্জন শোনা গেল,ভীড় ঠেলে এগিয়ে আসলেন দুই বেয়াইন)
– বিয়ে মানে!তোমার কি মাথা টাথা ঠিক আছে?
– আমার মাথা ঠিকই আছে,বিয়েটা হচ্ছে তবে সেটা আকাশ আর শ্রুতির না আকাশ আর শ্রেয়ার
(উপস্থিত সবাই আঁতকে উঠলো,আকাশতো রীতিমতো আর্তনাদ করে উঠল)
– হোয়াট!কিন্তু বাবা আমি…
– আমি আর কোন কথা শুনতে চাই না,তোমার যদি কিছু বলার থাকে তাহলে আমার সাথে আসো।এখানে আর কোন সিনক্রিয়েট হোক আমি চাই না
(আকাশ একবার সবার দিকে তাকিয়েই বাবার পিছু পিছু চলে গেল)

(আরহামের পয়েন্ট অফ ভিউ)
“বিয়েটা কালকেই হবে তবে সেটা আকাশ আর শ্রুতির না,আকাশ আর শ্রেয়ার”।কথাটা বার বার কানের কাছে বেজেই চলেছে।প্রথম যখন এ্যানাউন্সমেন্টটা শুনলাম,মনে হল কানের কাছে কেউ একটা প্রচণ্ড শক্তিশালী বোমা ফাটালো।কি করব মেয়েটাকে প্রথম দেখেই যে ওকে ভালোলেগে গিয়েছিল,প্রেমে পড়েছি কিনা এখনও জানিনা কিন্তু এখন ওর আর আকাশের!হঠাৎ কি হতে কি হয়ে গেল?আমি খুব ভালো করেই জানি এই ডিসিশনটা ঠিক কেন নেওয়া হয়েছে।এভাবে হুট করে এমন কিছু করার পেছনে একটাই উদ্দেশ্য থাকতে পারে আর সেটা হচ্ছে বিজনেস।দেশের নামকরা দুজন বিজনেসম্যানের ছেলে-মেয়ের বিয়ে বলে কথা,গোটা মিডিয়া জগতের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আছে এই বিয়ের দিকে তাই বিয়েটা কিছুতেই ক্যান্সেল করা যাবে না কারণ তাতে দুই পক্ষেরই সম্মানক্ষুণ্ণ হবে।আর তাছাড়া ইকবাল আঙ্কেল চান না শ্রুতি যা করেছে তা কেউ জানুক তাইতো উনারা দুজন মিলে উঠে পড়ে লেগেছেন যেভাবেই হোক নির্দিষ্ট দিনেই বিয়েটা সম্পন্ন করতে।আসলে কাদের বিয়ে সেটা এখানে মুখ্য বিষয় না,দুই ফ্যামিলির মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক হচ্ছে কিনা সেটাই এখানে সবচেয়ে বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কিন্তু সবকিছু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া আমার কিই বা করার আছে?আমি চাইলেওতো এই বিয়েটাকে আটকাতে পারব না,আচ্ছা আকাশ কি বিয়েতে রাজি হবে?

এবার অতীত ছেড়ে বর্তমানে আসা যাক।
চৌধুরী ম্যানশনের একেবারে কোণার রুমটায় বধূবেশে বসে আছি,নিরবে শুধু চোখের পানি ফেলে যাচ্ছি।ভারি গহনা আর সাজের কারণে দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হচ্ছে,মনে হচ্ছে এক্ষুণি খুলে ফেলতে পারলে ভালো হতো।যেই ভাবা সেই কাজ,চোখের পানি মুছে উঠে দাঁড়ালাম,লাগেজ থেকে একটা সুতি কাপড় বের করে নিয়ে চেঞ্জ করে নিলাম।ভয়টা আবারও জেকে বসছে,কিছুই ভালো লাগছে না,কি করব না করব ভাবতে ভাবতেই রুমের সাথে এ্যাটাচড বেলকনিতে চলে গেলাম।দূরের আকাশের দিকে তাকালাম,অনেকদিন আকাশ দেখা হয় না,আজ আকাশে কোন চাঁদ নেই,তারার সংখ্যাও নিতান্তই নগন্য।নিজেকে খুব নিঃসঙ্গ লাগছে ঠিক ঐ চাঁদ ছাড়া আকাশটার মতই…

ঘড়িতে রাত বারোটার ঘণ্টা পড়লো,রুমের বাইরে একটা হালকা শোরগোল শোনা যাচ্ছে।এক রকম ধস্তাধস্তি করেই বরের সব বন্ধুরা মিলে তাকে রুমের মধ্যে ঢুকিয়ে দিল
– শালা তোরাতো বন্ধু নামের কলঙ্ক রে,সময় আসুক আমিও দেখে নিব
– তা নিস বাট এখন আপাতত ভাবিকেই দেখ ঠিক আছে মামা?
– ওই তোরা যাবি?
– ঠিক আছে ঠিক আছে,আমরা যাচ্ছি you guys just enjoy the night
– এই বদগুলোও না,আমি মরছি আমার জ্বালায় আর এরা…শালা সিচুয়েশনটাকে কিভাবে ট্যাকেল করব তাই বুঝতে পারছি না আর এরা আছে ফাযলামির মুডে যত্তসব…হঠাৎ বিছানার দিকে চোখ পড়তেই থমকে দাঁড়ালাম,বিছানা পুরো ফাঁকা!পুরো রুমে বেশ ভালো করে দেখে নিলাম,বিছানার একপাশে শ্রেয়ার পরনের শাড়ি গহনা সবকিছু এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে,কিন্তু ওকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না,গেল কোথায় মেয়েটা?হঠাৎ বেলকনির দিকে চোখ পড়তেই প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেলাম,শ্রেয়া গ্রিল ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।জানি কাঁদছে কিন্তু এখন আর ওকে ডিস্টার্ব করতে ইচ্ছে করছে না,কাঁদুক না এতে যদি কষ্টগুলো কিছুটা হলেও হালকা হয়…
(কিছুক্ষণ পর)
– আমি রুমে এসেছি তাও প্রায় ঘণ্টাখানেকের বেশি হয়ে গেল,শ্রেয়া এখনও ঠিক আগের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে,একবারও এদিকে ফিরেও তাকায়নি।আমারতো মনে হয় ও জানেই না যে আমি এ ঘরে এসেছি,অবশ্য জানলেও খুব একটা লাভ হত বলে আমার মনে হয় না।যাই হোক শেষমেশ ওর দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিজের দিকে মনোযোগ দিলাম,এখনও বিয়ের শেরোয়ানী পরে আছি।নাহ এভাবে আর থাকা যাবে না,ভীষণ অস্বস্তি লাগছে।ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে পোশাক পাল্টে নিলাম,রুমে ঢুকতেই ফোনের মেসেজটোনটা বেজে উঠলো।আহাদ মেসেজ দিয়েছে,
“কিরে,স্কোর কত হল?বাউন্ডারি মারতে পারলি নাকি সিঙ্গেলেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে?”
– শালা,এগুলো বন্ধু নাকি!সারাক্ষণ মাথায় কি খালি এগুলোই চলে?একটু পর পরই একেক বান্দর ফোন আর মেসেজ দিয়েই যাচ্ছে,বিরক্ত হয়ে ফোনটাই বন্ধ করে দিলাম
(কিছুক্ষণ পর)
– বছরের এই সময়টাতে রাত যত বাড়তে থাকে,আবহাওয়া ততই ঠাণ্ডা হয়।আজকেও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না,বেশ শীত শীতই লাগছে,শ্রেয়া এখনও বেলকনিতেই বসে আছে,ওখানে থাকলেতো ঠাণ্ডা লেগে যাবে।আর তাছাড়া প্রায় ভোর হতে চললো,ঘুমে চোখজোড়া বুঝে আসতে চাইছে।আর দেরি করলাম না,বিছানাটা ঠিকঠাক করে নিয়েই ওর পেছনে এসে দাঁড়ালাম
– হঠাৎ মনে হলো কেউ পেছনে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু কে দেখতে ইচ্ছে করছে না
– শ্রেয়া…
– (চমকে উঠে)আ..আপনি!কখন আসলেন?
– অনেক্ষণ
– ওহ
– বলছি যে রাততো অনেক হলো,ঘুমাবে না?
– না মানে আপনি ঘুমান,আমার ঘুম আসছে না
– স্পষ্ট বুঝতে পারছি ওর ঘুম পাচ্ছে তবুও মেয়েটা স্বীকার করছে না!প্রবলেমটা কি?ওহ বুঝেছি ওয়েট,ওর হাত ধরে ওকে রুমে নিয়ে আসলাম
– আরে আরে কি আশ্চর্য!বললামতো আমার ঘুম পাচ্ছে না,কেন শুধু শুধু জোর করছেন?
– ওর কথার কোন পাত্তা না দিয়ে বালিশ আর চাদরটা তুলে নিলে নিয়ে সোফার দিকে এগিয়ে গেলাম
– কি আশ্চর্য!এসবের মানে কি?আপনি কোন কথা বলছেন না কেন?
– আমার প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছে,আমি ঘুমালাম বলেই সোফায় শুয়ে পড়লাম
– কিন্তু…আপনি…
– আর হ্যাঁ কারো ঘুম পেলে সে বিছানায় ঘুমোতে পারে,অযথা এই ঠাণ্ডায় বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকার কোন দরকার নেই,ঠাণ্ডা লেগে যাবে
– (অবাক হয়ে)জ্বি?কিছু বললেন?
– না কিছু না,রাত অনেক হয়েছে ঘুমিয়ে পড়
– হুম

উনার কথামত শুয়েতো পড়লাম কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না,কারণটাও পরিষ্কার উনার সাথে একই রুমে রাত কাটাতে হচ্ছে তাই প্রচণ্ড আনইজি ফিল হচ্ছে।হাজবেন্ড ওয়াইফ একসাথে থাকবে এটাইতো স্বাভাবিক কিন্তু আমাদের প্রেক্ষাপটটা ভিন্ন তাই…
নিতান্ত অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও চোখজোড়া বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলাম কিন্তু ঘুম আসার বদলে উল্টো পুরনো স্মৃতিগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগলো,ফিরে গেলাম ছয়মাস মাস আগের সেই দিনটাতে।
সেদিন শ্রুতি আপুর ছোট্ট একটা ভুলে আমার পুরো পৃথিবীটাই বদলে গেল।আব্বুকে এতটা অসহায় অবস্থায় এর আগে কখনই দেখিনি আমি।আব্বুকে আমি অনেক ভালোবাসি তাই আর সবার মতই সবকিছুর জন্য আপুকেই দায়ী মনে হচ্ছিল,মন চাইছিল আপুকে সামনে পেলে খুন করে ফেলব।সেদিন যখন আব্বু আকাশ ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ের কথা এ্যানাউন্স করলো,উনার চোখের ভাষাটা পড়তে আমার এক বিন্দুও সমস্যা হয়নি।সবার চোখ এড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে যেন এটাই বোঝাতে চাইছিল,
“মা রে,আমার মুখের দিকে তাকিয়ে হলেও তুই এই বিয়েটাতে রাজি হয়ে যা নাহলে যে আমার মান সম্মান সব ধুলায় মিশে যাবে।”
আব্বুর এই নিরব আকুতি আমি উপেক্ষা করতে পারিনি,তাইতো সরাসরি সম্মতি না জানালেও কোন রকম বিরোধিতাও করিনি,মুখ বুজে নিজের অদৃষ্টকে মেনে নিলাম।
নির্দিষ্ট দিনেই আমাদের বিয়েটা সম্পন্ন হলো।কখনও ভাবতেও পারিনি যাকে নিজের বড় ভাইয়ের জায়গায় বসিয়েছিলাম তার সাথেই…
আকাশ এখন আর শ্রুতি আপুর হবু বর না,সে এখন আমার স্বামী,কিছুক্ষণ আগেই বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে।কি অদ্ভূত তাইনা?ভাবতেই পারছি না এটা স্বপ্ন নাকি সত্যি,যেই বিয়ের পোশাকে এখন আপুর সাজার কথা ছিল সেগুলো এখন আমার গায়ে শোভা পাচ্ছে।নিজেকে খেলনা পুতুল পুতুল লাগছে,কিছুই ভাবতে পারছি না তাই হাজারো চিন্তা আর উৎকণ্ঠা নিয়ে চুপচাপ নিজের রুমে বসে আছি।হঠাৎই কেউ দরজায় টোকা দিল
– কে?
– শ্রেয়া আমি,একটু কথা ছিল,ভেতরে আসবো
(কণ্ঠটা শুনে চমকে উঠলাম তারপর কাঁপা কাঁপা স্বরে উত্তর দিলাম)
– জ্বি আসুন
(দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো আকাশ)
– আ..আপনি!এখানে!
– ভয় পেও না,আমি জাস্ট কয়েকটা কথা বলেই চলে যাব
– না মানে আমি আসলে এটা মিন করিনি
– ইট’স ওকে,আমি কিছু মনে করিনি
– আপনি কি যেন বলবেন বলছিলেন
– ও হ্যাঁ আসলে আমরা এখনই রওনা দিব
– এখনই!
– টেনশন নিও না,তোমাকে এখনই যেতে হবে না,তুমি বরং আপাতত তোমার ফ্যামিলির সাথেই থাকো
– মানে?
– আমি জানি তুমি আমাকে,আই মিন এই বিয়েটাকে এখনও মেনে নিতে পারোনি,আসলে পারার কথাও না।আমাদের দুজনের জন্যেই ব্যাপারটা বেশ কঠিন,তাই আমি চাই এত তাড়াহুড়ো না করে আমরা নিজেরা একটু টাইম নেই
– কিন্তু…
– চিন্তা করো না,বাবা-মাকে আমি ম্যানেজ করে নেব তুমি জাস্ট নিজের দিকে খেয়াল রাখো কেমন?
– উনি চলে যাচ্ছিলেন,হঠাৎ কি মনে করে যেন উনাকে ডাকলাম।শুনুন…
(চমকে উঠে পেছন ফিরে তাকালো আকাশ)
– কিছু বলবে?
– একটা প্রশ্ন করতে পারি?
– (অবাক হয়ে)কি প্রশ্ন?
– Are you alright?আপনি ঠিক আছেনতো?
– হঠাৎ এই প্রশ্ন করলে যে?
– না মানে আপনি আর শ্রুতি আপুতো…এখন আমার জন্য আপনারা দুজন…
– একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ওর দিকে এগিয়ে গেলাম।ওর কাঁধে দুহাত রাখলাম,নিচের দিকে তাকিয়ে আছি,রাগটাকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করেছি
– অবাক হয়ে উনার দিকে তাকালাম,প্রচণ্ড অস্বস্তি লাগছে
– আজ এখানে যা কিছুই হয়েছে তারজন্য কোনভাবেই তুমি দায়ী নও বুঝেছো?
– মনে হচ্ছে উনি অনেক রেগে গেছেন।ভয়ে ভয়ে মাথা নাড়ালাম
– দেখো শ্রেয়া,শ্রুতি আর আমার মধ্যে যেটা ছিল সেটা আদৌ ভালোবাসা ছিল নাকি অন্য কিছু আমার জানা নেই।তবে যাই থাকুক না কেন,যেই মুহূর্তে আমি কবুল পড়েছি আমি সবকিছু ভুলে গেছি।অতীতে আমার সাথে যা কিছুই হয়েছে সবই এখন মিথ্যা,তুমি আমার স্ত্রী এটাই এখন আমার কাছে সবচেয়ে বড় সত্যি
– অবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি,কি বলব কিছুই বুঝতে পারছি না
– জানি তোমার মনের মধ্যে এখন অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না,তবে আপাতত তোমাকে এটুকু আশ্বাস দিতে পারি,এখন থেকে আমার সবটুকু দিয়ে আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসার চেষ্টা করব আর আমি জানি আমি সেটা পারব…
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here